আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) মধ্যে আরও ১০৯টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এর ফলে দেশে স্টেশনের সংখ্যা হবে ৫৬৫টি।
তিনি বলেছেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের শিল্পঘন এলাকা এবং পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ১১টি আধুনিক ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের গ্যাপ এরিয়ায় আরও ১৫৫টি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে।
‘মুজিববর্ষে শপথ করি, দুর্যোগে জীবন-সম্পদ রক্ষা করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহের উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বক্তব্যে ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন মন্ত্রী।
জনবল বৃদ্ধি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে এই জনবল হয়েছে ১৩ হাজার ৪০০ জন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনবলের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
‘এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ২৫ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।’
দক্ষতা-সক্ষমতা বৃদ্ধি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও আমরা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ১৬৯ জন সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বিশ্বমানের সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এ জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ১০০.৯২ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
‘এই একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে এখানে একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের এক হাজার সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে। এখন যেমন আমাদের ফায়ারকর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হচ্ছে, এই একাডেমি হলে আমরা বিদেশের লোক এখানে এনে উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে পারব। ফায়ার সার্ভিসের সেই সক্ষমতা সৃষ্টি হবে।’
অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান কামাল।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের বহুতল ভবনে কাজ করার মতো একটি ৪৭ মিটারের পুরোনো গাড়ি ছিল, সেখানে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বহুতল ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধারের মোট ২১টি উঁচু মইয়ের গাড়ি এনেছি। ফায়ার সার্ভিসের এখন ৬৪ মিটার বা ২০ তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করার সক্ষমতা হয়েছে।
‘এ ছাড়া ৬৮ মিটার উচ্চতার লেডার সংবলিত গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা ২২ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।’
‘গুরুত্ব বাড়ছে ফায়ার সার্ভিসের’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, ‘প্রতিটি দেশে দিন দিন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ জন্য সরকারে আসার পর থেকেই আমরা এই প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার সময় দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০৪টি। বর্তমানে দেশে চালু ফায়ার স্টেশন হলো ৪৫৬টি।
‘অর্থাৎ আমাদের সরকারের সময়ে দেশে নতুন ২৫২টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে আরও ১০৯টি নতুন ফায়ার স্টেশন চালু করা হবে। তখন ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬৫টি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের শিল্পঘন এলাকা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ১১টি মডার্ন ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনা মতে দেশের গ্যাপ এরিয়ায় আরও ১৫৫টি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা ৭২০টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পা রাখার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ৬৩টি থেকে ১৯০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের সব স্টেশনে পর্যায়ক্রমে অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কেমিক্যাল টেন্ডার, হাজমত টেন্ডার, এমনকি আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার রিমোট কন্ট্রোল ফায়ারফাইটিং ইউনিট এবং ড্রোন পর্যন্ত আমরা এনেছি, যা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও ব্যবহৃত হয়। ‘এ ছাড়া বিশেষ পানিবাহী গাড়ি ও কেমিক্যাল টেন্ডারসহ বিশেষ ধরনের গাড়ি ছিল মাত্র ৫টি। আর এখন আধুনিক সুবিধা আছে এমন বিভিন্ন ধরনের বিশেষ গাড়ির সংখ্যাই ১০৮টি।’
পূর্ণাঙ্গ রেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন
ফায়ার সার্ভিসের সব সদস্যের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশন বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের জন্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা চালু করেছি। কর্মীদের জন্য তিন রঙের মর্যাদাপূর্ণ নতুন পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। পদকের সংখ্যা আটটি থেকে বৃদ্ধি করে ৫০টি এবং সম্মানী ১০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এক লাখ টাকা করা হয়েছে।
‘ফায়ারম্যানসহ পাঁচটি পদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আমরা আজীবন রেশন সুবিধার আওতায় আনার কথা চিন্তা করছি। সকল জেলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদ সৃজনসহ এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও যা যা প্রয়োজনীয়, আমরা পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করব।’
‘প্রতিষ্ঠানটি দুঃসময়ের বন্ধু’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সক্ষমতা বাড়ানোর কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জান-মাল রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা জানেন, সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের তিনজন কর্মী অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের সময় মারা গিয়েছেন। রাজশাহীতে জঙ্গি দমন অভিযানে ফায়ারফাইটার আব্দুল মতিন, বনানীর এফআর টাওয়ারে ফায়ারফাইটার সোহেল রানা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছিলেন। সবশেষ দিনাজপুরে ডুবন্ত লোক উদ্ধার করতে গিয়ে ডুবুরি মতিন মৃত্যুবরণ করেছেন।
‘এসব কারণে একসময় দমকল বলে অবহেলা করলেও এখন সবাই প্রতিষ্ঠানটিকে দুঃসময়ের বন্ধু মনে করে। আমি মনে করি, মানুষের দোরগোড়ায় অগ্নিনিরাপত্তার সেবা পৌঁছে দেয়ার যে স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখতেন, ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য