৩ নভেম্বরে ঢাকা সেনানিবাসে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা মিশনে অংশ নেয়া সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরা। তারা ভেবেছিলেন, বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া খালেদ মোশাররফ ও শাফায়েত জামিলরা হয়তো কেবল সেনাপ্রধান জিয়াকে বন্দি করে বা ক্ষমতাচ্যুত করেই ক্ষান্ত হবেন না, তারা হয়তো জেল ভেঙে জাতীয় নেতাদের বের করে আনবেন এবং রাষ্ট্রপতি মোশতাক ও ফারুক-রশীদদের হত্যা করবেন।
এই আতঙ্ক থেকে মোশতাক-ফারুক-রশীদরা জেল হত্যার ছক কষে বলে মনে করেন ঘটনার প্রতক্ষদর্শী ও গবেষকরা। বিভিন্ন লেখায় ও বর্ণনায় তারা সেই বিষয়গুলো তুলেও ধরেছেন। এই ঘটনা এতো পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল যে, হত্যাকাণ্ডের ৩০ ঘণ্টা পর সেনানিবাস ও জনসাধারণ এ ঘটনা জানতে পারে। ঘটনার ২০ ঘণ্টার মধ্যেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দেশত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়, তাদের থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।
মূলত জাতীয় নেতাদের হত্যার মাধ্যমে মোশতাক তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করেছিলেন এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
৩ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম সাক্ষী লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি তার তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা বইয়ে বর্ণনা করেছেন জেলহত্যার ঘটনাবলি। বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন: ‘ঘটনার পরের দিন ৪ নভেম্বর দুপুরের দিকে পুলিশের আইজি বঙ্গভবনে ফোন করলে জেনারেল খলিল ফোন ধরেন। আইজি তাকে জানান, গত রাতে আর্মির লোকজন জেলে ঢুকে চার আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছে। তিনি চমকে ওঠেন! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে গিয়ে প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারি মাহবুব আলম চাষীকে সংবাদটি দিয়ে প্রেসিডেন্টকে জানাতে বলেন।
‘চাষী তখনই প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে সংবাদটি দেন। রুম থেকে বেরিয়ে এসে চাষী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ঘটনা জানেন’। ওই দিন বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধাবস্থার উত্তপ্ত পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় সংবাদটি জে. খলিল আর কাউকে শোনাননি, চেপে যান। তার কথা হলো, আমি ডিফেন্স স্টাফ প্রধান। আমার দায়িত্ব প্রেসিডেন্টকে ঘটনাটি জানানো। আমি তাই করেছিলাম। অন্যান্যকে বলাবলি করতে যাব কেন?’
ওই বইয়ে ‘কুখ্যাত জেলহত্যা’ অধ্যায়ে এম এ হামিদ লেখেন: ‘২/৩ নভেম্বর গভীর রাতে সবার অজ্ঞাতে সংঘটিত হলো বিশ্বের এক জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সৈন্য গাড়ি করে সেন্ট্রাল জেলে পৌঁছায়। তারা ভেতরে ঢুকে অন্তরীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাইরে নিয়ে যেতে চায়। জেলার আব্দুল আওয়াল সশস্ত্র সৈন্য দেখে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে ঘাতক দলের অনেকক্ষণ কথা কাটাকাটি হলো। তারা জোর করে ঢুকে যেতে চাচ্ছিল। কারাগারে পাগলা ঘণ্টা বেজে উঠল। ডিআইজি ও আইজি (প্রিজন্স) ছুটে আসলেন।
‘জেল গেট থেকে আইজি (প্রিজন্স) সরাসরি বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মোশতাককে জেল গেটে মোসলেমউদ্দিনের আগমন ও ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা অবগত করেন। মোশতাক জলদগম্ভীর কণ্ঠে তাদের জেলে ঢোকার নির্দেশ দেন।’
ঘটনার ২১ বছর পর জেলহত্যার প্রামাণ্য দলিল উদ্ধার হয়। এটি হলো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের তৈরি করা প্রতিবেদন। গুরুত্বপূর্ণ এ ফাইলটি আইজি (প্রিজন্স)-এর কক্ষের ফাইলের স্তূপে চাপা পড়ে ছিল। ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তা বহু খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার হয়।
এতে দেখা যায়, খোন্দকার মোশতাক এবং মেজর রশীদ চার জাতীয় নেতাকে হত্যার সরাসরি নির্দেশ দেন।
তাজউদ্দিন এবং নজরুল ইসলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১নং সেলে ছিলেন। পাশের সেলে ছিলেন মনসুর আলী ও কামারুজ্জামান। তাদেরকে তাজউদ্দিনের সেলে এনে জড়ো করা হয়। তারপর খুব কাছে থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
তাদের মধ্যে তিনজন সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। তাজউদ্দিনের পায়ে ও হাঁটুতে গুলি লাগে, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ধীরে ধীরে তিনিও মারা যান। তিনি ‘পানি পানি’ বলে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু ভীতবিহ্বল পরিবেশে কেউ এক ফোঁটা পানি এগিয়ে দিতেও সাহস পায়নি।
ঘটনাটি এতই বর্বরোচিত ছিল যে, মুখ খুলে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায়নি।
সৈনিকদের কী প্রয়োজন পড়েছিল, একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের জেলের ভেতরে ঢুকে হত্যা করার?
খোন্দকার মোশতাক আহমদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এ চার নেতা। আর তারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে অটল। কোনো কারণে যদি মোশতাকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব যাতে স্থলাভিষিক্ত না হয়, সে জন্য প্রতিপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্মূল করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন মোশতাক। রিসালদার মোসলেমউদ্দিন তার এ নীল নকশার বাস্তবায়ন করেন মাত্র।
কারাগারের অভ্যন্তরে এরকম নির্মম ঘটনা ইতিপূর্বে আর কখনও ঘটেনি। সমগ্র জেলখানায় নেমে আসে ভয়, ভীতি ও বিষাদের ছায়া।
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম তার এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য, স্বাধীনতার প্রথম দশক বইয়ের ৮৯ পৃষ্ঠায় জেলহত্যাকে বর্ণনা করেছেন এভাবে: ‘৪ তারিখ সকালবেলায় খবরে জানা যায়, ৩ তারিখ রাতেই জেলে আটককৃত সর্বজনাব নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান – এ চার নেতাকে রাষ্ট্রপতি মোশতাক, মেজর রশীদ ও ফারুকের আদেশে জেলের ভিতরেই নৃশংসভাবে ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের ট্যাংক রেজিমেন্টের কজন সৈনিক হত্যা করে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জেলখানায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের খবর ৩০ ঘণ্টা পর বাইরের লোকজনের কাছে প্রকাশ পায়। রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক ও ফারুক-রশীদরা যখন ৩ তারিখের অভ্যুত্থানের খবর পায় এবং তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দেয়, তখনই এদের ধারণা জন্মে যে, এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেলে আটককৃত চার নেতাকে বের করে এনে রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাককে সরিয়ে নতুন সরকার গঠনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখা বিএনপি সময়-অসময় বইয়ের ৭০ ও ৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় বিতর্কিত ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনকে উদ্বৃতি করে লেখেন: ‘৪ নভেম্বর কেবিনেট বৈঠক ডাকেন প্রেসিডেন্ট মোশতাক। বৈঠক চলাকালে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়েন কর্নেল শাফায়েত জামিল, মেজর ইকবাল, কর্নেল আবদুল মালেক ও লে. কর্নেল জাফর ইমাম। চারদিকে অস্ত্র উঁচিয়ে তারা চিৎকার করতে থাকেন। মন্ত্রীদের লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করে ট্রিগারে হাত রেখে কেউ বলছে, “উই ওয়ান্ট খালেদ মোশাররফ। হি হ্যাজ টু বি মেইড চিফ অব স্টাফ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, ইউ আর এ বাস্টার্ড স্যার, ইউ আর এ কিলার। ইউ উইল বি ফিনিশড।’
মহিউদ্দিন আহমদ এ বইতে আরও লিখেছেন: “কর্নেল শাফায়াত জেল হত্যাকাণ্ডের খবর পান ৪ নভেম্বর সকাল ১০টায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি বঙ্গভবনে যান। সারা দিন বঙ্গভবনে বসে খালেদের দেনদরবারের কথা জেনে তিনি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন। শাফায়াত দেখলেন করিডরে মোশতাক খালেদকে উত্তেজিতভাবে বলছেন, ‘আই হ্যাভ সিন মেনি ব্রিগেডিয়ারস অ্যান্ড জেনারেলস অব পাকিস্তান আর্মি। ডোন্ট ট্রাই টু টিচ মি’।
“পাশে ওসমানী দাঁড়িয়ে আছেন। করিডরে মেজর ইকবাল ও অনেক সৈন্য ছিলেন। ইকবাল ততোধিক উত্তেজিত কণ্ঠে মোশতাককে বললেন, ‘ইউ হ্যাভ সিন দ্য জেনারেলস অফ পাকিস্তান আর্মি। নাও ইউ সি দ্য মেজরস অফ বাংলাদেশ আর্মি।’ এর মধ্যে সৈনিকেরা গুলি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওসমানী বিপদ আঁচ করে বলে উঠলেন, ‘শাফায়াত, সেভ দ্য সিচুয়েশন। ডোন্ট রিপিট বার্মা।’ মেজর ইকবাল ও মোশতাকের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালেন কর্নেল শাফায়াত, ইকবালকে এক পাশে সরিয়ে দিলেন এবং মোশতাককে নিয়ে কেবিনেট কক্ষে ঢুকলেন।”
বইটিতে আরও লেখা হয়েছে, “ওই ঘরে মেজর জেনারেল খলিল বসে ছিলেন। শাফায়াত তাকে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘আপনি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ, প্রায় ৪০ ঘণ্টা হয়ে গেছে জেলখানায় জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, তারও ঘণ্টা কুড়ি পর দেশ ত্যাগ করেছে খুনিরা, আপনি এ সবই জানেন, কিন্তু আমাদের বলেননি কিছুই। এই ডিসগ্রেসফুল আচরণের জন্য আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছি।
“শাফায়াত এরপর ধরলেন মোশতাককে। “স্যার, আপনি আর পদে থাকতে পারেন না। কারণ, আপনি একজন খুনি। জাতির পিতাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। এসব অপরাধের জন্য বাংলার জনগণ আপনার বিচার করবে। আপনি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। আপনার পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্ট হবেন।”
৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোশতাক ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ নিয়োগ করেন। খালেদকে মেজর জেনারেলের পদ দেয়া হয়। ওই রাতেই মোশতাক পদত্যাগপত্রে সই করেন। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে মোশতাককে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৫ আগস্ট ও জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও নুরুল ইসলাম মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের জেলহত্যা রিপোর্ট
তখনকার আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের একটি চিঠি সংযুক্ত করে তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্তব্যরত ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) খন্দকার আবদুল আওয়াল একটি রিপোর্ট পাঠান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। নুরুজ্জামানের সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে:
‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোর ৩টায় আমি বঙ্গভবন থেকে মেজর রশীদের একটি ফোন পাই। তিনি আমার কাছে জানতে চান, ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কোনো সমস্যা আছে নাকি। আমি জানালাম, ঠিক এই মুহূর্তের অবস্থা আমার জানা নেই। এরপর তিনি আমাকে জানালেন, কয়েকজন বন্দিকে জোর করে নিয়ে যেতে কয়েকজন সেনাসদস্য জেলগেটে যেতে পারে, আমি যেন জেল গার্ডদের সতর্ক করে দিই। সে অনুযায়ী আমি সেন্ট্রাল জেলে ফোন করি এবং জেলগেটে দায়িত্বে নিয়োজিত ওয়ার্ডারদের ম্যাসেজটি জেলারকে পৌঁছে দিতে বলি, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
‘৩/৪ মিনিট পর বঙ্গভবন থেকে আরেকজন আর্মি অফিসারের ফোন পাই। তিনি জানতে চান, আমি ইতোমধ্যে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে গার্ডদের সতর্ক করে দিয়েছি কি-না। আমি ইতিবাচক জবাব দেওয়ার পর তিনি আমাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য জেলগেটে চলে যেতে বলেন। আমি তখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ডিআইজি প্রিজন্সকে ফোন করি। খবরটি জানিয়ে আমি তাকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলগেটে চলে যেতে বলি। দেরি না করে আমিও জেলগেটে চলে যাই এবং ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া জেলারকে আবারও গার্ডদের সতর্ক করে দিতে বলি। এরই মধ্যে ডিআইজিও জেলগেটে পৌঁছেন। বঙ্গভবন থেকে পাওয়া খবরটি আমি আবার তাকে জানাই।
‘এর পরপরই মেজর রশীদের আরেকটি ফোন পাই। তিনি আমাকে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই জনৈক ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে যেতে পারেন। তিনি আমাকে কিছু বলবেন। তাকে যেন জেল অফিসে নেয়া হয় এবং (১) জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, (২) জনাব মনসুর আলী, (৩) জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও (৪) জনাব কামারুজ্জামান - এই ৪ জন বন্দিকে যেন তাকে দেখানো হয়।
‘এ খবর শুনে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাই এবং টেলিফোনে প্রেসিডেন্টকে খবর দেয়া হয়। আমি কিছু বলার আগেই প্রেসিডেন্ট জানতে চান, আমি পরিষ্কারভাবে মেজর রশীদের নির্দেশ বুঝতে পেরেছি কিনা এবং আমি ইতিবাচক জবাব দিলে তিনি আমাকে তা পালন করার আদেশ দেন।
‘কয়েক মিনিটের মধ্যে ৪ জন সেনাসদস্যসহ কালো পোশাক পরা ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে পৌঁছায়। ডিআইজি প্রিজন্সের অফিসকক্ষে ঢুকেই তিনি আমাদের বলেন, পূর্বোল্লিখিত বন্দিদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে তাকে নিয়ে যেতে। আমি তাকে বলি, বঙ্গভবনের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি আমাকে কিছু বলবেন।
‘উত্তরে তিনি জানান, তিনি তাদের গুলি করবেন। এ ধরনের প্রস্তাবে আমরা সবাই বিমূঢ় হয়ে যাই। আমি নিজে এবং ডিআইজি প্রিজন্স ফোনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। সে সময় জেলারের ফোনে বঙ্গভবন থেকে মেজর রশীদের আরেকটি কল আসে। আমি ফোনটি ধরলে মেজর রশীদ জানতে চান, ক্যাপ্টেন মোসলেম সেখানে পৌঁছেছেন কি-না। আমি ইতিবাচক জবাব দিই এবং তাকে বলি, কী ঘটছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন মেজর রশীদ আমাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
‘আমি প্রেসিডেন্টকে ক্যাপ্টেনের বন্দিদের গুলি করার ইচ্ছার কথা জানাই। প্রেসিডেন্ট জবাব দেন, “তুমি ওদের কথা শোনো। রশীদ যা বলেছে, সেই মোতাবেক কাজ করো।” আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সরাসরি জড়িত।’
ওই প্রতিবেদনে ডিআইজি (প্রিজন্স) খন্দকার আবদুল আওয়াল লেখেন:
‘তখন আমরা আরও উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্যাপ্টেন মোসলেম বন্দুকের মুখে আমাকে, ডিআইজি. প্রিজন্স, জেলার ও সে সময় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তা সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে উপরোল্লিখিত বন্দিদের রাখা হয়েছে। ক্যাপ্টেন ও তার বাহিনীকে তখন উন্মাদের মতো লাগছিল এবং আমাদের কারো তাদের নির্দেশ অমান্য করার উপায় ছিল না, তার নির্দেশ অনুযায়ী পূর্বোল্লিখিত ৪ জনকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করা হয় এবং একটি রুমে আনা হয়, সেখানে জেলার তাদের শনাক্ত করেন। ক্যাপ্টেন মোসলেম এবং তার বাহিনী তখন বন্দিদের গুলি করে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পর নায়েক এ আলীর নেতৃত্বে আরেকটি সেনাদল সবাই মারা গেছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে জেলে আসে। তারা সরাসরি সেই ওয়ার্ডে চলে যায় এবং পুনরায় মৃতদেহে বেয়নেট-চার্জ করে।’
আরও পড়ুন:ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) করেছি, সে কর্মপরিকল্পনাটা আপনাদের জানাবো। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি। এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করেন।’
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব আজ এক বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে কমিশন।
এখন যেকোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
উল্লেখ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দল নিবন্ধন, সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কার, বিধিমালা ও নীতিমালা জারি, প্রবাসীদের জন্য আইটি সাপোর্টেড নিবন্ধন ও পোষ্টাল ব্যালট পদ্ধতি ও নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে রোডম্যাপে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যে কোনো সময় এই নির্বাচনের রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বৈঠকে কর্মপরিকল্পনার (রোডম্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন, যে কোনো সময় নির্বাচনের এই রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হতে পারে বলে ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘কর্মপরিকল্পনার সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।’
এদিকে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ইসি’র শুনানি আজ বিকেলে শেষ হচ্ছে।
শুনানি শেষে বিকেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে ইসি’র সিনিয়র সচিব আকতার আহমেদের ব্রিফিং করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমরা ব্রিফিংয়ে আসব। তখন সীমানার শুনানির বিষয়টির পাশাপাশি এ বিষয়টিও (রোডম্যাপ) দেখা যাবে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
ওই দিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে ইসি সচিব ব্রিফ করবেন।
গত ১৮ আগস্ট ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, ‘একটা কর্মপরিকল্পনার (নির্বাচনী রোডম্যাপ) বিষয়ে বলেছিলাম, আমরা এই সপ্তাহে এটা করবো। কর্মপরিকল্পনার তো আমাদের আন্তঃঅনুবিভাগ সম্পর্কিত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে। কর্মপরিকল্পনার ড্রাফ্ট করা হয়েছে। ড্রাফ্টটি এখন কমিশনে দিয়ে আমরা অ্যাপ্রুভ করবো।’
শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ (টিসিসি)-এর ৮৯তম সভায় শ্রমিক, মালিক ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক বছরের পর্যালোচনা ও সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, "শ্রমিক ও মালিক পক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হবে। এটি বাংলাদেশের শ্রমখাতের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।’
সভায় শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। একটি সুসমন্বিত ও আন্তর্জাতিক মানের শ্রম আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা উপস্থিত সকলেই করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশোধিত শ্রম আইন দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বিশেষ পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন দূতাবাস, কানাডা হাই কমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর প্রতিনিধিরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত জনাব লুৎফে সিদ্দিকী।
এছাড়াও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)-এর সভাপতি, টিসিসি সদস্যবৃন্দের মধ্যে তাসলিমা আক্তার, কোহিনুর মাহমুদ, বাবুল আকতার , নাজমা আক্তার, রাজেকুজ্জামান রতন, এডভোকেট আতিকুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধনী বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত করবে এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সারাদেশে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত প্রযুক্তি সুবিধাপ্রাপ্ত লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবেলায় নীতিগত সুপারিশ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা একথা বলেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, সারাদেশে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীদের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সকল অপকর্ম প্রতিরোধে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালিত কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্রটি। মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে ছোট ছোট মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মেয়েরা অবুঝ এজন্য অভিভাবকদেরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নারী সহিংসতা শিকার না হয়।
উপদেষ্টা বলেন, জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থা, নারী পক্ষ, হিউম্যান রাইটস বাংলাদেশ, সাইবার টিনস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাকসহ বাইশটি সংগঠন আজ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একযোগে কাজ করছে। তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
উপদেষ্টা বলেন এই ২২ টি সংগঠনের প্ল্যাটফর্মে যে সমস্ত শিক্ষিত তরুন যুবক যুবতীরা আছেন তাদেরকে টেকনোলজির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ও পরিবারের সচেতনতাই পারে একটি মেয়েকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। এজন্য সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
ইলিশের উৎপাদন একদিকে কমছে, এতে প্রাকৃতিক কারণও রয়েছে। নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে, মেঘনা নদীর অববাহিকায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি না হলে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে পারে না। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকৃতিক কারণ ও তথাকথিত উন্নয়নের কারণে নদী ভরাট ও দখল হয়ে যাচ্ছে। এমন মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। বরিশাল ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সাধন শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইলিশ একটি মাইগ্রেটরি মাছ এটি সমুদ্র থেকে নদীতে আসে এবং আবার ফিরে যেতে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঝাটকা নিধন। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালালেও এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের প্রাপ্যতা কমাচ্ছে। তবে এসবের বিরুদ্ধে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি জানান,খুব শীঘ্রই ঢাকায় একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নদী থেকে মাছ ধরে হাত বদলের সিন্ডিকেট বন্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি বাজারে মাছ পাবে এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, উপকূল এলাকায় মহিষের চারণভূমি সংকুচিত হয়ে গেছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নির্মিত হচ্ছে। আমাদের দেশে গরু, ছাগল ও মহিষ পালন অন্তত মানুষের খাদ্য ও জীবন রক্ষার জন্য জরুরি। চারণভূমি বিষয়ে আমরা দেখছি যে অনেক কিছু পরিকল্পনা বিহীনভাবে তৈরি হচ্ছে। এতে মহিষের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সঠিক নীতি ও ব্যবস্থা নিলে এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, জিজেইউএস নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ড. ওমর ফারুক, প্রেসিডেন্ট।
বক্তারা বলেন, নদী ও সমুদ্রের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। মৎস্যজীবী, প্রশাসন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একত্রিতভাবে কাজ করলে মাছ চাষ ও সংরক্ষণ কার্যকর হবে।
এছাড়া তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মহিষ পালনের সম্ভাবনা অনেক, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, চারণভূমির অভাব ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা খাতটির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। গবেষণা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিষ পালনকে লাভজনক ও টেকসই খাতে রূপান্তর করা সম্ভব।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান এর সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক শ্রম মান বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শ্রম সচিব বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে। আইএলও সংবিধান অনুযায়ী, অনুমোদিত ও অননুমোদিত উভয় ধরনের সনদের প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক। এই কমিটি আইএলও কনভেনশন ১৪৪-এর বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মতামত, পরামর্শ ও সুপারিশ নিশ্চিত করবে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, আইএলও এর ১১টি কনভেনশন (C-01, C-14, C-19, C-81, C-89, C-100, C-106, C-111, C-118, C-138, MLC-2006) নিয়ে আলোচনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে C-81 (শ্রম পরিদর্শন), C-100 (নারী ও পুরুষের সমান পারিশ্রমিক), C-111 (কর্মসংস্থান ও পেশায় বৈষম্য) এবং C-138 (ন্যূনতম কাজের বয়স) বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন আইএলও সংবিধানের ২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জেনেভাস্থ প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হবে।
সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি নিরান রাজমুঠান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এবং শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ইমপ্লোয়ার্স ফেডারেশন এর প্রতিনিধি , ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি , বেপজা প্রতিনিধি , NCCWE এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদিপশু পালন প্রোটিন ঘাটতি নিরসন, মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। অথচ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে চারণভূমির হ্রাস হচ্ছে, ফলে মহিষের মতো মূল্যবান সম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আজ সকালে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত “উপকূলীয় এলাকার মহিষের চারণভূমি ও উন্নয়নের সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালা ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) এবং কোস্টাল ভেট সোসাইটি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক নীতি নির্ধারণ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে এখনো অনেক চরাঞ্চল রক্ষা করা সম্ভব। মহিষ পালন বাড়াতে পারলে জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা যাবে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিষের চারণভূমি দ্রুত কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং এমনকি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলায় বৃহৎ গরুর বাথান ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিও উঠছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গরুর বাথান ধ্বংস করা দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে? তিনি আরও বলেন, মহিষের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় উপকূলীয় এলাকায় স্পিডবোটভিত্তিক ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্থাপন করা প্রয়োজন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মহিষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও টেকসই চারণভূমি উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাতীয়ভাবে মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বাফেলো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ওমর ফারুক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং, পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, জিজিইউএস-এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্হানীয় খামারীরা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন।
মন্তব্য