৩ নভেম্বরে ঢাকা সেনানিবাসে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা মিশনে অংশ নেয়া সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরা। তারা ভেবেছিলেন, বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া খালেদ মোশাররফ ও শাফায়েত জামিলরা হয়তো কেবল সেনাপ্রধান জিয়াকে বন্দি করে বা ক্ষমতাচ্যুত করেই ক্ষান্ত হবেন না, তারা হয়তো জেল ভেঙে জাতীয় নেতাদের বের করে আনবেন এবং রাষ্ট্রপতি মোশতাক ও ফারুক-রশীদদের হত্যা করবেন।
এই আতঙ্ক থেকে মোশতাক-ফারুক-রশীদরা জেল হত্যার ছক কষে বলে মনে করেন ঘটনার প্রতক্ষদর্শী ও গবেষকরা। বিভিন্ন লেখায় ও বর্ণনায় তারা সেই বিষয়গুলো তুলেও ধরেছেন। এই ঘটনা এতো পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল যে, হত্যাকাণ্ডের ৩০ ঘণ্টা পর সেনানিবাস ও জনসাধারণ এ ঘটনা জানতে পারে। ঘটনার ২০ ঘণ্টার মধ্যেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দেশত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়, তাদের থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।
মূলত জাতীয় নেতাদের হত্যার মাধ্যমে মোশতাক তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করেছিলেন এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
৩ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম সাক্ষী লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি তার তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা বইয়ে বর্ণনা করেছেন জেলহত্যার ঘটনাবলি। বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন: ‘ঘটনার পরের দিন ৪ নভেম্বর দুপুরের দিকে পুলিশের আইজি বঙ্গভবনে ফোন করলে জেনারেল খলিল ফোন ধরেন। আইজি তাকে জানান, গত রাতে আর্মির লোকজন জেলে ঢুকে চার আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছে। তিনি চমকে ওঠেন! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে গিয়ে প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারি মাহবুব আলম চাষীকে সংবাদটি দিয়ে প্রেসিডেন্টকে জানাতে বলেন।
‘চাষী তখনই প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে সংবাদটি দেন। রুম থেকে বেরিয়ে এসে চাষী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ঘটনা জানেন’। ওই দিন বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধাবস্থার উত্তপ্ত পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় সংবাদটি জে. খলিল আর কাউকে শোনাননি, চেপে যান। তার কথা হলো, আমি ডিফেন্স স্টাফ প্রধান। আমার দায়িত্ব প্রেসিডেন্টকে ঘটনাটি জানানো। আমি তাই করেছিলাম। অন্যান্যকে বলাবলি করতে যাব কেন?’
ওই বইয়ে ‘কুখ্যাত জেলহত্যা’ অধ্যায়ে এম এ হামিদ লেখেন: ‘২/৩ নভেম্বর গভীর রাতে সবার অজ্ঞাতে সংঘটিত হলো বিশ্বের এক জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সৈন্য গাড়ি করে সেন্ট্রাল জেলে পৌঁছায়। তারা ভেতরে ঢুকে অন্তরীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাইরে নিয়ে যেতে চায়। জেলার আব্দুল আওয়াল সশস্ত্র সৈন্য দেখে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে ঘাতক দলের অনেকক্ষণ কথা কাটাকাটি হলো। তারা জোর করে ঢুকে যেতে চাচ্ছিল। কারাগারে পাগলা ঘণ্টা বেজে উঠল। ডিআইজি ও আইজি (প্রিজন্স) ছুটে আসলেন।
‘জেল গেট থেকে আইজি (প্রিজন্স) সরাসরি বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মোশতাককে জেল গেটে মোসলেমউদ্দিনের আগমন ও ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা অবগত করেন। মোশতাক জলদগম্ভীর কণ্ঠে তাদের জেলে ঢোকার নির্দেশ দেন।’
ঘটনার ২১ বছর পর জেলহত্যার প্রামাণ্য দলিল উদ্ধার হয়। এটি হলো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের তৈরি করা প্রতিবেদন। গুরুত্বপূর্ণ এ ফাইলটি আইজি (প্রিজন্স)-এর কক্ষের ফাইলের স্তূপে চাপা পড়ে ছিল। ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তা বহু খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার হয়।
এতে দেখা যায়, খোন্দকার মোশতাক এবং মেজর রশীদ চার জাতীয় নেতাকে হত্যার সরাসরি নির্দেশ দেন।
তাজউদ্দিন এবং নজরুল ইসলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১নং সেলে ছিলেন। পাশের সেলে ছিলেন মনসুর আলী ও কামারুজ্জামান। তাদেরকে তাজউদ্দিনের সেলে এনে জড়ো করা হয়। তারপর খুব কাছে থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
তাদের মধ্যে তিনজন সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। তাজউদ্দিনের পায়ে ও হাঁটুতে গুলি লাগে, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ধীরে ধীরে তিনিও মারা যান। তিনি ‘পানি পানি’ বলে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু ভীতবিহ্বল পরিবেশে কেউ এক ফোঁটা পানি এগিয়ে দিতেও সাহস পায়নি।
ঘটনাটি এতই বর্বরোচিত ছিল যে, মুখ খুলে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায়নি।
সৈনিকদের কী প্রয়োজন পড়েছিল, একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের জেলের ভেতরে ঢুকে হত্যা করার?
খোন্দকার মোশতাক আহমদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এ চার নেতা। আর তারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে অটল। কোনো কারণে যদি মোশতাকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব যাতে স্থলাভিষিক্ত না হয়, সে জন্য প্রতিপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্মূল করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন মোশতাক। রিসালদার মোসলেমউদ্দিন তার এ নীল নকশার বাস্তবায়ন করেন মাত্র।
কারাগারের অভ্যন্তরে এরকম নির্মম ঘটনা ইতিপূর্বে আর কখনও ঘটেনি। সমগ্র জেলখানায় নেমে আসে ভয়, ভীতি ও বিষাদের ছায়া।
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম তার এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য, স্বাধীনতার প্রথম দশক বইয়ের ৮৯ পৃষ্ঠায় জেলহত্যাকে বর্ণনা করেছেন এভাবে: ‘৪ তারিখ সকালবেলায় খবরে জানা যায়, ৩ তারিখ রাতেই জেলে আটককৃত সর্বজনাব নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান – এ চার নেতাকে রাষ্ট্রপতি মোশতাক, মেজর রশীদ ও ফারুকের আদেশে জেলের ভিতরেই নৃশংসভাবে ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের ট্যাংক রেজিমেন্টের কজন সৈনিক হত্যা করে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জেলখানায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের খবর ৩০ ঘণ্টা পর বাইরের লোকজনের কাছে প্রকাশ পায়। রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক ও ফারুক-রশীদরা যখন ৩ তারিখের অভ্যুত্থানের খবর পায় এবং তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দেয়, তখনই এদের ধারণা জন্মে যে, এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেলে আটককৃত চার নেতাকে বের করে এনে রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাককে সরিয়ে নতুন সরকার গঠনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখা বিএনপি সময়-অসময় বইয়ের ৭০ ও ৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় বিতর্কিত ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনকে উদ্বৃতি করে লেখেন: ‘৪ নভেম্বর কেবিনেট বৈঠক ডাকেন প্রেসিডেন্ট মোশতাক। বৈঠক চলাকালে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়েন কর্নেল শাফায়েত জামিল, মেজর ইকবাল, কর্নেল আবদুল মালেক ও লে. কর্নেল জাফর ইমাম। চারদিকে অস্ত্র উঁচিয়ে তারা চিৎকার করতে থাকেন। মন্ত্রীদের লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করে ট্রিগারে হাত রেখে কেউ বলছে, “উই ওয়ান্ট খালেদ মোশাররফ। হি হ্যাজ টু বি মেইড চিফ অব স্টাফ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, ইউ আর এ বাস্টার্ড স্যার, ইউ আর এ কিলার। ইউ উইল বি ফিনিশড।’
মহিউদ্দিন আহমদ এ বইতে আরও লিখেছেন: “কর্নেল শাফায়াত জেল হত্যাকাণ্ডের খবর পান ৪ নভেম্বর সকাল ১০টায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি বঙ্গভবনে যান। সারা দিন বঙ্গভবনে বসে খালেদের দেনদরবারের কথা জেনে তিনি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন। শাফায়াত দেখলেন করিডরে মোশতাক খালেদকে উত্তেজিতভাবে বলছেন, ‘আই হ্যাভ সিন মেনি ব্রিগেডিয়ারস অ্যান্ড জেনারেলস অব পাকিস্তান আর্মি। ডোন্ট ট্রাই টু টিচ মি’।
“পাশে ওসমানী দাঁড়িয়ে আছেন। করিডরে মেজর ইকবাল ও অনেক সৈন্য ছিলেন। ইকবাল ততোধিক উত্তেজিত কণ্ঠে মোশতাককে বললেন, ‘ইউ হ্যাভ সিন দ্য জেনারেলস অফ পাকিস্তান আর্মি। নাও ইউ সি দ্য মেজরস অফ বাংলাদেশ আর্মি।’ এর মধ্যে সৈনিকেরা গুলি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওসমানী বিপদ আঁচ করে বলে উঠলেন, ‘শাফায়াত, সেভ দ্য সিচুয়েশন। ডোন্ট রিপিট বার্মা।’ মেজর ইকবাল ও মোশতাকের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালেন কর্নেল শাফায়াত, ইকবালকে এক পাশে সরিয়ে দিলেন এবং মোশতাককে নিয়ে কেবিনেট কক্ষে ঢুকলেন।”
বইটিতে আরও লেখা হয়েছে, “ওই ঘরে মেজর জেনারেল খলিল বসে ছিলেন। শাফায়াত তাকে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘আপনি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ, প্রায় ৪০ ঘণ্টা হয়ে গেছে জেলখানায় জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, তারও ঘণ্টা কুড়ি পর দেশ ত্যাগ করেছে খুনিরা, আপনি এ সবই জানেন, কিন্তু আমাদের বলেননি কিছুই। এই ডিসগ্রেসফুল আচরণের জন্য আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছি।
“শাফায়াত এরপর ধরলেন মোশতাককে। “স্যার, আপনি আর পদে থাকতে পারেন না। কারণ, আপনি একজন খুনি। জাতির পিতাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। এসব অপরাধের জন্য বাংলার জনগণ আপনার বিচার করবে। আপনি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। আপনার পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্ট হবেন।”
৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোশতাক ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ নিয়োগ করেন। খালেদকে মেজর জেনারেলের পদ দেয়া হয়। ওই রাতেই মোশতাক পদত্যাগপত্রে সই করেন। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে মোশতাককে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৫ আগস্ট ও জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও নুরুল ইসলাম মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের জেলহত্যা রিপোর্ট
তখনকার আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের একটি চিঠি সংযুক্ত করে তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্তব্যরত ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) খন্দকার আবদুল আওয়াল একটি রিপোর্ট পাঠান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। নুরুজ্জামানের সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে:
‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোর ৩টায় আমি বঙ্গভবন থেকে মেজর রশীদের একটি ফোন পাই। তিনি আমার কাছে জানতে চান, ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কোনো সমস্যা আছে নাকি। আমি জানালাম, ঠিক এই মুহূর্তের অবস্থা আমার জানা নেই। এরপর তিনি আমাকে জানালেন, কয়েকজন বন্দিকে জোর করে নিয়ে যেতে কয়েকজন সেনাসদস্য জেলগেটে যেতে পারে, আমি যেন জেল গার্ডদের সতর্ক করে দিই। সে অনুযায়ী আমি সেন্ট্রাল জেলে ফোন করি এবং জেলগেটে দায়িত্বে নিয়োজিত ওয়ার্ডারদের ম্যাসেজটি জেলারকে পৌঁছে দিতে বলি, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
‘৩/৪ মিনিট পর বঙ্গভবন থেকে আরেকজন আর্মি অফিসারের ফোন পাই। তিনি জানতে চান, আমি ইতোমধ্যে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে গার্ডদের সতর্ক করে দিয়েছি কি-না। আমি ইতিবাচক জবাব দেওয়ার পর তিনি আমাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য জেলগেটে চলে যেতে বলেন। আমি তখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ডিআইজি প্রিজন্সকে ফোন করি। খবরটি জানিয়ে আমি তাকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলগেটে চলে যেতে বলি। দেরি না করে আমিও জেলগেটে চলে যাই এবং ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া জেলারকে আবারও গার্ডদের সতর্ক করে দিতে বলি। এরই মধ্যে ডিআইজিও জেলগেটে পৌঁছেন। বঙ্গভবন থেকে পাওয়া খবরটি আমি আবার তাকে জানাই।
‘এর পরপরই মেজর রশীদের আরেকটি ফোন পাই। তিনি আমাকে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই জনৈক ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে যেতে পারেন। তিনি আমাকে কিছু বলবেন। তাকে যেন জেল অফিসে নেয়া হয় এবং (১) জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, (২) জনাব মনসুর আলী, (৩) জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও (৪) জনাব কামারুজ্জামান - এই ৪ জন বন্দিকে যেন তাকে দেখানো হয়।
‘এ খবর শুনে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাই এবং টেলিফোনে প্রেসিডেন্টকে খবর দেয়া হয়। আমি কিছু বলার আগেই প্রেসিডেন্ট জানতে চান, আমি পরিষ্কারভাবে মেজর রশীদের নির্দেশ বুঝতে পেরেছি কিনা এবং আমি ইতিবাচক জবাব দিলে তিনি আমাকে তা পালন করার আদেশ দেন।
‘কয়েক মিনিটের মধ্যে ৪ জন সেনাসদস্যসহ কালো পোশাক পরা ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে পৌঁছায়। ডিআইজি প্রিজন্সের অফিসকক্ষে ঢুকেই তিনি আমাদের বলেন, পূর্বোল্লিখিত বন্দিদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে তাকে নিয়ে যেতে। আমি তাকে বলি, বঙ্গভবনের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি আমাকে কিছু বলবেন।
‘উত্তরে তিনি জানান, তিনি তাদের গুলি করবেন। এ ধরনের প্রস্তাবে আমরা সবাই বিমূঢ় হয়ে যাই। আমি নিজে এবং ডিআইজি প্রিজন্স ফোনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। সে সময় জেলারের ফোনে বঙ্গভবন থেকে মেজর রশীদের আরেকটি কল আসে। আমি ফোনটি ধরলে মেজর রশীদ জানতে চান, ক্যাপ্টেন মোসলেম সেখানে পৌঁছেছেন কি-না। আমি ইতিবাচক জবাব দিই এবং তাকে বলি, কী ঘটছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন মেজর রশীদ আমাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
‘আমি প্রেসিডেন্টকে ক্যাপ্টেনের বন্দিদের গুলি করার ইচ্ছার কথা জানাই। প্রেসিডেন্ট জবাব দেন, “তুমি ওদের কথা শোনো। রশীদ যা বলেছে, সেই মোতাবেক কাজ করো।” আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সরাসরি জড়িত।’
ওই প্রতিবেদনে ডিআইজি (প্রিজন্স) খন্দকার আবদুল আওয়াল লেখেন:
‘তখন আমরা আরও উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্যাপ্টেন মোসলেম বন্দুকের মুখে আমাকে, ডিআইজি. প্রিজন্স, জেলার ও সে সময় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তা সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে উপরোল্লিখিত বন্দিদের রাখা হয়েছে। ক্যাপ্টেন ও তার বাহিনীকে তখন উন্মাদের মতো লাগছিল এবং আমাদের কারো তাদের নির্দেশ অমান্য করার উপায় ছিল না, তার নির্দেশ অনুযায়ী পূর্বোল্লিখিত ৪ জনকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করা হয় এবং একটি রুমে আনা হয়, সেখানে জেলার তাদের শনাক্ত করেন। ক্যাপ্টেন মোসলেম এবং তার বাহিনী তখন বন্দিদের গুলি করে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পর নায়েক এ আলীর নেতৃত্বে আরেকটি সেনাদল সবাই মারা গেছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে জেলে আসে। তারা সরাসরি সেই ওয়ার্ডে চলে যায় এবং পুনরায় মৃতদেহে বেয়নেট-চার্জ করে।’
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গভর্নর হাউসে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।’
এর আগে দুই নেতা গভর্নর হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে ১৫ মিনিটের জন্য একান্ত বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি—একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন ও তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছি। একইভাবে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে আমাদের সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা ও ব্যাংকক যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃঢ় কাঠামো প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সফরটি ‘প্রতিবেশী’ নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরও নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কেও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ কামনা করেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে শুক্রবার গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসাকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণেরও প্রস্তাবও দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি, একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্টে (এলওআই) সই করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত।
‘সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখি।’
বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান পরিসর বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহজীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) আশ্বস্ত করেছি। আমি থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার ও শুধু থাইল্যান্ডের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি।’
আরও পড়ুন:দেশের দুটি জেলায় অতি তীব্র ও ১৬টিতে তীব্র দাবদাহ চলছে জানিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, সেটি অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানিয়েছে।
পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা এবং খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার (১০ জেলার মধ্যে বাকি আটটি) ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
তাপমাত্রার বিষয়ে অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউএনবি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান থাই প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় নথিতে সই করা হয়। দুই নেতার মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গভর্নমেন্ট হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেয়া গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইয়ে সই করার আগে স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
গভর্নমেন্ট হাউস ত্যাগ করার আগে শেখ হাসিনা সেখানে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ছয় দিনের সরকারি সফরে বুধবার ব্যাংককে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:মেট্রোরেলের চলমান প্রকল্পটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার সকালে সাভার উপজেলা পরিষদের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় মেট্রোরেলের এমআরাটি-৫ ও এমআরটি-৬-এর চলমান প্রকল্পটি হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ অথবা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান তারা।
কর্মসূচিতে সড়কের উপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে, সেই প্রকল্পে সাভারকে যুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি কামরুজামান খান।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনটি নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেন। সূত্র: ইউএনবি
তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনটি দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নির্দিষ্ট কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং অবমূল্যায়ন করেছে, যা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোবল ও কার্যকারিতার জন্য ক্ষতিকর।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন প্রতিবেদনে স্থান পায়নি। অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘প্রতিবেদনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়লে স্পষ্ট হবে যে এতে পৃথকভাবে রিপোর্ট করা বা কথিত ঘটনাগুলোর পরিপূর্ণ রেফারেন্স দেয়া হয়নি। এটি সরলীকরণ অনুমাননির্ভর তথ্যে ভরপুর।’
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার বিষয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। একইসঙ্গে আশা প্রকাশ করেছে, ফিলিস্তিনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিরপরাধ নারী ও শিশু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চলমান প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করবে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘গত বছর অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অজুহাতে এবং বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা, সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়টি প্রতিবেদনে অনুপস্থিত।
‘বেশিরভাগই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার (বেনামী উৎসসহ) কাছ থেকে পাওয়া অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা সমর্থিত।’
‘প্রতিবেদনটি সহজাত পক্ষপাতদুষ্ট, এটি বেশ স্পষ্ট।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অব্যাহত আগ্রহের প্রশংসা করেছে।
মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা যতই প্রত্যাশা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। মানবাধিকার কোনো শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে আর্থ-সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই এসব অধিকার আদায়ের গতিকে সীমাবদ্ধ করে।’
‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
‘যেসব ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে টানা মেয়াদে মানবাধিকার পরিস্থিতির অর্থবহ অগ্রগতি করতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচক্ষণ পর্যবেক্ষক লক্ষ্য করবেন, এ জাতীয় প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, প্রবীণদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারের সুবিধা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা এবং আরও অনেক কিছুতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও এটি বিএনপি এবং তার রাজনৈতিক মিত্রদের সহিংসতা ও ভাঙচুরের বিষয়টি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনা সাধারণ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে এবং এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
‘এ ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা থেকে জনসাধারণের জীবন, শৃঙ্খলা ও সম্পত্তি রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ এবং প্রতিকারের চেষ্টা করার রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকেও প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে। এটি খুবই হাস্যকর।’
তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত যে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করেছে এবং যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের আন্তরিক সমর্থন ও পেশাদারত্বের ভিত্তিতে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের নির্বাচন বর্জন সত্ত্বেও ৪২ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে বার বার বেশকিছু অভিযোগ বা অনুযোগ উঠে এসেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
‘উদাহরণস্বরূপ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা মিয়ানমারের নাগরিক বা বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃতির বৈধ দাবিকে ক্ষুণ্ন করছে।’
অন্য একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দেশের সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থী ‘আদিবাসী জনগণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা অব্যাহত রয়েছে, যা অযৌক্তিক উত্তেজনা ও বিভাজনকে উসকে দেয়ার প্রচেষ্টার নামান্তর।
“আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেদনটি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিনিময় করা অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য বাদ দিয়েছে বা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
“উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহীন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলো আইনের আওতাভুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেসমিন সুলতানার ক্ষেত্রে যে বিচারিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি, বিশেষ করে চলমান যথাযথ প্রক্রিয়ার বিষয়টি।”
মুখপাত্র বলেন, ‘একইভাবে শ্রম অধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো, বিশেষত ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধকরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’
‘বরাবরের মতোই প্রতিবেদনে আইনগত কর্মকাণ্ডের চিত্র ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও কারখানা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি বা ব্যবস্থাপনা কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নামে অযাচিত বাধা বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গৃহীত আইনানুগ পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘প্রতিকার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে গৃহীত প্রশাসনিক ও বিচারিক পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে প্রতিবেদনে মানবাধিকারের পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অংশ হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তি বা সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশের প্রবণতা বজায় রাখা হয়েছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সাধারণভাবে বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নজরে নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রত্যাশায় রয়েছে।’
আরও পড়ুন:শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য