৩ নভেম্বরে ঢাকা সেনানিবাসে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যা মিশনে অংশ নেয়া সেনা কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরা। তারা ভেবেছিলেন, বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া খালেদ মোশাররফ ও শাফায়েত জামিলরা হয়তো কেবল সেনাপ্রধান জিয়াকে বন্দি করে বা ক্ষমতাচ্যুত করেই ক্ষান্ত হবেন না, তারা হয়তো জেল ভেঙে জাতীয় নেতাদের বের করে আনবেন এবং রাষ্ট্রপতি মোশতাক ও ফারুক-রশীদদের হত্যা করবেন।
এই আতঙ্ক থেকে মোশতাক-ফারুক-রশীদরা জেল হত্যার ছক কষে বলে মনে করেন ঘটনার প্রতক্ষদর্শী ও গবেষকরা। বিভিন্ন লেখায় ও বর্ণনায় তারা সেই বিষয়গুলো তুলেও ধরেছেন। এই ঘটনা এতো পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছিল যে, হত্যাকাণ্ডের ৩০ ঘণ্টা পর সেনানিবাস ও জনসাধারণ এ ঘটনা জানতে পারে। ঘটনার ২০ ঘণ্টার মধ্যেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দেশত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়, তাদের থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়।
মূলত জাতীয় নেতাদের হত্যার মাধ্যমে মোশতাক তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করেছিলেন এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
৩ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম সাক্ষী লে. কর্নেল (অব.) এম এ হামিদ পিএসসি তার তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা বইয়ে বর্ণনা করেছেন জেলহত্যার ঘটনাবলি। বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন: ‘ঘটনার পরের দিন ৪ নভেম্বর দুপুরের দিকে পুলিশের আইজি বঙ্গভবনে ফোন করলে জেনারেল খলিল ফোন ধরেন। আইজি তাকে জানান, গত রাতে আর্মির লোকজন জেলে ঢুকে চার আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করেছে। তিনি চমকে ওঠেন! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে গিয়ে প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারি মাহবুব আলম চাষীকে সংবাদটি দিয়ে প্রেসিডেন্টকে জানাতে বলেন।
‘চাষী তখনই প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে সংবাদটি দেন। রুম থেকে বেরিয়ে এসে চাষী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ঘটনা জানেন’। ওই দিন বঙ্গভবন ও ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধাবস্থার উত্তপ্ত পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় সংবাদটি জে. খলিল আর কাউকে শোনাননি, চেপে যান। তার কথা হলো, আমি ডিফেন্স স্টাফ প্রধান। আমার দায়িত্ব প্রেসিডেন্টকে ঘটনাটি জানানো। আমি তাই করেছিলাম। অন্যান্যকে বলাবলি করতে যাব কেন?’
ওই বইয়ে ‘কুখ্যাত জেলহত্যা’ অধ্যায়ে এম এ হামিদ লেখেন: ‘২/৩ নভেম্বর গভীর রাতে সবার অজ্ঞাতে সংঘটিত হলো বিশ্বের এক জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সৈন্য গাড়ি করে সেন্ট্রাল জেলে পৌঁছায়। তারা ভেতরে ঢুকে অন্তরীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাইরে নিয়ে যেতে চায়। জেলার আব্দুল আওয়াল সশস্ত্র সৈন্য দেখে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে ঘাতক দলের অনেকক্ষণ কথা কাটাকাটি হলো। তারা জোর করে ঢুকে যেতে চাচ্ছিল। কারাগারে পাগলা ঘণ্টা বেজে উঠল। ডিআইজি ও আইজি (প্রিজন্স) ছুটে আসলেন।
‘জেল গেট থেকে আইজি (প্রিজন্স) সরাসরি বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মোশতাককে জেল গেটে মোসলেমউদ্দিনের আগমন ও ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা অবগত করেন। মোশতাক জলদগম্ভীর কণ্ঠে তাদের জেলে ঢোকার নির্দেশ দেন।’
ঘটনার ২১ বছর পর জেলহত্যার প্রামাণ্য দলিল উদ্ধার হয়। এটি হলো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের তৈরি করা প্রতিবেদন। গুরুত্বপূর্ণ এ ফাইলটি আইজি (প্রিজন্স)-এর কক্ষের ফাইলের স্তূপে চাপা পড়ে ছিল। ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তা বহু খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার হয়।
এতে দেখা যায়, খোন্দকার মোশতাক এবং মেজর রশীদ চার জাতীয় নেতাকে হত্যার সরাসরি নির্দেশ দেন।
তাজউদ্দিন এবং নজরুল ইসলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১নং সেলে ছিলেন। পাশের সেলে ছিলেন মনসুর আলী ও কামারুজ্জামান। তাদেরকে তাজউদ্দিনের সেলে এনে জড়ো করা হয়। তারপর খুব কাছে থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
তাদের মধ্যে তিনজন সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। তাজউদ্দিনের পায়ে ও হাঁটুতে গুলি লাগে, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে ধীরে ধীরে তিনিও মারা যান। তিনি ‘পানি পানি’ বলে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু ভীতবিহ্বল পরিবেশে কেউ এক ফোঁটা পানি এগিয়ে দিতেও সাহস পায়নি।
ঘটনাটি এতই বর্বরোচিত ছিল যে, মুখ খুলে কেউ কিছু বলতেও সাহস পায়নি।
সৈনিকদের কী প্রয়োজন পড়েছিল, একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের জেলের ভেতরে ঢুকে হত্যা করার?
খোন্দকার মোশতাক আহমদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এ চার নেতা। আর তারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে অটল। কোনো কারণে যদি মোশতাকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব যাতে স্থলাভিষিক্ত না হয়, সে জন্য প্রতিপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্মূল করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন মোশতাক। রিসালদার মোসলেমউদ্দিন তার এ নীল নকশার বাস্তবায়ন করেন মাত্র।
কারাগারের অভ্যন্তরে এরকম নির্মম ঘটনা ইতিপূর্বে আর কখনও ঘটেনি। সমগ্র জেলখানায় নেমে আসে ভয়, ভীতি ও বিষাদের ছায়া।
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.) বীরবিক্রম তার এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য, স্বাধীনতার প্রথম দশক বইয়ের ৮৯ পৃষ্ঠায় জেলহত্যাকে বর্ণনা করেছেন এভাবে: ‘৪ তারিখ সকালবেলায় খবরে জানা যায়, ৩ তারিখ রাতেই জেলে আটককৃত সর্বজনাব নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন, মনসুর আলী ও কামরুজ্জামান – এ চার নেতাকে রাষ্ট্রপতি মোশতাক, মেজর রশীদ ও ফারুকের আদেশে জেলের ভিতরেই নৃশংসভাবে ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের ট্যাংক রেজিমেন্টের কজন সৈনিক হত্যা করে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জেলখানায় সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের খবর ৩০ ঘণ্টা পর বাইরের লোকজনের কাছে প্রকাশ পায়। রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক ও ফারুক-রশীদরা যখন ৩ তারিখের অভ্যুত্থানের খবর পায় এবং তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের আশঙ্কা দেখা দেয়, তখনই এদের ধারণা জন্মে যে, এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেলে আটককৃত চার নেতাকে বের করে এনে রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাককে সরিয়ে নতুন সরকার গঠনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখা বিএনপি সময়-অসময় বইয়ের ৭০ ও ৭১ নম্বর পৃষ্ঠায় বিতর্কিত ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেনকে উদ্বৃতি করে লেখেন: ‘৪ নভেম্বর কেবিনেট বৈঠক ডাকেন প্রেসিডেন্ট মোশতাক। বৈঠক চলাকালে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়েন কর্নেল শাফায়েত জামিল, মেজর ইকবাল, কর্নেল আবদুল মালেক ও লে. কর্নেল জাফর ইমাম। চারদিকে অস্ত্র উঁচিয়ে তারা চিৎকার করতে থাকেন। মন্ত্রীদের লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করে ট্রিগারে হাত রেখে কেউ বলছে, “উই ওয়ান্ট খালেদ মোশাররফ। হি হ্যাজ টু বি মেইড চিফ অব স্টাফ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, ইউ আর এ বাস্টার্ড স্যার, ইউ আর এ কিলার। ইউ উইল বি ফিনিশড।’
মহিউদ্দিন আহমদ এ বইতে আরও লিখেছেন: “কর্নেল শাফায়াত জেল হত্যাকাণ্ডের খবর পান ৪ নভেম্বর সকাল ১০টায়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি বঙ্গভবনে যান। সারা দিন বঙ্গভবনে বসে খালেদের দেনদরবারের কথা জেনে তিনি বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন। শাফায়াত দেখলেন করিডরে মোশতাক খালেদকে উত্তেজিতভাবে বলছেন, ‘আই হ্যাভ সিন মেনি ব্রিগেডিয়ারস অ্যান্ড জেনারেলস অব পাকিস্তান আর্মি। ডোন্ট ট্রাই টু টিচ মি’।
“পাশে ওসমানী দাঁড়িয়ে আছেন। করিডরে মেজর ইকবাল ও অনেক সৈন্য ছিলেন। ইকবাল ততোধিক উত্তেজিত কণ্ঠে মোশতাককে বললেন, ‘ইউ হ্যাভ সিন দ্য জেনারেলস অফ পাকিস্তান আর্মি। নাও ইউ সি দ্য মেজরস অফ বাংলাদেশ আর্মি।’ এর মধ্যে সৈনিকেরা গুলি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওসমানী বিপদ আঁচ করে বলে উঠলেন, ‘শাফায়াত, সেভ দ্য সিচুয়েশন। ডোন্ট রিপিট বার্মা।’ মেজর ইকবাল ও মোশতাকের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালেন কর্নেল শাফায়াত, ইকবালকে এক পাশে সরিয়ে দিলেন এবং মোশতাককে নিয়ে কেবিনেট কক্ষে ঢুকলেন।”
বইটিতে আরও লেখা হয়েছে, “ওই ঘরে মেজর জেনারেল খলিল বসে ছিলেন। শাফায়াত তাকে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘আপনি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ, প্রায় ৪০ ঘণ্টা হয়ে গেছে জেলখানায় জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হয়েছে, তারও ঘণ্টা কুড়ি পর দেশ ত্যাগ করেছে খুনিরা, আপনি এ সবই জানেন, কিন্তু আমাদের বলেননি কিছুই। এই ডিসগ্রেসফুল আচরণের জন্য আমি আপনাকে অ্যারেস্ট করতে বাধ্য হচ্ছি।
“শাফায়াত এরপর ধরলেন মোশতাককে। “স্যার, আপনি আর পদে থাকতে পারেন না। কারণ, আপনি একজন খুনি। জাতির পিতাকে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। এসব অপরাধের জন্য বাংলার জনগণ আপনার বিচার করবে। আপনি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। আপনার পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্ট হবেন।”
৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোশতাক ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ নিয়োগ করেন। খালেদকে মেজর জেনারেলের পদ দেয়া হয়। ওই রাতেই মোশতাক পদত্যাগপত্রে সই করেন। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে মোশতাককে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৫ আগস্ট ও জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও নুরুল ইসলাম মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের জেলহত্যা রিপোর্ট
তখনকার আইজি (প্রিজন্স) নুরুজ্জামানের একটি চিঠি সংযুক্ত করে তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্তব্যরত ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) খন্দকার আবদুল আওয়াল একটি রিপোর্ট পাঠান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। নুরুজ্জামানের সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে:
‘১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ভোর ৩টায় আমি বঙ্গভবন থেকে মেজর রশীদের একটি ফোন পাই। তিনি আমার কাছে জানতে চান, ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কোনো সমস্যা আছে নাকি। আমি জানালাম, ঠিক এই মুহূর্তের অবস্থা আমার জানা নেই। এরপর তিনি আমাকে জানালেন, কয়েকজন বন্দিকে জোর করে নিয়ে যেতে কয়েকজন সেনাসদস্য জেলগেটে যেতে পারে, আমি যেন জেল গার্ডদের সতর্ক করে দিই। সে অনুযায়ী আমি সেন্ট্রাল জেলে ফোন করি এবং জেলগেটে দায়িত্বে নিয়োজিত ওয়ার্ডারদের ম্যাসেজটি জেলারকে পৌঁছে দিতে বলি, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
‘৩/৪ মিনিট পর বঙ্গভবন থেকে আরেকজন আর্মি অফিসারের ফোন পাই। তিনি জানতে চান, আমি ইতোমধ্যে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে গার্ডদের সতর্ক করে দিয়েছি কি-না। আমি ইতিবাচক জবাব দেওয়ার পর তিনি আমাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য জেলগেটে চলে যেতে বলেন। আমি তখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ডিআইজি প্রিজন্সকে ফোন করি। খবরটি জানিয়ে আমি তাকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলগেটে চলে যেতে বলি। দেরি না করে আমিও জেলগেটে চলে যাই এবং ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া জেলারকে আবারও গার্ডদের সতর্ক করে দিতে বলি। এরই মধ্যে ডিআইজিও জেলগেটে পৌঁছেন। বঙ্গভবন থেকে পাওয়া খবরটি আমি আবার তাকে জানাই।
‘এর পরপরই মেজর রশীদের আরেকটি ফোন পাই। তিনি আমাকে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই জনৈক ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে যেতে পারেন। তিনি আমাকে কিছু বলবেন। তাকে যেন জেল অফিসে নেয়া হয় এবং (১) জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, (২) জনাব মনসুর আলী, (৩) জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও (৪) জনাব কামারুজ্জামান - এই ৪ জন বন্দিকে যেন তাকে দেখানো হয়।
‘এ খবর শুনে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাই এবং টেলিফোনে প্রেসিডেন্টকে খবর দেয়া হয়। আমি কিছু বলার আগেই প্রেসিডেন্ট জানতে চান, আমি পরিষ্কারভাবে মেজর রশীদের নির্দেশ বুঝতে পেরেছি কিনা এবং আমি ইতিবাচক জবাব দিলে তিনি আমাকে তা পালন করার আদেশ দেন।
‘কয়েক মিনিটের মধ্যে ৪ জন সেনাসদস্যসহ কালো পোশাক পরা ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে পৌঁছায়। ডিআইজি প্রিজন্সের অফিসকক্ষে ঢুকেই তিনি আমাদের বলেন, পূর্বোল্লিখিত বন্দিদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে তাকে নিয়ে যেতে। আমি তাকে বলি, বঙ্গভবনের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি আমাকে কিছু বলবেন।
‘উত্তরে তিনি জানান, তিনি তাদের গুলি করবেন। এ ধরনের প্রস্তাবে আমরা সবাই বিমূঢ় হয়ে যাই। আমি নিজে এবং ডিআইজি প্রিজন্স ফোনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। সে সময় জেলারের ফোনে বঙ্গভবন থেকে মেজর রশীদের আরেকটি কল আসে। আমি ফোনটি ধরলে মেজর রশীদ জানতে চান, ক্যাপ্টেন মোসলেম সেখানে পৌঁছেছেন কি-না। আমি ইতিবাচক জবাব দিই এবং তাকে বলি, কী ঘটছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন মেজর রশীদ আমাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
‘আমি প্রেসিডেন্টকে ক্যাপ্টেনের বন্দিদের গুলি করার ইচ্ছার কথা জানাই। প্রেসিডেন্ট জবাব দেন, “তুমি ওদের কথা শোনো। রশীদ যা বলেছে, সেই মোতাবেক কাজ করো।” আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সরাসরি জড়িত।’
ওই প্রতিবেদনে ডিআইজি (প্রিজন্স) খন্দকার আবদুল আওয়াল লেখেন:
‘তখন আমরা আরও উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্যাপ্টেন মোসলেম বন্দুকের মুখে আমাকে, ডিআইজি. প্রিজন্স, জেলার ও সে সময় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তা সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে উপরোল্লিখিত বন্দিদের রাখা হয়েছে। ক্যাপ্টেন ও তার বাহিনীকে তখন উন্মাদের মতো লাগছিল এবং আমাদের কারো তাদের নির্দেশ অমান্য করার উপায় ছিল না, তার নির্দেশ অনুযায়ী পূর্বোল্লিখিত ৪ জনকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করা হয় এবং একটি রুমে আনা হয়, সেখানে জেলার তাদের শনাক্ত করেন। ক্যাপ্টেন মোসলেম এবং তার বাহিনী তখন বন্দিদের গুলি করে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পর নায়েক এ আলীর নেতৃত্বে আরেকটি সেনাদল সবাই মারা গেছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে জেলে আসে। তারা সরাসরি সেই ওয়ার্ডে চলে যায় এবং পুনরায় মৃতদেহে বেয়নেট-চার্জ করে।’
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য