সমৃদ্ধ দেশ গড়তে দেশের যুবসমাজকে উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
যুবসমাজের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান জানান, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বেকারত্ব, অপরাধ ও সহিংসতা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়। এ বিষয়ে যুবসমাজকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় যুব দিবসের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার বঙ্গভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অমিত সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে অবশ্যই উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাবতীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, কর্মসম্পাদনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
তবে যুব কার্যক্রম সুবিস্তৃত হবে, সমৃদ্ধ দেশ গঠন সম্ভব হবে বলেও মত দেন রাষ্ট্রপতি।
সম্ভাবনার সঙ্গে যুবসমাজের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে বলেও মনে করেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কর্মসংস্থানের অভাব, অপরাধ ও সহিংসতা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়। আজকাল প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধের খবর প্রচারিত হয়। এতে অনেক যুবকের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারেও যুবসমাজকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
যুবকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘শুধু নিজে ভালো থাকলে চলবে না- অন্যরাও যাতে ভালো থাকে সে চেষ্টাও করতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকদেরও তাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা যাতে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি যুবসমাজকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার কাজে আত্মনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানাই।’
দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-এর সদ্ব্যবহার করাকে প্রথম ও প্রধান কাজ বলে মনে করেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘সে জন্য যুবদেরকে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণসহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে মানবসম্পদে পরিণত করছে। ফলে তারা কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সময়োপযোগী আধুনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবে এবং একই সঙ্গে ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সামাজিক ও আর্থিক দিক দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মর্যাদাপূর্ণ জীবন-যাপন করবে। এতে তোমাদের অবস্থার উন্নতির সাথে দেশও দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে সমৃদ্ধির সুদৃঢ় সোপানে স্থায়ী অবস্থান নেবে।’
আরও পড়ুন:দেশের দুটি বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে সোমবার জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত ভারি বর্ষণের সতর্কবাণীতে এ তথ্য জানানো হয়।
সতর্কবাণীতে বলা হয়, ‘স্থল গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও আজ (১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ) দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।’
দেশের আর্থিক খাত সংস্কার নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনাকে দ্বিপক্ষীয় অর্থবহ সম্পর্কের ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। তিনি বলেছেন, সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সূত্র: ইউএনবি
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় একাধিক বৈঠকে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থবহ সম্পর্কের একটি ভিত্তি। আমরা ভবিষ্যতে বিভিন্ন স্তরে এই আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটি একটি ভালো ভিত্তি।’
জসীম উদ্দিন বলেন, তারা আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছেন এবং প্রাথমিকভাবে অর্থ পাচারের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সবে শুরু হয়েছে আলোচনা। চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বাংলাদেশ আর্থিক খাতে সংস্কারের জন্য কিছু খাত চিহ্নিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসব খাতে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’
আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে জসীম বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে শ্রম ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে জানিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছে।’
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে। তাদের সম্মানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।
ভারত সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তাই এ ধরনের কোনো বিষয় এখানে আলোচিত হয়নি।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বৈঠকের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আগতদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না।
‘সেখানে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সময়সূচি মিলে গেলে তাদের একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে খুব ভালো লাগছে। আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি প্রশমনে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রতিনিধি দলটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে। তারা বাংলাদেশের নতুন গতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির পথে সমর্থন করে বলে জানায়।
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততাসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা।’
গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে এটিই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফর।
যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে শ্রম সংস্কার, বাণিজ্য সহজীকরণ, রোহিঙ্গা সংকট এবং জিএসপি সুবিধা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক হয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে হবে এবং পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।’
রোববার বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার হচ্ছে এবং রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে হবে। প্রতিটি সেক্টরে মেধাবীর প্রয়োজন রয়েছে। কারণ দেশের বাইরের মেধাবী লোকজন এসে চাকরি করছে। আর আমাদের দেশের টাকা নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে করে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে এবং যোগত্যা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’
সারজিস আলম আরো বলেন, একটা সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশকে স্বৈরাচর মুক্ত করেছি। আমরা যখন রাষ্ট্রকে গঠন করতে যাব, তখন আমাদের মানসম্মত মেধা দরকার। আর সে মেধার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। দেশ গঠন করতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধা সম্পন্ন মানুষ লাগবে।
এই সমন্বয়ক বলেন, ‘এতো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। তবে দেশে আবার কোনো রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করতে চাইলে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত থাকব।’
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লা সালেহিন নয়ন, সামিয়া মাসুদ মুমু, মবাশ্বিরু জামান হাসান মৃধা, মেহেরাব হোসেন সিফাত, মুহাম্মদ হৃদয় হোসেন, আদিনা খান. খোন্দকার রায়হা, কাজী ইসমাইল হোসেন রুদ্র ও কাজী জুবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে, এর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।’
একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ না করে যারা মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: ইউএনবি
ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘বিগত আন্দোলনে প্রধান বক্তব্য ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা। তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজনের চাকরি হয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।’
রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি হয়েছে তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কি না, ন্যায্যভাবে হয়েছে কি না- বিষয়টি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে। সেখানে বহুবিধ মামলা রয়েছে। তিন হাজার সাত শ’র মতো মামলা পেন্ডিং আছে, রিট করা আছে। সেই মামলাগুলো অ্যাড্রেস করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার মাঝখানে একটা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় রয়েছে, সেটা হচ্ছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকা। কারা মুক্তিযোদ্ধা হবে না হবে- সেটা জামুকা নির্ধারণ করে দিত। মন্ত্রণালয় শুধু তাদের নির্ধারিত হওয়া বিষয়টি বাস্তবায়নে যেত।
‘এটার আইনগত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া বহু জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও আপত্তি আছে। এসব বিষয়ে আমরা যখন একটা পর্যায়ে যাব তখন আপনাদের ডেকে জাতিকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা রিভিউ হবে কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই হবে, যেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মানটা ফিরে পান। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদের জাতীয় জীবনে অনন্য ঘটনা। আমরা হাসি-মশকরা বা অবহেলা দিয়ে তা নষ্ট করতে পারি না।
‘এরকম গৌরবোজ্জ্বল ও ত্যাগের বীরত্বের মহিমা জাতির কাছে তো আর আসেনি। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা ওটাই ফিরে পেতে চান। এটাই তাদের ফিরে পাওয়ার আকুতি।’
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন নেব না। এটা তো জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তারা এ বিষয়টি নিয়ে অপমানিত বোধ করছেন।’
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।
রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত উচ্চ পর্যায়ের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই সহায়তা চান।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলো উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশা জাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।’
স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দ্বারা আত্মসাৎকৃত ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে।’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউ ইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এমনটা জানিয়ে বলেছে, ‘আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও সফররত প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক শেষে রোববার দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন সে দেশের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
পদ্মা হাউসে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিকে দারুণ বলে উল্লেখ করেছে দূতাবাস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের দেয়া একটি ওয়ার্কিং লাঞ্চে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছিলেন, সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়নে সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন সফররত প্রতিনিধি দল। সাক্ষাতে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
সাক্ষাৎ শেষে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক গঠন ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে আমাদের প্রতিনিধি দল।’
দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের রূপরেখা খুঁজছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
ভারত সফর শেষে রোববার সকালে ঢাকায় এসে এই সাক্ষাতে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ‘মাল্টি-ডাইমেনশনাল’ আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকে যোগ দেন।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দলটিতে আরও রয়েছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফর।
পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দেয় এই সফর তারই বড় প্রতিফলন। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য