‘এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে, তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়। এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়।’
দেশে কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যে বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে এ মন্তব্য করেন, সেই বাস্তবতার সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক।
তখন উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তার ঘাটতি ছিল। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল চাকরি। এখন প্রেক্ষাপট বদলেছে। দেশের যে ৫ কোটি ৩০ লাখ তরুণ জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটছেন, তাদের কাছে চাকরি একমাত্র বিকল্প নয়।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকার ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। সরকারের নানামুখী উন্নয়ন তৎপরতার ওপর দাঁড়িয়ে সে লক্ষ্যে হাঁটা শুরু করেছে দেশ।
এখন এই বিপুলসংখ্যক তরুণের অনেকেই চাকরির খোঁজার পরিবর্তে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাচ্ছেন। নিজেই নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করছেন তারা। পাশাপাশি অসংখ্য বেকারের চাকরিরও সংস্থান করছেন। কর্মমুখী শিক্ষাও রপ্ত করেছেন অনেকে, যা বেসরকারি বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে তাদের ভালো মানের চাকরি পেতে কাজে লাগছে।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প খাতের ঋণে নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার ঘোষণা দেয় সরকার।
এ ছাড়া বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে চাকচিক্যময় শো-রুম খুলে ব্যবসার ধারণাতেও এসেছে পরিবর্তন। তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকেই এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করছেন। ওয়েবসাইটে খুলে বসেছেন বিচিত্র পণ্যের পসরা। গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ডেলিভারিম্যানের। কর্মসংস্থানে দেশে এটিও একটি নতুন ধারণা ও বিপুল সম্ভাবনার নাম।
আত্ম-কর্মসংস্থানে আরেকটি নতুন ধারণা যুক্ত হয়েছে মোটর সাইকেল বা মোটরগাড়িতে রাইডশেয়ারিং। এ খাতে সারা দেশে কয়েক লাখ কর্মসংস্থান এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ে ৬ লাখের বেশি দক্ষ আইটি ফ্রিল্যান্সারের আত্ম-কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে দেশে।
উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে ডেইরি, পোল্ট্রি, কৃষি, নার্সারি, মোবাইল সার্ভিসিং, ব্লক, বাটিক, স্ক্রিন প্রিন্টিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, ক্যাটারিং, বিউটিফিকেশন, গৃহসজ্জা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ওয়েল্ডিং, ফটোগ্রাফি, সোলার প্যানেল স্থাপনসহ বিভিন্ন খাতে।
অর্থাৎ তরুণদের মধ্যে এখন চাকরি করার বদ্ধমূল ধারণায় পরিবর্তন এসেছে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে ৬০ শতাংশ চাকরিজীবী কাজ করেন ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১৪ শতাংশ।
নারী উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম আয়োজিত অনলাইন আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ফাইল ছবি
সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েক হাজার সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা বেড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে তা প্রায় ২০ লাখে দাঁড়ায়, তবে কর্মসংস্থান বিবেচনায় সরকারি খাতের অবদান ৪ শতাংশের কম। অথচ বছরে প্রায় ২০ লাখ তরুণ নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে।
এদের অনেকেই সরকারি চাকরি খোঁজার পেছনে এখন আর বছরের পর বছর সময় নষ্ট করতে রাজি নন। তারা হয় নিজেরাই উদ্যোক্তা হচ্ছেন অথবা স্বনির্ভর কোনো কাজে যুক্ত হচ্ছেন। বাকিরা বেসরকারি খাত কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান যোগ দিচ্ছেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৃহৎ, কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৩ হাজার। এগুলোর মালিকদের ৯৯ শতাংশই উদ্যোক্তা।
অন্যদিকে দেশে বেসরকারি খাতে এখন প্রায় ৫ কোটি মানুষ কাজ করছে। ছোট-বড় ব্যবসায়ী সৃষ্টি হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যক্তি মালিকানার কিংবা বেসরকারি খাতের এই উত্থানের বড় শক্তি ছিল দেশের যুব সমাজের চাকরিপ্রার্থী না হয়ে চাকরিদাতা হওয়ার মনোভাব। আজকের অর্থনীতিতে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
বাড়ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে যোগ হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এসব উদ্যোক্তার সংখ্যাগরিষ্ঠই তরুণ বা যুবশ্রেণি। তাদের অনেকেই বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে স্বপ্নের কথা বলছেন খোলামেলা। তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা চাকরিপ্রার্থী হতে চান না; উদ্যোক্তা হতে চান। তারা চান অন্যকে চাকরি দিতে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আসলে উদ্যোক্তা হওয়ার মতো সেই মেধা, উৎকর্ষ, প্রশিক্ষণ এবং ঝুঁকি নেয়ার অদম্য সাহস তাদের ছিল বলেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশে বেসরকারি খাতের আজকের এ অবস্থানে আসা সম্ভব হয়েছে।
‘তবে তরুণ উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক এবং সম্ভাবনময় শ্রেণিকে বাধাহীন এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি এবং তাদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার মতো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এ জন্য সরকারসহ খাত সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনগুলোকেও নীতিগতভাবে বিভিন্ন সুবিধা তৈরি করে দিতে হবে।’
ঢাকা চেম্বার নতুন উদ্যোক্তা তৈরির একটি প্রকল্প নিয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তুলছে। একই সঙ্গে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারাও প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করছে।
উদ্যোগী নারীদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছে জয়ীতা ফাউন্ডেশন। উইমেন চেম্বার থেকেও নারী উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাইডাস থেকেও ছোট উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহায়তা দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন কর্ম সৃজন প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ এলাকায় ছোট ছোট উদ্যোক্তা গড়ে তুলছে।
তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এ জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব। উদ্যোক্তাদের সম্মাননা দেয় জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
এ ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় পাহাড়ি এলাকায় ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়ে তাদের বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাদের ঋণ সহায়তা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিলও গঠন করেছে।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘যুব উদ্যোক্তাদের জন্য যদি যুব ব্যাংক বা অন্য কোনো বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে স্বল্প সুদে নমনীয় শর্তে ঋণ দেয়া হয় এবং সাফল্য বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে ওই ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে লাখ লাখ উদ্যোক্তা তৈরি হবে।’
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার তাগিদে জীবনমুখী কর্মসংস্থানের জন্যই তরুণদের মধ্যে তাদের ভবিষ্যত নির্মাণের ভাবনায় একটা বদ্ধমূল পরিবর্তন এসেছে। এটা যতটা না পারিবারিক, তার চেয়ে বেশি তারুণ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিসই মানসিকতা ধারণ করার কারণে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সবার উচিত এ যুব প্রজন্মকে অর্থনৈতিক কার্যকর ধারায় সম্পৃক্ত করা। অর্থাৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টার চেয়ে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টাই অর্থনীতিতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে। এ লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে নানামুখী উদ্যোগে যুবকদের সম্পৃক্ত করার এখনই সময়।’
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘এর পাশাপাশি বেকার যুব সমাজের জন্যও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত।’
তিনি বলেন, ‘এ খাতের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন, বাজার সংযোগ সৃষ্টি এবং দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে তারা। এসব উদ্যোগের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ সারা বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে। করোনার মধ্যেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ এখন চাকরি খুঁজছে না, নিজেরাই চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করছে। আগে বলা হতো লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। এর বদলে এখন বলতে হয় উদ্যোক্তা হয় যে, গাড়ি-ঘোড়া বানায় সে।’
আইসিটি খাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এদের থেকে ২২ লাখ ৮০ হাজার ১৫৩ জন আত্মকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তারা যাতে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠতে পারেন, সে জন্য যুব ঋণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এ ছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যুব পাইকারি সেল ডটকম যুবাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারজাত করতেও ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুন:নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
নেপালে চলমান বিক্ষোভ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দেশে প্রত্যাবর্তন সাময়িকভাবে বিলম্বিত হয়েছে। আজ স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দলের দেশে ফেরার কথা থাকলেও পরিস্থিতির অবনতির কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সব ফ্লাইট বাতিল করে। ফলে দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাবৃন্দ বর্তমানে টিম হোটেলে অবস্থান করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় জানিয়েছে, দলের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দলের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এ বিষয়ে নেপালস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে দলের নির্বিঘ্ন প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নেপালের সেনাবাহিনীর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এছাড়া যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া এবং টিম ম্যানেজার আমের খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে দলের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং দেশে দ্রুত প্রত্যাবর্তনে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। হত্যার মূল আসামি মো. মোবারক হোসেনকে (২৯) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকায় পালিয়ে যাবার সময় কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মোবারক হোসেন জেলার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের মৃত. আবদুল জলিলের ছেলে।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ঝাড়-ফুক করার সুবাদে মোবারক হোসেন সুমাইয়া আফরিনদের বাসায় যাতায়াত করতেন। গত রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সুমাইয়াদের ভাড়া বাসা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকায় নেলি কটেজ নামক বাসায় প্রবেশ করেন মোবারক। এরই মধ্যে মোবারক তাদের বাসায় ঝাড়ফুঁক করে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে যান। আবার বেলা সাড়ে ১১ টায় ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। যা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, মোবারক তাদের বাসায় থাকাকালীন সময়ে এক পর্যায়ে সুমাইয়া আফরিনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় সুমাইয়ার মা বাধা দেন। এতে মোবারক ক্ষুব্ধ হয়ে সুমাইয়াকে এক ঘরে আটকে মা তাহমিনা বেগমকে অন্য একটি রুমে নিয়ে বালিশ চাপায় হত্যা করেন। এরপর সুমাইয়াকে তার রুমে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় সুমাইয়া প্রতিরোধ করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করেন। হত্যার পর মোবারক সুমাইয়াদের ঘর থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণ হয়েছে কিনা বিষয়টি ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
নিহত সুমাইয়া আরফিন (২৩) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার বাসিন্দা ও কুমিল্লা আদালতের সাবেক হিসাবরক্ষক মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে। গত সোমবার সকালে ওই বাসা থেকে সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
বর্ষা মৌসুমে টইটম্বুর পানির সঙ্গে উজান থেকে ভেসে আসা দেশীয় মাছ—বজুরী, টেংরা, ঢেলা, দারখিলা, কটকটি, বাইলা, পুটি, সেলবেলা, চান্দা, বৈইচা, পাবদা, শিং, কৈ, টাকি, চেধূরী, এলকোনা, খৈইলশা, ভাংলা, কাটাইড়া, বাতাইয়া, চিংড়ি, বাইম, গুতুমসহ নানান প্রজাতির মাছ একসময় খাল-বিল-জমিতে ডিম ছাড়ার জন্য ছুটে আসত। সেই সময়ে গ্রামের ছেলেরা মাছ ধরার জন্য নানান ফাঁদ পাতত। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আনতা, বেউর ও চাই, আনতা। যা আজ বিলুপ্তির পথে।
তবে এখনো কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রামচন্দ্রপুর আনতা হাট সেই পুরনো স্মৃতি ধরে রেখেছে। রামচন্দ্রপুর, দক্ষিণ বাঙ্গরা ও মালাই বাঙ্গরা বাজার, হাটখোলা, ইলিয়াটগঞ্জ, চান্দিনার নোয়াবপুর, বর্ষা মৌসুমে বাঁশের তৈরি আনতা বিক্রির ধুম পড়ে যেত কিন্তু পূর্বে ন্যায় দেশীয় মাছ না থাকায় আস্তে আস্তে এসব মাছ ধরার ফাঁদ তৈরিতে কৃষক, জেলে আগ্রাহ হাচ্ছে। শুধুই মাছ ধরার ফাঁদ নয়, আনতা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ, যা এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকার ও মানভেদে প্রতিটি আনত ৩০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্ষার শেষ দিকে এ ফাঁদের চাহিদা আরও বেড়ে যেত। ব্যবসায়ীরাও মৌসুমে ভালো লাভের আশা করত। এন তেমন একটা চোখে পড়ে না, রামচন্দ্রপুরের আনতা ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতি হাটে আমি ৬০ থেকে ৭০টি আনতা বিক্রি করি কিন্তু যখন মাছের ভরা মৌসুম ছিল তখন সারাবছর লোক নিয়োগ করে বিভিন্ন বাড়িতে আনতা তৈরি করতাম। দূর-দূরান্ত থেকেও ক্রেতারা আসত। আর তেমন বিক্রি না থাকায় ব্যাবসা অনেক কমে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মাছ জমির আইল ধরে নামতে শুরু করে, তখন আইলে আনতা পুঁতে রাখলেই সহজে মাছ ধরা পড়ে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুশি হতাম, আমাদের দাবি আনতা, বেউর, চাই, উছা, পেলুন।এই ফাঁদ তৈরিতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে অল্প আয়ের মানুষ দের বাচিয়ে রাখা উচিত। পাশাপাশি বাঁশ শিল্প বেচে থাকবে।
স্থানীয় মাছ বিক্রেতা মতিন মিয়া জানান, তিনি প্রতি মৌসুমে ৫-৬টি আনতা কেনেন। আনতা দিয়ে প্রতিদিন ২-৩ কেজি মাছ ধরা পড়ে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে তিনি ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন।
শুধু মাছ ধরার ফাঁদ নয়, আনতা হয়ে উঠেছে অনেকের জীবিকার উৎস। আনতা তৈরি ও বিক্রি করে বহু পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার এর সাহায্যে ধরা মাছ বিক্রি করে অনেকেই বাড়তি আয় করছে। ছোট-বড় সবাইকে মাছ ধরার আনন্দে মাতিয়ে তোলে এই দেশীয় কৌশল, যা আজও মুরাদনগরের গ্রামীণ জীবনের অনন্য ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিকের ৫ নম্বর সিজন চলছে। ভক্তদের মুখে মুখে কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত এ সিরিজটি। নাটকটির শুরু থেকেই সিজন ১, ২, ৩ এবং ৪ দিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি ও তার টিম। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজনগুলোর ব্যাপক সাফল্যের পর এবার ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর ফাইভ সিজন প্রচার হচ্ছে।
এই সিরিজে কাবিলা, শুভ, জাকির, শিমুল, পাশা, আরেফিন, হাবু ভাই নামের চরিত্রগুলোর মতো নেহাল চরিত্রটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ সর্বদা তুঙ্গে। যেই নেহাল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তৌসিফ মাহবুব। এত দিন ব্যক্তিগত কিছু কারণে এ সিরিজ থেকে দূরে ছিলেন। তবে এ সিজনে ফিরছেন তিনি নেহাল হয়েই, যেটা তিনি নিজেই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
বললেন, ‘দর্শক সর্বদা চান নেহাল চরিত্রটি ফিরে আসুক। তাই ফের এ চরিত্রটির মাধ্যমে ব্যাচেলর পয়েন্টে দর্শক আমাকে দেখতে পাবেন।’ এর আগে নির্মাতা অমি বলেছিলেন, বাস্তব জীবনের মতোই হয়তো ভবিষ্যতে কোনো একসময় দেখা যাবে তাদের আবার একসঙ্গে। তাই সেই অপেক্ষার পালা মনে হয় শেষ হলো তৌসিফের ফেরার মাধ্যমে।
ময়মনসিংহর গফরগাঁওয়ে পূবালী ব্যাংক (পিএল সি) এর স্কুল ব্যাংকিং কর্মশালার আওতায় ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপীঠ গফরগাঁও মহিলা কলেজে বৃক্ষরোপণ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার ( ৯সেপ্টন্বর) ১১টায় মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে পূবালী ব্যাংকের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।
বৃক্ষরোপণ শেষে মহিলা কলেজ হল রুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গফরগাঁও মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ মো. আব্দুল খালেক,পূবালী ব্যাংক (পিএলসি) গফরগাঁও উপশাখা ব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামানসহ কলেজের শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ। কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল খালেক ব্যাংক কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গাছ আমাদের জীবনের অংশ,গাছ ছাড়া আমাদের জীবন ও পরিবেশের কথা চিন্তাও করতে পারিনা,অধিক পরিমানে গাছ লাগান প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে দেশকে বাচাঁন।
আলোচনা শেষে কলেজ শিক্ষার্থীদে মাঝে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সকালে কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ সোমবার চাঁদপুর উত্তর মতলব থানাধীন মোহনপুর লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকায় একটি ডাকাত দল ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১ টায় কোস্ট গার্ড স্টেশন চাঁদপুর কর্তৃক উক্ত এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান চলাকালীন উক্ত এলাকা হতে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ২টি রাম দা ও ২টি চাইনিজ কুড়াল জব্দ করা হয়। এসময় কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
জব্দকৃত অস্ত্রের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মাঝে অ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব উপকরণ বিতরণ করা হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের উদ্যোগে স্পেশাল অ্যাডুকেশন নিডস অ্যান্ড ডিজাবিলিটিস (সেন্ডর) কার্যক্রম বাস্তবায়নের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মাঝে অ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডা. তামান্না তাসনীম।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার রমিতা ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে শিশুদের মাঝে ৪ জনকে হুইল চেয়ার, ২ জনকে শ্রবণ যন্ত্র, ১০ জনকে চশমা ও একজনকে জুতা জোড়া প্রদান করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এফ এম কামাল হোসেন, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রমজান আলী, লুৎফুন্নেছা, মনিরা খাতুন, আরিফুল ইসলাম, কাপাসিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহেলী নাসরিন, একডালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ভূঁইয়া, ধরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলামসহ শিশুদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য