পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। তাদের দেয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, শিক্ষাসচিব মাহবুবুর রহমানসহ আরও অনেকে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, প্রথম দিন শুধু মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টিকা দেয়া হলেও মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর ৮টি কেন্দ্রে একযোগে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। পরর্বতী সময়ে ঢাকার বাইরে ২২টি জেলায় এই টিকা কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বুলেটিনে রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হক জানান, প্রাথমিকপর্যায়ে ঢাকায় দিনে চার থেকে পাঁচ হাজারের মতো শিশুকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরে সেটি দেশব্যাপী দৈনিক ৪০ হাজার পর্যন্ত বাড়ানো হবে।
যেসব কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে
রাজধানীর ৮টি কেন্দ্রে মঙ্গলবার থেকে স্কুলশিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু হবে। কেন্দ্রগুলো হলো হার্ডকো ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুল, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, কাকলি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ ব্রিজ স্কুল ও স্কলাসটিকা স্কুল।
স্কুলশিক্ষার্থীদের এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক করোনা প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জে ১২০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হয়।
সেই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দেশে এক কোটির বেশি ছেলে-মেয়ে আছে, যাদের আমরা টিকা দেব। প্রথম পর্যায়ে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেব এবং পর্যায়ক্রমে বাকিদের টিকা দেয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফাইজারের টিকা ভালো ও নিরাপদ। এই টিকা আমেরিকা, ইউরোপসহ অন্য দেশে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এই টিকা আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিরাপদে থাকুক।
১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার। আর সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ২ হাজার ১২৬ জন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না।
শুধু চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় সারা দেশে ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজন মারা গেছেন। একই সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫৪৮ জন রোগী।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন- বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৬৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৯০ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৪ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন ও রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন।
একই সময়ে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।
চলতি বছরে ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে হাসপাতালে এসেছেন ১৮ হাজার ৫৮৯ জন। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮ শতাংশ নারী।
আর শনিবার সকাল পর্যন্ত সবশেষ তিনজনসহ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ১০৬ জন।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি এক রোগীর মৃত্যুর জেরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধর করেছে ওই রোগীর স্বজনরা। এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাংচুর চালানো হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঘোষণা দেয়া হয়েছে- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা কাজে ফিরবেন না।
মঙ্গলবার রাত দেড়টার সময় সিসিউতে ভর্তি থাকা কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার আবদুল আজিজ নামের এক রোগী মারা যান।
স্বজনদের অভিযোগ, ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরই রোগীর মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তারা হাসপাতালের ভেতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সজীব কাজিকে মারধর করেন। চালানো হয় ভাংচুর।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জাহিদুল মোস্তফা জানান, সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার পরও কয়েক যুবক চিকিৎসককে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ভাংচুর চালানো হয় আইসিইউ, সিসিইউসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার নানা সরঞ্জাম।
মারধরে আহত চিকিৎসক সজীব কাজীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবক চিকিৎসক সজীবকে ধরে মারধর করছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যান। হামলাকারীদের মধ্যে দুজনকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসিফ ও মেহেদী নামের এই দুই যুবক মারা যাওয়া রোগীর স্বজন না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চিকিৎসককে মারধর ও লাঞ্ছিত হওয়াকে কেন্দ্র করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার সুরাহা না হলে হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের কোনো ধরনের সেবা দেয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তারা। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রবেশ করে জোরপূর্বক চিকিৎসা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেন তারা। জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসক-ওয়ার্ড কর্মীসহ হাসপাতালটির নানা শ্রেণীর কর্মচারীরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, ‘যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কোনো স্টাফই কাজে ফিরবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাতে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তারপর সেবা।’
ওয়ার্ড কর্মীদের নেতা শোভন দাশ বলেন, ‘গেল তিন মাস কোনো ধরনের বেতন পাইনি। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এখন নিজের ওপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে তাহলে কিভাবে কাজ করবো আমরা?’
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কলেজের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (প্রশাসন) ডা. জি. আর. এম জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানে আলোচনায় বসেছেন চিকিৎসক-নার্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈঠকটিতে সিদ্ধান্ত না এলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যেতে পারেন হাসপাতালে দায়িত্বরতরা।’
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়কালে হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৫৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
চলতি বছরের শুরু থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে মোট ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৩৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে দেশের হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ২৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।
অধিদফতর আরও জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ৬৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়, ৯৩৮ জন। বাকি ৭২৬ জন অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে শিশুসহ তিনজন। মারা যাওয়া তিনজনই পুরুষ। তাদের বয়স ১১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৯৫ জন।
এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৩ রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২০৭ জন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৪০৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ২৫২ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৩৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯২, খুলনায় ১৫ ও ময়মনসিংহে আটজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ২০৭ জন। তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। এ সময় মারা যাওয়া ৯৫ জনের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএমওসহ ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে মেডিক্যাল কলেজের একদল শিক্ষার্থী মঙ্গলবার বিকেলে তাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তাদের মধ্যে বহির্বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন ১৭ জন।
অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা চিকিৎসকরা বুধবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেননি। এতে সকাল থেকে চিকিৎসক সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। বিশেষ করে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি ছিল সবচেয়ে বেশি। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসক না পেয়ে অনেক রোগী দূর-দূরান্ত থেকে এসে ফিরে গেছেন। অনেকে আবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন।
খুমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি চিকিৎসক সেবা দিয়ে থাকেন। গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।
ষাটোর্ধ্ব কাকলী আক্তারের বাড়ি ডুমুরিয়ায়। এক মাস আগে বহির্বিভাগের চিকিৎসক সুমন রায়ের পরামর্শ নিয়েছিলেন তিনি। বুধবার ছিল ফলোআপ। ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
কাকলী বলেন, ‘এভাবে চিকিৎসকদের ওপর নির্যাতন হলে তাদের সেবা দেয়ার মানসিকতা থাকবে কিভাবে? যদি কেউ কোনো অন্যায় করে তবে রাষ্ট্রের আইনে শাস্তি পাবে। খেয়াল-খুশিমতো কেউ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারে না।’
সুমন রায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও)। তিনি বহির্বিভাগের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী দেখেন। অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় বুধবার তিনি চেম্বারে আসেননি।
মোবাইল ফোনে কথা হলে সুমন রায় বলেন, ‘গতকাল যেভাবে মারমুখী ভূমিকায় আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ কারণে আজ হাসপাতালে যাইনি। নিজেদের সম্মান যদি না থাকে তাহলে চিকিৎসা সেবা দেব কীভাবে।’
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে উপস্থিত হন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোস্তফা কামাল। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আক্তারুজ্জামানকে চাপ দিয়ে দুটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এর একটি ছিল আক্তারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র ও অন্যটি ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার।
এই ৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, আরএস, আরএমও, রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পোস্টের চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ চিকিৎসক আবার কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িতও নন। এছাড়াও তাদের মধ্যে ১৭ জন চিকিৎসকই বহির্বিভাগে রোগী দেখেন।
উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘কখনও আওয়ামী লীগ বা স্বাচিপ কোনো কিছুর প্রাথমিক সদস্য হয়েছি তা দেখাতে পারলে আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নেব। সরকারি চাকরি ছাড়া কোনোদিন কোনো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছি এমন রেকর্ড নেই।
‘বরং আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে বার বার শাস্তিমূলক বদলি করেছে। সততার কারণে প্রমোশন দেয়নি। নিচের গ্রেডে নামিয়ে দিয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ভাবলাম এবার হাসপাতালের জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। অথচ আমাকে তারা জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজ থেকে মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীকে এনে আমাকে নানারকম হুমকি দিল। অন্যায়ভাবে কাগজে স্বাক্ষরও করিয়ে নিল। আর যে ৪১ জন চিকিৎসককে তিনি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেন, তারা হাসপালতে না এলে চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়বে। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক ফোরামের সদস্য সচিব ডা. তাহমিদ মাশরুর বলেন, ‘উপ-পরিচালক ডা. আক্তারুজ্জামান স্যার ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ নেই। কেন তাকে পদত্যাগ করানো হল সে বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অবগত নন।’
অভিযোগ রয়েছে, ‘ডা. মোস্তফা কামাল বরাবরই কিছুটা উগ্র স্বভাবের। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ডা. মোস্তফা কামাল নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তড়িৎ কান্তি ঘোষকে রড দিয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনার পর তার বিষয়ে সাধারণ চিকিৎসদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়। তিনি সেই সুযোগ নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীকে সঙ্গে রেখে মঙ্গলবারের ঘটনা ঘটান তিনি।
কেন চাপ দিয়ে পদত্যাগ ও চিকিৎসকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করানো হল- এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডা. মোস্তফা কামালকে বার বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতিসহ আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। সে সুবাদে বুধবার থেকে রুটিন অনুযায়ী পুরোদমে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। একইসঙ্গে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
চিকিৎসকদের পক্ষে ঢাকা মেডিক্যালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আবদুল আহাদ বলেন, ‘এখন থেকে সারা দেশের সব হাসপাতালে আগের মতো পূর্ণ সেবা চালু থাকবে। আজ বিকেলে সর্বস্তরের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে তাদের (চিকিৎসক ও শিক্ষার্থী) পক্ষ থেকে উত্থাপিত চারটি দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এসব দাবির বিষয়ে সচিব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সারা দেশে হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের সেবা চালুর ঘোষণা দিচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস টেকনোলজির (বিইইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
চিকিৎসার অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে দীপ্তর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ঢামেক অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারধর করে। এ সময় নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান, মাশরাফি ও জুবায়ের আহত হন।
একই রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একে অপরকে কুপিয়ে আহত করে। এ হামলায় একজন মারা যান। এ ঘটনার পরপরই নিরাপত্তার দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা চাপাতিসহ চারজনকে আটক করে নিয়ে যান।
ওই রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করে।
এসব ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতিতে যান মেডিক্যালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। একই দাবিতে সারা দেশে চিকিৎসা না দিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে শত শত রোগী দুর্ভোগে পড়েন। পরদিন রোববার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
আরও পড়ুন:ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় তাদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে বন্ধ ছিল হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রম। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর রোববার রাতে জরুরি বিভাগে সেবাদান কার্যক্রম চালু হলেও বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগ। এবার বহির্বিভাগেও সীমিত পরিসরে সেবাদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মুখপাত্র নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. আব্দুল আহাদ।
সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যালের প্রশাসনিক ব্লকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, চিকিৎসকদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
‘ইতোমধ্যে আমরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখেছি। ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাসপাতালে হামলার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি হামলাকারীদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
‘বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাদেরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঢামেক হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল কলেজে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে রোববার সন্ধ্যা থেকে সব হাসপাতালে জরুরি বিভাগ চালু হয়েছে। সেগুলো চালুই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং হাসপাতালে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে আইন প্রণয়ন এবং স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগে আইন প্রণয়ন করতে হবে।’
ডা. আহাদ জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সীমিত পরিসরে অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে সেবাদান চালু থাকবে। সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। জরুরি বিভাগ চালুর পর সীমিত পরিসরে ইনডোরে সেবাদান চলছে। এছাড়াও বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রয়েছে। সেগুলো চালু থাকবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য