বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির বিশ্বের অন্য কোনো দেশে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ‘নাম্বার ওয়ান’। কোথাও এমন সম্প্রীতি নেই। আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে চলি। কোনো ভেদাভেদ নেই।”
মন্ত্রী বলেন, ‘কেবল রাষ্ট্রীয় নীতি নয়, আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনাচরণেও এই আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে। এমন সম্প্রীতির নজির অন্য কোনো দেশে পাওয়া যাবে না।’
শনিবার দুপুরে সিলেটে ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ইমজা) কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কঠোর পদক্ষেপে ভারতও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে জানিয়ে এ কে মোমেন বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপকে অত্যন্ত উত্তম বলে জানিয়েছে ভারত। ভারতের অনেক স্থানে বাংলাদেশের ঘটনার প্রতিবাদ করা হলেও তাদের অনেকেই বানোয়াট প্রচারণা করেছে। তবে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের পদক্ষেপে সন্তুষ্টির কথা জানানো হয়েছে।’
এসব ঘটনা ফলাও করে প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। আর সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছেই।’
দুর্গাপূজা চলার সময়ে কুমিল্লার একটি ঘটনার জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাতেও হবিগঞ্জের লাখাইয়ে একটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই এমন মন্তব্য করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই বছর পর দেশে নির্বাচন। একে সামনে রেখে একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তারাই দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার মতো অপতৎপরতা চালাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
সরকার এসব তৎপরতা মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের কঠোর শাস্তি হবে।’
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ টেনে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে পূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এমনকি ভারতেও পূজায় সরকার টাকা দেয় না। তবে আমরা দিই। বিভিন্ন ধর্মের অনুষ্ঠানেই দিই। এ দেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটি সরকার ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। দুর্বৃত্তদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে।’
মন্ত্রীর পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, ইমজা সভাপতি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আনিস রহমানসহ অনেকে।
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ে এক স্কুলছাত্রীকে কুপ্রস্তাব, বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো এবং হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত বিচারের আবেদন করেছেন ছাত্রীর বাবা।
অভিযুক্ত শিক্ষক জেলার হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী রুহুল আমিন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন।
গত ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর ওই শিক্ষার্থীর বাবার স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদনে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক...আমার নাবালিকা মেয়েকে বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সাথে অসামাজিক ও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে। আমার দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়েকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথ করায় ওই শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে সে যেন কাউকে না জানায়, যদি সম্পর্ক স্থাপন না করে, তাহলে পরীক্ষায় কম নাম্বার দিয়ে ফেল করাবে, ক্লাসে মারপিট করবে এবং এর পরেও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে কৌশলে আমার মেয়ের সাথে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে। এমনকি মৃত্যুরও হুমকি দেয় ওই শিক্ষক।’
ওই আবেদনে তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতে পরবর্তীতে আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সবসময় মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগে। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে প্রধান শিক্ষক বলেন, এর আগেও এ রকম আরও কয়েকটি ঘটনা ওই অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটিয়েছে। সেগুলো স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগের দাপট ও টাকার বিনিময়ে সেগুলো ধামাচাপা দিয়েছে। তার একটি কিশোর গ্যাং আছে, যারা তাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করে।’
স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘ওই স্কুলের অফিস সহায়ক...এ অপকর্মগুলো ঘটানোর সহযোগিতা করে থাকে। এবারও বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি অতি দরিদ্র বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।’
এ আবেদনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক বিচার ও শাস্তির দাবি জানান এ অভিভাবক।
পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা আবেদন আমলে নিয়ে সহকারী কমিশনার খাদিজাতুল কুবরা ফারিহা স্বাক্ষরিত ৭৮ নম্বর স্মারকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাগজ পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কাগজ পাওয়ার পর হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হরিপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
গত ১১ মার্চ হরিপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাইহানুল ইসলাম মিঞা স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কাগজে ১৭ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
কিন্তু এর আগের দিন ১৬ মার্চ অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থীর বাবা স্বাক্ষরিত এক আবেদনে তিনি বলেন, শুনানির জন্য ধার্য দিনে পারিবারিক অসুবিধার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। একই আবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষক একমত হয়ে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে গুরুতর অভিযোগের পরও নির্ধারিত দিনে শুনানি না হওয়ায় এবং শুনানির জন্য অভিযোগকারীর সময়ক্ষেপণে স্থানীয়দের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয়।
স্থানীয় এক ব্যক্তির ভাষ্য, ‘অভিযোগকারীকে নানা রকমভাবে প্রভাব দেখানো হচ্ছে। চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু আমরা তদন্ত চাই।
‘অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা চাই। ঘটনার পর থেকে ওই অভিভাবককে যে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তা তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।’
নাম না প্রকাশের শর্তে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকায় একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। ওই শিক্ষক যদি এহেন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র জায়গায় যাতে এসব কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যবস্থা করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও নারীঘটিত অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। সে স্থানীয় প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেয় এবং এই অভিযোগকারীদেরও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ভয়ভীতি এবং আর্থিক মাধ্যমে সুরাহা করার চেষ্টা করে।
‘এভাবে অপরাধী বারবার পার পেয়ে যাওয়ার কারণে একই কর্মকাণ্ড বারবার ঘটানোর সুযোগ পেয়ে যায়।’
অভিযোগ করার পর তদন্তের দিন-তারিখ কেন পেছানোর আবেদন করলেন জানতে চাইলে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আগামী রবিবার স্থানীয়ভাবে বসার কথা আছে। সেখানে নাকি ওই শিক্ষককে জরিমানা ও বরখাস্ত করা হবে। তাই আমি সময় চেয়ে আবেদন করেছি।’
কারা এমন সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্য শিক্ষকদের কথা বলেন।
এ বিষয়ে কাঁঠালডাঙ্গী রুহুল আমিন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমিও অভিযুক্ত শিক্ষকের তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি দাবি করছি। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে। বাদী ও বিবাদী যেকোনো মাধ্যমে যদি মীমাংসাও করে ফেলে, তার পরেও অভিযোগের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
‘তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয়, সে দাবিও জানাচ্ছি। আর যেখানে একটি তদন্ত হচ্ছে, সেখানে আমাদের আলাদাভাবে বসার প্রশ্নই আসে না। কোনো কারণে চাপে পড়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন কি না অভিযোগকারী, সেটিও তদন্তের বিষয়।’
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোজাফ্ফর আলী বলেন, ‘যখন ঘটনার সময় বলা হচ্ছে তখন আমি ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে ছিলাম না। এখন তদন্ত চলছে।
‘আমরা তদন্তে সহযোগিতা করছি, এতটুকুই। এখন বাদী, বিবাদী যদি নিজেরাই মীমাংসা করে ফেলে, আমাদের কী করার আছে?’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে কোনো কথা বলতে চাননি।
পরে সাক্ষাৎকার দেবেন জানালেও তাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অপর অভিযুক্ত ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বলেন, ‘বিষয়টি তো মিটমাট হয়ে গেছে।’
কীভাবে মিটমাট হলো জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন।
হরিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাইহানুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান। একটি নির্দিষ্ট দিনে শুনানির কথা থাকলেও অভিযোগকারীর আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে শুনানির দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।’
হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর বাবার লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাকে চিঠি দেওয়া হয়। আমি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগ ও সার্বিক বিষয়ে তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে শুক্রবার মধ্যরাতে ঢেউয়ের কবলে পড়ে রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী, পুরুষ, শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নৌকা ডুবে বিজিবির এক সদস্যসহ নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকার সমুদ্রে গতকাল রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ বিজিবির সদস্য একজন সিপাহী। তিনি শাহপরীর দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করা হয়েছে। সাগরে বিজিবির উদ্ধার অভিযান চলছে।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এ বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি অনুপ্রবেশের খবরে বিজিবি অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ থাকার খবর পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’
স্থানীয় নৌকার মালিক মো. আমিন বলেন, ‘মাঝরাতে সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ধরতে যাওয়ার কথা বলে ওই বিজিবির সদস্য আমার নৌকাটি নিয়ে যায়। পরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি কূলে নিয়ে আসার পথে সাগরে ঢেউয়ের স্রোতে ডুবে যায়। এতে ২৫ জনের মতো রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সিপাহী নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধারে সাগরে তল্লাশি চলছে।’
শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া নৌ ঘাটের পাহারাদার আবদুল মান্নান বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা কূল ঘেঁষে যাওয়ার সময় টহলরত বিজিবির সদস্যরা দেখতে পায়। তখন ঘাট থেকে একটি নৌকা নিয়ে তাদের আটকে দেয়। তারপর কীভাবে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলার ডুবে যায়, সেটা জানি না। তবে এ ঘটনায় ২৫ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
‘এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজতে ঘাটের একাধিক নৌকায় সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছে জেলেরা।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা পশ্চিমপাড়ার কাছাকাছি পৌঁছালে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ডুবে যায়। সেখানে অর্ধশতাধিক শিশুসহ নারী, পুরুষ ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একজন বিজিবির সদস্যও নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাচ্ছি।’
নৌকাডুবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, ‘গভীর রাতে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া বরাবর রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অনুপ্রবেশ সময় ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অন্য নৌকায় উদ্ধার করতে যাওয়া বিজিবির এক সদস্যও নিখোঁজ থাকার খবর জেলেরা অবহিত করেন।
‘এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকেও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার পর বেশ কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন থেমে গেলে বিভিন্ন কারখানা আবার চালু করা হয়।
শ্রমিকরা শনিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার জায়ান নিটওয়্যার ফ্যাশন লিমিটেড নামের কারখানায় কয়েক দিন আগে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে কারখানার তিন কর্মকর্তাকে মারধর করেন শ্রমিকরা। এ ঘটনায় একটি মামলায় কয়েকজন শ্রমিককে গ্রেপ্তার হয়। এসবের জেরে ওই কারখানায় উত্তেজনা চলছিল।
এমন বাস্তবতায় শনিবার থেকে ওই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ সকালে কারখানায় গিয়ে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন শ্রমিকরা।
পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এসে অবস্থান নিয়ে সকাল সাড়ে আটটা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ওই সময় আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা আরও কারখানায় গিয়ে ইট-পাটকেল ছোড়েন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সড়ক থেকে তাদের দ্রুত সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। ওই শ্রমিক আন্দোলনের জেরে আশপাশের অন্তত ১০ থেকে ১২টি কারখানা এক দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন থেমে গেলে আবার অধিকাংশ কারখানা চালু করা হয়।
শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের বাড়তি সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, রোদের সাথে শুভ্র মেঘদলের নিত্য লুকোচুরি খেলা, সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক এক মসজিদ। সে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুক চিঁড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। এর অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়।
সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
চার তলা ভিতের ওপর দণ্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার।
মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট।
সৌন্দর্যে অপরূপ মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।
মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।
দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুমা এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে।
‘তারাবির জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামায়াতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ নেন।’
সাজেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক।
মসজিদ না থাকায় এত বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।
প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।
রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’
দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদে অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়।
‘প্রতিদিন এ মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কেবল পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামে শুক্রবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন রায়পুরা উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন (২৩) ও একই গ্রামের বারেক হাজীর ছেলে বাশার (৩৫)।
স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চাঁনপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম মিয়া ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহাগের সঙ্গে চাঁনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সামসু মেম্বারের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপি নেতা সামসু মেম্বর ও তার সমর্থকরা এলাকাছাড়া ছিলেন। ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে আসেন তারা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। এমনকি দুটি পক্ষই মারামারি ও গোলাগুলি করে।
একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা সালাম মিয়া ও তার সমর্থকদের এলাকাছাড়া করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সবশেষ শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সালাম মিয়া ও তার সমর্থকরা এলাকায় ফিরতে চান। এতে বাধা দেন বিএনপি নেতা সামসু মেম্বার ও তার লোকজন।
পরে দেশীয় অস্ত্র, ট্যাঁটা, বল্লম, দা, ছুরি, ককটেল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রতিপক্ষের ছোঁড়া গুলিতে একজন এবং ট্যাঁটা ও ছুরিকাঘাতের আরও একজনসহ দুইজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই সময় সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১০ জন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আবদুল হান্নান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
আরও পড়ুন:বগুড়ার শেরপুরে ট্রাকচাপায় দুজন নিহত ও অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলার শেরপুর-ধুনট সড়কের রনবীরবালা এলাকায় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাজর গ্রামের প্রয়াত কছিম উদ্দিনের ছেলে হারুন অর রশিদ (৫২) ও একই ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের প্রয়াত হাবিবুর রহমান প্রামাণিকের ছেলে হানিফ উদ্দিন (৩৫)।
আহত কয়েকজনের নাম জানা গেছে, যারা হলেন সুন্দরী, বসন্তী, সুর্বতি, চায়না, পবিত্র, স্বরসতী, সাগরিকা, সুনীল, মনন্তর, পয়ত্রি, মো. সাত্তার, বাসরি, বাশরি, ক্ষন্নষশি। তাদের সবাই খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাঝর এলাকার বাসিন্দা।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ট্রাকটি ধুনট থেকে শেরপুর যাওয়ার সময় রনবীরবালা বশীর পাগলা মাজারের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা হানিফ নামের একজনকে চাপা দিয়ে ২০০ গজ দূরে গিয়ে আবার আরেকটি যাত্রীবাহী ভটভটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ট্রাক ও ভটভটি উল্টে যায়। এতে পথচারী হানিফ ও ভটভটিযাত্রী হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আরও ২১ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ট্রাকে থাকা কাউকে আটক করা যায়নি। তবে ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন নামের এক কলেজছাত্রকে অপহরণ করেছিল একটি চক্র। তার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। তাদের চাওয়া মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পায়নি তার পরিবার।
এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দুই অপহরণকারীকে বুধবার রাত তিনটার দিকে গ্রেপ্তার এবং মিলনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম।
তিনি জানান, দুজনকে গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত আরও একজনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জের মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মো. সেজান আলী (২৮), আরাজী পাইকপাড়া এলাকার মুরাদ(২৫) ও সালন্দর শাহী নগরের রত্না আক্তার ইভা (১৯)।
প্রাণ হারানো কলেজছাত্র মিলন হোসেন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁওয়ের চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে।
পুলিশের ভাষ্য, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজছাত্র মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার সময় ভুক্তভোগীর পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা।
প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা চায়। পরের দিন দুপুরে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি পাঁচ লাখ দাবি করে। পরের দিন সেটি আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিন দিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সর্বশেষ ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র।
গত ৯ মার্চ রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেয় অপহৃত মিলনের বাবা পানজাব আলী। কিন্তু ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পায়নি পরিবারটি।
ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বুধবার রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ও তাদের দেখানো মতে আমরা স্থানীয় সাক্ষীদের সামনে লাশ উদ্ধার করি। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’
জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা স্বীকার করেছে যে, মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেখানো মতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনগত পক্রিয়া শেষে আদালতে বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এর আগে আমরা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নিই, সেদিকে সতর্ক থাকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য বিচারপ্রত্যাশী ছাত্র-জনতোকে ধৈর্য ধরে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে দোষীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহর। দ্রুত সুষ্ঠু বিচার চয় নিহতের পরিবার, স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ জেলার বিভিন্ন মানুষ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য