টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা দরপতনে পুঁজিবাজারে বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ার দরে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। বিপরীতে স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ব্যাপকভাবে। বিমা খাতেরও বেশ কিছু কোম্পানি উল্লেখযোগ্য হারে দর হারিয়েছে।
গত জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে নানা গুজব ও গুঞ্জনে স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কয়েকটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার পর দু-একটি উৎপাদনে এসেছে, কয়েকটি উৎপাদন শুরুর কাছাকাছি অবস্থানে আছে।
কিন্তু এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যাচাই-বাছাই ছাড়াই লোকসানি প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর টানা বাড়তে থাকার মধ্যে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এমনকি বিএসইসির কমিশনারদের কেউ কেউ সতর্ক করেছেন। কিন্তু কোনো কথাই যেন শুনতে চাইছিলেন না বিনিয়োগকারীরা।
লোকসানি কোম্পানির পাশাপাশি স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পুরোনো একটি আলোচনা আবার সামনে আসার পর শুরু হয় আরেক হুলুস্থুল। এসব কোম্পানির মূলধন বাড়াতে হলে শেয়ার ইস্যু করতে হবে- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীদের একাংশ। কোম্পানির আয়, মুনাফা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী- এসব বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের চেয়ে কেবল শেয়ার সংখ্যা কম- এই বিবেচনাতেই ক্রমাগতভাবে বেশি দামে শেয়ার কিনে গেছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাজার সংশোধনে মূলত এই দুই ধরনের কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে হাহাকার করছেন মূলত তারাই।
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহে সূচকের পতন এমন কিছু হয়নি। বরং এবারই দর সংশোধনে সূচক বেড়ে গিয়ে বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতনের প্রবণতা দেখা গেছে। এর কারণ, বড় মূলধনি কয়েকটি কোম্পানির উত্থান।
১২ সেপ্টেম্বর লেনদেন শুরুর দিন সূচক ছিল ৭ হাজার ২৫৮ পয়েন্ট। বর্তমানে তা অবস্থান করছে ৭ হাজার ৪৬ পয়েন্টে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের আগের ৭ দিনই সূচক পড়েছে ৩৪৭ পয়েন্ট।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান এই বিষয়টি থেকে শিক্ষা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানি ভালো রিটার্ন দিচ্ছে, সেগুলোতে আগ্রহী হওয়া উচিত। তাহলে যখন পুঁজিবাজারে সূচকের পতন হবে বা মন্দা দেখা যাবে, তখন লোকসান না-ও হতে পারে। হলেও সেটি দ্রুত উঠে আসবে।’
তবে দরপতন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও দরকার নেই বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘শেয়ারের দাম বাড়বে-কমবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। খারাপ বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানি তো পুঁজিবাজারের বাইরের কোনো কোম্পানি না।’
স্বল্প মূলধনিতে দরপতন যে হারে
ওটিসি থেকে ফেরা পেপার প্রসেসিংয়ের দর টানা বেড়েই চলছিল। দর সংশোধন শুরুর আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৩৫ টাকা ৩০ পয়সায় উঠে যায়। পাঁচ সপ্তাহে সেই শেয়ার দর এখন ১৩৪ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা। ৪২.৭১ শতাংশ দর হারিয়েছে কোম্পানিটি।
ওটিসিফেরত আরেক কোম্পানি মনোস্পুল পেপারের দর এই সময়ে ২২৫ টাকা থেকে নেমে এসেছে ১৪৮ টাকা ৯০ পয়সায়। কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৩৩.৮২ শতাংশ।
দেশ গার্মেন্টসের দর ২৪২ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৬১ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ৩৩.১৪ শতাংশ।
এই সময়ে প্রকৌশল খাতের স্বল্প মূলধনি মুন্নু অ্যাগ্রোর শেয়ার দর ৮৬১ টাকা থেকে নেমেছে ৫৯৯ টাকা ৩০ পয়সায়। কমেছে ৩০.৩৯ শতাংশ।
একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি মুন্নু সিরামিকের দর ১৭৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৩ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ৩০.৪৬ শতাংশ।
খাদ্য খাতে অ্যাপেক্স ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ১৮৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৩২ টাকা ৬০ পয়সা। কমেছে ২৯.৩১ শতাংশ।
চামড়া খাতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দর এই সময়ে ৭৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫৭ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৮.১৪ শতাংশ।
২০১৯ সালের পর আর হিসাব না দেয়া লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ার দর এই সময়ে ১ হাজার ৭৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৭৭৮ টাকা ২০ পয়সায় নেমে এসেছে। কমেছে ২৭.৫২ শতাংশ।
আনলিমা ইয়ার্নের শেয়ারদর গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে। ৩১ টাকা থেকে শেয়ারদর গত ২২ আগস্ট উঠে যায় ৫২ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকে শুরু হয় পতন। এই কোম্পানিটির বর্তমান দর ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা। সংশোধন শুরুর পর থেকে কমেছে ২৬.৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কমেছে ১৬.০৫ শতাংশ।
প্রকৌশল খাতে রংপুর ফাউন্ড্রির শেয়ার দর এই সময়ে ১৮৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪১ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২৫.৪৩ শতাংশ।
খাদ্য খাতে বঙ্গজের শেয়ার দর এই সময়ে ১৫৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১৯ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৫.৩১ শতাংশ।
আমান কটনের শেয়ার দর এই সময়ে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৫ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ২১.৮২ শতাংশ।
প্রকৌশল খাতে কিউ অ্যান্ড কিউর শেয়ার দর এই সময়ে ৩৭০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৯২ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২১.১৭ শতাংশ।
ফুওয়াং ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ২২ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২১.১৭ শতাংশ।
চামড়া খাতের অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ার দর এই সময়ে ৩৬৬ টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৮৯ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২১.১২ শতাংশ।
অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ১৫৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৪ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ২০.৪৬ শতাংশ।
রহিম টেক্সটাইলের দর ৩২৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৬০ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২০.৪০ শতাংশ।
এএমসিএল প্রাণের শেয়ার দর এই সময়ে ৩০৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৪৬ টাকা। কমেছে ১৯.৯৪ শতাংশ।
ফাইন ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ৫৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ১৯.৬৯ শতাংশ।
রহিমা ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ৩৬৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৯৪ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ১৯.১৬ শতাংশ।
পাট খাতের সোনালী আঁশের শেয়ার দর এই সময়ে ৫৩৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪৪০ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ১৭.৮৭ শতাংশ।
বস্ত্র খাতের তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর ১৮৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৫৩ টাকা ৬০ পয়সা। কমেছে ১৭.২৮ শতাংশ।
মুন্নু ফেব্রিক্সের দর ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ১৬.১৯ শতাংশ।
বড় মূলধনি ছয়টিরও দরপতন
ফুওয়াং সিরামিকের দর ২৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২৫.১০ শতাংশ।
স্বল্প মূলধনি নয়, লোকসানেও নয়, এমন কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে এমএল ডায়িং। কোম্পানিটির দর এই সময়ে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৬ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৪.০৫ শতাংশ।
বড় মূলধনির বসুন্ধরা পেপার মিলসও এই সময়ে বেশ ভালো দর হারিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৪৫ টাকা ১০ পয়সায়। কমেছে ১৫.৮৫ শতাংশ।
বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্টও এই সময়ে বেশ ভালো দর হারিয়েছে। শেয়ার দর ৩৭৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে এসেছে ৩১৯ টাকা ৬০ পয়সায়। কমেছে ১৪.৩৩ শতাংশ।
সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দরের পতন হয়েছে অন্য ইস্যুতে। ২০১৯ সালের ঘোষণা করা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ না করায় কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এমনিতে সংশোধনে থাকার মধ্যে এ ঘটনায় কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৩১.৩৯ শতাংশ। শেয়ার দর ২৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা।
এক বছর পর লভ্যাংশ ঘোষণার পর গত মে মাস থেকে কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার দরে উল্লম্ফন দেখা দেয়। ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে ১১ টাকা ২০ পয়সা হয়ে যায় আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে। এরপর শুরু হয় দরপতন। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংশোধনে শেয়ার দর কমেছে ২২.৬৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।
লোকসানি কোম্পানির দরপতন আরও বেশি
প্রকৌশল খাত
মালিকানা বদলের গুঞ্জনে গত এপ্রিলে ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার দর আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৪ টাকা ৮০ পয়সায় পৌঁছে যায়। কিন্তু সেই গুঞ্জন সত্য নয় বলে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে শুরু হয় দরপতন। সেই কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন কমতে কমতে নেমেছে ৯ টাকা ৮০ পয়সায়। কমেছে ৩৩.৭৮ শতাংশ।
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২২.২২ শতাংশ।
বন্ধ থাকা কোম্পানির উৎপাদন চালু হবে, এমন ঘোষণায় উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন আজিজ পাইপের শেয়ারধারীরা।
গত ২৯ জুলাই শেয়ার দর ছিল ১০০ টাকা ১০ পয়সা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর উঠে যায় ১৬৯ টাকায়। সেখান থেকে পড়তে পড়তে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১১৩ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ৩২.৬৬ শতাংশ।
একই চিত্র আরএসআরএম স্টিলের ক্ষেত্রে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর উৎপাদন চালুর প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ২৭ জুলাই ২১ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা হয়ে যায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ১২ সেপ্টেম্বর দর সংশোধন শুরুর আগের দিন দাম ছিল ৩৫ টাকা। এর মধ্যে উৎপাদন চালুর ঘোষণা আসে। কিন্তু এরপর দাম টানা পড়তে থাকে। এই কয়দিনে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ২০ পয়সা বা ২৯.১৪ শতাংশ কমেছে দাম। গত বৃহস্পতিবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা।
করোনার কারণে ব্যবসা প্রায় হারিয়ে ফেলা ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ারদর গত মে মাসের শুরু থেকে টানা বাড়ছিল। সে সময় শেয়ারদর ছিল ৮ টাকা ৭০ পয়সা। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা গিয়ে ঠেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর থেকে শুরু হয় সংশোধন। শেয়ারদর কমতে কমতে এখন নেমেছে ১২ টাকা ৬০ পয়সায়।
সংশোধন শুরু হওয়ার পর থেকে কমেছে ৪ টাকা ৯০ পয়সা বা ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বরের দাম থেকে কমেছে ২০.৭৫ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রেনউইক যগেশ্বরের শেয়ার দর ১২ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৩৪১ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৯৯৮ টাকা ৯০ পয়সায়। কমেছে ২৫.৫২ শতাংশ।
আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ন্যাশনাল টিউবের দর এই সময়ে ১২৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৯৬ টাকা। কমেছে ২৪.৮৮ শতাংশ।
আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টার্ন কেব্লসের শেয়ার দর এই সময়ে ১৭০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৮ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৪.৭৬ শতাংশ।
লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এটলাস বাংলাদেশের শেয়ার দর এই সময়ে ১৩৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে হয়েছে ১০৯ টাকা। কমেছে ১৯.৭৩ শতাংশ।
খাদ্য খাত
এই খাতের মধ্যে সরকারি দুই চিনিকলের শেয়ারেও ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে বেশি কমেছে শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর, যেটির দাম সংশোধন শুরুর আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল।
শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর গত ৫ আগস্টও ছিল ৬২ টাকা ২০ পয়সা। আকাশচুম্বী লোকসানে জর্জর কোম্পানিটির এই দরই ছিল অস্বাভাবিক। তারপরেও সেখান থেকে এক লাফে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উঠে যায় ১৪১ টাকা ২০ পয়সায়। এই কোম্পানির দর সংশোধন পুঁজিবাজারে দর সংশোধন শুরুর এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়। এই কয়দিনে শেয়ার দর কমেছে ৪০.৭২ শতাংশ। শেয়ার দর ১৪১ টাকা ২০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায়।
এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ সপ্তাহে কমেছে ৩১.৯৫ শতাংশ।
একই চিত্র জিলবাংলা সুগারের ক্ষেত্রে। গত ১৭ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮৬ টাকা ১০ পয়সা। এই দরই অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে দর বেড়ে হয়ে যায় ২০৯ টাকা। সর্বোচ্চ এই অবস্থান থেকে কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত দর হারিয়েছে ৩৮.২৭ শতাংশ।
এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর হারিয়েছে ২১.৫৮ শতাংশ।
বিচ হ্যাচারির দর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেমে কমেছে ২৭.৩০ শতাংশ। এক বছরের বেশি উৎপাদন বন্ধ রাখার পর সম্প্রতি আবার চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে এই কোম্পানির শেয়ার দরে উত্থান হয়েছিল। এই সময়ে দাম কমেছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৭.৩০ শতাংশ। বর্তমান দাম ১৯ টাকা ৭০ পয়সা।
বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দিলেও প্রায় প্রতিবছর উত্থান হওয়া মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও মেঘনা পেটও দর হারিয়েছে এই সময়ে।
এর মধ্যে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার দর ২৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সায়। কমেছে ২৭.৭০ শতাংশ।
মেঘনা পেটের দর ২৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৩ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২১.৩৫ শতাংশ।
জেমিনি সি ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ২৩৩ টাকা ৭০ পয়সা থেমে নেমে এসেছে ১৮৬ টাকায়। কমেছে ২০.৪১ শতাংশ।
গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রোর শেয়ার দর এই সমেয় ২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ১৭.৯৭ শতাংশ।
চামড়া ও সিরামিক
লোকসানি স্বল্প মূলধনি কোম্পানি সমতা লেদার ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২৭ জুন নেমে আসে ৬৯ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু এরপর থেকে টানা উত্থান শুরু হয়। দর সংশোধন শুরুর আগে ৯ সেপ্টেম্বর দর উঠে যায় ১২৮ টাকায়। দাম কমতে কমতে এখন নেমে এসেছে ৭৭ টাকা ২০ পয়সায়। কমেছে ৩৯.৬৮ শতাংশ।
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার দর এই সময়ে ২৬২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে হয়েছে ১৮১ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ৩০.৯৭ শতাংশ।
বিবিধ খাত
এই খাতের তিন লোকসানি কোম্পানি ব্যাপকভাবে দর হারিয়েছে। এর মধ্যে সাভার রিফ্র্যাকটরিজের শেয়ার দর এই সময়ে ২৯৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২০৭ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ৩০.৭৪ শতাংশ।
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর এই সময়ে ৪২ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩১ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ২৪.৬৪ শতাংশ।
জি কিউ বলপেনের শেয়ার দর এই সময়ে ১৪১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২৩.৩২ শতাংশ।
আর্থিক খাত
এই খাতের লোকসানি যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ক্রমাগত বেড়ে চলেছিল নানা গুঞ্জনে, তার সবগুলোর ব্যাপক দরপতন হয়েছে এই সময়ে।
ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ৩৭.৭৫ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২৭.১৮ শতাংশ।
ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২৬.৮৫ শতাংশ।
বিআইএফসির শেয়ার দর এই সময়ে ৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২৫ শতাংশ।
ফার্স্ট ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ২০.২২ শতাংশ।
বস্ত্র খাত
এই খাতের বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর গত মে মাস থেকেই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছিল। সেপ্টেম্বর থেকে টানা সংশোধনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই খাতের অন্তত ১২টি কোম্পানির শেয়ারধারীরা।
মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ২২ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ৩৫.৪৫ শতাংশ।
রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ১৬ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২৯.৩৭ শতাংশ।
বন্ধ থাকা তুংহাই স্পিনিংয়ের শেয়ার দর গত এপ্রিলের শেষেও ছিল ৩ টাকার নিচে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে তা উঠে যায় ৯ টাকায়। ১৬ আগস্ট থেকেই এর দরপতন শুরু। এই সময়ে কমেছে ২৬.৬৬ শতাংশ। বর্তমান দাম ৬ টাকা ৬০ পয়সা।
বন্ধ থাকা স্টাইলক্রাফটে উৎপাদন চালু হবে, এমন ঘোষণায় লাফ দেয়ার পর উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার সংশোধনের এই সময়ে শেয়ার মূল্য ১৯৭ টাকা থেকে নেমে এসেছে ১৪৬ টাকা ৬০ পয়সায়। কমেছে ২৫.৫৮ শতাংশ।
নুরানী টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২৩.৩০ শতাংশ।
জাহিন টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ২২.৭৭ শতাংশ।
রিংসাইন টেক্সটাইল মিলসের শেয়ার দর এই সময়ে ১৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা পয়সা। কমেছে ২১.৯৮ শতাংশ।
আরএন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২১.৫১ শতাংশ।
জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ১১ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ১৯.৮১ শতাংশ।
তাল্লু স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ১৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ১৯.৭১ শতাংশ।
সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ২৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২১ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ১৯.০১ শতাংশ।
পাট খাত
এই খাতের তিনটি কোম্পানিই ব্যাপকভাবে দর হারিয়েছে। এর মধ্যে লোকসানি দুটির মধ্যে নর্দার্ন জুটের শেয়ার দর ৪০৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৮৬ টাকা। কমেছে ২৯.৫৭ শতাংশ।
জুট স্পিনার্সের দর ১৮০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ১২৮ টাকায়। কমেছে ২৯.১৬ শতাংশ।
কাগজ খাত
এই খাতের দুই লোকসানি কোম্পানি হাক্কানি পাল্পের শেয়ার দর ৯১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬৪ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২৯.৪৩ শতাংশ।
কেপিপিএলের দর ১৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ১৭.৯০ শতাংশ।
বিমায় দরপতন কেমন
গত জুনের মাঝামাঝি থেকে সংশোধনে থাকা বিমা খাত সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আরও দর হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ১৯.২৪ শতাংশ। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ১৯.০৯ শতাংশ।
রূপালী লাইফ ১৭.৭৩ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স ১৭.২৮, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১৫.৯৯, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর ১৫.৮৬, প্রোগ্রেসিভ লাইফের দর ১৫.৬৯, পদ্মা লাইফ ১৫.৮৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।
এ ছাড়া পূরবী জেনারেল, সোনার বাংলা, প্রগতি লাইফ, সিটি জেনারেল, পাইওনিয়ার, নর্দার্ন, পিপলস, সানলাইফের দর কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি।
ইসলামী, রিপাবলিক, ফিনিক্স, রিলায়েন্স ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি।
মেঘনা লাইফের দর এই সময়ে ২৪.৭১ শতাংশ কমলেও এটির লভ্যাংশের ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয় হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার। বুধবারের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি সবক’টি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে হাফ ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।
পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে বুধবার। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কিছুটা ফিরে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এ সাত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ এলেও বিক্রিয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, শাহিনপুকুর সিরামিক, পেপার প্রসেসিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এ সাত প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি আরও প্রায় এক ডজনের প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমার কাছাকাছি চলে আসে। আর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং সিরামিক, মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, রবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ওরিয়ন ফার্মা।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন বেড়ে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
সপ্তাহের শেষ দিনে ডিএসইতে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর বা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
অবশ্য লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার হার কমে আসে। একই সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতাও কমে। এমনকি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দাম কমেছে ১৪০টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩০টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে এক হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। ৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুড, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, এডভেন্ট ফার্মা এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
অপর সিএসই-তে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২০ পয়েন্ট। এখানে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:শেয়ারের ওপর থেকে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব শেয়ারের ওপর থেকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার এক কার্যদিবস পরই সোমবার লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছুঁয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরবর্তী কার্যদিবসে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে বড় নিম্নমুখিতা দেখা যায়। অবশ্য বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সক্রিয় ভূমিকায় ওইদিন আরও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় স্টক এক্সচেঞ্জ।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি’র পদক্ষেপ যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তা প্রমাণ হয়ে গেছে পরবর্তী কার্যদিবসেই। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। সোমবার সূচক বাড়ার পাশাপাশি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা ৩৫ কোম্পানির মধ্যে আরও ২৩ কোম্পানির সর্বনিম্ন দরসীমা সোমবার তুলে নিয়েছে বিএসইসি।
সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আগামী কয়েক দিনের জন্য কিছুটা নিম্নমুখী করতে পারে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে গত দুদিন আমাদের ধারণার তুলনায় মার্কেট অনেকটা ভালো আচরণ করেছে। ধারণা ছিল যে, এতগুলো শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস যেহেতু একবারে তোলা হয়েছে, সেহেতু কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সূচক কমতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট মার্কেটকে একটা স্ট্যাবল অবস্থানে রাখতে সাহায্য করেছে।’
নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে নতুন করে ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার নেতিবাচক একটা দিক আগামী কয়েক দিন বাজারে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষক মো. আল-আমিন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সংক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে বাজারের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার লেনদেন শুরুর ২ মিনিট পর অতিরিক্ত বিক্রির চাপে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। পরে অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সূচক বাড়তে থাকে। দিন শেষে সূচকটি ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এর আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে।
ডিএসইএক্স সূচকটিকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে সোমবার সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরচুন সুজ, বিবিএসই ক্যাবলস ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। তবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ইতিবাচক ভূমিকায় সূচক দিন শেষে বেড়েছে।
ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে এদিন লেনদেন শেষে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে। আগের দিন লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে।
বাছাইকৃত শেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস ৩০ দিনের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে। আগের দিন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে সোমবার মোট ১ হাজার ৪২ কোটি ২১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগে এক্সচেঞ্জটিতে সবশেষ ১ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ১৮ জুলাই। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ।
সোমবারের লেনদেন আগের কার্যদিবসের (রোববার) চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২০৭টির, কমেছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টি সিকিউরিটিজের বাজার দর।
এদিকে বাজারকে সক্রিয় রাখতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘সিইও ফোরাম’ থেকে সাপোর্ট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করা হবে না। বিনিয়োগকারীদেরকে ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। যেসব শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না, সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন বা বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না করেন, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতেও বলা হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৩৫৭টি শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেয় বিএসইসি। আর নতুন করে আজ আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে সীমা তুলে নেয়ার পর কেবল ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকল। নতুন এই ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়া সব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে বা বাড়তে পারবে না।
যে ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, রবি আজিয়াটা ও শাহজীবাজার পাওয়ার লিমিটেড।
এই ১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কবে তুলে নেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতি দেখে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ফ্লোর ধরে রাখা কোম্পানিগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। বাজারের প্রতি তারা যেন নেতিবাচক না হন, তাই পরের ধাপে এসব কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। তবে নির্দিষ্ট ৩৫টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজের এই শর্তের মধ্যেই থেকে গেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা বেঁধে দেয়ার ফ্লোর প্রাইজ জারি হয়েছিলো প্রায় দেড় বছর আগে। অবশ্য এর আগে ২০২০ সালে আরও একবার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তা ২০২১ সালে তুলে নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। তবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষা দিতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস এর আগে দেখা যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে।
বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। ওই আদেশে একইসঙ্গে জানানো হয়, ৩৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইস-এর আওতায় থাকবে। কবে নাগাদ ওইসব কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে তা জানায়নি কমিশন।
আদেশে কমিশন জানিয়েছে, ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাভাবিক লেনদেন হবে। তবে দৈনিক লেনদেনের সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরসীমা কার্যকর থাকবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একদিনে কোনো শেয়ারের দর সর্বোচ্চ দশ শতাংশ বাড়তে পারে, কমার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ দর কমতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুঁজিবাজার নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের সেই শঙ্কা অনেকাংশেই কেটেছে। সুদিন ফিরতে শুরু করেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই।
সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ-সিএসইতে বেড়েছে সবগুলো সূচক। পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।
ইতোমধ্যে বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি। টানা কয়েকদিন বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুটা দর সংশোধন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ পয়েন্ট।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি নিউজবাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে কোনো সময় প্রত্যাহার হতে পারে ফ্লোর প্রাইস। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে বলে মনে করে নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
অবশেষে তার সেই কথারই প্রতিফলন ঘটলো ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিমুল আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারীর মন্তব্য, এতে সাময়িকভাবে সূচকের কিছুটা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস আজ হোক কাল হোক প্রত্যাহার করতে হতোই। এখানে বহু বিনিয়োগকারীর মূলধন আটকে আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় কমিশন যথাসময়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে’।
এছাড়া ৩৫টি কোম্পানির ওপর এখনও বহাল থাকা ফ্লোর প্রাইসও দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি এই বিনিয়োগকারীর।
বিএসইসির আদেশে যে কোম্পানিগুলোর ওপর ফ্লোরপ্রাইস বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, বিএটিবিসি, বেক্সিমকো, বিএসসিসিএল, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডোরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কট্টালি টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনাটা, রবি, সায়হাম কটন, শাশা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজীবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া ঘোষণাজনিত পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। তার আগে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে একবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল।
তবে দ্বিতীয় ধাপের ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা তলানিতে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোও সংকটে পড়ে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বুধবার নিজেদের মধ্যে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক খাতের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আইনের মধ্যে থেকে আরও সক্রিয় করার জন্য গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বৈঠকে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এক পর্যায়ে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলো কীভাবে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে গভর্নরের সহযোগিতা চান বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বৈঠকে গভর্নরও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান রেজাউল করিম।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ বছর জুড়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আরও বেগবান করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:হরতাল আর অবরোধের মধ্যে আরও একটি সপ্তাহ পার করলো দেশের দুই পুঁজিবাজার। এ নিয়ে চার সপ্তাহ ধরে প্রায় একই বৃত্তে ঘুরছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই। বিনিয়োগকারীরা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন এমন অবরোধ আর হরতালের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার নেই তাদের। একইসঙ্গে তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ বাজার সম্ভাবনাময়।
সবশেষ সপ্তাহে ডিএসইর হিসাব বলছে, আরেক ধাপ কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসের লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধিতে কিছুটা আশাবাদী অনেক বিনিয়োগকারী। বিশেষ করে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের লেনদেন দেখে তারা বলছেন, এটা পরের সপ্তাহটি ভালো থাকার ইঙ্গিত। অবশ্য এই সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও কম।
পাঁচ কর্মদিবসে গেল সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। সপ্তাহ কিংবা দিন উভয় ক্ষেত্রেই লেনদেন কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।
এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন ছিলো ২ হাজার ২ কোটি টাকা। আর দৈনিক হিসাবে গড় লেনদেন ছিলো চারশ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। সপ্তাহ শুরুর তিন দিনে অবশ্য আরও হতাশাজনক চিত্র ছিলো।
মঙ্গলবার লেনদেন নেমে আসে তিনশ কোটির নিচে। পাশাপাশি কমতে দেখা যায় সব সূচক। তবে তার পরদিনই সূচকের উত্থান দেখা যায় ডিএসইতে। তার পরদিন সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও গতি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারের লেনদেন ছিলো তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা বেশি।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী রোকন উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে লেনদেন ভালো হওয়া মানে পরের সপ্তাহে আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও ডিসেম্বর মাস ঘিরে খুব বেশি আশা করার কিছু নেই।’
ডিসেম্বর মাসে কেন আশা করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা তা-ই বলছে। একদিকে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ক্লোজিং থাকে এ মাসে। সব মিলে এ মাসে পুঁজিবাজারের উত্থান হতে পারে তবে সেটি বড় আকারে হবে না বলেই মনে হয়।’
আরেক বিনিয়োগকারী শরিফ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে লিখেছেন, ‘শেয়ার বাজার কি শুধু কমবেই, নাকি থামবে এবার?
‘সব কিছুরই তো একটা শেষ আছে। দর পতনের শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি নতুন বছরে অনেক হতাশার সাথে শেয়ার বাজারের হতাশাও দূর হবে।’
লেনদেনের পাশাপাশি গেলে সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। অবশ্য পরিমাণে তা খুব বেশি নয়। ডিএসইএক্স গেল সপ্তাহে কমেছে দশ পয়েন্টের কিছুটা বেশি। সপ্তাহের শুরুতে প্রধান এই সূচকটির অবস্থান ছিলো ৬ হাজার ২৩৩ পয়েন্ট, যা সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২৩ পয়েন্ট। তবে ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক সামান্য পরিমাণে বেড়েছে এ সপ্তাহে। সবমিলে পুরো নভেম্বর মাসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমেছে প্রায় ৫০ পয়েন্ট।
হতাশা রয়েছে বাজার মূলধন ঘিরেও। গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাতশ কোটি টাকা। তবে পুরো নভেম্বর মাসের হিসাবে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নভেম্বরের শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা মাসের শেষ কার্যদিবসে নেমেছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ কোটিতে।
বাজার মূলধন কমে আসাকে অবশ্য নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে বিনিয়োগকারী। তানভীর নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘যেভাবে বাাজার মূলধন কমেছে তা দেখলে ভয় হয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এখন চাইলেও শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা অনেকে বাধ্য হয়ে পুঁজিবাজারের সাথে ইনভলভ রয়েছি। একটাই প্রত্যাশা- শেয়ারের দাম কমবে না। তবে যখন দেখি বাজার মূলধন কমে যাচ্ছে তখন কিছুটা ভয় পাই।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলে পুঁজিবাজার এখান থেকে আবারও উপরের দিকে যাবে। যদি প্রশ্ন করেন- কেন? তাহলে বলবো অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এটা ঠিক হয়ে গেলে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠবে।’
নেতিবাচক বাজারেও ডিএসইতে গত সপ্তাহে বেড়েছে বেশ কিছু শেয়ারের দর। অনেকে এটাকে বলছেন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।
সপ্তাহের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জিকিউ বলপেনের। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারটির পুরো সপ্তাহে দর বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো আফতাব অটোমোবাইলস।
এছাড়া তৃতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিলো যথাক্রমে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, লিবরা ইনফিউশন ও সমতা লেদার। তিনটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকা চারটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরির।
এছাড়া লেনদেনেও আধিপত্য বিস্তার করছে ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার। গেল সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষস্থানে দেখা গেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিলো সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড, ফুওয়াং ফুড এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড। এ সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা পাঁচটি কোম্পানির মধ্যেও চারটি ছিলো ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত।
আরও পড়ুন:বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা শুক্রবার কোম্পানির নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানান। এ সময় তিনি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো মুনাফা অর্জনের চিত্রই তার প্রমাণ বহন করে। এর বাইরে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অর্জিত মুনাফা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাবিদার।’
তিনি বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংস এমন একটি কোম্পানি যারা বিশ্বের স্বনামধন্য চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ম্যারিয়ট, লে মেরিডিয়ান, হেইলিবেরি ও লাক্সারিয়াস।
‘ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যবসা পরিচালনা করে বেস্ট হোল্ডিংস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মালিকানার কোম্পানি হিসেবে এটি এক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে থাকা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে মধ্যে আগামী বছরেই শেষ করতে পারলে এর কার্যক্রম থেকে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবাদন রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’
‘মানসম্পন্ন সম্পদ গঠনে বিনিয়োগ করুন, যা আপনাকে কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব তৈরি করতে সহায়তা করবে’ এমন দর্শনকে বুকে লালন করে গড়ে ওঠে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের একজন খ্যাতিমান সেতু নির্মাণকারী হিসেবে। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সফল ব্যবসায়ী জীবনের পেছনে যেসব প্রতিবদ্ধকতাকে অতিক্রম করতে হয়েছে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আমিন আহমেদ। এতে তিনি কীভাবে তার কোম্পানি অবকাঠামো তৈরি করছে, ব্যবসায় কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কীভাবে একটি বিলাসবহুল হোটেল-রিসোর্ট সাম্রাজ্যের জন্য তার স্বপ্নকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
আমিন আহমেদ বলেন, ‘চাহিদা মূল্যায়ন এবং স্থান নির্বাচনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ান প্রতিষ্ঠা একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। কেননা, ঢাকায় আসা বিদেশি অতিথিরা এখানে বিশ্বের বড় বড় হোটেলগুলোর চেয়ে বেশি মূল্যায়ন দিতেও আপত্তি করেন না।’
নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দেরি হওয়ার কারণে ‘লে মেরিডিয়ান ঢাকা’র উদ্বোধন সাত বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। হোটেল প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫-০৬ সালে শুরু করা হলেও এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় ২০১৫ সালে।
৯০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সময়সমতো শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় এর ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ফলে কোম্পানিকে ব্যাংক ঋণের সহায়তা নিতে হয়েছে। লে মেরিডিয়ান হোটেল এবং ভালুকা ও নোয়াখালীতে কোম্পানির কৃষি খামারের জন্য ব্যাংক ঋণ ও কনভার্টিবল বন্ড ইস্যুর পথ সহজ হয়েছিল।
২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংস তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। ইতোমধ্যে এর বড় একটা অংশ নগদ এবং ইক্যুইটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।
আমিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা যখন লে মেরিডিয়ানের যাত্রা শুরু করলাম তার কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড-১৯ আঘাত হানে। ফলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের ব্যবসা অনেক কমে যায়। এর মধ্যে ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের রাজস্ব আয় নেমে আসে ১১৩ কোটি টাকায়, যা দুই বছর আগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।
অবশ্য ২০২২-২৩ হিসাব বছরে আমরা মহামারির আগের বছরের থেকেও ভালো অবস্থানে ফিরতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী বছরে আমাদের ব্যবসা আরও বাড়বে। কেননা, লে মেরিডিয়ান ঢাকায় এখন রুম ভাড়া আগের থেকে ৭০-৮০ শতাংশ বেশি।’
প্রসপেক্টাস অনুসারে, বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ভবন ও অন্যান্য পূর্তকাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ব্যয় করা হবে। কোম্পানিটির নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো- আন্তর্জাতিক মানের একটি ম্যারিয়ট হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, ব্যক্তিগত ভিলা, স্কুল প্রকল্প এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল।
আইপিওর মাধ্যমে তোলা ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যবহার করা হবে ভালুকায় ৪৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা রিসোর্টটির ভবন তৈরিতে। ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে এই রিসোর্টের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শান্তা ইকুইটি লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে বিএসইসি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য