শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেয়া শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার অফিসে শুক্রবার বিকেলে সিন্ডিকেট বৈঠক হয়। টানা তিন ঘণ্টা বৈঠকের পরও ফারহানার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সিন্ডিকেট।
বিষয়টি জানার পর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কান্দাপাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা জরুরি বৈঠক করে ফের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেন। তারা অনশন কর্মসূচি ও লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে শাহজাদপুরের কান্দাপাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন এবং বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু করেন।
এতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে রবীন্দ্র উপাচার্য ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা অফিসে সিন্ডকেট বৈঠক ডাকেন ভিসি। বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে শিক্ষার্থী শামীম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবারের সিন্ডিকেট বৈঠকে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আশা করেছিলাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমাদের পরীক্ষার হলে ফিরে যেতে বলে। আমরা তাদের এ আদেশ গ্রহণ না করে শিক্ষিকা ফারহানার স্থায়ী বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত আবারও আন্দোলন শুরু করেছি।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ এবং রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী জানান, শুক্রবার সিন্ডিকেট সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিছু মতভেদের কারণে পরবর্তী সময়ে আবার বৈঠক হবে। এখন আবার ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছে।
২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন দরজায় কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের সামনের অংশের বেশ খানিকটা কেটে দেন তিনি। এভাবে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন ওই শিক্ষক।
ওই ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শিক্ষক ফারহানার শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। মীমাংসা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফারহানা ইয়াসমিন শিক্ষার্থীদের গালাগালি করে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন। এর প্রতিবাদ করলে নাজমুল হাসান তুহিন নামের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে গালাগালি করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের হুমকি দেন।
ওই ঘটনার পর ‘অপমান সইতে না পেরে’ তুহিন রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহ মখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা আটকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সহপাঠীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের একটি অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ইউএনবি জানায়, তিন কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। বনে আগুনের ওই এলাকায় মাঝেমধ্যে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুনে এরই মধ্যে প্রায় ৪ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, রবিবার সকালে সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে।
তদন্তে কমিটি
এদিকে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ রবিবার ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ওই কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, শনিবার রাতভর বন বিভাগ এবং গ্রামবাসী মিলে আগুন নেভানোর কাজ করে। ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে তারা জ্বলতে থাকা আগুনেব ছিটিয়েছে। রবিবার সকাল ৮টার দিকে তাদের সঙ্গে ফায়ার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। ৩ কিলোমিটার দূরে মরা ভোলা নদীতে পাইপ লাইন বসিয়ে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম আরও জানান, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়নি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো স্থানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পাইপ দিয়ে সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে। আগুনে প্রায় ৪ একর বনের ক্ষতি হয়েছে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ মে সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টাল এলাকায় মৌয়ালদের পাশ (অনুমতি) দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বছর ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।
ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধ কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারে। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও জানান, সুন্দরবনে আগুনের সূত্রপাত এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাসকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর চন্দ্র দাস এবং কলমতেজি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।
কমিটির সদস্যদের আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিএফও।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, সুন্দরবনে যে স্থানে আগুন লেগেছে, ওই এলাকার দেড় কিলোমিটারজুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়েছে। আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, শনিবার সকালের পর থেকে বন বিভাগের সদস্যরা একটানা আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুনে কিছু বলা এবং নলবন পুড়ে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
বাগেরহাটের শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা আফতাব-ই-আলম জানান, সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন প্রায় ৯০ শতাংশ নিভে গেছে। এই মুহূর্তে কোথাও আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে না। তবে মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া দেখলেই সঙে সঙ্গে পানি ছিটানো হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হবে।
এ নিয়ে ১৯ বছরে সুন্দরবনে ২৯ বার আগুনের ঘটনা ঘটে। গত ৪ মে সুন্দরবনে আগুন লাগে।
বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে আগুনে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে।
আরও পড়ুন:গাজীপুরের কাশিমপুরে রবিবার নিজ বসতঘর থেকে এক দম্পতি ও তাদের সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, রবিবার সকালে কাশিমপুরের গোবিন্দবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে নাজমুলের মরদেহ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং তার স্ত্রী খাদিজা ও শিশু কন্যা নাদিয়ার লাশ বিছানা থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, নাজমুল নিজে ফাঁসিতে ঝোলার আগে স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদের জেরে এর আগে নাজমুল ব্লেড দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা রক্তাক্ত করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঠাকুরগাঁওয়ে এক স্কুলছাত্রীকে কুপ্রস্তাব, বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখানো এবং হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত বিচারের আবেদন করেছেন ছাত্রীর বাবা।
অভিযুক্ত শিক্ষক জেলার হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী রুহুল আমিন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন।
গত ২৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর ওই শিক্ষার্থীর বাবার স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদনে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক...আমার নাবালিকা মেয়েকে বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সাথে অসামাজিক ও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে। আমার দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে আমার মেয়েকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথ করায় ওই শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে সে যেন কাউকে না জানায়, যদি সম্পর্ক স্থাপন না করে, তাহলে পরীক্ষায় কম নাম্বার দিয়ে ফেল করাবে, ক্লাসে মারপিট করবে এবং এর পরেও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে কৌশলে আমার মেয়ের সাথে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে। এমনকি মৃত্যুরও হুমকি দেয় ওই শিক্ষক।’
ওই আবেদনে তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতে পরবর্তীতে আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সবসময় মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগে। আমি বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কাছে জানালে প্রধান শিক্ষক বলেন, এর আগেও এ রকম আরও কয়েকটি ঘটনা ওই অভিযুক্ত শিক্ষক ঘটিয়েছে। সেগুলো স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগের দাপট ও টাকার বিনিময়ে সেগুলো ধামাচাপা দিয়েছে। তার একটি কিশোর গ্যাং আছে, যারা তাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করে।’
স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘ওই স্কুলের অফিস সহায়ক...এ অপকর্মগুলো ঘটানোর সহযোগিতা করে থাকে। এবারও বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি অতি দরিদ্র বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।’
এ আবেদনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক বিচার ও শাস্তির দাবি জানান এ অভিভাবক।
পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা আবেদন আমলে নিয়ে সহকারী কমিশনার খাদিজাতুল কুবরা ফারিহা স্বাক্ষরিত ৭৮ নম্বর স্মারকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাগজ পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কাগজ পাওয়ার পর হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হরিপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
গত ১১ মার্চ হরিপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাইহানুল ইসলাম মিঞা স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কাগজে ১৭ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটি ও অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
কিন্তু এর আগের দিন ১৬ মার্চ অভিযোগকারী ওই শিক্ষার্থীর বাবা স্বাক্ষরিত এক আবেদনে তিনি বলেন, শুনানির জন্য ধার্য দিনে পারিবারিক অসুবিধার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না। একই আবেদনে অভিযুক্ত শিক্ষক একমত হয়ে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে গুরুতর অভিযোগের পরও নির্ধারিত দিনে শুনানি না হওয়ায় এবং শুনানির জন্য অভিযোগকারীর সময়ক্ষেপণে স্থানীয়দের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয়।
স্থানীয় এক ব্যক্তির ভাষ্য, ‘অভিযোগকারীকে নানা রকমভাবে প্রভাব দেখানো হচ্ছে। চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু আমরা তদন্ত চাই।
‘অভিযোগের তদন্তের ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা চাই। ঘটনার পর থেকে ওই অভিভাবককে যে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তা তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।’
নাম না প্রকাশের শর্তে ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও ঢাকায় একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। ওই শিক্ষক যদি এহেন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে, তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো পবিত্র জায়গায় যাতে এসব কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যবস্থা করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও নারীঘটিত অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। সে স্থানীয় প্রভাব এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়গুলো ধামাচাপা দেয় এবং এই অভিযোগকারীদেরও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে ভয়ভীতি এবং আর্থিক মাধ্যমে সুরাহা করার চেষ্টা করে।
‘এভাবে অপরাধী বারবার পার পেয়ে যাওয়ার কারণে একই কর্মকাণ্ড বারবার ঘটানোর সুযোগ পেয়ে যায়।’
অভিযোগ করার পর তদন্তের দিন-তারিখ কেন পেছানোর আবেদন করলেন জানতে চাইলে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আগামী রবিবার স্থানীয়ভাবে বসার কথা আছে। সেখানে নাকি ওই শিক্ষককে জরিমানা ও বরখাস্ত করা হবে। তাই আমি সময় চেয়ে আবেদন করেছি।’
কারা এমন সিদ্ধান্ত নেবে জানতে চাইলে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্য শিক্ষকদের কথা বলেন।
এ বিষয়ে কাঁঠালডাঙ্গী রুহুল আমিন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমিও অভিযুক্ত শিক্ষকের তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি দাবি করছি। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে। বাদী ও বিবাদী যেকোনো মাধ্যমে যদি মীমাংসাও করে ফেলে, তার পরেও অভিযোগের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
‘তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয়, সে দাবিও জানাচ্ছি। আর যেখানে একটি তদন্ত হচ্ছে, সেখানে আমাদের আলাদাভাবে বসার প্রশ্নই আসে না। কোনো কারণে চাপে পড়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন কি না অভিযোগকারী, সেটিও তদন্তের বিষয়।’
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোজাফ্ফর আলী বলেন, ‘যখন ঘটনার সময় বলা হচ্ছে তখন আমি ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে ছিলাম না। এখন তদন্ত চলছে।
‘আমরা তদন্তে সহযোগিতা করছি, এতটুকুই। এখন বাদী, বিবাদী যদি নিজেরাই মীমাংসা করে ফেলে, আমাদের কী করার আছে?’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে কোনো কথা বলতে চাননি।
পরে সাক্ষাৎকার দেবেন জানালেও তাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অপর অভিযুক্ত ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বলেন, ‘বিষয়টি তো মিটমাট হয়ে গেছে।’
কীভাবে মিটমাট হলো জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন।
হরিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাইহানুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান। একটি নির্দিষ্ট দিনে শুনানির কথা থাকলেও অভিযোগকারীর আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে শুনানির দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।’
হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর বাবার লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাকে চিঠি দেওয়া হয়। আমি তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগ ও সার্বিক বিষয়ে তদন্ত শেষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে শুক্রবার মধ্যরাতে ঢেউয়ের কবলে পড়ে রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী, পুরুষ, শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নৌকা ডুবে বিজিবির এক সদস্যসহ নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকার সমুদ্রে গতকাল রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজ বিজিবির সদস্য একজন সিপাহী। তিনি শাহপরীর দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করা হয়েছে। সাগরে বিজিবির উদ্ধার অভিযান চলছে।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এ বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি অনুপ্রবেশের খবরে বিজিবি অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে বিজিবির এক সদস্যসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ থাকার খবর পেয়েছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’
স্থানীয় নৌকার মালিক মো. আমিন বলেন, ‘মাঝরাতে সাগরে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা ধরতে যাওয়ার কথা বলে ওই বিজিবির সদস্য আমার নৌকাটি নিয়ে যায়। পরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি কূলে নিয়ে আসার পথে সাগরে ঢেউয়ের স্রোতে ডুবে যায়। এতে ২৫ জনের মতো রোহিঙ্গা জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবির এক সিপাহী নিখোঁজ রয়েছে। তাকে উদ্ধারে সাগরে তল্লাশি চলছে।’
শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া নৌ ঘাটের পাহারাদার আবদুল মান্নান বলেন, ‘শুক্রবার মধ্যরাতে রোহিঙ্গাবাহী নৌকা কূল ঘেঁষে যাওয়ার সময় টহলরত বিজিবির সদস্যরা দেখতে পায়। তখন ঘাট থেকে একটি নৌকা নিয়ে তাদের আটকে দেয়। তারপর কীভাবে রোহিঙ্গাবাহী ট্রলার ডুবে যায়, সেটা জানি না। তবে এ ঘটনায় ২৫ রোহিঙ্গাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
‘এ ঘটনায় বিজিবির এক সদস্যসহ ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজতে ঘাটের একাধিক নৌকায় সাগরে তল্লাশি চালাচ্ছে জেলেরা।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা পশ্চিমপাড়ার কাছাকাছি পৌঁছালে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ডুবে যায়। সেখানে অর্ধশতাধিক শিশুসহ নারী, পুরুষ ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একজন বিজিবির সদস্যও নিখোঁজ রয়েছে বলে খবর পাচ্ছি।’
নৌকাডুবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, ‘গভীর রাতে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া বরাবর রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা অনুপ্রবেশ সময় ডুবে যাওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় অন্য নৌকায় উদ্ধার করতে যাওয়া বিজিবির এক সদস্যও নিখোঁজ থাকার খবর জেলেরা অবহিত করেন।
‘এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকেও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জেনেছি।’
আরও পড়ুন:গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখার পর বেশ কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন থেমে গেলে বিভিন্ন কারখানা আবার চালু করা হয়।
শ্রমিকরা শনিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার জায়ান নিটওয়্যার ফ্যাশন লিমিটেড নামের কারখানায় কয়েক দিন আগে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে কারখানার তিন কর্মকর্তাকে মারধর করেন শ্রমিকরা। এ ঘটনায় একটি মামলায় কয়েকজন শ্রমিককে গ্রেপ্তার হয়। এসবের জেরে ওই কারখানায় উত্তেজনা চলছিল।
এমন বাস্তবতায় শনিবার থেকে ওই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ সকালে কারখানায় গিয়ে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন শ্রমিকরা।
পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এসে অবস্থান নিয়ে সকাল সাড়ে আটটা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ওই সময় আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা আরও কারখানায় গিয়ে ইট-পাটকেল ছোড়েন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম জহিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সড়ক থেকে তাদের দ্রুত সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। ওই শ্রমিক আন্দোলনের জেরে আশপাশের অন্তত ১০ থেকে ১২টি কারখানা এক দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন থেমে গেলে আবার অধিকাংশ কারখানা চালু করা হয়।
শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের বাড়তি সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, রোদের সাথে শুভ্র মেঘদলের নিত্য লুকোচুরি খেলা, সেখানেই নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক এক মসজিদ। সে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুক চিঁড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। এর অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়।
সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এ মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
চার তলা ভিতের ওপর দণ্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার।
মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট।
সৌন্দর্যে অপরূপ মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান।
মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।
দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুমা এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে।
‘তারাবির জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামায়াতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ নেন।’
সাজেকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক।
মসজিদ না থাকায় এত বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।
প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্বসিত।
রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’
দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদে অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়।
‘প্রতিদিন এ মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কেবল পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য