পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার মূল পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গজ দূরেই পাশের বটতলা মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলামকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হামলার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। বাড়িতেও কেউ নেই।
প্রতিবেশীরা বলছেন, হামলার পর থেকেই রবিউলের বাড়ির সব সদস্য গা ঢাকা দিয়েছেন।
দুই বছর ধরে ওই মসজিদে ইমামতি করছিলেন রবিউল। তাকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয়রা জানান, রোববার মাগরিবের নামাজের পর ঘটনাস্থলের দক্ষিণ পাড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননায় অভিযুক্ত পরিতোষের বাড়িতে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানরা।
এ সময় মসজিদের মুয়াজ্জিন রাশেদসহ অনেকেই মসজিদের পাশে বটতলা বাজারে ছিলেন। রাশেদও সেদিন থেকে পলাতক রয়েছেন।
ঘটনার শুরু ফেসবুক থেকে
মেহেদী হাসান নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘ঘটনার দিন রোববার সকালে একটি পেজে কমেন্ট করে পরিতোষ সরকার। এটি নজরে আসে খেজমতপুর বউবাজার এলাকার উজ্জ্বল হাসানের।
‘উজ্জ্বল ও পরিতোষ পূর্বপরিচিত। পরিতোষকে গালি দিয়ে ওই কমেন্ট ডিলিট করতে বলে উজ্জ্বল। এ নিয়ে ফোনে এবং কমেন্ট বক্সে দুজনের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় কমেন্ট ডিলিট করবে না বলে জানায় পরিতোষ।’
তিনি বলেন, “ঘটনার পর উজ্জ্বল বলে, ‘সমস্যা নাই, স্ক্রিনশট রেখে দিছি। বাড়ি গেলে তোরে খেলা দেখাব। মুসলমানরা খেপে গেলে তোর ধর্ম উঠে যাবে। বাড়ি গেলে বটের হাটে সবচেয়ে বড় গাছে তোকে বেঁধে রাখব।’
উজ্জ্বল হাসানের মা রোজিনা খাতুন দাবি করেন, ঘটনার আগের দিন শনিবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জে চাকরিতে যোগ দেন উজ্জ্বল। সেখানে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেন তিনি। সেখান থেকে ফেসবুকে এসব দেখে শেয়ার দেন উজ্জ্বল।
স্থানীয়রা জানান, রোববার সকালে পরিতোষের ওই কমেন্ট উজ্জ্বল হাসান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার দেন। সেখান থেকে মুহূর্তেই শত শত শেয়ার হতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা ছড়ায়।
করিমপুর হাজিপাড়ার মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকে পরিতোষের ছবি নিয়া বিকাল থাকি উত্তেজনা। সন্ধ্যার পর উত্তেজনা আরও বাড়ে। এ সময় আশপাশের কিছু ছেলে পরিতোষের বাড়ি ভাঙচুর করতে চায়। তবে এলাকাবাসী বাধা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলামকে খবর দেয়া হয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকেও খবর দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ, বিজিবি ও ইউএনও আসেন। তারা উত্তেজিত জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এমন করতে করতে রাত সাড়ে ৮টা পার হয়। প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিতোষকে গ্রেপ্তারের কথা বলে। মানুষজন শান্ত হয়।’
কীভাবে হামলা হলো হিন্দুপল্লিতে
স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামনাথপুরের করিমপুর দক্ষিণ পাড়ায় (হাজিপাড়া) পরিতোষের বাড়িতে ছিল প্রশাসনের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তারা। এ সময় হঠাৎ উত্তর পাড়ার হিন্দুপল্লির দিকে আগুন দেখা যায়।
তারা জানান, বটতলা মসজিদের পাশে ব্রিজের কাছেই রুহিনী চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে প্রথমে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে ভাঙচুর করা হয়। এরপর ভাঙচুর করা হয় ভবেশ চন্দ্র দাসের বাড়িতে। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অংশ নেয় শত শত হামলাকারী।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে ব্রিজের কাছে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু হলেও পরে একে একে সব বাড়িতে তাণ্ডব চলে। তবে কার নেতৃত্বে এই তাণ্ডব শুরু হয়, সেটি বোঝা যায়নি।
রুহিনী চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার বাড়িতে যখন ভাঙচুর করে তখন পালায়ে যাই। রাস্তাত দেখি শোঠা পীরের ওই দিক থেকেও লোক আসতেছে।’
করিমপুর দক্ষিণ পাড়ায় (হাজিপাড়া) যেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল, সেখান থেকে ঘটনাস্থল উত্তর পাড়ার মধ্যে রয়েছে বিশাল ধানক্ষেত। এর দূরত্ব ২৫০ মিটার। পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থলে আসতে সময় লাগবে অন্তত ৫ মিনিট।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, হিন্দুপল্লিতে আগুন দেয়ার পর দূর থেকেই রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিকেল থেকেই আসতে থাকে মোটরসাইকেল
রামনাথপুরে ঢোকার মুখে পীরগঞ্জের খেজমতপুরের ঘেগার তলে মুদি ব্যবসা করেন ফিরোজ কবির।
তিনি বলেন, ‘রোববার বিকাল হতে না হতে অনেক মোটরসাইকেল যাওয়া শুরু করে। আমরা বলি এত গাড়ি যায় কই। সন্ধ্যার পর আরও বেশি যাওয়া শুরু করে। আমি তো এই মোড়ে ব্যবসা করি। তিন গ্রামের মানষোক চিনি। তবে যারা গেছে তাদের চিনি নাই। যারা গেছে তারা আমাদের গ্রামের লোক নয়।’
বড় মজিদপুর দক্ষিণ পাড়ার মুদি দোকানি মাহবুব রহমান বলেন, ‘এত মোটরসাইকেল সেই দিন কুটি থাকি আইচচে বলতে পারি না। লোকগুলেক আগে দেকিও নাই। কেম্বা অপরিচিত লাগছিল।’
বটতলা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, ওই দিন হাটের দিন হওয়ায় শত শত মানুষ ব্রিজের কাছে বটতলা বাজারে অবস্থান নেন।
তারা মোটরসাইকেল ও অটোরিকশায় এসেছিলেন। অনেকেই দোকানের সামনে মোটরসাইকেল রাখছিল।
হামলা ঠেকাতে পারেননি ইউপি চেয়ারম্যানও
রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অসহায় ভাই। অনেক চেষ্টা করেছি যেন কোনো সমস্যা না হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পারিনি।’
রিমান্ডে ৩৭ জন
পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হামলার তিন মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মামলায় ৩৭ আসামিকে বৃহস্পতিবার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বাহিনীটির একটি সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ডে থাকা অনেকেই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন:দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে মাদারীপুরের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি খরায় জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারছেন না কৃষকরা।
এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিনের তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতেই মরে যাচ্ছে পাট গাছ। কোথাও শুকিয়ে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন সেচ দিয়েও গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না।
অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুণ হারে।
কৃষকরা জানান, এবার প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৯ হাজার ৫০০ টাকার মতো। যা গতবারের চেয়ে অন্তত দুই হাজার বেশি। এরপরে গাছ শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য সেচ দিচ্ছেন তারা। ফলে আরও বাড়তে পারে উৎপাদন ব্যয়।
খোয়াজপুরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরমে মাঠ ফেটে চৌচির। পাটগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি বড় হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন চললে এবার পাট আবাদ ধসে পড়বে। অনেকেই সেচ দিলেও এক দুই দিন পরে আবার শুকিয়ে যায়। এতে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠছে।’
আর মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে, কিন্তু রোগের কারণে পাটের ক্ষতি হওয়ায় চাষিদের বিকেলে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবদুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘এই গরমে পাটের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই, তবে কৃষকদের বলছি, যেন বিকেলে সেচের মাধ্যমে পাট গাছ জীবিত রাখে। এতে গাছ মরবে না।’
মাদারীপুর জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পাটের অবস্থান শীর্ষে। গত বছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন:তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রায় পাবনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। অসহনীয় দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন-চার দিন তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও শুক্রবার চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যা জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রবিবার (২১ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে প্রথমবার ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, জেলার তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতি তীব্র তাপদাহে পাবনার মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ইটভাটার শ্রমিকসহ দিনমজুরদের জন্য অসহ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ।
গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:দীর্ঘ এক যুগ বন্ধ থাকার পর পুনরায় শ্রীমঙ্গল-পাত্রখোলা সড়কে বাস পরিষেবা চালু করেছে শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর-কুলাউড়া বাস মালিক সমিতি।
বৃহস্পতিবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিদ আলী ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন শ্রীমঙ্গল বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই রুটে ৫০ মিনিট পরপর ২৪টি বাস চলাচল করবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ মাধবপুর সড়ক দিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগান পর্যন্ত এ বাস চলাচল করবে।
কুরমা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ টাকা। এছাড়া পাত্রখোলা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৫০ টাকা, মাধবপুর থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ৪০ টাকা, কুরমা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ৪০ টাকা, পাত্রখোলা থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ২৫ টাকা, মাধবপুর থেকে ভানুগাছ পর্যন্ত ১৫ টাকা এবং ভানুগাছ থেকে শ্রীমঙ্গল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কুরমা নতুন বাস স্ট্যান্ডে বাস চলাচলের উদ্বোধন শেষে মতবিনিময় সভায় শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর-কুলাউড়া বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. তসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রকৌশলী যোগেশ্বর চন্দ্র সিংহের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান শাওন, ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ, নুরুল হক, বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, গ্রুপ সভাপতি কাসেম মিয়া ও আব্দুস সালাম প্রমুখ।
এর আগে মাধবপুর বাজারে বাস প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় যাত্রীদের মানসম্পন্ন সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে সিএনজি থেকে ভাড়া কম করে বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় যাত্রীসহ স্কুল কলেজ শিক্ষার্থীরা বেজায় খুশি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় চাওয়াই নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে আলমি আক্তার ও ইসরাত জাহান সিফাত নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের চাওয়াই নদীর চৈতন্যপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
১২ বছরের আলমি ওই এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে এবং ৯ বছরের সিফাত সাইফুল ইসলামের মেয়ে। তারা দুজনে সম্পর্কে ফুফু-ভাতিজি।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে আলমি ও সিফাত বাড়ির পাশে চাওয়াই নদীতে গোসল করতে যায়৷ গোসল করতে গিয়ে সিফাত পানিতে ডুবে যেতে থাকলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় আলমি৷ পরে দুজনেই পানিতে ডুবে যায়। এ সময় নদীর পাড়ে থাকা অন্য আরেক শিশু ঘটনাটি দেখে দৌড়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে মৃত অবস্থায় নদী থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে পুলিশ দুই শিশুর মরদেহের সুরতহাল করে।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুই শিশুর মধ্যে একজন সাঁতার জানত, আরেকজন জানত না। একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়ে দুজনেই একসঙ্গে ডুবে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থনীয়রা।’
মরদেহের সুরতহাল শেষে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য