হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী শান্তি মিছিলকে ক্ষমতাসীন দলের ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার’ উপায় হিসেবে দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এ দেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং বিভাজন সৃষ্টি করে তারা এটাকে পুঁজি করে সেটাকে আবার তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাচ্ছে।
‘অশান্তি ঘটালেন আপনারা, আগুন দিলেন আপনারা, মারলেন আপনারা, গুলি করলেন আপনারা এবং নিরীহ মানুষদের হত্যা করে আজকে শান্তি মিছিল বের করছেন। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। এই আওয়ামী লীগ এটাই। এটাই আওয়ামী লীগের খাঁটি চরিত্র। এটাই তারা করে এসেছে জন্মের পর থেকে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: নিউজবাংলা
এবারের পূজামণ্ডপে মানুষজনের কম উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘এই সাম্প্রদায়িক সমস্যা-সংকট সরকার তৈরি করেছে। এখানে দাদা (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়) আছেন, দাদার বাড়িতে পূজা হয়েছে, সেই বাড়িতে আমরা গিয়েছিলাম। এর আগের বছর যখন গিয়েছি, তখন দেখেছি কী উৎসব কী আনন্দ! সেখানে কাছাকাছি আরো কয়েকটা পূজামণ্ডপে পূজা হচ্ছে, লোকজন রাস্তায় বোঝাই হয়ে ছিল।
‘এবার গিয়ে দেখলাম দাদার বাড়িতে ওইভাবে লোক নেই। কারণ, মানুষ ভয় পেয়ে গেছে, সেভাবে লোক আসছে না। পূজা সেভাবে হচ্ছে না।
‘ঢাকেশ্বরী মন্দিরেও আমি দেখেছি অনেক কম মানুষ। বনানীতে পূজামণ্ডপে গেছি। সেখানেও অনেক কম মানুষ। কেন? আমাদের অন্যতম ভাই, আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী, আমাদের দেশের স্বাধীন নাগরিক তারা কোনো তাদের ধর্মের উৎসব পালন করতে পারবে না?’
সরকার হটানোর আহ্বান
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এ দেশের মানুষ অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আমাদের অর্জনগুলো সব হারিয়ে যাবে। আমরা আরও বেশি নিচের দিকে নামতে থাকব। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সব সচেতন মানুষ যারা আছি তাদের এই দানবীয় সরকারকে সরাতে হবে।’
সরকার পতনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সাদা-কালো, বাম-ডান সবাইকে এক হয়ে এদের সরাতে হবে।
‘এদের সরিয়ে এখানে জনগণের একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে, জনগণের একটা সরকার তৈরি করতে হবে, জনগণের একটা বাসভূমি তৈরি করতে হবে। তাহলেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে সবচেয়ে বেশি সম্মান প্রদর্শন করা হবে।’
দেশে গণতন্ত্র নেই অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র তারা নিজের হাতে শেষ করেছে ১৯৭৫ সালে এবং এবার ২০০৮ সাল থেকে শুরু করেছে।
‘বাংলাদেশের আত্মা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ, মুক্ত সমাজ। সেই আত্মাকে তারা ধ্বংস করছে পরিকল্পিতভাবে। তারা কথা বলতে দেয় না, লিখতে দেয় না।’
বিএনপির এই আয়োজন টেলিভিশনে বড়জোর দুই সেকেন্ড/তিন সেকেন্ড বা ১/২ মিনিট দেখানো যাবে, পত্রিকায় এক কলাম সংবাদ হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আমি বলি দোষ তাদের না। তাদের ম্যানজেমেন্ট, মালিক… যারা সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের সঙ্গে জড়িত আছে। হয় ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনোভাবে অথবা সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। যদি কিছু লিখতে যায় সাংবাদিকের চাকরি চলে যায়, পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও শামীমুর রহমান শামীমের পরিচালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, পেশাজীবী নেতা গাজী আব্দুল হক, প্রকৌশলী মিয়া মুহাম্মদ কাইয়ুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামও রাখেন।
আরও পড়ুন:বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আমরা হাসিনামুক্ত হয়েছি, কিন্তু ষড়যন্ত্রমুক্ত হইনি।
সিলেটে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় তিনি সোমবার এ কথা বলেন।
নগরের পাঠানটুলার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে সবাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপির সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে দেশ গড়ার ক্ষমতা দিতে চায়, এটাই তাদের অপরাধ।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে যে দলটি আল-বদর, আল-শামস বানিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, এখন তারা একেক দিন একেক কথা বলছে। কখনো বলছে পিআর সিস্টেম চায়, কখনো বলছে ভোট করার পরিস্থিতি হয়নি, কখনো বলছে নির্বাচন হলেও অসুবিধা নেই। কখন কী বলে বোঝা যায় না। তবে এটা বোঝা যায়, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।
বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেইজে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, আগামী নির্বাচনে তরুণদের চোখে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে।
সানেম-অ্যাকশনএইড পরিচালিত ‘যুব জরিপ-২০২৫’ শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণে সারা দেশের আট বিভাগের ২ হাজারের বেশি পরিবারের ওপরে এ জরিপ চালানো হয়েছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আনুমানিক ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পাবে। বিএনপির পড়েই আছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট পাবে বলে মনে করছেন তরুণরা।
অন্যান্য ইসলামপন্থি দল, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান আরও নিচে। এছাড়াও, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারত, তবে ১৫ শতাংশ ভোট পেত বলে মনে করেছেন জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা। বিএনপির প্রতি পুরুষ ভোটারদের সমর্থন নারীদের তুলনায় একটু বেশি। জামায়াতের ক্ষেত্রেও পুরুষ সমর্থন বেশি নারীর তুলনায়। অন্যদিকে, এনসিপির প্রতি নারীদের সমর্থন পুরুষদের চেয়ে বেশি, এবং শহরাঞ্চলে এই দলের জনপ্রিয়তা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি।
উল্লেখ্য, জরিপের ফল গত রোববার প্রকাশ করেছে সানেম, যা তরুণদের রাজনৈতিক ঝোঁক ও আগ্রহের একটি সময়োপযোগী প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেশের তরুণদের মধ্যে ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশই আশাবাদী আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তবে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ ইতোমধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ তরুণ, অন্যদিকে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ তরুণ ভোট দিতে অনাগ্রহী বলে জরিপে উঠে এসেছে।
জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী রাজনীতি ও সংস্কার নিয়ে তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি জরিপে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক সচেতনতার দিক থেকে মাত্র ২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ তরুণ নিয়মিত দেশের রাজনীতির হালচাল অনুসরণ করেন, ৩৯ দশমিক ০৯ শতাংশ মাঝে মাঝে করেন, আর ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এ ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী না।
নারীদের মধ্যে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহী না, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঘনিষ্ঠভাবে রাজনীতি অনুসরণকারী তরুণের হারও খুব কম—পুরুষদের মধ্যে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই চিত্র—পুরুষদের মধ্যে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
জরিপে রাজনৈতিক দলের কার্যকারিতা নিয়ে তরুণদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট। মাত্র ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডায় দেশের প্রকৃত সমস্যার প্রতিফলন ঘটে, যেখানে ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ একেবারেই এ বিষয়ে একমত না। দেশের ৫০ শতাংশ তরুণ মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি, আর বিপরীতে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ মনে করেন যে দলগুলো তরুণদের সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েও তরুণদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মনে করেন সংস্কার ছাড়াই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। তবে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন, যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। অপরদিকে, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আরও অবনতি দেখছেন এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশ মনে করেন, কিছুই পরিবর্তন হবে না।
দেশের ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ কোনোভাবেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহী না। ১১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণের মধ্যে কিছুটা আগ্রহ আছে এবং মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ বর্তমানে কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল নিয়ে তরুণদের প্রত্যাশা অনেকটাই আদর্শভিত্তিক। ৬০ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতা দূর করবে। ৫৪ শতাংশ চায় নিয়মিত নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক। পাশাপাশি, ৪৮ দশমিক ২৩ শতাংশ তরুণ মনে করেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত নয়।
জরিপ পরিচালনা করা সংস্থা দুটি জানিয়েছেন, জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে তরুণরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের গতিপথ, অন্তর্ভুক্তি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে কীভাবে চিন্তা করছে—তাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে জরিপটিতে। জরিপটি তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। সার্বিকভাবে, এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল তরুণদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষাগুলো আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা, যেন তা নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয় এবং যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।
জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে দলের শীর্ষ নেতাদের দুটি পক্ষের চলা উত্তেজনার মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জাতীয় পাটির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিকালে দলের নতুন মহাসচিব নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। এর আগে মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিবের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানায় দলটি। ঘণ্টাখানেক পর দলের জ্যেষ্ঠ তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের।
রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গত ২৮ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) দশম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৬ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্মেলন স্থগিতের কথা জানায় জাপা। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই সম্মেলন স্থগিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
উল্লেখ্য, সম্মেলনের আয়োজনে বিলম্ব, চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাবসহ নানা ইস্যুতে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রবল বিভক্তির সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর।
গতকাল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির গত ২৫ জুনের মতবিনিময় সভায় জেলা, মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা সিনিয়র কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই তিন নেতাকে সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ অবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে অব্যাহতি দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে অব্যাহতি পাওয়ার কিছুক্ষণ আগে জাতীয় পার্টির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বর্তমান মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) বাদ দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগের বিরোধিতা করে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তারা এই নিয়োগকে চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করেন। জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ এই দুই নেতা বলেন, এটি এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ, যা পার্টির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
গতকাল বিকালে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে (চুন্নু) অব্যাহতি প্রদান করেছেন। সেই শূন্য পদে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব নিয়োগ প্রদান করেছেন।
এরপরই আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার যৌথভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানান। বিবৃতিতে এই দুই নেতা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হকই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। মুজিবুল হককে কোনো কারণ ছাড়াই অব্যাহতি দিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে একক সিদ্ধান্তে মহাসচিব নিয়োগ চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে। আমরা বিস্মিত যে দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি প্রদান করা হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানিকর আচরণ।’
বিবৃতিতে জাতীয় পাটির দুই নেতা আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হতে হবে। দলে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি।‘
বিবৃতিতে তারা জাতীয় পার্টির ত্যাগী, আদর্শবান নেতা-কর্মীদের প্রতি অন্যায় ও একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৭ জুলাই) সকালে সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ সঠিক পথে অগ্রসর হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলন, বিশেষ করে জুলাইয়ের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থান যে নতুন পথ দেখিয়েছে তা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সবাইকে।’
এ ছাড়া, বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং এসব মামলা ও দমন-পীড়নের কারণে অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এর আগে, সকাল ৯টা ২৫ মিনিটির দিকে বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকার একটি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
এ সময় সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী জানান, সোমবার বিকালে সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মিলাদ মাহফিলে অংশ নেবেন মির্জা ফখরুল।
পাশাপাশি সিলেটের দরগাহ গেট এলাকার হোটেল স্টার প্যাসিফিকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সিলেটে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিবের সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ অন্যান্য নেতারা।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা পুরোনো ব্যবস্থায় চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
রবিবার (৬ জুলাই) চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘বিচার, সংস্কার, তারপর নির্বাচনের’ দাবিতে চলমান জুলাই পদযাত্রার পথসভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এরআগে পাশের জেলা নওগাঁ থেকে দুপুর ২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শান্তিমোড়ে উপস্থিত হন এনসিপির নেতারা। এরপর পদযাত্রা শুরু হয়।
পরে এটি বাতেনখাঁ মোড়, নীমতলা মোড়, বড় ইন্দারা মোড়, গাবতলা মোড় ও ক্লাব সুপার মার্কেট হয়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতারা।
পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এসেছি, জুলাই অভ্যুত্থানের বার্তা নিয়ে, যে বার্তা একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখায়। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়।’
‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা নতুন বাংলাদেশ চেয়েছি, আমরা রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার চেয়েছি, আমরা গণত্যাকারীদের বিচার চেয়েছি। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ চেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতে বৈষম্যের শিকার। বাংলাদেশের সব জেলায় এমন বৈষম্য দূর হবে আমরা সেই স্বপ্ন দেখি।’
সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গ্রেনেড মারে, এখানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনায়। আমরা কিন্তু এইসব আগ্রাসন আর মেনে নেব না।’
‘সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ হয়েছে। আর আগ্রাসন চালানো হলে, আমার ভাইদের হত্যা করা হলে আমরা লং মার্চ ঘোষণা করবো। আমাদের সীমান্ত আমরাই রক্ষা করবো।’
দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন, সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ নির্মম নির্যাতন করেছে। সেই নির্যাতনকে সায় দিয়ে দিল্লির সরকারও সীমান্তে হত্যা চালিয়েছে।’
সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে। ভারত আর কোনোদিন আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে পারবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ আঞ্চলিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো বৈষম্য দেখতে চাই না। ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আর পুরোনো সিস্টেমে চলতে পারে না ‘
এ সময়ে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিতি ছিলেন। পরে এনসিপির চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয় উদ্বোধন শেষে রাজশাহীর উদ্দেশে রওয়ানা দেন তারা।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘নতুন পুরাতন বুঝি না, নির্বাচন নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
শনিবার (৫ জালাই) সকাল সোয়া ৭টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যে শহিদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীনতা এসেছে। সে রক্তের সঙ্গে কাউকে বেইমানি করতে দেব না। আমরা শহিদদের রক্তের মূল্য দিতে চাই।’
‘যেনতেন নির্বাচন আমরা চাই না। নতুন পুরাতন বুঝি না, নির্বাচন নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে যেকোনো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইদানীং বেশকিছু রাজননৈতিক দলের দখল ও লুটপাট লক্ষ করছি। ওইসব দলগুলোকে বলতে চাই— নিজেদের সামলান, নয়তো জনগণই আপনাদের সামলাবে।’
ফেনীতে রুকন সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এদিন কুমিল্লায় পৃথক চারটি পথসভায় অংশগ্রহণ করেন জামায়াত আমির।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে মহানগরীর সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমানের পরিচালনা পথসভায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মোহাম্মদ মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ আমীর মোহাম্মদ শাজাহান অ্যাডভোকেট, উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিন, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. মাহফুজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা-৮ বরুড়া আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল, মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. কামারুজ্জামান সোহেল, কাউন্সিলর মোশাররফ হোসাইন ও নাছির আহম্মেদ মোল্লা প্রমুখ।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতি দেশকে আবার স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। তিনি বলেন, সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসে, সে জন্য গণতান্ত্রিক ঐক্য দরকার।
এ সময়ে আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আনুপাতিক ভোট পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আনুপাতিক ভোটের প্রয়োজন কী? এই ব্যবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে কোনো নেতা তৈরি হবে না, নেতৃত্বের বিকাশও হবে না। আমরা চিরায়ত গণতন্ত্রের পক্ষে, যেখানে বৈধ ভোটাররা ভোট দিয়ে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে।’
‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নেতা হয়েছেন, অথচ আনুপাতিক ভোটে তাকে নয়; দলকে ভোট দিতে হবে। এরপর দল থেকে বাছাই করে এমপি ঘোষণা করা হবে—এটি আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে, সেই ১৮ কোটি মানুষের দেশে কেন এমন ভোট পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে? যে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বছরের পর বছর কারাবরণ করেছে, সেই গণতন্ত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে দেশের কোনো তরুণ শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, আর কার রক্তাক্ত লাশ তিস্তা, গঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যাবে—এটাই ছিল নিত্যদিনের চিত্র। এই ভয়াবহ সময় পার করতে হয়েছে আমাদের। শেখ হাসিনার দমন-পীড়নের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সেই রক্তপিপাসুরা যাতে আবার ফিরে না আসতে পারে, তার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে বিএনপির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়ানো চলবে না। বিএনপির নেতাকর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ কষ্ট না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যেন বিএনপির কাছ থেকে ন্যায়বিচার পায়, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কেউ যদি এসব অপকর্মে জড়িত থাকে, দল সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে—এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ও ‘বিজয়ের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন রংপুর (ড্যাব)।
মন্তব্য