সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারকে আন্তধর্মীয় সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিকদের সমাবেশ থেকে। সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে উসকানি ও ঘৃণার বক্তব্য সরানোর দাবি জানানো হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপে ভাঙচুর, তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক’ এর ব্যানারে সমাবেশের সামনে রঙতুলি দিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান চিত্রশিল্পীরা।
সমাবেশে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে লেখক স্বকৃত নোমান সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো,
সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা;
রামু, নাসিরনগরসহ দেশে সংগঠিত প্রতিটি হামলার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ এবং এতে রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিচার করা;
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওয়াজ মাহফিল থেকে সাম্প্রদায়িক এবং নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেয়া;
স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে৷ অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা;
সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা;
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে সংস্কৃতিচর্চার প্রসার ঘটানো এবং স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনুপ্রাণিত করা;
এবং
দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার এবং সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আজ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত। লজ্জায় আমরা মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছি। তবে এ মাটি থেকেই আমাদের ওঠে দাঁড়াতে হবে।
‘কারণ, পরাজিত হওয়ার জন্য ৩০ লক্ষ শহিদ বাংলাদেশ স্বাধীন করেনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ এবং বাড়ি ঘরে যে হামলা হয়েছে এটা একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে ঘটতে পারে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা চাই, দেশের সমস্ত মানুষ এক হয়ে এ দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি মনে করি, একটি সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত হয়েছে। একে ইথনিক ক্লিঞ্জিং বলে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
‘একটি সম্প্রদায়ের উপর আঘাত মানে আপনার-আমার উপর আঘাত, বাংলাদেশের সংবিধানের উপর আঘাত। কারণ, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, ভিন্নমতের মানুষ ও ভিন্ন ধর্মের মানুষের অধিকার যখন ক্ষুণ্ণ করা হয়, তখন লেখক হিসেবে আমার অধিকারও ক্ষুণ্ণ হয়। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
কথা সাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে যে সংখ্যালঘু শব্দের প্রচলন রয়েছে। আমরা চাই সেটি বন্ধ হোক। এ দেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। যদি কোনো ধর্মের একজনও থেকে থাকে তাহলেও তিনি সংখ্যালঘু না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকেও আমরা সংখ্যালঘু বলতে চাই না। এই দেশে প্রত্যেকের সমান অধিকার আছে।’
পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘কোনো মুসলমান মন্দিরে আজান দেবে না, কোনো হিন্দুও মন্দিরে কোরআন রাখতে পারে না। যারা এই কাজ করেছে, তারা মানুষরূপী অসুর। চলুন, আজ এই সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিই—এসব মানুষরূপী অসুরদের বদ করতে হবে।’
কথাসাহিত্যিক রেজা ঘটক বলেন, ‘সরকার আজ পর্যন্ত একটি ঘটনারও সুষ্ঠু বিচার করেনি। এই বিচারহীনতায় বারবার এ ঘটনাগুলোকে উসকে দিচ্ছে। যারা এসব হামলা করছে তারা ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী। কিন্তু সেই গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কেনো বারবার ব্যর্থ হচ্ছে! এটি কি কোনো চক্রান্ত?’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কেন আজ আমার মূর্তির উপর আঘাত আসে? কেন আজ আমি আমার মাকে শান্তিতে বিসর্জন দিতে পারি না? এই দুঃখ কোথায় রাখব?’
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সংগঠনটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় আমরা এখানে এসে দাঁড়াই। কিন্তু এই যে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো হচ্ছে, এগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না? রামু থেকে নাসিরনগরের ঘটনাগুলোর বিচার যদি হতো, তবে আজকে চাঁদপুর-নোয়াখালী-কুমিল্লায় এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতো না।’
একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক জুলহাস নুর বলেন, ‘আমি একজন সংবাদকর্মী। আমরা নিউজরুমে কাজ করি। যখন এই ধরনের হামলার ঘটনাগুলো আমাদের কাছে আসে এবং এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, তখন আমরা ভীষণভানে মুষড়ে পড়ি।
‘আমরা যখন এখানে দাঁড়িয়ে আছি, এর আগেই ঘটে গেছে হাজীগঞ্জ, চৌমুহনী, পীরগঞ্জের ঘটনা। এসব ঘটনা যারা ঘটাচ্ছেন, তারা বারবার ঘটিয়ে চলেছে। এই ঘটনাগুলো প্রতিরোধে যে গণপ্রতিরোধ হওয়া দরকার, সরকার-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনীতিবিদদের যা করা দরকার, আমরা কি তা ঠিকঠাক করছি?’
চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক চিত্রশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনও পরাজিত হতে পারে না। এই দেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা আছে মানুষ আর পিশাচে। যারা এসব ঘটাচ্ছে, তারা পিশাচ আর আমরা মানুষ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ, গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুস্তাফিজ বিপ্লব, কথাসাহিত্যিক আহমদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও গবেষক চঞ্চল আশরাফ, অভিনয়শিল্পী মৌটুসী বিশ্বাস, চিত্রনির্মাতা মাসুদ প্রতীক, কবি লেখক শিক্ষক ঝর্ণা রহমান, কবি টোকন ঠাকুর, কথা সাহিত্যিক পারভেজ হোসেন, আবৃত্তিশিল্পী মাসুম আজিজুল বাশার, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মকবুল হোসেনও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবট গ্রামে হাইব্রিড লাউ ‘ডায়না’ চাষে সাফল্য পেয়েছেন কৃষক মো. জাহাঙ্গীর মিয়া, যা এলাকায় সাড়া ফেলেছে। লালতীর সীড লিমিটেডের অধিক ফলনশীল ও আকর্ষণীয় এই লাউ জাতটি চাষ করে তিনি অল্প সময়ে লাভবান হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে এলাকার বেকার যুবকসহ অনেক কৃষক ‘ডায়না’ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর মিয়া ও কৃষক গনি মিয়া যৌথভাবে প্রথমবারের মতো ৫৬ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে হাইব্রিড লাউ ‘ডায়না’ চাষ করেন। বর্তমানে তাদের মাঠে সারি সারি গাছে ঝুলছে অগণিত লাউ। চারা লাগানোর মাত্র ৫০-৫৫ দিনের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি লাউয়ের গড় ওজন ২থেকে ৩কেজি। এ জাতের লাউ টানা তিন মাস ধরে ফল দিতে সক্ষম।
চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে মাঠ থেকে লাউ বিক্রি করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। প্রথম পর্যায়ে তারা প্রায় ৫২ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। কৃষকরা আশা করছেন, এই মৌসুমে লাখ টাকার বেশি আয় করতে সক্ষম হবেন।
সফল কৃষক গনি মিয়া বলেন, ‘লাউ চাষে তেমন খরচ নেই। অন্য ফসলের তুলনায় লাউ চাষে খরচ কম লাগে। বর্তমানে বাজারে লাউয়ের চাহিদা অনেক। স্থানীয় বাজার ছাড়াও ক্রেতারা সরাসরি বাগান থেকে লাউ কিনে নিচ্ছেন। উৎপাদন শেষ হলে আমরা টমেটো ও শিম চাষ করবো। সঠিক যত্নের মাধ্যমে ভালো লাভবান হওয়া সম্ভব।’
স্থানীয় কৃষক বিকাশ সরকার জানান, ‘জাহাঙ্গীর মিয়া ও গনি মিয়া খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চাষে সফল হয়েছেন। তাদের সাফল্য দেখে আমাদেরও উৎসাহ তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখন এই জাতের লাউ চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
হাইব্রিড লাউ ‘ডায়না’ বীজের উৎস প্রতিষ্ঠান লালতীর সিড লিমিটেড। ডিভিশন ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, ‘হাইব্রিড ‘ডায়না’ অধিক ফলনশীল, আকর্ষণীয় এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য উপযোগী। এটি বোতল আকৃতির ও উজ্জ্বল সবুজ রঙের। উচ্চ তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা সহনশীল, লম্বায় ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। কৃষকদের জন্য এটি অত্যন্ত লাভজনক এবং সারা বছর চাষ করা যায়। তিনি আরো বলেন, জাহাঙ্গীর ও গনি মিয়ার সফলতা দেখেই অন্যান্য কৃষকরাও অনাবাদি জমি কাজে লাগিয়ে লাউ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে শ্রীমঙ্গলসহ সারাদেশে সবজি চাষের প্রসার ঘটবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উজ্জ্বল সূত্রধর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এবার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রায় ৫২ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করা হচ্ছে। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি লাউ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আমরা নিয়মিত কৃষকদের জমি পরিদর্শন করছি এবং কীটনাশক ব্যবস্থাপনা, নতুন জাতের প্রচার ও সম্প্রসারণে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি। ধানচাষের তুলনায় খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাউ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
দেশের উত্তরাঞ্চলগামী ট্রাক, বাস ও প্রাইভেটকার প্রতিদিনই ছুটে চলে নাটোরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক ধরে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সড়ক এখন পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। নাটোরের বনপাড়া থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণহানির পাশাপাশি স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকেই।
ব্যস্ততম এই মহাসড়কে রয়েছে একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। সরু সড়ক, যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিংই দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দ্রুত মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি তাদের।
২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর মহাসড়কের রেজুর মোড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাকে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৩৮ জন। এরপর থেকে প্রতি বছরই বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সড়কে ঘটেছে ১১৪টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে নিহত হয়েছেন ৩৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১২৪ জন।
বনপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর শুনতে হয়। আমরা দোকানে বসেও আতঙ্কে থাকি, কখন কী ঘটে যায়।’
চলনবিল এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, বেপরোয়া গতি আর ওভারটেকিংই মূল সমস্যা। এভাবে দুর্ঘটনা বাড়তে থাকলে মানুষের জীবন বাঁচানো দায় হয়ে পড়বে।
স্থানীয় কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, প্রতিদিন কলেজে আসা-যাওয়ার সময় ভয় নিয়ে পথ পাড়ি দিতে হয়। রাস্তা যদি দ্রুত চার লেনে উন্নীত হয়, আমরা অনেকটা নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারব।
অন্যদিকে কয়েকজন চালক জানান, অতিরিক্ত গতি ও অদক্ষ চালকদের কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে। অনেক সময় সরু অংশে একসঙ্গে একাধিক গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে সংঘর্ষ হয়।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু রয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান সরকার জানান, মহাসড়কটি চার লেনে সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। এলাকাবাসীর দাবি এই পথে চলাচলকারীদের একমাত্র দাবি—ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সম্প্রসারণ, ওভারস্পিড ও ওভারটেকিং নিয়ন্ত্রণ এবং মহাসড়কটি দ্রুত চার লেনে উন্নীত করা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর পক্ষ থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর সদস্যদের দুই দিনব্যাপী অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ডিআরইউ-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় এবং ডিআরইউর পক্ষ থেকে পার্টিসিপেন্টদের মনোনীত করা হয়।
খবর : ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল।
ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি পরিলক্ষিত হয়েছে যে, কিছু কিছু গণমাধ্যমে ভূয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। উক্ত সংবাদগুলোর প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশ এবং ভাতাসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের এম.আই.এস ভুক্ত যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
জুলাই শহীদ এবং জুলাই যোদ্ধার তালিকায় যে সকল ভূয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তাদের নাম যাচাই বাছাই করে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ইতোমধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
এছাড়াও গণমাধ্যমে যে সকল ভুয়া জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করছে।
কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী এবং ধর্ম, মত বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে কাউকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। পুরো জাতি একটি পরিবার। পরিবারের ভেতরে মতভেদ থাকতে পারে, ব্যবহারের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু পরিবার একটি অটুট জিনিস—এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। আমরা যেন জাতি হিসেবে এই অটুট পরিবার হয়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
আজ রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যত ধর্মীয় পার্থক্য থাকুক, মতের পার্থক্য থাকুক, রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই বৈষম্য করার। রাষ্ট্র দায়িত্ববদ্ধ সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়ার জন্য। সে যেই ধর্মেই বিশ্বাস করুক, যে মতবাদেই বিশ্বাস করুক, ধনী হোক কিংবা গরিব—রাষ্ট্রের কাছে সে একজন নাগরিক। নাগরিকের সকল অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র আমাদের তালিকা করে দিয়েছে আমার প্রাপ্য কী। কোনো সরকারের অধিকার নেই কাউকে বঞ্চিত করার, সামান্যতম পরিমাণেও নয়। আমরা নাগরিক—আমাদের প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা যাবে না। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে।’
নাগরিক অধিকার প্রসঙ্গে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যত কথাই বলুন, তার মধ্যে বারে বারে বলুন—আমি এ দেশের নাগরিক, আমার সংবিধান প্রদত্ত সকল অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তখন দেখবেন সবাই আপনাদের সঙ্গী হবে। সারা দেশের মানুষ একসঙ্গে থাকবে, কারণ সবার সমস্যাই একই—নিজের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।’
নাগরিক অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বারবার লাঞ্ছিত হই, অপমানিত হই, নানা বৈষম্যের শিকার হই। কেন? কারণ নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আমরা হতাশ হয়ে গেছি। এখন আর হতাশ হওয়া চলবে না। নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো—সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা।’
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই না নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে ধর্ম পালন করতে। আমরা চাই নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে। এ অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ভূমিকা পালন করছে, আমরা এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের ধর্মীয় উৎসব পালনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপের প্রয়োজন হবে না।’
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা তার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাও ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমাকে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হবে। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। আমি বললাম, যাবই। এই আনন্দ থেকে আমি নিজেকে দূরে রাখতে চাইনি। যদিও শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকার প্রধান হিসেবে আমাকে থাকতে হবে, তাই আমি আগেভাগে এসেছি আপনাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখনও বলেছিলাম—আমরা সবাই একটি পরিবার। পারিবারিক মতভেদ থাকবেই, কিন্তু পরিবার ভাঙবে না।’
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দে প্রমূখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ঘাট সংকটে যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
সিরিয়ালে অল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী যানবাহন থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। ফলে ট্রাকচালক ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের সারি সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক'শ যানবাহন ফেরির জন্য লম্বা সিরিয়ালে আটকে রয়েছে। সিরিয়ালে আটকে থাকা যানবাহন গুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর।
এসব পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কের আটকে থাকতে হচ্ছে। ফলে তাদের গোসল, খাওয়া-দাওয়া, টয়লেটসহ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,, দৌলতদয়িায় ১, ২, ৫ ও ৬ নং ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে অকেঁজো হয়ে পড়ে আছে। ৩, ৪ ও ৭ নং ফেরি ঘাট জরাজীর্ণ অবস্থায় চলমান ছিল। এরমধ্যেই পদ্মায় তীব্র স্রেতের কারনে গতমাসের ২৩ আগস্ট থেকে ৭ নম্বর ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাট সচল থাকলেও ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের প্লেট ভেঙ্গে যাওয়ায় রবিবার রাত ১২টা থেকে ঘাটটি মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। শুধুমাত্র ৩ নম্বর ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা গোল্ডেন লাইনের বাস চালক আঃ জলিল বলেন, দুই ঘন্টা দৌলতদিয়া ঘাটে সিরিয়ালে আটকে আছি। শুনতেছি একটি মাত্র ঘাট চালু রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।
যশোর থেকে আসা ট্রাকচালক হাবিবুর রহমান বলেন, সকাল ৮ টার দিকে এসে সিরিয়ালে আটকে আছি। গাড়িতে তার রয়েছে। এছাড়া সময়মতো মালামাল পরিবহন করতে না পেরে পরিবহন খরচের পাশাপাশি তাদের খরচও বাড়ছে।
ভোগান্তি লাঘবে যাত্রীবাহী যানবাহন ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, দুটি ঘাটের মধ্যে একটি ঘাট চালু থাকায় যানবাহনের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে। একটি ঘাটের মেরামত কাজ চলছে, আশা করি খুব দ্রুতই ঘাটটি সচল হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, ঘাট কম থাকার ফেরি কম চালাতে হচ্ছে। বর্তমান এই নৌ-রুটে ছোট বড় মিলিয়ে ১০ টি ফেরি চলাচল করছে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটিতে চাষ করা হচ্ছে হলুদ,অন্যটিতে শুকানো হচ্ছে পাট,রাতে মাদক সেবীর আড্ডা
বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন ষোলটাকা, কাজিপুর ও ধানখোলা চালু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র।
গত সাত মাস যাবৎ কোনো ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আর কেরামতি বেড়েছে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরে চাষ করা হয়েছে হলুদ। আর এই উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন কাজিপুর। সেই কেন্দ্রটিতে দিনের বেলায় শুকানো হয় পাট। আর সন্ধ্যা লাগলেই পরিণত হয় মাদক সেবীদের আকড়া হিসেবে। আর ধানখোলায় ঝুলছে তালা।
কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ। বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশা।
মেডিকেল অফিসারসহ চারটি পদের মধ্যে রয়েছে মাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার।
তা ছাড়া ওষুধ ও জনবল সংকটে নরমাল ডেলিভারি, প্রসূতি সেবা, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ।
একেকটি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন পিয়নের পদ থাকলেও সেখানে নামমাত্র একজন উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে এই সব উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
এদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ভবন ও বাসভবন দুটিই একেবারই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছাদ থেকে ঢালায় খসে খসে পড়ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত ভবনে বসছে নিয়মিত মাদকের আড্ডা।
সেবা প্রার্থী ষাট বছর উধ্বো জমেলা খাতুন বলেন,আমার বয়স হয়েছে আর রোগেও পাল্লা দিয়েছে। গরীব মানুষ ঔষধ কিনতে টাকা থাকে না। এই হাপানি রোগ নিয়ে দির্ঘদিন ভুগছি। এই হাসপাতালে এসে ঔষধ নিয়ে খেলে কম থাকে। একটু আরাম পাই। অথচ গত ৫/৬ মাস যাবৎ কোনো ওষুধ নেই। জরুরি চিকিৎসার জন্য গাংনী, মেহেরপুর কিংবা কুষ্টিয়া যেতে হয়। কিছু দিন আগে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের এক কৃষক হঠাৎ অসুস্থ হলে গাংনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়।
কাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়াদ আলী বলেন, আমরা সিমান্ত এলাকার মানুষ হওয়াই বড় পাপ করে ফেলেছি। আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক সেবার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়ে আছি। আমাদের ইউনিয়ন পারিবারিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খাতা কলমে আছে। আর সেবার ক্ষেত্রে শূন্য।
ষোলটাকা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো নামেই আছে, এখানে ডাক্তার ও নার্স নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ সময় মতো পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে।বতর্মান হাসপাতালের ভিতরে হলুদ চাষ হচ্ছে। আর অন্য সময় মাদকসেবীদের দখলে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার এবং নার্সের প্রয়োজন।
ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ফিরোজ বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কোয়ার্টার ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় সেখানে কোনো ডাক্তার থাকতে পারেন না। তাই রাতের আঁধারে চিকিৎসার জন্য রোগীদের শহরে নিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া, নিয়মিত ওষুধ পাওয়া যায় না।এতে গ্রামের মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে ব্যহত হচ্ছে।
ষোলটাকা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, জনবল ও ওষুধ সংকট রয়েছে। জনবল ও ওষুধ দিলে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া চারজনের কাজ একাই করতে হয়।
কাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের কাছেই অবস্থিত ইউনিয়ন পরিবার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এটির অধিকাংশ ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। সন্ধ্যায় পর যখন এলাকা ফাকা থাকে তখন মাদকসেবীরা আড্ডায় বসে। অনেক ভবনের জ্বানালা দরজা খুলে বিক্রি করে দিয়েছে মাদক সেবীরা। আমারা সিমান্ত এলাকার মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হলে ১৫ কিলো যাওয়া লাগে। তাই এটি দ্রুত চালু করা দরকার।
এদিকে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আবু সাঈদ বলেন, দ্রুত ওষুধ সরবরাহ করা হবে এবং শিগগিরই জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। সপ্তাহে দুই কিংবা তিন দিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকলেও বাকি সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হয় ওই সব উপসহকারী কমিউিনিটি মেডিকেল অফিসারদের।
মন্তব্য