আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ফোন নম্বর স্পুফকারী ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজীমনগর ইউনিয়ন থেকে সোমবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে স্পুফকারী ফিরোজ খন্দকার ও তার সহযোগী মো. রাকিবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাইবার ইনভেস্টিগেশন বিভাগের ইন্টারনেট রেফারেল টিমের প্রধান সহকারী কমিশনার কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাইবার পুলিশ জানায়, ফিরোজ খন্দকার গ্রেপ্তারের আগে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। তিনি ঢাকার খিলখাঁও থেকে কেরাণীগঞ্জের মধ্যে বিভিন্ন বুথ থেকে এ প্রতারণা করে টাকা তোলেন। সন্দেহ এড়াতে এ প্রতারণা টাকা উত্তোলনের সময় মোটর সাইকেলে চড়ে বিভিন্ন বুথ থেকে অল্প অল্প করে টাকা তুলতেন তিনি।
অভিযোগ পেয়ে ফিরোজ খন্দকার যেসব বুথ থেকে টাকা তুলতেন সেসব বুথের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশের সিটি সাইবার ইন্টারনেট রেফারেল টিম। প্রযুক্তির সহায়তায় নানান তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাকে ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের শেখ ফজলে শামস পরশের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটি প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানান, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের ফোন নম্বর স্পুফ করে সংগঠনের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন ফিরোজ। এ কাজে তিনি প্রথমে ইন্টারনেট থেকে যুবলীগের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন। ফোন নম্বরে ডায়ালার অ্যাপের মাধ্যমে নম্বর স্পুফ করে ফোন করতেন।
সিটি সাইবারের ইন্টারনেট রেফারেল টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং বুথের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ফিরোজকে শনাক্ত করে।
ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ফিরোজ সরাসরি টাকা চাইতেন না। বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বলে নিজেকে পরশ হিসেবে পরিচয়ে দিয়ে বিকাশ-রকেট নম্বরে টাকা চাইতেন। সংগঠনের চেয়ারম্যানের ফোন নম্বর পেয়ে নেতারা উৎফুল্ল মনে বিকাশে টাকা পাঠাতেন। আর রাজধানীর বুথগুলো থেকে এ টাকা তুলতেন তিনি।
এসব ঘটনা এক সময় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ জানতে পারেন। তিনি বাধ্য হয়ে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ করে দেন। বুঝতে পারেন তার নম্বরটি ক্লোন করে অর্থ আত্মসাৎ করছে একটি চক্র। নিজের ভেরিয়েইড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি সতর্কর্তামূলক পোস্টও দেন তিনি।
এসব ঘটনায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের হয়ে গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন ব্যারিস্টার রানা তাজউদ্দিন খান। এতে মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোনিং করে টাকা দাবির অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়। মামলার পরপরই সাইবার সিটি তদন্ত নামে। তদন্তের একপর্যায়ে ফিরোজ খন্দকারকে শনাক্ত করা হয়।
সূত্র জানায়, পরশের নাম করে তার ব্যবহৃত রবি নম্বরটি ক্লোন করে গত ৯ অক্টোবর প্রথম ফোন করা হয় গাইবান্ধা যুবলীগের সভাপতি সরদার মো. শাহীন হাসান লোটনের গ্রামীণ ফোনের নম্বরে। সংগঠনের জন্য চাঁদা হিসেবে তাকে একটি রকেট নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়। একই দিন নেত্রকোণা যুবলীগের আহ্বায়ক জনি ও সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের চপলকে ফোন করে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়।
১০ অক্টোবর মুশফিকুল ইউনুস জায়গীরদার নামে এক ব্যক্তি এবং পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সনি বিশ্বাসকে ফোন করে বিকাশে টাকা চাওয়া হয়। এছাড়াও গত কয়েকদিনে একই পরিচয়ে দেশের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ফোন করে টাকা দাবি করে প্রতারক চক্রটি।
সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখেছেন পরশ। তবে শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে বিষয়টি খোলাসা করেন তিনি। শেখ পরশ বলেন, ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। যুবলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সকলকে এই মর্মে সতর্ক করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সম্মানিত চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ফোন করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টাসহ নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে একটি প্রতারক চক্র। অনুগ্রহপূর্বক কেউ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেবেন না।’
আরও পড়ুন:আগামী ২৬ এপ্রিলের (শুক্রবার) শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছিল, কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে সমাবেশ আপাতত স্থগিত। শান্তি সমাবেশের তারিখ পরে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গতঃ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এ শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
রোববার (২১ এপ্রিল) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ৩টা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে।
অবশ্য এর আগে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২৬ এপ্রিল বিকেলে নয়াপল্টনে সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। পরে তাপপ্রবাহের কারণ দেখিয়ে সোমবার তা স্থগিত করে দলটি।
কুমিল্লায় ছাত্রদল নেতাকে হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৫ মাসের সাজার রায় ঘোষণা করা হয়।
সোমবার কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক নাসরিন জাহান এ রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় ১১ জন আসামি উপস্থিত থাকলেও পলাতক ছিলেন তিনজন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শরীফুল ইসলাম।
নিহত মো. পারভেজ হোসেন সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কালিবাজার এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সেকান্দর আলী, যুবলীগ নেতা মো. শাহীন, স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. সাদ্দাম হোসেন, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, মফিজ ভান্ডারী, মো. কামাল হোসেন, আব্দুল কাদের, মো. ইব্রাহীম খলিল, আনোয়ার, মো. মেহেদী হাসান রুবেল ও জয়নাল আবেদীন। এবং পলাতক তিন আসামী হলেন- মো. কাওছার, মো. রিয়াজ রিয়াদ ও বিল্লাল।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালের ১০ জুন সন্ধ্যায় কমলাপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে পারভেজকে আটক করেন সিকান্দার চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তাকে এলোপাতাড়ি মারধরে গুরুতর আহত করা হয়। মারধরে গুরুতর আহত হয়ে পারভেজের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে ১৫০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। পরে পারভেজের মাও বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় তদন্ত করে সিআইডি ১৪ জনকে আসামি করে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে একজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও ৩০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেয়।
আরও পড়ুন:গ্রীষ্মের চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশে। আবহাওয়ার এই প্রতিকূলতার কারণে রাজধানীতে পূর্বঘোষিত সমাবেশ স্থগিত করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু সোমবার এই তথ্য জানান।
আগামী ২৬ এপ্রিল (শুক্রবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ২০ এপ্রিল এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে অবহিত করে চিঠিও দেয় দলটি।
গ্রীষ্মের উত্তাপে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে বিএনপির ২৬ এপ্রিলের সমাবেশের ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ ছড়ায়। বিএনপির এই ঘোষণার পর একই দিন রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দেয় আওয়ামী লীগও।
তবে তীব্র গরমের কারণে ১৯ এপ্রিল সারা দেশে তিনদিনের জন্য সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অফিস। হিট অ্যালার্ট সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে আরও তিন দিন বাড়ানো হয়েছে।
সাইদুর রহমান মিন্টু জানান, গরমে সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্টের সময় বাড়ানোর কারণে সমাবেশ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কবে নাগাদ এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। তবে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী পহেলা মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করবে বিএনপি। এরপর সুবিধামতো একটি দিন ঠিক করা হবে সমাবেশের জন্য।
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেকের আপন ফুফাতো ভাই মো. ইসরাফিল হোসেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাফিল এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ইসরফিল হোসেনের মা মৃত রাহেলা বেগম সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী ও ঢাকা সিটি করপোরশনের সাবেক মেয়র কর্নেল (অব.) আব্দুল মালেকের আপন বোন। আর কর্নেল মালেকের ছেলে হচ্ছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বর্তমান মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সদস সদস্য জাহিদ মালেক।
এ হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই ইসরাফিল হোসেন এবং ইসরাফিল হোসেনের মামাতো ভাই হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক।
মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে- সম্প্রতি এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের সারা দেশ থেকে তথ্য নিয়ে তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইসরাফিল হোসেন টানা তৃতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইসরফিল হোসেন ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে ২০১৪ সালে ৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন যুবদলের সাবেক সভাপতি মো.আতাউর রহমান আতাকে পরাজিত করে প্রথম বারের মতো মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
এরপর ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২য় বারের মতো মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমি নির্বাচন করব। কারণ উপজেলা নির্বাচনে দল বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সিদ্বান্ত নিয়েছে,আমি সেই ক্যাটাগরিতে পড়ি না। সুতরাং আমার ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্বান্তের প্রভাব পরবে না এবং নির্বাচনে কোনো বাধার হবে না।
তিনি বলেন, বরং আমি নির্বাচন না করলে আমাদের তৃণমূলে বিভেদ ও বিশৃঙাখলা বাড়বে। তাছাড়া আমি নির্বাচন না করলে, কলাগাছ দাঁড়ালেও জিতবে। দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি এবং প্রায় ৪০-৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর আমার আত্মীয়স্বজন আমার অনেক (জাহিদ মালেক) মহদয় রাজনীতি আসছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দীপক কুমার ঘোষ বলেন, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন, তাদের প্রত্যেককে দলীয় সিদ্বান্ত মেনে নেয়া উচিত। আর যদি কেউ দলীয় সিদ্বান্ত অমান্য করে, তাহলে দলীয় সিদ্বান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
নাম প্রকাশে একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী জানান, ইসরাফিল হোসেন যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আপন ফুফাতো ভাই এটা মানিকগঞ্জের প্রত্যেক নেতা-কর্মীরজানা আছে। দলীয় সিদ্বান্তের আগে দিনও সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করেছিলেন জাহিদ মালেক। ইসরাফিল হোসেনের জন্য অনেক প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতেও বলেছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তারা জানান, নির্বাচনে যতই দলীয় সিদ্বান্ত বা নির্দেশনা থাকুক না কেন, গোপনে তো এমপি (জাহিদ মালেক) ইসরাফিলের জন্য কাজ করবেই। কারণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাহিদ মালেকের প্রার্থী হচ্ছে ইসরাফিল হোসেন।
তবে এ বিষয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
নির্বাচন কমিশনার মো.আলমগীর জানান, সংশ্লিষ্ট উপজেলার ভোটাররা, নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কোনো বাধা নেই এবং এই নির্বাচনে দলীয় কোনো পরিচয়ের প্রয়োজনও নেই। তবে নির্বাচনীয় আইনে বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি আছে, ক্রিমিনাল মামলা ২-৩বছর সাজা খেটেছেন। অথবা যারা নাগরিত্ব হারান, তাহলে তারা নির্বাচন করতে পারবেন না।
বিএনপি রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দলটি ব্যর্থ রাজনীতির ধারায় হাঁটায় হোঁচট আর ঝাঁকুনির প্রকোপে পর্যুদস্ত।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম জনগণের কাছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকুনি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অথচ বিএনপি নিজেই রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। ব্যর্থ রাজনীতির ধারায় হাঁটায় হোঁচট আর ঝাঁকুনির প্রকোপে পর্যুদস্ত বিএনপি।
‘এই ঝাঁকুনি হলো বার বার পরাজয়ের ঝাঁকুনি। হতাশার গভীরে নিমজ্জিত হয়ে বিএনপির নেতাদের বোধশক্তি লোপ পেয়েছে। দিন দিন তারা দেশ, রাষ্ট্র ও জনগণকে শত্রুতে পরিণত করে চলেছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিএনপি ও তার দোসরদের যৌথ উদ্যোগে প্রযোজিত ও পরিচালিত সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এবং দেশের জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে উসকানি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণ দ্বারা বর্জিত বিএনপি কখনোই ইতিবাচক কিছু অর্জন করতে পারবে না। দেশের স্বার্থ আর জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
‘আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন। তাই যে অপশক্তি দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিপক্ষ বা শত্রু হিসেবে গণ্য হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চায়, তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যা যা করা দরকার তাই করা হবে।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করুক তা আমরা চাই না। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চাই, কিন্তু আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। আমাদের এটি সর্বদা মনে রাখতে হবে।’
রোববার সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর সেনানিবাসে আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন শেষে দরবারে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর ইউএনবির
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তি চাই। আমাদের দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম। আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছি। যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে যুদ্ধও ডিজিটাল মাধ্যমে করা হচ্ছে। এজন্য দেশে আধুনিক, জ্ঞানভিত্তিক উচ্চ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা দরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আরও উন্নত, আরও দক্ষ এবং আরও প্রশিক্ষিত হবে এবং আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেহেতু প্রয়োজনে সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে, তাই এখন তারা জাতির কাছে আস্থার প্রতীক।
তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা, অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন চৌকস হতে হবে।’
সেনাবাহিনীর সদস্যদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও আনুগত্য বজায় রেখে কর্তব্যপরায়ণতা, পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে দেশের গৌরব বজায় রাখতে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিমান, হেলিকপ্টার, ইউএভি, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, এপিসি, ট্যাংক ধ্বংসের ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র সংযোজন করা হয়েছে।
দেশের কল্যাণে সেনাবাহিনীর সার্বিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মিশনগুলোতে অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক হালকা সাঁজোয়া যান এবং মাইন প্রতিরোধী অ্যামবুশ সুরক্ষিত যানবাহন কেনা হয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তাকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে মুজিব ব্যাটারির ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনার পর লুৎফুল হাবীব রুবেল নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রোববার সকালে নাটোরের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
রুবেল ডাক, টেলিযোগাযোগর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
ভিডিওতে নিজেকে ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে লুৎফুল হাবীব রুবেল বলেন, ‘আমি ২০০২ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০০৫ সালে সিংড়া গোল ই আফরোজ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ৩ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করি। ইউনিয়ন পরিষদেও পরপর তিন বার নির্বাচিত হয়েছি আমি।
‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৮ এপ্রিল মনোনয়নপত্র জমা দেই। তারপর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার সাথে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন মহল সক্রিয় রয়েছে।’
রুবেল আরও বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের আত্মীয়-স্বজন নির্বাচন করতে পারবে না। তারই আলোকে এই ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। অফিসিয়াল যে প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করব।’
ভিডিও বার্তার বিষয়ে কথা বলতে লুৎফুল হাবীব রুবেলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এজন্য নিউজবাংলার পক্ষ থেকে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র মো. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘ভিডিওটি আমাকেও পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া রুবেলের পক্ষের লোকজন ফোন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য