সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ২৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬০টি মামলা হয়েছে। আর এই মামলাগুলোয় আসামি করা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪৯ জনকে।
সবশেষ রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনায় ৪৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা সোমবার দুপুরে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
কুমিল্লা
কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগের জেরে সহিংসতার ঘটনায় ৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৩ কাউন্সিলরসহ ১ হাজার ৫৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এসব মামলায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪ জনকে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের ডিআইও-ওয়ান মনির আহমেদ এ তথ্য নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পূজামণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি, সদর দক্ষিণ ও দাউদকান্দি থানায় ৮টি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোতোয়ালিতে ৪০ এবং সদর দক্ষিণে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৮৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৫ হাজার আসামি করা হয়েছে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলাগুলোতে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯০ জনকে। ১০টি মামলার বাদী পুলিশ।
বাকি ছয় মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত মণ্ডপ, পূজা কমিটির সদস্য, একটি পূজা ঘরের মালিক ও ইসকন মন্দিরের এক অধ্যক্ষ।
বরিশাল
বরিশালের গৌরনদীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি পোস্টে আপত্তিকর কমেন্ট করার অভিযোগে তিনটি মন্দির ও কয়েকটি বসতঘর ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়।
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাতে বাড়িতে হামলার ঘটনায় সুভাষ বৈদ্য বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬০ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন।
পরে রোববার রাতে মামলার ৪ নম্বর আসামি সুজন ঢালীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।
বাগেরহাট
কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাত ১০টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলায় মিছিল করে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে একটি মহল। এ সময় চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট আদালতের মাধমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পাবনা
পাবনায় কৈটোলা পূজামণ্ডপে দুর্বৃত্তদের হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টার অভিযোগে অজ্ঞাত ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের মনাকষা বৃন্দাপাড়া মণ্ডপে হামলার ঘটনায় মামলা করে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ।
মণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক সুবির চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলা করেন।
শিবগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ হোসেন জানান, মণ্ডপে হামলার মামলায় এজাহারে নাম থাকা তিনজনসহ ১০ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিলেট
কুমিল্লার ঘটনায় বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর করা হয়। এ তিন দিনে বিভাগের অন্তত ১৭টি মণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলা করা হয় পুলিশের ওপরও। বিপুলসংখ্যক লোককে আসামি করা হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১ জনকে।
সিলেটের জকিঞ্জের কালিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন। এ ঘটনায় ৪৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম জানান, মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সিলেট নগরের আখালিয়ার হালদারপাড়ায় ভাটি বাংলা অগ্রদূত যুব সঙ্ঘের মণ্ডপে শুক্রবার হামলার ঘটনায় শনিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান জানান, এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত এ মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর চালায় স্থানীয় পাঞ্জারাই জিকে ওয়াই দাখিল মাদ্রাসার ছাত্ররা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নবীগঞ্জ থানার ওসিসহ ২০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানার এসআই অমিতাভ বাদী হয়ে ১২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নে বুধবার রাতে ৩টি মন্দিরে হামলার ঘটনায় ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ২২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই রাতেই উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মঈডাইল ও কামারছড়ায় পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান।
তিনি বলেন, একটিতে সাতজন এবং অন্যটিতে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। দুই মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে দুইজন। আসামিদের বেশির ভাগই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের উলিপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে ৫টি মামলা হয়েছে।
রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহিদুল ইসলাম জানান, এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
গাজীপুর
গাজীপুরে তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কাশিমপুর থানায় তিনটি মামলায় ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবে খোদা জানান, এসব মামলায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার বাকি দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাশুনিয়া ইউনিয়নে ধানিয়াপাড়া এলাকায় মহাশ্মশান কালীমন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার দুপুরে একটি মামলা হয়েছে। তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
সিরাজদিখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজগর হোসেন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জে কালীমন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় ৯ জনের নামসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে করিমগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুল আলম সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে জানান, মন্দির পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্র চন্দ্র বর্মন শুক্রবার রাতে মামলা করেন। এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনী
ফেনীতে মন্দির ভাঙচুর ও শহরের ট্রাংক রোডে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।
পুলিশ সদস্যকে আহত, বিস্ফোরক ও ভাঙচুরের অভিযোগে ফেনী মডেল থানায় করা মামলা দুটিতে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন ফেনী মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. মনির হোসেন।
তিনি জানান, এক মামলায় অজ্ঞাত ২০০ থেকে ২৫০ জন এবং আরেক মামলায় অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
তবে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে এক ছাত্রকে আটক করেছে র্যাব। তাকেই এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন র্যাবের ফেনী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি অধিনায়ক জোনায়েদ জাহেদী।
মাদারীপুর
মাদারীপুরের কালকিনিতে ধর্মীয় সহিংসতার জেরে তৌহিদি জনতার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে কালকিনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাঈদ বাদী হয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসতিয়াক আসফাক রাসেল জানান, পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চার হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রংপুর
রংপুরের পীরগঞ্জে রোববার রাতে এক হিন্দুপাড়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনায় সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৪৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পীরগঞ্জে হামলায় ২০টি বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
দারিদ্র্য বিমোচনে গত পাঁচ দশকে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গত দু-তিন বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে। দেশের উন্নয়নের সামগ্রিক চিত্র ইতিবাচক হলেও কিছু উপজেলা এখনো আর্থসামাজিক সংকটে আছে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য গভীর; নদীভাঙন; চরাঞ্চলের অনিশ্চয়তা; কৃষি নির্ভরতার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি এই অঞ্চলের মানুষকে অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দেয়।
সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, এনজিওগুলোর উদ্যোগসহ নানা প্রচেষ্টা চলমান থাকলেও তা এখনো যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হয়। দারিদ্র্যের হার বেশি থাকায় ওই সব উপজেলায় লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসংস্থান, যোগাযোগে উন্নয়ন, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই প্রতিবেদনে দেখানো হলো দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ১০টি উপজেলা কোনগুলো। শীর্ষ ১০টি উপজেলার ৫টিই মাদারীপুরের উপজেলা। অবশ্য জেলা পর্যায়ে মাদারীপুরের দারিদ্র্য হার সবচেয়ে বেশি।
গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ দারিদ্র্য মানচিত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
১. ডাসার: এই উপজেলা মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্যের হার ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এই হার সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ। ডাসার উপজেলায় প্রতি তিনজনে দুজন গরিব। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনুসারে, বালিগ্রাম, কাজীবাকাই, গোপালপুর, ডাসার ও নবগ্রাম—এই পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে ডাসার উপজেলা গঠিত।
২: হালুয়াঘাট: ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হারের উপজেলা। এখানে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় আর্থসামাজিক পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক। এই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই গোবরাকূড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দরের ওপর নির্ভরশীল।
৩. কালকিনি: এই উপজেলা মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এই হার সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত কৃষিনির্ভর। শিল্পকারখানা নেই বললেই চলে।
৪. রাজৈর: এই উপজেলাও মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলায় দারিদ্র্য হার ৫৫৬ শতাংশ। টেকেরহাট এই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার। পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ উপজেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ উপজেলায় অনেক খাল, বিল, পুকুর ছাড়াও ছোট ছোট নদী-নালা রয়েছে। এই উপজেলাও কৃষিপ্রধান।
৫. শিবচর: সবচেয়ে দরিদ্র শীর্ষ ১০টি উপজেলায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা আছে। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ। পদ্মা নদীর তীরবর্তী এই উপজেলা অবস্থিত। চরাঞ্চলও আছে। পদ্মা সেতুর চালু আগে পর্যন্ত যোগাযোগের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে ছিল শিবচর উপজেলা। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর যোগাযোগের দিক বেশ এগিয়ে গেছে, যা জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখছে।
৬. নলছিটি: ঝালকাঠি জেলার অবস্থিত এই নলছিটি উপজেলা। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য হার এই উপজেলায়। নদীঘেরা এই উপজেলায় কৃষিনির্ভর অর্থনীতি বিরাজমান। শীতলপাটি, পান, মৃৎশিল্প এই উপজেলার অন্যতম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
৭. গৌরীপুর: এই উপজেলা ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। এই উপজেলার দারিদ্র্যের হার ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। ময়মনসিংহ জেলা সদরের পূর্ব দিকে এই উপজেলা অবস্থিত। মইলাকান্দা, গৌরীপুর, অচিন্ত্যপুর, মাওহা, সহনাটি, বোকাইনগর, রামগোপালপুর, ডৌহাখলা, ভাংনামারী, সিধলা—এই ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটি। কৃষি ও মৎস্য খাতই এই উপজেলার মানুষের প্রধান জীবিকা।
৮. মাদারীপুর সদর: মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলায় অর্ধেক মানুষ দরিদ্র। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৫০ শতাংশ। সর্বোচ্চ দারিদ্র্য এমন ১০টি উপজেলার মধ্যে মাদারীপুর সদর ছাড়া আর কোনো জেলার সদর উপজেলা নেই। মাদারীপুর সদর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য শিল্পকারখানা নেই। এই উপজেলা মূলত কৃষিনির্ভর কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভরশীল। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে।
৯. বেলাব: এটি ঢাকার পাশে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত। বেলাব উপজেলার দারিদ্র্য হার সাড়ে ৪৯ শতাংশ। এই উপজেলার অধিবাসীরা কৃষিকাজের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখানকার সবজি, কাঁঠাল, কলা, লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হয়। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়।
১০. বোদা: একসময় দারিদ্র্য বলতেই উত্তরবঙ্গের জেলা-উপজেলাকে বোঝাতো। কিন্তু সময় পাল্টে গেছে। দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলার মধ্যে মাত্র একটি উপজেলা রংপুর বিভাগের তথা উত্তরবঙ্গের। এটি হলো সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা। এই উপজেলার দারিদ্র্য হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। এই উপজেলা কৃষিপ্রধান। চাষ হয় ধান, পাট, গম, আলু, বাদাম, আখ, ভুট্টা ইত্যাদি।
আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশনের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: পিআইডি
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার দপ্তরে কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশন এর প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি একথা জানান।
দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ন্যান্সি কানিয়াগো। আরও উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথ (ইএসএস) এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাডোনা লিঞ্চ। এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনমুখী এবং এজন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য এতে দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যদের জন্য নির্বাচনী মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রের সঙ্গে সুষ্ঠু ও সময়োপযোগী যোগাযোগের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং প্রতিটি জেলায় ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা (সম্ভব হলে) এবং কর্তব্যরত পুলিশের জন্য বডি ওর্ণ ক্যামেরা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে গণমাধ্যম অবাধে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে অনুমতি দেওয়া হবে। তাছাড়া নির্বাচনী এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মোবাইল টিম এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা হবে।
কমনওয়েলথ এর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশেষ সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কমনওয়েলথ প্রতিনিধি ন্যান্সি কানিয়াগো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরপরই কমনওয়েলথ এর সদস্যপদ লাভ করে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথ এর নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ রয়েছে। বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানালে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচন পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ এর কাছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংক্রান্ত সহযোগিতার চেয়ে আর্থিক সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। কমনওয়েলথ চাইলে আমাদেরকে সিসিটিভি, বডি ওর্ণ ক্যামেরা ও নির্বাচন সংক্রান্ত সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। কমনওয়েলথ প্রতিনিধি এ সময় জানান, তারা পুলিশ সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করতে পারে।
ন্যান্সি কানিয়াগো নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নতুন নিয়োগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন করে ১০ হাজার ২৬৪ জন পুলিশ, ২ হাজার ১৪৫ জন আনসার ও ভিডিপি, ৫ হাজার ৫১৩ জন বিজিবি, ৬৩৪ জন কোস্টগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কমনওয়েলথ প্রতিনিধি জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারে জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এ বিষয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। তবে জুলাই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে জনগণ অবাধে, নির্ভয়ে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র: বাসস
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। ফাইল ছবি
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “সংসদ নির্বাচন পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।”
আজ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ‘হল অব প্রাইড’-এ অনুষ্ঠিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি প্রধান মো. গোলাম রসুল, অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, সকল পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিরা। এছাড়া সকল জেলা পুলিশ সুপার সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতীতে পুলিশের বিরুদ্ধে জনমনে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার একটি বড় সুযোগ আগামী নির্বাচন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।”
সভায় অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আইজিপি পুলিশের লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দেন। তিনি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার সম্পর্কে প্রচারণা বাড়ানোর নির্দেশনা দেন।
আইজিপি চলমান নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালনার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন। তিনি জেলা পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে বলেন, “কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যথাসময়ে প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি গুম কমিশনে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্বসহ তদন্ত ও নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন এবং মামলা তদন্তের গুণগত মান বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
সভায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা এবং অনলাইনে সংযুক্ত জেলা পুলিশ সুপারগণ প্রশাসনিক ও অপারেশনাল নানা বিষয়ে আইজিপির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সূত্র: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: বাসস
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।
আজ রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৫তম বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হলে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সহজ হবে । আর নির্বাচনের সময় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে ।
তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আগেও ছিল, এখনও আছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি ও সার্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়া অনেক ঘটনা সত্য নয়, তবে গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক থাকে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনেক অপরাধে সিমকার্ড ব্যবহার হয় অন্যের নামে। নির্বাচনের আগেই সিমকার্ডের সংখ্যা কমানো হবে। এক ব্যক্তির নামে ১০টা থেকে ৫টা/৭টা, পরে ২টায় নিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অভিযান পরিচালনা, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও নির্দেশনা দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।
নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দল কিছু সমস্যার সমাধান করলে এবং জনগণ সচেতন থাকলে নির্বাচন সুন্দর হবে। রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান এলাকায় গণ্ডগোল বা অপরাধ প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'পদায়নের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা নেই।’
নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র: বাসস
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: জোরপূর্বক গুম মোকাবিলায় বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মশালাটি গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বিচারকদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিচার লিখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাদের শিল্পকর্মই তাদের বিচার। তাদের এই প্রস্তাবটি মনে রাখা উচিত।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান জানান, কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রেখেছেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস। এই পর্বে গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় গুম প্রতিরোধে একটি স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠন, গুম প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের আওতায় স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুম সংক্রান্ত মামলার জটিলতা নিরসনে মনিটরিং সেল গঠন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ আয়োজন, ভিক্টিমদের সাইকোলজিক্যাল ও লিগ্যাল সহযোগিতা নিশ্চিতকরণ, ভিকটিমদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, অনলাইন জিডি সহজীকরণ, চিহ্নিত মামলাগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিষ্পন্ন করা, বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে ভিক্টিমদের সহজে পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ম্যাজিস্ট্রেটদের মিথ্যা মামলা নিরসন সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান এবং বিচার বিভাগ ও কমিশনের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে আসে।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কর্মরত বিচারকসহ প্রায় ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মন্তব্য