নিয়মিত কোনো চিকিৎসক নেই। এ কারণে হাসপাতালেও আসতে চান না কোনো রোগী। কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দিনের যেকোনো একসময় অথবা সপ্তাহে একবার এসে স্বাক্ষর করেন হাজিরা খাতায়। তাদের অনুপস্থিতিতে আউটডোরে চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করেন ক্লিনার।
চিকিৎসকের অভাবে এখন জনমানবহীন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলের হাসপাতালটি। অথচ একসময় এটি ছিল রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রেলের যাত্রীসহ জেলার চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা।
৩০ শয্যার হাসপাতালটিতে ৯টি নারী ও ১৮টি পুরুষ শয্যার পাশাপাশি পাঁচটি কেবিনও রয়েছে। সাত দিনের মধ্যে হাসপাতালের আউটডোর খোলা থাকে মাত্র পাঁচ দিন। চিকিৎসক না থাকায় খোলা রেখেও কোনো উপকার হচ্ছে না রোগীদের।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, হাসপাতালে একজন বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (ডিএমও), একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা (এডিএমও) ও দুজন চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা। এদের চারজনেরই কেউই নেই।
তারা জানিয়েছেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে মেডিক্যাল হাসপাতালের একজন ডিএমও অতিরিক্ত দায়িত্বে সপ্তাহে এক দিন আসার কথা থাকলেও নিয়মিত আসেন না তিনি। এ কারণে আউটডোর বিভাগে অফিসের একজন ক্লিনার ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়েই চলছে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিতে নব্বই দশকের পরও প্রচুর রোগী আসতেন। এখন হাসপাতালের লোকজন ও রোগী না আসায় পুরো এলাকা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
তারা জানান, বর্তমানে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ জন রোগী ক্লিনার আবু জাফরের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন। এরা রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের লোকজন। বাইরে থেকে কেউ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন না।
মঙ্গলবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ইনডোরের চিকিৎসাসেবার অবস্থা আরও শোচনীয়। ৩০ শয্যার হাসপাতালে কোনো রোগীই থাকেন না। কখনও কখনও দু-একজন রোগী ভর্তি হন একেবারে নিরুপায় হয়ে বা দারিদ্র্যের কারণে। তাদের জন্য হাসপাতালে খাবারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ের কর্মচারীর স্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালের প্রাণই হলো ডাক্তার। এখানে কোনো ডাক্তার আসেন না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বাইরে চিকিৎসা নিই। আসলে আগে এই হাসপাতালেরই চিকিৎসা দরকার।’
চিকিৎসাসেবায় বিরক্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ধ্যাত, হাসপাতালেরই জন্ডিস হয়েছে। ওষুধ থাকলেও রোগীদের দেয় না। ছয়-সাত ভ্যান করে ওষুধ আসলেও পরের দিনই শেষ।’
হাসপাতালের ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট আবু জাফর বলেন, ‘ভবন চুইয়ে পানি পড়ায় স্টাফরা বসতে পারেন না। অনেক দামি জিনিস আছে, যেগুলো পানি পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার না থাকলে সবকিছুতে সমস্যা। ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সাধারণত ভর্তি হতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘আমিও একজন ফার্মাসিস্ট, আমরাই রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিই।’
রেলওয়ে হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এখানে সপ্তাহে এক দিন ডাক্তার আসেন। অন্যদিনে আমি নিজেই যতটুকু জানি, ওই অনুযায়ী এখানে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি।’
হাসপাতালের প্রধান সহকারী সারাফত হোসেন বলেন, ‘আমার এখানে কর্মরত আছেন ৩৮ জন। পদায়িত ডাক্তার সপ্তাহে এক দিন আসেন। সপ্তাহের যত কাজ থাকে সব এক দিনে মেকআপ করেন। এর মধ্যে যদি রোগী আসে তখন রোগীও দেখেন।’
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত দায়িত্বে একজন ডিএমও থাকলেও তিনি সপ্তাহে মাত্র এক দিন আসেন। অফিসের কাজ ও যদি কোনো রোগী থাকে, তাহলে তাদের চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। তিনি একই সঙ্গে ডিভিশনের তিনটি হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছেন।’
হাসপাতালের নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি কোনো কাজে আসছে না বলেও জানান ফার্মাসিস্ট ফয়সাল আহমেদ।
লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালের ডিভিশনাল রেলওয়ে চিকিৎসা কর্মকর্তা (ডিএমও) ডা. মো. আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বর্তমানে একই সঙ্গে তিনটি হাসপাতালের দায়িত্বে আছি। হাসপাতালটি রেলওয়ের অধীনে রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিলে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেয়া উচিত।’
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডাক্তাররা গেজেটেড অফিসার। তারা পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পান। রেলের ডাক্তাররা নন-ক্যাডারে নিয়োগ পান। এ কারণে তারা এখানে থাকতে চান না। পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগের পর তারা চলে যান। স্বাভাবিকভাবেই তখন এখানকার পদগুলো শূন্য হয়।’
রোগীদের খাবারের ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে রোগীদের খাবারের ব্যবস্থাও আছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ছাড়া ডাক্তার না থাকার কারণে রোগীরাও তেমন একটা আসেন না। এ কারণে রোগীদের খাবারও দেয়া হয় না।’
হাসপাতালে ৫৩টি পদের বিপরীতে বর্তমানে মাত্র ২৪ জন কর্মরত রয়েছেন বলেও জানান ডিআরএম শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ।
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য