কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের দামপাড়া গ্রামের ৬৭ বছর বয়সী দুলাল মিয়া। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি ও তার বড় ভাই মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছেন।
তবে হারিয়েছেন তাদের বাবাসহ আরও ৩৬৫ জনকে। বড়ইতলা গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেদিন ৩৬৫ জনকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে, গুলি করে হত্যা করে। পুড়িয়ে দেয় বেশ কয়েকটি গ্রাম।
দুলাল মিয়া সেদিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন আইডি কার্ড দেয়ার কথা বলে সবাইকে জড়ো করে। লোকজন জড়ো হওয়ার পর প্রথমে ৮ থেকে ১০ জনকে রেললাইনের পাশে দাঁড় করিয়ে তারা বেত দিয়ে পেটায়। এভাবে মৃত্যু হতে দেরি হওয়ায় রড দিয়ে মাথায় বাড়ি মেরে পাশের জমিতে ফেলা শুরু করে।
‘আমার মাথায় তেমন জোরে আঘাত লাগেনি। আমি পড়ার পর আমার ওপর একের পর এক লাশ পড়তে থাকে। তারা তখন ব্রাশফায়ার করে সবাইকে মারা শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনী চলে যাওয়ার পর বড় ভাইকে জীবিত পেলেও বাবা হাফেজ আব্দুল তৌহিদকে মৃত অবস্থায় পাই।’
চিকনীর গ্রামের ৬০ বছর বয়সী ইসহাক ভূঁইয়া সেদিন হারিয়েছিলেন বাবা ও চাচাকে।
ইসহাক জানান, প্রতিবছর তারা বড়ইতলা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। তবে এ ঘটনার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পাননি। শহীদের মর্যাদা দেয়া তো দূরের বিষয়, রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ-সুবিধাও তাদের দেয়া হয়নি।
বড়ইতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেদিনের ঘটনার কথা মনে করে আজও শিউরে উঠি, চোখে পানি এসে যায়। বড়ইতলা গণহত্যায় পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিল স্থানীয় কিছু রাজাকার। তাদের অনেকেই এখনও জীবিত আছে। তবে তাদের কোনো বিচার হয়নি।’
কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি এই স্মৃতিসৌধে একটি পাঠাগার ও একটি ছোট জাদুঘর হওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে এতদিনেও এর কোনো বাস্তবায়ন দেখিনি।’
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, প্রতিবছর এই দিনটি বড়ইতলা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিনটি আরও বড় পরিসরে পালনের উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি স্মৃতিসৌধটি পুনঃসংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বিচারকদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। একইসঙ্গে শোকজ নোটিশ পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।
শনিবার বিকেলে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। উভয় প্রার্থী বা তাদের প্রতিনিধিকে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া শামীম ওসমানের অনুসারী এক যুবলীগ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে তিনি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মিছিল করে তার অনুসারী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) জানে আলম বিপ্লবের নেতৃত্বে ফতুল্লার তল্লা এলাকায় শামীম ওসমানের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে মিছিল করেন অনুসারী নেতা-কর্মীরা। প্রতীক বরাদ্দের আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচনি আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অন্যদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় কয়েকশ’ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মিছিল নিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন লিয়াকত হোসেন খোকা। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয়।
শনিবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কাজী ইয়াসিন হাবীব ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি সিনিয়র সহকারী জজ মোহসিনা ইসলাম যথাক্রমে শামীম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন আচরণবিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ৬ (ঘ) এবং ১২ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে রোববার প্রার্থী অথবা তার প্রতিনিধিকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হলো।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের অনুসারী যুবলীগের নেতা জানে আলম বিপ্লবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম। পরে ২ ডিসেম্বর জানে আলম বিপ্লব সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন কর্মকর্তা ইস্তাফিজুর রহমান আকন্দ জানান, বিচারকদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘন পাচ্ছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের করতে কমিশন সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় দুটি এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপারমার্কেটের সামনের ব্যস্ত সড়কে যানজটের মধ্যে পাঁচ সেকেন্ডের ব্যবধানে ককটেল দুটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিস্ফোরণে যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলের দুই আরোহী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী বলে জানা গেছে। তবে তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
আহত একজনের মাথা থেকে রক্তপাত হতে দেখা যায়। অন্যজন পেটে আঘাত পেয়েছেন। বিস্ফোরণের পর ব্যস্ত রাস্তাটি মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায়। রাস্তা ও ফুটপাতে থাকা লোকজন আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সরোয়ার আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ককটেল বিস্ফোরণের কথা শুনেছি। পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে।’
অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যার পর নারায়ণঞ্জ শহরের খানপুর থেকে একটি মিছিল বের করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের ডন চেম্বার এলাকায় এসে তারা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পরে চাষাঢ়ার দিকে এগিয়ে মিশনপাড়া মোড়ে ফের ককটেল বিস্ফোরণ ও সড়কে অগ্নিসংযোগ করে তারা পালিয়ে যান।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ডিবি পুলিশের একটি টিম। এরপর সদর থানা পুলিশের দুটি টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি শাহাদাৎ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা অবরোধ কর্মসূচির নামে ককটেল বিস্ফোরণ ও সড়কে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই তারা পালিয়ে যায়। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।’
রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নবম দফায় দেয়া দলটির অবরোধ কর্মসূচির আগের দিন সন্ধ্যায় এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশি বাধায় পণ্ড করে দিলে তারা এ সরকারের পদত্যাগের একদফাসহ মহাসমাবেশে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। সমমনা জোটগুলোও এই কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করেছে। এরপর থেকে পর্যায়ের ক্রমে তারা প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার এবং শুক্র ও শনিবার ছুটির দুইদিন বিরতি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি করে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত তারা আট দফায় অবরোধের কর্মসূচি পালন করেছে। কাল থেকে নবম দফায় দলটির অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
আরও পড়ুন:আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে আসনটির নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং মুন্সীগঞ্জ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক ফাহমিদা খাতুনের আদালতে তিনি উপস্থিত হন। পরে তিনি সেখানে লিখিত ব্যাখ্যা দেন।
এর আগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে আসনটির নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং মুন্সীগঞ্জ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক ফাহমিদা খাতুন লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর এ নির্দেশ দেন।
কারণ দর্শানোর বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন নম্বর ১৭৩ মুন্সীগঞ্জ-৩ এর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। তিনি গত ২৭ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ শহরে গোলচত্বর এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করে শোভাযাত্রা করেন। ওই সময় শত শত নেতা-কর্মীরা সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হয়। এতে মুন্সীগঞ্জ শহরের থানা সড়ক, হাসপাতাল সড়ক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ওই এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টা স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ওই বিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান
মোহাম্মদ নাজমুল হাসান নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কার্যালয়ে মৃণাল কান্তি দাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও এ বিষয়ে গত ২৮ নভেম্বর সংবাদপত্র ও অনলাইন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে এবং পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যসমূহ বিশ্লেষণে পরিলক্ষিত হয়েছে, মৃণাল কান্তি দাস উপরোক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৬ (ঘ) ও ৮(ক) এর বিধান এবং তৎসহ বিধি ১২ এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কেন বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরণ করা হবে না সেটি আগামী ২ ডিসেম্বর শনিবার বেলা ১১টার মধ্যে কমিটির অস্থায়ী কার্যালয় মুন্সীগঞ্জ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, ২য় আদালতে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
আরও পড়ুন:বাণিজ্যিকভাবে চালুর পরদিনই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটের রেললাইনের বিটের নাট-বল্টু খুলে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর ঝুঁকির শঙ্কায় আধ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’।
শনিবার সকালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের কাহাতিয়া পাড়ায় রেললাইনে এই ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপর কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানীকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে লাইনের সংস্কারকাজ শুরু করলে কক্সবাজার এক্সপ্রেস আধ ঘণ্টা দেরিতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
গোলাম রব্বানী জানান, শনিবার সকালে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের রামু উপজেলার কাহাতিয়া পাড়ায় রেললাইনের বিটের নাট-বল্টু খুলে ফেলার খবর পান তিনি। পরে বিষয়টি রেল অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের সকল স্তরে অবহিত করেন। এরপর রেল প্রকৌশলসহ নির্মাণকাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে রেললাইনের বিটের খুলে ফেলা নাট-বল্টু পুনঃসংযোজন ও মেরামত কাজ শুরু করেন নির্মাণ শ্রমিকরা। তা শেষ করে ট্রেন চলাচল করার উপযোগী করতে বেলা সাড়ে ১২টা বেজে যায়।
তিনি বলেন, ‘রেললাইনের এ ত্রুটিপূর্ণ স্থান দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি থাকায় কক্সবাজার এক্সপ্রেস পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ছাড়া সম্ভব হয়নি। পরে রেললাইন চলাচল উপযোগী হওয়ার পর দুপুর ১টায় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়।’
তবে এটি নিছক চুরির ঘটনা, নাকি নাশকতার চেষ্টা- তা নিশ্চিত করতে পারেননি কক্সবাজার রেলের এ কর্মকর্তা।
এদিকে খবর পেয়ে শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রামু উপজেলা ইউএনও ফাহমিদা মোস্তফা ও ওসি আবু তাহের দেওয়ানসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান জানান, খবরটি শোনার পর প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলে রেললাইনের বিটের নাট-বল্টু খুলে ফেলা অবস্থায় দেখা গেছে।
ঘটনাটি নিছক চুরির ঘটনা, নাকি কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
আবু তাহের বলেন, ‘ঘটনাটি কারা, কী উদ্দেশ্যে ঘটিয়েছে এবং যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় চিকিৎসকের অবহেলায় সিজারিয়ান অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
মিয়াজী টি.এইচ. মেমোরিয়াল হাসপাতাল নামে বেসরকারি হাসপাতালটিতে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এতে রোগীর স্বজনরা ও স্থানীয়রা শনিবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়ে কর্মরত স্টাফদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে ঘটনার পর চিকিৎসক ও হাসপাতালটির ম্যানেজারকে পাওয়া যায়নি।
প্রাণ হারানো ২৬ বছর বয়সী নিপা আক্তার ভবেরচর এলাকার মো. শামীমের স্ত্রী।
নিপার স্বজনরা জানায়, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে তাকে ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মিয়াজী টি.এইচ. মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে ডা. রাজিয়া বেগমের তত্ত্বাবধানে প্রসূতি নিপার সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হয়।
অপারেশন শুরুর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে তাদের জানানো হয় মেয়ে বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চার অবস্থা ভালো। কিন্তু দীর্ঘ দুই ঘণ্টা পরও নিপাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করায় তাদের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পরে তাদের জানানো হয় বাচ্চার মায়ের অবস্থা খারাপ তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে।
এর পর নিপাকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের ভাষ্য, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অনেক আগেই নিপার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিয়া বেগমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোগীর আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল। আমি অপারেশন করার পরে বিষয়টি ধরতে পেরেছি। আমি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দিতে বলেছিলাম। এখানে আমার কোনো অবহেলা ছিল না।’
গজারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘নিহতের স্বজনরা থানায় এসেছেন। এ বিষয়ে গজারিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে।’
আরও পড়ুন:শেরপুরে একটি বাসায় আগুন লেগে পাঁচ পরিবারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি করছেন তারা।
পৌরসভার রাজাবাড়ি মহল্লায় প্রয়াত অ্যাডভোকেট ফরহাদের বাসায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ায় তারা চার ভাড়াটিয়াসহ বাড়ির মালিকের সবকিছু পুড়ে গেছে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পাঁচ পরিবারের দাবি, নগদ টাকা, অলংকারসহ অন্তত অর্ধ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
ভাড়াটিয়া আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা চারটি পরিবার এ বাসায় ভাড়া থাকি। আগুনে সব শেষ করে দিছে আমাদের। কিছুই বাইর করতে পারি নাই ঘর থেকে।’
আরেক ভাড়াটিয়া আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ছেলে প্রথমে আগুন দেখে চিৎকার দিছে। পরে আমি দৌড়ে এসে দেখি রেকের ওপর আগুন ধরছে। পরে এক মিনিটের মধ্যে আগুন সারা বাড়িতে ছড়িয়ে গেছে। আমরা কিছু করতে পারি নাই। ফায়ার সার্ভিস আইসাও আমাদের কিছুই বাঁচাবার পারে নাই।’
শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে, তবে তদন্ত করে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ জানা যাবে।’
শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, ‘এ অগ্নিকাণ্ড চারজন বাড়াটিয়াসহ বাড়ির মালিক সবাই খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের বাড়িতে একটি জিনিসও নেই। সব আগুনে পুড়ে শেষ।
‘আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আমি বিভিন্ন প্রশাসনসহ সবাইকে অনুরোধ করব এ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’
আরও পড়ুন:টানা তিনবার নির্বাচন করে একবারও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেননি মানিকগঞ্জের ঘিওরের ৬০ বছরের মো. আব্দুল আলী বেপারী। অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচনে লড়বেন তিনি।
হলফনামা থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জ-১ আসনের এ এমপি প্রার্থী ঘিওর উপজেলার বেড়াডাংগা এলাকার কিয়ামুদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক। কৃষিকাজের মাধ্যমে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং তার কাছে নগদ ২ লাখ টাকা ও এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।
আব্দুল আলী বেপারীর স্ত্রী গৃহিনী। সংসারজীবনে তাদের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে আর ছেলেরাও চাকরি করছেন। আব্দুল বেপারীর শিক্ষাগত সার্টিফিকেট না থাকলেও তিনি স্বশিক্ষিত।
আব্দুল আলী বেপারী জানান, ইউপি নির্বাচনে মনের মতো প্রার্থী না পেয়ে তিনি ২০১১, ২০১৬ ও ২০২১ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনের মতো প্রার্থী পাননি তিনি। ফলে মানিকগঞ্জ-১ আসনে নিজেই দাঁড়িয়ে গেছেন এমপি প্রার্থী হিসেবে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভোট দিলে পাস করব, না দিলে কিছু করার নাই; আমার ভোট তো আমি দিতে পারব! আসলে মনের মতো প্রার্থী না থাকায় আমি প্রার্থী হয়েছি। আমার ভোট আমাকে দিতে পারলেই আমার আত্মতৃপ্তি। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি, যাচাই ঠিকঠাক থাকলে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবই। কোটি কোটি টাকা দিলেও আমি সরে দাঁড়াবো না। কারণ নির্বাচন আমার কাছে ক্যান্সারের মতো হয়ে গেছে।’
নির্বাচনে আসার পিছনের কারণ তুলে ধরে আব্দুল আলী বেপারী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় রাস্তা না থাকায় তৎকালীন বিএনপির চীফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কাছে যাই। রাস্তার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তখন খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে তিনি আমাকে বলেন- পারলে আমার মতো হয়ে দেখিয়ে রাস্তা করে নিও। সেই রাগ আর ক্ষোভে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছি, এখন এমপি প্রার্থী হয়েছি।’
স্বতন্ত্র এ প্রার্থীর বড় ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় সময়ই মা ও আমরা পাঁচ ভাই-বোন বাবাকে না করেছিলাম। কিন্তু তিনি কথা শুনেন নাই। এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময়ও বুঝিয়েছি, তাতেও লাভ হয়নি। পরে মনোনয়নপত্রে আমি প্রস্তাবকারী ও আমাদের এলাকার লিটন ইসলাম সমর্থনকারী ছিলাম। মনোয়নপত্র জমা দেয়ার সময় পরিবারের কেউ সঙ্গে ছিল না। বাবার সঙ্গে শুধুমাত্র আমার ছোট ভাগিনা ছিল। বাবা কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছে। তাই বাবার কথার অবাধ্য হয় নাই।’
মন্তব্য