দুগ্ধদায়ী মাতা হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন আল-আমিন চৌকিদার নামে বরগুনার এক পুরুষ। বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ছোট পোটকাখালী এলাকার এই বাসিন্দার বিকাশ নম্বরে সরকারের চালু করা এ ভাতা ২০১৯ সাল থেকে প্রতি মাসে এসে জমা পড়ছে।
ওই তালিকায় আল-আমিনের স্ত্রী সুখি বেগমও ভাতা পাচ্ছেন। সুখির নামও রয়েছে তালিকায়।
আল-আমিন ও সুখি জানান, তাদের দুজনের নাম ওই তালিকায় তোলার জন্য তারা জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী নাজমুল হাসানকে ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। এর ফলে তালিকায় তাদের নাম উঠে গেছে।
নিম্ন আয়ের কর্মজীবী দুগ্ধদায়ী মায়েদের (ল্যাকটেটিং মাদার) জন্য এই সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম চালু করে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ন করে।
মায়ের স্বাস্থ্য এবং শিশুর পুষ্টিসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচির আওতায় শিশুর জন্ম থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাকে সর্বমোট ২৮ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। তাতে বলা হয়েছে, দুগ্ধদায়ী মায়েদের বয়সসীমা ২০ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে। শহরে ‘ল্যাকটেটিং মাদার’ ও গ্রামাঞ্চলে ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা’ দুটি আলাদা নামে এই কর্মসূচি চলে আসছে। শহরে ‘ল্যাকটেটিং মাদার’ কর্মসূচিতে নীতিমালার শর্ত পূরণ সাপেক্ষে শুধু পৌর শহরের বাসিন্দা নারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
তবে বরগুনায় এ কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগী তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির নামে ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও তার অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘুষ নিয়েও অনেককে ভাতা সুবিধার আওতায় আনতে পারেননি ওই কর্মকর্তারা। তবে ঘুষের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন একজন ভুক্তভোগী।
জেলা মহিলা অধিদপ্তর বরগুনা কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পৌরশহরে এ কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন। অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা অনুসরণ না করে ঘুষের বিনিময়ে ওই কর্মসূচিতে অনেক সুবিধাভোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এখানে ভাতা পাচ্ছেন এমন নারীদের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, শিশু নেই এমন একাধিক নারী, শিশু ও দুগ্ধদানকারী মায়ের বয়সের শর্ত পূরণ হয় না এমন একাধিক নারী এবং এমনকি একজন পুরুষও এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। এ ছাড়া পৌর শহরের বাসিন্দা নন, এমন শতাধিক নারীর এই তালিকায় স্থান হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এসব অনিয়মের মূল কারণ ঘুষ-বাণিজ্য। সুবিধাভোগীরাই জানিয়েছেন, বরগুনা মহিলা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল হাসান ও জেলা মহিলাবিষয়ক কমকর্তা মেহেরুন নাহার মুন্নি পরস্পরের যোগসাজশে ঘুষের বিনিময়ে তাদের এমন সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন।
আনিসা আক্তার নামের এক নারী ল্যাকটেটিং মাদার কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনিসা আক্তারের জাতীয় পরিচয়পত্রে স্বামীর নাম নেই, তবে বাবার নাম ওয়াহেদুল ইসলাম, তার ঠিকানা মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন সড়ক, আমতলী পৌরসভা। ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আনিসা আক্তার বরিশালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং তিনি বরিশালেই বসবাস করেন।
একইভাবে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের দক্ষিণ মনসাতলি এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণা সরকারের শিশু নেই; অথচ তিনি কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছেন।
বরগুনা পৌর শহরের কলেজ ব্রাঞ্চ সড়কের বিলকিচ বিনা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স এখন ৫৩ বছর। তার সন্তান এখন লেখাপড়া করছে দশম শ্রেণিতে। তিনিও ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের অধীনে সহায়তা পাচ্ছেন উৎকোচের বিনিময়ে।
নীতিমালা অনুযায়ী ২০ থেকে ৩৫ বছরের দুগ্ধদায়ী মায়েদের এ ভাতা পাওয়ার কথা। এলাকায় গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা যায়, বিনার বয়স ৫৫ বছর। অথচ তিনিও রয়েছেন ভাতা সুবিধার আওতায়। বিলকিস বেগম অকপটে স্বীকার করেন, তিনি ৬ হাজার টাকা দিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ৭ হাজার টাকা চাইছিল, আমি ৬ হাজার টাকা দিয়ে নাম উঠাইয়া টাকা পাইতেছি।’
একইভাবে নিয়মিত ভাতার আওতায় আছেন এমন অর্ধশতাধিক নারীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা। ওই নারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে প্রতিবেদকের। এদের অধিকাংশই পৌর শহরের বাইরের বাসিন্দা। এ ছাড়া অনেকের বয়স ও শিশুর বয়স নীতিমালার শর্ত পূরণ করে না।
যেভাবে ঘুষ নেয়া হয়েছে
সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের ভোটার মরিয়ম আক্তার বীথি। মাস্টার রোলে চাকরি করছেন পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে। ২০১৭ সালে বরগুনার মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল হাসানকে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ভাতা সুবিধার আওতায় আসেন তিনি। পরিচয়ের সুবাদে বীথিকে ঘুষের প্রস্তাব দেন নাজমুল হাসান।
২০১৯ সালের কর্মসূচিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য বীথির কাছে নারীদের তালিকা চান নাজমুল। জনপ্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে এ প্রকল্পের আওতায় যেকোনো এলাকার মায়েদের সহায়তা পাইয়ে দেবেন বলে জানান নাজমুল।
এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে মরিয়ম আক্তার বীথি পৌর শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৬৯ মায়ের নাম এবং এসব মায়ের কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা ঘুষ তুলে নাজমুলের হাতে দেন। ওই তালিকার ১৬৯ জনের মধ্যে ৪৬ জনকে ভাতা সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তারা বিকাশের মাধ্যমে নিয়মিত ভাতা তুলছেন। কিন্তু ১৬৯ জনের মধ্যে বাকি ১২৩ জনের নাম বছরের পর বছর ঘুরেও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি বীথি। তারা ফেরত পাননি ঘুষের টাকা।
এ নিয়ে বীথির সঙ্গে নাজমুলের বিবাদ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি সালিশ বৈঠকে গড়ায়। সদর উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন সালিশ করে নাজমুলকে নাম অন্তর্ভুক্তি অথবা টাকা ফেরতের শর্ত দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নাম বা টাকা ফেরত কোনোটাই দেননি অফিস সহকারী নাজমুল।
বঞ্চিতদের চাপে বিপাকে পড়েন বীথি। অবশেষে গত ২১ অক্টোবর বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগকারী মরিয়ম আক্তার বীথির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অফিস সহকারী নাজমুল হাসানের কথামতো আমি তালিকা ও ১২ লাখ টাকা তার হাতে দিই। কিন্তু তিনি বাকি নামও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি, আর টাকাও ফেরত দেননি। বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
বীথি বলেন, ‘আমি নিয়মকানুন জানতাম না, উনি (নাজমুল) আমায় বলেছেন, তুমি শুধু মহিলাদের আইডি কার্ড আর প্রতি নামে ৬ হাজার টাকা ও কাগজপত্র ঠিক করতে ১৫০০ টাকা এনে দেও, বাকিটা আমি দেখব। কিন্তু পরে আমি নীতিমালার বিষয়টি জানতে পারি। ওনারা সবার কাছ থেকেই ঘুষ নিয়েছেন আর ঘুষের বিনিময়েই নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।’
বীথি বলেন, সুবিধাভোগীদের যে বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দেয়া হয়, ওই নম্বর ও অ্যাকাউন্ট চেক করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।’
বীথির মতো আরও একজন পৌর শহরের আমতলারপাড় এলাকার শুক্কুর আলী। তিনি বরগুনা পৌরসভায় পিয়ন পদে চাকরি করেন। শুক্কুর আলী জানান, বরগুনা পৌরসভা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ১০৩ জন মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেরুন্নাহার মুন্নীর হাতে তিনি সরাসরি জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়েছেন। সেখান থেকে ৬৩ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বঞ্চিত বাকি ৪০টি নামের ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে এখন তাকে চিনতেই পারছেন না উপপরিচালক মেহেরুন্নাহার মুন্নী।
শুক্কুর আলী নিজের নম্বর থেকে প্রতিবেদকের সামনেই মেহেরুন্নাহার মুন্নীর নম্বরে কল করলে তাকে না চেনার ভান করেন মুন্নী। এর কিছুক্ষণ পরই মেহেরুন্নাহার মুন্নীর অফিস থেকে আরেকজন শুক্কুরকে ফোন দিয়ে অফিসে যেতে বলেন।
শুক্কুর আলী বিষয়টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল করিম বাবুর কাছে জানান।
জাহিদুল করিম বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। গত দুই-তিন মাস ধরেই শুক্কুর আলী জানাচ্ছেন, মেহেরুন মুন্নীকে তিনি টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি মেহেরুন মুন্নীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাধিকবার ফোনে কথা বলে অফিসে গিয়েও তার দেখা পাইনি।’
শুক্কুর আরো বলেন, সদরের বুড়িরচর ইউনিয়েনরও অনেকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন মেহেরুন মুন্নী।
শুক্কুরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুড়িরচর ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের একাধিক নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় ২২ নারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে অর্থ। তাদের অনেকে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নারী জানান, মুন্নী ও নাজমুলকে টাকা দিয়ে তারা নাম তালিকায় ওঠাতে চেয়েছেন। কিন্তু টাকা নিলেও ভাতা পাননি তারা। এখন তারা ঘুষের অর্থ ফেরত চান।
এ বিষয়ে বরগুনা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অফিস সহকারী নাজমুল হাসানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কথা হয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নাজমুল বলেন, ‘আমি ঘুষ নিয়েছি এর কোনো প্রমাণ নেই।’
এ সময় বীথির সঙ্গে ঘুষের টাকা নিয়ে সালিশ বৈঠকের ভিডিওচিত্র দেখানো হয় তাকে। ওই ভিডিও দেখে তিনি চুপ হয়ে যান এবং প্রতিবেদককে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত বরগুনা সদরের বিআরডিবির (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড) চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি সালিশ বৈঠক করেছিলাম। নাজমুল ভাই টাকা নিয়েছেন স্বীকার করে নাম তালিকাভুক্ত করে দেবেন অথবা টাকা ফেরত দেবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। ওই সালিশের একটি রোয়েদাদও হয়েছিল, যা আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।’
বরগুনা পৌর শহরে দীর্ঘদিন ধরে এ প্রকল্প চলে এলেও সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়রকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি কিছুই। বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, ‘এই কর্মসূচির সুবিধাভোগী বাছাই ও সহায়তার টাকা দেয়ার সব কাজই মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর করে থাকে। আমাদের তারা অবহিতও করে না। এমন অনিয়মের বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা জরুরি।’
তবে এমন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বরগুনা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মেহেরুন্নাহার মুন্নী দাবি করেন, নীতিমালা মেনেই সুবিধাভোগী বাছাই ও ভাতা দেয়া হচ্ছে। ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি ভুক্তভোগীদের দাবি নাকচ করে দেন। অফিস সহকারীর ঘুষ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার (নাজমুলের) বিরুদ্ধে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে এসে হেনস্তার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। একদিনের ব্যবধানে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা ও কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুটি ক্ষেত্রেই পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অশ্লীলতার অভিযোগ এনে সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে “রাজনগর রিসোর্ট এন্ড কফি হাউজে” তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি স্থান জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জ। সবসময়ই এই দুই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় থাকে। ঈদের মতো বড় ছুটিতে ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সীমান্তবর্তী এই দুই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে দেদারছে চোরাই পণ্য আসে। এছাড়া এসব এলাকার পাথুরে নদী ও ছড়া থেকে পাথর লুটপাটও নিত্তকার ঘটনা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর চোরাচালান ও পাথর লুট অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রশাসনও লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের ঠেকাতে পারছে না।
জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এ রকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, 'এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে থেকে আসে। এসে মদ খায়, আরও অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তাছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়'।
ভিডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এই এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনদিন আসবেন না’।
পর্যটকদের বের করে দেয়ার এই ভিডিও যুক্ত করে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে লিখেন, ‘একদিকে চলবে পর্যটক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অন্যদিকে পর্যটনে বাঁধা! দেশের ভেতরে সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা ও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মালিকানাধীন জায়গা ব্যতীত কোথাও জনসাধারণের প্রবেশে বাঁধা দেয়া মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। মানুষের চলাচলে বাঁধা প্রদান ও হুমকি প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু সিলেটে এই অপরাধ ইতিপূর্বেও ঘটেছে।
কিম লিখেন, 'বছর কয়েক পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এক ঈদে মায়াবন নামে পরিচিত যুগীরকান্দি জলারবনে পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল। এরপর থেকে ওই বনে কোন পর্যটক আর পা রাখেনি। স্থানীয় মাদ্রাসা ওই জলার বনের মাছ ভোগ করে বলে এখানে পর্যটক আসুক তা চায় না। অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে যুগীরকান্দি বন বা মায়াবন সবার দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। উতমাছড়ার পাথর লুটে ওই মাদ্রাসার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।'
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘উৎমাছড়ায় বেড়াতে যাওয়া জন্য নির্দিষ্ট কিংবা উপযুক্ত রাস্তা নেই। এ জন্য পর্যটকেরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘর মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। এতে তারা অসুবিধায় পড়েন। বৈঠকে এমন দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাদক সেবন ও অশ্লীলতা হয়, এমনটিও দাবি করা হয়েছে’।
উৎমাছড়ায় পর্যটকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এ অঞ্চলে এমন ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি। বিষয়টি ইউএনওকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দেখছেন। ইউএনও জানার চেষ্টা করছেন, বিষয়টি কী?’
এদিকে, সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিছু লোক। হামলাকারীরা চোরাকারবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার বিকেলে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন বলেন, স্থানীয় বখাটেরা পর্যটকদের ওপর হামলা করেছে। পরে সাংবাদিক ও ইউপি সদস্য মিলে ঘটনাস্থলেই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকের ভুল ধারণা হয়েছে।’
মন্তব্য