সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোয় দেশের মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট দুটিই উন্নত হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এটা একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। করোনায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ হয়েছে। এ জন্য দেশের অর্থনীতিতে সাশ্রয় দরকার। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট দুটিই উন্নত হবে। আমানতের একটি অংশ আসবে ব্যাংকে, আর একটি অংশ যাবে ক্যাপিটাল মার্কেটে। মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল চাঙা না হলে অর্থনীতিতে ভারসাম্য হয় না।’
ব্যাংক কমিশন গঠন করলেই ব্যাংকিং খাতের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে, এমনটা মনে করেন না শামস্-উল ইসলাম।
মহামারি করোনাভাইরাসের ছোবলে বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও গভীর সংকটে পড়ে গত বছরের শুরুর দিকে। দেড় বছরের বেশি সময়ের সেই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার ২৫টির মতো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।
এই প্রণোদনা ঋণের পুরোটাই বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো, যার বেশির ভাগ ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়ে গেছে। গত বছর প্রণোদনা ছাড়া অন্য ঋণ খুব একটা বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলো। তবে এখন মহামারির ধকল কমতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হয়ে আসছে সব কিছু। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে, ঋণ বিতরণও বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উচ্চাশা প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। আর বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আরেকটু বাড়িয়ে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে।
২০২২ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে; চলবে ট্রেনও। এটি চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপিতে এক থেকে দেড় শতাংশ যোগ হবে বলে অর্থনীতির গবেষকরা আশা করছেন। দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই প্রকল্পের বিদেশি মুদ্রা জোগান দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক।
এমন পরিস্থিতিতে ‘কেমন চলছে ব্যাংক খাত’ শিরোনামে নিউজবাংলা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই প্রতিবেদনের পঞ্চম পর্বে দেশের ব্যাংকিং খাতের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম।
করোনার সময়ে জরুরি সেবার আওতায় ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছিল। সেই ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন কেমন? কেমন চলছে ব্যবসা? বর্তমানে এ খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী দেখছেন?
করোনার মধ্যেও কিন্তু ব্যাংক খাতের কাজ থেমে থাকেনি। জনসাধারণকে সব সময়ই সেবা দিয়ে গেছেন ব্যাংক খাতের কর্মকর্তারা।
অনেকে বলে, ১০০ বছর পর পর এমন একটি মহামারি পৃথিবীতে আসে। এই মহামারি মোকাবিলায় আমাদের তো আগাম কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন দিকনির্দেশনার কারণে আমরা সফলতার সঙ্গে সেটা মোকাবিলা করতে পেরেছি।
করোনায় অগ্রণী ব্যাংকে এ পর্যন্ত একজন পরিচালকসহ ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন। এই মহামারি আরও বেশি হতে পারত, কিন্তু আমাদের সচেতনতার কারণে সেটা হয়নি।
আর্থিক খাতের ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যেটার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ব্যাংকের মাধ্যমেই চলমান। ফলে করোনার মধ্যেও ব্যাংক খাতের কাজ থেমে থাকেনি।
কটেজ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণ বিতরণে (সিএসএমই) ১২টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে একমাত্র অগ্রণী ব্যাংক ১০৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশংসাপত্রও পাবে ব্যাংকটি।
শুধু বড় খাত বা শিল্পে নয়, সব খাতেই আমরা ঋণ বিতরণ করেছি। আমাদের প্রায় ১২ হাজার কর্মী নিরলসভাবে কাজ করেছেন। করোনার মধ্যেও অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে সব বিষয়ে খোঁজখবর রেখেছি। এটা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে। ওয়েবিনার করে আমরা বিভিন্ন তথ্য জানাতে সক্ষম হয়েছি।
ব্যাংক যে শুধু মুনাফা করবে সেটা নয়। সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও আছে। এ জন্য এই মহামারির মধ্যে একটি দিনের জন্যও ব্যাংক বন্ধ থাকেনি। এটা কিন্তু আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। সীমিত লোকবল নিয়ে সব ধরনের কাজ করেছি। যার ফলে রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সার্বিক অর্থনীতি ভালো অবস্থানে আছে।
প্রণোদনা ঋণ বিতরণে ১২টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। কিন্তু অভিযোগ আছে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরই প্রণোদনার এই ঋণ দেয়া হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প। প্রকৃত চিত্র কী?
ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- এক বছরের জন্য কেউ ঋণ পাবে, সে ক্ষেত্রে জামানত দিতে হবে। নতুন করে যদি কেউ জামানত দেয়, সে ক্ষেত্রে মর্টগেজের জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দরকার। কিন্তু করোনার মধ্যে তো প্রায় সব কিছু বন্ধ ছিল। কারও হয়তো জামানত নেই, সেটার কী হবে। এমন কিছু সমস্যা হয়েছিল। যে ব্যাংকগুলো পিছিয়ে আছে, সেসব ব্যাংক প্রথম দিকে এসব সমস্যা সমাধানে একটু সময় নিয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ থাকার সময় আমরা পুরাতন ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে একটা ব্যবস্থা চালু করি। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ঋণগ্রহীতার আগে মর্টগেজ করা সম্পদ নতুন ঋণের ক্ষেত্রেও সংযুক্ত থাকবে- এ মর্মে লিখিত নেয়া হয়। এভাবে ঋণ দিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়ে এটা করেছি। ফলে সিএসএমই খাতে আমাদের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার বেশি।
কিছুদিন আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের হার দেড় থেকে দুই শতাংশ কমানো হয়েছে। কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব কি ব্যাংক খাতে পড়বে? ব্যাংকে আমানত বাড়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
ব্যাংকের প্রতি আস্থা মানুষের সব সময়ই বেশি। সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমে যাওয়াতে মানুষ আরও ব্যাংকমুখী হবে বলে আমি মনে করি।
দেরিতে হলেও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সরকারের একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। করোনায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ হয়েছে। এ জন্য দেশের অর্থনীতিতে সাশ্রয় দরকার। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট দুটিই উন্নত হবে। আমানতের একটি অংশ আসবে ব্যাংকে; আর একটি অংশ যাবে ক্যাপিটাল মার্কেটে। মানি ও ক্যাপিটাল মার্কেট দুটি চাঙা না হলে অর্থনীতিতে ভারসাম্য হয় না।
খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাতের এখনও অন্যতম প্রধান সমস্যা। এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে কী করা দরকার? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপিদের জন্য আবার ছাড় দিয়েছে। এককালীন টাকা পরিশোধ করে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন? এ সুবিধার ফলে খেলাপি ঋণ কি কমবে?
খেলাপি ঋণ একদম কমছে না, বিষয়টা তেমন নয়। এককালীন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিতকরণের সুযোগে লাখ-কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কমে ৮৭ হাজার কোটিতে নেমে গিয়েছিল।
ব্যবসা সব সময় ভালো চলে না। ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশে আর্থিক খাতে সুনামি দেখা দেয়। ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু তারা বেইল আউট করতে পারেনি। কারণ আমাদের দেশে বেইল আউটের তেমন সিস্টেম নেই।
করোনার মধ্যে ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনেক ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে। আবার অনকে ব্যবসা ভালো হয়েছে। ওষুধ কোম্পানির ব্যবসা, করোনা সম্পর্কিত ব্যবসাগুলো টিকে আছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। এটা সময়ের দাবি ছিল।
ভালো ব্যবসায়ীরা এতে কিছুটা উপকৃত হবে। এতে করে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত্, খেলাপি, তাদের এ সুযোগে ঋণ নিয়মিতকরণ করা উচিত। এককালীন সুবিধা নিয়ে অনেকে ঋণ নিয়মিত করতে পারবে। সুবিধা না নিয়ে ইচ্ছাকৃত খেলাপি থাকলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।
ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে একাধিকবার ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠনের আলোচনা হয়েছে, কমিশন গঠনের প্রয়োজন আছে বলে কি আপনি মনে করেন?
ব্যাংক কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকরা ভালো বুঝবেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একটা কমিশন গঠন করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, বিষয়টি তেমন নয়। বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ আসবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে যেমন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিষয় এসেছে।
কমিশন তো বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের লোকজনকে নিয়েই হবে। এটি গঠনের পরপরই রেডিক্যাল কোনো পরিবর্তন হবে না।
তবে প্রশাসন, নীতি-নৈতিকতা, শুদ্ধাচার, কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ আগের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। আগে নিয়ম-কানুন এত সুদৃঢ় ছিল না। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আলাদা বিভাগ রয়েছে পরিদর্শনের জন্য। ফলে আমাদের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও জোরদার হয়েছে।
সরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ‘আমরা ঠিকমতো কাজ করি না, সেবা দেই না’ এসব অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য কৃষিতে ঋণ দেই আমরা; বিদুতের জন্য পাওয়ার প্লান্টে ঋণ দেই আমরা; নারীদের আর্থিক কাজে অন্তর্ভুক্ত করা- এসব সরকারি ব্যাংকের কারণে হয়েছে। আর্থিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনে সরকারি ব্যাংক সব সময়ই ভূমিকা রেখেছে। কারণ প্রান্তিক অঞ্চলে আমরা সেবা দিয়ে থাকি।
অনেক সমস্যাও রয়েছে আমাদের। খেলাপি ঋণ বেশি, মূলধন ঘাটতিও রয়েছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সার্বিকভাবে অগণী ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি এখন কেমন? সামনে গ্রাহকদের জন্য কী কী সেবা চালুর পরিকল্পনা আছে?
করোনার মধ্যেও গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান আস্থা ও সহযোগিতায় দেশের তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে আমানতে লাখ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে অগ্রণী ব্যাংক; সোনালী ও ইসলামী ব্যাংকের পর এটা আমাদের জন্যও বড় অর্জন।
মহামারিকালেও অগ্রণী ব্যাংকে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স সংগ্রহে সক্ষম হয়েছে, যা দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় রিজার্ভকে মজবুত করতে সহায়তা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তের কারণে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে। এই সেতু নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারপ্রধানের পাশে দাঁড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
পদ্মা সেতু নির্মাণে ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে ১৪০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে মোট ২৪৩ কোটি ডলারের প্রয়োজন হচ্ছে। বাকি প্রায় ১০৩ কোটি ডলারও অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করবে।
পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের একটি চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী অগ্রণী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ডলার নিতে হয়নি।
শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই নয়, দেশ যে আজ শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে এর পেছনেও বড় অবদান রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের। এ পর্যন্ত ১৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের শিল্পখাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব নীতি অনুসরণ করছে দেশের সুপারব্র্যান্ড ও টেক জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। জিরো কার্বন নিঃসরণ, সাশ্রয়ী জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্লিন ও গ্রিন এনার্জি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নিজস্ব অর্থায়নে ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ভাসমান (ফ্লোটিং) সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে ওয়ালটন। শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের শিল্পখাতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের পথে আরেকটি নতুন মাইলফলক।
ওয়ালটন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সের জলাশয়ের ওপর স্থাপন করা হয়েছে এই ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফ্লোটিং সোলার প্রজেক্ট, যা দেশের বেসরকারি খাতে নির্মিত সবচেয়ে বড় ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বুলনপুরে স্থাপিত ২.৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে জলাশয়ের ওপর ০.৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্যানেল ভাসমানভাবে স্থাপন করা হয়েছিল।
ওয়ালটনের এনভায়রনমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড সেফটি বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রাজু বলেন,
“ফ্লোটিং সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ালটন নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। এটি প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের টেকসই শিল্পোন্নয়ন প্রকৃতি ও প্রযুক্তির ভারসাম্যের মাধ্যমেই সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, জলাশয়ের ওপর স্থাপিত এই প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছে না, বরং মাছ চাষ, ভূমি সংরক্ষণ, পানির বাষ্পীভবন হ্রাস ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফ্যাক্টরি বন্ধ বা আংশিক উৎপাদনে থাকলে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেট মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
রাজু জানান, প্রকল্পে ব্যবহৃত ফ্লোটিং স্ট্রাকচারগুলো ফুড-গ্রেড প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, যা পানি ও জলজ প্রাণীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্যানেলগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে মাছের স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত না হয়। এই সিস্টেম আগামী ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকরভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম থাকবে।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার্সে বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, ফুটপাত ও খালি জায়গায় ১০ মেগাওয়াট সৌর শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিল্পপ্রক্রিয়ায় পানি সাশ্রয় ও পুনঃব্যবহারের জন্য ইটিপি’র মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত পানির প্রায় ৭৫ শতাংশ নিরাপদভাবে পুনঃব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ই-বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার ও আপসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য হ্রাস ও সম্পদের পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করছে ওয়ালটন।
এসব কার্যক্রমের ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৯১১,৮২৩ মেট্রিক টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস এবং সামগ্রিক কার্বন ফুটপ্রিন্ট ১০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ালটন শুধু পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণই করেনি, বরং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই শিল্প ও সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি আদর্শ মডেল তৈরি করেছে।
জেবি/এসডি
ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম (DMF) দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে “ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”, যা বাংলাদেশের অনুপ্রেরণাদায়ক সাংবাদিক, মিডিয়াকর্মী ও উদ্ভাবকদের স্বীকৃতি জানাতে একটি মহোৎসব।
এই মর্যাদাপূর্ণ আয়োজনে সাংবাদিকতা, উদ্ভাবন ও মিডিয়ার সৃজনশীলতায় অসামান্য অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মান জানানো হয়, যাদের কাজ সমাজে স্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার ও ডিএমএফ এর সাধারণ সম্পাদক রায়হান রবিন। তিনি বলেন, ডিএমএফ-এর এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ডিজিটাল সাংবাদিকতার নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পেশাদারিত্ব ও উদ্ভাবনের মান উন্নয়ন করা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন “ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”-এর জুরি বোর্ডের সদস্যরা, যারা দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের সম্পাদনা ও ডিজিটাল নেতৃত্বের প্রতিনিধিত্ব করেন।
সভাপতির বক্তব্য
সংগঠনের সভাপতি ও দ্য বাংলাদেশ টাইমস-এর ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন,
“নতুন প্রজন্মকে ডিজিটাল সাংবাদিকতা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গণমাধ্যমকে আরও এগিয়ে নেওয়া এবং সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়াই এই আয়োজনের লক্ষ্য। সাংবাদিকতা পেশাকে আরও শক্তিশালী করা এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়ার সম্ভাবনাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরাই ডিএমএফ-এর মূল উদ্দেশ্য।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. তৃণা ইসলাম (হেড অব অপারেশনস, দ্য বিজনেস ডেইলি) ও ফয়সাল তিতুমীর (সিনিয়র প্রেজেন্টার, যমুনা টেলিভিশন), যারা সজীব উপস্থাপনায় পুরো আয়োজনে প্রাণ ঢেলেছেন।
প্রধান অতিথি: জনাব শফিকুল আলম, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব
বিশেষ অতিথি: জনাব ফয়েজ আহমেদ, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
গেস্ট অব অনার:
২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিএমএফ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ডিজিটাল মিডিয়া পেশাজীবীদের অন্যতম শীর্ষ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে, যেখানে টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন সাংবাদিকদের একত্র করে প্রশিক্ষণ, উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল মিডিয়া ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার কাজ করছে।
জুরি বোর্ড (২০২৫)
পুরস্কারপ্রাপ্তরা (প্রফেশনাল বিভাগসমূহ)
জুরি স্পেশাল অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা
এই সম্মাননায় ডিএমএফ আবারও প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আজ শুধুমাত্র সংবাদ প্রচার নয়—এটি প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার সমন্বয়ে সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
২৬ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার,, প্রথমবারেরে মতো গেমিফিকেশন লার্নিং প্রোগ্রাম বিষয়ে একটি ইভেন্টের আয়োজন করছে GREC BD & Aemers Admission Worldwide। এই প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে বর্তমান আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে আলোচনা , চিন্তাভাবনা, দলবদ্ধ কাজ, সার্ভের মাধ্যমে এ গেমটি ডিজাইন করেছে। প্রোগ্রামে পাঁচটি ইন্টারেক্টিভ লার্নিং গেম থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করবে। প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে শেখা, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা, দলগতভাবে কাজ করা এবং সমস্যা সমাধান কিভাবে করতে হয় শেখার সুযোগ পাবেন।
এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট পরিচালক হোসনে আরা বেগম জানান এই গেম এর মাধ্যমে তাদের অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটিস বোঝা এবং ক্রিটিক্যাল সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করবে এবং উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের এই যাত্রাকে আরও সহজ করবে। এই গেমটি তৈরি করেছে কিছু মেধাবী আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী। তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও কাজের সময় যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই এটি নির্মিত। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা যদি এই গেম থেকে উপকৃত হয়, তবে আমাদের এই উদ্যোগই হবে সত্যিকারের সফলতা।
এছাড়াও এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাল্টিপল-চয়েস, ফিল-ইন-দ্য-ব্ল্যাঙ্ক, ড্র্যাগ-অ্যান্ড-ড্রপ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখবে কিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়, ব্যবসা ও ফাইন্যান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসারিত হয় এবং জীবন ও কর্মধারার পরিবর্তন ঘটে।
এখানে ৫০-এর অধিক শিক্ষার্থী সনদপত্র পেয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করে তাদের সাফল্য উদযাপন করেছেন। এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে অভিভাবক, অতিথি ও কমিউনিটি লিডাররাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলার মানুষের গড়ে মাথাপিছু আয় বর্তমানে ৫ হাজার ১৬৩ মার্কিন ডলার। এটি দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ের প্রায় দুই গুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছর (২০২৪–২৫) শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নবিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয়ের এমন তথ্য জানানো হয়।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বার জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালে করা জেলাভিত্তিক জিডিপির তথ্যকে ভিত্তি ধরে এ জেলার বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি, আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা জেলার মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব অনুমান করা হয়েছে। যদিও ঢাকার মাথাপিছু আয় ও জিডিপির এসব তথ্যের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।
সর্বশেষ গত মে মাসে জাতীয় মাথাপিছু আয়ের তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। এতে উঠে আসে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন (২০২৪–২৫ অর্থবছর) ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই মাথাপিছু আয় এযাবতকালের রেকর্ড। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। তবে বিবিএস বিভাগ বা জেলাভিত্তিক মাথাপিছু আয়ের হিসাব করে না।
মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।
বিবিএসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১–২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এরপর ২০২২–২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরও কমে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার হয়। মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়।
কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ ঢাকায়
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ কে এম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ সম্পন্ন হয় ঢাকা জেলায়। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ আসে এই জেলা থেকে। ঢাকাকে বিবেচনা করা হয় আর্থিক খাতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাড়ে ৭০০–এর বেশি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ঢাকা জেলায় অবস্থিত।
আসাদুজ্জামান জানান, দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশের বাস ঢাকা জেলায়। আর মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ঢাকায় থাকেন। ঢাকা খুবই শিল্পঘন জেলা। দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় এ জেলা থেকে। সব মিলিয়ে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) এককভাবে ৪৬ শতাংশ অবদান রাখছে ঢাকা জেলা।
ইপিআই সূচক চালু করবে ঢাকা চেম্বার
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা চেম্বার। প্রতি তিন মাস পরপর ইপিআই সূচক প্রকাশ করা হবে। এতে মূলত শিল্প ও সেবা খাতের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হবে এবং তার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
ঢাকা চেম্বারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ইপিআই সূচক নির্ধারণের প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পরিমাপের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন সূচক, যেমন বিসিআই, ইজ অব ডুইং বিজনেস ইনডেক্স, জিডিপি প্রভৃতি রয়েছে। তবে এসব সূচক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত পরিবর্তন ও কারণগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারে না। সরকার অনেক সময় ভূ–অর্থনৈতিক পটভূমি নীতিনির্ধারণ করে, কিন্তু হালনাগাদ তথ্য না থাকায় সেগুলো সব সময় কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
এমন বাস্তবতায় ইপিআই সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাসকিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন সূচকে দেখা যায়, ‘দেশের অর্থনীতি ভালো করছে। কিন্তু বৈশ্বিক সূচকের কিংবা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখতে পাই, আমরা বিভিন্ন সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকে থাকি। তাই এসব সূচকের তথ্যে আত্মতুষ্টির কারণ নেই; বরং এসব সূচককে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে তুলনা করে প্রকাশ করলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।’
আর ইপিআই সূচকটি প্রতি মাসে প্রকাশ করা ও সূচকের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের আরেক সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) মহাপরিচালক মো. নূরুল আলম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের (এসএসজিপি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেসার আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সৈয়দ মুনতাসির মামুন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম আতিকুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমইএসপিডি) নওশাদ মোস্তফা, পরিচালক মো. সালিম আল মামুন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. দীন ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট মিয়া রহমত আলী প্রমুখ।
ফ্রান্সের পারফরম্যান্স লুব্রিক্যান্ট ব্র্যান্ড ইএলএফ লুব্রিক্যান্টস স্থানীয় গাড়ি মেকানিকদের দক্ষতা উন্নয়নে একদিনব্যাপী বিশেষ হাইব্রিড গাড়ি সার্ভিস প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করেছে।
টোটালএনার্জিসের এই ব্র্যান্ডের উদ্যোগে কর্মশালাটি শুক্রবার রাজধানীর কন্টিনেন্টাল ওয়ার্কস লিমিটেডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের বিভিন্ন সার্ভিস ওয়ার্কশপ থেকে আসা ৫০ জন অভিজ্ঞ মেকানিক প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
কর্মশালায় হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ, ইলেকট্রিক মোটর পরীক্ষা, হাইব্রিড ট্রান্সমিশন সার্ভিসিং, হাই-ভোল্টেজ নিরাপত্তা ও আধুনিক ত্রুটি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইএলএফ জানিয়েছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য স্থানীয় মেকানিকদের আরও দক্ষ করে তোলা, যাতে তারা গাড়ির কর্মক্ষমতা বাড়াতে, মেরামতের সময় কমাতে ও গাড়ির আয়ুষ্কাল দীর্ঘ করতে পারেন।
এতে চালক ও মালিকরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণও হ্রাস পাবে বলে জানায় ইএলএফ।
প্রশিক্ষণটি স্থানীয় চাহিদা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সাজানো হয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল অটোমোটিভ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি ইএলএফ-এর একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টোটালএনার্জিস বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বিক্রয় পরিচালক টেরি হায়াশি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ওয়ার্কশপ মালিক, সার্টিফায়েড মেকানিক, প্রশিক্ষক, ফ্লিট সার্ভিস ম্যানেজার, মোটরযান সাংবাদিক, ইএলএফ পরিবেশক ও অন্যান্য অংশীদাররা।
ইএলএফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গাড়ির প্রযুক্তি দ্রুত বদলাচ্ছে, তাই তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। আজকের প্রশিক্ষণ তাদের জন্য স্বীকৃতি, যারা প্রতিদিন আমাদের সড়ক ব্যবস্থা সচল রাখছেন। পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক পরিবহনের ভবিষ্যৎ গড়তে আমরা বাংলাদেশের মেকানিকদের পাশে থাকতে পেরে গর্বিত।’
ইএলএফ বাংলাদেশের পরিচালক কোসুকে ইয়োশিদা বলেন, টেকনিশিয়ানদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ মানে ভবিষ্যতের পরিবহন খাতকে শক্তিশালী করা। আমরা হাইব্রিড সার্ভিসিং জ্ঞান ও নিরাপদ কার্যাভ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে একটি টেকসই সার্ভিস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি।
আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের গাড়ির জন্য স্থানীয় কারিগরি সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইএলএফ, যা গাড়ির সার্ভিসিং মান, নিরাপত্তা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জি টু জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি শুরু করছে।
উভয় দেশের সরকারে মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে এ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)-এর মধ্যে চুক্তিটি সই হয়। এর আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে।
প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি নোরস স্ট্রিড জাহাজটি শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে পৌঁছায়।
জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গমের মধ্যে ৩৪ হাজার ১৭০ মেট্রিক টন চট্টগ্রামে এবং অবশিষ্ট ২২ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রশংসনীয়। তবে এই প্রক্রিয়া দেশের ঘোষিত বিনিময় হার ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা তারা মূল্যায়ন করবে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বলেন, “রিজার্ভের সঞ্চয়কে আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির একটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে যেহেতু দেশটি এখনো পেমেন্ট ভারসাম্যের চাপের মুখে রয়েছে।”
গত শুক্রবার হংকংয়ে আয়োজিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, পেমেন্ট ভারসাম্যের দুর্বলতা হ্রাসে রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। এ সাফল্যের জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।
তিনি জানান, ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনার অংশ হিসেবে আইএমএফের একটি মিশন চলতি মাসেই বাংলাদেশ সফর করবে। মিশনটি মাঠপর্যায়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে। ফলাফল কী হয়, তা এখনো দেখার বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, সেটিও আইএমএফ মূল্যায়ন করবে বলে তিনি জানান।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ছিল ১৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এ বৃদ্ধি ঘটেছে মূলত মুদ্রা প্রবাহ বাড়া, ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম থাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজার থেকে ডলার কেনার কারণে।
২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আমদানি বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়। ওই সময় থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ‘ক্রলিং পেগ’ (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা) বিনিময় হার ব্যবস্থা বজায় রাখার পর, ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার ব্যবস্থায় নমনীয়তা চালু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এ পর্যন্ত টাকার মান ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ, বিশেষ করে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মন্তব্য