গোলাম মোহাম্মদ কাদের যিনি জিএম কাদের নামে অধিক পরিচিত। বর্তমান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতাও।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ২০১৯ সালে। দল ও দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে তিনি সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
সংসদে আপনারা এখন প্রধান বিরোধী দল। দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির যে অবস্থান তাতে কি আপনি খুশি?
হ্যাঁ, খুশি। খুশি না হওয়ার মতো কোনো অবস্থা ঘটেনি। রাজনীতি করলে চড়াই-উতরাই থাকবেই। একে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
রাজনীতি সব সময় সরল অনুপাতে চলে না। রাজনীতিকে কুসুমাস্তীর্ণ পথ ভাবারও অবকাশ নেই। রাজনীতিতে নীতি যেমন আছে, অপরাজনীতি আছে, দুর্নীতি আছে, সংঘাত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। রাজনীতিতে সব ধরনের এলিমেন্টন্স নিয়েই রাজনীতি। এ বিষয়টিকে গ্রহণ করেই আমাদের রাজনীতি করতে হয়।
আপনি একাধিকবার বিভিন্ন সভায় জাতীয় পার্টিকে সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়ার কথা বলেছেন। হতে পেরেছেন কি?
সংবিধান অনুযায়ী সত্যিকার অর্থে সংসদ, যেটাকে বিরোধী দলের প্রধান চারণভূমি বলা যায়, সে জিনিসটির অভাব আছে। আমার বিশ্লেষণ অনুযায়ী সংবিধানে যে শাসনব্যবস্থার কথা বলা আছে, সেটিকে সংসদীয় গণতন্ত্র বলা যায় না। গণতন্ত্রও বলা যায় কি না, তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।
সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্রের চর্চার অবকাশ শূন্যের পর্যায়ে বলা যায়। বিরোধী দল হিসেবে আমরা জনসমক্ষে কিছু সমস্যা তুলে ধরা, জনগণের কথা বলা… সেটি বলি। সরকারের শোনা-না শোনা তাদের নিজস্ব বিষয়। সরকারের কোনো জবাবদিহি করার সুযোগ কিংবা সুবিধা সংসদে নেই।
ফলে প্রকৃত আর অপ্রকৃত যেই হোক, যখনই যে ছিল, যেভাবেই ছিল তারা কেউই কার্যকরভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। আমরা এর মাঝখান থেকে যতটুকু সম্ভব সেভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংসদের বাইরে বিরোধীদের আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টিও এখন একটু সমস্যা হয়ে গেছে। ২০১৩-১৪ সালের পর এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে সাধারণ মানুষ মনে করছে, আন্দোলন খারাপ জিনিস। এতে সাধারণ মানুষের লাভের কোনো কিছু হয় না।
১৩-১৪ সালের পর থেকে মোটামুটিভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এখানে দেশ অচল হয়ে গেলেও সরকার পতন হবে না। ফলে সংসদের বাইরে যেটাকে বিরোধীদলীয় রাজনীতি বলার চেষ্টা করা হয়, সেই রাজনীতির পরিবেশও অবর্তমান।
আপনি দলকে বারবার শক্তিশালী করার কথা বলছেন। কিন্তু উপনির্বাচনসহ কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেল, আপনার প্রার্থীরা রণেভঙ্গ দিচ্ছেন।
সব ক্ষেত্রে সরে দাঁড়ায়নি। এ ক্ষেত্রে দলের কৌশল হলো- যুদ্ধের ময়দানে থাকতে হবে, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। যে জিনিসটি হয়েছে, যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তাদের ওপর নানা ধরনের সন্ত্রাস থেকে শুরু করে চাপ এবং অন্যান্য লোভ-লালসা দেখিয়ে তাদের নির্বাচনের মাঠ থেকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ জন্য তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত টিকে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মামলাও দেয়া হচ্ছে। তাদের বাড়িঘরে, আত্মীয়স্বজনের ওপরে, সমর্থকদের ওপরে সশস্ত্র আক্রমণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা এ রকমও অভিযোগ পেয়েছি যে, প্রশাসনও তাদের সঙ্গে জড়িত ছিল।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যে, নির্বাচনের যে ফলাফল ও পরিস্থিতি সেটা সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না।
নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, সেই ভূমিকা আমরা দেখছি না, দৃশ্যমান নয়। ফলে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখছি না, এবং জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো হতাশ হয়ে পড়ছে।
আমি সম্প্রতি আকেটি জিনিস খেয়াল করছি যে, আস্তে আস্তে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে বা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। শুধু সরকারি দল ও তাদের বিদ্রোহীরাই এখন নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না।
যদি মানুষ আগে থেকে ধরে নেয় যে এ নির্বাচনে তার সমর্থন কোনো ভূমিকা রাখবে না, সেখানে নির্বাচনে যাওয়ার উৎসাহ মানুষ হারিয়ে ফেলে।
যারা ভোটার তারা ভোট দেয়ারও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নেতা-কর্মী হারাচ্ছে, তাদের সংগঠন তৈরি করতে অসুবিধা হচ্ছে।
এতে করে আওয়ামী লীগসহ দেশের রাজনীতির সব দল রাজনীতির বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি মনে করি যে, একপর্যায়ে এসে তারা একটা সাইনবোর্ডসর্বস্ব, নিবন্ধনসর্বস্ব, নেতাসর্বস্ব অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়াবে।
এ ক্ষেত্রে উত্তরণের উপায় কী বলে মনে করেন?
সেটা খুব সহজ নয়। সংবিধান অনুযায়ী আমরা যদি আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারি, সংবিধানের ১২৬ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উনাদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে একটা সমাধান হয়।
সরকারের বাইরে, সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে হলেও তাদের সেটা শুনতে হবে। এটা আমাদের সংবিধানের বিধানে আছে। ফলে উনারা অনেকটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একটা বডি হবেন। এ ধরনের যদি পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যায়, তাহলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
এর বাইরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শুধু সরকার পরিবর্তনের একটি ব্যবস্থা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দীর্ঘদিন দিতে পারে না। আমি মনে করি এই ব্যবস্থাটি অকার্যকর।
আপনি বলেছেন, আপনারা সব নির্বাচনে অংশ নেবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু কোথাও তো ভালো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। এমনকি জাতীয় পার্টির দুর্গ বলা হতো যে এলাকা রংপুর, কুড়িগ্রামেও ভালো ফলাফল আসছে না। তাহলে কি দল ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে?
এটা বলার আগে বলতে হবে, নির্বাচন কি অবাধ-সুষ্ঠু হচ্ছে? জনগণের মতামতের প্রতিফলন হচ্ছে? যদি তাই হয় তাহলে আমরা ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছি। আর এই মতামতের সঙ্গে যদি আপনি দ্বিমত প্রকাশ করেন তাহলে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছি না।
নির্বাচনব্যবস্থা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলেই প্রকৃতভাবে আমাদের অবস্থানটা আমরা জানতে পারব, জনগণও জানতে পারবে। তবে আমরা মনে করি, আমাদের অবস্থান কোথাও খারাপ হয়নি।
আপনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে আপনার দল কি করেছে? ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেছি, তার দুটি কারণ। একটি হলো এখন যে রাজনীতিতে স্থবিরতা, বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া চলছে, তাতে বড় বড় অনেক নেতা, নামীদামি মানুষ রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারছেন না।
আমরা ৯০-এর পর থেকে প্রায় ৩১ বছর ক্ষমতার বাইরে। এরশাদ সাহেবের মতো একজন টাওয়ারিং পারসোনালিটি, যার ভাবমূর্তি দেশে ও বিদেশে, সব কিছু মিলিয়ে তার অবদান, সারা দেশের মানুষ তাকে গ্রহণ করেছিল।
উনার অবর্তমানে এই দলটি টিকে থাকবে কি না, উনার সমকক্ষ কোনো নেতৃত্ব আসবে কি না, এমন সন্দেহ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দেখা গেল সব দল তলিয়ে গেলেও এখন ৩টি দল মাঠপর্যায়ে আছে। তার মধ্যে জাতীয় পার্টি একটি।
যদিও জাতীয় পার্টিকে তিন নম্বর বলা যায়। এক কিংবা দুইয়ের ম্ধ্যে আমরা এখনও আসতে পারিনি। এখন মানুষের আমাদের ওপর সেই বিশ্বাস আছে।
আগামী নির্বাচনে কি আবার আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি জোট হচ্ছে, না আপনারা এককভাবে নির্বাচন করবেন?
নির্বাচনের এখনও দুই বছরের বেশি সময় আছে। নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে অনেক মেরুকরণ হতে পারে। সুতরাং দুই বছর পর পরিস্থিতি কী হয় এখনও নিশ্চিত হতে পারছি না। তখনই আমরা হয়তো সিদ্ধান্ত নেব।
তবে তাত্ত্বিক কথা বলি, সেটা হলো- দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তিনটি দলই মধ্যপন্থি। আওয়ামী লীগ মধ্যপন্থি হলেও ওনাদের বামপন্থিদের সঙ্গে মিত্র হওয়ার একটা ঐতিহ্য আছে। সে জন্য ওনাদের মধ্য বাম ঘেঁষা মধ্যপন্থি দল বলা হয়।
বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ডান ঘেঁষা মধ্যপন্থী দল। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তৈরিই হয়েছে আওয়ামী লীগের কাউন্টারে। ফলে যেটা দাঁড়িয়েছে, সেটা হলো আমাদের ও বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী কিংবা ভোটব্যাংক প্রায় একই কোয়ালিটির।
আমরা একসঙ্গে হলে খুব বড় শক্তি। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়, জাতীয় পার্টির অস্থিত্ব নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে, যেহেতু একই ধরনের মানসিকতা, আদর্শ নিয়ে দল করা হচ্ছে।
যে নেতৃত্ব সেখানে শক্তিশালী হবে, সে নেতৃত্বও দলের পুরো অংশকে নিয়ে নিতে পারে, দলের স্বকীয়তা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখা সুবিধাজনক হয়। আর আওয়ামী লীগেরও একটা স্বার্থ থাকে। এ দুটি সমীকরণ আমাদের অতীত রাজনীতিতে কাজ করেছে। সামনে কী হবে এটা-সেটা আমি বলতে পারছি না।
বিএনপি তো আবার আন্দোলনে যাবার কথা বলছে। এই অবস্থায় আপনি কি আবার ২০১৩-১৪ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখছেন? প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে সরকারের প্রতি কী পরামর্শ থাকবে আপনার?
বিএনপি তো অনেক দিন থেকে প্রোগ্রাম দিতে চাচ্ছে, চেষ্টা করছে। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে গেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে খুব সহজ হবে না, এটা বলতে পারি আমি।
তারা আন্দোলন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারবে, পরবর্তীকালে সুবিধা পাবে- এমন সম্ভাবনা আমি কম দেখি। একেবারে শূন্য বলব না, তবে সম্ভাবনা কম।
সরকারের প্রতি পরামর্শ হলো- আমরা মনে করি, যেকোনো জায়গায় চরমপন্থা তখনই জয়লাভ করে যখন মানুষের মধ্যে হতাশার জায়গা বেশি থাকে। সাধারণ মানুষ যখন সাধারণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে গিয়ে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, হতাশাগ্রস্ত হয়, এই হতাশাটাই একপর্যায় এসে তারা চরমপন্থি হয় বা চরমপন্থিদের সমর্থক হয়।
বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বামদের দ্বারা হয়েছিল। এখন আবার জামায়াত-হেফাজত মিলে একটি ডানপন্থি চরমপন্থার আশঙ্কা দেখা দেয়।
ভবিষ্যতে যদি এই সরকার এর সমাধান না করে তাহলে চরমপন্থার উত্থান হতে পারে। যেটা দেশের কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
আমরা মনে করি, যদি মানুষের মধ্যে হতাশা থাকে তা থেকে তাদের মুক্তি দিতে হবে। না হলে দেশ চরমপন্থার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষ নয় বিএনপি এমনটা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়, এতে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আছে তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন। যারা সংস্কার চাচ্ছে না, সেটা তাদের দলের ব্যাপার।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এর আগে গত বুধবার সকালে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীসহ চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে সুস্থ আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিএনপি’র শীর্ষ ৫ জন নেতা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, বহিষ্কারের তথ্যটি সঠিক।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি, আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোনালি সংসদ মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, শাহ আলমের (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) জন্য আমরা নমিনেশন আনবো। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেবো কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করবো।
তিনি বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ মহলকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ফতুল্লাকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো জোট চলবে না। এই খেলা আর খেলবেন না। ধানের শীষ ছাড়া ফতুল্লায় কিছু চলবে না। ফতুল্লার জনগণের আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ফতুল্লার মানুষদের প্রিয় নেতা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘেরাও করার মন্তব্যটি সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, মন্তব্যটি স্লিপ অব টাং বলতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রায় ৮০ ভাগ ভোটার বিএনপির। এখানে যদি জোটের অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ভোটারদের জন্য কষ্টদায়ক। বিষয়টি কেন্দ্রকে বোঝাতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে এবং একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা না করে কোনও প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা মনে করেন, সংস্কার রাতারাতি বা কয়েকটি বৈঠকের মধ্য দিয়েই হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, যদি সরকার মনে করে যে, তারা চাইলেই কাল থেকে পুলিশ ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে সেটা হবে না। ‘আপনাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে ঘুষ নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
জিয়া পরিষদ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’। এটি গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এটি একটি নেতিবাচক আমলাতন্ত্র এবং এটিকে একটি ইতিবাচক কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তা করতে হলে মূলত জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া, তাদের চাহিদা বোঝা এবং সেই চাহিদাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।
নির্বাচন চাওয়ার কারণে বিএনপিকে ঘিরে চলমান সমালোচনার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বলা হলো, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন ছাড়া প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা যায় না। ‘আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সংসদে যাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে কীভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে বাড়ি ও বিদেশ থেকে কয়েকজন লোক ভাড়া করে আনতে পারেন না। এটি সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জাতির এই শোকের সময়ে আমি সকল গণতন্ত্রপন্থী সহযোদ্ধার প্রতি শান্ত ও সংহত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভেদমূলক সংঘাত কিংবা জনতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করতে হলে আমাদের সহনশীলতা ও আত্মসংযমের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সদস্যের মাধ্যমে জনতা ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি ব্যয় হোক নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা, নিহতদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা, আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার কাজে।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণহানির শিকার নিরীহ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের গভীর সহানুভূতি। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
মন্তব্য