গোলাম মোহাম্মদ কাদের যিনি জিএম কাদের নামে অধিক পরিচিত। বর্তমান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতাও।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ২০১৯ সালে। দল ও দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে তিনি সম্প্রতি একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
সংসদে আপনারা এখন প্রধান বিরোধী দল। দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির যে অবস্থান তাতে কি আপনি খুশি?
হ্যাঁ, খুশি। খুশি না হওয়ার মতো কোনো অবস্থা ঘটেনি। রাজনীতি করলে চড়াই-উতরাই থাকবেই। একে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
রাজনীতি সব সময় সরল অনুপাতে চলে না। রাজনীতিকে কুসুমাস্তীর্ণ পথ ভাবারও অবকাশ নেই। রাজনীতিতে নীতি যেমন আছে, অপরাজনীতি আছে, দুর্নীতি আছে, সংঘাত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। রাজনীতিতে সব ধরনের এলিমেন্টন্স নিয়েই রাজনীতি। এ বিষয়টিকে গ্রহণ করেই আমাদের রাজনীতি করতে হয়।
আপনি একাধিকবার বিভিন্ন সভায় জাতীয় পার্টিকে সত্যিকারের বিরোধী দল হওয়ার কথা বলেছেন। হতে পেরেছেন কি?
সংবিধান অনুযায়ী সত্যিকার অর্থে সংসদ, যেটাকে বিরোধী দলের প্রধান চারণভূমি বলা যায়, সে জিনিসটির অভাব আছে। আমার বিশ্লেষণ অনুযায়ী সংবিধানে যে শাসনব্যবস্থার কথা বলা আছে, সেটিকে সংসদীয় গণতন্ত্র বলা যায় না। গণতন্ত্রও বলা যায় কি না, তা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে।
সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্রের চর্চার অবকাশ শূন্যের পর্যায়ে বলা যায়। বিরোধী দল হিসেবে আমরা জনসমক্ষে কিছু সমস্যা তুলে ধরা, জনগণের কথা বলা… সেটি বলি। সরকারের শোনা-না শোনা তাদের নিজস্ব বিষয়। সরকারের কোনো জবাবদিহি করার সুযোগ কিংবা সুবিধা সংসদে নেই।
ফলে প্রকৃত আর অপ্রকৃত যেই হোক, যখনই যে ছিল, যেভাবেই ছিল তারা কেউই কার্যকরভাবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। আমরা এর মাঝখান থেকে যতটুকু সম্ভব সেভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংসদের বাইরে বিরোধীদের আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টিও এখন একটু সমস্যা হয়ে গেছে। ২০১৩-১৪ সালের পর এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে সাধারণ মানুষ মনে করছে, আন্দোলন খারাপ জিনিস। এতে সাধারণ মানুষের লাভের কোনো কিছু হয় না।
১৩-১৪ সালের পর থেকে মোটামুটিভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এখানে দেশ অচল হয়ে গেলেও সরকার পতন হবে না। ফলে সংসদের বাইরে যেটাকে বিরোধীদলীয় রাজনীতি বলার চেষ্টা করা হয়, সেই রাজনীতির পরিবেশও অবর্তমান।
আপনি দলকে বারবার শক্তিশালী করার কথা বলছেন। কিন্তু উপনির্বাচনসহ কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেল, আপনার প্রার্থীরা রণেভঙ্গ দিচ্ছেন।
সব ক্ষেত্রে সরে দাঁড়ায়নি। এ ক্ষেত্রে দলের কৌশল হলো- যুদ্ধের ময়দানে থাকতে হবে, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। যে জিনিসটি হয়েছে, যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তাদের ওপর নানা ধরনের সন্ত্রাস থেকে শুরু করে চাপ এবং অন্যান্য লোভ-লালসা দেখিয়ে তাদের নির্বাচনের মাঠ থেকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ জন্য তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত টিকে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মামলাও দেয়া হচ্ছে। তাদের বাড়িঘরে, আত্মীয়স্বজনের ওপরে, সমর্থকদের ওপরে সশস্ত্র আক্রমণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা এ রকমও অভিযোগ পেয়েছি যে, প্রশাসনও তাদের সঙ্গে জড়িত ছিল।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যে, নির্বাচনের যে ফলাফল ও পরিস্থিতি সেটা সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে না।
নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, সেই ভূমিকা আমরা দেখছি না, দৃশ্যমান নয়। ফলে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখছি না, এবং জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো হতাশ হয়ে পড়ছে।
আমি সম্প্রতি আকেটি জিনিস খেয়াল করছি যে, আস্তে আস্তে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে বা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। শুধু সরকারি দল ও তাদের বিদ্রোহীরাই এখন নির্বাচনের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষকে মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না।
যদি মানুষ আগে থেকে ধরে নেয় যে এ নির্বাচনে তার সমর্থন কোনো ভূমিকা রাখবে না, সেখানে নির্বাচনে যাওয়ার উৎসাহ মানুষ হারিয়ে ফেলে।
যারা ভোটার তারা ভোট দেয়ারও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে একদিকে রাজনৈতিক দলগুলো নেতা-কর্মী হারাচ্ছে, তাদের সংগঠন তৈরি করতে অসুবিধা হচ্ছে।
এতে করে আওয়ামী লীগসহ দেশের রাজনীতির সব দল রাজনীতির বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি মনে করি যে, একপর্যায়ে এসে তারা একটা সাইনবোর্ডসর্বস্ব, নিবন্ধনসর্বস্ব, নেতাসর্বস্ব অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়াবে।
এ ক্ষেত্রে উত্তরণের উপায় কী বলে মনে করেন?
সেটা খুব সহজ নয়। সংবিধান অনুযায়ী আমরা যদি আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারি, সংবিধানের ১২৬ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উনাদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে একটা সমাধান হয়।
সরকারের বাইরে, সরকারের নির্দেশের বিরুদ্ধে হলেও তাদের সেটা শুনতে হবে। এটা আমাদের সংবিধানের বিধানে আছে। ফলে উনারা অনেকটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একটা বডি হবেন। এ ধরনের যদি পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যায়, তাহলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
এর বাইরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শুধু সরকার পরিবর্তনের একটি ব্যবস্থা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন দীর্ঘদিন দিতে পারে না। আমি মনে করি এই ব্যবস্থাটি অকার্যকর।
আপনি বলেছেন, আপনারা সব নির্বাচনে অংশ নেবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু কোথাও তো ভালো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। এমনকি জাতীয় পার্টির দুর্গ বলা হতো যে এলাকা রংপুর, কুড়িগ্রামেও ভালো ফলাফল আসছে না। তাহলে কি দল ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে?
এটা বলার আগে বলতে হবে, নির্বাচন কি অবাধ-সুষ্ঠু হচ্ছে? জনগণের মতামতের প্রতিফলন হচ্ছে? যদি তাই হয় তাহলে আমরা ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছি। আর এই মতামতের সঙ্গে যদি আপনি দ্বিমত প্রকাশ করেন তাহলে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছি না।
নির্বাচনব্যবস্থা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলেই প্রকৃতভাবে আমাদের অবস্থানটা আমরা জানতে পারব, জনগণও জানতে পারবে। তবে আমরা মনে করি, আমাদের অবস্থান কোথাও খারাপ হয়নি।
আপনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে আপনার দল কি করেছে? ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলেছি, তার দুটি কারণ। একটি হলো এখন যে রাজনীতিতে স্থবিরতা, বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া চলছে, তাতে বড় বড় অনেক নেতা, নামীদামি মানুষ রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারছেন না।
আমরা ৯০-এর পর থেকে প্রায় ৩১ বছর ক্ষমতার বাইরে। এরশাদ সাহেবের মতো একজন টাওয়ারিং পারসোনালিটি, যার ভাবমূর্তি দেশে ও বিদেশে, সব কিছু মিলিয়ে তার অবদান, সারা দেশের মানুষ তাকে গ্রহণ করেছিল।
উনার অবর্তমানে এই দলটি টিকে থাকবে কি না, উনার সমকক্ষ কোনো নেতৃত্ব আসবে কি না, এমন সন্দেহ স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দেখা গেল সব দল তলিয়ে গেলেও এখন ৩টি দল মাঠপর্যায়ে আছে। তার মধ্যে জাতীয় পার্টি একটি।
যদিও জাতীয় পার্টিকে তিন নম্বর বলা যায়। এক কিংবা দুইয়ের ম্ধ্যে আমরা এখনও আসতে পারিনি। এখন মানুষের আমাদের ওপর সেই বিশ্বাস আছে।
আগামী নির্বাচনে কি আবার আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি জোট হচ্ছে, না আপনারা এককভাবে নির্বাচন করবেন?
নির্বাচনের এখনও দুই বছরের বেশি সময় আছে। নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে অনেক মেরুকরণ হতে পারে। সুতরাং দুই বছর পর পরিস্থিতি কী হয় এখনও নিশ্চিত হতে পারছি না। তখনই আমরা হয়তো সিদ্ধান্ত নেব।
তবে তাত্ত্বিক কথা বলি, সেটা হলো- দল হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তিনটি দলই মধ্যপন্থি। আওয়ামী লীগ মধ্যপন্থি হলেও ওনাদের বামপন্থিদের সঙ্গে মিত্র হওয়ার একটা ঐতিহ্য আছে। সে জন্য ওনাদের মধ্য বাম ঘেঁষা মধ্যপন্থি দল বলা হয়।
বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি ডান ঘেঁষা মধ্যপন্থী দল। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তৈরিই হয়েছে আওয়ামী লীগের কাউন্টারে। ফলে যেটা দাঁড়িয়েছে, সেটা হলো আমাদের ও বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী কিংবা ভোটব্যাংক প্রায় একই কোয়ালিটির।
আমরা একসঙ্গে হলে খুব বড় শক্তি। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়, জাতীয় পার্টির অস্থিত্ব নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে, যেহেতু একই ধরনের মানসিকতা, আদর্শ নিয়ে দল করা হচ্ছে।
যে নেতৃত্ব সেখানে শক্তিশালী হবে, সে নেতৃত্বও দলের পুরো অংশকে নিয়ে নিতে পারে, দলের স্বকীয়তা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখা সুবিধাজনক হয়। আর আওয়ামী লীগেরও একটা স্বার্থ থাকে। এ দুটি সমীকরণ আমাদের অতীত রাজনীতিতে কাজ করেছে। সামনে কী হবে এটা-সেটা আমি বলতে পারছি না।
বিএনপি তো আবার আন্দোলনে যাবার কথা বলছে। এই অবস্থায় আপনি কি আবার ২০১৩-১৪ সালের মতো সহিংস পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখছেন? প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে সরকারের প্রতি কী পরামর্শ থাকবে আপনার?
বিএনপি তো অনেক দিন থেকে প্রোগ্রাম দিতে চাচ্ছে, চেষ্টা করছে। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে গেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে খুব সহজ হবে না, এটা বলতে পারি আমি।
তারা আন্দোলন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারবে, পরবর্তীকালে সুবিধা পাবে- এমন সম্ভাবনা আমি কম দেখি। একেবারে শূন্য বলব না, তবে সম্ভাবনা কম।
সরকারের প্রতি পরামর্শ হলো- আমরা মনে করি, যেকোনো জায়গায় চরমপন্থা তখনই জয়লাভ করে যখন মানুষের মধ্যে হতাশার জায়গা বেশি থাকে। সাধারণ মানুষ যখন সাধারণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে গিয়ে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, হতাশাগ্রস্ত হয়, এই হতাশাটাই একপর্যায় এসে তারা চরমপন্থি হয় বা চরমপন্থিদের সমর্থক হয়।
বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বামদের দ্বারা হয়েছিল। এখন আবার জামায়াত-হেফাজত মিলে একটি ডানপন্থি চরমপন্থার আশঙ্কা দেখা দেয়।
ভবিষ্যতে যদি এই সরকার এর সমাধান না করে তাহলে চরমপন্থার উত্থান হতে পারে। যেটা দেশের কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।
আমরা মনে করি, যদি মানুষের মধ্যে হতাশা থাকে তা থেকে তাদের মুক্তি দিতে হবে। না হলে দেশ চরমপন্থার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
মন্তব্য