মিউনিসিপ্যাল বন্ড আনছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। দুটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা তুলে নিতে চান উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এই টাকায় দুটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে চায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ডের ২০০০ কোটি টাকায় গুলশান-২ ডিএনসিসি মার্কেটের সোয়া ৩ একর জমির ওপর একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
‘এই কাজ শেষ হলে কারওয়ান বাজারের ২৪ বিঘা জমির ওপর হবে একটি অত্যাধুনিক বিজনেস হাব। এই জমিতে বর্তমানে ডিএনসিসির তিনটি মার্কেট রয়েছে।’
মেয়র জানান, কারওয়ান বাজারের ভবনটি হবে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটি কেমন হবে তা ইতিমধ্যে ঠিক করা হয়েছে। এর ত্রিমাত্রিক নকশা তৈরির কাজও শেষ দিকে। এখন চলছে প্রকৌশলগত নকশা চূড়ান্তের কাজ। এটা শেষ হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন হলেই বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলা হবে।
আতিক বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে এখানে বানানো হবে মনোরম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখানে মিডিয়া কেন্দ্র ছাড়াও থাকবে বিশাল পার্কিং ব্যবস্থা। থাকবে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, অত্যাধুনিক অপেরা হাউস, বিদেশিদের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, সুবিশাল কনভেনশনাল সেন্টার, নাগরিক মিলনায়তনসহ নানা স্থাপনা।’
গুলশানের কাজ ২০২৩ সালে শেষ করে কারওয়ান বাজারের কাজ শুরু করার ইচ্ছা ডিএনসিসির। মেয়র বলেন, ‘আমার বর্তমান মেয়াদেই কারওয়ান বাজারের কাজ শুরু করতে চাই।’
ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পক্ষ থেকে এই বন্ডের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সঙ্গে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বন্ডের আগ্রহের কথা জানান মেয়র আতিক। বৈঠকে মেয়র ছাড়াও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব ও সিটি করপোরেশনের অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন।
অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, মেয়র বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে অবকাঠামো উন্নয়নে আগ্রহ দেখালে বিএসইসিএর পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএনসিসি মেয়রকে গ্রিন বন্ড ইস্যুর পরামর্শ দিয়েছি। মেয়র আমাদের জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েরও বন্ড ইস্যুতে সম্মতি রয়েছে।’
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, আলোচ্য দুই প্রকল্প ছাড়াও ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকার রাস্তা, ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে মিউনিসিপ্যাল বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের কথা ভাবছেন মেয়র আতিক।
মিউনিসিপ্যাল বন্ড বা মিনু বন্ড
মিউনিসিপ্যাল বন্ড বা মিনু বন্ড হচ্ছে এক ধরনের ‘সিকিউরিটি ফান্ড’, যা কেবল পৌরসভা, শহর এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এটা এক ধরনের ঋণের মতো, যা কোনো দেশের জনগণ সেই দেশের স্থানীয় সরকারকে দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে পান মুনাফা।
মিউনিসিপ্যাল বন্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখান থেকে বিনিয়োগকারী যতুটুকু মুনাফা পাবেন সেটাতে তার কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। বিনিয়োগ করতেও ট্যাক্স দিতে হয় না। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা একটা দারুণ সুযোগ।
বলা হয়, করপোরেট বন্ডগুলোর চেয়ে মিউনিসিপ্যাল বন্ড বেশি নিরাপদ আর কম ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণত জেনারেল সরকারি অবকাঠামোগুলোকে তহবিল প্রদানের জন্য এ বন্ড চালু করা হয়। যেখানে রাজস্ব আদায় করা হয় না। এগুলোর মধ্যে স্কুল, রাস্তা এবং সেতুও পড়ে।
বিনিয়োগকারী চাইলে বন্ড কিনে আবার বিক্রিও করতে পারেন। যখন কোনো নতুন প্রকল্প মার্কেটে আসে তখনই এই বন্ডগুলো কিনে রেখে এবং সময় বুঝে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশে মিউনিসিপ্যাল বন্ডের ভবিষ্যৎ
মেয়র আতিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিএনসিসি মিউনিসিপ্যাল বন্ড এই প্রথম উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশে। দেশের পুঁজিবাজারে এই ধরনের বন্ডের সম্ভাব্যতা দেখার জন্য এটি একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ।’
তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে এমন বন্ড তহবিল আরও জারি করা হবে। ঢাকা উত্তরজুড়ে মোট ১৮টির মতো ওয়ার্ডে প্রকল্প নির্মাণের তহবিল সংগ্রহ হবে বন্ডের মাধ্যমে। তখন ডিএনসিসির এই সাফল্য আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে এমন উদ্যোগ গ্রহণে। সরকারি সংস্থাগুলো ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে এবং বিনিয়োগকারী খুঁজতে আর হিমশিম খাবে না।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। এখন চলছে পরিকল্পনা চূড়ান্তের কাজ। এই বন্ড বাজারে আসার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সব ঠিক থাকলে এ বছরেই বাজারে আসবে মিনু বন্ড।’
অন্যদিকে, বাজারে নতুন বন্ড আনার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘এই সকল বন্ডকে জনপ্রিয় করতে বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে প্রকল্পগুলো। এই বন্ড বাজারে এলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়বে সিটি করপোরেশনের। একই সঙ্গে গতিশীল হবে পুঁজিবাজার; বাড়বে বিনিয়োগ। আর সরকারি প্রকল্পে সরাসরি অংশীদার হবে দেশের জনগণ।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে বাবাকে না পেয়ে ১৪ বছরের এক ছাত্রকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় টেকনাফ থানার ওসির অস্ত্র উদ্ধারের স্বীকারোক্তি নেওয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় চলছে। কেউ কেউ ‘টেকনাফে প্রদীপ যুগে ফিরছে’ বলে মন্তব্য করেন ফেসবুকে।
এদিকে গত ২৬ নভেম্বর ভোররাতে বাড়ি থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশ স্কুলছাত্রকে আটক করলে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। এর মধ্যেই পুলিশ শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, স্কুলছাত্রকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ওই স্কুলছাত্র টেকনাফের হ্নীলার দরগাহপাড়া এলাকায়। সে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য।
পুলিশের দাবি, গত ২৬ নভেম্বর ভোরে টেকনাফেরর হ্নীলার দরগাহপাড়া এলাকার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে টেকনাফ থানার ওসি গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। ওই সময় পালানোর চেষ্টাকালে স্কুলছাত্রকে আটক করা হয়। সে সময় তার কাছে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে বিদেশি অস্ত্র পাওয়া যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় আবদুল মোমেন বলেন, ‘একজন স্কুলপড়ুয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্রকে আমাদের চোখের সামনেই আটকের নাটক মঞ্চস্থ করে পুলিশ। আটককৃত শিশুটির বাড়িতে তল্লাশি করে কিছুই পায়নি, কিন্তু বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ মিনিটের দূরত্বে প্রবাসী নুরুল আমিনের বাড়ি থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
‘তখন আমরা বাকরুদ্ধ এবং ১৪ বছরের শিশুটি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। এরপর তার বাবার অস্ত্র বলে জোরপূর্বকভাবে স্বীকারোক্তি নেয় পুলিশ। বাবাকে না পাওয়ার কথা বলে তাকে অস্ত্রসহ ধরে নিয়ে যায় ওসি।’
গত ২৬ নভেম্বর ভোররাত তিনটা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশের কাছে খবর আসে যে, হ্নীলার দরগাহপাড়ার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপর কতিপয় ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্য অবস্থান করছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে একজনকে তার হাতে থাকা নীল রঙের শপিং ব্যাগসহ আটক করা হয়।
তার শপিং ব্যাগে কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাগে অস্ত্র ও গুলি আছে। সাক্ষীদের সামনে ব্যাগ তল্লাশি করে পাওয়া যায় একটি কালো রঙের বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি এবং ৪০ রাউন্ড নীল রঙের কার্তুজ। উক্ত মামলায় তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে, স্থানীয় নারী ও মৌলভী এবং আরেকজন পুলিশ সদস্য।’
মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আক্তার বলেন, ‘গত ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে আমার বাড়িতে পুলিশ প্রবেশ করে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে তল্লাশি করতে থাকে। একপর্যায়ে আলমারি থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ।
‘এগুলো উদ্ধারের পর শিশুটিকে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যান পুলিশ।’
আরেক সাক্ষী মৌলভী জামাল হোসাইন বলেন, ‘ভোরে মসজিদের ফজর নামাজের যাওয়ার সময় নিজেকে ওসি পরিচয় দিয়ে দাঁড় করান। ওই সময় শিশুটিকে তার বাড়ি থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় বের করে আনতে দেখি। এ সময় ওসি অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করার কথা বলে আমাকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলে, কিন্তু আমি না দিতে অপরাগত জানালে ধমক দেন ওসি।
‘এটা যে মামলার সাক্ষী আমি জানি না। আর অস্ত্রগুলো শিশুর কাছ থেকে পেয়েছে, আমি দেখিনি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে এক সহপাঠী বলে, ‘ক্লাসের মেধাবী ছাত্র কখনও অস্ত্র বহন করতে পারে না। এটা অস্ত্র অভিযানের নামে নাটক।
‘আইনের চোখে অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইনে উপযুক্ত বিচারে আমাদের কারও আপত্তি নেই, কিন্তু পুলিশ জোর করে স্বীকারোক্তির ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে কি অপরাধ করেনি? আমরা সাজানো অস্ত্র উদ্ধার মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু পুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলে খুবই মেধাবী।
‘সে তিনবার বৃত্তি পেয়েছে। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছেলে অংশ নিতে পারল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের কাছ থেকে জোর করে অস্ত্র উদ্ধারের স্বীকারোক্তি নেয় পুলিশ, কিন্তু অপরাধ ঢাকতে পুলিশ আবার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
‘এ ঘটনায় বর্তমান সরকারের কাছে তদন্তপূর্বক মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবি করছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীটি একজন নিয়মিত ছাত্র। সে খুব মেধাবী।
‘এখন তার পরীক্ষা চলছে। তাই ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের দাবি, ঘটনার দিন ভোরে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তার হাতে থাকা একটি নীল রঙের শপিং ব্যাগের ভেতর একটি বিদেশি পিস্তল, ছয়টি গুলি ও ৪০টি নীল রঙের কার্তুজ পাওয়া যায়। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ করা হয়।
পুলিশের স্বীকারোক্তির ভিডিও কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি এ কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সরকার গৃহীত কার্যক্রমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের টেকসই উন্নয়নের ‘থ্রি-জিরো তত্ত্ব’ যুক্ত করার চিন্তা করছে সরকার।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে এই তত্ত্বের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।
‘থ্রি-জিরো তত্ত্ব’ আর্থিক স্বাধীনতা, কর্মঠ জনশক্তি তৈরি এবং পরিবেশ উন্নয়নে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর একটি মডেল। এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সেগুলো হচ্ছে- জিরো দারিদ্র্য, জিরো বেকারত্ব ও জিরো নেট কার্বন নিঃসরণ। আর তা অর্জনে প্রয়োজন তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলাদা সম্মান পেয়েছেন তার এই থ্রি-জিরো তত্ত্বের জন্য।
এসডিজির লক্ষ্যসমূহের মূল পরিকল্পনায় রয়েছে- সবার জন্য কল্যাণকর পৃথিবী এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ।
থ্রি-জিরো তত্ত্বের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ বাসসকে বলেন, ‘আমরা এজডিজির সঙ্গে থ্রি-জিরো তত্ত্ব যুক্ত করার চেষ্টা করছি। এসডিজির ওপর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমাদের একটি কর্মশালা চলছে। সেখানে এই তত্ত্বের বিষয়ে আলোচনা করছি। আমরা চাই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সব পর্যায়ে থ্রি-জিরো তত্ত্বের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি হোক।’
তিনি বলেন, ‘এসডিজির লক্ষ্য পূরণের কার্যক্রমের মধ্যে থ্রি-জিরো তত্ত্ব রাখা হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস কারও ওপর এই তত্ত্বের প্রয়োগ চাপিয়ে দিতে চান না।
‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো- যার ভালো লাগবে তিনি এটি গ্রহণ করবেন এবং কাজে লাগাবেন। এ কারণে এসডিজির বাইরে সরকারের কোনো বড় পর্যায়ে থ্রি-জিরো তত্ত্ব নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’
থ্রি-জিরো তত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো- দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। এই তত্ত্বের ব্যাপারে অধ্যাপক ইউনূসের ভাষ্য, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। মানুষ এককভাবে দারিদ্র্য তৈরি করে না। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই তৈরি হয় দারিদ্র্য।’
ড. ইউনূসের মতে, ভালো চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। তিনি বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমরা জন্মেছি সমস্যা সমাধানের জন্য, কারও অধীনে চাকরি করার জন্য নয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারও অধীনে নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই।’
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী ও নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে ‘থ্রি-জিরো’ তত্ত্বকে বৃহৎ পরিসরে তুলে ধরেছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি সম্মেলনে নিজের ভাষণে এই তত্ত্ব উপস্থাপন করে বলেছেন, ‘এটি এক নতুন সভ্যতার জন্ম দেবে। গড়ে তুলবে এক নতুন পৃথিবী, যা সবার জন্য বাসযোগ্য হবে।
‘এই তত্ত্ব প্রয়োগ করে জীবনশৈলী পাল্টানো সম্ভব। পরিবেশের নিরাপত্তার জন্যই দরকার এই নতুন জীবনধারা বা লাইফস্টাইল। সেই যাপন চাপিয়ে দেয়া হবে না। তা পছন্দ করতে হবে। যুব সম্প্রদায় তা আনন্দের সঙ্গে ভালোবেসে গ্রহণ করবে। এভাবে যুবাসমাজের প্রত্যেকে নিজেদের ‘থ্রি-জিরো পারসন’ হিসেবে গড়ে তুলবে।
‘থ্রি-জিরো পারসন’ কেমন- তার ব্যাখ্যায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “সেই ব্যক্তি কার্বন নিঃসরণ করবে না। অর্থাৎ সে হবে ‘জিরো কার্বন’। সে সম্পদের একক মজুতদার হবে না। তার সম্পদ হবে সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক। অর্থাৎ সে হবে ‘জিরো-দরিদ্র' এবং এভাবেই তারা প্রত্যেকে উদ্যোগী হয়ে পূরণ করবে ‘জিরো-বেকারত্বের’ তৃতীয় শর্ত।”
অর্থাৎ মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বণ নিঃসরণ শূন্যে নামাতে পারলে দুশ্চিন্তামুক্ত ও বাসযোগ্য এক নতুন পৃথিবী গড়ে উঠবে।
ইউনূস সেন্টারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘পৃথিবীজুড়ে বর্তমানে প্রায় চার হাজার ৬০০টি থ্রি-জিরো ক্লাব রয়েছে, যার প্রতিটি অধ্যাপক ইউনূসের নতুন সভ্যতার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত। এসব ক্লাবের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে উঠেছে।
‘বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্রি-জিরো ক্লাব গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে এই ক্লাব সমানভাবে গড়ে ওঠেনি। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তির পক্ষে এই থ্রি-জিরো ক্লাব তৈরির আগ্রহ দেখানোটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। অধ্যাপক ইউনূসের থ্রি-জিরো তত্ত্বের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করতে হয়েছে।’
তিনি জানান, থ্রি-জিরো ক্লাব ইচ্ছে করলেই কেউ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় দেখা হয়। তারা যে কাজগুলো করছে সেগুলো গুরুত্ব সহকারে করছে কি-না এবং সেটি টেকসই কি-না, এসব দেখার পরই রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়।
টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রবক্তা অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘স্যার সবসময় বলেন- আমাদের সমাজে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করেছি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তরুণরা উপযুক্ত ব্যক্তি। কারণ তাদের মাথায় অনেক নতুন নতুন আইডিয়া আছে। তারা সেটা কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। এজন্য ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যারা রয়েছেন, তাদেরকে তিনি বলেন- তোমরা থ্রি-জিরো ক্লাব করতে পারো।’
চার থেকে পাঁচজন মিলে এই ক্লাব করা যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, থ্রি-জিরো তত্ত্বকে প্রকৃতপক্ষে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট ও মাইক্রো ফাইন্যান্সের পর ড. ইউনূসের নবীন প্রোগ্রাম হলো সামাজিক ব্যবসা। এই ধারণার মূল বিষয় হলো- একজন তার নিজের চাকরির ব্যবস্থা করবে, পাশাপাশি অন্যদের চাকরির সুযোগ করে দেবে। অর্থাৎ আমি একটি ঋণ নিয়ে একটি কাজ শুরু করলাম যেখানে আরও তিন-পাঁচজন লোক কাজ করবে। আর এই ব্যবসা থেকে যে মুনাফা আসবে তা জণকল্যাণে ব্যয় হবে।’
মুনাফার অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষা কিংবা পরিবেশের উন্নয়নে ব্যয় হতে পারে। এভাবে আমরা টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার মূল থিম হচ্ছে-এখান থেকে আমি কোন লাভ করব না। তবে আমার মূল টাকা ফেরত আসতে হবে। যাতে করে ওই অর্থ আবার অন্য আরেকটি সামাজিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায।
‘মুহাম্মদ ইউনূস আগে থেকেই বলতেন যে মাইক্রোক্রেডিটের সঙ্গে সামাজিক কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। সামাজিক কার্যক্রম মনকে তৃপ্তি দেয়। কারণ এতে মানুষ অনেক উপকৃত হয়।’
লামিয়া মোরশেদ জানান, আগামী জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য যুব সম্মেলনে (ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল) থ্রি-জিরো বিষয়টি রাখা হবে। খেলাধুলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনোদনের অংশ হিসেবে কাজ করে। এটাকে কিভাবে সামাজিক কার্যক্রমের অংশ বানানো যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। একটা টুর্নামেন্টে অনেক মানুষ অংশগ্রহণ করে। সেখানে যদি আমরা একটি থিম দেই যে আমরা জিরো ওয়েস্ট-এর দিকে এগিয়ে যাবো; আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করব না, আমরা রাস্তায় ময়লা ফেলবো না। এই বিষয়ে যদি আমরা সচেতনতা তৈরি করতে পারি তাহলে সমাজে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি-জিরো তত্ত্ব পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক ট্রেড বিভাগের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা সংস্থা র্যাপিড-এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের সব সূচকে অভীষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে ‘থ্রি-জিরো থিউরি’ অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। থ্রি-জিরো তত্ত্বের ধারণা বাংলাদেশে তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কৃষিসহ অন্যান্য খাতে একটি নতুন বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে। আমাদের দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না। অথচ উদ্যোক্তা বিকাশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’
ড. রাজ্জাক বলেন, ‘থ্রি-জিরো তত্ত্ব কাজে লাগানো গেলে দেশে সর্বস্তরে উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে এবং অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন করা যাবে।’
আরও পড়ুন:দেশের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত জাফলংয়ে সারাবছরই থাকে পর্যটকের ভিড়। তবে নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের ফলে দিন দিন সৌন্দর্য হারিয়ে মলিন হয়ে পড়ে জাফলং।
কেবল জাফলং নয়, পাথর কোয়ারি হিসেবে পরিচিত সিলেটের পর্যটন আকষর্ণীয় আরও পাঁচটি এলাকারও একই অবস্থা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব এলাকায় চলছে নির্বিচারে পাথর লুট। কেবল জাফলং আর সাদাপাথর থেকেই লুট হয়েছে দুশ’ কোটি টাকার পাথর। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান সত্ত্বেও পাথর লুট থামানো যাচ্ছে না।
পরিবেশের সুরক্ষা এবং পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখতে ২০১৬ সালে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা জারি করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারও আগে ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ঘণীভূত হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’
জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম কিছুদিন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কেবল গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকেই প্রায় দুশ’ কোটি টাকার পাথর নিয়ে গেছে লুটপাটকারীরা। এই লুটপাটে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে লুটপাটের এই মচ্ছবের পরও থেমে না থেকে জাফলং-সাদাপাথরসহ সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এ জন্য নতুন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছেন তারা।
অপরদিকে, পরিবেশকর্মীদের পক্ষ থেকে পাথর লুটপাট বন্ধ ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিবেশ ও পর্যটন সুরক্ষার দাবি উঠেছে। ফলে সরকার পরিবর্তনের পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে- পাথর উত্তোলন নাকি পরিবেশ ও পর্যটনের সুরক্ষার পথে হাঁটবে সরকার!
মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছর বন্ধ ছিলো পাথর উত্তোলন। ফলে জাফলংয়ের পিয়াইন ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উৎসমুখে (সাদাপাথর) বিপুল পরিমাণ পাথর মজুদ হয়েছে। স্রোতের তোড়ে উজান থেকে আসা পাথর স্তরে স্তরে মজুদ হয় দুই নদীর উৎসমুখে। এসব পাথরের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে জাফলং ও সাদাপাথরে পর্যটক সমাগম বাড়ছিলো।
তবে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার সময়টাকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়ে এই দুই জায়গা থেকে নির্বিচারে পাথর লুটপাট চালানো হয়। ৫ আগস্ট-পরবর্তী তিন দিনে দুই কোয়ারি থেকে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় লুট হয়েছে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার পাথর।
এই সময়টাতেহাজার হাজার শ্রমিক লাগিয়ে প্রভাবশালীরা রাত-দিন পাথর উত্তোলন করেন। লুটের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে এই দুই পর্যটন কেন্দ্র। পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পদ হারিয়েছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা। এছাড়া বিএনপির দুই নেতাসহ ১৪৪ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর দুটি মামলা করেছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সরকার পতনের পর প্রথম তিনদিন পুলিশসহ অনান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিলো। এই সুযোগে জাফলং থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।
আর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার ভাষ্যমতে, সাদাপাথর থেকে লুট হয়েছে ২০ কোটি টাকার পাথর। যদিও স্থানীয়দের দাবি, দুই কোয়ারি থেকে ১৪০ কোটি নয়, দু’শ কোটি টাকার উপরে পাথর লুট হয়েছে। কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু লুটের ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় তিনটি ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হলেও হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই কোয়ারিতে বালু ও পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের বেশিরভাগ বিএনপির রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনের প্রমাণ পেয়ে দলীয় পদ হারান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ।
এছাড়া পাথর লুটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সের নাম জড়িয়েছে।
জাফলংয়ে পাথর লুটের ঘটনায় বিএনপির এই তিন নেতাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট থানায় একটি ও পরিবেশ আদালতে অপর মামলা হয়েছে। এছাড়াও জাফলং, সাদাপাথর, লোভছড়া, ভোলাগঞ্জ ও শাহ আরেফিন টিলায় প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে পাথর জব্দ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, মামলা আর অভিযুক্ত বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ- কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পাথর লুট।
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে গত ৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনেও এমন অভিযোগ করা হয়। মো. ইসমাইল হোসেন নামে জাফলংয়ের এক ব্যক্তি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদদে চলছে পাথর লুট।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই পাথর উত্তোলন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তবে তৎকালীন সরকার এমন দাবি আমলে নেয়ৱনি। নতুন সরকার আসার পর আবার একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। এই দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর জাফলংয়ে বিশাল মানববন্ধন করা হয়। এতে বিভিন্ন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সমিতি অংশ নেয়।
পাথর উত্তোলনের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে জাফলং ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সামাজিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন খান আনু বলেন, ‘জাফলংসহ সব পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন, সংগ্রহ ও সরবরাহ করে দেশের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছেন পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই ঢলের সঙ্গে প্রচুর পাথর ভারত থেকে এই এলাকায় এসে জমা হয়। এসব পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাই পরিবেশের স্বার্থেই পাথর উত্তোলন করা প্রয়োজন।’
জাফলং স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখত বলেন, ‘পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রতিবছরই ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ পাথর আমদানি করতে হচ্ছে। এতে দেশে ডলার সংকট আরও বাড়ছে।’
তবে ব্যবসায়ীদের এসব দাবির সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ, জাফলংয়ে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও পাথর ভাঙার মেশিন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের পরিবেশ কর্মীরা।
২৩ অক্টোবর এসব দাবিতে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
এ প্রসঙ্গে বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে লুটপাট করে জাফলং ও সাদপাথরকে পাথরশূন্য করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার পাথর উত্তোলনের দাবিতে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই দাবি মানা হলে এসব পর্যটন এলাকা আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশারুল কবির বলেন, ‘দেশে চাহিদার খুব স্বল্পসংখ্যক পাথর সিলেটের কোয়ারিগুলোতে পাওয়া যায়। ফলে বড় অংশই ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে এমন দাবি সত্য নয়। কোয়ারি সচল হলে কিছু মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। কিন্তু দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহমুদ মুরাদ জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারি সচল করা হবে কী না এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত সরকার থেকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে এখন নিয়মিতই অভিযান চালানো হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জাফলং দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর একটি। এখানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটনকেন্দ্রটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশও হুমকির মুখে। ইসিএ ঘোষিত জাফলং থেকে সব ধরনের বালু ও পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একটি গোষ্ঠী বালু-পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জাফলংয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাটে ছয় বছর বয়সী শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে হত্যা করেছের তার সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার। আর এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন তার মা। রোববার ভোরে শিশুটি মরদেহ মারজিয়ার মা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন।
এমনটি জানিয়েছেন কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল। তিনি জানান, এই ঘটনায় গৃ্হশিক্ষিকা মার্জিয়া এবং তার মা আলিফজান বিবি ও তার আরেক দাদি কুতুবজানকে আটক করা হয়। তারা মুনতাহাদের পাশের বাসার বাসিন্দা।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে আরও তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন ও ইসলাম উদ্দিনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও অপরজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
শিশু মুনতাহা আটদিন নিখোঁজ থাকার পর রোববার ভোর ৪টার দিকে নিজেদের পুকুর থেকে ওর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুনতাহার সাবেক প্রাইভেট শিক্ষিকা ওকে অপহরণ করে হত্যা করেন। প্রতিবেশী ও মুনতাহার শিক্ষক সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ায় ক্ষোভ ছিল তার পরিবারের ওপর। এছাড়া মার্জিয়ার ওপর চুরির অপবাদ দেয়ায় সেই ক্ষোভ থেকেও তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
মুনতাহা কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। শিশুটি ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হয়। তার সন্ধান চেয়ে দেশ-বিদেশে অনেকে পুরস্কারও ঘোষণা করেন।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘গত রাতেই (শনিবার) সন্দেহবশত আমরা মুনতাহার হাউস টিউটরকে ধরে নিয়ে আসি। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হচ্ছিলো। তখন হাউস টিউটরের বাড়ির দিকে নজর রাখার জন্য রাতেই আমরা মুনতাহার পরিবারের সদস্যদের বলি।
‘ভোরের দিকে মুনতাহার পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাড়ির পাশের একটি ছড়ার মাটি খুঁড়ে মুনতাহার মরদেহ পাশের পুকুরে ফেলে দেন ওই হাউস টিউটরের মা আলিফজান বিবি। স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে আমাদের খবর দেন। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি এবং হাউস টিউটরের মা ও তার নানিকে ধরে নিয়ে আসি।’
মরদেহের গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল ও শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে হাউস টিউটর ও তার মা মুনতাহাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। পূর্ববিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।’
মুনতাহার চাচা কয়সর আহমেদ জানান, সাবেক গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুনতাহাকে অপহরণ করে হত্যা করে। পরে বাড়ির পাশে ডোবায় কাদায় পুঁতে রাখে। ভোরের দিকে সুমির মা আলিফজান বিবি সেই লাশ সরিয়ে নিতে গেলে জনতার হাতে আটক হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মার্জিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৩ নভেম্বর রাতেই মুনতাহাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলে রাখা হয়। সুমিকে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষোভ থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে মুনতাহা। পরে প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর থেকে তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
এদিকে এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ভোরেই গৃহশিক্ষিকা সুমির ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আর দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে মুনতাহার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
কানাইঘাট সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মুনতাহা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পুলিশ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কোনো ক্লু পাচ্ছিল না।
‘শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা মার্জিয়ার আচরণ সন্দেহজনক মনে করেন। পরে রাতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে মার্জিয়ার বাড়ির আশপাশে মাটি খোঁড়া আছে কী না খোঁজ নিতে বলেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের তথ্যমতে মুনতাহার স্বজনসহ স্থানীয়রা রোববার রাতভর মাটিখোড়া কোনো জায়গা আছে কী না খুঁজতে থাকেন। ফজরের আজানের আগ মুহূর্তে মার্জিয়ার মা আলিফজান বিবিকে হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা পার হতে দেখে স্থানীয়রা তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে কাদামাটি মাখা মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান তারা।
‘আটকের পর আলিফজান বিবি জানিয়েছেন যে মরদেহ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। রাতে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন তারা।’
আফসার উদ্দিন আরও বলেন, ‘মার্জিয়া মুনতাহার প্রতিবেশী ছিল। এক সময় ভিক্ষা করতেন মার্জিয়ার মা ও নানি। স্বামী-পরিত্যক্তা মার্জিয়া বাড়ির বাইরে গেলে মুনতাহাকে সঙ্গে নিতেন। সবাই তাকে বিশ্বাসও করতেন।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি সাদেকপুর। এই ইউনিয়নের একটি দাঙ্গাবাজ গ্রাম মৌটুপী। সাত হাজার মানুষের ওই গ্রামে রয়েছে দুটি প্রভাবশালী পরিবার- কর্তা বংশ আর সরকার বংশ।
সাদেকপুর ইউনিয়নে দুই বংশের নেতারাই বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার বংশের লোক। এর আগে তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হক কর্তা বংশের লোক। দুই বংশের দুই চেয়ারম্যান এখন তাদের নিজ নিজ বংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে দুই বংশের ১৭ জন খুন হয়েছেন। এতে কমপক্ষে শতবার সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বার বার মারামারি-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া নামে সরকার বাড়ির এক ব্যক্তি খুন হন। আহত হন অন্তত ৫০ জন। এর কয়েক দিন আগে ইকবাল মিয়া নামে একই বংশের এক যুবক খুন হন।
গত ঈদুল আজহার পরদিন নাদিম মিয়া নামে কর্তা বংশের এক ব্যক্তি খুন হন। এর আগে ২০০৫ সালে সরকার বাড়ির সরকার সাফায়েত উল্লাহ চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই ওবাইদুল্লাহ ও হেদায়েত উল্লাহ ও তার এক চাচা সায়দুল্লাহ মিয়া কর্তা বংশের লোকজনের হাতে খুন হয়।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এভাবে আরও বেশকিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ-ভাংচুর লেগেই আছে। এসব খুন-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও অর্ধশত মামলা আদালতে চলমান। আসামির সংখ্যা দুই বংশের কয়েক শ’ হবে।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, দুই বংশের নেতৃত্ব দেয়া দু’জন বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান কেউ এলাকায় থাকেন না। নিজেদের বাড়িঘর থাকলেও তারা ভৈরব শহরে বসবাস করেন। আর প্রভাব বিস্তারের জন্য নেপথ্যে থেকে এলাকায় ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখেন।
একাধিক খুনের মামলার আসামি সরকার বংশের ‘মাথা’ মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার ও কর্তা বংশের ‘কর্তা’ তোফাজ্জল হক। তারা কখনও আদালত থেকে জামিন নেন, আবার কখনও নেন না। পুলিশের ভাষায় তারা পলাতক।
মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মৌটুপী গ্রামে যায় না। ঝগড়া-সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিখ ওই গ্রামে যেতে চায় না। কারণ দাঙ্গাবাজ গ্রামে যেতে পুলিশও ভয় পায়। কখনও গেলেও ব্যাপক আয়োজন করে অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে দল বেঁধে যেতে হয়। নয়তো উল্টো পুলিশকেই হামলার শিকার হতে হয়।
স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বহুবার চেষ্টা করেও দুই বংশের বিরোধ মীমাংসা করতে পারেননি। বিশেষ করে দুই চেয়ারম্যান মীমাংসায় সম্মতি দেন না। তারা মামলা জিইয়ে রাখতেই যেন বেশি আগ্রহী। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত। কারণ মামলা হলেই তাদের অর্থ-বাণিজ্য জমে ওঠে। কোনো পক্ষ কোনো ঘটনায় মামলা করলে আসামি করার ভয় দেখিয়ে তারা লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। আবার চার্জশিট থেকে নাম প্রত্যাহারের নামেও চলে তাদের ‘বাণিজ্য’। তবে তারা দু’জনই এসব কথা অস্বীকার করেছেন।
মৌটুপী গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা অন্য বংশের লোক হয়েও এসবের বাইরে থেকে বাঁচতে পারি না। কোনো না কোনো বংশকে সমর্থন করতে হয়।
‘গত ৫৪ বছরে এই গ্রামে কমপক্ষে দেড় ডজন খুন হয়েছে, আহত হয়েছে হাজারের উপরে। মামলা হয়েছে শত শত। এসব বিরোধের হোতা দুই বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ ও তোফাজ্জল হক।’
একই গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মৌটুপী গ্রামে দুজন নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ ধরে ঝগড়া-বিবাদ ও খুনোখুনি চলছে। এই দু’জনই ঝগড়ার হোতা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে মৌটুপী গ্রাম নীরব হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কর্তা বাড়ির নাদিম খুন হলে সরকার বাড়ির অন্তত দুশ’ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পালিয়ে যায় সরকার বাড়ির শত শত পরিবারের লোকজন। পরে সরকার বংশের ইকবাল খুন হলে কর্তা বংশের শতাধিক বাড়িঘর লুটপাট হয়।
‘গত বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি এলে আবারও সংঘর্ষ বাধে। খুন হন কাইয়ূম। মানুষ বলছে, দুই চেয়ারম্যানকে পরবাসে পাঠালে গ্রামের বিরোধ থামবে, নতুবা নয়।’
এ বিষয়ে সরকার বংশের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্তা বাড়ির বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক এই বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে। তারা আমার দুই ভাই ও চাচাকে হত্যা করেছে। গত শুক্রবারের সংঘর্ষের নায়ক সে, আমি নই। গ্রামের যেকোনো মীমাংসায় আমি রাজি। কিন্ত তোফাজ্জল হক মীমাংসায় রাজি নয়। গ্রামের দাঙ্গার জন্য সে-ই দায়ী।’
অপরদিকে কর্তা বংশের বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, ‘৫৪ বছর আগে সাফায়েতের বাবা আমার বংশের কফিল উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে। ক’দিন আগে খুন করল আমার ভাই নাদিমকে। আরও কয়েকজনকে খুন করেছে। আমি গ্রামে থাকি না, থাকি ভৈরব শহরে। অথচ একাধিক ঘটনায় সাফায়েত আমাকে মামলার আসামি করেছে। তাহলে কিভাবে মীমাংসা করব।’
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামের দুই চেয়ারম্যানের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার চলছে জানলাম। স্থানীয় জনগণ মৌটুপীকে দাঙ্গাবাজ গ্রাম বলে ডাকে।
‘আমি দুই মাস হলো এই থানায় যোগদান করেছি। এরই মধ্যে একজন খুন হলো মৌটুপী গ্রামে। এ নিয়ে দুই বংশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা দমন ও নিয়ন্ত্রণে আমি চেষ্টা করছি।’
ভারতীয় সংবাদ আউটলেট ‘দ্য ওয়্যার’-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিভাবে একটি সফল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে এবং এটি ভবিষ্যতে প্রতিবেশী ভারতের একটি শক্তিশালী মিত্র হয়ে উঠতে পারে তা তুলে ধরা হয়েছে।
ভারতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা বিনোদ খোসলা ২৭ অক্টোবর নিবন্ধটি লিখেছেন।
স্বনামধন্য ভারতীয়-আমেরিকান এই ব্যবসায়ী মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনায় পৌঁছতে পারলে তাতে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
নিবন্ধে তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে একজন গর্বিত আমেরিকান ও ভারতের সন্তান হিসেবে তা নিয়ে আমি আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেন।
খোসলা বলেন, ইউনূস, যাকে আমি বন্ধু মনে করি এবং কয়েক দশক ধরে চিনি; শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের অনুরোধে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নতুন আইডিয়ার শক্তিতে বিশ্বাসী ও টেকসই উদ্যোগ এবং এর প্রভাব নিয়ে আগ্রহী এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউনূস তার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তাতে আমি বিস্মিত। আমি আমার বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বে সব প্রাণের জন্য মঙ্গলজনক এমন প্রযুক্তির জন্য কাজ করি।
‘ড. ইউনূস অন্তহীন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মডেলগুলোর একটি সিরিজ তৈরি করেছেন।’
বিনোদ খোসলা উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে ড. ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কয়েক হাজার দরিদ্র নারীর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সফল হয়েছিলেন, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
‘বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘আমি জনজীবন ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহী। অধ্যাপক ইউনূস ১৯৯৫ সালে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যেটি এক দশমিক আট মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম এবং এক মিলিয়ন ক্লিন কুক স্টোভ ইনস্টল করেছে। এটিও মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেই হয়েছে।
‘গ্রামীণ ব্যাংকের অবদানও এখানে স্মরণীয়, যা ১০ মিলিয়নেরও বেশি দরিদ্র নারীকে ৩৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। এই ক্ষুদ্রঋণ থেকে অনেকেই উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন। ভারত এবং অন্য অনেক দেশেও একই মডেলে কাজ হয়েছে।’
নিবন্ধে বলা হয়, ‘জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ১৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোক বাস করেন। এটি এমন একটি দেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস করে। অথচ এই দেশটির আয়তন ইলিনয় রাজ্যের সমান।’
ভারতীয় এই ব্যবসায়ী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ইউনূসের সাফল্য কামনা করেন। আমি তাদের অন্যতম। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন যারা তাকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করতে চায়; অনেকে তার নেতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা বয়ানও ছড়িয়ে যাচ্ছেন।’
খোসলা ড. ইউনূসের মূল্যবোধ, তার কাজের পদ্ধতি ও প্রাথমিকভাবে তার নেতৃত্বের ফলাফল নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দুই মাসে তিনি পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফিরিয়েছেন, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর সুরক্ষায় সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে (যেটি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের সময় বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল)।
‘তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কার্যকরভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং নিউ ইয়র্কে থাকাকালীন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ৫০টিরও বেশি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন।’
‘এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
খোসলা বলেন, ‘আমি তাকে তার ক্যারিয়ার জুড়ে যে মূল্যবোধ এবং পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখেছি, নতুন ভূমিকায় কাজ করার সময়ও তিনি তা প্রয়োগ করেছেন। সেগুলো হলো- মূল বিষয়গুলোতে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, কোনটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করার জন্য পরীক্ষা করা, নাগরিকদের (বিশেষ করে যুবকদের) ব্যবহারিক ও গঠনমূলক কাজে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করা, ধর্ম-লিঙ্গ-জাতি নির্বিশেষে সব মানুষকে সম্মান করা। তিনি বাস্তববাদী ও সেসঙ্গে প্রচণ্ড উদ্যমী (৮৪ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও)।’
ড. ইউনুসের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে ভারতীয় এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘একটি সরকারকে নেতৃত্ব দেয়া সামাজিক ব্যবসা ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চালানোর চেয়ে বহুগুণ বেশি কঠিন হতে পারে। ক্ষমতা হারানো-পূর্ববর্তী সরকার দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত একটি গোষ্ঠীও চায় তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হোক। ‘বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি দ্রুত ফিরতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি ইউনূস তার কাজ করে যেতে পারবেন।’
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের জনগণ এবং সারা বিশ্বের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে ৯২ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৯৮ জন বিশ্বনেতার এক চিঠিতে নিজেও সই করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন বিনোদ খোসলা। তিনি বলেন, ‘সেখানে বলা হয়েছিল- অধ্যাপক ইউনূসকে শেষ পর্যন্ত সমগ্র দেশের, বিশেষ করে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য মুক্ত হতে দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত, যে আহ্বান তিনি ছয় দশক ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে এবং সাফল্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছেন।’
‘এই ভূমিকায় তার প্রথম দিকের সাফল্য বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শুভ সূচনা। ব্যর্থ বাংলাদেশের তুলনায় একটি সফল বাংলাদেশ ভারতের শক্তিশালী মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
বিনোদ খোসলা বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত অধ্যাপক ইউনূসের এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন ভূমিকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখার দিকে মনোনিবেশ করা। কারণ বাংলাদেশের সম্ভাবনায় পৌঁছানোতেই ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষিত হবে।’ সূত্র: বাসস
আরও পড়ুন:
নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় এক মাস ধরে বেড়া দিয়ে ৯টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্থানীয় হাসান মল্লিকসহ প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির নির্দেশে এ বেড়া দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক মাস আগে রাস্তার পাশে বেলাল মল্লিকের লাউ-কুমড়ার গাছ খায় একটি ছাগল। সে ছাগলকে বেলাল মল্লিক মারধর করলে প্রাণীটির একটি পা জখম হয়।
ওই ঘটনা শুনে ছাগলের মালিক হাসান মল্লিক ক্ষিপ্ত হয়ে বেলালকে মারধর করেন এবং স্থানীয় কিছু মাতুব্বরের পরামর্শে বেলাল মল্লিক, তার প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনসহ ৯টি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার তিন দিকে বেড়া দেন।
এমন পরিস্থিতিতে বেলাল মল্লিক গত ৪ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ করেন, কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই চলে যায়। এতে হাসান মল্লিক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
বেলাল মল্লিকের অভিযোগ, তিনি এক রাতে প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে বিলের মধ্যে মাছ ধরতে গেলে সেটি টের পেয়ে যান হাসান মল্লিক। পরে হাসান, জব্বার, দুলাল এবং তাদের পরিবারের নারীদের সঙ্গে নিয়ে বেলাল মল্লিককে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হয়। ওই রাতেই বেলালকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বেলাল মল্লিকের অভিযোগ, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে পরিবার নিয়ে তিনি অবরুদ্ধ। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তার ভাষ্য, বেড়া দেয়া লোকজন বর্তমানে চাঁদা দাবিও করছেন। চাঁদার টাকা না দিলে এইবার আর বেঁচে থাকার সুযোগও দেবে না বলে হুমকি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়িও যেতে পারছি না। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে আইনগত সহযোগিতা চাই।’
এ বিষয়ে হাসান ও জব্বারের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, মাতুব্বরের হুকুমে তারা বেড়া দিয়েছেন। তার অনুমতি ছাড়া বেড়া কখনোই সরাবেন না। তা ছাড়া ছাগলকে মারধরের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
স্থানীয় মাতুব্বর আক্কাস আলী বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা সম্ভব ছিল, তবে বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে নওগাঁর ভীমপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দীন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বেড়া সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আজ পর্যন্ত যে বেড়া সরিয়ে নেয়া হয়নি, তা আমার জানা নেই। পরবর্তী সময়ে কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য