জয়পুরহাট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শাম্মিম আজিজ সাজকে সভাপতি এবং সাবিনা চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।
সোমবার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে দুপুর সাড়ে ১২টায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেবেকা সুলতানা।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাফিয়া খাতুন।
অধিবেশন সঞ্চালনা করেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজা মণ্ডল রিনা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন,‘সেবার মানসিকতা নিয়ে আমাদের রাজনীতি করতে হবে। শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ, পদকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করলে তা কখনও মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। সেই রাজনীতি টেকসইও হবে না।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা গেলে দলের অনেক ত্যাগী নেতার মূল্যায়ন হতো, নেতৃত্বের পথও বিকশিত হতো।’
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন রোখসানা, শেখ আনারকলি পুতুল, সুরাইয়া বেগম ইভা, চেমন আরা তৈয়ব, আঞ্জুমান আরা আয়না, নুশরাত ফারজানা ইলোরা, শাহিনা আক্তার সাথী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মণ্ডল ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম সোলায়মান আলী।
জয়পুরহাট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি শাম্মিম আজিজ সাজ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেটের স্ত্রী। আর সাধারণ সম্পাদক সাবিনা চৌধুরী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম সোলায়মান আলীর স্ত্রী।
ডেলিগেটদের চোখ ধাঁধানো হলুদ শাড়ি
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অংশ নেয়া ডেলিগেটদের জন্য নির্ধারিত আসন ছিল শিল্পকলা ভবনের দর্শক গ্যালারি। সকাল থেকে সেই গ্যালারি পূর্ণ হয়ে যায়। সবার পরনে ছিল হালকা কাজ করা হলুদ শাড়ি। ডেলিগেটদের একই রঙের পোশাকে সম্মেলনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
সম্মেলনে প্রথম অধিবেশন শুরুর পর ডেলিগেটদের ৮০০ হলুদ শাড়ি উপহার দেন হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
রমজানের শুরুতেই ফরিদপুরের সবচেয়ে ব্যস্ততম আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজে মেরামত কাজ শুরু হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জনচলাচল। এতে শহরবাসী নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রিজটির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে জনগণের স্বার্থেই সেখানে সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে।
আগামী চার থেকে পাঁচদিন চলবে এ কাজ। এতে এ কয়েকদিন শহরবাসীর যাতায়াতে একটু সমস্যা পোহাতে হবে। শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ করে জনসাধারণের পাশাপাশি যান চলাচল শুরুর দাবি দীর্ঘদিনের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমার নদের এই বেইলি ব্রিজে সবধরনের চলাচল বন্ধ করে সেখানে মেরামত কাজ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। আর ব্রিজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শহরের মানুষ হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারে যেতে আলীপুর-গোয়ালচামট পথে আলীমুজ্জামান বড় ব্রিজ কিংবা পূর্ব খাবাসপুর-রথখোলা পথের জোড়া ব্রিজ ব্যবহার করছে।
শহরের ঝিলটুলীর বাসিন্দা মোজাম্মেল হক মিঠু বলেন, ‘ব্রিজটি দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকায় মাছ বাজারে যেতে আমাদের অনেক পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। আর শহরের মধ্যে একমাত্র মাছ বাজার ব্রিজটি হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারেই স্থাপিত।’
কুমার নদের উপরে মুজিব সড়কে স্থাপিত ব্রিজটির এক প্রান্তে ফরিদপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজার এবং অন্য প্রান্তে নিউ মার্কেট ও তিতুমীর বাজার এলাকা। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদের এই ব্রিজটি একসময় যান ও জনচলাচল করলেও ৮৮ এর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে বন্ধ করে দেয়া হয় যানবাহন চলাচল।
এরপর শুধু হেটেই চলাচল হচ্ছে ব্রিজটি দিয়ে। এরপর সেখানে আবার একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করার পর ২০১২ সালে সেটি দুর্ঘটনায় ধসে যায়। ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুমার নদের উপর ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য আলিমুজ্জামান বেইলি ব্রিজটি সংস্কার করে জনচলাচলের ব্যবস্থা করে। তবে শুধুমাত্র হেটেই ব্রিজটিতে চলাচল করা যেত। শহরের মানুষ নিত্য প্রয়োজনে এই পথে চলাচল করে।
শহরের সাধারণ বাসিন্দাদের দাবি, এই বেইলি ব্রিজটি অপসারণ করে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রীজ নির্মাণ করা হোক।
শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা শামীম হোসেন, মুন্সিবাজারের সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ফরিদপুরের এই বেইলি ব্রিজটি তুলে সেখানে স্থায়ীভাবে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হলে শুধু চলাচলেরই সুবিধা হবেনা। বরং হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারে প্রবেশমুখ হতে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় পর্যন্ত সড়কে যানজট নিরসন হবে।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘বেইল ব্রিজটি সরিয়ে সেখানে বড় ব্রিজ করে ওয়ানওয়ে করে দেয়া উচিত। তাতে করে র্যাফেলস ইন মোড় থেকে জনতা ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত হবে এবং মানুষের যাতায়াত সহজতর হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ফরিদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, প্যানেলে জং পড়ে গেছে।
এ ছাড়া আরও কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। চার পাঁচদিন লাগবে কাজ শেষ হতে। শহরবাসীর নিত্যদিনের যাতায়াতের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এই ব্রিজটি ১৯৩৫ সালে নির্মিত। তৎকালীন জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান চৌধুরী শহরের বুকে কুমার নদের উপর সর্ব প্রথম কোনো সেতু হিসেবে এই সেতুটি নির্মাণ করেন। লোহার পিলারের ওপরে পাথরের ঢালাইয়ের এই সেতুটি ১৯৮৮ সালের বন্যায় ধসে যায়।
আরও পড়ুন:রোজায় ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম দেশীয় কাপড়ের পাইকারি বাজার নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী শেখেরচর বাবুরহাট। এখান থেকে কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের নানা প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা।
কাপড়ের চাহিদা মিটানো এই হাটে প্রতি বছরের মতো নিত্য নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ বছর প্রস্তুতকৃত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হওয়া কাপড়ের মূল্য হ্রাস পেয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান ব্যবসায়ীরা।
রোজার প্রথমদিন শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনয়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে বৃহত্তর এই হাট ঘুরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ীর দোকান। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন জমে ওঠে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের হাট বাবুরহাট।
এখানে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রিপিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, বিছানার চাদরসহ প্রায় সব ধরনের কাপড় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের বাজারে খুচরা কাপড় বিক্রির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন এই হাটে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুতার দামে অস্থিরতার কারণে এবার দেশের সব বাজারেই কাপড়ের দাম বেশি। তবে বাবুরহাটে সর্বনিম্ন পাইকারি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে সব ধরনের কাপড়। তাই এই হাটে রোজার শুরুতে থাকে কাপড় বিক্রির ধুম। এই হাট তিনদিন ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকে। এ ছাড়া এ হাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাহিরেও। সকল সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।’
কুষ্টিয়া থেকে কাপড় কিনতে এই হাটে প্রথম আসেন, আবুল হোসেন নামে খুচরা বিক্রেতা। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মুখে শুনেছি বাবুরহাটের কথা। আজ রোজার প্রথম দিন আসলাম। তবে অন্যান্য শহরের বাজারগুলো থেকে এই হাট থেকে পাইকারি কাপড় ক্রয়ে সুলভ মূল্য পেয়েছি।’
ঢাকা বকশি বাজারের এক নারী উদ্যোক্তা তাবাসসুম আক্তার মিম নিউজবাংলাকে জানান, করোনাকালীন সময় এই হাট থেকে দেশীয় থ্রী, বুটিকস, ওড়না নিয়ে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পবিত্র ঈদুল ফিতরে অনেক অর্ডার পরেছে, তাই আগে থেকেই কাপড় কিনে মজুত করছেন। এসব কাপড় অনলাইনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করছেন তিনি। আজ দুই লাখ টাকার পরিমাণ বিভিন্ন প্রকারের কাপড় কিনে ট্রান্সপোর্টে যশোর পাঠিয়েছেন তিনি।
এই বাবুরহাট বাজারের পাশে রয়েছে বিভিন্ন ট্রাসপোর্ট এসেন্সী। এসব এসেন্সীর মাধ্যমে নিরাপদে কাপড় পৌঁছে যায় বিভিন্ন জেলা শহরসহ বিদেশেও।
নিউ খাজা ট্রাসপোর্টের পরিচালক আল-আমিন ভূইয়া প্রধান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেলেও মালামাল ট্রাসপোর্টের জন্য পরিবহন ভাড়া তেমন বাড়েনি। কারণ আমরা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সুলভ সাশ্রয়ে ট্রাসপোর্ট সেবা দিয়ে থাকি।’
শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি প্রতি বছরের মতো এবারও দোকানে দোকানে নিত্যনতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। প্রতি বছর রমজানে ২০০ কোটি টাকার উপরে কাপড় বিক্রি হয় এ হাটে। এবার তুলনামূলক ক্রেতা কম হলেও বিক্রির পরিমাণ ঠিক আছে।’
তবে সুতার বাজার অস্থিতিশীল ও কাপড় তৈরির কাচাঁমালের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার কারণে কাপড়ের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে বাবুরহাটে পাইকারি ক্রেতার কম সমাগম হলেও সব সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ী এই নেতা।
আরও পড়ুন:খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার দুপুর ২ টার দিকে নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি এলাকার লিন্ডা ক্লিনিকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শেখ আনসার আলী দিঘলিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক।
পুলিশের ভাষ্য,আনসার আলী জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান বলেন, নিহত আনসার চেয়ারম্যান জাকির হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার সদরে জামিল মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীর ধসে এক নৈশপ্রহরী নিহত হয়েছেন।
শহরের চকফরিদ এলাকায় শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই শিশু ও এক নারীকে আহত অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
৫৫ বছরের আয়নুল হক সিরাজগঞ্জ সদরের চরনান্দিনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় এক মাস ধরে জামিল মাদ্রাসায় নৈশপ্রহরীর পদে চাকরি করছিলেন।
আহতরা হলেন সদরের মাটিডালী এলাকার বাসিন্দা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোছা. মুক্তা শিবগঞ্জের চণ্ডিহারা এলাকার মো. হামিম,কাহালুর মো. মেফতাজুল। এই দুই শিশু জামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
ছিলিমপুর মেডিক্যাল ফাঁড়ির এএসআই আব্দুর রহমান আহতদের নাম-পরিচয় নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জামিল মাদ্রাসার দেয়াল ধসে তিনজন আহত হন। তাদের ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উদ্ধার করে এনে হাসপাতালে ভর্তি করান।
স্থানীয়রা জানায়, মাদ্রাসার দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের এই সীমানা প্রাচীরটি কয়েক মাস ধরে হেলে পড়েছিল। ধসে পড়া সীমানা প্রাচীরের পাশে মাদ্রাসার রান্নাঘর। এখানে ছোট একটি পকেট গেট আছে। এ পথে মাদ্রাসার স্টাফ ও নারী অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাক্ষাৎ করেন।
মাদ্রাসার বাবুর্চির মো. বেলাল জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরের রান্নার কাজ চলছিল। আর প্রহরী আয়নুল পকেটে গেটের ওখানে ছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দ শুনে তারা ছুটে এসে দেখেন দেয়াল ধসে পড়েছে। পরে কাছে গেলে আয়নুলকে দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে থাকতে দেখেন। দেয়াল ধসে এক শিক্ষার্থীর মা, দুজন আহত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সদরের বনানী ফাঁড়ির এসআই সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘আয়নুল হক প্রায় মাস খানেক হলো মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করেন। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা রওনা দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের কথা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:এক বছর ধরে ক্রমাগত কাশিতে ভুগছিলেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার নুর আলম। তিনি আধুনিক চিকিৎসা পাওয়ার আশায় রামপাল থেকে খুলনা শহরের বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এসেছিলেন। তবে ক্লিনিকে প্রবেশ করার আগে প্রধান ফটকে এসে থমকে যান তিনি।
নুর আলম বলেন, ‘আমি ভাবছিলাম, আমি কি ভুল করে এখানে চলে এসেছি। চুর্ণবিচুর্ণ দেয়াল ও টিনের ছাদের ভবন দেখেই আমি বুঝে গেছি, ভেতরে কোনো ভালো চিকিৎসা হয় না।’
‘যেহেতু অনেক দূর থেকে এসেছি, আবার রোগও সারছে না। তাই আশা নিয়ে ভেতরে গেলাম। তবে সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। একজন কর্মচারী পরীক্ষার জন্য আমার কফ সংগ্রহ করেন। পরে একজন নার্স রিপোর্ট দেখে আরেক কর্মচারীকে বলেন আমাকে কিছু ওষুধ দিতে।’
‘সেখান থেকে ওষুধ নিয়ে যখন বের হচ্ছিলাম, তখনো ক্ষোভে বুকের ব্যাথা আরও বেড়ে গেল। কারণ এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে আমাকে ৬০০ টাকার বেশি খরচ করতে হয়েছে। আমি মনে করি আমার এই টাকাটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।’
খুলনার সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নুর আলম।
সেখানে ১৭ বছর ধরে কাজ করা একজন কর্মচারী জানান, তিনি যোগদান করে একটি এক্স-রে মেশিন দেখতে পেয়েছেন। তবে কখনো সেই মেশিনটি ব্যবহার করা হয়নি। তার মতে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেশিনটি অকেজো হয়ে আছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে, টিনের ফুটা দিয়ে পানি পড়ে। এতে মেঝে ও দেয়াল ভিজে যায়। এ ধরনের ভবনে কখনো ভালো চিকিৎসা হতে পারে না।
‘বক্ষব্যাধি ক্লিনিক হলেও, এখানে প্রায় সব যক্ষ্মা রোগীরা আসেন। শুধু থুথু পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্ত করা প্রায়ই সম্ভব হয় না। একটি ভালো এক্স-রে মেশিন এখানে পরীক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজন।’
একজন মেডিক্যাল অফিসারই ক্লিনিকের একমাত্র চিকিৎসক। কিন্তু প্রায়ই তিনি অনুপস্থিত থাকেন। আর এখানে ১২ জন জনবলের মধ্যে ৫টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
ক্লিনিকের একমাত্র পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘আমাদের ভবনে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রতিদিন পাশের পুকুর থেকে বালতিতে করে পানি নিয়ে আসতে হয়। কারণ কফ সংগ্রহ করার সময়ে রোগীরা পানি চাই।’
ক্লিনিকের আরও কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা ধানাধীন নিউ মার্কেট এলাকায় ১৯৬২ সালে ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে যার দেয়ালের প্লাষ্টার খুলে পড়ছে, টিনের চালগুলি ফুটা হয়েছে গেছে।
শুধু এই ক্লিনিকটি নয়, খুলনা শহরের মীরেরডাঙ্গায় ৭ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত ১০০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অবস্থাও একই। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৫ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হলেও গত ৫৮ বছর সেখান নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়নি।
বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে চলছে কোনো মতে চিকিৎসা। দ্বিতল ভবনের সবগুলো ওয়ার্ড ও রুমের ছাদের প্লাষ্টার খসে পড়ছে। ভবনের ছাদ স্যাঁতসেঁতে হয়ে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। রোগীদের জন্য টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্লাড, এক্সরে, ইসিজি ছাড়া অন্য কোনো রোগের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই।
১০০ শয্যার ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের ১৮৪ জন জনবলের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২২ জন। এর মধ্যে দুজন বিশেষজ্ঞসহ ১১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ও বাকি চারজন মেডিক্যাল অফিসার এখন কর্মরত রয়েছেন, বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক সেখানে নেই।
তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু আন্তঃবিভাগে ভর্তিকৃত যক্ষ্মা বা টিবি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী ছয় মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয়। জরাজীর্ণ ভবন এবং পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনগুলো মেরামতের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (এইচইডি) এসব ভবন পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।’
খুলনার সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ বলেন, ‘বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। তবে সমস্যা হলো, চিকিৎসকরা সেখানে কাজ করতে চান না। সেখানে কেউকে পদায়ন করলে, তারা নানাভাবে বদলি হয়ে যান।’
পর্যবেক্ষণ চিকিৎসা বঞ্চিত যক্ষ্মা রোগীরা
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, ‘যক্ষ্মা এমনি একটি রোগ যা নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেন। এর মধ্যে একনাগাড়ে রোগীকে ৬ মাস থেকে ৯ মাস ওষুধ সেবন করতে হব এবং কোনো একদিন বিরত থাকা উচিত নয়।
‘প্রায় দেখা যায়, প্রথম ১০ দিন ওষুধ সেবনের পরে রোগীর কাশি বন্ধ হয়ে গেছে ও বুকে ব্যাথা কমে গেছে। তখন তিনি ওষুধ সেবন করা বন্ধ করে দেন। এতে কিছুদিন পরে তার আবারও সেই রোগ শুরু হয়। আর পরে যেটা হয়, সেটা আরও ভয়ংকরভাবে হয়।’
তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা একটি রোগ। ওষুধের ডোজ পূর্ণ না করলে সেই সব ব্যাকটেরিয়া মারা যায় না। তাদের কিছু ব্যাক্টেরিয়া বেঁচে থাকে। তাখন ওষুধে কাজ করতে চায় না। মাল্টি ড্রাগ বা ড্রাগ রেজিস্টেন্স। আগে যেখানে ৬ বা ৯ ওষুধ খেলে রোগ ভালো হত, শরীরে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্স সৃষ্টির কারণে এবার সেই রোগীকে ওষুধ সেবন করতে হতে পারে ১৮ মাস পর্যন্ত। আর এই যক্ষা ছড়িয়ে যেতে পারে ফুসফুসসহ এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও, যেমন মস্তিষ্ক, কিডনি বা মেরুদণ্ডে।’
তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগীদের জন্য সব থেকে কর্মকরী চিকিৎসা হল সরাসরি পর্যবেক্ষণ চিকিৎসা (ডাইরেক্ট অবজারবেশন ট্রিটমেন্ট –ডিওটি)। যেখানে একজন অভিজ্ঞতা সম্মন্ন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মী যক্ষ্মা রোগীকে নির্ধারিত ওষুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে পারেন। ডিওটি’র মাধ্যমে রোগীরা দ্রুত ডোজ সম্পন্ন করেন, অসম্পূর্ণ চিকিত্সার ফলে ড্রাগ রেজিস্টেন্স সৃষ্টি হয় না, একই রোগী পুনরায় সংক্রমিত হন না ও অন্যকে সংক্রমিত করেন না। আমাদের দেশে বক্ষব্যাধি হাসপাতালগুলির এই সেবা নিশ্চিত করা উচিত। তবে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ওপর এই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তা সঠিক মনিটরিং কম হয়।’
যক্ষ্মায় প্রতিদিন দেশে মারা যায় ১২০ জন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অধীনে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি), যক্ষ্মা প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার (ডাব্লিউএইচও) ২০২২ সালের যক্ষ্মা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এনটিপি জানায়, বিশ্বব্যাপী বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ যক্ষ্মায় সংক্রমিত হয়, আর এর মধ্যে মারা যায় ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি।
এনটিপি’র লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘ডাব্লিউএইচও ২০২২ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ২০২১ সালের যক্ষ্মা রোগের পরিসংখ্যান রয়েছে। আর ২০২৩ সালের প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি, সেখানে ২০২২ যক্ষ্মা রোগের পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের নতুন করে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৬২ জন। এই সময়ে মোট ২৯ লাখ মানুষ যক্ষ্মার পরীক্ষা করেছেন। আর মারা গেছেন ৪২ হাজারের বেশি। অর্থাৎ প্রতিদিন মারা যান প্রায় ১৫৫ থাকে ১২০ জনের কাছাকাছি।’
ডাব্লিউএইচও পৃথিবীর ৩০ টি দেশকে উচ্চ যক্ষ্মাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর করোনার পরে বৈশ্বিক মহামারিতে যক্ষ্মারই অবস্থান রয়েছে বলে জানান তিনি।
ডা. মো.মাহফুজার রহমান সরকার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনো যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে অনেকটা সফল হয়েছে।
ডাব্লিউএইচও’র প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত প্রতি লাখে মারা যেত ৫৪ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন ও ২০২১ সালে মারা গেছে ২৫ জন। সুতরাং আমরা মৃত্যুর হার অনেক কমিয়েছি।’
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে এনটিপি পরিচালিত ৭টি হাসপাতাল, ৪২টি ক্লিনিকসহ সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেয়া হয়। এ সকল হাসপাতালে ৫০০ বেশি জিন এক্সপার্ট মেশিন, ১১৯টি মাইক্রোস্কোপ, ২০৫টি ডিজিটাল এক্সরে ও ৩৮টি ট্যুয়েন্ট রয়েছে, যা দিয়ে যক্ষ্মা রোগ শনাক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। শিক্ষার্থীদের দুপুরের ও রাতের খাবারের জন্য নির্ভর করতে হয় ডাইনিংয়ের ওপর।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ২০২১ সালে হলের খাবারের দাম ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করা হয়। দাম বাড়লেও মান না বাড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল অসন্তোষ।
এরই মধ্যে রোজাতে হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের দাম ২৫ টাকা থেকে এক লাফে ৩৫ টাকা এবং সেহরির দাম ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে প্রভোস্ট কমিটি। গত ২২ মার্চ প্রভোস্ট কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। এতেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এমনিতেই হলের খাবারের মান ঠিক নেই। ভর্তুকি না দিয়ে হঠাৎ দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়ে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের আয় বাড়েনি, উল্টো ব্যয় লাগামে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ ছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিল না। এতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হলের খাবারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি কোনো ধরনের ভর্তুকি দেয় না। হলের স্টাফদের বেতন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলকে ভর্তুকি হিসেবে ধরা হয়।
দান বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোতে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. স্বপন মিয়া ফেসবুকে লেখেন, ‘২০১৯ সালে ১ম বর্ষে থাকাকালে ২০ টাকার বিনিময়েও দুবেলা খাইতে পারিনি টাকা বাচানোর জন্য। একবেলা খেয়ে দিন পার করে দিসি। তাই খুব ভালো করে জানি ক্ষুধা কি জিনিস। ১ম বর্ষে যারা আছে তাদের জন্য ৩৫ টাকা আত্মহত্যার মত। অনেকের ২৫ টাকা দিয়ে দুবেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই, সেখানে ৩৫ টাকা অনেক বেশি। মাননীয় প্রভোস্ট, দয়া করে আমাকে ক্ষুধার্থ রাখবেন না। আমার খাবার নিশ্চিত করুন।’
আসাদ নেওয়াজ নামের এক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘মাননীয় প্রশাসন, দয়া করে আমাদের একটা জোরে লাথি মেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। কারণ এই তল্লাটে থাকার মতো অবস্থা আর রইল না। এবার সত্যই সেই বাপ-দাদাদের বলে যাওয়া কথাটাই সত্যি হচ্ছে। পেটে গামছা বেধে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার প্রতি বছর যে কোটি কোটি টাকা বাজেট দিচ্ছে, সেখান থেকে নূন্যতম একটা অংশ ভর্তুকি হিসেবে দিলেও তো আজ এই দিন দেখতে হতো না। এটা কোনোদিনও একটা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড হতে পারে না। একটা নোটিশ নেই, পূর্বের কোনো ঘোষণা ছাড়াই এভাবে দাম বাড়ালো। এটা কোনোদিনও আমরা মেনে নেবো না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এভাবে না খেয়ে মরে যেতে পারি না। সবাই এভাবে চুপ থাকলে এটাই ফিক্সড হয়ে যাবে।’
মিলন শেখ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বাড়ে, কর্মচারীদের বেতন বাড়ে, খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বাড়ে কিন্তু কখনোই বাড়েনা শিক্ষার্থীদের ইনকাম। শিক্ষার্থীদের তো কোন ইনকামই নেই তাহলে বাড়বে কেমনে? শিক্ষার্থীদের বাড়ে শুধু খরচ। এই খরচ শিক্ষার্থীরা কেমনে মিটাবে? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে ভাবা উচিৎ। অতিদ্রুত হল ডাইনিংয়ের খাবার মূল্য কমিয়ে মানসম্মত খাবার দেয়ার জন্য ম্যানেজারদেরকে নির্দেশ দেয়া হোক।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘আলোচনা ছাড়া হুট করে কোন কিছুর সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আরোপ করা একধরনের স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন। গণতান্ত্রিক দেশে শিক্ষকদের এ ধরনের বিরুপ আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলতে চাই খাবারের দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে হবে এবং অন্য ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীরা যেন রমযানে খাবার গ্রহণে কোন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হয় তার বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি হল প্রভোস্টদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একত্রে সেহরি খাওয়ার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে আলাওল হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, ‘হলের খাবারের দাম না বাড়ালে আগের মেনু দেয়া যাচ্ছিল না। মুরগি না দিয়ে শুধু ডিম-সবজি দেয়া হচ্ছিল। ডাইনিং ম্যানেজাররাও চালাতে পারছিল না। তাই আমরা রেগুলার খাবার ও সেহরিতে ১০টাকা বাড়িয়েছি। বাজারে সবকিছুর দাম প্রায় ৫০ শতাংশ হারে বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি টাকা কোথা থেকে দিবে। খাবারে সরাসরি ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে ব্যবসা করারও সুযোগ নেই। ডাইনিং ম্যানেজার যদি এই টাকার মধ্যে কিছু করতে না পারে কীভাবে হবে। তাকে খরচটাও তুলতে হবে। তাদের আমরা কোনো ব্যবসাও করতে দিই না। উল্টো তাদের লস হয় বলে তারা কান্নাকাটি করে।’
মানের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মানের বিষয়ে আমরা বলে দিছি আগের চাইতে মানটা যেন বাড়ানো। খাবারের আইটেম যাতে বাড়ানো হয়, ঝোল যাতে পাতলা না থাকে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে বাধ্য হয়ে দামটা বাড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটা নির্দিষ্ট বাজেটে চলে। বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি টাকা কোথা থেকে দিবে। এর বাইরে সরকার হলের ছেলেদের খাবারের জন্য বাড়তি টাকা দেবে? আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ভাবে আলোচনা করেছি। কেউ কোনো আপত্তি করেনি, শুধু বলেছে খাবারের মানটা যেন ঠিক থাকে। এখন সারাদেশে অর্থনৈতিক সংকট, সেই চাপটা আমাদের ওপর এসেও পড়েছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকার পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাব খান ওরফে আপনের বিশ্বস্ত দুই সহযোগীর ওপর নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই দুজন কক্সবাজারে থাকেন। তারা সম্পর্কে শ্যালক-দুলাভাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আরাব। এ সংক্রান্ত ভিডিও এখন ছড়িয়ে পড়েছে।
আরাব যে দুজনকে পরিচয়ে করিয়ে দেন তারা হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা শেফায়েত হোসেন জয় ও জসিম উদ্দিন নাহিদ। তাদের ওপর নজর রাখা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আরাব খান ওই দুই যুবককে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি ওই ভিডিওতে বলেন, জয় ও জসিম কক্সবাজারের মাফিয়া। জয় ‘কিলার’, নাহিদ আগামী নির্বাচনের ‘এমপি প্রার্থী’।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৮ জুলাই আরাব খানের তার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ ভিডিওটি পোস্ট করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন দুলালের ছেলে জয় ও তার ভগ্নিপতি নাহিদ প্রতিমাসে দুবাই আসা-যাওয়া করেন। তাদের দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও হঠাৎ করে আলিশান গাড়িতে চলাফেরা, বিলাসবহুল জীবন যাপন এলাকার মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগেও নাহিদ কক্সবাজারের রিগ্যাল প্যালেস নামের একটি আবাসিক হোটেলে ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। কিন্তু কয়েক বছরে তিনি রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।
আরাব খানের সঙ্গে নাহিদ-জয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর তাদের নিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে আরও তথ্য দিয়েছেন ফেনীর আবু তৈয়ব রকি নামের ব্যবসায়ী।
ট্রাভেলিং এজেন্সির ব্যবসা করা এই ব্যক্তির অভিযোগ, কাতার বিশ্বকাপ দেখে ফেরার পথে প্রবাসে থাকা পরিবারের সদস্যদের ৬০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে ফিরছিলেন ফেনীর চার বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন জয় ও নাহিদ। ঢাকার বিমানন্দরে নামার পর নাহিদ ও জয় তাদের রাজধানীর বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে বিশ্রামের অজুহাতে নিয়ে যান। পরে তারা সেখান থেকে ওই স্বর্ণ নিয়ে সটকে পড়েন।
তিনি আরও জানান, যেসব বাংলাদেশি দুবাইতে স্বর্ণ কিনতে যান, নাহিদ ও জয় তাদের টার্গেট করেন। দেশে ফেরার পর সেই স্বর্ণ লুট করে তা বিক্রি করে দেন শ্যালক-দুলাভাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাহিদ ও জয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি।
এ নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘’সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত দুজনের নানা তথ্য এসেছে। এসব বিষয়ে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অভিযুক্ত দুজন পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।’
রেড নোটিশ
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থানরত আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল।
রেড নোটিশ পাওয়া বাংলাদেশিদের তালিকায় ছবিসহ যুক্ত করা হয়েছে তার নাম।
ইন্টারপোলের তালিকায় আরাব নামটি উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তার পূর্ণ নাম রবিউল ইসলাম ও ডাকনাম রবিউল লেখা হয়েছে। জন্মস্থান দেখানো হয়েছে বাগেরহাট; বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৩৫ বছর।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আরাবের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারপোল।
এর আগে ১৮ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার ফেরারি আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়ার খবর জানায় বাংলাদেশ পুলিশ।
ইন্টারপোল বাংলাদেশ ডেস্কের এক কর্মকর্তা ওই দিন বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে (আরাবকে দেশে ফেরানো) ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইন্টারপোলকে মেইল করেছি। তারা আমাদের দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
আরাবকে নিয়ে আলোচনার শুরু যেখান থেকে
পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম আলোচনায় আসেন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাব জুয়েলার্স’ উদ্বোধন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা শুরু হয়। শপটির লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে।
আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলমসহ বেশ কয়েকজন। এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিও বার্তার পর বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) নজরে আসে।
ফেরারি আসামি আরাব খানের মালিকানাধীন আরাব জুয়েলার্স উদ্বোধন হয় ১৫ মার্চ রাতে। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি তার। সাকিবসহ অন্যরা এই আয়োজনে অংশ নেন।
ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আমরা আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য