প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে টিভির সামনে বসেন নাজমুন নাহার। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটল ছন্দপতন। টেলিভিশন খুলে দেখেন বিদেশি চ্যানেল বন্ধ। নাতি দৌড়ে এসে জানায়, তার রুমের টিভিতে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখা যাচ্ছে না। সেদিন থেকে নাতি টিভিতে ইউটিউব দেখে সময় কাটাচ্ছে, কিন্তু নাজমুনের সন্ধ্যা যেন আর কাটছে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন স্মার্টফোন চালাই। ছেলে দেখিয়ে দিলো, কীভাবে ইউটিউবে সিরিয়াল দেখা যায়। তবে এখনও ভালোমতো ইউটিউবটা বুঝি না। সব সিরিয়ালের নতুন পর্বগুলোও খুঁজে পাই না। খুব বিরক্ত লাগছে।’
ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে থাকেন সৌদিয়া আক্তার সুপ্তি। তার ঘরের টিভিতে সবসময়ই চলত স্টার জলসা।
তিনি বলেন, ‘আমি ঘর থেকে তেমন বের হই না। সারা দিন ঘরের কাজই করি। এইসব চ্যানেলই তো আমার বিনোদন। এখন স্মার্টফোনে ইউটিউব দেখি। তবে সিরিয়ালগুলো খুব মিস করছি।’
ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপনমুক্ত) ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের ওপর সরকার বিধিনিষেধ জারির পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সব বিদেশি চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে কেব্ল অপারেটররা। আর এতে হঠাৎ করেই পানসে জীবনের মুখে পড়েছেন দেশের কোটি কোটি টিভি দর্শক।
বিশেষ করে পরিবারের শিশু ও নারীরা মহাবিরক্ত। তারা বলছেন, তারা সব ধরনের টিভি চ্যানেল দেখারই সুযোগ চান। আইনের মধ্যে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর উত্তরার নাজমুন নাহারের দিন কেটে যায় ঘরের কাজ আর নাতির দেখভালে। সন্ধ্যায় ছেলের বউ অফিস থেকে ফিরলে অবসর পান তিনি। এরপর ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসার সিরিয়াল দেখে তার সময় কাটে।
সিলেট নগরীর ব্লু বার্ড স্কুলের ক্লাস টুতে পড়ে সাদাত হোসেন মাহিন। টিভি দেখার জন্য বাবা-মা তাকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন। চার দিন হলো টিভি দেখা হচ্ছে না বলে এতোটাই মন খারাপ যে, নাওয়া-খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে সে।
দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ হওয়ায় মাহিনের মতো অনেক শিশুরই মন খারাপ। মাহিনের মা শেগুফতা ইয়াসমিন একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘টিভিতে সে কার্টুন দেখে। অনেক সময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকও দেখে। কয়েকদিন ধরে এসব চ্যানেল বন্ধ বলে খুবই মন খারাপ তার। খাওয়া-দাওয়া করতেই চাচ্ছে না। প্রায় জোর করেই খাওয়াতে হচ্ছে।’
ছেলের মন ভালো করতে তিনি হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্টফোন। তাতেও বিপত্তি হয়েছে। এখন তার হাত থেকে ফোন নিলেই খিটমিট করছে।
শেগুফতার ভয়, এখন না আবার স্মার্টফোন আসক্তি ধরে যায় মাহিনের।
ভারতীয় চ্যানেলে সিরিয়াল ও রিয়েলিটি শো দেখে অবসর কাটে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গৃহবধূ শরিফা বেগমের।
তিনি বলেন, ‘সারা দিন ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যার পর গিয়ে টিভি দেখার একটু সুযোগ পাই। এটাই আমার একমাত্র বিনোদন। সে সুযোগও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
‘প্রতিদিন একবার টেলিভিশন চালু করে দেখি চ্যানেলগুলো আসছে কি না। হতাশ হয়ে আবার বন্ধ করে দেই।’
দেশের চ্যানেল কেন দেখেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে শরিফা বলেন, ‘দেশের চ্যানেলগুলোতে দেখার মতো কিছু নেই। সব চ্যানেলে কেবল খবর আর টক শো। যেগুলোতে কিছু নাটক দেখায়, সেগুলোর মানও খুব বাজে। দেখার মতো না।’
তার সঙ্গে বসে নিয়মিত ভারতীয় চ্যানেল দেখেন গৃহকর্মীও। তিনি নাম জানাতে চাননি। তিনি বলেন, টিভি দেখতে পারছেন না বলে মন খারাপ; কোনো কাজেই মন বসছে না।
নগরীর শিবগঞ্জের অঞ্জন দাস টিভিতে মূলত খেলা দেখেন। এখন চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা দেখতে পারছেন না বলে খুব বিরক্ত তিনি।
অঞ্জন বলেন, ‘সরকার ও কেব্ল অপারেটরদের দ্বন্দ্বে আমরা সাধারণ দর্শকরা কেন বঞ্চিত হব। আমাদের কেন জিম্মি করা হবে?’
সিলেট কেব্ল সিস্টেম লিমিডেটের (এসসিএস) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফজলুল করিম মারজান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের কথা বলা হয়েছে। ১ তারিখের মধ্যে ক্লিনফিড দেখানোর সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তো আমরা বিদেশি চ্যানেল দেখাতে পারি না। কারণ সব চ্যানেলেই কম বেশি বিজ্ঞাপন আছে।
‘১ অক্টোবরই আমাদের কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। আমরা যদি বিদেশি চ্যানেল চালানো অব্যাহত রাখতাম, তখন হয়ত জরিমানা গুণতে হত।’
তিনি জানান, ক্লিনফিড দেখানোর মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই। এটি ব্যয়বহুলও। ক্লিনফিড পরিবেশকদেরই নিয়ে আসতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
বিদেশি চ্যানেল না চলায় গ্রাহকরা মাস শেষে বিল দিচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।
লকডাউনে ঘরে বসে টিভি দেখেই সময় কেটেছে বরিশাল নগরীর শিশু তাসফি রহমানের। ‘সনি আট’ চ্যানেলের গোপাল ভাঁড় কার্টুনের নিয়মিত দর্শক ছিল সে।
নিউজবাংলাকে সে বলে, ‘গোপাল ভাঁড় দেখতে পারছি না কতদিন ধরে। ভালো লাগছে না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আর ডিসকভারিও দেখতে পাচ্ছি না। কত সময় পড়ালেখা ভালো লাগে? বাইরেও ঘুরতে যেতে দেয় না।’
ভারতীয় সিরিয়ালের জন্য জনপ্রিয় চ্যানেল স্টার জলসা ও জি বাংলা নিয়মিত দর্শক নগরীর বেশিরভাগ গৃহবধূ।
নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইরা বানু বলেন, ‘কাজ না থাকলে নাটক দেখে একটু সময় কাটাতাম। ঘরের পুরুষরা তো সারা দিন বাইরে থাকে। তাদের সময় কেটে যায়। আমরা নারীরা বাইরে বেশি ঘুরতে পারি না, ঘরে কাজ থাকে। কাজ শেষে যে একটু বসে টিভি দেখব, সেই লাইনও রাখে নাই। সব খালি নো সিগন্যাল দেখায়।’
কবে নাগাদ চ্যানেলগুলো স্বাভাবিক হবে, তা জানতে চাইলে বরিশালের স্কাই ভিশন কেব্ল নেটওয়ার্কের পরিচালক শিবু দাস বলেন, ‘সরকার ক্লিনফিড ছাড়া চ্যানেল চালাতে বলায় সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন যে চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন নেই, সেই চ্যানেলগুলো ধীরে ধীরে আবার দর্শকদের সামনে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করব।’
ইউরোটেল ডিজিটাল কেব্ল টিভির পরিচালক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে সব বিদেশি চ্যানেলই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা যাচাই-বাছাই করে যে চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন নেই, সেগুলো চালু করব। তবে তাতে কিছুটা সময় লাগবে।’
কুমিল্লা নগরীর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক রুমি আক্তার তো ভেবেছিলেন টিভি সেটেই হয়ত সমস্যা, তাই বিদেশি চ্যানেল আসছে না। স্বামী আজহার উদ্দিন স্টেডিয়াম এলাকার মেকানিকের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, টিভি ঠিকই আছে। ক্যাবেল অপারেটররাই চ্যানেলগুলো বন্ধ করেছে।
নগরীর ঝাউতলা এলাকার গৃহবধূ শিরিন সুলতানা বলেন, ‘আমার ছেলেটা টিভিতে মোটু-পাতলু দেখত। চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় এখন মোবাইলে ডাটা অন করে ইউটিউব থেকে দেখে। ফোনে কল আসলে কেটে দেয়। অনেক জরুরি কল ধরতে পারি না। চ্যানেলগুলো বন্ধ হওয়ায় যন্ত্রণায় আছি।’
জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুরে হোসেন মিয়াও বিপদে পড়েছেন। এলাকায় ছোট্ট খাবার হোটেল আছে তার। জানান, দোকানে টিভিতে খেলার চ্যানেল চালিয়ে রাখলে তা দেখার জন্য গ্রাহক বসতেন, চা-নাস্তা খেতেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে মানুষ আসে, চা-টা খায়, খেলা দেখে। আজ কয়েকদিন মানুষ খুব বিরক্ত। কোনো চ্যানেল আসে না। বাংলা চ্যানেলে সিনেমা চলে। আর এসব দেখে কাস্টমার চলে যায়।’
জেলার চান্দিনা উপজেলার কেব্ল ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গ্রাহকরা দিনরাত ফোন দিয়ে যাচ্ছে। যতই বলি ততই অবুঝের মতো প্রশ্ন করে মানুষ। আশা করি চ্যানেলগুলো আবার খুলে দেয়া যাবে শিগগিরি।’
বিদেশি চ্যানেল বন্ধে খুশিও অনেকে
রাজধানীর মিরপুরের মৌসুমী ইসলাম মনে করেন, বিদেশি কিছু চ্যানেল বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলের সিরিয়াল না থাকায় ভালোই হয়েছে। জি-বাংলা, স্টার জলসা, এসব চ্যানেলের তেমন প্রয়োজন নেই বললেই চলে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। তবে এখন সব ধরনের চ্যানেল বন্ধ রয়েছে, এটা ঠিক নয়। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল, খেলা ও নেচার বিষয়ক চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে থাকা উচিত।’
কিছু চ্যানেল চালু রাখার পক্ষে কথা বললেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আরিফ হোসেনও।
তিনি বলেন, ‘অফিস শেষে বাসায় ফিরে কিছু সময়ের জন্য টিভি দেখে একটু রিফ্রেশ হওয়া যায়। দেশি-বিদেশি টিভিগুলোতে এখন মানসম্মত তেমন অনুষ্ঠান থাকে না বললেই চলে। তাই বন্ধ থাকাই ভালো। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল খুলে দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে ট্রাভেল ও ডিসকভারির মতো চ্যালেনগুলো দেখেও মানুষ নতুন কিছু শিখতে পারে।’
ঢাকার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার নেছার উদ্দিন ও খাদিজা আক্তার দম্পতির দুই সন্তানের টিভিতে কার্টুনের আসক্তি বেশ বেড়ে গিয়েছিল। কার্টুন দেখতে না দিলে খেতেই চাইত না তিন বছরের তাসফিয়া আক্তার নাফিজা ও সাত বছরের নাঈম খান। আবার রিমোট নিয়ে দুইজনের মধ্যে মারামারিও লেগে থাকত।
এখন বিদেশি চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় তারা মিলেমিশে খেলাধুলা করছে বলে জানান তাদের বাবা-মা।
নাফিজা-নাঈমের মা খাদিজা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি জি-বাংলা, স্টার জলসা ও জলসা মুভিস দেখি। আমার বাচ্চা দুইটা সব সময় কার্টুন চ্যানেল দেখত। সারা দিন রিমোট নিয়ে মারামারি করত। ছেলে মোটুপাতলু দেখতে চায়, আরেকজন গোপী।
‘আমি যখন দেখতাম, তখন একটা নেশা ছিল। এ জন্য স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াও হতো। এখন ইন্ডিয়ান চ্যানেল বন্ধ হওয়ার পরে কোনো ঝামেলাই নাই। ছেলে-মেয়ে দুই দিন কান্নাকাটি করলেও এখন ওরা বুঝতে পারছে যে চ্যানেল নাই। আজকে কিছু বলেও নাই। দুই ভাই-বোন নিজেরা খেলা করছে সারা দিন।’
দেশীয় টিভি চ্যালেনগুলোর মানহীন অনুষ্ঠানের কারণেই দর্শক বিদেশি চ্যানেলমুখী হয়েছে বলে মনে করেন রাজধানীর ফার্মগেটের মো. হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশি চ্যানেলগুলোতে একঘেয়েমি সংবাদ আর নাটক দেখে আমরা বিরক্ত। নাটকে ঘুরে ফিরে প্রায় একই মুখ। দেশি চ্যানেল দেখার জন্য টাকা খরচ করে ডিস লাইন নেব কেন?’
দেশি টেলিভিশনগুলোর মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) বলছে, আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সমস্যায় একটা পথ বের হবে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শনিবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে এ আইন মানা হচ্ছে। আমাদের কোনো চ্যানেল বিদেশে সম্প্রচারে গেলেও তাদের এটা মানতে হয়। ডিস্ট্রিবিউটরদের ডাউনলিংকের অনুমোদনের ক্ষেত্রেও এটি শর্ত হিসেবে উল্লেখ আছে।
‘তবে এটা আন্দোলনের কোনো বিষয় না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি পথ বের হয়ে আসবে।’
বন্ধ হওয়া বিদেশি চ্যানেলগুলো খুলতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার রোববার তথ্য সচিব ও কোয়াব সমন্বয় কমিটির আহ্বায়কের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
একই সঙ্গে ক্লিন ফিডে কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা হলে বাংলাদেশের সব টিভি চ্যানেলেও ক্লিন ফিড (বিজ্ঞাপনবিহীন) সম্প্রচারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে ক্লিন ফিড ছাড়া কীভাবে বাংলাদেশে সম্প্রচার অব্যাহত রাখা যায়, সে ব্যাপারে কোনো আলোচনা না করে চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হঠকারী সিদ্ধান্ত।
‘এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বিদেশি চ্যানেল দেখার প্রয়োজনীয় ফি দিয়েও চ্যানেল দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে বিনোদনের অভাব দেখা দিয়েছে, যা সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের মান অত্যন্ত নিম্ন। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিদেশি চ্যানেল দেখেন। সেগুলো বন্ধের ফলে দেশের মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা কার্টুন, নারীরা রান্না ও সিরিয়াল এবং পুরুষরা সংবাদ, খেলা ও রিয়্যালিটি শো দেখতে পারছেন না। এটি প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।
নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার চালু না করে দিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিলেটের দেবাশীষ দেবু, বরিশালের তন্ময় তপু, কুমিল্লার মাহফুজ নান্টু ও সাভারের ইমতিয়াজ উল ইসলাম।
আরও পড়ুন:লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।
আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।
১৯ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভা বিইউপির বিজয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম, বিএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এমফিল, পিএইচডি।
সভার শুরুতে বিইউপির উপাচার্য ও সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ মাহ্বুব-উল আলম বিদায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং নবনিযুক্ত সদস্যদের স্বাগত জানান। পরে বিইউপির ট্রেজারার এয়ার কমডোর মোঃ রেজা এমদাদ খান, জিইউপি, বিইউপি, এনডিসি, পিএসসি, জিডি(পি), ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ১৩৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ১৩৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।
সিনেট সদস্যগণ ট্রেজারার এর বক্তৃতার ওপর আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বাজেট প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এছাড়াও সিনেট সভায় ১৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। ১৭তম বার্ষিক সিনেট সভাটি সার্বিকভাবে সঞ্চালনা করেন বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রাব্বি আহসান, এনডিসি, পিএসসি।
সভায় সিনেট চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মাহ্বুব তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিইউপি বয়সে নবীন হলেও এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও গবেষণা ভিত্তিক কার্যক্রমের অর্জনসমূহ জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুনাম বয়ে আনছে। যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি সুনির্দিষ্ট Academic Strategic Plan –২০৫০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
Academic Strategic Plan এর মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের আধুনিক মান নির্ধারণ, Outcome Based Education (OBE) কারিকুলাম প্রনয়ণ, গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রকাশনা ও গবেষণা সহায়তার সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মাননীয় উপাচার্য সকলকে অবহিত করেন যে বিইউপি’র গবেষণাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় BUP Research Centre (BRC) অংঙ্গীভূত ফ্যাকাল্টি ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে গবেষণা, উদ্ভাবন ও পরামর্শমূলক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। 'Inspiring Innovation for Advancing Knowledge' শ্লোগানকে ধারণ করে, BUP Research Centre, গবেষকদের মানসম্মত গবেষণায় উৎসাহ দিচ্ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষকদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রসারের উদ্দেশ্যে বিইউপি থেকে ৫টি জার্নাল প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে যা সকলের মাঝে সমাদৃত। সিনেট চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পাশাপাশি একজন সুশৃঙ্খল, নৈতিকতা সম্পন্ন সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিইউপি বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গুণাবলি ও আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রোগ্রামের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে Need Based Education - কেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন যে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত কারিকুলাম ও শিক্ষা পরিবেশের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সান্নিধ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখে বিইউপি'তে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নবপ্রজন্মের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সততা, চরিত্র গঠন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, জাতীয় দিবসগুলোর তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে বিইউপি’র বিভিন্ন আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা উল্লেখ করেন।
এই সিনেট সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিইউপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রস্তাবিত ইলেকট্রোরাল কলেজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণে এই ব্যবস্থাকে আরেকটি ছলচাতুরী হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে প্রস্তাব তাতে একটা ইলেক্টোরাল কলেজ করা হবে। এবং প্রায় ওনাদের ভাষ্য অনুযায়ী ৭০ হাজারের মতো ভোটার থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ এখানে ভোটার হবেন। এবং রাষ্ট্রপতিকে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য ওখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবে আগের মতোই একমত নয় বিএনপি।
এই কাউন্সিলের জবাবদিহি না থাকায় সমর্থন করে না বিএনপি। এই কাউন্সিলে আরেকটি ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হবে বলে মনে করি আমরা।’
স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীন বিচারব্যবস্থা হলে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে, ফ্যাসিবাদ দমন করবে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্য সাংবিধানিক পদ, সংস্থা স্বাধীন করতে পারলে সমস্যা থাকবে না।’
বিএনপি মনে করে সুশাসন নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল করা যেতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রেখে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে তাদের যোগ করা যেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধন করা যেতে পারে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি মনে করে, দুদক ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে বিদ্যমান আইনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন।
কেরানীগঞ্জের শাক্তা ও তারানগর ইউনিয়নের বুক চিরে চলা ভাওয়াল-চন্ডিপুর-অগ্রখোলা সড়কের বেহাল দশায় নিত্যদিন ভোগান্তিতে পড়ছে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে এখন গর্ত আর ধুলাবালি। সামান্য বৃষ্টিতে কাদায় যানবাহন আটকে যায়, আর শুকনো মৌসুমে উড়ে ধূলোর ঝড়।
রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। ছোট-বড় গর্তে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হন অনেক পথচারী। অন্যদিকে, যানবাহন চলাচলের অযোগ্য এই সড়কে প্রতিনিয়তই নষ্ট হয়ে পড়ে ভ্যান, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মেকাইল মাদ্রাসা ও অগ্রখোলা কমিউনিটি হাসপাতালের সামনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝেই উল্টে যায় যাত্রী বোঝাই যানবাহন ।
সড়কের করুণ অবস্থার কারণে অনেক চালক ও পথচারী এখন পাশের বেলনা, কলাতিয়া ও নয়াবাজার হয়ে বিকল্প রাস্তায় যাতায়াত করছেন। এতে সময়, অর্থ ও দুর্ভোগ বাড়ছে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জ ছাড়াও নবাবগঞ্জ, দোহার, সিরাজদিখানসহ দক্ষিণবঙ্গের হাজার হাজার মানুষ মোহাম্মদপুর হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটার অবস্থা এমন যে, অটোরিকশা সিএনজিতে ওঠা মানেই কোমর ভাঙা। মাঝে মাঝেই যানবাহন পড়ে মানুষ আহত হয়। স্কুলের বাচ্চারা পর্যন্ত ভয়ে এই রাস্তায় যেতে চায় না। কোন এমপি-মন্ত্রী একবার এই রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝত কষ্টটা কেমন।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পণ্যবাহী ট্রাকচালক রাকিব হাওলাদার। তিনি বলেন, একবার গর্তে পড়লে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ট্রাকে থাকা জিনিসপত্র পড়ে যায়, এভাবে থাকলে এই রাস্তা দিয়ে আর চলাচল করা সম্ভব নয়। এটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, সড়কটি ইতোমধ্যে ডিপিপিতে অনুমোদন পেয়েছে। তাই এখন সংস্কার করা হচ্ছেনা। বছরের শেষ দিকে ২০ ফুট প্রশস্ত করে এবং আরও শক্তিশালী করে কাজ শুরু হবে। তখন রাস্তাটি আরো টেকসই হবে।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি, সংস্কার কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত অন্তত গর্ত ভরাট করে সাময়িক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। নইলে প্রতিদিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
একটা ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের দুর্গম খাসিয়া পল্লীতে কাজ করে দুই-আড়াইশ টাকা রোজগার করে কিশোর তোফাজ্জল (১৪)। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫) এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। পরিবারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। বাবা হার্টের রোগী, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন আর বয়োবৃদ্ধ দাদী সমিতা বিবি (৮২) দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী।
তোফাজ্জল কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিনি সকালে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল নিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরের খাসিয়া পল্লীতে কাজে যাই। সন্ধ্যায় ফিরি। যা রোজগার হয়, দুবেলাও খেতে পাইনা। এ দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নাই। প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ এ পরিবারের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রকৃতই তারা খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনজনই অসুস্থ। মাঝে মধ্যে আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সরেজমিন তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জীর্ণ-শীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। যা বললেন বোঝা গেলো, ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। তবু প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। ঈদে চান্দে প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এইভাবেই টিকে আছি।
স্থানীয়দের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা। মানুষের সাহায্যে দুমুঠো ভাত খেতে পারেন, যদি কেউ সাহায্যে না করে তাহলে না খেয়েই থাকতে হয়। তার বিলাপে চোখে জল চলে আসে। এ যেন দারিদ্র্যের এক করুণ চিত্র। এই অসহায় নারীর জীবন কাটছে অভাব আর কষ্টে। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। ছেলে আলী আহমেদও হার্টের রোগী। কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই ১৩/১৪ বছরের নাতি তোফাজ্জলের কাঁধেই সংসারের ভার। দুর্গম খাসিয়া পুঞ্জিতে কাজ করে দিনে আয় করে দুই-আড়াইশ টাকা মাত্র। এ টাকায় দুবেলা খাবার যোগানোই মুশকিল। তার ওপর অসুস্থ দাদি, বাবা আর মরার উপর খাঁড়ার ঘা মানসিক প্রতিবন্ধী বড় বোন আয়েশা খাতুন।
ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানান, একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিলো না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরাবস্থা জেনে অনেকে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। তবে বয়োবৃদ্ধ সমিতা বিবি ও মানসিক প্রতিবন্ধী আয়েশা খাতুনের সুচিকিৎসা ও তোফাজ্জলদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা জরুরি।
মন্তব্য