প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে টিভির সামনে বসেন নাজমুন নাহার। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটল ছন্দপতন। টেলিভিশন খুলে দেখেন বিদেশি চ্যানেল বন্ধ। নাতি দৌড়ে এসে জানায়, তার রুমের টিভিতে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখা যাচ্ছে না। সেদিন থেকে নাতি টিভিতে ইউটিউব দেখে সময় কাটাচ্ছে, কিন্তু নাজমুনের সন্ধ্যা যেন আর কাটছে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন স্মার্টফোন চালাই। ছেলে দেখিয়ে দিলো, কীভাবে ইউটিউবে সিরিয়াল দেখা যায়। তবে এখনও ভালোমতো ইউটিউবটা বুঝি না। সব সিরিয়ালের নতুন পর্বগুলোও খুঁজে পাই না। খুব বিরক্ত লাগছে।’
ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে থাকেন সৌদিয়া আক্তার সুপ্তি। তার ঘরের টিভিতে সবসময়ই চলত স্টার জলসা।
তিনি বলেন, ‘আমি ঘর থেকে তেমন বের হই না। সারা দিন ঘরের কাজই করি। এইসব চ্যানেলই তো আমার বিনোদন। এখন স্মার্টফোনে ইউটিউব দেখি। তবে সিরিয়ালগুলো খুব মিস করছি।’
ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপনমুক্ত) ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের ওপর সরকার বিধিনিষেধ জারির পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সব বিদেশি চ্যানেল প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে কেব্ল অপারেটররা। আর এতে হঠাৎ করেই পানসে জীবনের মুখে পড়েছেন দেশের কোটি কোটি টিভি দর্শক।
বিশেষ করে পরিবারের শিশু ও নারীরা মহাবিরক্ত। তারা বলছেন, তারা সব ধরনের টিভি চ্যানেল দেখারই সুযোগ চান। আইনের মধ্যে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর উত্তরার নাজমুন নাহারের দিন কেটে যায় ঘরের কাজ আর নাতির দেখভালে। সন্ধ্যায় ছেলের বউ অফিস থেকে ফিরলে অবসর পান তিনি। এরপর ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসার সিরিয়াল দেখে তার সময় কাটে।
সিলেট নগরীর ব্লু বার্ড স্কুলের ক্লাস টুতে পড়ে সাদাত হোসেন মাহিন। টিভি দেখার জন্য বাবা-মা তাকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছিলেন। চার দিন হলো টিভি দেখা হচ্ছে না বলে এতোটাই মন খারাপ যে, নাওয়া-খাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে সে।
দেশে বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ হওয়ায় মাহিনের মতো অনেক শিশুরই মন খারাপ। মাহিনের মা শেগুফতা ইয়াসমিন একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘টিভিতে সে কার্টুন দেখে। অনেক সময় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকও দেখে। কয়েকদিন ধরে এসব চ্যানেল বন্ধ বলে খুবই মন খারাপ তার। খাওয়া-দাওয়া করতেই চাচ্ছে না। প্রায় জোর করেই খাওয়াতে হচ্ছে।’
ছেলের মন ভালো করতে তিনি হাতে তুলে দিয়েছেন স্মার্টফোন। তাতেও বিপত্তি হয়েছে। এখন তার হাত থেকে ফোন নিলেই খিটমিট করছে।
শেগুফতার ভয়, এখন না আবার স্মার্টফোন আসক্তি ধরে যায় মাহিনের।
ভারতীয় চ্যানেলে সিরিয়াল ও রিয়েলিটি শো দেখে অবসর কাটে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার গৃহবধূ শরিফা বেগমের।
তিনি বলেন, ‘সারা দিন ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকি। সন্ধ্যার পর গিয়ে টিভি দেখার একটু সুযোগ পাই। এটাই আমার একমাত্র বিনোদন। সে সুযোগও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
‘প্রতিদিন একবার টেলিভিশন চালু করে দেখি চ্যানেলগুলো আসছে কি না। হতাশ হয়ে আবার বন্ধ করে দেই।’
দেশের চ্যানেল কেন দেখেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে শরিফা বলেন, ‘দেশের চ্যানেলগুলোতে দেখার মতো কিছু নেই। সব চ্যানেলে কেবল খবর আর টক শো। যেগুলোতে কিছু নাটক দেখায়, সেগুলোর মানও খুব বাজে। দেখার মতো না।’
তার সঙ্গে বসে নিয়মিত ভারতীয় চ্যানেল দেখেন গৃহকর্মীও। তিনি নাম জানাতে চাননি। তিনি বলেন, টিভি দেখতে পারছেন না বলে মন খারাপ; কোনো কাজেই মন বসছে না।
নগরীর শিবগঞ্জের অঞ্জন দাস টিভিতে মূলত খেলা দেখেন। এখন চ্যানেলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা দেখতে পারছেন না বলে খুব বিরক্ত তিনি।
অঞ্জন বলেন, ‘সরকার ও কেব্ল অপারেটরদের দ্বন্দ্বে আমরা সাধারণ দর্শকরা কেন বঞ্চিত হব। আমাদের কেন জিম্মি করা হবে?’
সিলেট কেব্ল সিস্টেম লিমিডেটের (এসসিএস) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ফজলুল করিম মারজান বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন ছাড়া বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারের কথা বলা হয়েছে। ১ তারিখের মধ্যে ক্লিনফিড দেখানোর সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তো আমরা বিদেশি চ্যানেল দেখাতে পারি না। কারণ সব চ্যানেলেই কম বেশি বিজ্ঞাপন আছে।
‘১ অক্টোবরই আমাদের কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। আমরা যদি বিদেশি চ্যানেল চালানো অব্যাহত রাখতাম, তখন হয়ত জরিমানা গুণতে হত।’
তিনি জানান, ক্লিনফিড দেখানোর মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই। এটি ব্যয়বহুলও। ক্লিনফিড পরিবেশকদেরই নিয়ে আসতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
বিদেশি চ্যানেল না চলায় গ্রাহকরা মাস শেষে বিল দিচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।
লকডাউনে ঘরে বসে টিভি দেখেই সময় কেটেছে বরিশাল নগরীর শিশু তাসফি রহমানের। ‘সনি আট’ চ্যানেলের গোপাল ভাঁড় কার্টুনের নিয়মিত দর্শক ছিল সে।
নিউজবাংলাকে সে বলে, ‘গোপাল ভাঁড় দেখতে পারছি না কতদিন ধরে। ভালো লাগছে না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আর ডিসকভারিও দেখতে পাচ্ছি না। কত সময় পড়ালেখা ভালো লাগে? বাইরেও ঘুরতে যেতে দেয় না।’
ভারতীয় সিরিয়ালের জন্য জনপ্রিয় চ্যানেল স্টার জলসা ও জি বাংলা নিয়মিত দর্শক নগরীর বেশিরভাগ গৃহবধূ।
নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইরা বানু বলেন, ‘কাজ না থাকলে নাটক দেখে একটু সময় কাটাতাম। ঘরের পুরুষরা তো সারা দিন বাইরে থাকে। তাদের সময় কেটে যায়। আমরা নারীরা বাইরে বেশি ঘুরতে পারি না, ঘরে কাজ থাকে। কাজ শেষে যে একটু বসে টিভি দেখব, সেই লাইনও রাখে নাই। সব খালি নো সিগন্যাল দেখায়।’
কবে নাগাদ চ্যানেলগুলো স্বাভাবিক হবে, তা জানতে চাইলে বরিশালের স্কাই ভিশন কেব্ল নেটওয়ার্কের পরিচালক শিবু দাস বলেন, ‘সরকার ক্লিনফিড ছাড়া চ্যানেল চালাতে বলায় সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন যে চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন নেই, সেই চ্যানেলগুলো ধীরে ধীরে আবার দর্শকদের সামনে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করব।’
ইউরোটেল ডিজিটাল কেব্ল টিভির পরিচালক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে সব বিদেশি চ্যানেলই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা যাচাই-বাছাই করে যে চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন নেই, সেগুলো চালু করব। তবে তাতে কিছুটা সময় লাগবে।’
কুমিল্লা নগরীর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক রুমি আক্তার তো ভেবেছিলেন টিভি সেটেই হয়ত সমস্যা, তাই বিদেশি চ্যানেল আসছে না। স্বামী আজহার উদ্দিন স্টেডিয়াম এলাকার মেকানিকের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, টিভি ঠিকই আছে। ক্যাবেল অপারেটররাই চ্যানেলগুলো বন্ধ করেছে।
নগরীর ঝাউতলা এলাকার গৃহবধূ শিরিন সুলতানা বলেন, ‘আমার ছেলেটা টিভিতে মোটু-পাতলু দেখত। চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় এখন মোবাইলে ডাটা অন করে ইউটিউব থেকে দেখে। ফোনে কল আসলে কেটে দেয়। অনেক জরুরি কল ধরতে পারি না। চ্যানেলগুলো বন্ধ হওয়ায় যন্ত্রণায় আছি।’
জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুরে হোসেন মিয়াও বিপদে পড়েছেন। এলাকায় ছোট্ট খাবার হোটেল আছে তার। জানান, দোকানে টিভিতে খেলার চ্যানেল চালিয়ে রাখলে তা দেখার জন্য গ্রাহক বসতেন, চা-নাস্তা খেতেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে মানুষ আসে, চা-টা খায়, খেলা দেখে। আজ কয়েকদিন মানুষ খুব বিরক্ত। কোনো চ্যানেল আসে না। বাংলা চ্যানেলে সিনেমা চলে। আর এসব দেখে কাস্টমার চলে যায়।’
জেলার চান্দিনা উপজেলার কেব্ল ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গ্রাহকরা দিনরাত ফোন দিয়ে যাচ্ছে। যতই বলি ততই অবুঝের মতো প্রশ্ন করে মানুষ। আশা করি চ্যানেলগুলো আবার খুলে দেয়া যাবে শিগগিরি।’
বিদেশি চ্যানেল বন্ধে খুশিও অনেকে
রাজধানীর মিরপুরের মৌসুমী ইসলাম মনে করেন, বিদেশি কিছু চ্যানেল বন্ধ করা প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলের সিরিয়াল না থাকায় ভালোই হয়েছে। জি-বাংলা, স্টার জলসা, এসব চ্যানেলের তেমন প্রয়োজন নেই বললেই চলে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। তবে এখন সব ধরনের চ্যানেল বন্ধ রয়েছে, এটা ঠিক নয়। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল, খেলা ও নেচার বিষয়ক চ্যানেলগুলো সম্প্রচারে থাকা উচিত।’
কিছু চ্যানেল চালু রাখার পক্ষে কথা বললেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আরিফ হোসেনও।
তিনি বলেন, ‘অফিস শেষে বাসায় ফিরে কিছু সময়ের জন্য টিভি দেখে একটু রিফ্রেশ হওয়া যায়। দেশি-বিদেশি টিভিগুলোতে এখন মানসম্মত তেমন অনুষ্ঠান থাকে না বললেই চলে। তাই বন্ধ থাকাই ভালো। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল খুলে দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে ট্রাভেল ও ডিসকভারির মতো চ্যালেনগুলো দেখেও মানুষ নতুন কিছু শিখতে পারে।’
ঢাকার আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার নেছার উদ্দিন ও খাদিজা আক্তার দম্পতির দুই সন্তানের টিভিতে কার্টুনের আসক্তি বেশ বেড়ে গিয়েছিল। কার্টুন দেখতে না দিলে খেতেই চাইত না তিন বছরের তাসফিয়া আক্তার নাফিজা ও সাত বছরের নাঈম খান। আবার রিমোট নিয়ে দুইজনের মধ্যে মারামারিও লেগে থাকত।
এখন বিদেশি চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় তারা মিলেমিশে খেলাধুলা করছে বলে জানান তাদের বাবা-মা।
নাফিজা-নাঈমের মা খাদিজা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি জি-বাংলা, স্টার জলসা ও জলসা মুভিস দেখি। আমার বাচ্চা দুইটা সব সময় কার্টুন চ্যানেল দেখত। সারা দিন রিমোট নিয়ে মারামারি করত। ছেলে মোটুপাতলু দেখতে চায়, আরেকজন গোপী।
‘আমি যখন দেখতাম, তখন একটা নেশা ছিল। এ জন্য স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াও হতো। এখন ইন্ডিয়ান চ্যানেল বন্ধ হওয়ার পরে কোনো ঝামেলাই নাই। ছেলে-মেয়ে দুই দিন কান্নাকাটি করলেও এখন ওরা বুঝতে পারছে যে চ্যানেল নাই। আজকে কিছু বলেও নাই। দুই ভাই-বোন নিজেরা খেলা করছে সারা দিন।’
দেশীয় টিভি চ্যালেনগুলোর মানহীন অনুষ্ঠানের কারণেই দর্শক বিদেশি চ্যানেলমুখী হয়েছে বলে মনে করেন রাজধানীর ফার্মগেটের মো. হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশি চ্যানেলগুলোতে একঘেয়েমি সংবাদ আর নাটক দেখে আমরা বিরক্ত। নাটকে ঘুরে ফিরে প্রায় একই মুখ। দেশি চ্যানেল দেখার জন্য টাকা খরচ করে ডিস লাইন নেব কেন?’
দেশি টেলিভিশনগুলোর মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) বলছে, আলোচনার মাধ্যমেই চলমান সমস্যায় একটা পথ বের হবে।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শনিবার সন্ধ্যায় সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে এ আইন মানা হচ্ছে। আমাদের কোনো চ্যানেল বিদেশে সম্প্রচারে গেলেও তাদের এটা মানতে হয়। ডিস্ট্রিবিউটরদের ডাউনলিংকের অনুমোদনের ক্ষেত্রেও এটি শর্ত হিসেবে উল্লেখ আছে।
‘তবে এটা আন্দোলনের কোনো বিষয় না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের একটি পথ বের হয়ে আসবে।’
বন্ধ হওয়া বিদেশি চ্যানেলগুলো খুলতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার রোববার তথ্য সচিব ও কোয়াব সমন্বয় কমিটির আহ্বায়কের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
একই সঙ্গে ক্লিন ফিডে কোনো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা হলে বাংলাদেশের সব টিভি চ্যানেলেও ক্লিন ফিড (বিজ্ঞাপনবিহীন) সম্প্রচারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে ক্লিন ফিড ছাড়া কীভাবে বাংলাদেশে সম্প্রচার অব্যাহত রাখা যায়, সে ব্যাপারে কোনো আলোচনা না করে চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হঠকারী সিদ্ধান্ত।
‘এমন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বিদেশি চ্যানেল দেখার প্রয়োজনীয় ফি দিয়েও চ্যানেল দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে বিনোদনের অভাব দেখা দিয়েছে, যা সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের মান অত্যন্ত নিম্ন। ফলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিদেশি চ্যানেল দেখেন। সেগুলো বন্ধের ফলে দেশের মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা কার্টুন, নারীরা রান্না ও সিরিয়াল এবং পুরুষরা সংবাদ, খেলা ও রিয়্যালিটি শো দেখতে পারছেন না। এটি প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।
নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার চালু না করে দিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিলেটের দেবাশীষ দেবু, বরিশালের তন্ময় তপু, কুমিল্লার মাহফুজ নান্টু ও সাভারের ইমতিয়াজ উল ইসলাম।
আরও পড়ুন:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হোন কিন্তু যারা মাছ ধরে তার পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত। এ প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়। তাই পুরুষ জেলেদের সঙ্গে নারীদেরও কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত “টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ”-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এ সেমিনার এসে দায়িত্ব বেড়ে গেছে। আমাদের জেলেদের বিশেষ করে নারী জেলেদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। এখন পর্যন্ত নারীদেরকে কৃষকের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। আর নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা তার পরিবার পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে। স্বামীর অবর্তমানে সংসার চালায়।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, "এ পেশায় পুরো পরিবারকে নিয়ে কাজ করতে হয়। মান্তা সম্প্রদায়ের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম।" জেলে সম্প্রদায়ের আইনগত সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড় তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়, সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় ব্যাংকের টাকাও তুলতে পারে না তাদের স্ত্রীরা। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, "আমাদের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা। সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। আর আগের মৎস্য আইনও একই ধরনের। তাই মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫ -এ আমরা এসকল সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দিয়েছি। আর নারীদের স্বীকৃতি দিলে হলে সংখ্যার স্বীকৃতি দিতে হবে। অথচ আমাদের তালিকায় নারীজেলের সংখ্যা খুবই নগন্য, মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু সমাজে অসংখ্য নারী জেলে রয়েছে। এসব ঘাটতি পূরণে আমরা কাজ করছি। "
অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখেছি অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। আমরা চাই যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেইসঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে।
কাঁকড়া ও ঝিনুক মানুষের খাদ্যের অংশ এটিকে বন অধিদপ্তরের সংজ্ঞা থেকে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তা ছাড়া যারা কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলমহাল ইজারা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, জলমহালের কাছের মানুষের নামে অন্যরা জলমহাল ইজারা নেয়। এক্ষেত্রে জৈবভিত্তিক ইজারা দিতে হবে, অর্থাৎ এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলেদের দিতে হবে। বাওড়ে ইজারা জেলেদের দেওয়ার কথা নিশ্চিত হচ্ছে, তবে হাওর নিয়েও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা চলছে। যাতে প্রকৃত জেলেরা তা পায়।
নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পায়। তা ছাড়া আমাদের জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে জাল যার জলা তার নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার রয়েছে নারী। এ সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএনআরএস এর পরিচালক মি. এম. আনিসুল ইসলাম। এমপাওয়ারিং উমেন থ্রু সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টর্স ইন বাংলাদেশ (ইডাব্লিউসিএসএ) প্রকল্পের পরিচিতি উপস্থাপন করেন অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর শাহজাদী বেগম।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএনআরএস-এর পরিচালক ড. এম. আমিনুল ইসলাম এবং জাগো নারী টিম লিডার রিসার্চ আহমেদ আবিদুর রেজা খান।
সংলাপ শেষে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নারী মৎস্যজীবীদের ক্ষমতায়ন ও টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপিত হয়।
সংলাপে সরকারি কর্মকর্তা, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, সিভিল সোসাইটি, শিক্ষাবিদ এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবার পূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ বুধবার রমনা কালী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি অপর্ণা রায়সহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, পূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের জন্য ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হবে। সে কারণে একটি নতুন অ্যাপ খোলা হয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিকে নজরদারি করার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সে কারণে ধর্মীয় নিয়ম মেনে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিগত সরকারের সময় ২ কোটি টাকা পূজা উপলক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হতো। বর্তমান সরকার তা থেকে বাড়িয়ে গত বছর এ লক্ষ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল; এবার সেটি থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পূজা মণ্ডপের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, যেসব শিশু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হয়েছে, তাদের লেখা ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে 'নবারুণ' পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে উপদেষ্টা চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার তথ্য ভবনে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর প্রকাশিত কিশোর মাসিক পত্রিক 'নবারুণ'-এর লেখকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের আঁকা ছবি ও লেখা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে হবে। 'নবারুণ' পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের লেখা ও ছবি বেশি পরিমাণে প্রকাশিত হলে তারা অনুপ্রাণিত হবে। এতে তাদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।
মাহফুজ আলম বলেন, "যে সরকারই দায়িত্বে আসুক না কেন, শিশু-কিশোরদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকা উচিত।" তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-সহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখালিখি করার জন্য লেখকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
'নবারুণ' পত্রিকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকাশনার শুরু থেকে (১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ) এ পর্যন্ত 'নবারুণ' পত্রিকার সকল সংখ্যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এতে পাঠক অনলাইনে পুরাতন সংখ্যা পড়ে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।
'নবারুণ' পত্রিকার কলেবর বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, 'নবারুণ' পত্রিকায় নতুন লেখকদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা উচিত। পত্রিকার প্রতি সংখ্যায় কমপক্ষে পাঁচ জন নতুন লেখকের লেখা প্রকাশের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি শিশু-সাহিত্যিকদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যেসব লেখক ৪০-৫০ বছর ধরে লিখছেন, তাঁদের লেখা 'নবারুণ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। এতে পত্রিকা আরও সমৃদ্ধ হবে। তিনি 'নবারুণ' পত্রিকার লেখক-সম্মানি বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সভায় 'নবারুণ' পত্রিকার লেখকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। তাঁরা 'নবারুণ'-কে একটি অসাধারণ ও সাহসী পত্রিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা পত্রিকাটির মানোন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদা বেগম। সভার শুরুতে 'নবারুণ' পত্রিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন পত্রিকার সম্পাদক ইসরাত জাহান। মতবিনিময় সভাটি সঞ্চালন করেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সিনিয়র সম্পাদক শাহিদা সুলতানা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) মুনির সাতোরির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিধিদলকে জানান, ‘আমরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে, রমজানের ঠিক আগে।’
তিনি উল্লেখ করেন, জনসাধারণ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসাহ বাড়ছে, কারণ দীর্ঘদিন পর—কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দশকেরও বেশি সময় পর—ছাত্র সংসদ নির্বাচন আবার শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।’ তিনি যোগ করেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, তরুণ ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, কারণ ১৫ বছরেরও বেশি সময় পর অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সূচনা বয়ে আনবে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে—জাতির জন্য এক নতুন যাত্রা।’
এক ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত সমর্থন এবং চলমান রোহিঙ্গা মানবিক সংকট নিয়ে মতবিনিময় করেন।
আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ইউরোপীয় আইনপ্রণেতারা। একজন আইনপ্রণেতা প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সরকারের গত ১৪ মাসের ‘অসাধারণ’ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
একজন ডাচ আইনপ্রণেতা মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ কতিপয় দেশের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ‘ঘটনাগুলো সঠিক পথে এগোচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাড়তি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি অর্থাভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শ্রম সংস্কারগুলো তুলে ধরে বলেন, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ওয়েস্টিন পারনাস হোটেলে আজ থেকে ০৩(তিন) দিনব্যাপী (১৬-১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার কো-অপারেশন কনফারেন্স (জিআইসিসি)-২০২৫ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্মেলনে সেতু সচিব সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সেতু সচিব প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেন সেতু বিভাগের কয়েকটি প্রকল্পে কোরিয়ান ইডিসিএফ/ইডিপিএফ (EDCF/EDPF) অর্থানয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পরিবহন খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
জিআইসিসি-২০২৫ সম্মেলনের লক্ষ্য কোরিয়ান নির্মাণ সংস্থাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা এবং বিভিন্ন দেশের প্রকল্প বাস্থবায়নকারীদের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করা। এটি মূলত একটি বিজনেস-টু-বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যেখানে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বিদেশী সরকার, প্রজেক্ট ডেভেলপার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সম্মেলনে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ৩০টি দেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এবং কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় নির্মাণ সংস্থাগুলির কর্মকর্তারা রয়েছেন।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: বিভিন্ন দেশের আসন্ন অবকাঠামো প্রজেক্ট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, নতুন প্রজেক্টে অংশগ্রহণের জন্য চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কোরিয়ান উন্নত প্রযুক্তি যেমন স্মার্ট সিটি, হাই-স্পিড রেল, এবং স্মার্ট পোর্ট সিস্টেমের সাথে পরিচিতি করা।
এছাড়াও সম্মেলনের বাকী অংশে বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন দেশের প্রজেক্ট ব্রিফিং, ব্যক্তিগত বিজনেস মিটিং, কোরিয়ান শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো তাদের নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারা দেশে দেশীয় মাছের সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। এই সংকট নিরসনে উন্মুক্ত জলাশয়ের কোন বিকল্প নাই। সরকার দেশের নদ-নদীতে মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
উপদেষ্টা আজ সকালে কুড়িগ্রামে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান,নারী কৃষক এবং স্হানীয় এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বন্যায় নদীগুলোতে পলি পরার কারণে নাব্যতা হ্রাস, পানি দূষণ, চায়না জাল ব্যবহার ও ইলেকট্রিক শর্ট দিয়ে মাছ কারণে দিনদিন মাছের পরিমাণ কমছে। জোরালো অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ মাছ ধরার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করতে হবে। অভিযান চলমান রাখতে নদীগুলোতে স্পীড বোটের ব্যবহার করা হবে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে তারা সরকারি অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
খামারিদের উৎপাদিত দুধ সংরক্ষণ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এই অঞ্চলে চিলিং সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের আত্মত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, জুলাই যোদ্ধাগণ অনেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন আবার অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের এই ঋণ ভুলবার নয়। এজন্য তিনি সরকারি ও এনজিওর উদ্যোগে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানান।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্হিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোক্তাদির খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ রানাসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর উপদেষ্টা কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ারপাড় গ্রামে নারী কৃষকের বাড়ি পরিদর্শন করেন।
সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
মন্তব্য