টাকার লেনদেন ছাড়াই কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় হাজার হাজার ইয়াবা। এ জন্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন মাদক কারবারিরা। ঢাকায় যারা ইয়াবা নিয়ে আসেন তাদের পরিচিত কাউকে টেকনাফে বন্ধক রাখা হয়। ইয়াবা বিক্রির টাকা পাইকারি কারবারির হাতে যাওয়ার পর বন্ধক রাখা ব্যক্তিকে ছাড়া হয়। কথামতো টাকা না দিলে বন্ধক থাকা ব্যক্তিকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণ।
কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে কারবারিদের হাতে বন্ধক হন রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। বিনা পয়সায় কক্সবাজার ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টেকনাফের পাইকারি ইয়াবা কারবারিদের কাছে তাকে বন্ধক রেখে আসার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার বাসিন্দা সামির আহম্মেদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফরহাদকে বন্ধক রেখে ঢাকায় ফিরে আসেন লাদেন। কিন্তু লাদেন কক্সবাজার-টেকনাফের কারবারিদের কাছে ইয়াবার টাকা পৌঁছে না দেয়ায় ফরহাদকে মারধরের ভিডিও বানিয়ে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে সেটি পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। কারবারিরা সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ফরহাদের পরিবারের কাছে।
মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসার পর ফরহাদের বাবা হাতিরঝিল থানায় অপহরণ মামলা করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ জানতে পারে অপহরণের পেছনের ঘটনা। বেরিয়ে আসে ইয়াবা কারবারিদের মানুষ বন্ধক রাখার কৌশল।
শনিবার টেকনাফের একটি বাড়ি থেকে ফরহাদকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অপহরণের সঙ্গে জড়িত সাব্বির আহমেদ, নুরুল আমিন ও সাদ্দাম হোসেনকে। তবে অধরা থেকে যান সামির। তারও শেষ রক্ষা হয়নি। রোববার সকালে সামিরকে হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফরহাদকে উদ্ধারে গিয়ে আমরা ইয়াবা কারবারিদের বিষয়টি জানতে পেরেছি। ফরহাদ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সামির তাকে কোনো খরচ ছাড়াই কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে রাজি হন ফরহাদ। ২ সেপ্টেম্বর তারা কক্সবাজার যান। সেখানে যাওয়ার পর তিন-চারজন লোক আসেন। সামির ও বাকিরা মিলে ফরহাদকে আটক করে রাখে।
তিনি বলেন, ‘২৬ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ফরহাদের পরিবারের কাছে। সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তারা। তবে এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় ১০ হাজার টাকা বিকাশ করেন ফরহাদের বাবা। এতেও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেন তিনি।’
গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি পুলিশ জানায়, মানুষ বন্ধক রেখে পুরো টাকা না দিয়েই ইয়াবা নিয়ে আসার নতুন কৌশল বেছে নিয়েছেন মাদক কারবারিরা। এই কারবারে যুক্ত হয়েছিলেন সামিরসহ অন্যরা।
সামিরের বরাতে ডিবি পুলিশ জানায়, তিনি ইন্টারনেট সংযোগের কাজ করতেন। তার পরিচিত একজন রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা করেন। ওই ব্যক্তি ইয়াবা আনার জন্য সামিরকে কক্সবাজারে মুজাহিদের কাছে পাঠান। মুজাহিদ সামিরকে ইয়াবা না দিয়ে আরেকজনের মাধ্যমে ঢাকায় পোস্তগোলার ওই ব্যক্তির কাছে দুই হাজার ইয়াবা পাঠান।
পুলিশ জানিয়েছে, মুজাহিদ সামিরকে বলেন, পোস্তগোলার ওই ব্যক্তি ইয়াবার টাকা দিলে তিনি ঢাকায় ফিরতে পারবেন। তাদের অনেক অনুরোধ করলে সাদ্দাম ও মুজাহিদ সামিরকে বলেন, ‘অন্য কাউকে রেখে তুমি যেতে পারবা।’
তখন সামির ইয়াবার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে পোস্তগোলার ওই ব্যক্তির নম্বরে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পান। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জোগাড় করতে না পারায় সামির ফরহাদকে বন্ধক রাখার পরিকল্পনা করেন। তাকে বিনা খরচে বেড়ানোর কথা বলে কক্সবাজার নিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফরহাদকে টেকনাফে নিয়ে সাদ্দাম, মুজাহিদ, নূরে আলম ও ছাব্বিরদের কাছে রেখে ঢাকায় চলে আসেন।
এদিকে দুই হাজার ইয়াবার দাম না পেয়ে সাদ্দাম, মুজাহিদ, নূরে আলম ও ছাব্বির মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ফরহাদকে মারধর করে ভিডিও করে। ওই ভিডিও ইমোতে ফরহাদের বাবার কাছে পাঠিয়ে তারা সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
ডিবি পুলিশ জানায়, ঢাকা ও কক্সবাজার-টেকনাফের মাদক কারবারিরা সমঝোতার ভিত্তিতে মানুষ বন্ধক রাখার এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। দুই পক্ষের কথা-কাজে মিল থাকায় মানুষ বন্ধকের বিষয়টি সামনে আসে না এবং কেউ অভিযোগ করে না। তবে ইয়াবা নিয়ে আসার সময় ওই কারবারিদের কেউ গ্রেপ্তার হলে বা ঢাকার কেউ কথা না রাখলে বন্ধক থাকা ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ নেয়া হয়।
ফরহাদকে বন্ধক রাখা এবং ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা।
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইনের পঞ্চপল্লীতে সহোদর দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালীতে বিক্ষুদ্ধ জনতা সড়কে মানববন্ধন করে গাছের গুড়ি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে।
মধুখালী থানার ওসি মিরাজ হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ঢাকা-মাগুরা মহাসড়কের পাইলট স্কুলের সামনে থেকে নওপাড়া পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে কিছু বিক্ষুব্ধ মানুষ ডুমাইনের ঘটনার প্রতিবাদে সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু মধুখালীতে তারা গাছের গুড়ি ফেলে সড়কে বসে পড়ে।
এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় বলে জানান ওসি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফলতা পাওয়া গেছে। স্বল্প সময়ে ধানের বাম্পার ফলনে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ ধান উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছে।
নতুন উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান বোরো জাতের বিনা ধান-২৫। উচ্চ ফলনশীল হলেও ধানটি হাইব্রিড নয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বাসমতি চালের বিকল্প হিসেবে এ ধানের চাষ বাড়লে দেশে চিকন চালের আমদানি কমতে পারে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামে এ বছর বিনা ধান-২৫ এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হয়েছে। মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. নওরোজ মিয়াসহ এলাকার তিনজন কৃষক চার একর জমিতে বিনা ধান-২৫ এর চাষাবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বিনা ধান-২৫ বোরোর উন্নতমানের নতুন একটি জাত। নতুন উদ্ভাবিত এই ধানের জাতটি সর্বাধিক লম্বা ও সরু। এর চালের আকার চিকন ও লম্বা। বিদেশ থেকে যে বাসমতি চাল আমদানি করা হয় এটাও অবিকল সেই চালের মতো। এজন্য এই চালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি।
এর বাজারমূল্যও বেশ ভালো জানিয়ে সূত্র আরও জানায়, উৎপাদন ব্যয় অন্য ধানের মতোই। তবে ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। দেশের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এই ধান রপ্তানিও করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষক নওরোজ মিয়া বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। এই প্রথম নতুন জাতের বিনা ধান-২৫ চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি শীষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০টি ধান ধরেছে।
‘অন্যান্য জাতের তুলনায় বিনা ধান-২৫ জাতে শীষ প্রতি ধানের পরিমাণও বেশি। চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় নিজেকে আরও উদ্বুদ্ধ করে তুলছে বলে মনে হচ্ছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দেব বলেন, ‘পরীক্ষামূলক চাষাবাদে এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে ধান কাটা হবে।’
ঝিনাইদহ জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন। আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন ও মহেশপুর উপজেলা টিআই হুসাইনসহ আনসার সদস্যরা তাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
সংবাদকর্মীরা জানান, ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার অফিসে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেই খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন সেখানে গেলে তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ। এক পর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঝিনাইদহে কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।
ভুক্তভোগী রোকনুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন এক নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমি এগিয়ে গেলে আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন সোহাগ।
‘আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অন্য আসনার সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে কিল-ঘুষি মারেন। আমাকে সেখানে এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়। পরে মোবাইলে সহকর্মীদের ফোন করলে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি ওই কর্মকর্তাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কিছু ঘটেনি। সে প্রথমে পরিচয় না দেয়ায় তাকে রুমের মধ্যে বসিয়ে রেখেছিলাম। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে পুড়ছে শেরপুর জেলাও। কয়েকদিনের গরমে শেরপুরে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শুধু তাই নয়, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জেলার বোরো ধানের আবাদেও।
কৃষি বিভাগের তথ্যনুসারে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলাজুড়ে ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানখেতে ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় চাহিদামাফিক সেচ দিতে না পারছেন না জেলার কৃষকরা। ফলে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের মনে।
বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় সেচ পাম্পের মোটরও পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সেচ পাম্পের মালিকরাও আছে বিপাকে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯১ হাজার ৯৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমিতে বোরো ধানের ফ্লাওয়ারিং হয়েছে (ফুল ফুটেছে)। অন্যদিকে, পাহাড়ি এলাকায় আগাম জাতের লাগানো ধানগুলো ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে।
জেলার পিডিবি অফিস বলছে, জেলায় দৈনিক বিদ্যুৎতের চাহিদা প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ২৮ মেগাওয়াট। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের মতও একইরকম। তাদের ভাষ্য, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের বিদ্যুৎ চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫০ মেগাওয়াটেরও কম। তাই চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে যতটা পারা যায়, ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মতো। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিক মতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ কম থাকায় মোটর পুড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, পানির অভাবে জমি ফেটে যাচ্ছে। ধানের থোড় (গাছে যে অংশ থেকে ফুল হয়ে পরে ধান হয়) বের হওয়ার পর কিছু কিছু জমির থোড় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
সদর উপজেলার যোগিনীমুড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হারুন বলেন, ‘বোরোর আবাদ কইরা আমরা বর্তমানে খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি। মাঠে যে থুর (থোড়) ধানগুলা বাইর হইতাছে, ঠিকমত সেচ দিবার পাইতাছি না। এই ধানগুলা চিচ (চিটা) হইয়া যাইব।
‘বিদ্যুৎ দিনে ৪-৫ ঘণ্টা থাকে। এত কষ্ট কইরা ফসল ফলাইয়া ঘরে না তোলবার পাইলে আমরা মাঠেই মারা যাব।’
সদর উপজেলার বাজিতখিলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘আবাদ তো নষ্ট হইয়া গেল। কারেন্ট থাহে না। ৫০ হাজার টাহা খরচ কইরা ধান লাগাইছি। পানি দিবার না পাইলে তো সব শেষ। আমগোরে কি মাইরা হারবার চাইতাছে নাকি?’
আরেক কৃষক শামসুল মিয়া বলেন, ‘দিনে কারেন্ট থাহে ৪-৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভোল্টেজ তো থাহে না। কম ভোল্টেজে মোটর চালু দিলে তো মোটর পুইড়া যায়।’
কৃষকদের কাছে বিদুৎ সঙ্কটের কারণে সেচে প্রভাব পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তার দাবি, এতে সেচে তেমন প্রভাব পড়বে না।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আলী হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এই শেরপুর জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ৫টি উপজেলা এবং এর আওতায় প্রায় ১০ হাজার সেচ সংযোগ রয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এর আগে আমরা ভালো বিদুৎ পেয়েছি, তবে বর্তমানে জেলায় ৩০ শতাংশের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি, খুব দ্রুত এ সঙ্কটও কেটে যাবে।’
কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বান্দরবানে যৌথ অভিযানে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাদের আদালতে তোলা হলে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এএসএম এমরান কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রুমা সদর ইউনিয়নের মুনলাই পাড়ার বাসিন্দা লাল নুন নোয়াম বম, লাল দাভিদ বম, চমলিয়ান বম, লাল পেক লিয়ান বম, ভান মুন নোয়াম বম, লাল মিন বম ও বান্দরবান সদর লাইমি পাড়ার বাসিন্দা ভান বিয়াক লিয়ান বম।
তাদের মধ্যে ভান মুন নোয়াম বম রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২৩ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অং ছাইং উ পুলু ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মানিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে ভান মুন নোয়াম বমকে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অং ছাইং উ পুলুয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এর আগে সোমবার রুমা সদর ইউনিয়নের মুনলাইপাড়া থেকে ছয়জন এবং বান্দরবানের মিলনছড়ি পুলিশ চেকপোস্ট থেকে ভান বিয়াক লিয়ান বমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক শাখায় ২ এপ্রিল রাতে ডাকাতি, ম্যানেজারকে অপহরণ, মসজিদে হামলা, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়।
পরদিন দুপুরে বান্দরবানের থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ডাকাতির ঘটনায় চারটি মামলা হয়।
নয়টি মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৫৬ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-১ শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৭ মে। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১০ থেকে ১৪ মে ও আপিল নিষ্পত্তি ১৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ১৭ মে।
এই সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মার্চ মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়।
প্রান্তিক জনগণের যাতায়াত সুবিধা এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে আসছে না সরকারের ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের অভাবে দুই বছর ধরে কালীগঙ্গায় ঠাঁই দাড়িয়ে আছে সেটি।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঘিওরের সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘের সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডারস এবং মেসার্স কহিনুর এন্টাইপ্রাইজ। সংযোগ সড়ক ছাড়াই ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
এরপর সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রথমার্ধে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০ কোটি থাকলেও পরবর্তীতে সংযোগ সড়ক ও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের আরও পাঁচ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর সেতু ও সংযোগ সড়কসহ যাবতীয় উন্নয়নকাজের ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ৪৫৪ হাজার টাকা। তবে সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের সময় বাড়ানো হলেও নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যবহারোপযোগী হয়নি সেতুটি।
স্থানীয় মির্জাপুর এলাকার কৃষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ দেখে ভাবছিলাম, আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হবে, কিন্তু ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা না থাকায় আমরা কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারি না। আগের মতো নৌকায় করেই খেতের ফসল আনতে হচ্ছে। আমাগো মনের আশা মনেই রইল। তাহলে সরকার এত টাকা দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করল কেন?’
আরেক কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সেতুর পাশে আমার দেড় শতাংশ কৃষিজমি আছে। সেতুর রাস্তার জন্য আমার জমি নিতে চাইছে। এলাকার মানুষের ভালোর জন্য আমার জমি দিতে চাইছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে খালি শুনতেছি, আমাগো জমি অধিগ্রহণ করা হবে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জমিতে আগের মতো ইরি ধানের আবাদ করছি।’
স্থানীয় বালিয়াবাধা এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সেতুটি নির্মাণের পর একদিনের জন্যও কেউ সেতুটি ব্যবহার করতে পারে নাই। সেতুটি ব্যবহার করতে পারলে সেতুর আশপাশের অন্তত ৫০টি গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো।
‘সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় আমাদের ও আশপাশের এলাকার মানুষকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে জেলা শহরে যেতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করবে সরকার।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মাসুদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার জমির মালিকদের বাধার মুখে পড়ে কাজ বন্ধ করতে হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের জায়গা বুঝে পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। আর সংযোগ সড়কের কাজ করতে আমাদের সময় লাগবে ৪-৫ মাস। আমরা যত দ্রুত পারব, তত দ্রুত কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা।
তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই ভূমি জটিলতা কেটে যাবে এবং সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য খোঁজ খবর নিচ্ছে।’
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে মানিকগঞ্জ ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর এল এ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৪.৯৬ শতাংশ ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে ভূমি মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে খুব দ্রুত ভূমির মালিকদের তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য