টাকার লেনদেন ছাড়াই কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় হাজার হাজার ইয়াবা। এ জন্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন মাদক কারবারিরা। ঢাকায় যারা ইয়াবা নিয়ে আসেন তাদের পরিচিত কাউকে টেকনাফে বন্ধক রাখা হয়। ইয়াবা বিক্রির টাকা পাইকারি কারবারির হাতে যাওয়ার পর বন্ধক রাখা ব্যক্তিকে ছাড়া হয়। কথামতো টাকা না দিলে বন্ধক থাকা ব্যক্তিকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণ।
কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে কারবারিদের হাতে বন্ধক হন রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। বিনা পয়সায় কক্সবাজার ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টেকনাফের পাইকারি ইয়াবা কারবারিদের কাছে তাকে বন্ধক রেখে আসার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার বাসিন্দা সামির আহম্মেদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফরহাদকে বন্ধক রেখে ঢাকায় ফিরে আসেন লাদেন। কিন্তু লাদেন কক্সবাজার-টেকনাফের কারবারিদের কাছে ইয়াবার টাকা পৌঁছে না দেয়ায় ফরহাদকে মারধরের ভিডিও বানিয়ে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে সেটি পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। কারবারিরা সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ফরহাদের পরিবারের কাছে।
মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসার পর ফরহাদের বাবা হাতিরঝিল থানায় অপহরণ মামলা করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ জানতে পারে অপহরণের পেছনের ঘটনা। বেরিয়ে আসে ইয়াবা কারবারিদের মানুষ বন্ধক রাখার কৌশল।
শনিবার টেকনাফের একটি বাড়ি থেকে ফরহাদকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অপহরণের সঙ্গে জড়িত সাব্বির আহমেদ, নুরুল আমিন ও সাদ্দাম হোসেনকে। তবে অধরা থেকে যান সামির। তারও শেষ রক্ষা হয়নি। রোববার সকালে সামিরকে হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফরহাদকে উদ্ধারে গিয়ে আমরা ইয়াবা কারবারিদের বিষয়টি জানতে পেরেছি। ফরহাদ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সামির তাকে কোনো খরচ ছাড়াই কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে রাজি হন ফরহাদ। ২ সেপ্টেম্বর তারা কক্সবাজার যান। সেখানে যাওয়ার পর তিন-চারজন লোক আসেন। সামির ও বাকিরা মিলে ফরহাদকে আটক করে রাখে।
তিনি বলেন, ‘২৬ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ফরহাদের পরিবারের কাছে। সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তারা। তবে এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় ১০ হাজার টাকা বিকাশ করেন ফরহাদের বাবা। এতেও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেন তিনি।’
গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি পুলিশ জানায়, মানুষ বন্ধক রেখে পুরো টাকা না দিয়েই ইয়াবা নিয়ে আসার নতুন কৌশল বেছে নিয়েছেন মাদক কারবারিরা। এই কারবারে যুক্ত হয়েছিলেন সামিরসহ অন্যরা।
সামিরের বরাতে ডিবি পুলিশ জানায়, তিনি ইন্টারনেট সংযোগের কাজ করতেন। তার পরিচিত একজন রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা করেন। ওই ব্যক্তি ইয়াবা আনার জন্য সামিরকে কক্সবাজারে মুজাহিদের কাছে পাঠান। মুজাহিদ সামিরকে ইয়াবা না দিয়ে আরেকজনের মাধ্যমে ঢাকায় পোস্তগোলার ওই ব্যক্তির কাছে দুই হাজার ইয়াবা পাঠান।
পুলিশ জানিয়েছে, মুজাহিদ সামিরকে বলেন, পোস্তগোলার ওই ব্যক্তি ইয়াবার টাকা দিলে তিনি ঢাকায় ফিরতে পারবেন। তাদের অনেক অনুরোধ করলে সাদ্দাম ও মুজাহিদ সামিরকে বলেন, ‘অন্য কাউকে রেখে তুমি যেতে পারবা।’
তখন সামির ইয়াবার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে পোস্তগোলার ওই ব্যক্তির নম্বরে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পান। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জোগাড় করতে না পারায় সামির ফরহাদকে বন্ধক রাখার পরিকল্পনা করেন। তাকে বিনা খরচে বেড়ানোর কথা বলে কক্সবাজার নিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফরহাদকে টেকনাফে নিয়ে সাদ্দাম, মুজাহিদ, নূরে আলম ও ছাব্বিরদের কাছে রেখে ঢাকায় চলে আসেন।
এদিকে দুই হাজার ইয়াবার দাম না পেয়ে সাদ্দাম, মুজাহিদ, নূরে আলম ও ছাব্বির মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ফরহাদকে মারধর করে ভিডিও করে। ওই ভিডিও ইমোতে ফরহাদের বাবার কাছে পাঠিয়ে তারা সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
ডিবি পুলিশ জানায়, ঢাকা ও কক্সবাজার-টেকনাফের মাদক কারবারিরা সমঝোতার ভিত্তিতে মানুষ বন্ধক রাখার এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। দুই পক্ষের কথা-কাজে মিল থাকায় মানুষ বন্ধকের বিষয়টি সামনে আসে না এবং কেউ অভিযোগ করে না। তবে ইয়াবা নিয়ে আসার সময় ওই কারবারিদের কেউ গ্রেপ্তার হলে বা ঢাকার কেউ কথা না রাখলে বন্ধক থাকা ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ নেয়া হয়।
ফরহাদকে বন্ধক রাখা এবং ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা।
আরও পড়ুন:বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জেলা সদরে স্থাপনের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার রাঙামাটি ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ও আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রাঙামাটি ক্লাব অ্যাসোসিশনের আহ্বায়ক মাহাবুবুল বাসেত অপুর সভাপতিত্বে ও রফিক স্মৃতি ক্লাবের সভাপতি বেলাল হোসেন সাকুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপেন তালুকদার দিপু, প্রতিভাষ ক্লাবের সাধারণ সাইফুল ইসলাম শাকিল, ছদক ক্লাবের সভাপতি প্রীতিময় চাকমা, ব্রাদাস ক্লাবের আহ্বায়ক সদানন্দ চাকমাসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
ফুটবলে মারি চৌধুরী, আনুচিং মগিনি, বরুণ বিকাশ দেওয়ান, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, রূপনা চাকমা এবং বক্সিংয়ে সুর কৃষ্ণ চাকমাসহ অনেকের সাফল্য প্রমাণ করে এই অঞ্চল সুপ্ত প্রতিভার ভাণ্ডার। তবে দুঃখজনকভাবে পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও পেশাদার প্রশিক্ষণের অভাবে অসংখ্য প্রতিভা বিকশিত হওয়ার আগেই হারিয়ে যাচ্ছে। রাঙামাটি সদরে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র হলে তা জেলার ক্রীড়া ঐতিহ্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিকেএসপির আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে, একটি কুচক্রী মহল তা বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। রাঙামাটি সদরের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে কোনো উপজেলায় এটি স্থাপন করা হলে এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই মানববন্ধনে বক্তারা বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জেলা সদরে স্থাপনের জোড় দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বিকেএসপি মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর কার্যক্রম, সক্ষমতা ও সমন্বয় প্রক্রিয়া অনুধাবন শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে কুড়িগ্রামে। বুধবার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকের স্বপ্নকুড়ি সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও এবং হেলভেটাসের যৌথ উদ্যোগে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন ও যাচাইয়ের জন্য আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক তানভীর আহমেদ সরকার, জেলা তথ্য কর্মকর্তা শাহজাহান আলী, জেলা সমবায় কর্মকর্তা আতিউর রহমান, হেলভেটাসের মাহমুদুল হাসান ও আয়াতুল্লাহ আল মামুন এবং ইএসডিওর মশিউর রহমান ও আবু জাফর।
দিনব্যাপী সেমিনারে কুড়িগ্রাম জেলায় ঘন ঘন ও তীব্র দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা ও নদীভাঙনের- মুখোমুখি হয়ে জীবিকা হারাচ্ছে, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও গুরুতর সামাজিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো দুর্যোগ প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে হেলভেটাস বাংলাদেশের সহায়তায় একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। যার লক্ষ্য ছিল ডিএমসিগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করা।
সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা ফলাফলে কমিটিগুলোর বিদ্যমান শক্তি ও সীমাবদ্ধতা উভয়ই তুলে ধরা হয়।
এছাড়া বিদ্যমান জাতীয় দুর্যোগ তহবিল ও বরাদ্দ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, অঞ্চলভিত্তিকভাবে জরুরি তহবিল ব্যবহার করে সম্পদ সরবরাহ, ঘন ঘন ঘটিত দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ যা জীবিকায়নের অগ্রগতিকে বারবার বাধাগ্রস্ত করে- এবং সরকার ও এনজিওগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিসহ মিডিয়াকর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন।
পটুয়াখালীর দুমকীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে কলেজশিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় তিন কিশোরকে পৃথক আইনে সাজা দিয়েছেন আদালত। এদের মধ্যে দুই কিশোরকে ১৩ বছর করে, অন্যজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নীলুফার শিরিন এ রায় দেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত শিশু সংশোধনাগারে থাকবে। এরপর প্রচলিত আইনে তারা অন্য আসামিদের মতো কারাগারে সাজা ভোগ করবে।
ঘটনার প্রায় সাত মাসের মধ্যে এ রায় দিয়েছেন আদালত। গত ২৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় মোট ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে ধর্ষণের অভিযোগে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া উভয়কে পর্নোগ্রাফি আইনে আরও তিন বছর করে সাজা দেন আদালত। অন্যদিকে পুলিশের অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আরেক কিশোর আসামিকে ধর্ষণের অভিযোগে ১০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আন্দোলনের সময় গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে দুমকী উপজেলার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই কলেজশিক্ষার্থী। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ দুপুরে থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৭ এপ্রিল বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সাত মাস পাঁচ দিনের মাথায় রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। আসামিরা যেহেতু কিশোর বয়সের। তাই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের শিশু সংশোধনাগারে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
বরিশাল শহরকে বলা হয় রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের শহর। এই আধা গ্রামীণ, আধা শহুরে পরিবেশে কবির শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে। ১৯৪৬ সালে কলকাতা যাওয়ার আগে বরিশালে তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল বগুড়া রোডের সর্বানন্দ ভবন, যা তার স্বপ্নের বাড়ি হিসেবে পরিচিত।
বগুড়া সড়ক ধরে শীতলাখোলা পেরিয়ে ব্রজমোহন কলেজ পর্যন্ত যে পথ, সেই সড়ক ধরেই ছিল জীবনানন্দের পৈতৃক নিবাস। বাড়ির নাম এসেছে তার ঠাকুরদা সর্বানন্দ দাশের নামানুসারে। সর্বানন্দ দাশ বরিশাল কালেক্টরেটের কর্মচারী ছিলেন। বর্তমানে সেই বগুড়া সড়ক কাগজে জীবনানন্দ সড়ক নামে পরিচিত।
জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের বাড়ি ছিল গাছগাছালিতে ঢাকা, ফলদ বৃক্ষের সমাহারে ঘেরা। বাড়ির পেছনে ছিল মাঝারি পুকুর এবং নারকেল, সুপারি, আম, কাঁঠাল, জাম ও আনারসের বাগান। তবে বর্তমানে সর্বানন্দ ভবন তিন ভাগে বিভক্ত। বাম পাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গভীর নলকূপ, ডান দিকে দপ্তরের গুদাম ও কলোনি, আর মাঝখানে একটি আবাসিক ভবন। মূল বাড়ির স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ধানসিড়ি’নামের একটি বাড়ি। জীবনানন্দের ছোট্ট সমাধিক্ষেত্রও ছিল এই বাড়ির একাংশে, যেখানে একসময় ফুলের বাগান ও স্মৃতির মাঠ ছিল। কবি জীবদ্দশায় এই বাড়িতেই কাটাতেন নিভৃত সময়ে, তার ঘরে ছিল শোয়ার ঘর, গোসলখানা এবং বারান্দা। বড় বারান্দায় কবির হাঁটাচলা ও ভাবনার সময় যাপন হতো।
১৯৪৬ সালের জুলাইয়ে বিএম কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে জীবনানন্দ কলকাতায় যান এবং এরপর আর দেশে ফেরেননি। দেশভাগের পর তার পরিবারও কলকাতায় চলে যায়। ১৯৫৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যমে মূল বাড়ি বিক্রি হয়। পরবর্তীতে এখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কলোনি, গুদাম ও পানির পাম্প বসানো হয়।
বরিশালের সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে কবির বসতবাড়ি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। আন্দোলন, মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশের পর কিছুটা উদ্যোগে কবির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জীবনানন্দ দাশ পাঠাগার ও মিলনায়তন। তবে পাঠাগার ও মিলনায়তন বর্তমানে তালাবদ্ধ এবং ধুলো জমে আছে। কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বিএম কলেজ থেকে আইএ, এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ ও এমএ পাস করেছেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৪ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ২২ অক্টোবর তিনি প্রয়াণ বরণ করেন। জীবনানন্দ দাশের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ঝরাপালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, রূপসী বাংলা। তার অধিকাংশ কবিতার প্রেক্ষাপট বরিশাল।
বুধবার ছিল রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই উপলক্ষে বরিশালে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কবিকে স্মরণ করছেন। বরিশালের জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তনে কবির ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কবিপ্রেমীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় কবির পৈত্রিক ভিটায় নির্মিত স্মৃতি মিলনায়তনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বরিশাল কবিতা পরিষদ ও প্রগতী লেখক সংঘের উদ্যোগে কবি আড্ডা ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আগুনমুখা প্রকাশনীর আয়োজনে দিনব্যাপী কবি আড্ডা ও ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরণ, সংস্কৃতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনভর নানা কর্মসূচি পরিচালনা করেছে।
আয়োজকদের মতে, কবি জীবনানন্দ দাশের চিন্তা ও চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন করা হয়েছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এক যুবদল নেতার পরকীয়ার বিচার করতে গিয়ে নারীকে নির্যাতন করেন ইউপি সদস্য। গত ১৬ অক্টোবরের ঘটনা হলেও গত মঙ্গলবার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
পরকীয়া করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক ওই যুবদল নেতা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বিল্লাল হোসেন। আর নারীকে নির্যাতন করা ওই ইউপি মেম্বার শ্রীপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গোপালনগর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. বজলুর রহমান।
ভাইরাল হওয়ার ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ইউপি মেম্বার বজলুর রহমান ওই নারীকে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করছেন। এ সময় ওই নারী বাচারা আকুতি করছেন। পাশেই বসে আছেন পরকীয়া করতে এসে আটক হওয়া যুবদল নেতা বিল্লাল হোসেন।
এই ঘটনার পর ইউপি সদস্যের নম্বরে ফোন দিলে ভুল নম্বর বলে কল কেটে দেন তিনি।
এ ঘটনার ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে যায় পুলিশ। এ কথা জানিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘটনাটি গত বৃহস্পতর বা তার আগের। তবে মঙ্গলবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আমরা বিষয়টি জানতে পেরে ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে পুলিশ পাঠাই। কিন্তু ততক্ষণে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান ওই ইউপি সদস্য। আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার পরেই পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের পরিবার। পুলিশ ও ইউপি সদস্যের বাড়িতে আছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
কুমিল্লাতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়িকে নকল স্বর্ণ দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কুমিল্লাতে ব্যবসায়ীরা পুরোনো স্বর্ণ ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বারবার।
জানা যায়, গত ১৫ দিনে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জের বাজারে স্বর্ণের দোকানে ইমিটেশন গোল্ড, সিটিগোল্ডকে পুরোনো স্বর্ণ বলে চালিয়ে দিতে এসে আটক হয়েছে নারী ও পুরুষ প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য। আটককৃতদের প্রাথমিকভাবে উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশে দেওয়ার পর কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে এসেও একই কায়দায় তারা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই চক্র মাস না যেতেই প্রতারক আবারও যুক্ত হয় এ পেশায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দুপুরে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন বলিবাড়ীর প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা (৩৫) নামে এক নারী কোম্পানিগঞ্জ বাজারে সিটিগোল্ডকে স্বর্ণ বলে পরিবর্তন করতে আসে বৃষ্টি শিল্পালয়ে নামক একটি প্রতিষ্ঠানে। ওই নারীর কথাবার্তায় দোকান মালিকের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে।
পরে বণিক সমিতি সভাপতি চন্দন বণিক ও সাধারণ সম্পাদক আ. হান্নানকে অবহিত করা হলে বণিক সমিতি পক্ষ থেকে মুরাদনগর থানায় বিষয় জানানো হয়। এ সময় পুলিশ এসে নারীকে আটক করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. হান্নান জানান, সবাই সতর্ক থেকে ব্যবসা করতে হবে, কারণ এই মাসেই কোম্পানিগঞ্জে দুটি ঘটনা ঘটে গেছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানা ইনচার্জ জানান, বিষয় শুনেছি এসআই মামুন প্রতারক নারীকে আটক করেছে।
এছাড়াও আরও ব্যবসায়ীরা জানান, কোম্পানীগঞ্জ বাজার স্বর্ণের দোকান হাজী স্বর্ণ শিল্পালয়ের থেকে গত ৮ অক্টোবর তিনজন মহিলা প্রতারক এসে দোকানদার থেকে সিটিগোল্ডের একটি চেইন এবং দুই জোড়া কানের রিং দিয়ে স্বর্ণের চেইন আংটি দুলসহ নিয়ে পালিয়ে যায়। যা সিসি ফুটেজে ধরা পড়ে।
রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাঁঠালভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ ভবনে বসে ক্লাস করছে। ১৯৬৬ সালে নির্মিত এই বিদ্যালয় ভবনটির পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর। বিদ্যালয়টি পরিদর্শনকালে দেখা যায় পিলারগুলো ও দেওয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ২২০ জন শিক্ষার্থী ও ৭ শিক্ষক নিয়ে থাকা ৫৯ বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির পাশে অপর একটি ভবন রয়েছে তিন কক্ষবিশিষ্ট। এই ভবনের একটি কক্ষে বসেন শিক্ষকরা। অপর দুটি কক্ষে বসে পাঠ নেয় দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এখানে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা না থাকায় অবশিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয় আগের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বসার জায়গা না থাকায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের সেখানে বসিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলেছে ক্লাস চলাকালীন ছাদ থেকে বালু খসে পড়ে তাদের মাথার ওপর ও চোখে-মুখে।’
কাঁঠালভাঙ্গা এই বিদ্যালয়টির মতো এই উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়েও রয়েছে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গার সংকট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলো নতুন নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। কিছু কিছু নতুন ভবনের কাজ শেষ হলেও এখনো অন্তত ২০টি বিদ্যালয়ের ভবন অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরনবী ও উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম, বলেন কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না জমি-সংক্রান্ত বিরোধ থাকার কারণে। অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ভবনগুলো নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল পতিত সরকারের আমলে আওয়ামীপন্থি ঠিকাদাররা। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেসব ঠিকাদার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলে নির্মাণ কাজে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। পরে প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ করার কাজ করছে। ইতোমধ্যে কিছু ভবনের কাজ শেষ হয়েছে।
মন্তব্য