টাকার লেনদেন ছাড়াই কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ঢাকায় পাঠানো হয় হাজার হাজার ইয়াবা। এ জন্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন মাদক কারবারিরা। ঢাকায় যারা ইয়াবা নিয়ে আসেন তাদের পরিচিত কাউকে টেকনাফে বন্ধক রাখা হয়। ইয়াবা বিক্রির টাকা পাইকারি কারবারির হাতে যাওয়ার পর বন্ধক রাখা ব্যক্তিকে ছাড়া হয়। কথামতো টাকা না দিলে বন্ধক থাকা ব্যক্তিকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণ।
কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে কারবারিদের হাতে বন্ধক হন রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। বিনা পয়সায় কক্সবাজার ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টেকনাফের পাইকারি ইয়াবা কারবারিদের কাছে তাকে বন্ধক রেখে আসার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার বাসিন্দা সামির আহম্মেদের বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানিয়েছে, ফরহাদকে বন্ধক রেখে ঢাকায় ফিরে আসেন লাদেন। কিন্তু লাদেন কক্সবাজার-টেকনাফের কারবারিদের কাছে ইয়াবার টাকা পৌঁছে না দেয়ায় ফরহাদকে মারধরের ভিডিও বানিয়ে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে সেটি পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। কারবারিরা সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ফরহাদের পরিবারের কাছে।
মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসার পর ফরহাদের বাবা হাতিরঝিল থানায় অপহরণ মামলা করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ জানতে পারে অপহরণের পেছনের ঘটনা। বেরিয়ে আসে ইয়াবা কারবারিদের মানুষ বন্ধক রাখার কৌশল।
শনিবার টেকনাফের একটি বাড়ি থেকে ফরহাদকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অপহরণের সঙ্গে জড়িত সাব্বির আহমেদ, নুরুল আমিন ও সাদ্দাম হোসেনকে। তবে অধরা থেকে যান সামির। তারও শেষ রক্ষা হয়নি। রোববার সকালে সামিরকে হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফরহাদকে উদ্ধারে গিয়ে আমরা ইয়াবা কারবারিদের বিষয়টি জানতে পেরেছি। ফরহাদ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সামির তাকে কোনো খরচ ছাড়াই কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে রাজি হন ফরহাদ। ২ সেপ্টেম্বর তারা কক্সবাজার যান। সেখানে যাওয়ার পর তিন-চারজন লোক আসেন। সামির ও বাকিরা মিলে ফরহাদকে আটক করে রাখে।
তিনি বলেন, ‘২৬ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ফরহাদের পরিবারের কাছে। সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তারা। তবে এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় ১০ হাজার টাকা বিকাশ করেন ফরহাদের বাবা। এতেও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেন তিনি।’
গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি পুলিশ জানায়, মানুষ বন্ধক রেখে পুরো টাকা না দিয়েই ইয়াবা নিয়ে আসার নতুন কৌশল বেছে নিয়েছেন মাদক কারবারিরা। এই কারবারে যুক্ত হয়েছিলেন সামিরসহ অন্যরা।
সামিরের বরাতে ডিবি পুলিশ জানায়, তিনি ইন্টারনেট সংযোগের কাজ করতেন। তার পরিচিত একজন রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা করেন। ওই ব্যক্তি ইয়াবা আনার জন্য সামিরকে কক্সবাজারে মুজাহিদের কাছে পাঠান। মুজাহিদ সামিরকে ইয়াবা না দিয়ে আরেকজনের মাধ্যমে ঢাকায় পোস্তগোলার ওই ব্যক্তির কাছে দুই হাজার ইয়াবা পাঠান।
পুলিশ জানিয়েছে, মুজাহিদ সামিরকে বলেন, পোস্তগোলার ওই ব্যক্তি ইয়াবার টাকা দিলে তিনি ঢাকায় ফিরতে পারবেন। তাদের অনেক অনুরোধ করলে সাদ্দাম ও মুজাহিদ সামিরকে বলেন, ‘অন্য কাউকে রেখে তুমি যেতে পারবা।’
তখন সামির ইয়াবার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে পোস্তগোলার ওই ব্যক্তির নম্বরে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পান। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জোগাড় করতে না পারায় সামির ফরহাদকে বন্ধক রাখার পরিকল্পনা করেন। তাকে বিনা খরচে বেড়ানোর কথা বলে কক্সবাজার নিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফরহাদকে টেকনাফে নিয়ে সাদ্দাম, মুজাহিদ, নূরে আলম ও ছাব্বিরদের কাছে রেখে ঢাকায় চলে আসেন।
এদিকে দুই হাজার ইয়াবার দাম না পেয়ে সাদ্দাম, মুজাহিদ, নূরে আলম ও ছাব্বির মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ফরহাদকে মারধর করে ভিডিও করে। ওই ভিডিও ইমোতে ফরহাদের বাবার কাছে পাঠিয়ে তারা সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
ডিবি পুলিশ জানায়, ঢাকা ও কক্সবাজার-টেকনাফের মাদক কারবারিরা সমঝোতার ভিত্তিতে মানুষ বন্ধক রাখার এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। দুই পক্ষের কথা-কাজে মিল থাকায় মানুষ বন্ধকের বিষয়টি সামনে আসে না এবং কেউ অভিযোগ করে না। তবে ইয়াবা নিয়ে আসার সময় ওই কারবারিদের কেউ গ্রেপ্তার হলে বা ঢাকার কেউ কথা না রাখলে বন্ধক থাকা ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ নেয়া হয়।
ফরহাদকে বন্ধক রাখা এবং ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পেয়েছে ডিবি পুলিশ। এদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা।
আরও পড়ুন:১২ রবিউল আউয়াল ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণ হতে আঞ্জুমানে রহমানিয়ার মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার সভাপতি ও বিএসপি চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমী সুফিবাদী জনতার অংশগ্রহণে জাঁক-জমকভাবে জশনে জুলুস র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিমদিক থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি দোয়েল চত্তর, শিক্ষা ভবনূ? ও কদম ফোয়ারা সড়ক প্রদক্ষিন করে আবার পশ্চিম গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।
ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো ধর্মপ্রাণ সুফিবাদী জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হন। এবার ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর ১৫০০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ও মানুষের মধ্যে ছিল ব্যপক উচ্ছ্বাসও উদ্ধিপনা।
শোভাযাত্রার অগ্রভাগে বড় অক্ষরে লেখা ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’, ‘ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা’। অংশগ্রহণকারীদের হাতে কালেমা খচিত পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। তারা বিশাল জাতীয় পতাকা বহন করে রাজধানীর রাস্তাঘাট মুখরিত করে তোলেন। চারদিকে ধ্বনিত হতে থাকে নারায়ে তাকবির ও নারায়ে রিসালতের স্লোগান। অংশগ্রহনকারীদের গায়ে ছিলো সাদা টিশার্ট মাথায় সাদা ক্যাপ।শোভাযাত্রা শেষে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শান্তি সমাবেশে নারীদের ও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএসপি’র চেয়ারম্যান শাহসূফী ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, মহানবী (দ.) সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণকর সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
রাসূলুল্লাহ (দ.) আমাদের সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার দীক্ষা দিয়েছেন। অথচ আজ পৃথিবী জুড়ে চলছে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ত্রাস ও অমানবিকতা। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো প্রিয় নবীর শিক্ষা বাস্তবায়ন।
বিএসপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের উচিত ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)-এর পবিত্র বার্তা হৃদয়ে ধারণ করে ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তা প্রয়োগ করা। তবেই সমাজে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিকতার আলো ছড়িয়ে পড়বে।
সাতক্ষীরা পারিবারিক বিরোধের জেরে মোরসালিন নামের ১১ বছরের এক শিশুকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে । এঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমান শাওন ও তার মা নাজমা আক্তারকে থানা হেফাজতে নিয়েছে।এছাড়া মোরসালিনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। শুক্রবার পৌনে একটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের জনৈক আব্দুল মাজেদের পুকুরে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোরসালিন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক রাজু আহমেদের ছেলে ও কাশেমপুর সরদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
আর পুলিশ হেফাজতে নেওয়া মাহফুজুর রহমান শাওন একই গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে।
নির্মাণ শ্রমিক রাজু আহমেদ জানান, প্রতিবেশী আবু সাঈদের সাথে তাঁর দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। আবু সাঈদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকেসহ গ্রামের বহু নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করিয়ে হয়রানি করেছে।আজকের তুচ্ছ একটি ঘটনায় তার ছেলে ও স্ত্রী দুজনে মিলে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। ‘’
অভিযুক্ত শাওনের দাদী আলেমা খাতুন জানান, ‘‘ আমার ছেলে এবং ছেলে বউ আমাদের স্বামী স্ত্রীকে খুব নির্যাতন করে। তাদের থেকে আমরা আলাদা থাকি। শুক্রবার সকালে বাড়ির লেবু গাছ থেকে দুটি লেবু প্রতিবেশী রাজুর স্ত্রী রেহানার কাছে বিক্রয় করি। এতে আমার ছেলের বউ নাজমা এবং পোতাছেলে শাওন ক্ষিপ্ত হয়ে রাজুর ছেলেকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলে ‘’
হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়ে নিহত মোরসালিনের মা রেহানা খাতুন জানান,‘‘ আমি শাওনের দাদির কাছ থেকে দুটো লেবু কিনেছি। এতে শাওন ও তার মা নাজমা খাতুন আমাকে প্রচুর গালিগালাজ করেছে। এর ঘন্টা দুই পরে আমার ছেলে মোরসালিন পুকুরে গোসল করতে গেলে শাওন ও তার মা তাকে চুবিয়ে মেরে ফেলেছে।’’
স্থানীয় অধিবাসি শহিদুল ইসলাম জানান, ‘‘ শিশুটিকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার পর ক্ষুদ্র জনতা ঘাতক মাহফুজুর রহমান শাওন ও তার মা নাজমা আক্তারকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে তাদেরকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।’’
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর হাত থেকে শাওন ও তার মা নাজমা আক্তারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত মোরসালিনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করা হয়েছে শনিবার । এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি ।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে থানার সামনে সালিশি দরবারে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মজনু মিয়া (৩০) নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে করিমগঞ্জ থানার সামনে একটি চায়ের স্টলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত মজনু মিয়া উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কান্দাইল ক্ষিদিরপুর গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। তিনি একজন- মুদি দোকানি।
পুলিশ জানায়,জয়কা এলাকার তোতা মিয়া ও ইসলাম উদ্দিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় দেনদরবার হয়।
সম্প্রতি ইসলাম উদ্দিনের লোকজন প্রতি পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করলে এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে করিমগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আলীম এলাকার গণ্যমানদের নিয়ে উভয় পক্ষকে থানায় ডাকেন।
শুক্রবার বিকেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে করিমগঞ্জ থানার সামনে একটি চা-স্টলে উভয় পক্ষের মধ্যে সালিশ দরবার বসে। সালিশ চলাকালে থানার সামনে দুপক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন মজনু মিয়া (৩০)। তাকে প্রথমে করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখান থেকে আশংকাজনক অবস্থায় কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুব মুর্শেদ কথা বলতে রাজি হননি।
আজ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ, শ্রদ্ধেয় সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৭২ সালের এই দিনে ভারতের মাইহারে পরলোকগমন করেন।
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার (বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া) নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সাবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ এবং মাতার নাম সুন্দরী বেগম। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর স্ত্রীর নাম মদনী বিবি। তাঁদের এক পুত্র (বিশ্ববিখ্যাত সরোদ বাদক আলী আকবর খাঁ) ও দুই কন্যা (সরিজা ও রৌশন আরা/অন্নপূর্ণা) ছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল তাঁর। মাত্র আট বছর বয়সে মায়ের অসুস্থতার অজুহাতে ১২ টাকা নিয়ে গভীর রাতে বাড়ি ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। সেখানে ‘মনমোহন দেব’ নামে পরিচিত হয়ে ওস্তাদ নুলো বাবুর কাছ থেকে সংগীত শিক্ষার সূচনা করেন। সংগীতের প্রতি একাগ্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে, তিনি এমনকি নিজের বিবাহের রাতেও স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয়বারের মতো কলকাতায় পালিয়ে যান।
তিনি পরবর্তী জীবনে ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে বীণা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৩৩ বছরের দীর্ঘ সংগীত শিক্ষা পর্ব শেষ করেন। সংগীত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি কলকাতা, লাহোর, মাইহারসহ নানা জায়গায় সংগীত চর্চা ও শিক্ষাদান করেছেন। ১৯৫৪ সালে তিনি শেষবারের মতো জন্মস্থান শিবপুরে আসেন এবং মায়ের ইচ্ছায় একটি পুকুর খনন ও একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করেন।
সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের দ্রৌপদী ঘরানার প্রবর্তক। তিনি সংগীতকে রাজ দরবার থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিয়ে গণমুখী করে তোলেন। জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতায় কলকাতার সর্বভারতীয় সংগীতানুষ্ঠানে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে বিশ্বভ্রমণে বের হলে লন্ডনে তাঁর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটেনের রানী তাঁকে “সুর সম্রাট” উপাধিতে ভূষিত করেন।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য রাগসমূহ:
মদিনা মঞ্জুরী, শোভাবতী, ধবলশ্রী, ভুবনেশ্বর, দুর্গেশ্বরী, হেমন্ত, উমাবতী, প্রভাতী, হেম বেহাগ, নাগার্জুন প্রভৃতি।
তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন:
পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দেশিকোত্তম, ডক্টরেট ডিগ্রি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপসহ বহু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সম্মাননা। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা কমিশনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জয়পুরহাটের কালাইয়ে শিয়ালের কামড়ে একই মহল্লার যুবক ও বৃদ্ধসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালাই পৌর শহরের সড়াইল মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, সড়াইল মহল্লার আব্দুর রশিদ (৫৬), আবু বক্কর সিদ্দিক (৬০), মোস্তাফিজুর রহমান (৩২), আতিক (২৭), সবুজ মিয়া (৩৩), জান্নাতুন (৪৪), ববিতা খাতুন (১৫), মফিজুল (৫০), আব্দুল আজিজ (৫৮)। আহতদের রাতেই কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সড়াইল মহল্লায় শিয়ালের কামড়ে আহত নারী ববিতা খাতুন কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে জানান, রাতে একটি শিয়াল আমাদের মহল্লায় প্রবেশ করে যাকে দেখেছে তাকেই কামড় দিচ্ছে। এমনকি ঘরের ভেতরে ঢুকেও কামড় দিয়েছে। আমাদের বাড়ির পাশে আরও ৩ জনকে কামড় দিয়েছে শিয়াল। আবার মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে মুসল্লিরা আসার পথে ওই শিয়াল ৫ জনকে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত করেছে। রাতেই তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শনিবার সবাইকে ভ্যাকসিনের জন্য জেলা হাসপাতালে যেতে বলেছেন চিকিৎসক।
শিয়ালের কামড়ে আহত মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে আমরা বাড়িতে যাচ্ছিলাম। এসময় একটি শিয়াল দৌঁড়ে এসে আমাকেসহ মহল্লার আরও পাঁচ-ছয়জনকে কামড় দেয়। দুইজনের কান ছিড়ে নিয়ে গেছে শিয়ালটি। বর্তমানে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা আক্তার লীনা বলেন, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন না থাকায় তাদের জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ‘রেড মার্চ ফর জাস্টিস’ শিরোনামে এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আমতলা’ থেকে এই মৌন মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় আমতলায় এসে শেষ হয়। সেসময় শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল ক্ষোভ আর বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৩১আগস্ট ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা চালায়, যা তাদের নিরাপত্তাহীনতাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাদের অভিযোগ, এমন একটি ন্যক্কারজনক ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওই নীরবতা তাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওই হামলা শুধু আমাদের ক্যাম্পাসের ইট-পাথরের উপর নয়- এটি আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের স্বপ্ন এবং আমাদের নিরাপত্তার উপর সরাসরি আঘাত। যেখানে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেখানে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৮৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এমপিওভুক্ত হয়। দীর্ঘ ৭০ বছরের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি সরকারি বহুতল ভবনের বরাদ্দ পায়নি।
জানা গেছে, বর্তমানে মাদরাসাটি পাবলিক দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র (কেন্দ্র কোড ৭৮৯, নাম-ত্রিশাল-২ বাগান কেন্দ্র) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম না থাকায় নিয়মিত পাঠদান ও পরীক্ষা পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন, ক্লাসরুম, মেয়েদের কমনরুম, পৃথক নামাজ ও অজুখানা। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা স্যানিটেশন ব্যবস্থায়। যা পরীক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের মারাত্মকভাবে বিপাকে পড়তে হয়।
শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ বলেন, মাদরাসাটি অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও নেই কোন বহুতল ভবন। টিনসেট আর জরাজীর্ণ হাফ বিল্ডিংয়ে কোন প্রকার চলছে পাঠদান। সরকার যদি দ্রুত বহুতল ভবন দিতো তাহলে এই সমস্যা থাকত না।’
আলিম দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা তো আগামী বছর পরীক্ষা শেষ করে চলে যাবো অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হব। তবু চাই আমাদের পরবর্তী ভাই-বোনেরা যেন কষ্টে না পড়ে।’
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফয়জুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো বহুতল ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। পুরনো ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে।
ত্রিশাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, আমি আশাকরি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি বহুতল ভবন বরাদ্ধ দিবেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী জানান, অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
মন্তব্য