বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্বরূপ উন্মোচিত হলে দলটির নেতারা লজ্জিত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
রোববার বিকেলে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন অব হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি নেতা ফখরুল সাহেব, রিজভী সাহেব বড় বড় কথা বলেন, গয়েশ্বর বাবু তালে-বেতালে কথা বলেন। বিএনপি খুনীর দল। জিয়া একজন খুনী এবং তার স্বরূপ যখন আরও উন্মোচিত হবে, আজ তার দল করার জন্য একদিন তারা লজ্জিত হবেন।
‘বিএনপির জন্মটাই হয়েছে মানুষকে খুন করার মধ্য দিয়ে। তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে হাজার হাজার অফিসার ও জওয়ানকে হত্যা করেছেন। বিমান ও সেনা বাহিনীর যে সদস্যদের জিয়া হত্যা করেছিলেন, তারা গতকাল (শনিবার) সভা করে জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন।’
আওয়ামী লীগকে মেহনতি মানুষের দল হিসেবে বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এরশাদ সাহেবের স্যুট-কোট-টাই পরা মানুষের ড্রইংরুমের দল নয়, জিয়ার সাফারি-কোট পরা মানুষের দলও নয়। আওয়ামী লীগ গরীব মেহনতি মানুষের কথা বলে। আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের দল আর জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই সাধারণ মানুষদের নেতা।
‘সে কারণেই গত ১৩ বছরে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।
জিয়ার নির্মমতার বিচার দাবি
অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগ এনে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের হত্যার দায়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কেন্দ্রীয় কমান্ড’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই দাবি জানানো হয়।
ফাঁসির নামে হত্যার শিকার সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ১২০টি পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একে একে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে স্বজন হারানোর কষ্টের স্মৃতি বর্ণনা করেন।
বক্তব্য দেয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। উপস্থিত শ্রোতারাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নূরে আলম বলেন, ‘আমি জানতে চাই। আমার বাবা যদি অপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রমাণ দেন। আমার বাবার কবর কোথায় হয়েছে সেটা জানান। দেশবাসী জানুক আমার বাবাকে কেন অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সেই সময় কী ঘটেছিল, সেটা জানার অধিকার আমার ও দেশবাসীর রয়েছে। আমার বাবাসহ প্রায় তিন হাজারের বেশি অফিসারকে বিভিন্নভাবে হত্যা করে হয়েছে। কথিত অভ্যুত্থানের অভিযোগে অন্যায়ভাবে সেনা ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা হত্যা করতে জিয়াউর রহমানের নীলনকশা ছিল। এ জন্য জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার করতে হবে।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক সার্জেন্টের স্ত্রী লাইলা বেগম বলেন, ‘আমি শুনেছি আমার স্বামীকে ফাঁসি দেয়া হয়। কিন্তু আমার স্বামীর লাশ এখনও পাইনি। ৪৪ বছর আমি স্বামীহীন সংসার করছি। দেড় বছরের একটি ছেলে সন্তান রেখে স্বামী চলে যান। সংশ্লিষ্ট বাহিনী থেকে একবার চিঠি দিয়ে জানানো হয় আমার স্বামীকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
‘আমার জীবনে একটাই ইচ্ছা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাক্ষাৎ করে আমার স্বামী হত্যার জন্য সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার চাইব। স্বামী ছাড়া ৪৪ বছর কাটানো কত কষ্টের এটি প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় বুঝবেন স্বজন হারানোর কষ্ট কী। কারণ, তিনিও স্বজন হারিয়েছেন।’
কী ঘটেছিল সে সময়
আয়োজনে জানানো হয়, ১৯৭৭ সালে জাপানের উগ্রপন্থি গোষ্ঠী ‘রেড আর্মির’ সদস্যরা জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকা বিমানবন্দরে (বর্তমান পুরাতন বিমানবন্দর) অবতরণ করিয়েছিল। ওই ঘটনার অবসানের ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধানসহ বিমান বাহিনীর বিরাট একটা অংশ সার্বক্ষণিকভাবে কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
১ অক্টোবর যখন বিমান ছিনতাই ঘটনার অবসান ঘটে, সেই রাতে জিয়াউর রহমানের অনুগত বাহিনী ঢাকা সেনা ও বিমান বাহিনীর ছাউনিতে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তারা শত শত ঘুমন্ত সৈনিককে ব্যারাক থেকে অস্ত্রের মুখে বের করে নিয়ে আসে এবং পরে তাদেরকেই অভুত্থানের অভিযাগে ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করে।
লিফলেটে বলা হয়, ষড়যন্ত্রকারীরা জিজ্ঞাসাবাদের নামে বিভিন্ন নির্যাতন কক্ষে নিমর্মভাবে পিটিয়ে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে শত শত সৈনিককে হত্যা করে। বিভিন্ন ট্রাইবুনালে বিচারের নামে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অন্যায়ভাবে ফঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়। কত সৈনিককে এই শাস্তি পেতে হয়েছিল, তার খবর দেশবাসী আজও সঠিকভাবে জানে না।
এতে বলা হয়, ফায়ারিং স্কোয়াড ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রায় এক হাজার চারশ সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়। ওইদিন তেজগাঁও বিমানবন্দরে ও সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং ফায়ারিং স্কোয়াড যাদেরকে মারা হয়েছে তাদের হিসাব জানা নাই।
জিজ্ঞাসাবাদের নামে সৈনিকদেরকে হাত, পা ও চোখ বেঁধে দিনের পর দিন ফেলে রাখার অভিযোগও করা হয় লিফলেটে। বলা হয়, চোখ বাঁধা অবস্থাতেই সৈনিকদের অনেকের সই নেয়া হয় কোনো অজানা কারণে।
প্রচলিত নিয়ম অনুসারে কোনো অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি দেয়া হয় না। কিন্তু সে সময় নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষতবিক্ষত অর্ধমৃত সৈনিকদেরকেও ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
আগে ফাঁসি পরে বিচারের রায়
আয়োজকরা জানান, ফাঁসি দেয়া শুরু হয় ১৯৭৭ সালের ৮ অক্টোবর থেকে। কিন্তু আদেশ জারি হয় তার ৬ দিন পর ১৪ অক্টোবর থেকে।
জিয়াউর রহমানের গঠন করা ‘মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল’ একেকজন সৈনিকের জীবণের সিদ্ধান্ত নিতে গড়ে ১ মিনিটেরও কম সময় নিয়েছিল।
যারা ট্রাইব্যুনালের বিচারক হয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ আর্মি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী অনেকেরই বিচারক হওয়ার যোগ্যতাই ছিল না।
মার্শাল-ল ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী বিচারক হয় পাঁচ জনকে নিয়ে। এদের একজন হবেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাকি চার জন ক্যাপ্টেন।
কিন্তু জিয়াউর রহমান নিজের মতো করে বিচারক সাজিয়েছিলেন। একজন কমিশনড অফিসার আর বাকি চার জন ছিলেন হাবিলদার ও সিপাহি।
তারা নিজের খেয়াল খুশিমতো রায় দিয়েছে। কোনো রায় সৈনিকদেরকে শোনানো হয়নি।
আরও পড়ুন:ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে এটাই বিএনপির নেতাদের প্রথম বৈঠক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকমিশনারের বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলের তিন নেতা। এ সময় হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার দুজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ওই লেখায় বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঙ্গে হাইকমিশনার সারাহ কুকের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ তাদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
বিএনপির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হৃদরোগে আক্তান্ত ডা. পারভেজ রেজা কাকনের শারীরিক খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি অসুস্থ কাকনের শারীরিক ও পারিবারিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, বাংলাদেশে অতীতে কখনোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তা দলীয় প্রতীকে শুরু করেছে।
‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বর্জনের পর তারা বুঝতে পেরেছে যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা হলে দেশের সামাজিক কাঠামোটা ভেঙে যাবে। তারা নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ছাড়া এবং এই সরকার ও তাদের সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাবো না। তবে গ্রাম-গঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না সেটা তো বিএনপি দলীয়ভাবে দেখতে পারে না।’
মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য সরকার হামলা-মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এসব করে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনেও তারা দেশের মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে পারেনি।
‘ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছে। তারা ভোট কেন্দ্রে যায়নি। কারণ এই ভোটের ওপর তাদের আস্থা নেই।’
মঈন খান বলেন, ‘দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠন করা চলমান প্রক্রিয়া। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে গুছিয়ে আলনা বা আলমারিতে রাখা যায়। সরকারকে বলবো- প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে আদর্শের রাজনীতিতে ফিরে আসুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার দলটির এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে তা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জানিয়ে দেয়া হয়।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চান উপজেলা নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হোক। সে কারণে দল চায় যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিজ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা যেন এই নির্বাচনে অংশ না নেন।’
‘আজ (বৃহস্পতিবার) দলের একটি বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে বিষয়টি জানান। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং জেলা-উপজেলায় তা জানাতে শুরু করেছি।’
এবার স্বতন্ত্র মডেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বলয় নিজেদের কব্জায় রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। দলের হাইকমান্ড এই নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও এসবে কান দিচ্ছেন না তারা।
কোনো কোনো সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন। নিজ দলের প্রভাবশালীদের এমন হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নানামুখী বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের পরিবারের দখলে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। ভোটের মাঠে স্বজনদের জিতিয়ে আনতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন শুরু হয়েছে। এতে তৃণমূলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।
দলীয় সূত্র জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এবং একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সন্তান বা নিকটাত্মীয়দের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকেরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন।
ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক দলীয় ও দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কেউ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করলে তাদেরকে শো-কজ, সতর্কতা, তলবসহ বর্তমান দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলের হাইকমান্ডের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর করার স্বার্থে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়।
জাতীয় নির্বাচনের মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এর রেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় পড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়ন কাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন, সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এবার চার পর্বে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ২১ মে হবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বৃহস্পাতবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনায় আপনি লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বর্ণিত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখিত প্রতিবেদন ও পত্রিকান্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। এরূপ ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেলোয়ার হোসেনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আহত অবস্থায় তাকে তার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী প্রার্থীর পরিবার এ ঘটনার জন্য আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লুৎফুল হাবীব ছিলেন একক প্রার্থী।
আরও পড়ুন:উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নেয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকেও কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছে না। দল ও দলের বাইরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাতে নির্বাচিত হয় সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের জনগণ যখন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি নেতারা তখন বরাবরের ন্যায় দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে বাধ্যগ্রন্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে চায়। বিপরীতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন ।
ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টে বিএনপি লাগাতারভাবে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ও অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণতন্ত্র ও নির্বাচন বানচালের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোপূর্বে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি সারাদেশে ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। তাদের এই ভয়াবহ সম্মিলিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই বিএনপি নেতারা বিরোধী দল দমনের কথা বলে। সরকার বেপরোয়াভাবে কাউকে কারাগারে পাঠাচ্ছে না। বরং সন্ত্রাস ও সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা আইন ও আদালতের মুখোমুখি হচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিও পাচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে যারা নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে-জনগণের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে সেসব সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ও মহামান্য আদালত যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নেই, সে যে দলেরই হোক না কেন সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারবর্হিভূত বক্তব্য প্রদান করছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে বদ্ধপরিকর। জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি বরাবরের ন্যায় নির্বাচন ও দেশের গণতন্ত্র বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে জনগণও তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশি বেশি অবান্তর কথা বলেন বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, ওবায়দুল কাদের বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার যে তালিকা চেয়েছেন তা সরকারের কাছেই আছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখেছি, ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপির কাছে তালিকা চেয়ে তারস্বরে চিৎকার করছেন। তিনি কিসের তালিকা চাইছেন? এর আগেও তো তালিকা দেয়া হয়েছিল। আর তালিকা তো তাদের কাছেই রয়েছে। আইন, আদালত, থানা, পুলিশ তো তাদেরই কব্জায়।
‘ওবায়দুল কাদের সাহেবের স্নায়ু শিথিল, মস্তিষ্ক অলস ও হৃদয় দুর্বল হওয়ার কারণে বেশি বেশি অবান্তর কথা বলেন। সরকার অসংখ্য মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করেছে। জাতিসংঘ গুমের একটি তালিকা দিয়েছিল। বিনাভোটের সরকার আজ পর্যন্ত তার কোনো জবাব দিতে পারেনি।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীসহ সব গুম রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলটির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীকে গুমের ১২ বছর পূর্ণ হলো আজ (বুধবার)। আজও তাকে ফিরে পাওয়ার অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তার স্ত্রী-সন্তান-পরিবারসহ দেশের অগণিত নেতাকর্মী।
‘শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর বনানীতে ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়িচালক আনসার আলীসহ তুলে নিয়ে যায় ইলিয়াস আলীকে। এরপর গাড়িটি পাওয়া গেলেও হদিস মেলেনি তাদের। একথা আজ জনগণের সামনে স্পষ্ট যে, এই ফ্যাসিবাদী সরকারই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম আর টিপাইমুখ বাঁধ ও সীমান্ত আগ্রাসনের প্রতিবাদে সিলেট অঞ্চলে গড়ে উঠা গণ-আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে ইলিয়াস আলী রাষ্ট্রযন্ত্র ও দেশি-বিদেশি অপশক্তির গাত্রদাহের প্রধান কারণ ছিলেন। ইলিয়াস আলী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তার জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় ঈর্ষাকাতর সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে তাকে গুম করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদেরই অত্যন্ত সচেতনভাবে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, আয়নাঘরে আটক করে রাখা হচ্ছে। ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার প্রমাণ অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয় ভারতে। সেখানে তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে দেয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গুম-খুন-ক্রসফায়ার বাহিনী র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে গুমের মাত্রা কিছুটা কমলেও এখনও গুম হচ্ছে। তবে গুমের প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। সেটা হলো আগে যারা গুম হতো তারা আর ফেরত আসতো না। এখন যারা গুম হচ্ছেন তারা ৫ দিন ৭ দিন এমনকি এক মাস পরেও কেউ কেউ ফেরত আসছে। অথবা লাশ পাওয়া যাচ্ছে। গুম বাহিনী এখন স্বল্প সময়ের জন্য গুম করছেন। এই স্বল্প সময়ের গুম হওয়াটাও খুবই ভয়ংকর।’
রিজভী বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল বুধবার আদালতে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য