দেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান খসরু।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতে নিয়মিত খেলাপি ঋণই এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি। অবলোপন বা রাইট অফ ও আদালতে মামলার কারণে আটকে থাকা ঋণ যোগ করলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে যে করেই হোক এই বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতেই হবে।
‘আর এ জন্য সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠনকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
যুক্তি দেখিয়ে এহসান খসরু বলেন, ‘কেন না ঋণখেলাপিরা কোনো না কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য। অ্যাপেক্স বডি হিসেবে এফবিসিসিআইয়েরও সদস্য তারা। সে ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।’
মহামারি করোনাভাইরাসের ছোবলে বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও গভীর সংকটে পড়ে গত বছরের শুরুর দিকে। সেই ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার ২৫টির মতো প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।
এই প্রণোদনা ঋণের পুরোটাই বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। যার বেশির ভাগ ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়ে গেছে। গত বছর প্রণোদনা ছাড়া অন্য ঋণ খুব একটা বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলো। তবে এখন মহামারির ধকল কমতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হয়ে আসছে সবকিছু, ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে, ঋণ বিতরণও বাড়ছে।
২০২২ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে; চলবে ট্রেনও। একই সময় রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটবে মেট্রোরেল। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথও চালু হয়ে যাবে তত দিনে।
এই টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। ফলে ২০২৩ সালে অবকাঠামো সামর্থ্যে ভিন্ন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। সেই নতুন বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলোও তাদের বিনিয়োগের নতুন ছক কষছে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘কেমন চলছে ব্যাংক খাত’ শিরোনামে নিউজবাংলা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই প্রতিবেদনের চতুর্থ পর্বে দেশের ব্যাংকিং খাতের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহসান খসরু।
করোনার সময়ে জরুরি সেবার আওতায় ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছিল। সেই ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন কেমন? কেমন চলছে ব্যবসা? বর্তমানে এ খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী দেখছেন?
কোভিড-১৯ একটি বৈশ্বিক অতিমারি, যা বিশ্বের অন্যান্য অর্থনীতির মতো বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং এর প্রবৃদ্ধিকে ধীরগতির চক্রে আবদ্ধ করে ফেলেছে। বাংলাদেশের জিডিপির মূল স্তম্ভ ব্যাংক খাত। এ খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি জিডিপিতে বড় অবদান রাখে। ব্যাংক খাত সাধারণ মানুষ নিয়ে কাজ করে।
করোনা মহামারির ধকল সামলে অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারঘোষিত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজের আওতায় প্রণোদনার অর্থ ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে বিতরণ করার চেষ্টা করেছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী যাতে সরকারের ঋণের সুবিধা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করেছে ব্যাংকগুলো। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থের জোগানের ভারসাম্য রক্ষা করতেও ব্যাংক খাত কাজ করেছে।
সমাজের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকগুলো সরকারের পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালীন অতিমারির ধকল কাটিয়ে উঠে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে স্থগিত কিস্তি ফেরত প্রদান যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত কিস্তি পরিশোধের সময় প্রদান করেছে।
সরকারঘোষিত সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো কাজ করছে। এ ছাড়া প্রান্তিক ঋণগ্রহীতাকে নতুন ধরনের ঋণসুবিধা প্রদান করছে। বিশেষ করে এসএমই খাতের ঋণের ক্ষেত্রে সরকার সুদ ভর্তুকি প্রদান করছে, যা দ্বারা তারা করোনা মহামারিতে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে।
চতুর্থ প্রজন্মের অনেক ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। মার্জার ও অ্যাকুইজেশন তার মধ্যে একটি। দুটি বা তিনটি ব্যাংক একত্রিত হয়ে আরও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে।
কারণ মার্জার ও অ্যাকুইজেশন (একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ) পৃথিবীব্যাপী ব্যাংককে শক্তিশালী করার একটি অস্ত্র, কিন্তু গ্রাহকরা তো এগুলো বুঝবে না। কারণ এ বিষয়টি নেতিবাচকভাবে প্রচার করলে গ্রাহকদের মনে আতঙ্কের জন্ম নেবে। গ্রাহক বোঝে শক্তিশালী ব্যাংক।
খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের একটি অনুষ্ঠানে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যবসা করতে তারা সব ধরনের সেবা দিতে প্রস্তুত, কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ে এফবিসিসিআই যেন তাদের সহিযোগিতা করে। এফবিসিসিআই কীভাবে ঋণ আদায়ে সহযোগিতা করতে পারে?
আমি মনে করি, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ। এই বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ব্যাংকিং খাত কখনোই শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারবে না। তাই যে করেই হোক, খেলাপি ঋণ কমাতেই হবে; এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতেই হবে।
ব্যাংক খাতে নিয়মিত খেলাপি ঋণই এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি। অবলোপন বা রাইট অফ ও আদালতে মামলার কারণে আটকে থাকা ঋণ যোগ করলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে যে করেই হোক এই বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতেই হবে।
আর এ জন্য সরকার বা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠনকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা ঋণখেলাপিরা কোনো না কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য। অ্যাপেক্স বডি হিসেবে এফবিসিসিআইয়েরও সদস্য তারা। সে ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
এফবিসিসিআইয়ের সদস্য যারা খেলাপি হবেন, তাদের অ্যাসোসিয়েশনে নাও রাখতে পারে। কারণ কোনো ব্যাংকে এলসি খুলতে বা ট্রানশিপমেন্ট করতে অ্যাসোসিয়েশনের সনদ লাগে। সে ক্ষেত্রে এসব অ্যাসোসিয়েশনের যেসব সদস্য খেলাপি, তাদের বিষয়ে এফবিসিসিআই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
আমরা ঋণের ৯ শতাংশ সুদ চালু করেছি গ্রাহকদের জন্য। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সবাই ৯ শতাংশের এ সুবিধা ভোগ করেছে। তাহলে সংগঠনের যারা ব্যাংকের ঋণখেলাপি হচ্ছেন তাদের ঋণ নিয়মিত করার জন্য এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোরও ব্যাপক চেষ্টা থাকা দরকার। এটা একটি সময়ের দাবি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা তিন মাস গড় মূল্যস্ফীতির কম সুদ আমানতে দেয়া যাবে না, এটা প্রতিপালন করতে কোনো চ্যালেঞ্জ বা নতুন আমানত সংগ্রহে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন?
কিছু কিছু ব্যাংক তাদের অ্যাফিশিয়েন্সির কারণে আমানতে সুদহার ২-৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। নন-আর্নিং অ্যাসেটের কারণে আমাদের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। আর্নিং অ্যাসেট থাকলে ব্যয় কমে। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। কারণ মূল্যস্ফীতি যেখানে সাড়ে ৫ শতাংশের ওপরে, সেখানে ২ বা ৩ শতাংশ আমানতে সুদ দেয়া ঠিক না। গ্রাহকের কিছুই থাকে না। কিন্তু ঋণের ৯ শতাংশ সুদ দিয়ে আমানতে ৫ শতাংশের ওপরে সুদ দেয়ার বিষয়টি সমন্বয় করতে হবে। ব্যাংকের ৯০ শতাংশ অ্যাসেট গ্রাহকের, মালিকের ১০ শতাংশ। উভয়ে যেন প্রাপ্য সুবিধা পায়, সেটার ভারসাম্য করতে হবে।
সুদহারের বিষয়টি সাময়িক সময়ের জন্য করা হয়েছে। পরে সুদহার ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে বলে আমার মনে হয়। সাধারণ গ্রাহক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কিংবা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে এবং ব্যাংকগুলো সব সময়ের মতো এখনও আস্থার জায়গা ধরে রেখেছে। তা ছাড়া সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ঋণসুবিধা না থাকায় গ্রাহক ব্যাংকগুলোতেই আমানত রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
করোনাকালে প্রণোনার ঋণ ছাড়া নতুন ঋণ বিতরণ ছিল কম। প্রণোদনার ঋণ ছোট উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না বলেও সমালোচনা আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যাংক কি একটু বেশি সতর্কভাবে ঋণ দিচ্ছে?
করোনার কারণে ব্যাংকের ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। ব্যাংকের গ্রাহক একের পর এক অসুস্থ হয়েছে। ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানও দুর্বল হয়ে গেছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প একটা বড় খাত। সরকারি ব্যাংকের মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এত বড় ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল নেই। সব জায়গায় ঋণ পৌঁছানোর মতো এত সামর্থ্য সব ব্যাংকের নেই। ঋণ শুধু বিতরণ করলে হবে না, আদায়ের প্রশ্নও আছে। সে কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো একটু বিমুখ। সার্বিক ঋণ বিতরণও কমে গেছে। ঋণ প্রবৃদ্ধি আগে ১৪ ছিল, সেটা কমে ৭ বা সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে গেছে।
ফলে ব্যাংকে তারল্য বা অতিরিক্ত টাকা বেড়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বন্ড ও ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিচ্ছে। একদিকে সাধারণ গ্রাহকদের ঋণ প্রদান কমে গেছে। ফলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য ২ লাখ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বাজার-তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ এখন কোনো বড় বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার প্রদত্ত পুনঃ অর্থায়নের তারল্য ব্যাংকিং খাতে প্রবেশ করছে। এমতাবস্থায় কোনো প্রকৃত ও ভালো ব্যবসায়ী নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আগ্রহী নন।
এ জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বাড়ানোর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রতিটি ব্যাংকের আলাদা ধারণা নিয়ে এগোতে হবে। যে ব্যাংকের যে এলাকায় সুবিধা সেভাবে এগোতে পারে। সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণ বিতরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ব্যাংক কনসেপ্ট নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হতে পারে।
আমরা জেনেছি যে সামনে পদ্মা ব্যাংকে বড় অঙ্কের একটা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। সে বিষয়ে কিছু বলুন। আর সার্বিকভাবে আপনাদের ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি এখন কেমন? সামনে গ্রাহকদের জন্য কী কী সেবা চালুর পরিকল্পনা আছে?
পদ্মা ব্যাংক ২০১৯ সালে যে অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, বিগত দুই বছরে তা অপেক্ষা সব আর্থিক সূচকে উন্নতি লাভ করেছে। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে আর্থিক ভিত্তি উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি আমেরিকাতে আমরা একটি মিটিং করেছি। আমার মনে হয়েছে, নর্থ আমেরিকা, মিডলইস্ট বা চায়না বাংলাদেশে একটা পজিশন নেয়ার সুযোগ খুঁজছে। তারা এ দেশের এসডিজির সূচকগুলো দেখেছে। তারা এখন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হবে। এ জন্য তারা ব্যাংকিং খাতে একটি পজিশন নিতে পারে।
আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির ৭০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ফরমাল অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এতে পদ্মা ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি আরও মজবুত হবে। প্রতিটি সূচক উন্নতি হবে। পদ্মা ব্যাংকের আগের ম্যানেজমেন্টের কারণে যে সমস্যা হয়েছিল, সেটা কাটিয়ে উঠবে।
২০১৮ সালে পদ্মা ব্যাংকের ৮০ শতাংশ ঋণ ছিল অনাদায়ী। তিন বছরে সেটা কমে ৬০ শতাংশে নেমেছে। এ বছর ৫০ শতাংশে নামবে। এই খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে যায়।
আমাদের ব্যাংক কমপ্লিট ডিজিটাল হবে। এখন গ্রাহকরা ঘরে বসে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হিসাব খুলতে পারছেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঘরে থেকে তাদের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছেন। এ ছাড়া মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় লেনদেন করতে পারছেন। গ্রাহকদের ঘরে বসে হিসাব খোলার সুবিধা প্রদান করেছি।
এমনকি ঘরে বসেও ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার সুবিধা বাস্তবায়ন করেছি আই ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। নারীদের জন্য বিভিন্ন আর্থিক স্কিম রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে এবং সরকারঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পদ্মা ব্যাংক তার শাখাসমূহ থেকে গ্রাহকসেবা অব্যাহত রেখেছে।
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য