করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও উপস্থিতির সংখ্যা এখন পর্যন্ত বেশ কম।
প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিতে তাও ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওপরের মাধ্যমিকে তা ৬০ শতাংশের আশপাশে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশেরও কম।
করোনার সময় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। স্কুল-কলেজ খোলার পর কত ছাত্র-ছাত্রী ঝরে গেছে, সেই হিসাব এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে নিউজবাংলা দেশের নানা প্রান্তে স্কুল-কলেজে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসছে না।
এই চিত্র গ্রাম বা মফস্বলের ক্ষেত্রে যেমন, ঢাকায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা পড়ে, সেসব স্কুলের ক্ষেত্রেও তেমনি।
যারা স্কুলে আসছে না, তাদের বিষয়ে এখনও খোঁজ নেয়ার কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেই। ফলে তারা ঝরে গেছে, নাকি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে অনুপস্থিত, সেই সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় এখনও আসেনি।
তবে এর একটি বড় অংশ যে আর শিক্ষায় ফিরবে না, সে বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭.৬২ শতাংশ।
এই হার ছিল ক্রম হ্রাসমান। তবে করোনার কারণে সেটি আবার বাড়বে বলে আশঙ্কা ছিল আগেই।
রাজধানীর দুই স্কুলে গিয়ে যা দেখা গেল
রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র মোট ৭১ জন। পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৫ জন আর চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ৬৩ জন।
নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনা করে, এমন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী জানান, এই তিন শ্রেণিতে অর্ধেকের মতো ছাত্র আসছে না।
কেন আসছে না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেকের বাবা-মা হয়তো আসতে দিচ্ছে না। তারা অনলাইনে পড়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আবার এখন পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত যে পাঠ, সেটিও হয়তো শেষ করে ফেলেছে।’
মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন নাহার বেগম জানালেন, বুধবার পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬২ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিল ৩২ জন।
এই স্কুলটির শিক্ষার্থীরাও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান।
কেন তাদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে আগ্রহ কমে গেল, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অনেকের পরিবার গ্রামে চলে গেছে। অনেকে কাজে লেগে যেতে পারে।’
অর্থাৎ এই শিক্ষক নিজেও আশঙ্কা করছেন, একটি বড় অংশ হয়তো ঝরে যাবে প্রাথমিক শেষ না করেই।
উপস্থিতি নিয়ে সরকারি তথ্য যা বলছে
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হবে না। চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে অষ্টম, নবম, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একদিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার তৈরি করা উপস্থিতির প্রতিবেদনে গত সাত দিনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, পঞ্চম শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৬৯ থেকে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ।
গত ২১ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী দশম শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৫৯ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ।
এই সময়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ।
একাদশ শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৪৮ আর সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ। দ্বাদশ শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৪২ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ।
হঠাৎ করে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমছে কেন, এমন প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা) অধ্যাপক আমির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্য অসুস্থ থাকার কারণে কেউ কেউ ক্লাসে আসছে না। অনেকে আবার স্থানান্তর, অভিভাবকের আপত্তিসহ নানা কারণে অনুপস্থিত থাকছে। অনেকেই বাসা ও অনলাইনে বসে পড়াশোনা শেষ করছে।’
করোনার কারণে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘গ্রামের তুলনায় শহরে উপস্থিতি কিছুটা কম। কারণ অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত না হলে কেন সে উপস্থিত হলো না, তা খুঁজে বের করার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছি।’
কারণ অনুসন্ধান করে বিশেষ উদ্যোগ চান শিক্ষাবিদ
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার জানালে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তার মতে, বিভিন্ন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পিতা-মাতার আর্থিক অসচ্ছলতা, দীর্ঘদিন পড়াশোনার বাইরে থাকা।
করোনার কারণে গ্রামে বাল্যবিবাহ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে বলেও মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে।’
এই অবস্থায় কী করা উচিত- এমন প্রশ্নে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা নেয়া উচিত। স্কুলে আসতে স্থানীয়ভাবে উৎসাহ দিতে হবে এবং আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।’
শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিয়ে চাপ দেয়া যাবে না। দেখতে হবে সে কেন উপস্থিত হলো না। কোনোভাবেই জোর করা যাবে না। কারণ কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ না করতে পারলেও তার জন্য অনলাইন ও টিভিতে এখনো ক্লাস চালু আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা এমন একটি বিষয় যেকোনো জায়গায় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংটা রাখছি।’
চার দিন পর মন্ত্রী আবার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে কোনো কোনো অভিভাবক হয়তো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না।’
সাত দিনের উপস্থিতির চিত্র
২৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৫ হাজার ৯০২টি স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৫৫ শতাংশ।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ১২ হাজার ৭৮৫ জনের মধ্যে ৭৮ হাজার ৮০৯ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮০ জনের মধ্যে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৪ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬১ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ, একাদশে ৪৮ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৬ হাজার ৪৪৯ স্কুল-কলেজে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৯ জনের মধ্যে ৮৬ হাজার ৭৪৮ জন। উপস্থিতির হার ৭৪ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৫ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫১ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬২ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৬ হাজার ৮০০ স্কুল-কলেজে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫১ জনের মধ্যে ৮৮ হাজার ৮৮১ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৭৫ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৮৪ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৩৩২ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬৪ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ, একাদশে ৫২ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৫ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৫ হাজার ৮৬০ স্কুল-কলেজে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ৯২ হাজার ৮৯৪ জনের মধ্যে ৬৪ হাজার ১১০ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৬৯ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭১৯ জনের মধ্যে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৮ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬১ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ, একাদশে ৫০ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৩ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৬ হাজার ৮৮১ স্কুল-কলেজে ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ২১ হাজার ৮৯৭ জনের মধ্যে ৯০ হাজার ৯৬৩ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৭৫ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯২০ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ১২৯ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬২ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২২ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৭ হাজার ১৬৫ স্কুল-কলেজে ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৮ জনের মধ্যে ৯৬ হাজার ৮৯৫ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৭৬ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৫ লাখ ৮ হাজার ৬৩২ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৯১ হাজার ৪৫ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৫৯ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৭ হাজার ৬৪০ স্কুল-কলেজে ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ৩১ হাজার ১২৭ জনের মধ্যে ৯৭ হাজার ২৯২ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৭৪ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৩ জনের মধ্যে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৭ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬৭ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
আরও পড়ুন:এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হওয়া শিক্ষার্থীদের খাতা চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুরু হয়েছে।
আজ শুক্রবার থেকে আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শুধু টেলিটক সিম ব্যবহার করে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফি লাগবে ১৫০ টাকা।
পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে- RSC<Space> Board Name (First 3 letters)<Space>Roll<Space>Subject Code লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬২২২ নাম্বারে। একাধিক Subject Code Type এর ক্ষেত্রে কমা (,) ব্যবহার করতে হবে। যেমন-১০১,১০২,১০৩।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় বড় ধরনের অবনতি লক্ষ করা গেছে। গত বছরের শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এবার সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক-তৃতীয়াংশেরও নিচে।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র ৯৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। অথচ, গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮টি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমেছে ১ হাজার ৯৮৪টি।
অন্যদিকে, ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গতবছর শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি। সে হিসেবে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৮৩টি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফল প্রকাশ করেছে।
বিগত বছরগুলোর মতো এবার ফল প্রকাশ ঘিরে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা রাখা না হলেও সার্বিক বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার সভাকক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কথা বলেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবির।
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন।
এ ছাড়াও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন পরীক্ষার্থী ছিল।
উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম ছিল। এবার ফল তৈরি হয়েছে বাস্তব মূল্যায়ন নীতিতে।
এ বছর ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৮টি কেন্দ্রে বিদেশি পরীক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন, পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
৮টি কেন্দ্র থেকে মোট ৪২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে ৩৭৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন আর অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী ৫৪ জন। ১টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একযোগে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
এবার সারাদেশে মোট পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জনে। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।
এ বছর সারা দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭৯ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। মোট উপস্থিতি ছিল ১৯ লাখ আট হাজার ৮৬ জন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তেরো লাখ তিন হাজার ৪২৬ জন।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এ বোর্ডে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬৬ জন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালে গড় পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। সে হিসাবে পাসের হার অনেক কমেছে।
ছাত্রীদের পাসের হার ৭১.০৩ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৬৫.৮৮ শতাংশ। সেই হিসাবে এবারও পাসের হারে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা। এ নিয়ে টানা ১০ বছর এসএসসিতে পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা।
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি (SEU) সামার সেমিস্টার ২০২৫-এ ভর্তি হওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে ২ ও ৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাল্টিপারপাস দুইদিনব্যাপী নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক স্কুলের উদ্যোগে চারটি পৃথক সেশনের মাধ্যমে আয়োজিত এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক যাত্রাকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।
২ জুলাই প্রথম সেশনে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (SSE) এর অধীনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেটাসফট সিস্টেমস বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মঞ্জুর মাহমুদ। একই দিনে দ্বিতীয় সেশনে SSE-এর আওতাধীন আর্কিটেকচার, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE), এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। এ সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (IEB)-এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহিউদ্দিন আহমেদ (সেলিম)।
৩ জুলাই তৃতীয় সেশনে স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (SASS) অর্থনীতি, ইংরেজি ও বাংলা বিভাগের নতুন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায়। এ সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এবং SANEM-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক বাজিউল হক খোন্দকার।
সেদিনই চতুর্থ ও শেষ সেশনে সাউথইস্ট বিজনেস স্কুল (SBS) তাদের বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ওরিয়েন্টেশন আয়োজন করে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মাহবুবুর রহমান, এফসিএ, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিটি ব্যাংক পিএলসি-এর সিএফও। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জনের আহ্বান জানান।
সবগুলো সেশনে সভাপতিত্ব করেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম। এছাড়া প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. মোফাজ্জল হোসেন এবং রেজিস্ট্রার মেজর জেনারেল মো. আনোয়ারুল ইসলাম, SUP, ndu, psc (অব.) শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন সেশনে সংশ্লিষ্ট স্কুলের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানগণও উপস্থিত ছিলেন।
এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল নতুন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ, মূল্যবোধ ও বিভিন্ন সুবিধার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেওয়া, যাতে তারা একটি প্রাণবন্ত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করতে পারে।
৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভা শুরু হবে আগামী ৮ জুলাই থেকে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন পিএসসি।
এবার চাকরি প্রত্যাশীরা তাদের আবেদনের পছন্দক্রম পরিবর্তন করতে পারবেন কিংবা আবেদনের ক্রমও বহাল রাখতে পারবেন সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করার আগে। তবে পছন্দক্রম পরিবর্তনের ফরমটি তাৎক্ষণিক চাকরিপ্রার্থীদের সরাসরি হাতে সরবরাহ করা হবে এবং তা পূরণ করে সাক্ষাৎকার বোর্ডে জমা দিতে হবে।
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় সাময়কিভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ ক্যাডারে ২০৬ জন, সাধারণ ও কারিগরি /পেশাগত উভয় ক্যাডারে ১৮১ জন এবং শুধু কারিগরি/পেশাগত ক্যারের পদগুলোর ৬৫ জনসহ মোট ৪৫২ জন প্রার্থীর সাক্ষাৎকারের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে, যা কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে চীন দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চীন সফরে যোগদান করবেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। আগামী ৬ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত (ভ্রমণ সময় ব্যতীত) মোট ৬ দিনের সফরে যাচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত পহেলা জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এএসএম কাশেম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভ্রমণ সংক্রান্ত সকল খরচ বাংলাদেশে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন দূতাবাস বহন করবেন। এতে বাংলাদেশ সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আর্থিক সম্পৃক্ততা থাকবেন না। মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগদান করবেন। ভ্রমণের একটি প্রতিবেদন তাঁর প্রত্যাবর্তনের ১৫ (পনের) কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এছাড়া উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. ইয়াকুব আলী উপাচার্যের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করবেন।
ইবি উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) গোলাম মাহফুজ মঞ্জু জানান, উপাচার্যের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৬ তারিখে উপাচার্যের সফরে যাবেন। তিনি উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ইউজিসির চেয়ারম্যানের অধীনে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যাচ্ছেন।
ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানান, ‘উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ইউজিসির অধীনে একটা বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে চীন সফরে যাওয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাস্ট) উপাচার্যগণ সঙ্গে থাকবেন।
মন্তব্য