করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও উপস্থিতির সংখ্যা এখন পর্যন্ত বেশ কম।
প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণিতে তাও ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওপরের মাধ্যমিকে তা ৬০ শতাংশের আশপাশে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশেরও কম।
করোনার সময় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। স্কুল-কলেজ খোলার পর কত ছাত্র-ছাত্রী ঝরে গেছে, সেই হিসাব এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে নিউজবাংলা দেশের নানা প্রান্তে স্কুল-কলেজে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসছে না।
এই চিত্র গ্রাম বা মফস্বলের ক্ষেত্রে যেমন, ঢাকায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা পড়ে, সেসব স্কুলের ক্ষেত্রেও তেমনি।
যারা স্কুলে আসছে না, তাদের বিষয়ে এখনও খোঁজ নেয়ার কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেই। ফলে তারা ঝরে গেছে, নাকি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে অনুপস্থিত, সেই সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় এখনও আসেনি।
তবে এর একটি বড় অংশ যে আর শিক্ষায় ফিরবে না, সে বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭.৬২ শতাংশ।
এই হার ছিল ক্রম হ্রাসমান। তবে করোনার কারণে সেটি আবার বাড়বে বলে আশঙ্কা ছিল আগেই।
রাজধানীর দুই স্কুলে গিয়ে যা দেখা গেল
রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র মোট ৭১ জন। পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৫ জন আর চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ৬৩ জন।
নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনা করে, এমন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী জানান, এই তিন শ্রেণিতে অর্ধেকের মতো ছাত্র আসছে না।
কেন আসছে না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেকের বাবা-মা হয়তো আসতে দিচ্ছে না। তারা অনলাইনে পড়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আবার এখন পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত যে পাঠ, সেটিও হয়তো শেষ করে ফেলেছে।’
মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন নাহার বেগম জানালেন, বুধবার পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬২ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিল ৩২ জন।
এই স্কুলটির শিক্ষার্থীরাও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান।
কেন তাদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে আগ্রহ কমে গেল, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অনেকের পরিবার গ্রামে চলে গেছে। অনেকে কাজে লেগে যেতে পারে।’
অর্থাৎ এই শিক্ষক নিজেও আশঙ্কা করছেন, একটি বড় অংশ হয়তো ঝরে যাবে প্রাথমিক শেষ না করেই।
উপস্থিতি নিয়ে সরকারি তথ্য যা বলছে
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হবে না। চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে অষ্টম, নবম, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একদিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার তৈরি করা উপস্থিতির প্রতিবেদনে গত সাত দিনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, পঞ্চম শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৬৯ থেকে সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ।
গত ২১ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী দশম শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৫৯ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৬৭ শতাংশ।
এই সময়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ।
একাদশ শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৪৮ আর সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ। দ্বাদশ শ্রেণিতে উপস্থিতি সর্বনিম্ন ৪২ শতাংশ আর সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ।
হঠাৎ করে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমছে কেন, এমন প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা) অধ্যাপক আমির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্য অসুস্থ থাকার কারণে কেউ কেউ ক্লাসে আসছে না। অনেকে আবার স্থানান্তর, অভিভাবকের আপত্তিসহ নানা কারণে অনুপস্থিত থাকছে। অনেকেই বাসা ও অনলাইনে বসে পড়াশোনা শেষ করছে।’
করোনার কারণে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘গ্রামের তুলনায় শহরে উপস্থিতি কিছুটা কম। কারণ অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত না হলে কেন সে উপস্থিত হলো না, তা খুঁজে বের করার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছি।’
কারণ অনুসন্ধান করে বিশেষ উদ্যোগ চান শিক্ষাবিদ
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার জানালে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তার মতে, বিভিন্ন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পিতা-মাতার আর্থিক অসচ্ছলতা, দীর্ঘদিন পড়াশোনার বাইরে থাকা।
করোনার কারণে গ্রামে বাল্যবিবাহ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে বলেও মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে।’
এই অবস্থায় কী করা উচিত- এমন প্রশ্নে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা নেয়া উচিত। স্কুলে আসতে স্থানীয়ভাবে উৎসাহ দিতে হবে এবং আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।’
শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিয়ে চাপ দেয়া যাবে না। দেখতে হবে সে কেন উপস্থিত হলো না। কোনোভাবেই জোর করা যাবে না। কারণ কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে পাঠ গ্রহণ না করতে পারলেও তার জন্য অনলাইন ও টিভিতে এখনো ক্লাস চালু আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা এমন একটি বিষয় যেকোনো জায়গায় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংটা রাখছি।’
চার দিন পর মন্ত্রী আবার বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে কোনো কোনো অভিভাবক হয়তো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না।’
সাত দিনের উপস্থিতির চিত্র
২৮ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৫ হাজার ৯০২টি স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিতি ছিল ৫৫ শতাংশ।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ১২ হাজার ৭৮৫ জনের মধ্যে ৭৮ হাজার ৮০৯ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮০ জনের মধ্যে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৪ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬১ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ, একাদশে ৪৮ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৭ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৬ হাজার ৪৪৯ স্কুল-কলেজে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৯ জনের মধ্যে ৮৬ হাজার ৭৪৮ জন। উপস্থিতির হার ৭৪ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬৫ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫১ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬২ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৬ হাজার ৮০০ স্কুল-কলেজে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫১ জনের মধ্যে ৮৮ হাজার ৮৮১ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৭৫ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ২৮৪ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৩৩২ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬৪ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ, একাদশে ৫২ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৫ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৫ হাজার ৮৬০ স্কুল-কলেজে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ৯২ হাজার ৮৯৪ জনের মধ্যে ৬৪ হাজার ১১০ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৬৯ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭১৯ জনের মধ্যে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৮ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬১ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ, একাদশে ৫০ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২৩ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৬ হাজার ৮৮১ স্কুল-কলেজে ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ২১ হাজার ৮৯৭ জনের মধ্যে ৯০ হাজার ৯৬৩ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৭৫ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯২০ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ১২৯ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬২ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২২ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৭ হাজার ১৬৫ স্কুল-কলেজে ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৮ জনের মধ্যে ৯৬ হাজার ৮৯৫ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৭৬ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৫ লাখ ৮ হাজার ৬৩২ জনের মধ্যে ৮ লাখ ৯১ হাজার ৪৫ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৫৯ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
২১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের ১৭ হাজার ৬৪০ স্কুল-কলেজে ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ লাখ ৩১ হাজার ১২৭ জনের মধ্যে ৯৭ হাজার ২৯২ জন ক্লাসে আসে। উপস্থিতির হার ৭৪ শতাংশ।
দশম শ্রেণির ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৩ জনের মধ্যে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৭ জন উপস্থিত ছিল। উপস্থিতির হার ৬৭ শতাংশ।
২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ, একাদশে ৫১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
আরও পড়ুন:জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এ এস এম আমানুল্লাহ বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সত্তুর শতাংশ উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য যদি ভালো না হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে না।
জামালপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত জামালপুর শেরপুর জেলার কলেজ সমূহের অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকগণের সাথে শিক্ষার মান উন্নয়ন বিষয়ক মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর এ এস এম আমানুল্লাহ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মো: নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আফসানা তাসলিম। এ সময় তিনি আরো বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেখানে মোট জিডিপির তিন থেকে পাঁচ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র এক দশমিক পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় যা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই অপ্রতুল। এখান থেকে বিশ্বমানের নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থায় মোট জিডিপির পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও তিনি প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেন না। মত বিনিময় সভায় জামালপুর শেরপুর জেলার কলেজসমূহের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।
অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে স্নাতকে (অনার্স) তথ্য প্রযুক্তি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আধুনিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের এটুআই প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের আইসিটি বিষয়ের ‘টিচিং, লার্নিং অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক এ কর্মশালার প্রথম সেশনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মো. রশিদুল মান্নাফ কবীর।
উপাচার্য বলেন, কলেজগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাদানে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সহায়তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সব টেকনিক্যাল কলেজ ও কম্পিউটার কাউন্সিলের সাথে আলোচনা করছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের মেধার ঘাটতি নেই। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা সহজেই তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক, সময়োপযোগী ও কর্মমুখী তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম ও শিক্ষাবিদদের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ।
কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন কলেজের ৮টি বিভাগের ৪০ জন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. নাজমা তারা এবং মির্জা মোহাম্মদ দিদারুল আনাম।
এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতই রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো বাধা রইল না।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে রায়ে বলা হয়েছে।
এদিন আদালতে ঢাবির পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির, রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং ডাকসুর জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের পক্ষে ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী শুনানি করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম এ রিট দায়ের করেন।
রিটে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হলেন— এমন প্রশ্ন তুলে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
এরপর গেল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকার কার্যক্রম ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাই ও চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং ভোটের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কী— এ বিষয়েও জানতে চান চাওয়া হয়।
তবে তার এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের আদালত ওই স্থগিতাদেশ দেন।
ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় পুনরায় মামলাটির বিষয়ে গতকাল (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন নিয়ে চেম্বার জজ আদালতে গেলে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য মামলার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল।
জানা গেছে, নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে মোট ২১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আলী হুসেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বাসিন্দা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আলী হুসেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত প্রক্টরিয়াল সত্যানুসন্ধান কমিটির সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এটি বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডারে প্রদত্ত প্রক্টরের এখতিয়ারভুক্ত সর্বোচ্চ শাস্তি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আলী হুসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৩ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায় প্রকাশ করেছেন।
রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ের সময় হাইকোর্ট বলেন, এটা চিরন্তন সত্য যে শিক্ষকরা রিটায়ারমেন্ট (অবসরকালীন) বেনিফিট (সুবিধা) পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য তাদের অবসরভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে। এই অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
সেদিন রায়ের পর আইনজীবী ছিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন, সারাদেশে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় ৫ লাখের বেশি শিক্ষক কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে ২০১৯ সালে একটি রিট দায়ের করেছিলাম। রিটে আমরা ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো। সেই কর্তনকৃত টাকাসহ সুবিধান অবসরের পর দেওয়া হতো। এই অবস্থায় ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্তে নেয়। ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও ৬ শতাংশের যে সুবিধা দেওয়া হতো সেটাই বহাল রাখা হয়। যে কারণে আমরা রিট দায়ের করে বলেছি, যাতে ১০ শতাংশের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে আদালত বলেছেন, ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হলেও তাদের যেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে যেন অবসরকালীন সুবিধা প্রদান করা হয়।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল থেকে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হতো। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল উল্লিখিত প্রবিধানমালাগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার বিধানগুলো সংশোধনপূর্বক ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার পরিবর্তে ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ কাটার বিধান করা হলেও ওই অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের এপ্রিল ২০১৯ মাসের বেতন হতে ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে জমা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ফলে অতিরিক্ত অর্থ কাটার বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি না করেই শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা কাটার আদেশের কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ কাটার আদেশ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তারা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের শুনানি আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সোমবার হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন। তবে বিকেলে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ওই আদেশ স্থগিত করেন।
তাৎক্ষণিক হাতে লেখা আপিল আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব চেম্বার কোর্টে শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
চেম্বার আদালত একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল আবেদন করে। পরে চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান।
সোমবার হাইকোর্ট বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ডাকসু জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
হাইকোর্ট আদেশে রিটকারী ও ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলমকে জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, শিগগিরই সে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে অচলাবস্থা চলছে, তা দুঃখজনক। এজন্য মন্ত্রণালয়ও উদ্বিগ্ন। তবে আলোচনা করেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। শিগগিরই এসব ঘটনার সমাধান হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়। তবে সবকিছু আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
চলমান সমস্যাগুলো দ্রুততম সময়ে সমাধান করা হবে এবং এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন উপদেষ্টা।
মন্তব্য