× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Silent revolution in tea
google_news print-icon

চায়ে নীরব বিপ্লব

চায়ে-নীরব-বিপ্লব
দেশে চা উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত
এখন শুধু মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ নয়, উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলাতেও হচ্ছে চায়ের চাষ। সারা দেশে সুবিধাজনক মাটিতে চাষের চাষ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চা বোর্ড। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ কোটি কেজি; আর রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ কোটি কেজি।

আগস্ট মাসে দেশে ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এক মাসে এত চা এর আগে কখনোই উৎপাদন হয়নি।

চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে পানীয়র উৎপাদন। দেশের চাহিদার পুরোটা পূরণ করে এখন রপ্তানিও হচ্ছে। মাঝে রপ্তানিতে নিম্নমুখী ধারা দেখা গেলেও এখন ফের বাড়ছে; আরও বাড়াতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা ঘোষণা করেছে সরকার। কোনো রপ্তানিকারক ১০০ টাকার চা রপ্তানি করলে সরকারের কোষাগার থেকে তাকে ৪ টাকা দেয়া হবে।

২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ কোটি কেজি; আর রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ কোটি কেজি।

২০২০ সালে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল দেশে। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছিল ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। চলতি ২০২১ সালের আট মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে ৫ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি।

২০ বছর আগে ২০০১ সালে ৫ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। তখন দেশে মোট চাহিদা ছিল ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টন। দুই দশকে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ; চাহিদা বেড়েছে তিন গুণের মতো।

এভাবে চা উৎপাদনে বিপ্লব হয়েছে দেশে। এখন শুধু মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ নয়, উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলাতেও হচ্ছে চায়ের চাষ। সারা দেশে সুবিধাজনক মাটিতে চায়ের চাষ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চা বোর্ড; গবেষণা করছে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট।

চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের সব চা-বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। উৎপাদনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখা, সঠিক সময়ে ভর্তুকি মূল্যে সার বিতরণ, চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, রেশন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করায় গত আগস্ট মাসে চা উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, তা পূরণ হবে। ১ কোটি কেজি চা রপ্তানির মাইলফলকও অর্জন করা সম্ভব হবে।’

৫৫ শতাংশই উৎপাদন হয় মৌলভীবাজারে

দেশে উৎপাদিত চায়ের বড় অংশ আসে মৌলভীবাজার জেলার বাগানগুলো থেকে। মোট উৎপাদিত চায়ের ৫৫ শতাংশ উৎপাদন হয় এই জেলায়। এরপর আছে হবিগঞ্জ জেলা, যেখানে উৎপাদিত হয় ২২ শতাংশ। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গে ১০ শতাংশ, সিলেট জেলায় ৭ শতাংশ ও চট্টগ্রামে ৬ শতাংশ উৎপাদন হয়।

চা-বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘চায়ের উৎপাদন নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন ভালো হয়; প্রতিকূল থাকলে কম হয়।

‘তবে, দেশে চায়ের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। চা বোর্ড কাজ করছে, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব কারণে চায়ের উৎপাদন এখন বাড়তেই থাকবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি থেকেও মোটা অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা দেশে আসবে।’

চায়ে নীরব বিপ্লব

রপ্তানি ফের বাড়ছে

দেশে চায়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি কমছিল। কমতে কমতে ২০১৯ সালে ৬ লাখ কেজিতে নেমে আসে। ২০২০ সালে আবার বাড়তে শুরু করে রপ্তানি। রপ্তানিকারকেরা গত বছর ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা রপ্তানি করেছে। এ থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। গত দুই দশকে চা থেকে রপ্তানি আয় সবচেয়ে বেশি ছিল ২০০৮ সালে; ৮৪ লাখ কেজি থেকে ৯৭ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছিল।

তবে, পরিমাণের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি হয়েছিল ২০০২ সালে। ওই বছরে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়। দেশে এসেছিল ৯৪ কোটি টাকা। তার আগের বছরে ২০০১ সালে ৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় হয়েছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার কেজি রপ্তানি করে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের দাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দামের ওপর নির্ভর করে প্রকৃত রপ্তানি আয়ের হিসাব।

সমতল জমি থেকে আসছে ১০ শতাংশ

বাংলাদেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় উৎপাদনও বেড়েছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। ২০০১ সালে দেশে ৫ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল; চাহিদা ছিল ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি। চাহিদা মেটানোর পর ১ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার কেজি রপ্তানি করে ৯০ কোটি টাকা আয় হয়েছিল।

২০১৯ সালে সেই চায়ের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৯ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার কেজি হয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে হয় ৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার। ওই বছরে ৬ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে আয় হয় ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ২০২০ সালে উৎপাদন খানিকটা কমে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কত ছিল, তার হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি চা বোর্ড। তবে, রপ্তানি এক লাফে সাড়ে তিন গুণ বেড়ে ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি ওঠে; আয় বেড়ে হয় ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

চলতি ২০২১ সালের আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) ৫ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে দেশে। এর মধ্যে আগস্ট মাসেই হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি। রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ৯০ লাখ কেজি; আয় হয়েছে ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে ২০২৫ সাল নাগাদ চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ কোটি কেজি নির্ধারণ করেছে সরকার।

সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ও চাহিদা মেটাতে পাহাড়ি উঁচু জমির পাশাপাশি সাম্প্রতিক বছরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সমতল জমিতেও চা চাষ হচ্ছে; যা চায়ের মোট চাহিদার ১০ শতাংশের বেশি পূরণ করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।

উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড় জেলায় ১৯৯৬ সালে প্রথম চা চাষের বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়। এরপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। তার ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়।

শুরু ১৮৫৪ সালে

ব্রিটিশ ভারতের বাংলাদেশ অংশে প্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয় সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগানে ১৮৫৪ সালে। সেই সময় থেকে চায়ের রপ্তানি হতো।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৭টি নিবন্ধিত চা-বাগান ও টি এস্টেট রয়েছে বলে জানিয়েছে চা বোর্ড। এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১২৯টি বাগান ও টি এস্টেট।

চা-বাগান করতে গেলে ন্যূনতম ২৫ একর জমি লাগে। অন্য দিকে এস্টেট হলো চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ ও শ্রমিক-কর্মচারীর মৌলিক সুযোগ সুবিধাসহ চা-বাগান।

সে হিসাবে বাংলাদেশে ২ লাখ ৮০ হাজার একর জমিতে নিবন্ধিত বাগানে চা চাষ হচ্ছে। তবে অনিবন্ধিত, ক্ষুদ্র পরিসরের বাগান এর দ্বিগুণ বলে জানিয়েছেন চা সংশ্লিষ্টরা।

চায়ে নীরব বিপ্লব

সমতল ভূমিতে চা চাষ

পাহাড়ি এলাকায় এত বছর চা চাষ হয়ে এলেও ২০০০ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ কয়েকটি জেলায় ছোট ছোট বাগানে সেরা মানের চা চাষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

সমতল ভূমিতে উৎপাদিত এই চা বাংলাদেশে চায়ের মোট চাহিদা পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে জানান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘চায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য আমরা সমতলকে বেছে নিয়েছি। এ জন্য আমরা ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় চা চাষের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও কেউ ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ করতে চাইলে আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। সারা দেশে চা চাষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছি আমরা।’

চাষিদের চা চাষের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মাটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে সেগুলো চা চাষের উপযোগী কি না। যেসব ভূমি উপযুক্ত নয়, সেগুলো উপযোগী করে তুলতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান জহিরুল ইসলাম।

উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) আটটি গবেষণা বিভাগ এবং তিনটি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে গবেষণা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। পাঁচটি কর্মসূচির মাধ্যমে বিটিআরআইর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি কর্মসূচি এলাকায় এক বা তারও অধিক গবেষণা বিভাগ কর্মসূচি সম্পাদন করে থাকে।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এবং রপ্তানি বাড়াতে উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করেন চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ আলী।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল জাতের মাধ্যমে প্রতি হেক্টরে চায়ের উৎপাদন বাড়তে হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি; গবেষণা করছি।’

সত্তরের দশকে বাংলাদেশে প্রতি হেক্টরে ৭৩৫ কেজি চা উৎপাদন হতো। সেই উৎপাদন বেড়ে এখন জমিভেদে প্রতি একরে ১৫০০ থেকে ৩৫০০ কেজিতে দাঁড়িয়েছে।

এ ধরনের উচ্চফলনশীল জাত বের করে উপযুক্ত মাটিতে চাষাবাদ শুরু করা প্রয়োজন বলে জানান মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়া পোকামাকড়, আগাছা দমন, সেই সঙ্গে অতিবৃষ্টির মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা উন্নত করার তাগিদ দেন তিনি।

নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যে পাঁচ মাস শুষ্ক মৌসুম, এই সময়ে চায়ের ফলন ঠিক রাখতে খরাসহিষ্ণু চায়ের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই উচ্চফলনশীল ও খরাসহিষ্ণু জাতগুলো চাষিদের কাছে দ্রুত বিতরণ করা গেলে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানান তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অতিবৃষ্টি সহনশীল জাত উদ্ভাবনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান মোহাম্মদ আলী।

চায়ে নীরব বিপ্লব

এখন আর আমদানি করতে হয় না

এক দশক আগেও ছিল শঙ্কা। রপ্তানি তো হবেই না, উল্টো চায়ের বড় আমদানিকারক দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাতে প্রতিবছর হাতছাড়া হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

এখন সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বড় আমদানিকারক দেশ তো হয়নি, উল্টো রপ্তানিতে দিচ্ছে সুখবর।

উৎপাদন দিয়ে চাহিদা না মেটায় ২০০৯ সালে চা আমদানি শুরু হয়। সর্বোচ্চ আমদানির রেকর্ড ছিল ২০১৫ সালে; মোট ৯৩ লাখ কেজি।

চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন চা আমদানি হয় না বললেই চলে। খুবই ভালো মানের বেশি দামি কিছু আমদানি হয়; যেগুলো অভিজাত লোকজন কিনে থাকেন।’

চায়ে এই সুদিনের নেপথ্যে আছে এক দশক ধরে চা বোর্ড ও উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগ। এক দশক আগে চা বোর্ড উৎপাদন বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। উদ্যোক্তারা শত বছরের পুরোনো বাগানগুলো সংস্কার করেন। পুরোনো-পরিত্যক্ত বাগান চা চাষের আওতায় আনা হয়। সমতল ভূমিতে চা চাষ সম্প্রসারণ হয় এ সময়। বাজারে ভালো দাম থাকায় চা চাষে মনোযোগী হন উদ্যোক্তারা। তাতেই এই সুফল এসেছে বলে মনে করেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

চা উৎপাদন ও রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ফিনলের পরিচালক এ কিউ আই চৌধুরী বলেন, ‘চা এখন আর আমদানিনির্ভর নয়। দেশীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন যত বেশি বাড়বে, রপ্তানির সম্ভাবনাও তত বাড়বে।’

প্রায় ৫২ বছর ধরে চা-শিল্পের সঙ্গে জড়িত এ কিউ আই চৌধুরীর বলেন, ‘উৎপাদনের মতো রপ্তানিতেও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। সরকার চা রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে রপ্তানি বাড়বে। এটি খুবই ভালো একটি সিদ্ধান্ত।’

চায়ে নীরব বিপ্লব

সুদিন ফিরেছে

বাংলাদেশে চায়ের সুদিন ধরা হয় নব্বই দশককে। লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’র ১৯৮৩ সালের বার্ষিক বুলেটিনে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চা রপ্তানির প্রথম বছরেই বিশ্ববাজারে এ দেশের অবস্থান ছিল নবম অবস্থানে। রপ্তানি আয়ের হিসাবে ১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে ষষ্ঠ অবস্থানে উন্নীত হয়। এখন পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম তখন ছিল ১৮তম।

রপ্তানির পরিমাণের হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি হয় ১৯৮২ সালে। সে বছর ৩ কোটি ৪৪ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় হয়। তখন দেশে চা উৎপাদন হয় ৪ কোটি ৯ লাখ কেজি। এখন উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। দেশে চাহিদা বেশি বাড়ায় অবশ্য তখনকার মতো রপ্তানি হচ্ছে না।

সে সময় এক কোটি কেজি উৎপাদন বাড়াতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১-১২ বছর। এখন এক বছরেই কোটি কেজি উৎপাদন বাড়ে।

বাংলাদেশ চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মঈনুদ্দীন হাসান বলেন, ‘উদ্যোক্তা ও চা বোর্ডের সম্মিলিত চেষ্টার সুফল এখন দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে চা খাতে। একসময় মনে হচ্ছিল, অন্যান্য পণ্যের মতো চা আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হবে। কিন্তু এখন সুদিন ফিরেছে। উৎপাদন বাড়ছে; রপ্তানি বাড়ছে।’

চায়ে নীরব বিপ্লব

বেশি দামের চা

উৎপাদনে রেকর্ড হচ্ছে, রপ্তানি বাড়ছে। এতেই থেমে থাকতে চান না উদ্যোক্তারা। কালো চায়ের বাইরে সবুজ চা উৎপাদন বাড়িয়েছেন তারা। আবার হোয়াইট টি বা সাদা চা, মসলা চায়ের মতো বহুমুখী পণ্য এনেছেন উদ্যোক্তারা।

ফিনলে, পেডরোলো, কাজী অ্যান্ড কাজীর মতো গ্রুপ নতুন নতুন চা উৎপাদনে নজর দিয়েছে। হালদা ভ্যালির মতো একসময় পরিত্যক্ত বাগানে এখন উৎপাদন হচ্ছে হোয়াইট টি, যেটি সাধারণ চায়ের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি দামি।

হালদা ভ্যালির মালিকানায় থাকা পেডরোলো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদের খান বলেন, সাধারণ মানের চায়ের চেয়ে সবুজ চা, সাদা চায়ের মূল্য অনেক বেশি। বৈশ্বিক বাজারে চাহিদাও ভালো। সে জন্য হালদা ভ্যালি বাগানে উচ্চ মূল্যের চা তৈরির আওতা বাড়ানো হচ্ছে।

বিশ্ববাজার

২০১৮ সালে বিশ্বে চায়ের বাজারের আকার ছিল ২৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সারা বিশ্বে রপ্তানি হয়েছে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের চা। রপ্তানির বাজারের দুই-তৃতীয়াংশ চীন, ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কার দখলে। পঞ্চম অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। বিশ্বের ৩৫টি দেশে চা উৎপাদন হয়। এ তথ্য গবেষণা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সবক্সের।

বাংলাদেশে চা রপ্তানি থেকে আয় এখনও খুবই কম। রপ্তানি আয় বাড়াতে চায়ের পণ্যে বহুমুখীকরণের (সুগন্ধি ও ওষুধশিল্পে ব্যবহার) ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফিনলের পরিচালক এ কিউ আই চৌধুরী বলেন, ‘চায়ের বৈচিত্র্য বাড়ানো গেলে রপ্তানি বাজার আরও ভালোভাবে দখল করা সম্ভব।’

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Special prayer at Janata Bank for the sake of martyrs soul in the mass uprising in July

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় জনতা ব্যাংকে বিশেষ দোয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় জনতা ব্যাংকে বিশেষ দোয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে গতকাল মঙ্গলবার বাদ যোহর জনতা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের নামাজ ঘরে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নামাজ ঘরে এক আলোচনা সভায় ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মুহ. ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপকরা, জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি ও জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃরাসহ সব স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Traders want to withdraw additional tariffs on cosmetics

প্রসাধনীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার চায় ব্যবসায়ীরা

প্রসাধনীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার চায় ব্যবসায়ীরা প্রসাধনী সামগ্রীর উপর স্বাভাবিক শুল্কায়ন মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। ছবি: ফোকাস বাংলা

আমদানি করা প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আগামী ৭ জুলাই এনবিআর ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ আমদানিকারকরা।

মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন বাজেটে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লিপ কেয়ার, ফেস ক্রিম, পাউডারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দাম কম হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে দাম। এতে বাজারে বাড়ছে অবৈধ পথে আসা প্রসাধনীর সরবরাহ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।

বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’

সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের উপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।

এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

সাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা (misdeclaration) ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’

চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
OPEC is increasing oil prices in the world market

বিশ্ববাজারে আরও কমেছে তেলের দাম, উৎপাদন বাড়াচ্ছে ওপেক

বিশ্ববাজারে আরও কমেছে তেলের দাম, উৎপাদন বাড়াচ্ছে ওপেক বিশ্ববাজারে আরও কমেছে তেলের দাম, উৎপাদন বাড়াচ্ছে ওপেক

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।

আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।

গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’

এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
All banks will be open till 7pm today

আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব ব্যাংক খোলা থাকবে

আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব ব্যাংক খোলা থাকবে

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।

সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Expatriate income records come in and 1 billion in the current fiscal year

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, চলতি অর্থবছরে এলো ৩০ বিলিয়ন ডলার

জুনের প্রথম ২৮ দিনে এলো আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স
প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, চলতি অর্থবছরে এলো ৩০ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।

মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, চলতি অর্থবছরে এলো ৩০ বিলিয়ন ডলার

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।

২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।

বাংলাদেশ
IDE Bangladeshs Private Sector Engagement Strategy Unveiled

আইডিই বাংলাদেশ এর প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট  স্ট্র্যাটেজি উন্মোচিত

আইডিই বাংলাদেশ এর প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট  স্ট্র্যাটেজি উন্মোচিত

ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫ – অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আইডিই বাংলাদেশ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত “Catalyzing Markets: iDE Bangladesh Private Sector Engagement Summit 2025”-এ তাদের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫–২০৩০ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।

সামিটে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই, এসএমসি, লাল তীর সিড লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন, রহিম আফরোজ, ইসপাহানি এগ্রো, ব্র্যাক, গ্রামীণ ড্যানন ফুডস লিমিটেড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, এফসিডিও, ইউনিসেফ, জিআইজেড, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালীয় ও ডেনিশ দূতাবাস-এর প্রতিনিধিরা।

সামিটে ১৪টি প্রাইভেট সেক্টর প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এবং একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয় যেখানে কৃষি, ওয়াশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পুষ্টি ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরা হয়।

প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারপারসন, ব্র্যাক বলেন, “আইডিইর এই স্ট্র্যাটেজি একটি সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করবে।”

বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন:

উজমা চৌধুরী, পরিচালক (ফাইন্যান্স), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, এসএমসি

কাজি মো. সাফায়েত কবির, সিনিয়র EVP, এনআরবিসি ব্যাংক

ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড

নিতাই পদ সাহা, সিইও, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (RSF)

সামীর কার্কি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইডিই বাংলাদেশ বলেন, “এই স্ট্র্যাটেজি কেবল একটি নীতি-নির্ধারণী দলিল নয়; এটি একটি যৌথ ভিশন—যেখানে ব্যবসা ও উন্নয়ন একসাথে কাজ করে টেকসই সমাধান তৈরি করে যা সকলের জন্য কার্যকর বাজার গড়ে তোলে।”

এই নতুন কৌশলগত রোডম্যাপ আইডিইর চার দশকের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে বৃহৎ কর্পোরেশন পর্যন্ত সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Padma Bridge crossing two crore vehicles for two and a half billion crore
উদ্বোধনের তিন বছর

পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার দুই কোটি যানবাহন, আয় আড়াই হাজার কোটি টাকা

পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার দুই কোটি যানবাহন, আয় আড়াই হাজার কোটি টাকা

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।

পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।

সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।

এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।

পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।

স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।

গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।

নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।

মন্তব্য

p
উপরে