১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন তার বয়স ৪৯ বছর। আর ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেয়ার সময় তিনি ৭২ বছরের এক অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক।
বাংলাদেশের ১৩ জন প্রধানমন্ত্রীর আর কেউ এত দীর্ঘ সময় দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়াতেও আর কোনো রাজনীতিবিদের জীবনে এ সুযোগ আসেনি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৭ বছর দেশ শাসন করেছেন। হিসেবের খাতা বলছে, প্রায় ১৮ বছর দেশ পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা।
বিশ্লেষকরা বলেন, দীর্ঘ সময় ও টানা নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো, একটি ভিশন বা স্বপ্নের পথে দেশকে পরিচালিত করতে পারা। দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং মানব সম্পদের যে অগ্রগতি হয়েছে, তা সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়নচিন্তক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে যে চেতনায়, সেই চেতনাটা হচ্ছে, সবাইকে নিয়ে দেশটা এগিয়ে যাবে। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত চিন্তা। সেটি শেখ হাসিনা ধারণ করেন। সেটা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এই দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি করা হবে। কল্যাণ রাষ্ট্র মানে সবাইকে নিয়ে।’
বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যেও যে কটা দেশ এগিয়ে আছে, তার একটা বাংলাদেশ বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এসডিজির কিছু কিছু লক্ষ্য অর্জনেও আমরা সেরার মধ্যে আছি। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এসডিজি সলিউশন নেটওয়ার্ক অগ্রগতি সম্মাননা দেয়া হয়েছে।’
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক অনেক সূচকেও অগ্রগতি এসেছে।
করোনা শুরুর আগে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, প্রত্যাশিত যে জীবন একজন মানুষের, সেটার মান বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। করোনা শুরু হওয়ার আগের বছর আমরা ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় এসব ক্ষেত্রে আমার সবার চেয়ে এগিয়ে আছি।’
২০১৬ থেকে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এর মূল কথাটা হচ্ছে কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। তার মানে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে, দুর্নীতি হবে না, বাস্তবায়ন স্বচ্ছ হবে।’
দুর্নীতি, বৈষম্য কিংবা বাস্তবায়নের গাফিলতি, গ্রামের উন্নয়ন-এই বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে চিহ্নিত করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি।
বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছি। তার সঙ্গে কিছু সমস্যা থাকবে এবং সেই সমস্যা নতুন করে আবার সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু সাধারণত সরকারের লোকজন এসব স্বীকার করে না। এটা তার দূরদর্শী চিন্তার একটা দিক। যে সমস্যাগুলো আছে, যে সমস্যাগুলো আসতে পারে, সেগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায়’ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার যে জাতিসংঘের স্বীকৃতি, সেটা আমরা পেয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির পরিমাণ বেড়েছে, আকার বেড়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে যে উন্নয়ন, মেগাপ্রজেক্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে, বলা যায় বর্তমান যে বাংলাদেশ- এটির রূপকার বা এটি বাস্তবায়ন করা সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।’
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ভাবমূর্তি বদলে গেছে বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের যে পরিচয়টা ছিল, বিশেষ করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি অথবা ক্ষুধা দারিদ্র্যপীড়িত একটি রাষ্ট্র মনে করা হতো, সেই ভাবমূর্তি উনি পুরোপুরি মুছে দিতে পেরেছেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এটাকে অনুসরণ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন বলে মনে করেন এ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে বা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বায়নের যে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, সেখানে একটি দেশকে শক্তিশালী করার জন্য যে ধরনের বিনিয়োগ, যে ধরনের বাণিজ্য, যে ধরনের রেমিট্যান্স অপরচুনিটি তৈরি করা দরকার ছিল, সেগুলো তিনি করেছেন। এবং তার নেতৃত্বেই এসব হয়েছে।’
বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি’কেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র বলি বা মধ্য পর্যায়ের শক্তি, সব দেশের সঙ্গে একটা ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যে দেশগুলো আছে, আমরা যদি পশ্চিমা দেশগুলোর কথা বলি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য এবং তাদের সঙ্গে ভীষণভাবে ঘনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ-এর সহযোগিতা নিয়ে একদিকে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
‘অন্যদিকে, ভারত এবং চীনের সহায়তা নেয়া, বাংলাদেশের অনেকগুলো মেগা প্রজেক্টে চীন এবং ভারতের যুক্ততা আছে, সেটাও একটা সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে জাপান যুক্ত আছে। তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক দাতা রাষ্ট্র। ফলে জাপানের ইনভলবমেন্ট এবং রাশার মতো একটা দেশকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে ইনভলব করা– এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কার্যকর ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক।’
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ পেয়েছেন দেশকে এগিয়ে নেয়ার। আর এ কারণেই বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন বহির্বিশ্বে কাউন্ট করা হয়, হিসেব করা হয়। বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার, দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে বা উন্নয়নশীল বিশ্বে। শেখ হাসিনা অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জলসীমা বিরোধ তিনি নিষ্পত্তি করেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে জলসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমা বিরোধ, সেটি নিষ্পত্তি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতিকে তিনি শক্তিশালী করেছেন। উনি জলবায়ু কূটনীতিকে শক্তিশালী করেছেন।’
মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একটি বড় দিক বলে মনে করেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনি তাদের শুধু আশ্রয়ই দেননি, তাদের প্রত্যাবাসনে কাজ করছেন। এ নিয়ে সারা বিশ্বে কথা বলছেন, এবারও জাতিসংঘের ভাষণে বিষয়টি তুলে ধরেছেন সংকট মোকাবিলায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাসনামলের ১৮ বছরে বড় ধরনের কোনো ক্ষোভ, জনরোষ দেখা যায়নি। রাজনৈতিক সভা, সেমিনার, সরকারের সমালোচনা থাকলেও বড় কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ কখন বিক্ষোভ করে, মানুষ কখন গণরোষে উদ্বুদ্ধ হয়? যখন আপনার চাহিদা পূরণ হবে না, যখন আপনি খেতে পাবেন না, যখন আপনার মাথার ওপর ছাদ থাকবে না, যখন আপনার সন্তানদের লেখাপড়া হবে না, যখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে, জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যাচ্ছে, তখনই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে আনরেস্ট তৈরি করে।’
তিনি বলেন, মানুষের যখন মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়, তখন সে আসলে কোনো প্রকার বিক্ষোভে যায় না।
বঙ্গবন্ধুর অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই তার কন্যা শেখ হাসিনা হাঁটছেন বলে মন্তব্য এই শিক্ষকের। তিনি বলেন, ‘টানা তিন দফায় ক্ষমতায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর যে পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ক্ষুধাহীন, দারিদ্র্যহীন একটা রাষ্ট্র তৈরি করা, যেখানে সবাই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে – মূলত এটাই তিনি ধারণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে। আসলে তো তার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। সেটিকে তিনি ধারণ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর ‘ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতি’কে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার একটি বিশেষ দিক বলে মনে করেন গোবিন্দ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটো দেশ, ভারত ও চীন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের যে প্রভাব, এ প্রভাবের মধ্যেও ব্যালেন্সড কন্টেইনমেন্টের মধ্য দিয়ে তিনি উভয়পক্ষকে ডিল করে সামনের দিকে এগুচ্ছেন।’
এ কারণেই শেখ হাসিনা দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে বিশ্বনেতা হয়ে উঠছেন বলেও মন্তব্য তার।
গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতিতে তার যে দক্ষতা এবং তিনি যেভাবে এ জায়গাটা নিয়ন্ত্রণ করছেন বা সামাল দিচ্ছেন, আমার ধারণা এই কারণেই তিনি বৈশ্বিক পরিসরে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আর্বিভূত হতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এখন শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, সাউথ এশিয়ার দু-একজনের নাম যদি বলতে হয়, বিশ্বনেতৃত্বের মধ্যে যারা আছেন, শেখ হাসিনার নাম, কিন্তু কোনোভাবে পেছনে আসবে না।’
বিশ্বে দীর্ঘ সময় ধরে অনেকেই ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে কর্মপ্রয়াস সেটাই শেখ হাসিনাকে সবার চেয়ে আলাদা করেছে বলে মনে করেন তিনি।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র দূরীকরণ, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন – এই যে কতগুলো জায়গা, এই জায়গাগুলো চিন্তাই করা যায় না। আমরা তো লম্বা সময় ধরে অনেককেই ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু মানুষের উন্নয়ন চিন্তাকে কেন্দ্রে নিয়ে, মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে, যে কথাটা তিনি বারবার বলেন, এটা তিনি শুধু বলেন না, আন্তরিকভাবে ধারণ করেন।’
আরও পড়ুন:জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নিম্নকক্ষে নয়, উচ্চকক্ষে পিআর চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি। তাই জামায়াতে ইসলামীসহ যে কয়টি দল যুগপৎ আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে আমরা নেই।’
সাত দফা দাবিতে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই মুহূর্তে জোট নয়। স্বতন্ত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এগোবে এনসিপি।’
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদের বিকল্প নেই। গণপরিষদ ও জাতীয় নির্বাচন আমরা যেহেতু একসঙ্গে চাচ্ছি, তাই সেই যৌথ নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আমরা সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। অক্টোবরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে আবারও মাঠে নামবে এনসিপি।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিবন্ধন পেতে যাচ্ছি। শাপলা প্রতীক না দেওয়ার পক্ষে কোনো যথাযথ যুক্তি নির্বাচন কমিশন দিতে পারেনি। আমরা আশা করছি শাপলা প্রতীক পাব।
নাহিদ বলেন, আমরা শুধু উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি এবং জবাবদিহির জন্য একটা কার্যকর উচ্চকক্ষ চাচ্ছি। সেটাকে নিশ্চিত করেই যেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হয়।
এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জোট ও গণপরিষদের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাদের বলেছেন, আওয়ামী দোসররা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
সভায় দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সমন্বয় কমিটির নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
অসম্ভবকে সম্ভব করার এই গল্পটি প্রতিটি ছাত্রের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। স্বপ্ন পূরণের পথে সাহস আর নিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, কেবল বিজয়ের জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্যই লড়াই করতে হয়। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে মেধা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই, আর সেই পথেই রচিত হয় নতুন ইতিহাস। এই ডাকসু নির্বাচন সেই ইতিহাসেরই একটি অংশ, যেখানে মেধা আর সততা পেয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।
দুর্ধর্ষ জয়, না অভিস্মরণীয় বিজয়! ডাকসুতে শিবিরের এই জয়কে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ এবং মহিউদ্দিন খান তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ভোট পেয়েছেন, মানে এক কথায় অলআউট উইন। জয়ের ব্যবধানটাই সবচেয়ে বড় চমক সৃষ্টি করেছে এখানে। ডাকসুর ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ভিপি পদে সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট, ছাত্রদলের আবিদ পেয়েছেন ৫৬৫৮ ভোট, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। জিএস পদে এস এম ফরহাদ পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট, অন্যদিকে ছাত্রদলের হামিম পেয়েছেন ৫২৮৩ ভোট। এখানেও রয়েছে দ্বিগুণ ব্যবধান। এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান পেয়েছেন ৯৫০১ ভোট, অন্যদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মায়েদ পেয়েছেন ৪২৫৪ ভোট। অর্থাৎ ৫২৪৭ ভোটের ব্যবধান রয়েছে এখানে। শিবিরের এই তিন নায়ক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়া যাক।
শুরুতেই আলোচনা করা যাক মহিউদ্দিন খান মহিকে। চোখে চশমা, পরনে পাঞ্জাবি আর চেহারায় ভদ্রতার ছাপ সুস্পষ্ট। শিক্ষার্থীরা তো বটেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও মহিউদ্দিনের জনপ্রিয়তা আছে। ভদ্রতার পাশাপাশি মেধাতেও যে কারো চেয়ে এগিয়ে তিনি। মহিউদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি অনার্সে ৩.৯৩ সিজিপিএ অর্জন করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং মাস্টার্সে ৪.০০ সিজিপিএ অর্জন করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি মাস্টার্সের পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে ৩.৯৭ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি বিজয় '৭১ হলের সাবেক শিক্ষার্থী। ছাত্র রাজনীতিতে দাপট বজায় রাখার জন্য হলে বছরের পর বছর সময় কাটানোর নজির আছে, সেখানে মহিউদ্দিন খান বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় তিনি হল ছেড়ে দেন যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় তখন। তাই এজিএস হিসেবে ডাকসু নির্বাচনে মহিউদ্দিন খানের এই জয়টা মোটেও অবাক করার মতো নয়।
এবার আসবে এস এম ফরহাদের নাম। দেখতে সে ছোটখাটো হলেও তার দায়িত্বটা বিশাল। একজন ডিবেটর হিসেবে তার বেশ খ্যাতি আছে। কখনো কখনো তিনি বাম রাজনীতির সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো ছাত্রদলের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আবার প্রতিপক্ষের দিক থেকেও কেউ কেউ ফরহাদকে নিয়ে নানা সময় নানা আলোচনা ও সমালোচনা করেছেন। তিনি সেসব সমালোচনার সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছেন তার দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে। ছাত্রলীগের সাথে তার অতীত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা আছে, কিন্তু ফরহাদের দাবি সেটা ছিল তার চৌকস কৌশল। তিনি নাকি পরিচয় লুকিয়ে শিবির করতেন। ফরহাদের যে রুমমেট তার সঙ্গে দীর্ঘ চার বছর থেকেছে, সেও ফরহাদের আসল রাজনৈতিক পরিচয় জানতো না। ২০০৪ সালের ৫ই আগস্টের পর ফরহাদের পরিচয় সামনে আসার পর, অন্য অনেকের মতো তার রুমমেটও অবাক হয়েছিল। ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৭-১৮ সেশনের এবং পাশাপাশি কবি জসীমউদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ডাকসু নির্বাচনের সময় ফরহাদকে তেমন প্রচারণা করতে দেখা যায়নি, অথচ তার জয় আল্লাহ সহজভাবে এনে দিয়েছেন।
সর্বশেষে আসবে এই ডাকসুর ইতিহাসের অন্যতম নাম, যার দ্বারা পুরো ডাকসু আগামী কয়েক বছর পরিচালিত হবে, তার নাম হলো সাদিক কায়েম। তিনি হলেন শিবিরের অন্যতম ফ্রন্টলাইনার। ডাকসুতে তিনি শিবিরের হয়ে প্রচার-প্রচারণা করেছেন সবচেয়ে বেশি। সাদিক কায়েমের প্রচারণা সবসময়ই ছিল একদম সাদামাটা। কিন্তু তার জয় আল্লাহ দিলেন অনেক বড়সড় করে। তিনি বর্তমান ডাকসুর ইতিহাসে শিবিরের প্রথম এবং একমাত্র ভিপি। মাঝরাতে গতকাল সবাই যখন বিজয় উল্লাসের অপেক্ষায়, সাদিক কায়েমকে তখন নামাজরত অবস্থায় একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়। ভিপি হওয়ার আগেই আল্লাহর নাম স্মরণ করে সাদিক কায়েম বলেছিলেন, “ডাকসুর কাজ নেতা তৈরি করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ হাসিল করা। এই স্বার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ: আবাসন সংকট দূর করা, শিক্ষার্থীদের খাবার এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, এবং বিশেষ করে রেজিস্টার ভবনে শিক্ষার্থীদের অনেককালের ভোগান্তি থেকে চির বিদায় দেওয়া।” এবার মূলত সেসব বাস্তবিকতার চিত্র প্রমাণ করার পালা। তিনি শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম চাকরির সুযোগ, আধুনিক লাইব্রেরি ব্যবস্থা, মসজিদের আধুনিকায়ন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের প্রসারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে চান। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাদিক কায়েম অপূর্ব মেধার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। সাদিক কায়েম যে এলাকা থেকে উঠে এসেছেন, সেখান থেকে খুব কম সংখ্যক ছেলে এ যাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় খুব ভালোভাবে টিকে যান এবং একাধিক সংগঠনের প্রধান হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বের গুণটা তার ভেতর আগে থেকেই আছে। এবার ভিপি হিসেবে তিনি কতটা সফল হবেন, তা সময় বলে দেবে।
জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হলে শুধু মেধা থাকলেই চলে না, তার সাথে দরকার দৃঢ় সংকল্প আর সততা। এই নির্বাচন প্রমাণ করলো যে, যখন মেধা আর সততার সমন্বয় ঘটে, তখন যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। ছাত্র রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করে নতুন একটি উদাহরণ সৃষ্টি করার এই সুযোগ এসেছে, যা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বিজয় শুধু একটি পদের নয়, বরং লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশার। এই পথচলা যেন নতুন দিনের সূচনা করে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী :
ডঃ তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইমপ্যাক্ট গ্রুপে গ্লোবাল কনসালট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।
দাউদ ইব্রাহিম হাসান, বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একজন রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হওয়ার পাশাপাশি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি আইডিএলসি ফাইনান্স পিএলসিতে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের একজন সদস্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সাংবাদিকদের জানান, রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসকের শিডিউল আগে থেকেই নেওয়া ছিল। সেই অনুযায়ী আজ তারা সিঙ্গাপুর গেছেন।
তিনি জানান, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা রওনা হন। তবে, চিকিৎসার জন্য তারা কতদিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন, তা জানাননি শায়রুল।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু বলেনছেন- নির্বাচনটা বানচাল করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করতেছেন। নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেছে, কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে একটি নির্বাচিত সরকার দেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে। নির্বাচন ছাড়া এ দেশের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা এবং ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু বলেন, নির্বাচন নিয়ে যারা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করুন না কেন এই বাংলাদেশের মানুষ অন্তত সচেতন। আমরা জনগণকে নিয়ে সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে যাতে সঠিক সময়ে নির্বাচন হয় এবং সরকারও নির্বাচনটা সঠিক সময়ে দিতে বদ্ধপরিকর। সে ব্যাপারে আমরা সচেতন থাকব এবং সক্রিয় থাকব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সাথে জোটের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময় ভূঞাপুর বালিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকে গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তরফদার। এতে অতিথি ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান তালুকদার সেলু, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
আগামী রমজানের আগেই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, এতে ষোলো বছর পর দেশের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতিহা পাঠ শেষে এ মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের মানুষ এখনো নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের দিক থেকে আমরা এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের মধ্যে বাস করছি। আমাদের আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। তবে আমাদের বিশ্বাস খুবই দ্রুত রমজানের আগেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাতে এ দেশের ভোটাররা ষোলো বছর ধরে যে ভোট দিতে পারেননি, এবার তারা সেই ভোট দিতে পারবেন।’
‘পাশাপাশি গণতন্ত্রের আরও বিভিন্ন শর্ত, যেমন: এ দেশের মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধ তৈরি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা— পূরণ করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আদালত হতে হবে অসহায় মানুষের শেষ ভরসার স্থল। সেই ধরনের একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এই লক্ষ্য পূরণে মানুষের অনুপ্রেরণা হচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন মানবতা, প্রেম ও দ্রোহের কবি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, স্বাধীনতার লড়াই, নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং বছরখানেক আগে যে দুনিয়া কাঁপানো গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটি জাতীয় অর্জন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যার গান ও কবিতা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে, তার গান গাইতে গাইতে ও তার কবিতা আবৃত্তি করতে করতে আমরা রাজপথে নেমে আসতাম।’
রিজভী বলেন, ‘স্বৈরশাসনের তপ্ত বুলেটের সামনে নিঃশঙ্কচিত্তে দাঁড়াতেও দ্বিধা করিনি, কারণ আমাদের কণ্ঠে ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা। যখনই এ দেশের মানুষ অধিকারহারা হয়, তখনই তাদের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করে অত্যাচারীর শৃঙ্খল ভাঙার প্রত্যয় জেগে ওঠে যার কবিতা ও গানে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে তিনি (নজরুল) তার শানিত কলম চালাতে দ্বিধা করেননি। তার লেখা কবিতা, গান ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যে চেতনা তিনি গোটা জাতিকে দিয়েছেন, তা ধারণ করেই আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছি, জুলাই আন্দোলনে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠোমোতে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য চলে আসছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সেখানে রাতারাতি এগুলোর সমাধান সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রকাঠামো বদলাতে হবে।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারর চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা এখনো আসতে পরিনি। এমনকি নির্বাচন নিয়েও একই বিষয় আছে, যদিও জাতি এখন সেই দিকেই মনোনিবেশ করেছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম ও লড়াই করেছি, এটা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে— এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ শিরোনামের এই সেমিনারের আয়োজন করে অর্পণ আলোক সংঘ নামের একটি সংগঠন।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সেমিনারটির সঞ্চালনা করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, একইসঙ্গে অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাও বলছি। কিন্তু দীর্ঘদিনের সব অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার— সবকিছু কাটিয়ে একদিনে সুন্দর করে একটি রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব, এটা মনে করার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে ৫২ বছরে একটা নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধান আমরা তৈরি করতে পারিনি, সেখানে আজ হঠাৎ করে মুহূর্তের মধ্যে আমরা সবকিছু ঠিক করতে পারব না। আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা চেষ্টা করছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কিংবা জোড়াতালি দিয়ে কোনোকিছু করা যায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা ও লক্ষ্য প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও আন্তরিকতা থাকতে হবে।’
এ সময়ে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এই কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ, বেগুন গাছ লাগিয়ে আমরা কমলালেবু আশা করতে পারি না। কাজেই আমাদের সামনে একটা সুযোগ এসেছে, সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি, বৈষম্যহীন একটা সমাজব্যবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, তাহলে হয়তো-বা অভ্যুত্থানের কিছুটা মূল্য আমরা পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারা। সেখান থেকে সবকিছু নেমে আসে। একজন স্কুলশিক্ষককেও নিজের সমস্যা সমাধান করতে ঢাকায় আসতে হয়, যেটার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জন্য তো জেলা পরিষদই যথেষ্ট হওয়ার কথা।’
‘কিন্তু ওই যে সিস্টেম। কারণ, তারা যদি ঢাকায় না আসেন, তাহলে ঘুষ আসবে কোথা থেকে? এখন স্কুলশিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক— সব নিয়োগ হয় ঘুষের বিনিময়ে। যেই রাষ্ট্রকাঠামোতে এমন বৈষম্য চলতে থাকে, সেখানে রাতারাতি কিছু করে ফেলতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মেহনিত মানুষের আন্দোলনের দাবি-দাওয়ার মঞ্চ হিসেবে আমরা নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করি। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’
‘রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা; আমাদের লক্ষ্যও তাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে শ্রেণিগত পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য ধনসম্পদে। গত ৫৪ বছরে যে দলগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা যে নীতি তৈরি করেছে, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ, নিপীড়িত জনগোষ্ঠী কিংবা লিঙ্গীয় পরিচয়ের মানুষ, তাদের জন্য সাম্য তো দূরের কথা, ন্যূনতম ভারসাম্যও তৈরি করতে পারেনি।’
‘এতে লুটপাট-নির্ভর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে ধরে নেওয়া হয়, ক্ষমতা দিয়ে টাকা-পয়সা বানাবে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে ব্যাংক লুট হয়ে সাফা হয়ে গেছে। কিন্তু গত পরশুদিন দেখলাম, ৯টি নন-ব্যাংকি ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা বিশাল ব্যাপার। কিন্তু হাসিনা চলে যাওয়ার পরও লুটপাট বন্ধ হয়ে যায়নি। গেল ১২ মাসে প্রায় একইভাবে ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, যেগুলো হাসিনার আমলে বেশি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এজন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ব্যাংক থেকে একটি টাকা লুট হলেও বাংলাদেশের ব্যাংকের নজরদারি থাকে। লুট হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক জানবে না— এটা হয় না। হাসিনার আমলে যে লুট হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংক জানত। কিন্তু সেখানে যে কর্মকর্তাদের এই নজরদারি করার কথা ছিল, তাদের নামে কোনো নিউজ হয়নি, মামলা হয়নি। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়নি।’
মন্তব্য