১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন তার বয়স ৪৯ বছর। আর ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেয়ার সময় তিনি ৭২ বছরের এক অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক।
বাংলাদেশের ১৩ জন প্রধানমন্ত্রীর আর কেউ এত দীর্ঘ সময় দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়াতেও আর কোনো রাজনীতিবিদের জীবনে এ সুযোগ আসেনি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৭ বছর দেশ শাসন করেছেন। হিসেবের খাতা বলছে, প্রায় ১৮ বছর দেশ পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা।
বিশ্লেষকরা বলেন, দীর্ঘ সময় ও টানা নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো, একটি ভিশন বা স্বপ্নের পথে দেশকে পরিচালিত করতে পারা। দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং মানব সম্পদের যে অগ্রগতি হয়েছে, তা সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়নচিন্তক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে যে চেতনায়, সেই চেতনাটা হচ্ছে, সবাইকে নিয়ে দেশটা এগিয়ে যাবে। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত চিন্তা। সেটি শেখ হাসিনা ধারণ করেন। সেটা ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এই দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি করা হবে। কল্যাণ রাষ্ট্র মানে সবাইকে নিয়ে।’
বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যেও যে কটা দেশ এগিয়ে আছে, তার একটা বাংলাদেশ বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এসডিজির কিছু কিছু লক্ষ্য অর্জনেও আমরা সেরার মধ্যে আছি। সে জন্য প্রধানমন্ত্রীকে এসডিজি সলিউশন নেটওয়ার্ক অগ্রগতি সম্মাননা দেয়া হয়েছে।’
কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক অনেক সূচকেও অগ্রগতি এসেছে।
করোনা শুরুর আগে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, প্রত্যাশিত যে জীবন একজন মানুষের, সেটার মান বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। করোনা শুরু হওয়ার আগের বছর আমরা ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় এসব ক্ষেত্রে আমার সবার চেয়ে এগিয়ে আছি।’
২০১৬ থেকে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এর মূল কথাটা হচ্ছে কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। তার মানে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে, দুর্নীতি হবে না, বাস্তবায়ন স্বচ্ছ হবে।’
দুর্নীতি, বৈষম্য কিংবা বাস্তবায়নের গাফিলতি, গ্রামের উন্নয়ন-এই বিষয়গুলো আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে চিহ্নিত করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি।
বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছি। তার সঙ্গে কিছু সমস্যা থাকবে এবং সেই সমস্যা নতুন করে আবার সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু সাধারণত সরকারের লোকজন এসব স্বীকার করে না। এটা তার দূরদর্শী চিন্তার একটা দিক। যে সমস্যাগুলো আছে, যে সমস্যাগুলো আসতে পারে, সেগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায়’ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার যে জাতিসংঘের স্বীকৃতি, সেটা আমরা পেয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির পরিমাণ বেড়েছে, আকার বেড়েছে। বাংলাদেশের ভেতরে যে উন্নয়ন, মেগাপ্রজেক্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে, বলা যায় বর্তমান যে বাংলাদেশ- এটির রূপকার বা এটি বাস্তবায়ন করা সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।’
শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ভাবমূর্তি বদলে গেছে বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের যে পরিচয়টা ছিল, বিশেষ করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি অথবা ক্ষুধা দারিদ্র্যপীড়িত একটি রাষ্ট্র মনে করা হতো, সেই ভাবমূর্তি উনি পুরোপুরি মুছে দিতে পেরেছেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এটাকে অনুসরণ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন বলে মনে করেন এ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে বা স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বায়নের যে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, সেখানে একটি দেশকে শক্তিশালী করার জন্য যে ধরনের বিনিয়োগ, যে ধরনের বাণিজ্য, যে ধরনের রেমিট্যান্স অপরচুনিটি তৈরি করা দরকার ছিল, সেগুলো তিনি করেছেন। এবং তার নেতৃত্বেই এসব হয়েছে।’
বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি’কেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী রাষ্ট্র বলি বা মধ্য পর্যায়ের শক্তি, সব দেশের সঙ্গে একটা ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যে দেশগুলো আছে, আমরা যদি পশ্চিমা দেশগুলোর কথা বলি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য এবং তাদের সঙ্গে ভীষণভাবে ঘনিষ্ঠ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ-এর সহযোগিতা নিয়ে একদিকে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
‘অন্যদিকে, ভারত এবং চীনের সহায়তা নেয়া, বাংলাদেশের অনেকগুলো মেগা প্রজেক্টে চীন এবং ভারতের যুক্ততা আছে, সেটাও একটা সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে জাপান যুক্ত আছে। তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপাক্ষিক দাতা রাষ্ট্র। ফলে জাপানের ইনভলবমেন্ট এবং রাশার মতো একটা দেশকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে ইনভলব করা– এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কার্যকর ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক।’
সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ পেয়েছেন দেশকে এগিয়ে নেয়ার। আর এ কারণেই বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয় বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন বহির্বিশ্বে কাউন্ট করা হয়, হিসেব করা হয়। বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার, দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে বা উন্নয়নশীল বিশ্বে। শেখ হাসিনা অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন। ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জলসীমা বিরোধ তিনি নিষ্পত্তি করেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে জলসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমা বিরোধ, সেটি নিষ্পত্তি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতিকে তিনি শক্তিশালী করেছেন। উনি জলবায়ু কূটনীতিকে শক্তিশালী করেছেন।’
মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একটি বড় দিক বলে মনে করেন তিনি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনি তাদের শুধু আশ্রয়ই দেননি, তাদের প্রত্যাবাসনে কাজ করছেন। এ নিয়ে সারা বিশ্বে কথা বলছেন, এবারও জাতিসংঘের ভাষণে বিষয়টি তুলে ধরেছেন সংকট মোকাবিলায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাসনামলের ১৮ বছরে বড় ধরনের কোনো ক্ষোভ, জনরোষ দেখা যায়নি। রাজনৈতিক সভা, সেমিনার, সরকারের সমালোচনা থাকলেও বড় কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষ কখন বিক্ষোভ করে, মানুষ কখন গণরোষে উদ্বুদ্ধ হয়? যখন আপনার চাহিদা পূরণ হবে না, যখন আপনি খেতে পাবেন না, যখন আপনার মাথার ওপর ছাদ থাকবে না, যখন আপনার সন্তানদের লেখাপড়া হবে না, যখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে, জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যাচ্ছে, তখনই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে আনরেস্ট তৈরি করে।’
তিনি বলেন, মানুষের যখন মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়, তখন সে আসলে কোনো প্রকার বিক্ষোভে যায় না।
বঙ্গবন্ধুর অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথেই তার কন্যা শেখ হাসিনা হাঁটছেন বলে মন্তব্য এই শিক্ষকের। তিনি বলেন, ‘টানা তিন দফায় ক্ষমতায় আছেন প্রধানমন্ত্রী, আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর যে পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ক্ষুধাহীন, দারিদ্র্যহীন একটা রাষ্ট্র তৈরি করা, যেখানে সবাই মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে – মূলত এটাই তিনি ধারণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে। আসলে তো তার শরীরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। সেটিকে তিনি ধারণ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর ‘ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতি’কে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার একটি বিশেষ দিক বলে মনে করেন গোবিন্দ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটো দেশ, ভারত ও চীন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের যে প্রভাব, এ প্রভাবের মধ্যেও ব্যালেন্সড কন্টেইনমেন্টের মধ্য দিয়ে তিনি উভয়পক্ষকে ডিল করে সামনের দিকে এগুচ্ছেন।’
এ কারণেই শেখ হাসিনা দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে বিশ্বনেতা হয়ে উঠছেন বলেও মন্তব্য তার।
গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতিতে তার যে দক্ষতা এবং তিনি যেভাবে এ জায়গাটা নিয়ন্ত্রণ করছেন বা সামাল দিচ্ছেন, আমার ধারণা এই কারণেই তিনি বৈশ্বিক পরিসরে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আর্বিভূত হতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এখন শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, সাউথ এশিয়ার দু-একজনের নাম যদি বলতে হয়, বিশ্বনেতৃত্বের মধ্যে যারা আছেন, শেখ হাসিনার নাম, কিন্তু কোনোভাবে পেছনে আসবে না।’
বিশ্বে দীর্ঘ সময় ধরে অনেকেই ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে কর্মপ্রয়াস সেটাই শেখ হাসিনাকে সবার চেয়ে আলাদা করেছে বলে মনে করেন তিনি।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র দূরীকরণ, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন – এই যে কতগুলো জায়গা, এই জায়গাগুলো চিন্তাই করা যায় না। আমরা তো লম্বা সময় ধরে অনেককেই ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু মানুষের উন্নয়ন চিন্তাকে কেন্দ্রে নিয়ে, মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে, যে কথাটা তিনি বারবার বলেন, এটা তিনি শুধু বলেন না, আন্তরিকভাবে ধারণ করেন।’
আরও পড়ুন:জুলাই সনদের খসড়া পর্যালোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দলটির পক্ষ থেকে এই মতামত জমা দেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বরাত দিয়ে দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছিল দলটি ২১ আগস্ট তাদের মতামত জমা দেবে।
এদিকে জুলাই সনদের মতামত জমাদানের সময় আগামী ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার মতামত চেয়ে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের পটভূমিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত, সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে, তা বলা হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন বলছে, সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো কোনো কোনো দল একমত হননি। সেসব বিষয়ে দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।
ওই সব বিষয়ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদের খসড়ায়।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষ নয় বিএনপি এমনটা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, পিআর পদ্ধতিতে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়, এতে জনগণের অধিকার পরিপূর্ণ হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট আছে তা থেকে উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ দ্রুত নির্বাচন। যারা সংস্কার চাচ্ছে না, সেটা তাদের দলের ব্যাপার।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক, এটাই প্রত্যাশা।’
এর আগে গত বুধবার সকালে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে স্ত্রীসহ চিকিৎসার জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে সুস্থ আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার ১১ আগষ্ট দুপুর ১ টায় নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম
উদ্বোধনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত ও দলীয় গান পরিবেশন করে সন্মান প্রদর্শন করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল শহীদ ও জুলাই আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।
কাজেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ কারা পাচ্ছেন, কারা হাসবে জয়ের হাসি, কাদের নেতৃত্বে চলবে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কার্যক্রম তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি। তাই সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ১৭ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরনে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। কর্মীরাও মুখে আছেন নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে।
এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক নেতাকর্মী ভাবছেন নতুন নেতৃত্ব আসবে, আবার কেউ কেউ ভাবছেন ধারাবাহিক নেতার মধ্যে দুই একজন জয়ী হতে পারেন।
তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, যারা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন, রাজপথ থেকে উঠে এসেছেন, রাজনীতিতে যাদের দলীয় পরিচয় বেশি, যারা কর্মী বান্ধব তারাই আসুক নেতৃত্বে। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এছাড়াও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান নেতাকর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সামসুজ্জোহা খান, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন মামুনুর রহমান রিপন। ২০১৫ সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সম্মেলনের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি গঠন হয়নি।
এরপর ২০২২ সালে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নুকে আহ্বায়ক ও বায়েজিদ হোসেন পলাশকে সদস্য সচিব করে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল।
পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসারে, ঘোষিত সম্মেলন উপলক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত রোববার (৩ আগষ্ট) তফসিল ঘোষণা করেন সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরের দিন সোমবার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই দুইটি পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। একই দিনে মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ, সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মাষ্টার হাফিজুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার জন্য লড়ছেন চারজন। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল। এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য আটজন মনোনয়ন তুলেছেন। তারা হলেন শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।
এদিকে এই সম্মেলনের আগের দিন রোববার (১০ আগস্ট) দুপুর ২টায় নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের কাউন্সিলর বা ভোটার তালিকাকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম বেলাল।
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিএনপি’র শীর্ষ ৫ জন নেতা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিএনপি’র মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
এদিকে, সোমবার রাতে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ঘেরাও করতে চাওয়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা চিঠিতে এই বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, বহিষ্কারের তথ্যটি সঠিক।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলীয় নীতি, আদর্শ ও সংহতির পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার বিএনপির সদস্য লুৎফর রহমান খোকাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৩ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সোনালি সংসদ মাঠে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, শাহ আলমের (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী) জন্য আমরা নমিনেশন আনবো। প্রয়োজনে আমরা আত্মাহুতি দেবো কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে। তারেক রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ও বিএনপির মহাসচিবকে ঘেরাও করবো।
তিনি বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ মহলকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ফতুল্লাকে নিয়ে যদি কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে কাউকে ছাড়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, এখানে কোনো জোট চলবে না। এই খেলা আর খেলবেন না। ধানের শীষ ছাড়া ফতুল্লায় কিছু চলবে না। ফতুল্লার জনগণের আবেগ, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ফতুল্লার মানুষদের প্রিয় নেতা শাহ আলমকে বাদ দিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
এদিকে এই ঘটনার দুই দিন পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ঘেরাও করার মন্তব্যটি সঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন লুৎফর রহমান খোকা। তিনি বলেন, মন্তব্যটি স্লিপ অব টাং বলতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রায় ৮০ ভাগ ভোটার বিএনপির। এখানে যদি জোটের অন্য কাউকে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ভোটারদের জন্য কষ্টদায়ক। বিষয়টি কেন্দ্রকে বোঝাতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে এবং একটি সঠিক গণতান্ত্রিক কাঠামো জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা না করে কোনও প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক আলোচনাসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি তাদের সমালোচনা করেন যারা মনে করেন, সংস্কার রাতারাতি বা কয়েকটি বৈঠকের মধ্য দিয়েই হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
বিএনপি নেতা বলেন, যদি সরকার মনে করে যে, তারা চাইলেই কাল থেকে পুলিশ ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দেবে, তাহলে সেটা হবে না। ‘আপনাকে এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে যেখানে ঘুষ নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়।’
জিয়া পরিষদ এই আলোচনাসভার আয়োজন করে, যার শিরোনাম ছিল ‘জুলাই অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’। এটি গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল দেশের উন্নয়নে বাধা হিসেবে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আমলাতন্ত্র উন্নয়নের একটি বড় বাধা। এটি একটি নেতিবাচক আমলাতন্ত্র এবং এটিকে একটি ইতিবাচক কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তা করতে হলে মূলত জনগণকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া, তাদের চাহিদা বোঝা এবং সেই চাহিদাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিফলিত করা।
নির্বাচন চাওয়ার কারণে বিএনপিকে ঘিরে চলমান সমালোচনার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলা শুরু করতেই বলা হলো, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, আমরা কেন নির্বাচন চাই?’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন ছাড়া প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা যায় না। ‘আর যদি প্রতিনিধি না থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সংসদে যাবে? আর যদি নির্বাচিত সংসদ না থাকে, তাহলে কীভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আপনি দেশ চালাতে বাড়ি ও বিদেশ থেকে কয়েকজন লোক ভাড়া করে আনতে পারেন না। এটি সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জাতির এই শোকের সময়ে আমি সকল গণতন্ত্রপন্থী সহযোদ্ধার প্রতি শান্ত ও সংহত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বিভেদমূলক সংঘাত কিংবা জনতার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করতে হলে আমাদের সহনশীলতা ও আত্মসংযমের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সদস্যের মাধ্যমে জনতা ও পুলিশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব গোষ্ঠীকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন একটি শোকাবহ মুহূর্তকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের দিকেই আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমাদের শক্তি ব্যয় হোক নিখোঁজ প্রিয়জনদের খুঁজে বের করা, নিহতদের সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত করা, আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং বিমান দুর্ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে কর্তৃপক্ষকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের সুযোগ করে দেওয়ার কাজে।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণহানির শিকার নিরীহ ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে আমাদের হৃদয়ের গভীর সহানুভূতি। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।
মন্তব্য