আসছে অক্টোবরের প্রথম দিকেই চালু হতে যাচ্ছে বরিশালের পায়রা সেতু। এরপরই বন্ধ হয়ে যাবে এই অঞ্চলের সবশেষ ফেরিঘাট-লেবুখালি ঘাট।
সেতু চালু হলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর যেতে যাত্রীদের ভোগান্তি একেবারেই কমে যাবে। তা নিঃসন্দেহে খুশির কথা। তবে, ফেরিঘাট বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ঘাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পরার আশঙ্কায় রয়েছেন। সাধারণ মানুষ অবশ্য তাতে আনন্দিতই। তারা বলছেন, ঘাটের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ‘উৎপাতও’ বন্ধ হবে।
লেবুখালি ফেরিঘাটের বরিশালের পারে ভাতের হোটেল চালান মোহাম্মদ ইব্রাহিম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘১৫-২০ বছর ধইরা এই ঘাটে হোটেল ব্যবসা করতে আছি। অনেক বছরের স্মৃতি। ফেরি বন্ধ হইয়া গেলে অনেক কষ্ট হইবে।
‘আমার বাড়ি বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রীতে। এহন মূলত আমি ভাবতে আছি কী করমু ফেরি বন্ধ হইয়া গেলে। এলাকায় যাইয়া ভাতের হোটেল দেয়ার কথাই ভাবতে আছি, কিন্তু হেডা আমার জন্য জমাইতে কষ্ট হইয়া যাইবে। অন্য কামে যাওয়ার কথাও ভাবতে আছি। কী করমু এহনও ফাইনাল কিছু করিনাই। তয় কষ্ট হইলেও এই পায়রা নদী উপর যে সেতুটা হইছে, দেখতেও ভালো লাগে অনেক।’
সবুজ ইসলাম নামে এক চা দোকানি বলেন, ‘কর্ম সংকটে পড়তে হইবে আমার। এই ঘাটের উপর নির্ভর কইরা ৭ সদস্যর সংসার আমার চালাইন্না লাগে। ফেরি না চললে কইতে গেলে পথে যাইয়া পড়মু।
‘অনেক বছর এহানে। কত স্মৃতি কাটাইছে। অনেক গ্যাঞ্জাম দিয়া মানুষরে বাঁচাইছি। সেতু চালু হইলে ভালো লাগবে একদিক দিয়া, আবার আরেক দিক দিয়া অনেক খারাপ লাগবে। কেমনে কী চলমু বুঝি না।’
ফেরিঘাটে ঘুরে ঘুরে চিড়াভাজা বিক্রি করেন সামছুল আলম। প্রায় ১৬ বছর ধরে এই কাজে আছেন তিনি। জানালেন, ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে পটুয়াখালী শহরে চলে যাবেন বিকল্প কাজের খোঁজে। কিছু না হলে সেখানেও চিড়া বিক্রি করবেন।
ব্যবসা বন্ধের দুঃখ তো আছেই, সেইসঙ্গে স্মৃতিকাতরতাও যোগ হয়েছে ইউসুফ মিঞার।
তিনি বলেন, ‘৬-৭ বছর ধইরা ব্যবসা করি এইহানে। খারাপ তো লাগতে আছে, এইহান দিয়া চইলা যাওয়া লাগবে। মানুষের ভিড় আর দেখতে পারমু না। কত গল্প, কত কেচ্ছা আর যে কুয়াকাটা যাওয়ার সময় মানুষের আনন্দ দেখতে পারমু না। এহন তো আর ফেরিঘাটে দাঁড়াইয়া গল্পও করবে না। ডায়রেক্ট সেতুতে উইঠা চইলা যাইবে।
‘সেতু উদ্বোধনের লগে লগেই আমাগো ব্যবসা শেষ। এইটা সেতুর কাম ধরার লগে লগেই চিন্তা কইরা রাখছি কী করমু। বাকেরগঞ্জ শহরেই বাসা মোর। চইলা যামু, এলাকায় যাইয়া দোকান দিমু। তয় ভালো লাগতে আছে একটা দিক দিয়া যে মানুষের ভোগান্তি থাকবে না।’
ষাটোর্ধ্ব জগলুল হায়দার এই ঘাটে প্রায় ২০ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করেন। ফেরি বন্ধের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অশ্রুসজল চোখি তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে অনেক ঝামেলা দেখছি ঘাটে, পারলে যাইয়া ছাড়াইয়া দিছি। মিথ্যা কথা কইয়া লাভ কী, কিছু লোকজন এই ঘাটে মানুষজনরে কম মারে নাই। কিছু হইলেই মারামারি করা লাগতো।
‘আর এইটা বড় হইতো ঘাটের দোহানদারগো লইগ্গা। হেরাও শাহেন শাহর নাহান মানুষজনরে মারতো। সবাই না, তয় কিছু দোহানদার এইডা সব সময় করতো। দোহান পাইত্তা মানুষজনের ধার দিয়া জোড় কইরা টাহা রাহারও ঘটনা আছে। তয় ওসব কথা কইয়া কি হইবে, সেতু চালু হইয়া গেলে সব কিছুই ইতিহাস হইয়া যাইবে।’
তবে ঘাট বন্ধ সুসংবাদ এই পথের যাত্রীদের জন্য।
পিরোজপুরের স্বরুপকাঠির ব্যবসায়ি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায়িক কাজে পটুয়াখালীর কলাপাড়া প্রায়ই যেতে হয় আমাকে। পর্যটকদের কীভাবে হেনস্থা করেছে এই লেবুখালি ঘাটের লোকজন সেটা নিজ চোখে দেখা। বহুবার মারামারি দেখেছি।
‘আর সেটা শুরু হতো কখনও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে, আবার কখনো ঘাটের দোকানদারদের সঙ্গে। যার সঙ্গেই শুরু হোক, সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধলেই হলো, সবাই এক হয়ে মারধর। ব্যাপক নির্যাতন করা হতো। সেই নির্যাতন থেকে বাঁচতে পারবে দক্ষিণাঞ্চলবাসী ও কুয়াকাটাকার পর্যটকরাও।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৫ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল সভায় জানিয়েছেন, বরিশালের লেবুখালির পায়রা সেতু দিয়ে অক্টোবরেই যান চলাচল করতে পারবে।
পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, পায়রা সেতু নির্মাণে নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ দশটি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এটিতে। যার ফলে দূর থেকে সেতুটিকে মনে হবে ঝুলে আছে।
এই সেতু চালু হলে বরিশাল থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে আরও দ্রুত যাওয়া যাবে এই পর্যটন স্পটে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে ১২ ফুট লম্বা একটি অজগরের।
মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির সামনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বন বিভাগের ভাষ্য, অজগরটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, লাউয়াছড়ায় বনের ভেতরে যানবাহন চলাচলের জন্য বন বিভাগ দিকনির্দেশনা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে, কিন্তু কেউ সেটা মানে না। যেভাবে খুশি সেভাবে চলাচল করে সব ধরনের গাড়ি। ধারণা করা হচ্ছে কোনো এক সময় রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির চাপায় ১২ফুট লম্বা অজগরটি পিষ্ট হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মারা যায়।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাউয়াছড়া বনের মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির সামনে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে শুক্রবার সকালে অজগর সাপকে মৃত অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
‘খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন মৃত অজগরটিকে উদ্ধার করে জানকীছড়ায় মাটিচাপা দেন।’
কিশোরগঞ্জের আলোচিত পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে, যেগুলোর গণনা চলছে এ মুহূর্তে।
জেলা শহরের ঐতিহাসিক মসজিদটিতে ৯টি দানবাক্স আছে, যেগুলো প্রতি তিন মাস পরপর খোলা হয়। রমজানের কারণে এবার এবার খোলা হয়েছে চার মাস ১০ দিন পর।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এবার ৯টি দানবাক্স খুলে ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।
এখন চলছে গণনার কাজ। গণনা শেষে টাকার পরিমাণ বলা যাবে।
ডিসি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এসব দানবাক্সে ২৭ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।
এসপি মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। টাকা গণনা শেষে ব্যাংকে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন।
টাকা গণনার কাজে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ছাড়াও মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ কর্মী, মসজিদ কমিটির ৩৪ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
দানবাক্সগুলো খোলার পর গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে এসেছেন দূরদুরান্ত থেকে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর তিন মাস ২০ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৩টি বস্তায় ছয় কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
ঐতিহাসিক এ মসজিদের দানবাক্সে একসঙ্গে এত টাকা পাওয়াটা তখন ছিল নতুন রেকর্ড। এবার সে রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মসজিদটিতে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
জেলা শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে পাগলা মসজিদ গড়ে ওঠে। সম্প্রসারণের পর মসজিদের আওতাভুক্ত জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন একর ৮৮ শতাংশে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকায় পৃথক ঘটনায় ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাটিয়ারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহদুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, এদিন ভোরে ভাটিয়ারি এলাকায় চট্টগ্রাম অভিমুখী তুর্ণা নিশিতা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়ে মারা যান ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের বিপ্লব দাশ নামের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েন স্থানীয় ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমির সিভিল স্টাফ ২৪ বছর বয়সী মো. আসিফ উদ্দিন।
দুটি ঘটনার পরই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া বিপ্লব মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।’
গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগের পর প্রধান অভিযুক্ত কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয় বলে জানান তিনি।
বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাঁকুরগাও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতর আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলায় বিষয়টি জানাজানির ভয়ে নারী হাজতি সীমাকে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন করিমন নেছা।
ওই অভিযোগপত্রে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কারারক্ষী সাবানা খাতুন ও তহমিনা, কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফাকে অভিযুক্ত করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নম্বর-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হাতকড়া পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। সেদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
অভিযোগ পেয়ে গত ১৬ এপ্রিল ঘটনার তদন্তে জেলা কারাগারে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসাকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান।
সেদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
শুক্রবার অভিযুক্তদের বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তা নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য