করোনাভাইরাস প্রতিরোধী গণটিকায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে কেন্দ্রে টিকার বরাদ্দ দ্বিগুণ করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সঙ্গে এসএমএস ছাড়া কেন্দ্রে আসতে বারণ করা হয়েছে।
গত ৭ থেকে ১৪ আগস্ট গণটিকা কর্মসূচির অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধিদপ্তর।
সে সময় কেন্দ্রগুলোতে পর্যান্ত টিকার বরাদ্দ না থাকায় টিকাপ্রতাশীদের ভিড় ও ভোগান্তি ছিল চরমে। অনেকেই রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। এমনকি এসএমএস ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকাকেন্দ্রে ভিড় করে।
তেমন পরিস্থিতি আর দেখতে চায় না জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমন ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে সারা দেশে ৮০ লাখ টিকা দেয়ার কার্যক্রম নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রায় ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে এবং ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভার ৪৪৩টি ওয়ার্ডে এ টিকা দেয়া হবে। প্রতি ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনে তিনটি করে বুথ এবং পৌরসভায় একটি বুথ রাখা হবে।
প্রতিটি কেন্দ্র গত ক্যাম্পেইনে প্রতি কেন্দ্র ৩০০ ডোজ টিকার দেয়া হলেও এবারের ক্যাম্পেইনে ৫০০ অধিক টিকা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ক্যাম্পেইনে নিবন্ধনকারী ছাড়া কেউ আসবে না।’
টিকাকেন্দ্রও নিবন্ধনের সুযোগ থাকছে না। শুধু নিবন্ধন কার্ড নিয়ে গেলেই টিকা দেয়া হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেও টিকা দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া টিকা নেয়া যাবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিও স্পষ্ট করেন তিনি। বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কথা, যাদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে। এটা সবার জন্য নয়।’
ক্যাম্পেইনে টিকাপ্রতাশীদের ভোগান্তি এড়াতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ক্যাম্পেইনে কোনো জায়গায় দীর্ঘ লাইন হয়েছে। যারা নিবন্ধিত ছিল না তারও চলে আসায় এমনটা হয়েছে। যাদের ডাকা হয়নি তারও ক্যাম্পেইনে চলে আসছে।
‘এ ছাড়া মডার্না ও ফাইজারের টিকা পেতেও কেন্দ্রে ভিড় করেছেন অনেকেই। এবার যদি সবাই সহযোগিতা করে তাহলে আগের মতো সমস্যা থাকবে না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘যখন কোনো ক্যাম্পেইন হয়, তখন অতি উৎসাহী জনগণ দেখতে ভিড় করেন। অনেকে আগে টিকা নেয়ার চেষ্টা করেন। এসব আপনারা দয়া করে করবেন না। এসব করতে গেলে আমরা আমাদের ক্যাম্পেইনটা ঠিক মতো করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘এটি আসলে গণটিকা নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন।
‘যে ম্যাস ভ্যাকসিনেশন হবে, সারা দেশে কোভিড-১৯ এই ক্যাম্পেইনে আমরা শুধু প্রথম ডোজের টিকা দেব এবং একইভাবে আগামী মাসের একই তারিখে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেব।’
তিনি জানান, ক্যাম্পেইন শুরু হবে সকাল ৯টায়। আর লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছানো পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকা চলমান থাকবে। শেষ টিকা দেয়ার পরও টিকা দল এক ঘণ্টা অবস্থান করবে।
ক্যাম্পেইনে আগে থেকে নির্ধারিত জনগোষ্ঠী ২৫ বছর বয়সী বা তদুর্ধ্ব তাদের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে টিকা দেয়া হবে।
‘আমরা চল্লিশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেব। বয়স্ক, নারী ও প্রতিবন্ধীদের আমরা বিবেচনায় রাখব। স্তন্যদানকারী মা ও অন্তঃসত্ত্বাদের ক্যাম্পেইনের আওতায় আনব না।’
তিনি জানান, টিকা নেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ও টিকাকার্ড সঙ্গে আনতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে কোনো একটি ওয়ার্ডে একটি কেন্দ্রে একটি বুথ, পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে একটি কেন্দ্রে একটি বুথ, সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের ৩টি বুথের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সারা দেশে আগে থেকে যেসব কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি চলছিল সেগুলো অব্যাহত থাকবে।
টিকাগ্রহীতাদের বসার ব্যবস্থা করতে হবে। টিকা নেয়ার পরে প্রত্যেকে অবশ্যই আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। নারীদের জন্য পর্দা ঘেরা জায়গায় টিকা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইউনিয়নে ৩টি বুথে ৩টি টিম থাকবে। প্রতিটি টিমে ২ জন ভ্যাকসিনেটর ও ৩ জন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। পৌরসভা পর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ও সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ১ হাজার বা তদুর্ধ্ব মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য স্থির করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা ৭৫ লাখ টিকা দেব বলে ঠিক করেছি এবং নিয়মিত আরও ৫ লাখ এই ৮০ লাখ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে। প্রতিটি ইপিআই সেন্টার থেকে যা মালামাল দরকার তা আমরা সরবরাহ করেছি। এটা চলছে, আজ রাত এবং কাল সকাল পর্যন্ত চলবে।’
আরও পড়ুন:দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ দিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। এছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে মোট শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১২৭ জন। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৫৮২ জন।
এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সারা দেশে মশা নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ২৯৬ জনে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৪২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪২৯ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে— বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪৯ জন; চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন; ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬১ জন; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২ জন; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ জন; খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২১ জন ও রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫৮ জন রোগী। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং নারী ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, 'মে মাসের তুলনায় জুনে আক্রান্তের সংখ্যা তিনগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচগুণ এবং আগস্টে দশগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।'
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৯৬ জনে। এর আগে ২০২৩ সালের পুরো বছরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালের পুরো বছরের (১ জানুয়ারি–৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সর্বমোট হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৭৫ জন।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের মধ্যে দেশে আরও ২১ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব শনাক্ত হয়েছে। তবে, নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এই সময়ের মধ্যে।
সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২ জন। আর দেশে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮৩ জন রোগী। এসব রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩৬ জন আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে। একইসঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তিদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ২৮, খুলনা বিভাগে ৪১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৩৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে গত এক দিনে সারাদেশে ৩৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮ হাজার ৭২৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৮৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের।
সারাদেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর সিলেট এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার দুপরে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন করে করোনার আক্রমন শুরুর পর সিলেটে প্রথম এই কোন রোগী মারা গেলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত ৬৯ বছর বয়েসি পুরুষ ১৯ জুন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি। এছাড়া সিলেটে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ জন বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। তিনি করোনা ছাড়াও আরও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে; গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে চলতি জুন মাসেই জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা সাতজনে দাঁড়াল।
২৮ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলার মিরসরাই উপজেলার বাসিন্দা সালেহা বেগম (৪০) নামে এক নারী শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই তিনি হৃদরোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯১টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নগরের এবং দুজন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরের শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চারজন এবং এভারকেয়ার হাসপাতালে দুজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি জুন মাসে মোট ১৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৬ জন পুরুষ, ৬৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
মশাবাহীত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের দুই জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় গোটা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৫ জন আক্রান্ত রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে বিভাগের ছয় জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন। মৃত্যুবরণ করা দুজন হলেন- বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আ. করিম (৫০) ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকার মো. ইউসুফ খন্দকার (৭২)। এর মধ্যে আ. করিম বরিশাল শেরইবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ও বৃদ্ধ মো. ইউসুফ খন্দকার কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। এ পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ জরুরি। তাই মশার বিস্তার রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৩৫ জন।
বরগুনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মৃত ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। শুধু মৃত্যুই নয় এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
মন্তব্য