সাভারের বক্তারপুরে একটি ভাড়া বাসায় এক নারীর মরদেহ। ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে কেউ হত্যা করেছে। মরদেহের পাশে পড়ে আছে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। দৃশ্যত হত্যাকারী ভুলে সেটা ফেলে গেছে।
এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদ করা কোনো কঠিন কাজ হওয়ার কথা নয়, বিশেষ করে হত্যাকারী যখন নিজেই নিজের পরিচয় জানান দিয়ে গেছে।
সমস্যা হলো, যার পরিচয়পত্র, তিনি থাকেন ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে, বাগেরহাটের মোংলায়। আর পুলিশ তদন্তে নেমে নিশ্চিত হয়, ঘটনার দিন ওই পরিচয়পত্রধারী ব্যক্তি মোংলাতেই ছিলেন, সাভারে নয়। তাহলে?
পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী শাখা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) এই ভীষণ ঘোরালো হত্যারহস্যের কিনারা করেছে। তাতে উদঘাটন হয়েছে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে শত্রুতা কতদূর যেতে পারে। সেই সঙ্গে ফুটে উঠেছে পারুল নামে সাভারের এক অসহায় নারীর করুণ পরিণতি, যার সঙ্গে দেশের অপর প্রান্তে চলা এক স্থানীয় নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো যোগ নেই। পারুল নিতান্ত দৈবচক্রে খুন হয়েছেন। হত্যাকারীরা দৈবচয়নে তাকে বেছে নিয়েছিল। কারণ পারুল ছিলেন নিঃসঙ্গ।
সাভারে পারুলের মরদেহ
পারুল বেগম সাভারে বসবাস করলেও তার আদি নিবাস মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সিন্দুরকোটা মটমোড়া গ্রামে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর সাভার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে দিন কাটত তার।
আগস্টের শেষ সপ্তাহে জামাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পারুলের পরিচয় হয়। জামালের মিষ্টি কথায় ভুলে তার প্রেমে পড়ে যান পারুল। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেন নি, জামাল আসলে প্রেমের ফাঁদ পেতেছে। পারুলকে হত্যা করাই তার উদ্দেশ্য।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পারুল বেগম অজ্ঞাতনামা এক পুরুষকে স্বামী পরিচয় দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে সাভারের বক্তারপুরে (নামা বাজার) ভাড়া বাসায় ওঠেন।
ওই রাতেই পারুল বেগম খুন হন। অজ্ঞাতনামা এক দুষ্কৃতকারী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে তাকে হত্যা করে।
মরদেহের পাশে হত্যাকারী একটি কাগজ ফেলে যায়: একটি এনআইডি কার্ডের ফটোকপি। এনআইডি কার্ডটি বিল্লাল সরদার নামের এক ব্যক্তির।
নিহতের ভাই মমিনুল হক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় ৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেন।
থানা পুলিশেরই মামলার তদন্ত করার কথা। তবে কৌতুহলী পিবিআই স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটির তদন্তভার নেয়। সাভার থানা পুলিশের ১১ দিনের তদন্ত শেষে ২০ সেপ্টেম্বর পিবিআই এটির দায়িত্ব নেয়।
এনআইডির সূত্র ভুল
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তদন্তকাজ দৃশ্যত সহজ ছিল। এনআইডির সূত্র ধরে পিবিআইর তদন্ত দল বিল্লাল সরদারকে খুঁজে বের করে। কিন্তু বিল্লালকে পাওয়ার পরই জট লেগে যায়। বিল্লাল জানান, ঘটনার সঙ্গে তার যে শুধু কোনো যোগ নেই। তাই নয়, তিনি ঘটনার সময় মোংলাতেই ছিলেন। নিহতকে তিনি চেনেন না, চেনার কারণও নেই।
ফোনকল রেকর্ডসহ আরও বিভিন্ন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ও অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণে পিবিআই নিশ্চিত হয়, বিল্লাল সত্যি কথাই বলছেন। হত্যার সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই। তাহলে তার এনআইডি কার্ড সাভারে পারুল বেগমের মরদেহের পাশে পাওয়া গেল কেন?
পিবিআই তদন্তকারীর সন্দেহ হয়, বিল্লালকে কেউ ফাঁসানোর জন্যে এতো আয়োজন করে থাকতে পারে। ফাঁসানোর জন্যেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।
শুরু হয় বিল্লাল সরদারের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিপক্ষ অনুসন্ধানের কাজ। ২০ সেপ্টেম্বের ওই এলাকায় (মোংলা থানার ৬ নং চিলা ইউনিয়নের) ইউপি নির্বাচন হয়ে গেছে। আর তাতে ৫ নং ওয়ার্ড থেকে সদস্যপদে দাঁড়িয়েছিলেন বিল্লাল সরদার। ওই আসনে তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হালিম হাওলাদার। হালিম অবশ্য নির্বাচনে হেরে যান। বিল্লালও হেরেছেন। তবে বিল্লালকে হারাতে মরিয়া ছিলেন হালিম। ফলে বিল্লাল ও পিবিআই উভয়ের সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ে হালিম হাওলাদারের ওপর।
অনুসন্ধান করে পিবিআই জানতে পারে, এ হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ঢাকায় এক ব্যক্তির ফোনে সন্দেহজনক যোগাযোগ হয়েছিল। যার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তার নাম জামাল হাওলাদার। এই জামালই সেই ব্যক্তি, পারুল যাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন।
পিবিআই জামাল হাওলাদারের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে ঢাকার লালবাগের শহীদনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর জামালকে নিয়ে সাভারের বক্তারপুরের ওই ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারের কাছে যায় পুলিশ, যে বাসায় খুন হয়েছিলেন পারুল বেগম। কেয়ারটেকার জামালকে শনাক্ত করে।
জামালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এ পরিকল্পনায় জড়িত হালিম মেম্বারসহ অন্যান্য সহযোগী আসামির নাম বলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জামালের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী দর্জি মাস্টার মশিউর রহমানকে। তিনিও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের দুজনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হালিম হাওলাদারকে বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার নিজ বাড়ি থেকে গত রোববার গ্রেপ্তার করা হয়।
জামাল হাওলাদার ওরফে সামাদুজজামাল পিরোজপুর থানার ধুপপয়সা গ্রামের অধিবাসী ও মশিউর রহমান মিলন বাগেরহাটের শরণখোলার থানার ২ নম্বর তাফলিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
যেভাবে হত্যা পরিকল্পনা করা হয়েছিল
পথের কাঁটা নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্লাল সরদারকে সরাতে তাকে কোনো হত্যা মামলায় ফাঁসানোর ফন্দি আঁটেন হালিম হাওলাদার নিজেই।
হত্যাকাণ্ডের আনুমানিক ২০ দিন আগে হালিম মোংলায় দেখা করেন জামালের সঙ্গে। জামাল তার পূর্বপরিচিত। দুজন মিলে ঠিক করেন, দৈবচয়ন ভিত্তিতে সুবিধাজনক একজনকে খুন করা হবে। এই খুনের জন্য ৩০ হাজার টাকার চুক্তি হয় দুজনের মধ্যে। হালিম জামালকে অগ্রিম ৫ হাজার টাকা এবং বিল্লাল সরদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেন।
জামাল বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ঢাকায় দারুসসালাম এলাকায় তার বন্ধু দর্জি মাস্টার ওরফে মশিউর রহমান ওরফে মিলন কবিরাজের সঙ্গে। মিলনকে তিনি একটি সহজ টার্গেট খুঁজে দিতে অনুরোধ করেন, যাকে অনায়াসে হত্যা করা যাবে। তখন মশিউর রহমান তার পরিচিত পারুলকে টার্গেট হিসেবে বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন। পারুল সাভারে একা থাকেন। ঝামেলা কম।
জামাল তখন পারুল বেগমের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেন। তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে সাভারের বক্তারপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিতে প্রলুব্ধ করেন।
বক্তারপুরের ওই বাসায় তারা উঠেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই রাতেই পারুল বেগমকে হত্যা করেন জামাল। নিহতের পাশে বিল্লাল সরদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ফেলে রেখে যান তিনি।
তাদের টার্গেট ছিল একাধিক খুন
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর এসআই সালেহ ইমরান বলেন, ‘ওই নারীকে হত্যার পর জামাল ও হালিম বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন। জামাল ফোনে বলছিলেন, বিল্লাল যদি গ্রেপ্তার না হন, তাহলে তারা আরও দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটাবেন।’
এসআই সালেহ ইমরান বলেন, ‘তারা মূলত একাধিক খুন করার চিন্তা করেছিলেন। ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের আগে বিল্লাল গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে তারা এই খুনগুলি করার চিন্তা করেন। তবে আমরা তার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করি। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলার রেকর্ড নাই।’
সোমবার দুপুরে হালিম মেম্বারকে আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও করোনা প্রতিরোধে একটি জরুরি সভা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে আজ বেলা ১০:৩০ ঘটিকায় রাজধানীর ওয়াসা ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এডিস মশার বিস্তার রোধকে বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ গুরত্বপূর্ণ এজেন্ডা নির্ধারণ করে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফলাফল লাভে ১৪ জুন ২০২৫ থেকে ডিএসসিসি এলাকায় এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন দ্বারা পরিচালিত) বর্তমানে ব্যবহৃত ৩০ লিটার কীটনাশকের পরিবর্তে দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৬০ লিটার কীটনাশক প্রতিদিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মশক কর্মীদের সকাল ও বিকালের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, সঠিক অনুপাতে কীটনাশক প্রয়োগ যাচাইকরণ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং মশককর্মী দ্বারা বাড়ির ভিতর, আঙিনা ও ছাদের জমানো পানিসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা কে আহ্বায়ক এবং সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কে সদস্য সচিব করে অঞ্চল ভিত্তিক ডেঙ্গু মনিটরিং টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া, ডেঙ্গু ও করোনা বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফারিয়া ফয়েজ, মোবাইল নম্বরঃ ০১৮৪১২১১০৯৮ কে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হিসেবে মনোনীত করা হয়।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের মধ্যে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে নগর ভবনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিনের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের হালনাগাদ তথ্য ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। মশক নিধনে জনবল ঘাটতি পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাসহ ডেঙ্গু ও করোনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান, কর্পোরেশন সচিব জনাব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বোরহানউদ্দিন উপজেলা শাখার আওতাধীন ৯টি ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: হাফিজ ইব্রাহিম।
বুধবার ( ১১ জুন ) সকাল ১১টায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাফরুজা সুলতানার সভাপতিত্বে উপজেলা সড়কে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় আগামী নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ৯টি ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদকবৃন্দ তাদের মতামত তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলহাজ্ব মো: হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, বিগত ১৭ বছর আপনারা যেভাবে দলের জন্য কাজ করেছেন তা সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। অনেক সংগ্রাম করে দলের দুঃসময়ে প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রাম সফল করেছেন। ইনশাআল্লাহ্ আগামী নির্বাচনে যে যার অবস্থান থেকে নিজের সেরাটা দিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাবেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান যে নির্দেশনা দিয়েছে তা মেনে চলবেন। এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাদের আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক পরামর্শ প্রদান করেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. কাজী মো: আজম, সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক সরোয়ার আলম খাঁন, যুগ্ন আহ্বায়ক হাসান হাওলাদার, যুগ্ন আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম ফিরোজ কাজী, যুগ্ন আহ্বায়ক শহীদুল আলম নাসিম কাজী, যুগ্ন আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সেলিম, উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক শিহাবউদ্দিন হাওলাদার, সদস্য সচিব জসিমউদ্দিন খাঁন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক লিটন শিকদার, সদস্য সচিব আতিফ আসলাম রুবেল, উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি দানিশ চৌধুরী, সম্পাদক তানজিল হাওলাদার, উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান বনি সহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মূল বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ও ছাত্রদলের সভাপতি সম্পাদক বৃন্দ।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮৮ জন।
বুধবার (১১ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ২৮৮ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৭৩ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
যুক্তরাজ্যে চার দিনের সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকটি লন্ডন সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা।
এরপর চাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের পরিচালক বেন ব্ল্যান্ড এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. চিয়েতিগজ বাজপেইয়ের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূস আজ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে (চাথাম হাউস) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
বিকেলে চাথাম হাউসের পক্ষ থেকে তার সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন, যা দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত।
অধ্যাপক ইউনূস মঙ্গলবার লন্ডনে পৌঁছেছেন। এই চার দিনের সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও শক্তিশালী করা।
এরআগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর।”
তিনি আরও জানান, অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। এছাড়া তার আরও কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
ঈদ-উল-আজহার টানা ছুটিতে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন ও দর্শনীয় স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সাজেকের কিছু স্পট বন্ধ এবং সেন্ট মার্টিনসহ কয়েকটি এলাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় চায়ের রাজ্যে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
এদিকে, আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তবে বেশ কিছু পর্যটন স্পটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে গত চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ হাজার ৯শত ৪৬জন পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ৫শত ৭০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। ঈদের দিন পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও ঈদের পর দিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়।
ঈদের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন সরেজমিনে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, বিটিআরআই চা বাগান, চা কন্যার ভাস্কর্য, দার্জিলিং টিলা, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, হরিণছড়া গলফ মাঠ, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও জীব বৈচিত্র্য ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী ললিত কলা একাডেমি, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
এছাড়াও মৌলভীবাজার জেলায় হাওড়, পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতাধিক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে ঘেরা চা বাগান, জীববৈচিত্র্য ও নান্দনিক প্রকৃতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর ঈদসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায় কয়েকগুন।
ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ছবি ও সেলফি তুলে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও আনন্দে মেতে উঠেছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে পর্যটকেরা প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠেছেন। পাশাপাশি, চাঁদের গাড়িখ্যাত জিপ গাড়িগুলো নিয়ে চা বাগানের আঁকাবাঁকা পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে অনেককেই।
রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসেন আসিফ। তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা তো অন্যান্য জেলার থেকে সুন্দর। বাংলাদেশের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান এই জেলা। দেশের পর বিদেশেও এ জেলার সুনাম রয়েছে। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়েছি, ছবি তুলেছি। যদিও আবহাওয়া অনেক গরম তবুও ভালো লেগেছে। সুন্দর সবুজ পরিবেশ। চা বগান তো বরাবরই সুন্দর হয়ে থাকে, অনেকটা সময় কেটেছে সেখানে।’
সাতখিরা থেকে ঘুরতে কমলগঞ্জ এসেছেন তান্নী হাসান। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, 'আজকের ভ্রমণটি আমার খুব ভালো লাগছে। নুরজাহান চা বাগান ও গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে গিয়েছি, মানে এতো মনোমুগ্ধকর এবং সবুজের অরণ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চায়ের দেশে ঘুরতে ভালো লাগছে।'
সিলেট থেকে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষিকা মিলি আক্তার। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সুন্দর পরিবেশে নির্ভাবনায় সময় কাটাতে পেরেছি, এটা খুব ভালো লাগছে। বধ্যভূমি ৭১ ও কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর গল্ফ মাঠে শিশুরা খেলাধুলা করছে। শহরের ভেতরে এমন খোলা জায়গায় শিশুদের আনন্দ করতে দেখে ভালো লাগছে। কাজের ব্যস্ততায় সময় বের করা যায় না। তাই ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি।'
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কাজী নাজমুল হক এ প্রতিবেদকে বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে প্রচুর পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পরিবার - পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন, আগত পর্যটকরা যাতে নির্ভিগ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে সেজন্য বনকর্মীদের পাশাপাশি, সিএমসি‘র সদস্যদের তদারকি, সিপিজি‘র সদস্য ট্যুরিস্ট গাইডরা রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশ ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম দায়ীত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, গত চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩হাজার ৯শত ৪৬জন পর্যটক প্রবেশ করেন।পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লক্ষ ৫০হাজার পঁচশত সত্তর টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে কেউ কোনো সমস্যায় না পড়েন। লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি, দার্জিলিং টিলাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে আমাদের টহল ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক ভাবে চলমান রয়েছে।’
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবীর বলেন, ‘ঈদুল আযহা'র ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি প্রতিদিন থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে,এছাড়া আমি নিজেও ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করি।’
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এসব দর্শনীয় স্থান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চা বাগানগুলো পর্যটকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে সময়-সময় থাকে।’
মৌলভীবাজার সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, ‘পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি পর্যটন স্পর্টগুলোতে আমাদের পুলিশ আছে। পর্যটকরা যেন ঈদের ছুটি কাটিয়ে নির্ভিগ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চিহ্নিত হচ্ছে ভাইরাসটির নতুন নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দরে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সাতটি পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতার কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট এরইমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।’
‘আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল-নৌ-বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
এসময় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ৭ নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো-
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন (কনুই বা টিস্যু ব্যবহার করে)।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
৫. সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
সংবাদ সম্মেলনে করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতির বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, করোনা শনাক্তে আবারও আরটি-পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার টিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও এইচডিইউ সুবিধাসহ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম যেমন—কেএন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এসব প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালার (আইএইচআর) আওতায় পরিচালিত ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁর মহাদেবপুরে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা করায় বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটছে বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
মামলার এজাহারে ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুল মান্নান ও তার ভাতিজা শাহজাহান আলীর সাথে একই গ্রামের আজাহার আলী, তার ভাই ওবায়দুল হক, ওয়াহেদ আলী ও শামসুল আলমের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরে আলী ও তার ছেলে সোহেল রানা এবং তাদের লোকজন গত রোববার বারবাকপুর জামে মজসিদে আসরের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আব্দুল মান্নানের উপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে আব্দুল মান্নানের ভাতিজা শাহজাহান আলীসহ পরিবারের আরও চারজনকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় শাহজাহান আলী বাদী হয়ে পরদিন সোমবার থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে আসামি ও তাদের লোকজন মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি।
মামলার বাদী শাহজাহান আলী বলেন, আজহার আলী তার ছেলে ও ভাই ভাতিজারা দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমাদের প্রতিপক্ষ তাদের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আমাদের পক্ষে আইনজীবীরা লিখিতভাবে তাদের মতামত জানান। যেসব জমি তারা দাবি করে আসছে সেগুলোর সিএস, আরএস জরিপে আমাদের নামে রেকর্ডভুক্ত। তারপরেও অন্যায়ভাবে তারা আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। আমাদের একটি পুকুর লিজ দেওয়া আছে। গত ২৩ এপ্রিল প্রতিপক্ষের লোকজন ওই পুকুর থেকে জোরপূূর্বক মাছ লুট করে এবং পুকুরে থাকা জাল পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেন মাছচাষী। মামলার পর তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরই জেরে গত রোববার আবারো হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় মামলার পরেও আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তারা প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় আমাকে, আমার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। আরো বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।
মামলায় অভিযুক্ত আজহার আলী বলেন, আমার বাবার ভাগের সম্পত্তি আমার চাচা ও ভাতিজারা জোর করে খাচ্ছে। এ বিষয়ে আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা চলছে। এছাড়া আমাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তিও তারা বিভিন্ন সময় দখলের চেষ্টা করছে। তারা আমাদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
মহাদেবপুর থানার ওসি শাহীন রেজা বলেন, মারধরের ঘটনায় করা মামলার এক নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিরা পলাতক থাকলেও তাদেরকে ধরার চেষ্টা চলছে। মামলা তুলে নিতে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য