করোনাভাইরাসের কারণে গভীর সংকটে পড়েছিল দেশের পর্যটনশিল্প। প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অচলাবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে সম্ভাবনাময় এই খাত। মানুষের আয় কমে যাওয়া, প্রণোদনা নিয়ে জটিলতাসহ নানা কারণে এই খাতের পুনর্জাগরণ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন উদ্যোক্তারা।
তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটনশিল্প। সরকারি প্রণোদনা কিংবা বড় বড় বিনিয়োগ নয়, বরং সাধারণ পর্যটকরাই চাঙা করে তুলছেন এই খাত। করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছেন পর্যটকরা। দেশের পর্যটন এলাকাগুলোয় উপচে পড়া ভিড়।
পর্যটকদের কাছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা চট্টগ্রাম ও সিলেট। এই দুই বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সারা বছরই পর্যটক সমাগম লেগে থাকে। তবে করোনার বিধিনিষেধ ওঠার পর পর্যটকদের ঢল আরও বেড়েছে। ঘরবন্দি থেকে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ দীর্ঘদিন পর মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছেন।
কক্সবাজারের সমুদ্র, বান্দরবানের পাহাড়, সুনামগঞ্জের হাওর কিংবা সিলেটের টিলা ও জলাবন– সবখানেই এখন পর্যটকদের ভিড়। ছুটির দিনগুলোতে এসব জায়গায় জট লেগে যায়।
পর্যটক ফেরায় এই খাতসংশ্লিষ্টদের মুখে হাসিও ফিরেছে। টাঙ্গুয়ার নৌকাচালক, জাফলংয়ের ফটোগ্রাফার, বিছনাকান্দির প্রসাধনসামগ্রী বিক্রেতা থেকে শুরু করে বড় রিসোর্টের উদ্যোক্তারাও এখন দুর্দিন কাটিয়ে উঠছেন। তবে সব জায়গাতেই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। উপেক্ষিত থাকছে পরিবেশের সুরক্ষা।
অবাধে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। বেশির ভাগই পরছেন না মাস্ক। আবার বন-হাওর-নদী-সমুদ্রে দল বেঁধে হইহুল্লোড় করে, শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে গান বাজিয়ে আর ময়লা-আবর্জনা ফেলে পর্যটকরা নষ্ট করছেন পরিবেশ। ফলে করোনাকালীন পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পরিবেশের উন্নতি হলেও বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর তা আবার হুমকিতে পড়েছে।
এসব প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো আবার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। তবে সবাইকেই পরিবেশের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রশাসনের তরফ থেকেও এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি থাকবে।
চট্টগ্রাম
গত আগস্টে পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ার পর থেকেই চট্টগ্রামে ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটক সমাগম। তাতে চাঙা হয়ে উঠেছে পর্যটন ব্যবসা। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে খাতসংশ্লিষ্টদের মাঝেও।
মূলত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম, চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরই মধ্যে পাহাড়ি তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রায় সব পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুদের সমাগম বাড়তে শুরু করেছে।
রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি, পলওয়েল পার্ক, সুবলং ঝরনা, খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা, বান্দরবানের নীলাচল, নীলগিরি, কক্সবাজারের সৈকত, হিমছড়ি, রামু, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, ফয়’স লেকসহ অন্যান্য পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে বান্দরবানে বেড়াতে আসা কনক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনে একপ্রকার ঘরবন্দি ছিলাম। এর মধ্যে করোনাতেও আক্রান্ত হয়েছি। জীবনটা বিষণ্ন হয়ে উঠছিল। তাই পাহাড় দেখতে এলাম। বিশাল পাহাড় মানসিকতা পরিবর্তন করে দেয়।’
দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থেকে অবসাদে ভুগছিলেন সেলিম উদ্দিন। ঘুরতে এসেছেন রাঙ্গামাটির সাজেকে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘করোনায় বাসাবাড়িতে বন্দি থেকে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছি। সেই অবসাদ কাটাতে সাজেক এলাম। সাজেকের প্রেমে আমরা মুগ্ধ।’
খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা খুলনার বাসিন্দা সুমন মজুমদার বলেন, ‘দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সেই ছুটিতে পাহাড়ে এসে ঘুরে বেড়ালাম। ঝরনার জলধারায় শরীর জুড়ালাম। মনটা শান্তিতে ভরে গেল।’
কক্সবাজারে সৈকতে বেড়াতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুলতান আহমদ বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে বছরে কয়েকবার সমুদ্র দেখতে আসি। করোনার কারণে সেটি হয়ে উঠছিল না। অনেক দিন পর সুযোগ পেয়ে সৈকতে চলে এলাম।’
এদিকে পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু হোটেল-মোটেল মালিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
রাঙ্গামাটির হোটেল প্রিন্সের স্বত্বাধিকারী নেছার উদ্দিন বলেন, ‘করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে আমরা চেষ্টা করছি। মোটামুটি পর্যটকদের রাঙ্গামাটিতে সমাগম বাড়ছে। আশা করছি, শীত বাড়লে পর্যটক আরও বাড়বে।’
পর্যটক সমাগমে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বান্দরবানের হোটেল লেক সিটির স্বত্বাধিকারী জাফর আহমদ বলেন, ‘বান্দরবানে প্রতিদিনই কমবেশি পর্যটক আসেন। তবে শুক্র-শনিবারে এ সংখ্যা বেড়ে যায়। যেভাবে পর্যটকরা আসছেন, আমরা সন্তুষ্ট।’
এদিকে চট্টগ্রামে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটক তেমন না এলেও স্থানীয় বিনোদনপ্রেমীরা পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন প্রতিনিয়ত। নগরের ফয়’স লেক, পতেঙ্গায় প্রতিদিন বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় লেগে থাকছে।
পতেঙ্গা এলাকার ব্যবসায়ী আল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউনে সৈকত বন্ধ ছিল। এখন চালু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন পিকনিক বাস আসছে। আমরা এখন ভালো আছি।’
ফয়’স লেক কনকর্ডের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘লকডাউনের সময় কর্মীদের বেতন দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। তবু আমরা টিকে আছি। এখন লোকসমাগম বেড়েছে। এভাবে চললে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব।’
তবে করোনার ক্ষতি দ্রুত পোষানো সম্ভব নয় জানিয়ে কক্সবাজারের ‘হোটেল লেক ভিউ’-এর স্বত্বাধিকারী রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি পোষানো সম্ভব নয়। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আবার পর্যটন খাত চাঙা হয়ে উঠেছে। আসছে শীত মৌসুমে আশা করি ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির নেতা এস এম কিবরিয়া বলেন, কক্সবাজারে এখন সব হোটেলে পর্যটকরা উঠছেন। অনেকেই অগ্রিম বুকিং মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বলা যায়, করোনার ধাক্কা সামলে কক্সবাজার মোটামুটি চাঙা হয়ে উঠেছে।
সিলেট
চট্টগ্রামের মতো সিলেটেও সারা বছর পর্যটক সমাগম থাকে। তবে এখানে পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি আসেন বর্ষায়।
এখানকার হাওর, ঝরনা, পাথুরে নদী আর জলার বন বর্ষাকালেই দেখা দেয় সবচেয়ে মনমুগ্ধকর রূপে। বর্ষায় সিলেট অঞ্চলের চা-বাগানগুলো হয়ে ওঠে আরও সজীব। তবে এবার বর্ষার প্রায় পুরোটা কেটেছে ঘরবন্দি হয়ে করোনার বিধিনিষেধে।
বর্ষা শেষ হলেও সিলেটে এখনও অব্যাহত আছে বৃষ্টি। ফলে এখনও জলে টইটুম্বুর হাওর আর নদী, পাহাড়ের গায়ের ঝরনাগুলোও এখনও দৃশ্যমান। পাথুরে নদীতেও সাঁতার কাটা যায় অনায়াসে। ফলে পর্যটকরাও এই সময়ে ভিড় করছেন সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে।
এখন পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে। এ ছাড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর ও নগরের চা-বাগানগুলোতে প্রতিদিনই পর্যটকদের সমাগম হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, বড়লেখার মাধবকুণ্ড, কমলগঞ্জের হামহাম জলপ্রপাত, হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানেও বিধিনিষেধ ওঠার পর থেকে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। বিশেষত শ্রীমঙ্গলে পর্যটক সমাগম হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ছুটির দিনগুলো ছাড়াও অন্যান্য দিনেও এই উপজেলার হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ খালি মিলছে না।
নগরের আম্বরখানা এলাকার ব্রিটানিয়া হোটেল অ্যান্ড পার্টি সেন্টারের কর্মকর্তা কাওসার চৌধুরী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন মাস হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বড় অঙ্কের ক্ষতি গুনতে হয়েছে। এখন পুরোদমে চালু রয়েছে। অতিথিরাও আসছেন। এখন ছুটির দিনগুলোতে হোটেলে কক্ষ খালি থাকে না।’
গত শুক্রবার সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি ও বিকেলে রাতারগুল গিয়ে দেখা যায়, দুই জায়গায়ই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। পাহাড় থেকে নেমে আসা বিছনাকান্দির পাথুরে নদীতে গা ভেজাচ্ছে নানা বয়সী মানুষ। আবার রাতারগুলে গিয়ে দেখা যায়, নৌকায় চড়ে এই জলার বন ঘুরে দেখছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিছনাকান্দিতে ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অমিত রায়হান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ঘরে আটকে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এখন পর্যটনকেন্দ্র খোলায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। তাই সুযোগ পেয়েই ছুটে এসেছি।’
সিলেটের রাতারগুলের নৌকাচালক সামছু মিয়া। সাহের বাজার থেকে নৌকায় করে পর্যটকদের রাতারগুল জলার বন ঘুরিয়ে আনেন তিনি।
সামছু মিয়া বলেন, ‘অনেক দিন পর আবার পর্যটকরা এখানে আসা শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর আবার কাজ শুরু করেছি।’
ছুটির দিনগুলোতে রাতারগুলে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক সমাগম হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ রকম দিনে আমি প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টাকা রোজগার করতে পারি। তবে টাকার বেশির ভাগ অংশই ঘাটের ইজারাদারকে দিয়ে দিতে হয়।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের শাহজালাল (রহ.) মাজার ও লাক্কাতুরা চা-বাগানেও পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। এসব এলাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় পর্যটকদের।
লাক্কাতুরায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের টাকার বিনিময়ে ছবি তুলে দেন সুয়েব আহমদ। তিনি বলেন, গত চার মাস এখানে কেউ আসেনি। ফলে কোনো আয়ও হয়নি। এখন মাসখানেক ধরে মানুষজন আসছে।
তার আক্ষেপ, সবার হাতে স্মার্টফোন থাকায় এখন লোকজন আগের মতো ছবি তোলাতে চায় না।
পর্যটক সমাগম বাড়ায় প্রায় দেড় বছর পর ব্যবসা চাঙা হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হিমাচল রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী সাজু আহমদ।
তিনি বলেন, ‘যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পুষিয়ে নেয়ার নয়। তবে এখন প্রচুর লোকজন ঘুরতে আসছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও পর্যটকদের কারণে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি।’
তবে পর্যটক সমাগম বাড়ার পেছনে ভিন্ন এক যুক্তি দিয়েছেন সিলেট চেম্বার অফ কমার্সের সহসভাপতি ও হোটেল নির্ভানা ইন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহমিন আহমদ। তিনি বলেন, ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় এখন দেশের ভেতরেই ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে অনেককে।
তার দাবি, আগে পর্যটকরা সিলেটে এসে থাকতেন না। সিলেট হয়ে ভারতের মেঘালয়ে চলে যেতেন। এখন ভারতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারছেন না। ফলে দেশের ভেতরেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।
দুই সপ্তাহ ধরে জাফলংয়ে পর্যটক সমাগম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব-জোনের পরিদর্শক মো. রতন শেখ। তিনি বলেন, ‘জাফলংয়ে এখন প্রচুর পর্যটকরা আসছেন। তাদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমরা সহযোগিতা করছি।’
সিলেট বিভাগে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পর্যটকনির্ভর। করোনার সময়ে একেবারে অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছিল এসব হোটেল-রিসোর্ট। তবে এখন আবার অতিথিরা আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল।
তবে ব্যবসা এখনও আগের অবস্থানে ফেরেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে এখন যারা বেড়াতে আসছেন, তারা কম খরচে থাকতে চাচ্ছেন। এতে করে একটু ভালো মানের হোটেলগুলোতে অতিথি কম আসছেন। তাদের বিভিন্ন ছাড় দিয়ে অতিথি আকর্ষণ করতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সংযোগ সড়ক ও রাস্তা না থাকায় কাজে আসছে না প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ৫ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের। এমন ব্রিজের দেখা মিলেছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর আদ্রা গ্রামের ফসলের মাঠে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ব্রিজটি। ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এখন পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য নির্মিত হয়নি সড়ক। ফলে কোনো কাজেই আসছে না সাতপোয়া ইউনিয়নের, চর রৌহা, আকন্দপাড়া, মাজারিয়া ও খামার মাগুরাসহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার আরও ২টি গ্রামের জনসাধারণসহ হাজারও মানুষের।
সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন এসব এলাকার ফসলের মাঠের আল দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ব্রিজটি নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হলেও এটি এখনো জনগণের চলাচলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ব্রিজের দুই পাশে কাঁদা ও অসমতল জমির কারণে শিশু, বৃদ্ধ এমনকি সাধারণ পথচারীদেরও চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া কৃষকদের আবাদি ফসল আনা-নেওয়া বা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতেও হয়েছে চরম দুর্ভোগ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হাসানুর কবীর স্বপন, মাসুদ রানা, চান মিয়া, ছমিরন বেওয়া বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের খবরে আমরা এলাকাবাসীরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবে ছিলাম আমাদের কয়েক গ্রামের দীর্ঘদিনের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কিন্তু ব্রিজটি নির্মাণের এতদিন পার হলেও সড়ক না থাকায় এটি আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা দাবি জানাই অতি দ্রুত আমাদের চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী শওকত জামিল বলেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ব্রিজটি ও সড়কের কথা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। ওই এলাকার মানুষদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে মাটি কেটে রাস্তা উঁচু করে ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পালকি ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। সারা দেশের মতো রূপগঞ্জেও একই অবস্থা ছিল। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি রূপগঞ্জে আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন মিউজিয়াম পিস হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে আছে জাদুঘরে। বেহারাদের সুর করে সেই গ্রাম ঘুরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর পেরিয়ে গন্তব্যের কাছে দূর থেকে সেই ছয় বেহারাদের আর দেখা যাচ্ছে না। তাদের ছন্দিত লয়ে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে নাইয়র, বিয়ের কনে বর কিংবা মান্যগন্য ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়ার এ চক্রবিহীন যান সম্ভবত তার অন্তিম যাত্রা করেছে। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, হেমন্তের গানে কিংবা ভুপেন হাজারিকার মাদল তালে চলা পালকি এখন ঐতিহ্যের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
সেই ন্যাংটা পুঁটো ছেলেটা আর বলে না পালকি চলে পালকি চলে.....আদুল গাঁয়ে যাচ্ছে কারা হনহনিয়ে। রবি ঠাকুরের ‘বীর পুরুষ’ কবিতার খোকা তার মাকে পালকিতে নিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদের সাথে লড়ে যখন ওরা আসে তেড়ে ‘হারে রে রে’ বলে। সেই ভীষণ যুদ্ধের বর্ণনাও দিতে পারে না মাকে। মাও বলতে পারে না, ভাগ্যেস খোকা ছিল তার সঙ্গে। দাদা তার সদ্য বিয়ে হওয়া দিদিকে আর বলে না, আর কটাঁ দিন থাক না দিদি, কেঁদে কেটে কঁকিয়ে, দুদিন বাদে তো নিয়েই যাবে পালকি করে সাজিয়ে। ‘মৈমনসিং গীতিকার’ দেওয়ানা মদিনা ও ছুটবে না পালকিতে আবের পাংখা নিয়ে আর পালকি বহরের সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।
আধুনিক যোগাযোগের গোগ্রাসে পালকি হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতল তলে প্রাচীন বাংলার এ বাহনটি। এক সময় গ্রাম-বাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেতেন বরের লোকজন। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। ছয়জন মিলে পালকি বহন করতো। সামনে পেছনে দুজন ও মাঝখানে দুজন করে পালকি কাঁদে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার পর বর-কনেকে এক সঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসতো।
আসলে পালকি নামটির উৎপত্তি ফারসি ও সংস্কৃত উভয় ইন্দো ভারতীয় ভাষা থেকে আর সেই সঙ্গে ফরাসি থেকেও। পল্লীকবি জসিম উদ্দিন তাঁর স্মৃতি কথায় এ গাঁ থেকে ওগাঁয়ে যাওয়া বেহারাদের পালকি নিয়ে চলার যে বিবরণ দিয়েছেন তা আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। বিলুপ্ত এ পালকি এখন বিভিন্ন জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নব বর-বধুদের আনা নেয়ায় পালকি ব্যবহার করা হতো। চক্রযানের বিপ্লবে পালকির জায়গা দখল করে নিয়েছে আধুনিকতার এ যুগে প্রাইভেটকার, নোহা, বাস ও মাইক্রোবাস। হালের লাঙ্গল যেমন গ্রামেও অচল তেমনি ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলের নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করছে আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহন। এসব যানের রমরমা ব্যবসাও এ কারণেই জমে ওঠেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বর যাত্রা গিয়েছেন সফিক মিয়া। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা তখন পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছড়ায় বলা হতো বউ সাজবে কালকি, চড়বে সোনার পালকি! সোনার বরনী কন্যা এখন আর পালকিবদ্ধ পরিবেশে যাবে না, উঠবে আসল বা নকল ফুলের সাজানো এয়ারকন্ডিশন গাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন (৩৮) মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন- বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ট্রাকের হেল্পার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল। কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন।অপরদিক পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তাৎক্ষিনক ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত তিনজনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাক চালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নজির গাজী (৪৯) ও দিদারুল ইসলাম (৩৮) নামে দুই ’জলদস্যুকে’ আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা ও ১১টার দিকে উপজেলার উপকুলবর্তী যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় আটক দুই জলদস্যুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা থেকে একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা।
এর আগে সোমবার রাত আটটার দিকে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে উঠে আসার সময় স্থানীয়দের ধাওয়ার মুখে অপর কয়েক সহযোগিসহ এসব জলদস্যুরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আটকরা হলেন— শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের নওশাদ গাজী এবং আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম।
আবু হামজা, সিদ্দিক হোসেন ও আকবর আলীসহ স্থানীয়রা জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে অপরিচিত পাঁচ/সাত জন ব্যক্তি সুন্দরবন তীরবর্তী যতীন্দ্রনগর বাজারে যায়। এসময় নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তারা মাইক্রো বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের জন্য কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নাম—পরিচয়সহ সুন্দরবন এলাকায় আসার কারণ জানতে চাইলে তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় যতীন্দ্রনগর বাজারে উপস্থিত লোকজন ধাওয়া করে দিদারুলকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে পৌঁছে নজীরকে আটকের পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ব্যবহৃত মাছ শিকারের নৌকার মধ্যে থেকে একটি একনলা বন্দুক ও একটি দা উদ্ধার করে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছে, জোনাব বাহিনী এখন সুন্দরবনে খুব বেশি তৎপর না। বরং নজীর, তার ভাই নবাব ও ছেলে আব্দুর রহিম এবং মুন্সিগঞ্জ আটিরউপর এলাকার আছাদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে জোনাবের নামে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত। সোমবার রাতে নজীর আলীকে আটকের পরপরই তার ছেলে আব্দুর রহিম ও ভাই নবাব ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
আটক নজীর আলীর ভাষ্য, তিনি সুন্দরবনের ত্রাস কুখ্যাত জোনাব বাহিনীর সদ্যদের উপরে তুলে দেওয়া এবং সুন্দরবনে নামিয়ে দেয়ার কাজ করেন। সোমবার ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে জোনাব বাহিনীর দুই সদস্যকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে যেয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি তারা পরিচিত জলদস্যুদের উপরে নিচে উঠানামার কাজ করেন বলেও দাবি তার। উপরে উঠে যাওয়া দুই জলদস্যু উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি তার নৌকার মধ্যে রেখে যায় বলেও তিনি দাবি করেন।
দিদারুল জানান, তিনি নজীর আলীর শ্রমিক হিসেবে সুন্দরবনে যাওয়া জেলেদের জিম্মি করারসহ মুক্তিপণ আদায়ের কাজ করেন। লোকারয়ে পৌঁছে দেওয়া দুই জলদস্যুকে সুন্দরবনের পুটেরদুনে এলাকা থেকে নিয়ে আসার কথাও নিশ্চিত করেন তিনি। তবে তার কাছে মোবাইলের পাওয়ার ব্যাঙ্কসহ নানান সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরুত্তর থাকেন।
এদিকে অস্ত্র উদ্ধারসহ দু’জনকে আটকের বিষয়ে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা জানান, নজীরের দেওয়া তথ্যে নৌকায় থাকা ককসিটের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার হয়েছে। আটকের পর উভয়কে শ্যামনগর থানায় নেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করতেন বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাহিনীর নাম—পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
কুমিল্লায় চার জনের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী চিকিৎসকসহ তিনজন পুরুষ রয়েছেন।
শনিবার (১৪ জুন) কুমিল্লা সিটি স্ক্যান এমআরআই স্পেশালাইজড অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টারে করোনা পরীক্ষা শেষে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
করোনায় আক্রান্তরা হলেন, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আবদুল মোমিন (৭০), কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ডা. সানজিদা (৩০), বুড়িচং উপজেলার মো. হেলাল আহমেদ (৩৮) এবং সদর উপজেলার মো. ইবনে যুবায়ের (৩৯)।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, গত তিন দিনে কুমিল্লায় ১৩ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা কয়। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিদের নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, চারজনই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুজন এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে গেছেন।
তবে আরেকজনের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি সিভিল সার্জন।
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর এতদিন কুমিল্লায় নতুন করে কেউ শনাক্ত হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন আবার নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দ্বিতীয় ধাপের শুরু হতে পারে এবং এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে মোট ৯ জনের শরীরে এ ভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। ৪০ বছর বয়সী আক্রান্ত ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করান। সেখানেই তার শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত নয়জনের মধ্যে পুরুষ ৫ জন এবং নারী ৪ জন। এদের মধ্যে ৭ জন নগরের এবং ২ জন উপজেলার বাসিন্দা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা চালু আছে। তবে শিগগিরই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটি–পিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
কুমিল্লার দাউদকান্দি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে হাসপাতালের তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা ছুটে আসে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আহতরা হলেন ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (১৪জুন) বেলা ১১টায় দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ষ্টোর রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হাসাপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের এবং বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে৷ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে হাসপাতালের তিনতলার ষ্টোর রুমে আগুনের ধোয়া দেখা যায়। ধোয়া দেখে পাশের ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন ও নার্সরা আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনরা দৌঁড়াদৌড়ি শুরু করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পল্লী বিদ্যু ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ইয়াসিন, মেহেদি ও মুছা নামে তিন কর্মচারী আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার মোঃ ইদ্রিস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর স্থানীয় এবং হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রাথমিক ধারনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে মূল কারণ জানা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ৩য় তলায় ডেঙ্গু রোগীদের ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে ষ্টোর রুমে ঔষধসহ রোগীদের সেবার কাজে ব্যবহৃত সব ধরনের মালামালের সাথে কিছু দামী সরঞ্জামও ছিল। ওই কক্ষে আগুনে অধিকাংশ মালামালই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু মালামাল বের করতে পারলেও তা ভালো আছে কিনা পরবর্তীতে যাচাই করে বলেতে পারবো । আগুনে ক্ষতির পরিমান এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আর আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং মালামাল বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার বের করতে গিয়ে আমাদের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রেদওয়ান ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷
মন্তব্য