ব্যাংক খাতে হস্তক্ষেপ একটা সমস্যা বলে মনে করেন দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর তারিক আফজাল।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ব্যাংকাররা ইন্টারফেয়ারেন্সের কারণে তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারেন না। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও অনুশাসন ব্যাংকার এবং গ্রাহক উভয়ের জন্য প্রয়োজন। ব্যাংকের মালিকদের জন্যও এটা প্রয়োজন। কারণ, তারা দেশের জনগণের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন। কিন্তু সেটা যদি ব্যক্তিস্বার্থে উপনীত হয়, তবে সমস্ত ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সুতরাং এটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। সবকিছুর পাশে দেশ, মানুষ, সমাজের কথা চিন্তা করতে হবে।’
ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন ‘খুবই জরুরি’ বলেও মন্তব্য করেন তারিক আফজাল।
করোনার ধাক্কার পর বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও গভীর সংকটে পড়ে গত বছরের শুরুর দিকে। সেই ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে সোয়া লাখ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। বর্তমানে সেই প্রণোদনার অঙ্ক বেড়ে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে।
এই প্রণোদনা ঋণের পুরোটাই বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। গত বছর প্রণোদনা ছাড়া ঋণ বিতরণ খুব একটা ছিল না। তবে এখন মহামারির ধকল কমতে শুরু করেছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমতির দিকে। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। সব খাতেই এখন পুরোদমে উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। ঋণ বিতরণও বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘কেমন চলছে ব্যাংক খাত’ শিরোনামে নিউজবাংলা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্বে দেশের ব্যাংকিং খাতের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) তারিক আফজাল।
করোনা মহামারির মধ্যেও জরুরি সেবার আওতায় নিরলস সেবা দিয়ে গেছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। সেই ব্যাংক খাতের অবস্থা এখন কেমন?
ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে সব শ্রেণির মানুষ জড়িত। করোনার সময়ে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকলকারখানা বন্ধ ছিল। মহামারির ক্ষতি কাটাতে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছিল বলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিছুটা সচল ছিল।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সচল অবস্থা এবং ব্যাংক খাতের মাধ্যমে সরকারের প্রণোদনার অর্থের সঠিক প্রয়োগ ব্যবসাকে সচল এবং দেশের অর্থনীতিকেও সচল রেখেছে।
বাংলাদেশে কোভিডসংক্রান্ত অর্থনৈতিক যে নীতিমালা করা হয়, সেগুলো ছিল পজিটিভ। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ এবং সেটার সঠিক প্রয়োগের ফলে অর্থনীতির কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অগ্রগামী রেখেছে।
আমাদের আমদানি-রপ্তানি অগ্রসর ছিল। বর্তমান সরকারের উন্নয়নকাজও থেমে থাকেনি। পদ্মা সেতু সেটার বড় উদাহরণ।
দেশে কয়েক বছর ধরে মন্দ ঋণের প্রভাব রয়েছে। সেই মন্দ ঋণের প্রভাব কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যাংকিং খাতের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। করোনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কিছু সুবিধা দিয়েছে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ছাড় দেয়া হয়েছে। চলতি বছরেও কিছু নতুন নির্দেশনা দিয়েছে।
করোনায় ব্যাংকের গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে যে সুবিধা দেয়া হয়েছিল, সে কিস্তিগুলোর আংশিক শোধ করার পরেও ব্যাংকগুলো মোটামুটিভাবে বেশ ভালো মুনাফা করেছে। তবে করোনার কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের অগ্রগতির যে পরিকল্পনা ছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু ব্যাংক কর্মীদের বেতন-বোনাস দেয়াসহ সার্বিক দিক মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি আমরা।
অন্যান্য সময় ব্যাংক যেভাবে চলছে, তার সঙ্গে যদি মহামারির এ সময় ব্যাংক খাতের অবস্থা তুলনা করি, সেটা নিয়মমাফিক হবে না।
অন্য ব্যাংকের মতো এবি ব্যাংকও ব্যতিক্রম নয়। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঠিক নীতিমালা মেনে আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি। আমাদের কিছু ঘাটতি ছিল সেগুলো পূরণ করেছি।
প্রণোদনা প্যাকেজ বিষয়ে অনেক অভিযোগ আছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ বণ্টন করছে ব্যাংক। কিন্তু বলা হচ্ছে, বড় বড় ব্যবসায়ীকেই প্রণোদনার অর্থ দেয়া হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে দেখেছি, প্রণোদনার ঋণ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করার কারণে ১৬টি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শোকজ করেছে।
এবি ব্যাংক প্রণোদনার ঋণ সঠিকভাবে বিতরণের চেষ্টা করেছে। বড় শিল্পের পাশাপাশি ছোট শিল্পে প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। এ শিল্পের প্রসার অর্থনীতির মন্দাভাব ও মন্দঋণ দুটোই প্রতিহত করবে। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গ্রাহক তৈরি করে যদি তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ দিতে পারি, তাহলে ঝুঁকির সম্ভাবনা কম থাকে।
বিভিন্ন ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৯৮ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতা ঋণের টাকা ফেরত দেয়। ব্যাংক খাতে এসব গ্রাহক তৈরি করা হলে মন্দ ঋণের মাত্রা অনেক কমে যাবে। কারণ মন্দ ঋণ বৃহৎ শিল্পে পুঞ্জিভূত।
প্রণোদনার ঋণ হয়তো অনেক ব্যাংক সঠিকভাবে বিতরণ করতে পারেনি। আবার অনেক ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে কিছু জটিলতা আছে। এখানে গ্রাহকের অভাব আছে।
ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে একটি ব্যাংক ঋণগ্রহীতার আনুষঙ্গিক বিষয় পরিপালন করেই ঋণ দেয়, কিন্তু গ্রাহকের অভাব থাকলে লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ না-ও হতে পারে। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের কম ঋণ দেয়া হলে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
ব্যাংকে গ্রাহক পাওয়া, আনুষঙ্গিক বিষয় পরিপালন, গ্রাহকের সামর্থ্য, ব্যাংকের আন্তরিকতা সবকিছু বিবেচনা করতে হবে। না হলে ঋণ না দেয়ায় শুধু ব্যাংকের ওপর দায় দেয়া হলে সেটা অন্যায় হবে।
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। দেশের ব্যাংক খাতের এখন অন্যতম প্রধান সমস্যাও এটি। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদৌ কি আদায় করা সম্ভব? এ সংস্কৃতি থেকে বের হতে কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন।
২০১৮ সালের অক্টোবের আমি এবি ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগদান করি। তখন থেকে মন্দ ঋণের মাত্রা ৫০ শতাংশ কমিয়েছি। সামনে এটা আরও কমে আসবে।
খেলাপি ঋণ থেকে বের হওয়ার দুটি সুযোগ আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রসার এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে।
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের থেকে ঋণ আদায় করা গেলে খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা দরকার। আমানতকারীদের যে অর্থ ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে, তার প্রতি ব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারেরও দায়বদ্ধতা আছে।
বর্তমানে ব্যাংক খাতে আলোচিত বিষয় আমানতের সুদহার। অর্থাৎ আমানতের সুদহার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ কিছু কিছু ব্যাংক আমানতে ২ থেকে আড়াই শতাংশ সুদ দিচ্ছে। আমানতে মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেয়ার এই নির্দেশনা পরিপালনে ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ কী?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের আমানতকারী রয়েছেন। সবার প্রতি ব্যাংকের কর্তব্য আছে। ব্যাংক শুধু ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করবে সেটা নয়।
আমানতকারীদের নিম্নমানে সুদ দেয়া আইনের পরিপন্থি। কারণ, প্রত্যেকে কিছু আশায় ব্যাংকে সঞ্চয় করে থাকে। কিন্তু সেই আমানতে টাকায় যদি কোনো আশানুরূপ রোজগার না হয়, তবে সেটা আমানতকারীদের প্রতি অন্যায়। ব্যাংক আমানতকারীকে নিম্ন সুদ দিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় অর্থ বিনিয়োগ করছেন নিজেদের মুনাফার জন্য। এতে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে ভারসাম্য থাকছে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন জরুরি।
ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে একাধিবার ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠনের আলোচনা হয়েছে, ‘কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন আছে বলে কি মনে করেন? কেন করেন?
সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য কর্মকর্তার কাছে বলতে চাই, আমাদের ব্যাংক খাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কমিশন গঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বর্তমানে ৬০টি ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একার পক্ষে এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা সহজ নয়। একটি ডেডিকেটেড ব্যাংকিং কমিশন যদি গঠন করা যায়, তাহলে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
ব্যাংক খাতে ইন্টারফেয়ারেন্স (হস্তক্ষেপ) একটা সমস্যা। অনেক সময় ব্যাংকাররা এটির কারণে তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারেন না। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও অনুশাসন ব্যাংকার এবং গ্রাহক উভয়ের জন্য প্রয়োজন। ব্যাংকের মালিকদের জন্যও এটা প্রয়োজন। কারণ, তারা দেশের জনগণের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন। কিন্তু সেটা যদি ব্যক্তিস্বার্থে উপনীত হয়, তবে সমস্ত ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সুতরাং এটাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। সবকিছুর পাশে দেশ, মানুষ, সমাজের কথা চিন্তা করতে হবে।
বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে সঠিকভাবে সহযোগিতা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সরকারের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুশাসন জরুরি। অনুশাসন যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
আরও পড়ুন:বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘…১৪৯ টাকা যেটা খোলাবাজারে ছিল, সেটাকে দুই টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা সর্বোচ্চ খোলাবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হবে।
‘আর আমাদের সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার, বোতল যেটা, পেট বোতলে যেটা, যেটার মধ্যে সিল করা থাকে, সেইটা আমাদের নির্ধারিত ছিল ১৬৩ টাকা। সেইখান থেকে বৃদ্ধি করে ১৬৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
খোলা সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের দামের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আর খোলাবাজারে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ টাকা ছিল। সেটাকে ৮১৮ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।’
পাম অয়েলের দাম নিয়ে টিটু বলেন, ‘সুপার পাম অয়েল তেল প্রতি লিটার, এটা আগে নির্ধারণ করা ছিল না। এবার আমরা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা লিটার।
‘তো এই চারটা পণ্যের দাম, এইটা কিন্তু আমরা নির্ধারণ করলাম না। আমাদের যারা অ্যাসোসিয়েশনের, তাদের রিকমেন্ডেশনে এবং আমাদের ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদনক্রমে উনারা উনাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে চিঠি দিয়ে আগামীকাল থেকে এই মূল্য উনাদের মিল গেট থেকে উনারা কার্যকরী করবে।’
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক এক শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।
আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকটি তাদের এপ্রিলের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।
এডিওতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে এডিবি বলেছে, ২০২৪ (২০২৩-২৪) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ছয় দশমিক এক শতাংশ পর্যন্ত। ২০২৫ (২০২৪-২৫) অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়ে হতে পারে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ।
বাংলাদেশে কোনো বছরের জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের জুন পর্যন্ত ১২ মাসকে এক অর্থবছর ধরা হয়। সে হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ জুন।
এডিওতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সস্তা তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা দেশে তৈরি সুতা ও বস্ত্র ব্যবহার করছেন।
মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ভোগ বাড়তে পারে। অন্যদিকে ভর্তুকি কম দেয়া এবং কৃচ্ছ্রতার ব্যবস্থাগুলো অব্যাহত রাখায় সরকারি পর্যায়ে ভোগও সামান্য বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য