রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে আশা জাগিয়েছিল যে খাত, তা তছনছ করে দিয়েছিল করোনা মহামারি। এখন জাহাজ রপ্তানিতে আবার প্রচুর অর্ডার আসতে শুরু করেছে তৈরি পোশাকের মতো।
বাংলাদেশের জাহাজ রপ্তানি খাত নিয়ে সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছে চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ন্যাশনাল শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি (সিএএনএসআই)।
সংগঠনটি বলেছে, ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানির জন্য ১৫০ কোটি (১.৫ বিলিয়ন) ডলার অর্ডার পাবে। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১২ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করেছিল। বিশ্ববাজারে সম্ভাবনা থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার ধরা হয়, কিন্তু এক টাকার জাহাজও রপ্তানি করতে পারেননি রপ্তানিকারকরা। শুধু তা-ই নয়, গত বছরের মার্চে মহামারি শুরুর পর এই দেড় বছরে কোনো রপ্তানি হয়নি।
সে কারণে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মাত্র ২ হাজার ডলার। মহামারির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নামমাত্র এই লক্ষ্য ধরে সরকার।
হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল তাদের, কিন্তু এখন আর সেই করুণ দশা নেই। সুদিন ফিরছে।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় অন্যান্য পণ্যের মতো জাহাজের চাহিদাও বাড়ছে ব্যাপকভাবে। জাহাজভাড়া বেড়ে গেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। বিশ্ববাজারে জাহাজের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। যার সুফল বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরাও পাচ্ছেন। প্রতিদিনই অর্ডার পাচ্ছেন তারা।
প্রায় ২ বছর ১০ মাস পর জাহাজ রপ্তানির কার্যাদেশ এলো বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডকইয়ার্ড সুদান থেকে এই কার্যাদেশ পেয়েছে। নেদারল্যান্ডস, চীন, তুরস্ক ও ভারতের সঙ্গে দরপত্রে প্রতিযোগিতা করেই এই কার্যাদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে জাহাজ রপ্তানিতে দীর্ঘ সময়ের খরা কাটল।
শুধু এফএমসি ডকইয়ার্ড নয়, দেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ নির্মাতা ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন, আনন্দ শিপইয়ার্ডসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রচুর কার্যাদেশ পাচ্ছে। দুর্দিন কেটে গিয়ে জাহাজ রপ্তানিতে আবার সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ন্যাশনাল শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি (সিএএনএসআই) গত ২ সেপ্টেম্বর ‘জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উত্থান’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানির জন্য ১৫০ কোটি (১.৫ বিলিয়ন) ডলার অর্ডার পাবে।
সিএএনএসআইয়ের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যি বিশ্ববাজারে জাহাজের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর চাহিদা। আমরাও তার সুফল পাচ্ছি। প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি আমরা এখন। শুধু আমরাই না, অন্য সব প্রতিষ্ঠানও পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সরকার জাহাজ রপ্তানিসংক্রান্ত একটি নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। এবার মনে হচ্ছে, আমাদের এই খাতটিতে সত্যিই ভালো দিন আসছে।’
কিছুদিন ধরে সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোর দিচ্ছে বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলো। সমুদ্র থেকে মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণ, সামুদ্রিক নবায়নযোগ্য শক্তি, সামুদ্রিক পর্যটন, সমুদ্র নিরাপত্তা ও গবেষণা ঘিরে বাড়ছে এসব কর্মকাণ্ড। সমুদ্র অর্থনীতির এসব কর্মকাণ্ডের জন্য দরকার উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত ছোট-বড় জাহাজ।
পণ্যবাহী জাহাজ রপ্তানি বাজারের মতো উত্থান-পতন নেই উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত জাহাজের রপ্তানির বাজারে। তাই সম্ভাবনাময় এই রপ্তানির বাজার ঘিরেই আগ্রহ বেড়েছিল বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর।
সরকারও এ খাতের রপ্তানি বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা, কর ছাড়সহ নানা প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ব্যাংকগুলোও মোটা অঙ্কের অর্থায়ন করেছে এই খাতে। দেরিতে হলেও একটি নীতিমালা করা হয়েছে। তাতে জাহাজ রপ্তানি থেকে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার আয় হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।
এক যুগ আগে ২০০৭ সালে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ রপ্তানির মধ্য দিয়ে জাহাজ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। জার্মানিতে জাহাজ রপ্তানির ফলে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন একটা বার্তা যায় যে দেশটি বিশেষায়িত এই শিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছে। এতে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়।
তবে ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ২০১০ সালে ইউরো জোনের মন্দার কারণে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। সমুদ্রগামী জাহাজের ৭০ ভাগের মালিকানা ইউরোপের দেশগুলো। ওই সময়ে ইউরোপের ব্যাংকগুলো জাহাজ কেনায় অর্থায়ন বন্ধ রাখে। জাহাজ ভাড়াও ৭৫ শতাংশ কমে যায়।
রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অফ বাংলাদেশের (এইওএসআইবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যে সময় জাহাজ রপ্তানি টেক অফ করবে, সেই সময়ই ওই ধাক্কা আসে। ২০১০ সালের পর থেকে আমরা টুকটাক করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আসছিলাম। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলামও। গত বছরের শুরুতে ভারতের জিন্দাল স্টিল ওয়ার্কস চারটি ৮ হাজার টনের জাহাজ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই রপ্তানির মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশ শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই উৎপাদন করে তা নয়, উচ্চ প্রযুক্তির ভারী শিল্পপণ্যও এখানে তৈরি হচ্ছে। জার্মানি, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়া, পাকিস্তান ও ভারতে ইতিমধ্যে জাহাজ রপ্তানি হয়েছে। এসব জাহাজের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজের পাশাপাশি যাত্রীবাহী, বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী, মাছ ধরার জাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজও ছিল।’
‘কিন্তু কোভিড-১৯ সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয়’ মন্তব্য করে সাইফুল বলেন, ‘আমরা যখন জাহাজ তৈরি করি, তখন যে প্রতিষ্ঠানের জাহাজ তৈরি করি সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকেন। গত বছরের মার্চের পর থেকেই তারা চলে গেছেন। আমাদের সব কাজ বন্ধ ছিল। এখন আবার নতুন উদ্যোগে শুরু করেছি আমরা।’
সাইফুল বলেন, ‘জাহাজের মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশই রপ্তানি হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ওই সব দেশ থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে। করোনার আগেরও অনেক অর্ডার ছিল। সব কিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছি।’
এফএমসি ডকইয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, কার্যাদেশ অনুযায়ী সুদান সরকারের জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টাগবোট বা সাহায্যকারী জাহাজ নির্মাণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। টাগবোটটির রপ্তানি মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৬ কোটি টাকা।
এফএমসি ডকইয়ার্ডের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এই কার্যাদেশ পেয়েছি আমরা। চট্টগ্রামের ইয়ার্ডে শিগগিরই নির্মাণকাজ শুরু হবে। এটি ছাড়াও কয়েকটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে আমরা সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছি, যেগুলোর রপ্তানি মূল্যমান হবে ১০ কোটি ডলার।’
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, জাহাজ নির্মাণ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন, কোরিয়া ও জাপান। বিশ্বের মোট জাহাজ নির্মাণের ৯০.৫ শতাংশ হয় এই তিনটি দেশে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাহাজ রপ্তানি থেকে ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানির লক্ষ্য ধরা হয় ৫০ লাখ ডলার। বছর শেষে সেই লক্ষ্য থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার দাঁড়ায়, যা ছিল এ যাবৎকালে জাহাজ রপ্তানি থেকে সবচেয়ে বেশি আয়।
ওই অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছিল ১৪০ শতাংশ।
সেই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কিন্তু মহামারির কারণে বছর শেষে আয় হয় মাত্র ২ হাজার ডলার, যা আবার কোনো নতুন জাহাজ রপ্তানি থেকে নয়; আগে রপ্তানি করা জাহাজের বকেয়া বিল থেকে এসেছিল ওই অর্থ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে কোনো বিদেশি মুদ্রা দেশে আসেনি।
বাংলাদেশকে নিয়ে সিএএনএসআইয়ের প্রতিবেদন
চীনের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ন্যাশনাল শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রির (সিএএনএসআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের মন্দার পর বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণের ব্যবসা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২০২১ সালেই বিশ্বের জাহাজ রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলো ৯০ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার পাবে। ইতিমধ্যে ২৮.৩৯ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার ইতিমধ্যে পেয়েছেন চীনের রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ সরকারও এই সুফল পাবে। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ১.৫ বিলিয়ন ডলার অর্ডার পাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান বিশ্বব্যাপী জাহাজ নির্মাণের চাহিদার কমপক্ষে ১ শতাংশ জোগান দেয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। বৈশ্বিক বাজারের চাহিদার একটি অংশ দখল করার জন্য বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতাদের রপ্তানির জন্য একটি বড় সুযোগের দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডগুলো গুণগত ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক ভালো মানের জাহাজ তৈরি করে, যা বিশ্বের অনেক দেশের ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশ থেকে জাহাজ কিনছে। জাহাজ রপ্তানিতে বাংলাদেশ আগামী দিনগুলোতে ভালো করবে।’
বাংলাদেশের সরকার জাহাজ রপ্তানি খাতের জন্য যে নীতিমালা করেছে তা এ খাতের বিকাশের জন্য যথেষ্ট সহায়তা করবে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাতারা আগামী বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যের রপ্তানি আদেশের সঙ্গে অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য উন্মুখ; যা এই খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের আরও সুযোগ তৈরি করবে।’
আরও পড়ুন:শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে গত ০২ জুন, সোমবার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুহঃ ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ গোলাম মরতুজা, মোঃ ফয়েজ আলম ও মোঃ আশরাফুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি সাইফুল আবেদিন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভা সঞ্চালনায় ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শাহ জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি এস. এফ. এম. মুনির হোসেন, সহসভাপতি মজিবুর রাহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ছানোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনায় আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। আবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। ট্রেড লাইসেন্স নিতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না। বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্রের বাধ্যবাধকতায় এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। এত দিন ৪৬টি সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
এখন ১১ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না। শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) সিস্টেম জেনারেটেড প্রত্যয়নপত্র দাখিল করলেই হবে। ওই ১১টি সেবা হলো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে; সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে; সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণে; ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ ও নবায়নে; চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণে; পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়; এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে; ত্রি-চক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নে; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।
ঘরে বসে যেসব ক্রেতারা কেনাকাটা করতে চান, তাদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা আগামী অর্থবছর থেকে খানিকটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ই-প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে কমিশনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পণ্যের দাম বেশি হতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ভ্যাটের হার ছিল ৫ শতাংশ।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে পেশ হলো বাজেট। এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।
তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেয়া।
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সাথে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।’
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আর্থিক অস্থিরতা সামাল দিতে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এর মূল লক্ষ্য ছিল বৈশ্বিক মুদ্রানীতি সমন্বয় সাধন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহ দেওয়া এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। বহু দেশ সংকটে পড়ে এই সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে- কেউ সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে, কেউ আবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণনির্ভরতার ফাঁদে পড়ে গেছে।
আজ, যখন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্রমশ পশ্চিমকেন্দ্রীকতা থেকে সরে পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন আইএমএফ তার প্রাসঙ্গিকতা ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন।
ঋণ সহায়তা, নাকি ঋণের ফাঁদ?
আইএমএফ সাধারণত এমন শর্তে ঋণ দেয়, যার মধ্যে থাকে কঠোর ব্যয়সংযম, ভর্তুকি হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারমুখী সংস্কার; কিন্তু এই শর্তগুলো অনেক সময় জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় শিল্প ধসে পড়ে, বৈষম্য বেড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার অভিজ্ঞতা এর এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০১৮ সালে আইএমএফ ইতিহাসের বৃহত্তম ঋণ প্যাকেজ ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করে। ফল ছিল বিপরীত- মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, দারিদ্র্য আরও বেড়ে যায় এবং দেশটি আবার মন্দার মুখে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে শুধু অর্থনৈতিক সমীকরণ দিয়ে কোনো দেশের সামাজিক বাস্তবতা নির্ধারণ চলে না।
আইএমএফের নীতিনির্ধারণ কাঠামো এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শক্তির ভারসাম্যের প্রতিচ্ছবি। উন্নত দেশগুলো (বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংগঠনের ভোটের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিত। এই গণতান্ত্রিক ঘাটতি আজ দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে।
বিকল্প প্রতিষ্ঠানের উত্থান
এই প্রেক্ষাপটে বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ল্যাটিন আমেরিকান রিজার্ভ ফান্ড (FLAR) নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। (NDB) এর সহায়তা তুলনামূলকভাবে শর্তমুক্ত এবং অংশগ্রহণমূলক। এখানে প্রতিটি দেশের ভোটের ও প্রতিনিধিত্বের সমান সুযোগ আছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও আগ্রহী করে তুলেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন শুধু আর্থিক বিকল্প নয়- এরা এক নতুন উন্নয়ন দর্শনের বাহক। সেই দর্শনে উন্নয়ন নির্ধারিত হয় স্থানীয় বাস্তবতা ও প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে, বাইরের চাপ বা রূঢ় শর্ত নয়।
বিশ্ব আজ বহুমেরু। অর্থনৈতিক শক্তি ছড়িয়ে পড়ছে নানা অঞ্চলে। এই বাস্তবতায় টিকে থাকতে হলে আইএমএফকে নিজস্ব কাঠামো ও দর্শনে রূপান্তর আনতে হবে। প্রয়োজন গভর্ন্যান্সের সংস্কার, নীতিনির্ধারণে সমান অংশগ্রহণ, এবং সর্বোপরি সহানুভূতিশীল ঋণ নীতিমালা।
আইএমএফ যদি সত্যিই বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতার অভিভাবক হতে চায়, তাহলে তাকে হতে হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, এবং আঞ্চলিক বাস্তবতাসম্মত এটি শুধু আইএমএফের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্ন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ জব্দ কর তা বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার পরমর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময়ে এবারের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি, ব্যাংক জালিয়াতি, করখেলাপি ও পাচারকৃত অর্থ জব্দের মাধ্যমে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করলে তা হতে পারে এবারের বাজেটের একটি অভিনব উৎস।’
‘গত সরকারের রেখে যাওয়া বিদেশি ঋণের চাপ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এই সরকারের এই সময়ে অন্যতম সাফল্য ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করে বিদেশি ঋণের চাপ কমিয়ে আনা,’ যোগ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই ঋণ বিলিয়ন ডলার করে বছর বছর বাড়ছিল। সামগ্রিকভাবে এই সরকারের সাফল্যের জায়গাটা হলো বহির্খাত, রেমিট্যান্স, রপ্তানি, দায়-দেনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, মজুদ বাড়ানো ও টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা।’
তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এবং করের আওতা বাড়ানোর মতো নতুন কোনো কিছু না থাকায় এবারের বাজেটে কোনো চমক থাকছে না।’
‘যে প্রকল্পগুলো সরকারের কাছে আছে, তা অতিমূল্যায়িত ও তার ৪০ শতাংশ ব্যয়ই ভুয়া। আগের যে প্রকল্পগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হতো, সেগুলো অব্যাহত আছে,’ বলেন তিনি।
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘রাজস্ব ব্যয় সঠিকভাবে না করলে করদাতাদের উৎসাহ থাকে না। আমাদের কর কাঠামো বৈষম্যনির্ভর। আমাদের বৈদেশিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা অর্জিত হলেও ব্যক্তি খাতে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ অর্জিত হয়নি।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি নামের একটি বিতর্ক সংগঠন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা আসন্ন বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজকে পরাজিত করে ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
মন্তব্য