অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর জেরে গত দুই দিন ধরে অশান্ত গাজীপুর। সেই ভিডিওতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধিকার আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর প্রতিবাদে গত দুই দিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ, রেলে অগ্নিসংযোগ ও মেয়রের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরের পর নগরীর বোর্ড বাজার এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এই সমাবেশকে ঘিরে তৃতীয় দিনের মতো উত্তপ্ত গাজীপুর সিটি।
বোর্ড বাজার বড় মসজিদের সামনে শুক্রবার বিকাল তিনটায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে সিটি মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তি ও বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ডাকা হয়েছে। তাতে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
একই দিন বিকেল সাড়ে তিনটায় বোর্ড বাজারের ইউটিসি চত্বরে আলোচনা সভা ও আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ। তাদের উপলক্ষ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের সম্মাননা অর্জন। এ সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা মেয়র জাহাঙ্গীর ও তার অনুসারী নেতাকর্মীদের।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি নিউজবাংলাকে জানান, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়র বিতর্কিত মন্তব্য করায় গত দুই দিনের মতো শুক্রবারও বিক্ষোভ মিছিল চলবে।
তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীরা মেয়রের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য মেনে নিতে পারছে না। অপরদিকে আনন্দ মিছিলের আড়ালে মেয়রের অনুসারীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মাঠে নামছে বলে জেনেছি। বিক্ষোভে যোগ দেয়ার বিষয়ে আমি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। তবে আনন্দ মিছিলে যোগ দেব না।’
বিক্ষোভ মিছিলের অন্যতম সমন্বয়ক ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় মেয়র জাহাঙ্গীরের শাস্তি ও বহিস্কার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল হবে বোর্ডবাজারে। সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেবে।
‘কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল করার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। আমাদের বিক্ষোভ পূর্বনির্ধারিত এবং চলমান। আনন্দ মিছিলের নামে মেয়রের লোকজন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে।’
মেয়রের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মনিরুজ্জামান মনির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিল করবে। সহযোগী সংগঠন হিসেবে আমরা সে মিছিলে অংশ নেব। মিছিলে মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত থাকবেন।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মেয়রের কটূক্তির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ এ অন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।’
বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হাসিবুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ মিছিলের অনুমতি চেয়েছে। তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে টঙ্গী ও বোর্ডবাজারে পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে উভয়পক্ষ তাদের কর্মসূচি শেষ করবে।’
যা আছে ভিডিওতে
একটি ঘরোয়া আয়োজনের ওই ভিডিও গত মঙ্গলবার সকালে ভাইরাল হয় ফেসবুকে। ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নীল রঙের জামা পরে চেয়ারে বসে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। বাকি অংশে শুধু অডিও বক্তব্য শোনা যায়। কিছু কিছু অংশ ছিল অস্পষ্ট।
ভিডিওর শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গে টেনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রাসেল সাহেবকে এইখানে নিয়া ফালাইছি। আমি চাইছি রাসেল সাহেব ভুল করুক। আমি ইচ্ছা করেই চাইছি হেও মিছিলটাতে এটেন্ড করুক।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজমত উল্লাহ আমারে জীবনে মারার লাইগা লোক কন্টাক্ট করছে, সব করছে। এখন সে আমার কর্মী হইছে। ...আমারে জিগায় কী করছ? আমারে কয়দিন জিগাইছে কী করো, কেমনে সম্ভব? হেও সব জানে না! আমি তো খেলা জিতছি।’
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মন্ত্রীরে নিয়া মাথা ঘামাই না। জাহিদ আহসান রাসেল আছে না? তারে নিয়া আমি এক মিনিটও চিন্তা করি না। খালি জাস্ট শুইনা রাখো, বিশ্বাস করার দরকার নাই। আমি চিন্তা করলাম সে তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই। দরকারটা কী আমার এখানে, পরিবর্তনে কী হইব? এখানে পরিবর্তনের লাভ টা কার?’
গত তিন বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। এ বিষয়ে ভিডিওটিতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যানেল মেয়র দেই না। দিলে কী হইব? আমারে কি কাউন্সিলররা মেয়র বানাইছে? আমার কি মেয়রগিরি যাইবগা? যেমন আমি এখানে প্যানেল মেয়র করি নাই। রাসেল এমপি অনেকরে মেয়র বানাইয়া দিতেছে, অনেকরে কাউন্সিলর বানাইয়া দিতেছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকজনরে ভারপ্রাপ্ত দিব?’
বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি তার নিকটাত্মীয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাতাসটা আমার কাছে বইলা যায়।’
বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এমনকি হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কথাও বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের সাথে চলি না? বিএনপির সাথে চলি না? অন্য পার্টি আছে না সবার সাথেই তো কথা বলি। এই যে আমার সাথে ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী (হেফাজতের প্রয়াত আমির) প্রায় ৪৭ মিনিট কথা বলছে। সে আসতে চায়। আমি কথা বলছি না?
‘ধীরাশ্রম, ঝাঝর, চান্দরা আছে ৮/১০ বিঘা, দিঘিরচালা আছে ১৬ বিঘা, তেলিপাড়াও আছে। আমার এখানে সাড়ে তিন শ বিঘা জমি আছে। এই নির্বাচনের সময়েও দশ হাজার কোটি টাকা আনছি।’
চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
মেয়র যা বলেছেন
ভিডিওটি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সেটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। অন্যথায় যারা এগুলো ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যারা এই অন্যায় কাজ করছে’, তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনের সহযোগিতা নিয়ে, যারা বিজ্ঞ আইনজীবী… তাদের পরামর্শে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ফেসবুকে মিথ্যা কথা ও গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের বলব, দয়া করে এগুলো ডিলিট করে দিন। মিথ্যা অপবাদ না দিয়ে আসুন সকলে মিলে কাজ করি।’
গত কয়েক দিন ধরে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার সময় মেয়র ছিলেন ভারতে। গত রাত ১২টায় তিনি দেশে ফিরে নিজ বাসায় ফিরেছেন।
তবে দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে তিন মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সত্যটা জানুন’।
মেয়র বলেন, ‘বিভিন্ন ফেসবুক ও ইউটিউবের প্রচারমাধ্যমে আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এবং আমার নাম সেখানে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট কথা তারা ছেড়েছে।
‘আমার এবং আমাদের বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতি (গাজীপুর আওয়ামী লীগের) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নাম ধারণ করে আমাকে কীভাবে ছোট করা যায় বা প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, সেই কৌশল হিসেবে আমার প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন কথা এডিট করে, নকল করে সেসব প্রচারমাধ্যম ইউটিউব এবং ফেসবুকে ছেড়েছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অস্তিত্ব এবং ভালোবাসা’- এমন কথা বলে মেয়র বলেন, ‘জাতির পিতা শহীদ হওয়ার পর আমার জন্ম। সে জন্য আমি আমার জাতির পিতাকে অনুসরণ করি। আমি ছাত্রজীবন থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে শুরু করে তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (গাজীপুর শাখা) তারপর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার জন্য দোয়া দিয়েছেন।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে এই শহরকে উন্নত করতে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এই উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য একটি মহল বিরোধীদলীয় উসকানির পাঁয়তারাতে পড়ে আমাদের শহর এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য আমার অস্তিত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করছে।’
আরও পড়ুন:উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নেয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকেও কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছে না। দল ও দলের বাইরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাতে নির্বাচিত হয় সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের জনগণ যখন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি নেতারা তখন বরাবরের ন্যায় দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে বাধ্যগ্রন্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে চায়। বিপরীতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন ।
ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টে বিএনপি লাগাতারভাবে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ও অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণতন্ত্র ও নির্বাচন বানচালের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোপূর্বে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি সারাদেশে ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। তাদের এই ভয়াবহ সম্মিলিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই বিএনপি নেতারা বিরোধী দল দমনের কথা বলে। সরকার বেপরোয়াভাবে কাউকে কারাগারে পাঠাচ্ছে না। বরং সন্ত্রাস ও সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা আইন ও আদালতের মুখোমুখি হচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিও পাচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে যারা নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে-জনগণের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে সেসব সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ও মহামান্য আদালত যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নেই, সে যে দলেরই হোক না কেন সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারবর্হিভূত বক্তব্য প্রদান করছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে বদ্ধপরিকর। জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি বরাবরের ন্যায় নির্বাচন ও দেশের গণতন্ত্র বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে জনগণও তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশি বেশি অবান্তর কথা বলেন বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, ওবায়দুল কাদের বিএনপির ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার যে তালিকা চেয়েছেন তা সরকারের কাছেই আছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখেছি, ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপির কাছে তালিকা চেয়ে তারস্বরে চিৎকার করছেন। তিনি কিসের তালিকা চাইছেন? এর আগেও তো তালিকা দেয়া হয়েছিল। আর তালিকা তো তাদের কাছেই রয়েছে। আইন, আদালত, থানা, পুলিশ তো তাদেরই কব্জায়।
‘ওবায়দুল কাদের সাহেবের স্নায়ু শিথিল, মস্তিষ্ক অলস ও হৃদয় দুর্বল হওয়ার কারণে বেশি বেশি অবান্তর কথা বলেন। সরকার অসংখ্য মানুষকে গুম, খুন ও অপহরণ করেছে। জাতিসংঘ গুমের একটি তালিকা দিয়েছিল। বিনাভোটের সরকার আজ পর্যন্ত তার কোনো জবাব দিতে পারেনি।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীসহ সব গুম রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলটির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীকে গুমের ১২ বছর পূর্ণ হলো আজ (বুধবার)। আজও তাকে ফিরে পাওয়ার অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তার স্ত্রী-সন্তান-পরিবারসহ দেশের অগণিত নেতাকর্মী।
‘শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর বনানীতে ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গাড়িচালক আনসার আলীসহ তুলে নিয়ে যায় ইলিয়াস আলীকে। এরপর গাড়িটি পাওয়া গেলেও হদিস মেলেনি তাদের। একথা আজ জনগণের সামনে স্পষ্ট যে, এই ফ্যাসিবাদী সরকারই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রাম আর টিপাইমুখ বাঁধ ও সীমান্ত আগ্রাসনের প্রতিবাদে সিলেট অঞ্চলে গড়ে উঠা গণ-আন্দোলনে নেতৃত্বের কারণে ইলিয়াস আলী রাষ্ট্রযন্ত্র ও দেশি-বিদেশি অপশক্তির গাত্রদাহের প্রধান কারণ ছিলেন। ইলিয়াস আলী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তার জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতায় ঈর্ষাকাতর সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে তাকে গুম করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদেরই অত্যন্ত সচেতনভাবে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, আয়নাঘরে আটক করে রাখা হচ্ছে। ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার প্রমাণ অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয় ভারতে। সেখানে তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে দেয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গুম-খুন-ক্রসফায়ার বাহিনী র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে গুমের মাত্রা কিছুটা কমলেও এখনও গুম হচ্ছে। তবে গুমের প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। সেটা হলো আগে যারা গুম হতো তারা আর ফেরত আসতো না। এখন যারা গুম হচ্ছেন তারা ৫ দিন ৭ দিন এমনকি এক মাস পরেও কেউ কেউ ফেরত আসছে। অথবা লাশ পাওয়া যাচ্ছে। গুম বাহিনী এখন স্বল্প সময়ের জন্য গুম করছেন। এই স্বল্প সময়ের গুম হওয়াটাও খুবই ভয়ংকর।’
রিজভী বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল বুধবার আদালতে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী সব অপশক্তিকে প্রতিহত করা হবে।
বুধবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। খবর বাসসের
বিএনপিকে বিজয়ের প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের এ দিনে বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী সন্ত্রাসী সব অপশক্তি, যারা আমাদের বিজয়কে সংহত করার প্রতিবন্ধক, এদের আমরা পরাজিত করব, পরাভূত করব, প্রতিহত করব। আমাদের লড়াইকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে সুসংহত করার পথে প্রতিবন্ধকতা হলো, বিএনপির মতো সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী, অশুভ শক্তি। এই শক্তিকে পরাজিত করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এটি (মুজিবনগর দিবস) আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। আজকের এই দিনে আমরা শপথ নেব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ধারাবাহিক লড়াইয়ে আমরা এগিয়ে যাব। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বয়ে নিয়ে যাব, এটাই হোক আমাদের শপথ।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সভায় বিএনপি নেতারা বলেছেন- বিএনপি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সাজানো নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রকাশ্য একপেশে ভূমিকার জন্য ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
এই সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহু দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে নির্দয় দমনের কষাঘাতে বিপর্যস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলশ্রুতিতে এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহি করে সেই নির্বাচন গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত। এই শর্তের অনুপস্থিতিতে স্বৈরতন্ত্র হিংস্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে এক বিকট স্বৈরাচারের অভ্যুদয় হয়েছে। আওয়ামী দখলদার শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হয়ে দেড় দশক ধরে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাংলাদেশ থেকে উচ্ছেদ করেছে।
এদের আমলে কখনও জাতীয় ও স্থানীয় সরকার কোনো নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদেরই আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন বিজয়ী ঘোষণা করে। দখলদার শাসক গোষ্ঠী প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনগণকে প্রতারিত করার জন্য নতুন নতুন রণকৌশল গ্রহণ করে।
আরও বলা হয়, প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই রপ্ত করেনি। তাদের অধীনে সব জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দলের প্রার্থীদের নানাভাবে হামলা, মামলা ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও শারীরিক আক্রমণসহ পদে পদে বাধা দেয়া হয়। অনেককে মনোনয়নপত্র জমা দিতেও দেয়া হয়নি।
বিএনপি বলছে, অগণতান্ত্রিক শক্তি কখনও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মিত্র হতে পারে না। আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী ভোটারবিহীন ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন করার পরও আশঙ্কামুক্ত হতে পারেনি। তাই নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদেরও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেয়া, ইন্টারনেটের গতি শ্লথ করা, নাগরিকদের নজরদারি নস্যাৎ ইত্যাদি নজিরবিহীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বিনাশী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এরা (আওয়ামী লীগ) একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ভরে রাখে। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করা হয়। তাদের অনেকে এখনও কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। গুম-খুন অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন:ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নাৎসি জার্মানির একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দক্ষিণ ইসরায়েলে গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার শাসক দল হামাসের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন থেকেই উপত্যকায় প্রাণঘাতী হামলা শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল। সামরিকভাবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রটির হামলায় এরই মধ্যে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিশু।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় যে অভিযান শুরু করেছে, সেটি গণহত্যার সমতুল্য।
আলবানিজ ইসরায়েলের ওপর অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানান।
এমন বাস্তবতায় কাদের বলেন, ‘হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছে নেতানিয়াহু।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্বেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিটলারের যে দাম্ভিকতা, যুদ্ধংদেহী মনোভাব, সেটা আবারও নতুন করে বিশ্ব রাজনীতিতে দেখতে পাচ্ছি। হিটলার যে হলোকাস্ট ঘটিয়েছিল ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করে, আজকে গাজায় গণহত্যার যে নায়ক একই রূপে আবির্ভূত হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
‘এই নেতানিয়াহু জাতিসংঘকে মানে না, হোয়াইট হাউসকে তোয়াক্কা করে না। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কথা শুনে না। সে হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর। ১৪ হাজার শিশুকে গাজায় ইতোমধ্যে হত্যা করে ফেলছে।’
ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইরানের ইসরায়েল আক্রমণের পর পৃথিবীর ইনফ্লুয়েনশিয়াল রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু নেতানিয়াহু আবারও ইরান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মনে হয় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হচ্ছেন নেতানিয়াহু। আপন ইচ্ছায় চলেন, যা খুশি করেন।
‘যাকে ইচ্ছা তাকে মারেন। ভাতে মারেন, পানিতে মারেন, এয়ার স্ট্রাইক করে মারেন। বাউন্ডারি সাইডে সেনাবাহিনী মারেন। তাদের দুর্দমনীয় শক্তির অনুপ্রেরণা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এটা পৃথিবীর ভয়ংকর চিত্র। তার দাপট মনে হয় হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রীদের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
কাদের বলেন, ‘আগামী আট মে প্রথম দফার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে। উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ থাকবে না। অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয়। কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করেছেন নির্বাচন কমিশন।
‘বিএনপি প্রকাশ্যে উপজেলা নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও আমাদের জানা মতে তাদের অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন।’
গাজায় ইসরায়েলি তাণ্ডবের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছে নেতানিয়াহু।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্বেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিটলারের যে দাম্ভিকতা, যুদ্ধংদেহী মনোভাব, সেটা আবারও নতুন করে বিশ্ব রাজনীতিতে দেখতে পাচ্ছি। হিটলার যে হলোকাস্ট ঘটিয়েছিল ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করে, আজকে গাজায় গণহত্যার যে নায়ক একই রূপে আবির্ভূত হয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
‘এই নেতানিয়াহু জাতিসংঘকে মানে না, হোয়াইট হাসকে তোয়াক্কা করে না। আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কথা শুনে না। সে হিটলারের চেয়েও ভয়ংকর। ১৪ হাজার শিশুকে গাজায় ইতোমধ্যে হত্যা করে ফেলছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইরানের ইসরায়েল আক্রমণের পর পৃথিবীর ইনফ্লুয়েনশিয়াল রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু নেতানিয়াহু আবারও ইরান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মনে হয় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হচ্ছেন নেতানিয়াহু। আপন ইচ্ছায় চলেন, যা খুশি করেন।
‘যাকে ইচ্ছা তাকে মারেন। ভাতে মারেন, পানিতে মারেন, এয়ার স্ট্রাইক করে মারেন। বাউন্ডারি সাইডে সেনাবাহিনী মারেন। তাদের দুর্দমনীয় শক্তির অনুপ্রেরণা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এটা পৃথিবীর ভয়ংকর চিত্র। তার দাপট মনে হয় হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে এক হাজার ৮৯১ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বলেন, ‘এবার সম্পূর্ণ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।’
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল।
আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। আর ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২১ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, আপিল গ্রহণ ২৪-২৬ এপ্রিল এবং আপিল নিষ্পত্তি ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল ও প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। আর ১৬১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২১ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ য়া হয়েছে। যেসব উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি সেখানে একাধিক সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন।
চার ধাপের উপজেলা ভোটের পরবর্তী দুই ধাপের নির্বাচন ২৯ মে ও ৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য