বন্ধ থাকার দেড় ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
অবরোধকারীরা চলে গেলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রেললাইন থেকে জ্বলন্ত টায়ার, ঝুট ও কাঠ অপসারণ করা হয়। এর পরপরই ট্রেন চলাচল স্বাভবিক হয় বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
টঙ্গী রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার রাকিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, মহাসড়ক অবরোধ শেষে মিছিল নিয়ে ফিরছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকায় রেল সড়কে টায়ার, ঝুট, কাঠ জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তারা। এতে সারা দেশের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অবরোধকারীরা চলে গেলে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, রেললাইনে অগ্নিসংযোগ করায় কোনো ট্রেন ঢাকায় ঢুকতে ও বের হতে পারেনি। এতে একাধিক ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে। অবরোধের মুখে আন্তনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে টঙ্গী স্টেশন এলাকা থেকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
এর আগে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর জেরে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের শাস্তি চেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অন্তত চারটি এলাকায় অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে এই বিক্ষোভে মেয়রের পদ কেড়ে নেয়া, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
বেলা তিনটার দিকে টঙ্গী হোসেন মার্কেট, চেরাগ আলী, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজারে অবরোধ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
নেতা-কর্মীরা সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দাবি করে বলছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করবেন না।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার সময় মেয়র ছিলেন ভারতে। গত রাতে তিনি দেশে ফিরেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে ফেসবুকে প্রকাশিত একটি ভিডিওবার্তায় তিনি দাবি করেছেন, যে ভিডিও ছড়িয়েছে, তার পুরোটাই বানোয়াট। ‘সত্যটা’ জানিয়ে তিনি বলেছেন, যারা এই ভিডিও ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
অনলাইনে যারা এখনও ভিডিওটি পোস্ট করে রেখেছেন, তাদের সেটি সরিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
মেয়রের দাবি, বঙ্গবন্ধুকে তিনি অন্তরে ধারণ করেন। তার অস্তিত্ব এবং ভালোবাসা হলেন তিনি।
গাজীপুরের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এই বানোয়াট ভিডিও ছড়ানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘যারা এই অন্যায় কাজ করছে আমি আইনের সহযোগিতা নিয়ে, যারা বিজ্ঞ আইনজীবী তাদের পরামর্শে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
ফেসবুকে যারা ভিডিওটি ছড়াচ্ছেন তাদের সেটি ডিলিট করে দেয়ার পরামর্শও দেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু। এ সময় তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা রাজনীতি করি। সেই মহান নেতাকে নিয়ে সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের কুরুচিপূর্ণ ও আশালীন মন্তব্যে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার এই বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে অনতিবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।’
টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সরকার বাবু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদকে নিয়ে অসম্মানজনক বক্তব্যের কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার স্বপদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। বঙ্গবন্ধু এবং দেশমাতৃকার প্রশ্নে এক বিন্দু ছাড় নয়।’
টঙ্গী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম মেয়র হওয়ার পর থেকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগকে কীভাবে ধ্বংস করা যায়, নেতা-কর্মীদের কীভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা যায় সেই অপচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতাকে নিয়ে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন। তাই আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা রাজপথে আন্দোলনে নেমেছি। অবিলম্বে তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাই।’
ভিডিওতে যা দেখা যায়, যা শোনা যায়
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নীল রঙের জামা পরে চেয়ারে বসে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়রকে দেখা গেলে বাকি অংশে শুধু অডিও বক্তব্য শোনা যায়। কিছু কিছু অংশ ছিল অস্পষ্ট।
ভিডিওটি কে বা কারা কবে ধারণ করেছেন, সেটি জানা যায়নি। কারাই বা সেটি ফেসবুকে ছেড়েছেন, সেটিও অজানা।
ভিডিওটির শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রাসেল সাহেবকে এইখানে নিয়া ফালাইছি। আমি চাইছি রাসেল সাহেব ভুল করুক। আমি ইচ্ছা করেই চাইছি হেও মিছিলটাতে এটেন্ড করুক।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজমত উল্লাহ আমারে জীবনে মারার লাইগা লোক কন্টাক্ট করছে, সব করছে। এখন সে আমার কর্মী হইছে। ...আমারে জিগায় কী করছ? আমারে কয়দিন জিগাইছে কী করো, কেমনে সম্ভব? হেও সব জানে না! আমি তো খেলা জিতছি।’
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মন্ত্রীরে নিয়া মাথা ঘামাই না। জাহিদ আহসান রাসেল আছে না? তারে নিয়া আমি এক মিনিটও চিন্তা করি না। খালি জাস্ট শুইনা রাখো, বিশ্বাস করার দরকার নাই। আমি চিন্তা করলাম সে তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই। দরকারটা কী আমার এখানে, পরিবর্তনে কী হইব? এখানে পরিবর্তনের লাভটা কার?’
গত তিন বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। এ বিষয়ে ভিডিওটিতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যানেল মেয়র দেই না। দিলে কী হইব? আমারে কি কাউন্সিলররা মেয়র বানাইছে? আমার কি মেয়রগিরি যাইবগা? যেমন আমি এখানে প্যানেল মেয়র করি নাই। রাসেল এমপি অনেকরে মেয়র বানাইয়া দিতেছে, অনেকরে কাউন্সিলর বানাইয়া দিতেছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকজনরে ভারপ্রাপ্ত দিব?’
বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি তার নিকটাত্মীয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাতাসটা আমার কাছে বইলা যায়।’
বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এমনকি হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কথাও বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের সাথে চলি না? বিএনপির সাথে চলি না? অন্য পার্টি আছে না সবার সাথেই তো কথা বলি। এই যে আমার সাথে ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী (হেফাজতের প্রয়াত আমির) প্রায় ৪৭ মিনিট কথা বলছে। সে আসতে চায়। আমি কথা বলছি না?
‘ধীরাশ্রম, ঝাঝর, চান্দরা আছে ৮/১০ বিঘা, দিঘিরচালা আছে ১৬ বিঘা, তেলিপাড়াও আছে। আমার এখানে সাড়ে তিন শ বিঘা জমি আছে। এই নির্বাচনের সময়েও দশ হাজার কোটি টাকা আনছি।’
ভীষণ ক্ষুব্ধ গাজীপুর আওয়ামী লীগ
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বুধবার বিকেল থেকে গাজীপুরে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তারা মেয়রের বিরুদ্ধে আইনি ও দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলছেন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান নিউজবাংলাকে বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর যা বলেছেন তা রাষ্ট্রবিরোধী। এটা তারা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না।
গাজীপুর আওয়ামী লীগ মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জানিয়েছে আজমত উল্লাহ বলেন, বিষয়টি দলের শীর্ষ নেতাকেও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে জেলে, বনজীবী ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য খুলছে সুন্দরবনের দ্বার।
বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আজ থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠবে সুন্দরবন।
দীর্ঘ সময়ের নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনের দ্বার খোলায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন পর্যটন ব্যবসায়ী ও জেলেরা। সেই লক্ষ্যে শরণখোলা উপজেলার জেলে পল্লীতে ফিরে এসেছে চিরচেনা রূপ। জেলে পল্লীতে ঠুকঠাক শব্দে নৌকা ও ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শেষে প্রথম দিনেই সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন তারা।
এদিকে, পর্যটন ব্যবসায়ীরাও তাদের ট্যুরিস্ট বোটগুলো মেরামত ও রঙ দিয়ে প্রস্তুত করে তুলেছেন। দীর্ঘ বিরতির পর তারা আশা করছেন, পর্যটকদের আগমন সুন্দরবনের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মৎস্য ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
অন্যদিকে, টানা নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল জেলেরা। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন শহরে।
কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলেরা বলেন, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের চরম অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করলে জেলে পরিবারগুলোতে দারিদ্র্যতা থেকে যাবে। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা তিন মাস থেকে কমিয়ে দুই মাসে আনা উচিত বলে দাবি করেন তারা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পাবেন জেলে ও পর্যটকরা। এ উপলক্ষে গত ২৭ আগস্ট বুধবার সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেহেরপুরের গাংনীতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে একাধিক মামলার এক আসামিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার গোলাম মোস্তফা ওরফে ডাকু (৫০) উপজেলার চৌগাছা গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে।
আজ সোমবার ভোরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১২, মেহেরপুর সিপিসি-৩ অভিযানিক দল গাংনী সেনাবাহিনীর সহায়তায় আসামির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
পরে সকাল ১০টার দিকে র্যাব-১২ কোম্পানি কমান্ডারের কার্যালয়, ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩ থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১২ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩ এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ওয়াহিদুজ্জামান জানান, আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে গাংনী থানায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
পাবনার সাঁথিয়া শশুর মোজাম (৭০) কে পুত্র বধু রুমি কর্তৃক বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পৌরসভাধীন কলেজ পাড়া গ্রামে। রোববার রাতে দিকে এ ঘটনা ঘটে। মোজামের বাড়ি নাড়িয়াগদাই গ্রামে হলেও প্রায় ৪০ বছর ধরে সে সাঁথিয়া কলেজ পাড়াতে বসবাস করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া পৌরসভাধীন দক্ষিন বোয়াইলমারী ( কলেজ পাড়া) গ্রামের মোজামের ছেলে মিঠুর সাথে গত ৫ বছর আগে আফড়া গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে রুমির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সে মানুষিক ভারসাম্যহীন রোগী ছিল বলে জানান তার পরিবার। সে ঢাকার মানুষিক চিকিৎসক ডা: শফিকুলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিল। রোববার রাত আটার দিকে হঠাৎ রুমির হাতের কাছে বটি দা দিয়ে শশুর মোজামের পেটে ও পিঠে কোপ দিয়ে জখম করে। এ সময় তার পেটের নারিভূড়ি বের হয়ে যায়। এ সময় তিনি নিজেও নিজেকে আহত করে। পরে মোজামকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে সাঁথিয়া মেডিকেলে এবং অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল নেয়া হলে সে রাত ৩টার দিকে মারা যায়।
বিষয়টি জানতে নিহত মোজামের ছেলে মিঠুর সাথে যোগাযোগ করা হলে সে জানান আমরা স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন ।মাঝে মধ্যে সে পাগলের মত আচরণ করে ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনিসুর রহমান ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ২৩০ জন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল রোববার ২০২৫ সালের সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরবর্তী সময়ে উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসারদের মাধ্যমে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি এবং মৃত বা অযোগ্য ভোটার কর্তন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইসি সচিব জানান, এই সময়ে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪২ নতুন ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৯৪ হাজার ১৯২ জন, নারী ৪৩ হাজার ৪৪৪ জন এবং হিজড়া ৬ জন।
অন্যদিকে কর্তন করা হয়েছে ১ হাজার ৩৮ জন ভোটারকে। এর মধ্যে পুরুষ ৬৫৩ জন এবং নারী ৩৮৫ জন।
নির্বাচন কমিশন আশা করছে, নতুন অন্তর্ভুক্তি ও কর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা আরও নির্ভুল ও হালনাগাদ হবে।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষ দিকে ভারত সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনাটি তিনি বাতিল করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইনে শনিবার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে এ দাবি করা হয়েছে। কোয়াড সম্মেলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে সফরটির পরিকল্পনা ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণটির নাম ‘দ্য নোবেল প্রাইজ অ্যান্ড আ টেস্টি ফোন কল: হাউ দ্য ট্রাম্প-মোদি রিলেশনশিপ আনরাভেল্ড’ (নোবেল পুরস্কার ও এক তিক্ত ফোনকল: ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কের যেভাবে অবনতি হলো)।
এই বিশ্লেষণে ট্রাম্পের সফরসূচির বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়, ‘ট্রাম্প (গত ১৭ জুন ফোনালাপে) মোদিকে বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসবেন। কিন্তু শরতে ট্রাম্পের ভারত সফরের এই পরিকল্পনা এখন আর নেই।’
নিউইয়র্ক টাইমসের এই দাবির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরদিন কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক আয়োজন করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সেই বৈঠকেই চলতি বছরের শেষের দিকে ভারতে কোয়াডের শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
কিন্তু গত কয়েক মাসে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এই বিশ্লেষণে ট্রাম্প ও মোদির সম্পর্ক কীভাবে অবনতি হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছিলেন, গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাত বন্ধে তিনি মধ্যস্থতা করেছেন। পাকিস্তান ট্রাম্পের মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করলেও ভারত তা অস্বীকার করে আসছিল। তা সত্ত্বেও গত ১৭ জুন মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, এতে মোদির ধৈর্যচ্যুতি ঘটে।
এই ফোনালাপের আগে ওই মাসেই কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭–এর শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে মোদি-ট্রাম্প বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প আগেভাগে দেশে ফেরায় তাদের পূর্বনির্ধারিত সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। মূলত এই নির্বারিত বৈঠক না হওয়ায় ১৭ জুন তারা ফোনালাপ করেছিলেন। কিন্তু ৩৫ মিনিটের এই ফোনালাপ দুই নেতার সম্পর্ক ভালো করার পরিবর্তে আরও তিক্ত করেছে।
তবে ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লির সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার পেছনে ভারতের পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্কও বড় ভূমিকা রেখেছে। গত বৃহস্পতিবার এই শুল্ক কার্যকর শুরু হয়েছে।
দেশে গণপিটুনিতে হত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। আগস্ট মাসে অন্তত ৩৮টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসে এর সংখ্যা ছিল ৫১। গণপিটুনিতে আগস্টে ২৩ জন নিহত ও ৪৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। জুলাই মাসে এমন ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১৬ জন।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) আগস্ট মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
গতকাল রোববার এমএসএফ গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে।
দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজেরা তথ্যানুসন্ধান করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে এমএসএফ।
গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ১০ জনকে চুরির অভিযোগে, ৪ জনকে সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ৩ জনকে ডাকাতির অভিযোগে, ১ নারীসহ ২ জনকে পূর্বশত্রুতার জেরে, ১ জন মাদক মামলার অভিযুক্ত, ২ জনকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে ও ১ জনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হত্যা করা হয়।
সাংবাদিক নির্যাতন
আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে জুলাইয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১ জন হত্যা এবং ৩৬ জন সাংবাদিক আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৩ জন সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছনা ও হুমকির শিকার হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা।
জুলাই মাসে সাংবাদিকদের ওপর ১৯টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন।
আগস্ট মাসে ৩৩টি সাংবাদিক নির্যাতন–সংক্রান্ত ঘটনায় ৭টি বিএনপি, ৬টিতে পুলিশ, ৩টি ঘটনায় শিক্ষক, ৫টি ঘটনায় সন্ত্রাসী বাহিনী, ২টিতে চোরাকারবারি, ১টি ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলার শিকার, ১টিতে এনজিও, ১টিতে পেশকার, ৪টিতে দুষ্কৃতকারী, ১টিতে পত্রিকা অফিস এবং ২টিতে সাময়িক কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা ছিল।
আগস্ট মাসের ৭ তারিখ রাত সাড়ে আটটার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে পাঁচ-ছয়জন দুর্বৃত্ত দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। তার মারা যাওয়া নিশ্চিত হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এমএসএফের সাইদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়নের কোনো ঘটনার প্রতিকার হয় না। প্রতিকার করারও কেউ নেই। গণমাধ্যমকর্মীরা পুলিশের কাছে যেতে পারেন না। আবার স্থানীয়ভাবে কোনো অভিভাবক গোছের কারও কাছে গিয়ে প্রতিকার পাবেন এমন অবস্থাও নেই।
রাজনৈতিক সহিংসতা
আগস্ট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। তাদের মধ্যে দুজন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ এবং সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
সহিংসতার ৩৮টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে ২৩টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ৫টি, এনসিপি-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বে ২টি, বিএনপি-এনসিপি দ্বন্দ্বে ১টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষে ২টি, আওয়ামী লীগ-জামায়াত সংঘর্ষে ১টি, আওয়ামী লীগ-গণপরিষদ ১টি, জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষের ২টি, গণঅধিকার পরিষদ–পুলিশের ১টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কারা হেফাজতে মৃত্যু
আগস্ট মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যু কমেনি। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী আগস্টে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল মোট ১০। এ মাসে ৩ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ জন হাজতি, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ১ জন হাজতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে ১ জন হাজতি, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ১ জন হাজতি, নড়াইল কারাগারে ১ জন হাজতি এবং রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রাঙামাটি জেলা কারাগার ও শরীয়তপুর জেলা কারাগারে একজন করে কয়েদি মারা যান।
সংখ্যালঘু নির্যাতন
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের জীবনমান, সহাবস্থান, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তায় সরকার ও প্রশাসনের দ্রুত ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপের অভাবে তাদের ওপর সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিপন্থি।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ২টি, ধর্ষণের ১টি, জমি দখলের ঘটনা ১টি, ১টি গুজব এবং ৩টি ঘটনায় কটূক্তির অভিযোগে ৩ জন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর দিকে পরিকল্পনাবিহীন দেয়াল নির্মাণে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতঘর ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা এবং জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ৩৪৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ৩টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৪৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৯টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৪টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।
ধর্ষণের শিকার ৪৭ জনের মধ্যে ১১ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী রয়েছে, অন্যদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬ জন কিশোরী ও ৯ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন শিশু ও ১ জন কিশোরী। ধর্ষণের চেষ্টা ২৪টি, যৌন হয়রানি ২১টি, শারীরিক নির্যাতনের ৯৪টি ঘটনা ঘটেছে।
মন্তব্য