দেশজুড়ে পণ্যবাহী পরিবহনশ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের প্রথম দিন কোথাও কোথাও বন্ধ রয়েছে পরিবহন, আবার কোথাও পরিবহনশ্রমিকরা বলছেন, তারা জানেনই না ধর্মঘটের কথা।
মোটরযান মালিকদের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারসহ ১৫ দফা দাবি আদায়ে বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ধর্মঘট।
প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হাসান মুরাদ বাদশা জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের বৈঠক রয়েছে। তার আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। বৈঠকের পর নতুন করে সিদ্ধান্ত হবে কর্মবিরতি চলবে কি না।
ধর্মঘটের কারণে পচনশীল পণ্য পরিবহন নিয়ে উদ্বেগে আছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। যদিও তিন দিনের ধর্মঘটের প্রথম দিন পালনে দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র।
চট্টগ্রাম
ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে পণ্যবাহী কোনো গাড়ি ঢুকতে পারেনি বন্দরে।
কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িতে চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপো থেকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার আনা-নেয়া হয়। গাড়ি না থাকায় জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
কনটেইনার ডিপো সমিতির সচিব রুহুল আমিন সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন রপ্তানি পণ্যবাহী দেড় হাজার কনটেইনার বন্দরে পাঠানো হয়। কর্মবিরতির কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। আবার আমদানি পণ্যবাহী যেসব কনটেইনার ডিপোতে খুলে খালাস করা হয়, তাও বন্দর থেকে আনা যাচ্ছে না।’
বরিশাল
বরিশালে পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে বরিশাল জেলা ট্রাক, ট্যাংক-লরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন। বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী সব ধরনের যানবাহন।
জেলা ট্রাক, ট্যাংক-লরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়েই ১৫ দফা দাবি আদায়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ধর্মঘটে কোনো ট্রাক, ট্যাংক-লরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক চলতে দেয়া হবে না।’
ধর্মঘটের সমর্থনে মঙ্গলবার দুপুরে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রহমতপুর বিমানবন্দর মোড়ে সমাবেশ করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির জানান, গাড়ির কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে পুলিশি হয়রানি ও পৌর টোলের নামে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তাদের ১৫ দফা দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
সিলেট
ধর্মঘটে সিলেট বিভাগে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তবে বিভাগের চার জেলার মধ্যে কিছু ট্রাক, পিকআপ ভ্যান চলাচল করছে।
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট জেলার আহ্বায়ক শাব্বির আহম্মেদ ফয়েজ নিউজবাংলাকে জানান, ধর্মঘটের কারণে পণ্যবাহী ট্রাক সিলেটে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। তবে বিকেলের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী
পরিবহনশ্রমিকদের কেন্দ্রীয় ঘোষণার প্রতি সমর্থন দিয়ে রাজশাহীর ট্রাকশ্রমিকরা সকাল থেকে ট্রাক নামায়নি। জেলার বাইরে কোনো পণ্যবাহী পরিবহন যায়নি।
তবে রাজশাহী মহাসড়কে বাইরের জেলার কিছু ট্রাক চলতে দেখা গেছে। চলেছে পিকআপ ভ্যানও।
আশপাশের উপজেলা ও জেলা থেকে অটোরিকশা ও ভটভটিতে করে পণ্য নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।
ট্রাক বন্ধ থাকায় ব্যবসার ওপর এখনও কোনো প্রভাব পড়েনি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহী বেনেতি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী নিউজবাংলাকে জানান, ট্রাক বন্ধের ঘোষণা আগে থেকে দেয়া ছিল বলে এখন পর্যন্ত এর প্রভাব সেভাবে নেই। কারণ যাদের জরুরি পণ্য প্রয়োজন ছিল তারা আগেই নিয়ে এসেছেন। তবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয় কাজ করছে যে ধর্মঘট যদি শিগগিরই তুলে নেয়া না হয়, তাহলে পণ্যসংকট দেখা দেবে। পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে।
সেকেন্দার আলী বলেন, ‘রাজশাহীতে তেমন পাইকারি বড় ব্যবসায়ী নেই। এখানে বেশি দিনের জন্য পণ্য মজুত করা হয় না। কয়েক দিন পরপরই পণ্য আনা হয়। এ কারণে তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে।’
রাজশাহী ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সাদরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ট্রাক চলাচল করে। রাজশাহীর কোনো ট্রাক আজকে চলাচল করেনি। তবে অন্য জেলায় কিছু চলেছে।
‘আমাদের নিজেদের দাবি আদায়ে এই কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এখানে কোনো জোরজবরদস্তি নেই। কোনো পিকেটিং নেই।’
রংপুর
ধর্মঘটের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে রংপুরে। এখানে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন।
জেলা ট্রাক, ট্যাংক-লরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মানিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে কর্মবিরতি দেয়া হয়েছে তা রাজধানীর তেজগাঁওকেন্দ্রিক। এই কর্মসূচি আমরা পালন করছি না।’
শহরের শাপলা টার্মিনালে ট্রাকচালক মনির হোসেন বলেন, ‘শুনছি ঢাকাত ধর্মঘট চলোছে। আমাদের এই দিকে ধর্মঘট নাই। আমরা গাড়ি নিয়ে ভাড়ার জন্য আসচি। ভাড়া পাইলে ভাড়া মারমো।’
কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের ট্রাকচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি শুনেছেন ২৬ তারিখ থেকে ধর্মঘট।
রংপুর নগর পুলিশের উপকমিশনার কাজী মুত্তাকী ইবনে মিনান বলেন, ‘আমরা মাঠেই আছি। কোথাও কোনো ধর্মঘট নেই।’
ময়মনসিংহ
রংপুরের মতো ময়মনসিংহেও মানা হচ্ছে না ধর্মঘট। সব সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। ট্রাকের কারণে কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে যানজটও।
ধর্মঘটের কথাই জানেন না পণ্যবাহী পরিবহনের চালকরা।
ময়মনসিংহের পাটগ্রাম বাস টার্মিনালে ট্রাকচালক মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘সারা দেশে ধর্মঘট চলছে শুনেছি। তবে আমাদের নেতারা কিছুই জানায়নি। বলেছে এ ধর্মঘট মানতে হবে না। এ জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড়ে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের চালক মো. আরফান বলেন, ‘কের (কিসের) ধর্মঘট? এক দিন বাড়িতে বইয়্যা (বসে) রইলে পেডে ভাত দেওন যাইত না। দাবি আদায় করলে নেতারা আলোচনা করে করুক।’
জেলা মোটর মালিক সমিতির (ট্রাক বিভাগ) সম্পাদক রবিউল ইসলাম শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘটের ডাক দেয়া সংগঠনটি একটি অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন। তাদের ধর্মঘটে আমরা সাড়া দিইনি। পণ্য পরিবহনের সব গাড়ি চলাচলের নির্দেশ দিয়েছি।’
শাহীন জানান, তারা নিজেদের দাবি আদায়ে আগামী ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর পরিবহন ধর্মঘট পালন করবেন। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
চালকরা মনে করেন, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের একাধিক সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে দাবি আদায় হয় না। যদি সবাই একসঙ্গে বসে আলোচনা করে আন্দোলনের ডাক দেয়, তাহলেই সুফল মিলবে। বিচ্ছিন্নভাবে ধর্মঘট করে দাবি আদায় অসম্ভব।
সাভার
সাভারে সারা দিন স্বাভাবিকভাবে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করেছে। ধর্মঘটের কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আশুলিয়া শাখার সদস্য আমির আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘটটা মূলত দক্ষিণবঙ্গের ওই দিকে। আমাগো এই দিকে কোনো ধর্মঘট নাই। সব স্বাভাবিকভাবেই চলতেছে। এই দিকে ধর্মঘট দেয়ার কোনো সম্ভাবনাও নাই।’
সাতক্ষীরা
পণ্য পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরেও।
জেলা ভিআইপি ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহিন আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে সহমর্মিতা জানিয়েছি। তবে এতে অংশ নিচ্ছি না।’
ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি পরিতোষ ঘোষ জানান, বন্দরে ট্রাক চলাচল স্বাভাবিক আছে। বন্দরের কোনো কার্যক্রম ব্যাহত হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় কৃষিপণ্যের ওপর ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
সকাল থেকেই জেলার সব রুটে বন্ধ রয়েছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের পণ্যবাহী পরিবহন। এতে জেলার বাইরে পণ্য পাঠাতে পারছেন না কৃষকরা। পচনশীল পণ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫ বিগি শিম চাষ করিচি। আমি শিম নিয়ি ঢাকায় বিক্রি করি। টিরাক ও মিনি টিরাক বন্দ হওয়ায় আমরা চিন্তায় পড়িগিচি। একুন তো সব নষ্ট হয়ি যাবে। একেনেও খুব একটা দাম পাওয়া যাবে না।’
জেলা শহরের বড় বাজার কাঁচামাল আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করি। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি না। এতে কৃষিপণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে।’
এদিকে দাবি আদায় না হলে আরও বড় কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকনেতারা।
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান লাভলু বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়েছে। এই সময় পণ্য পরিবহনমালিকদের ওপর অগ্রিম আয়কর চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত বাতিলসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি।
‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
নওগাঁ
পণ্যবাহী পরিবহনশ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে নওগাঁর সঙ্গে সারা দেশের পণ্য পরিবহন সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
নওগাঁ শহরের রজাকপুর ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সকাল থেকে কোনো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান ছেড়ে যায়নি। বাইরে থেকেও শহরে আসেনি।
এতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী।
শহরের বিহারী কলোনির রশিদুল আলম বলেন, ‘আমি তিন মাস হলো ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছি। আজ থেকে ধর্মঘটের কারণে কোনো ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলছে না। আমি পড়েছি মহাবিপদে।
‘দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম। পরিবারসহ বাসার সব মাল নিয়ে আমার আজ ঢাকা ফেরার কথা ছিল। এখন মনে হচ্ছে সব রেখে একাই ফিরতে হবে।’
নওগাঁ পৌর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা কাঁচা পণ্য ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করি। ধর্মঘটের কারণে কোনো পণ্য আজ পাঠাতে পারিনি। এভাবে তো আমার লস হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি সব চালু না হলে বড় ধরনের লসে পড়ে যাব।’
জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, দেশের ৮ থেকে ৯ শতাংশ চাল নওগাঁয় উৎপাদিত হয়। তিন দিন অন্য জেলায় চাল পাঠাতে না পারায় অনেক চাল ব্যবসায়ীই বিপাকে। কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
নওগাঁ জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘১৫ দফার মধ্যে আমাদের প্রধান দাবি হচ্ছে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের অগ্রিম আয়কর নেয়া যাবে না এবং এ পর্যন্ত নেয়া অগ্রিম আয়কর ফেরত দিতে হবে। সহজ শর্তে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের নিবন্ধন এবং এসব গাড়িচালকদের লাইসেন্স দিতে হবে।
‘কেন্দ্রীয় সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী মালিক ও শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট পালন করছেন। আমাদের দাবি আদায় না হলে আগামীতে আবারও ধর্মঘটের ডাক দেয়া হতে পারে।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রামের সিফায়াত উল্লাহ, বরিশালের তন্ময় তপু, সিলেটের দেবাশীষ দেবু, রাজশাহীর আহসান হাবিব অপু, রংপুরের রফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহের কামরুজ্জামান মিন্টু, সাভারের ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাতক্ষীরার রফিকুল ইসলাম শাওন, চুয়াডাঙ্গার জহির রায়হান সোহাগ ও নওগাঁর সবুজ হোসেন
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেমসহ সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের কথিত সভাপতি মাদকাসক্ত আওয়ামী দোসর আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা এই হামলা চালায়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এই হামলায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ভোরের আকাশের সাংবাদিক আমিনুর রহমান, ডিবিসি নিউজের সাংবাদিক বেলাল হোসেন, অনির্বানের সোহরাব হোসেনসহ অন্তত ৩০ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
হামলার শিকার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসক্লাবে একটি সভা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বে আলিপুর থেকে আনা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তরা আমাদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ও সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আবু সাঈদ ও আব্দুল বারী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে প্রেসক্লাব দখল করে রেখেছেন এবং তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই এভাবে হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাতক্ষীরার সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাংবাদিকরা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেট ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দাউদকান্দি পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে পৌরসভা হলরুমে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেটে সর্বমোট আয় ৪২ কোটি ৯১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ও মোট ব্যয় ৩৬ কোটি ৭৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়। পৌর প্রশাসক রেদওয়ান ইসলাম তার প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৩ শত ৩১ টাকা ও উন্নয়ন খাত থেকে ২৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৫ টাকা আহরনের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বাজেটে উদ্ধৃত্ত ধরা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৭৮ টাকা।
এছাড়াও বাজেটে খাতওয়ারী ব্যয়ের হিসেবে দেখা যায় রাজস্ব খাতে ব্যয় ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হাবিবুর রহমান,পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক শাহাদাত হোসেনসহ পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাদকাসক্ত হয়ে মাতলামি করার প্রতিবাদ করায় ইয়াছিন (৩৮) ও সিপন( ৩২) নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অপরজনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া টঙ্গীরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন মুড়াপাড়ার হাউলিপাড়া এলাকার ইদু মিয়ার ছেলে এবং সিপন টঙ্গীরঘাট এলাকার আলাউদ্দিনের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে ইয়াছিন তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে স্থানীয় সোহরাব নামের এক যুবক মাদকাসক্ত অবস্থায় তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করলে ইয়াছিন প্রতিবাদ করেন। পরে তিনি খালাতো ভাই সিপনকে নিয়ে স্থানীয় অহিদুল্লার বাড়িতে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেখানেই সোহরাব ক্ষিপ্ত হয়ে পিস্তল দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ইয়াছিনের মাথায় ও সিপনের পায়ে গুলি লাগে।
তাদের প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ইয়াছিনকে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা উদ্ধার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নোয়াখালীতে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচরতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশ গ্রহণের সমন্বিত পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে (২৫ জুন) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তৃতীয় তলায় মিনি কনফারেন্স হলরুমে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন,নোয়াখালী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়াসিন, গ্রাম আদালত নোয়াখালী ম্যানেজার আহসানুল্লাহ চৌধুরী মামুনসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ,সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি বিচারাধীন মামলার নথি থেকে এজাহারের কপি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। আদালতের নথি থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কাগজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে মামলার বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির ও আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুলকে শোকজ করেছেন বিচারক। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ঘটনাটি ঘটে গত ২২ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। ওই দিন মামলাটির (এসসি-১৬৬৯/২০১৮) সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ছিল। আদালতে আসামি, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবী—সবাই উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে বিচারক মো. সালেহুজ্জামান মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, নথিতে মামলার এজাহারের কপি নেই। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি জানান, সাক্ষ্য গ্রহণের আগে আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল তার কাছ থেকে নথি নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এজাহার দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য লিখে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবার নথি বিচারকের কাছে জমা দেন।
এরপর এজলাসেই বিচারক আইনজীবীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারাসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এজলাসে হাজির হন। একপর্যায় বিচারক ওই দুইজনকে শোকজ করে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিচারক এজলাসে ওঠার আগে আইনজীবী মামলার নথি নিয়েছিলেন। পরে ফেরত দেন। আমি নিজে নথিতে কোনো হেরফের করিনি। আইনজীবী কিংবা আইনজীবীর সহকারীর মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটতে পারে।’
অন্যদিকে, আইনজীবী আহসান হাবিব মুকুল জানান, তিনি নথি নিয়েছিলেন ঠিকই, তবে বিচারক এজলাসে চলে আসায় তা যথাযথভাবে বেঞ্চ সহকারীর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আসামির চালান কপি থেকে তথ্য নিয়েছেন। এজাহার সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ গফুর বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। একজন আইনজীবী এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি।’
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্র আরও জানায়, আদালতে থাকা মামলার মুল কপি থেকে মামলার এজাহারের কপি সরিয়ে নিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এজাহার কপি হারিয়ে গেলেও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ওই মামলার এজাহারের ফটোকপি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির কাছে সংরক্ষিত থাকে। এর বাইরেও অনেক মাধ্যমে মামলার এজাহারের কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তবে, মুল নথিতে এজাহারের কপি না থাকাটা সমীচীন নয়। এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় সূত্র।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মিজানুর রহমান রিপন (৪৮) নামের এক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে মারধর ও লাঞ্চিতের ঘটনা ঘটেছে। মিজানুর রহমান রিপন ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
গত রবিবার সন্ধার দিকে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। মিজানুর রহমান রিপন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমর সংবাদ পত্রিকার দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি নিউজ বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কাজ করে আসছেন। এঘটনায় ওই দিন রাতে ভূক্তভুগী নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এযাহার সূত্রে জানাযায়, গত ৮ জুন উপজেলার তারাগুনিয়া থানার মোড় এলাকার তারাগুনিয়া ক্লিনিকে আখি খাতুন (২২) নামের এক প্রশুতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সহ উপজেলার বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী সংবাদ প্রকাশ করে। তারি জের ধরে উপজেলা বাজারে থাকা সরকার নিষিদ্ধ ক্লিনিক বেবি নার্সিং হোম এর মালিক আহসান হাবিব কালুর ছোট ছেলে খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারে তাকে মারধর করে।
এবিষয়ে মিজানুর রহমান নামের ওই গণমাধ্যম কর্মী বলেন, গতকাল বিকেলে আমি উপজেলা বাজারে বাড়ির দৈনন্দিন বাজার করছিলাম এসময় খালিদ হাসান আর্জু উপজেলা বাজারের বেবী ক্লিনিক মালিকের ছেলে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আমাকে বলে আমার হাসপাতালে যে ডাক্তার আসে সেই ডাক্তারের নামে তুরা নিউজ করেছিস বলে আমার উপর হামলা চালিয়ে বেদড়ক মারধর করে। এঘটনার পর আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
গণমাধ্যম কর্মীকে মারধরের বিষয়ে, দৌলতপুর উপজেলার একজন প্রবীন গণমাধ্যম কর্মী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে এটি কখনই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া উচিৎ।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হুদা জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অভিযুক্ত খালিদ হাসান আর্জু
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী এলাকায় গত '২৪ এর ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) সকাল ১১ টায় ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দুর্গাপুরে হাবিব উল্যাহ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ উপলক্ষে এক আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি।
বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী এলাকায় বন্যা পরবর্তী উন্নয়নমূলক সংস্কার ও পুর্নগঠন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন। হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপণ ও পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলার হাবিব উল্যাহ খান উচ্চ বিদ্যালয় এর নবনির্মিত শাহীন ভবন উদ্বোধন এবং দুর্গাপুর সিংহনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নুরুল কোরআন ইসলামিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ছাড়া বিমান বাহিনী কর্তৃক ফেনী জেলার বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, বন্যা দুর্গতদের জন্য মেডিকেল সেবা পরিচালনা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিমান বাহিনী প্রধান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমান বাহিনী প্রধান ফেনী জেলায় ২০২৪ সালের আকস্মিক বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে বিমান বাহিনীর ভুমিকার ভূয়সী প্রসংশা করেন এবং পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সকল প্রতিষ্ঠান আর্থিক, ত্রাণ ও বিভিন্নভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিমান বাহিনীর উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশ ও জনগণের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্যার সাথে তৎকালীন বৈরী আবহাওয়া ও বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে, যা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনায় এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ভয়াবহ এ বন্যাদুর্গত কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং বিশেষ করে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলায় হেলিকপ্টার ও ইউএভি এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এরিয়াল রেকোনাইসেন্স মিশন পরিচালনা করে বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা কার্যক্রমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, সামগ্রিকভাবে বিমান বাহিনী বন্যা পরবর্তী এ পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, ধর্মীয় উপাসনালয় ও রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংস্কার কার্যক্রম ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, দূর্গাপুর, ছাগলনাইয়্যা-এ অবস্থিত হাবিব উল্যাহ্ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রমবর্ধমান ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা বিবেচনা করতঃ শাহীন ভবন নামে একটি চারতলা ভিত বিশিষ্ট দুইতলা ভবন আসবাবপত্রসহ নির্মাণ করা হয়েছে, যেটি দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকাস্থ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার।
অনুষ্ঠানে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), বিমান ঘাঁটি বাশারের এয়ার অধিনায়ক, বিমান বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ, ফেনী জেলা প্রশাসক, সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য