দেশের আকাশপথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত দুই বছর। সরকার বলছে, আকাশপথে নজরদারি ও নেভিগেশন প্রযুক্তি আধুনিকায়নে ফ্রান্স থেকে যে রাডার কেনার কথা ছিল, সেটি অল্প কিছু সময়ের মধ্যে তৈরি করবে থ্যালাস নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
এটি তৈরি প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ। এরপরেই এটি স্থাপন করা হবে দেশের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাডারের ব্যাপারে আমাদের অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে, সব কিছুই চূড়ান্ত হয়েছে। থ্যালাসের সাথে চুক্তি হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারও হয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
‘রাডার তারা তৈরি করে দেবে। আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। রাডার স্থাপন করা হবে নতুন টার্মিনালের পাশে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বছর দুয়ের সময় লাগবে। তারা এটা তৈরি করে তারপর আমাদের দেবে। এখন তৈরির কাজ প্রায় শুরুর পথে। আমরা এরই মধ্যে সবগুলো প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছি। অ্যাগ্রিমেন্ট ও প্রাইজ নেগোসিয়েশনও শেষ হয়েছে।
‘এখন শুধু তৈরি বাকি। আশা করছি, দুই বছরের মধ্যে এটি তৈরি শেষ হবে। ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে এটি এখানে স্থাপন করা হবে বলে আমরা আশা করছি।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে রাডার রয়েছে, এটি কার্যক্ষমতা হারিয়েছে অনেক আগে। প্রায় ৩০ বছর আগে স্থাপন করা এ রাডার দিয়ে আকাশপথে নজরদারি চালাতে হিমশিম খেতে হয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাকে। তার ওপর সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরে নতুন নিয়ন্ত্রণে আসা বিস্তীর্ণ এলাকা এর আওতার বাইরে থাকায় সে এলাকায় কোনো আকাশযান উড়ে গেলে তা জানতে পারছে না বাংলাদেশ। এতে আকাশপথের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা দেশের আকাশসীমায় কোনো আকাশযান চলাচল করলে তা থেকে রাজস্বও আদায় করতে পারছে না সরকার। এসব এলাকায় রাডার কাভারেজ দিয়ে আয় করছে ভারত ও মিয়ানমার। ফলে বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, পুরনো রাডার দিয়ে সব ক্ষেত্রে সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এভিয়েশন অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন যে রাডারটা আছে, এটা অত্যন্ত পুরনো। বারবার মেরামত করে এটি চালানো হচ্ছিল। আরও অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর আগেই এটা পরিবর্তন করা প্রয়োজন ছিল।
‘নতুন রাডারের সাথে নতুন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলও আসবে। এটি হলে এয়ারলাইন্সগুলোর সেবা প্রাপ্তি আরও সহজ ও নিরাপদ হবে।’
সারাবিশ্বে এখন ড্রোন দিয়ে অন্য দেশের উপর নজরদারির প্রবণতা বাড়ছে। শাহজালালে থাকা রাডারটি পুরাতন প্রযুক্তির হওয়ায় দেশের আকাশসীমায় নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া কোনো আকাশযান বা ড্রোন সনাক্ত করা যাচ্ছে না। এতে দেশের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন রাডার কাজ শুরু করলে এ সংকট আর থাকবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
তিনি বলেন, ‘এটা এলে আমাদের টেরিটোরিয়াল ওভারফ্লাইং চার্জ আমরা আরোপ করতে পারব। আমাদের টেরিটরির বাইরের অনেক অংশেও আমরা নজরদারি চালাতে পারব। রাডারের যে কাজ, বিশেষ করে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নেভিগেশন দেয়া, সেটিতেও আধুনিকায়ন আসবে।
‘ড্রোন দিয়ে যদি কেউ আমাদের এখানে নজরদারি চালাতে চায় বা অনুনোমোদিত ড্রোন ঢুকে পড়ে, সেগুলো এখানে ধরা পড়বে। আকাশপথের নিরাপত্তা ও ঝুঁকির সব ক্ষেত্রে আমরা পূর্ণ নজরদারি চালাতে পারব। ড্রোনের চেয়ে ক্ষুদ্র কিছু দিয়ে নজরদারি চালালেও আমরা এটি সনাক্ত করতে পারব।’
এর আগেও একবার রাডার প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল বেবিচক। ২০১২ সালে সরকারি-বেসরকারি মালিকানার ভিত্তিতে রাডার প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। অনুমোদনের পর ২০১৫ সালে দরপত্রও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় বাতিল হয়ে যায় সে উদ্যোগ।
আরও পড়ুন:টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটির পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ ও জেলার আইকন খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি টানা ১৫ দিন ধরে পানির নিচে ডুবে রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুর উপর চলাচল নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক সেতুতে উঠতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরছেন।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন জানিয়েছেন, গত ৩০ জুলাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে সেতুটি পানিতে তলিয়ে যায়। বুধবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত সেতুর পাটাতন ৬ ইঞ্চি পানির নিচে রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি আরও ছাড়া হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেতুটি পানির উপরে উঠে আসতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুতে পর্যটক কম থাকায় একপাশে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে পর্যটন বোটগুলো। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন বোটচালকরা। তবে সেতুতে উঠতে না পারলেও অনেকে সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন এবং বোটে করে আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আগত পর্যটকরা।
রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রুবিনা ও মাসুদ রানা বলেন, “অনেক দূর থেকে সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু উঠতে না পারায় খারাপ লাগছে। তবে রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রাহুল বলেন, “ছবি ও টিভিতে দেখা এই সেতুটি দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সম্ভব হলো না, যদিও এটা প্রাকৃতিক ঘটনা, তাই কিছু করার নেই।”
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হ্রদের পানি উচ্চতা ১০৭.০৭ ফুট মিনস সি লেভেল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল রয়েছে এবং সর্বোচ্চ ২২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে সিএইচটি ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, “সেতুটি নির্মাণের সময় পানির উচ্চতা বিবেচনা না করায় বর্ষায় প্রতি বছরই ডুবে যায়। এতে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও কোনো সংস্কার হয়নি। নতুন বা আধুনিক সেতু নির্মাণে পর্যটন করপোরেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদ এগিয়ে আসা উচিত।”
পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “সেতুটি ৪০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। আধুনিক সেতু নির্মাণের জন্য উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে পর্যটকদের জন্য উন্নত মানের ঝুলন্ত সেতু তৈরি করা হবে।”
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কাপ্তাই হ্রদের উপর এই আইকনিক ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে, যা রাঙামাটির পর্যটনের অন্যতম প্রতীক।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত সবুজ শিল্পায়নের পথে আরেকটি গৌরবোজ্জ্বল মাইলফলক স্পর্শ করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএসজিবিসি থেকে লিড সনদ পেয়েছে দেশের আরও পাঁচটি কারখানা।
এ নিয়ে দেশে মোট লিড সার্টিফায়েড কারখানার সংখ্যা দাঁড়াল ২৫৮টি, যার মধ্যে ১০৯টি প্লাটিনাম ও ১৩৩টি গোল্ড সনদপ্রাপ্ত কারখানা। এ অর্জনের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
নতুন যে পাঁচটি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে, সেগুলো হলো- ১. ঢাকার আশুলিয়ায় অবস্থিত সাউথ অ্যান্ড সুয়েটার কোং লিমিটেড, যা ৮৫ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে, ২. সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে অবস্থিত পুরবাণী ফ্যাশন লিমিটেড, যা ৮৩ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে, ৩. চট্টগ্রামের কেডিএস ফ্যাশন লিমিটেড, যা ৮৪ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে, ৪. ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রাইদা কালেকশন, যা সবচেয়ে বেশি ৯০ পয়েন্ট পেয়ে প্লাটিনাম সনদ অর্জন করেছে, ৫. গাজীপুরে অবস্থিত টেক্সইউরোপ বিডি লিমিটেড, যা ৭০ পয়েন্ট পেয়ে গোল্ড সনদ অর্জন করেছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত শীর্ষ ১০০টি লিড সার্টিফায়েড ভবনের মধ্যে ৬৮টিই এখন বাংলাদেশে, যা বৈশ্বিক অঙ্গনে দেশের অসাধারণ সবুজ পারফরম্যান্সের প্রতিফলন।
এই অর্জন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, শিল্পের এই অর্জন এমন সময়ে এসেছে, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের চাপ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসার ধারাবাহিকতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তবুও উদ্যোক্তারা টেকসই অবকাঠামো ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছেন, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ও স্থিতিশীলতার প্রমাণ।
তিনি বলেন, প্রতিটি লিড-সনদপ্রাপ্ত কারখানা কেবল একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিচ্ছবি। এমন নেতৃত্ব ও অগ্রযাত্রা আমাদের শুধু আশাবাদীই করে না, বরং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে টেকসই শিল্পের রোল মডেল হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে, কিন্তু এই পদক্ষেপটি আমরা গত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, গত সরকারের সময়ে প্রকাশিত জিডিপি, ব্যক্তিগত আয়, মাতৃস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাস্তবিক অর্থে,স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
উপদেষ্টা আজ বুধবার (১৩ আগষ্ট) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) কনফারেন্স রুমে নাগরিক উদ্যোগ ও পিপলস হেলথ মুভমেন্ট আয়োজিত "বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সতর্ক পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন"- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরিসংখ্যান বহন করলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা গ্রহণের সময় আসবে, এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তা অনুযায়ী নিয়ম মেনে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে শুল্ক ও জিএসপি সুবিধার প্রভাব কোথায় বৃদ্ধি পাবে এবং কোথায় হ্রাস পাবে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় গবাদিপশুর বাজারে প্রভাব পড়বে এবং লাখ লাখ খামারি, বিশেষ করে গরীব মহিলারা যারা গরু লালন-পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে অবদান রাখছেন, তাদের ক্ষতি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে মাংস আমদানি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। কারণ, আমদানি করা মাংসের মাধ্যমে জুনোটিক রোগ প্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, সাগরের সি উইড ও কুচিয়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি হ্রাস করতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জেনেভা ভিত্তিক লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও সিনিয়র রিসার্চার সানিয়া রিড স্মিথ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ মাসুদ, অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের কো-অর্ডিনেটর বারাকাত উল্লাহ মারুফ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ফোনালাপে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের আগে তাদের মধ্যে এই ফোনালাপটি হলো।
বুধবার পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে সিউল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, মঙ্গলবার পুতিন ও কিম ‘উষ্ণ সহযোদ্ধাসুলভ পরিবেশে’ ফোনে কথা বলেছেন এবং ‘ভবিষ্যতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের দৃঢ় ইচ্ছা’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
কেসিএনএ আরও জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে পুতিন ‘কুরস্ককে মুক্ত করতে কোরিয়ান পিপলস আর্মির সেনাদের আত্মত্যাগী মনোভাবের’ প্রশংসা করেছেন।
জবাবে কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া ‘ভবিষ্যতেও রাশিয়ার নেতৃত্বে নেওয়া সব পদক্ষেপকে পুরোপুরি সমর্থন করবে।’
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, ‘পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন আলোচনা প্রসঙ্গে কিম জং উনকে তথ্য দিয়েছেন।’
ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প শুক্রবার আলাস্কায় তাদের বৈঠকে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য চাপ দেবেন।
সিউলে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ইয়াং মু-জিন এএফপিকে বলেন, দুই নেতার ফোনালাপ জনসমক্ষে আনার অর্থ হলো ‘দেশি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শন করা।’
ইয়াং আরও বলেন, যদি ট্রাম্প ও পুতিন ইউক্রেন শান্তি চুক্তিতে সম্মত হন, তবে ‘ট্রাম্পের উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত আগ্রহের বিষয়ে কিমের মনোভাব পুতিন ট্রাম্পকে জানাতে পারেন। এর মধ্যে শর্তসাপেক্ষ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের বিষয়ও থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা গতি পায়, তবে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া এবং দুই কোরিয়ার মধ্যকার সংলাপেও পড়তে পারে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে পিয়ংইয়ং সেনা ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
গত বছর পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরের সময় দুই দেশ একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে।
উত্তর কোরিয়া এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করে যে তারা রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ইউক্রেনে তাদের একটি সৈন্যদল পাঠিয়েছে।
তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও সক্রিয় হয়ে অপতথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নীতি, উন্নয়ন কর্মসূচি ও সাফল্যের প্রচারে তথ্য অধিদপ্তর প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই দায়িত্ব নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে।
বুধবার তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘তথ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম অধিকতর দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে’ আয়োজিত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর।
তথ্য সচিব বলেন, সরকার যেসব জনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে, সেগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সরকারের বার্তা জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেন, তারাই প্রথম চালিকাশক্তি। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা সময়ের দাবী।
বর্তমানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অপতথ্য ও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন মাহবুবা ফারজানা। তিনি বলেন, অপতথ্যের বিরুদ্ধে আপনাদেরই দক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত প্রচার করতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, শিক্ষিত ও দক্ষ। অপতথ্য ছড়ানো গোষ্ঠী ছোট এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা অশিক্ষিত বা সরকারের কাজ সম্পর্কে অবগত নয়। সে তুলনায় আপনারা অনেক বেশি যোগ্য।
তথ্য সচিব বলেন, নিউজ ও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তনের দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে। এজন্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট, ছোট ভিডিও, লাইভ কভারেজ এবং সময়োপযোগী গল্প বলার কৌশল প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মাহবুবা ফারজানা বলেন, আপনারা ইয়াং স্টার। আপনারা অবশ্যই পারবেন। প্রচার-প্রচারণার মান উন্নয়ন করুন। লেখার মান, বলার মান উন্নত করুন। প্রতিটি সংবাদ যেন সরকারের সাফল্যের জীবন্ত চিত্র হয়।
তথ্য সচিব আরও বলেন, সংবাদ শুধু নয়, তথ্য হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি। সত্যনিষ্ঠ খবর প্রচার করতে হবে। তথ্যের মাধ্যমে আস্থা গড়ে তুলেই বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চাই।
মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটির গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা চালুর সম্ভাবনা রয়েছে, যা হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েটকে সমৃদ্ধ অর্থনীতির এই দেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কুয়ালালামপুরে ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ায়, মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আবদুল কাদিরের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি উত্থাপন করেন।
‘মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নীতিগতভাবে তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে নীতি কার্যকর হওয়ার আগে উভয় পক্ষকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে,’ বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। অন্য দেশের শিক্ষার্থীরা যেখানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশের সুযোগ পায়, সেখানে এতদিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল।
এর আগে বুধবার, মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রী ফাদলিনা বিনতি সিদেক কুয়ালালামপুরের একটি হোটেলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানোসহ শিক্ষায় সহযোগিতা জোরদারের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময় কর্মসূচি সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাংলাদেশের ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও চেয়েছে।
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের ‘থ্রি জিরো’ প্রচারণায় গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন, যার লক্ষ্য বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা।
‘আপনি যদি দারিদ্র্যহীন পৃথিবী কল্পনা না করেন, তবে তা হবে না,’ মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি আত্মবিধ্বংসী নয় এমন একটি সভ্যতা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট)। এ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয় এবং মসজিদে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আগামী শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মন্তব্য