পণ্য সরবরাহের পর তা বিক্রি করলেও মার্চেন্টকে টাকা পরিশোধ না করার মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
অর্থ আত্মসাতের একই মামলায় আরেক আসামি ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের রিমান্ড আবেদন করলেও তা নাকচ করেছে আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর আদালতের হাকিম মো. হাসিবুল হক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
ইভ্যালির মার্চেন্ট ও মামলার বাদী মো. কামরুল ইসলাম চকদার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় ১৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন।
এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকার মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালত গুলশান থানার মামলায় রাসেলের তিন দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছিলেন। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে অন্য মামলায় এই রিমান্ড দিল আদালত।
ধানমন্ডি থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. এশারত আলী জানান, ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনসহ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হুদা।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক হাসিবুল হক রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল ও সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, ‘আসামি রাসেল ও শামীমা অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে লাখ লাখ গ্রাহককে ঠকিয়ে শত শত কোটি টাকা লুট করেছেন। তারা চারটি কোম্পানির নামে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৪২ টাকা ৫০ পয়সা আত্মসাৎ করেছেন।
‘সেসব টাকা কোথায় রেখেছেন এবং এর সঙ্গে আর কারা জড়িত, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার তদন্তের স্বার্থে তথ্য জানা প্রয়োজন। তাই তাদের সাত দিন করে রিমান্ডের প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, এই মামলায় ১২ জন আসামির মধ্যে প্রথম দুজন গ্রেপ্তার আছে, আমরা তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ প্রার্থনা করছি। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছেন।’
আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার এম মনিরুজ্জামান আসাদ শুনানিতে বলেন, ‘আসামিকে রিমান্ড দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নাই। আমরা কোনো গ্রাহকের পণ্য দিতে অস্বীকার করিনি, বৈশ্বিক অতিমারির কারণে কিছু হেরফের হয়েছে, কিন্তু তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মাল অথবা টাকা আমরা ফেরত দেব। কিন্তু তার জন্য আমাদের জামিনে মুক্ত করতে হবে। আমাসিকে অহেতুক রিমান্ডে না পাঠানোর অনুরোধ করছি।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রাসেলকে এক দিনের রিমান্ড দিলেও ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইভ্যালির এমডি রাসেলের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান শেষে বিকেলে এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর খাদ্য, পানি, বাসস্থান এবং জরুরি চিকিৎসার অভাবে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশটির এই মানবিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত মর্মাহত।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে ভূমিকম্পে সৃষ্ট আকস্মিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আফগান জনগণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সকাল ৮টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমান জরুরি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে কাবুলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
শুক্রবার ১১.২২৭ টন ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে তাঁবু, কম্বল, শীতবস্ত্র, খাবার পানি, শুকনো খাবার, কাপড়, বিস্কুট, মিল্ক পাউডার, নুডলস ও ওষুধ। এসব ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর শেষে বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমানটি আজই দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অপারেশন ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলীমুল আমীন বিমানটি বাংলাদেশ ত্যাগের পূর্বে এ উপলক্ষ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন। সেসময় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বাস করে, সরকারের পাঠানো এই মানবিক সহায়তা আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সহায়ক হবে। আগামী দিনগুলোতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বৈশ্বিক যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আত্মনিয়োগের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭মিনিটে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ৬.০ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ হাজার ২০৫ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৬৪০ জন আহত হন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি।
অনলাইনে চাকরির প্রলোভন ও টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা চালানো সংঘবদ্ধ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা আকাশ (২২), রাশাদ (২৮) এবং তাদের সহযোগী আসাদ (৩০)।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন অপারেশনের একটি টিম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও অনলাইন গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে রাজধানীর ধানমন্ডি, ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
সিআইডির তদন্তে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ভুয়া খণ্ডকালীন চাকরি ও বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে স্বল্প সময়ে কয়েকগুণ মুনাফার প্রলোভন দেখাতো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এ চক্রের সঙ্গে দেশি বিদেশি আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং ছদ্মনামে ব্যবহৃত বিভিন্ন সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে এ প্রতারণা চক্রের মূল রহস্য উন্মোচন করা হবে। জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর, বি যৌথভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কারিগরি সহায়তায় ‘বাংলাদেশে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার ভূমিকা: ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এই মতামত তুলে ধরেন। গত ১ ও ৪ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় জানানো হয়, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের গুরুতর অসুস্থতা এবং প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে ১৯টি হাসপাতালে পরিচালিত সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে হাসপাতালে জ্বর ও কাশির লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন, যা পূর্ববর্তী কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে (গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা) ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী- ৬০ বছরের বেশি বয়সি প্রবীণ, ৫ বছরের নিচে শিশু, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্র ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টিকা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। যাতে মৌসুম শুরু হওয়ার আগে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য প্রতি বছর নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা প্রদানকে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জোর দিলেও বাংলাদেশে এই টিকা গ্রহণের হার সচেতনতার অভাব, নীতি নির্ধারণের ঘাটতি এবং প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন চ্যালঞ্জের কারণে এখনো অনেক কম।
কর্মশালার প্রথম দিনে ইন্টার্নাল মেডিসিন, শিশু, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি ও শ্বাসতন্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আলোচনা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে নিয়মিত ক্লিনিক্যাল সেবার অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল প্রণয়ন।
দ্বিতীয় দিনে আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণের ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ সর্বাধিক হয় এবং সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অসুস্থতা ও মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।
তিনি বলেন, এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকাদান বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর এবং খরচ সাশ্রয়ী। প্রফেসর তাহমিনা শিরিন টিকা প্রদানের সময়ের ওপর জোর দিয়ে বলেন, মৌসুমের আগে সর্বাধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টিকা প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বড় প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে টিকার অপ্রাপ্যতা ও উচ্চ মূল্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা, সচেতনতার ঘাটতি, কোল্ড চেইন ও সংরক্ষণ সমস্যা এবং জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার অভাব। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো হলো- গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় উপাত্ত প্রকাশ, টিকার সহজলভ্যতা বাড়ানো ও দাম কমানো, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা কর্মসূচি, বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সমাজের মাধ্যমে প্রচারণা, এবং চিকিৎসার জাতীয় গাইডলাইনে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার অন্তর্ভুক্তি।
আইসিডিডিআর, বির গবেষক ডা. মো. জাকিউল হাসান জানান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা সাধারণ মানুষের তুলনায় চারগুণ বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে তাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের হার এখনো উদ্বেগজনকভাবে কম।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন, ডা. ফেরদৌসী কাদরী, ডা. কে. জামান, প্রফেসর ডা. চৌধুরী আলী কাওসার এবং প্রফেসর ডা. ফারহাদ হোসেন। আলোচনার সঞ্চালনা করেন প্রফেসর ডা. মাহমুদুর রহমান ও ডা. উইলিয়াম ডেভিস।
প্যানেল আলোচকরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোর দেন। তারা বলেন, টিকা সবসময় বিনা মূল্যে দিতে হবে- এটি ভবিষ্যতে টিকাদান কার্যক্রমকে টেকসই রাখতে প্রয়োজন। এছাড়া জনগণ ও চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি, যাতে গ্রহণযোগ্যতা ও টিকা প্রদানের হার বৃদ্ধি পায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য উইংয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী এবং ইউএস সিডিসির কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. দিমিত্রি প্রিবিলস্কি।
ডা. ওসমানী কর্মশালার সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
প্রফেসর প্রিবিলস্কি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রাদুর্ভাব শনাক্তকরণ, সময়মতো অবহিতকরণ ও সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় টিকা কার্যক্রম সফল করার মূল চাবিকাঠি।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাসরিন আক্তার।
ইউএনওর এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগের ফলে আনন্দের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসে অধ্যয়ন করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
শুধু তাই নয়, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় স্কুলমুখী করতে মিড ডে মিল, শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ নানা আয়োজন করেন তিনি। এতে অভিভাবক ও স্থানীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ইউএনও নাসরিন ডাক্তারের উদ্যোগে গান্ধী আশ্রমের অর্থায়নে সোনাইমুড়ী উপজেলা ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু করা হয়। উপজেলার শিলমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেওটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিড-ডে মিল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আকতার।
গত ১৯আগস্ট সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অসহায় দারিদ্র্য ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন তিনি। নওয়াবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০০জন ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স ও জ্যামিতির বক্স বিতরণ করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় একইদিন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। সোনাইমুড়ী উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমিতে গত ১৯শে আগস্ট ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ উদ্বোধন করা হয়। উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্রিকেট সেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ক্যারামবোর্ড, দাবাসহ ও টেবিল টেনিসসহ ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার।
সোনাইমুড়ীর প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিড ডে মিল চালু হওয়ায় শিক্ষকরা আনন্দিত। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলমুখী হবে। না খেয়ে অনেক দরিদ্র্য শিক্ষার্থী স্কুলে চলে আসে। স্কুলে খাবার পাবে এ আশায় উপস্থিতি বেড়েছে। নতুন শিক্ষা উপকরণ পেয়েও তারা আনন্দিত। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
সোনাইমুড়ী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন জানান, এ ধরনের উদ্যোগ ব্যতিক্রমী। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে এ ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এলাকার অসহায় ও হতদরিদ্ররা স্কুলে আসছে। এতে উপস্থিতিও বাড়ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, বিদ্যালয় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কম দেখে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি এই এলাকার অন্যান্য স্কুলেও এ ধরনের কার্যক্রম চালু করবেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দুই এলাকা দুটি ব্রিজ ভেঙে দীর্ঘদিন ধরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার ছাপেরবন্ধ খালের ব্রিজ ও সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও এলাকা ব্রিজটি ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে এলাকাবাসী, পর্যটকরা, হাসপাতালের রোগীসহ সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকাবাসী ব্রিজ দুটি পুনর্নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২০১৪ সালে সিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় সোনারগাঁও পৌরসভার চৈতী কম্পোজিট লিমিটেড থেকে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ২নং ফটক রাস্তা টেন্ডার দেওয়া হয়। এছাড়া টিপরদী মধুমতি ফিলিং স্টেশন থেকে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ১নং ফটক পর্যন্ত রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ ও একটি সেতু নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই টেন্ডারে ছাপেরবন্ধ খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও এ ব্রিজটি টেন্ডার প্রক্রিয়া আওতায় আনা হয়নি।
ফলে দীর্ঘ ১০ বছরেও এ ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে এ ব্রিজের মাঝে গর্ত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অংশে সিমেন্ট-সুরকি দিয়ে ঢেকে দেয়। গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে ব্রিজের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে পৌর কর্তৃপক্ষ গত এক সপ্তাহ ধরে বাঁশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। বিকল্প পথে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পর্যটন নগরীর পানাম, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আসা দর্শনার্থী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের আসা জনসাধারণ ভোগান্তিতে পড়ছেন।
অপরদিকে সাদিপুর ইউনিয়নের কাজিপাড়া-আমগাঁও খালের ওপর নির্মিত বরগাঁও এলাকার ব্রিজ ভেঙে দীর্ঘদিন যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়রা।
এলাকাবাসীর দাবি, বরগাঁও এলাকায় খালের ওপর প্রায় ৫০ বছর আগে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে তা ভেঙে যায়। ব্রিজের রেলিং-পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে এ সড়কে চলাচলরত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিল্প-কারখানার শ্রমিকসহ প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। ২ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সাদিপুরের দবির উদ্দিন ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, বরগাঁও এলাকার ব্রিজটির মধ্যঅংশ ভেঙে যাওয়ার কারণে স্কুলে আসা-যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তা ছাড়া এ ব্রিজের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের দাবি করেন।
সোনারগাঁও পৌরসভার গোয়ালদী গ্রামের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে ছাপেরবন্ধ এলাকার ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রুত এ ব্রিজটি নির্মাণ করে পর্যটক, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবের দাবি জানিয়েছেন।
সোনারগাঁও পৌরসভার আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান খাঁন জানান, ‘১০ বছরেও ব্রিজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানের এ এলাকার মানুষ অনেক পথ ঘুরে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। সোনারগাঁও পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ জানান, ‘ছাপেরবন্ধ ব্রিজটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। এ খালে নতুন ব্রিজ নির্মাণের টাকা তাদের ফান্ডে নেই বলে দাবি করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সোনারগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন চৌধুরী বলেন, বরগাঁও এলাকার ব্রিজটি ভেঙে যান চলাচল বন্ধ থাকার খবর পেয়ে সেখানে সহকারী প্রকৌশলীদের পাঠানো হয়েছে। আশা করি ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করা হবে।
আজ সেই মহিমান্বিত দিন। সারা জাহানের মুসলমানদের জন্য অতি আনন্দ আর রহমতের দিন। দোজাহানের শান্তি ও কল্যাণের দূত নবীকুল শিরোমণি , আখেরি জমানার শেষ নবী, হাবিব এ খোদা, মহানবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীর বুকে আগমণ ও ইন্তেকালের অবিস্মরণীয় দিন ১২ রবিউল আউয়াল। মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদা আর গুরুত্ববহ, সব ঈদের সেরা ঈদ ‘ঈদ এ মিলাদুন নবী’ বা নবী দিবসের আনন্দের দিন।
দিনটি শুধু মুসলমানদের কাছে নয়, সমস্ত পৃথিবীর মানবজাতির কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির দূত হিসেবে মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত স্বরূপ তিনি ধরা পৃষ্টে অবতীর্ণ হন। মহান আল্লাহ সব নবীদের উদ্দেশ্য যাকে আল্লাহর রহমত বা রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তার শান আর কুদরতকে সবার সমগ্র মানবজাতির পথ প্রদর্শক ও পরকালীন মুক্তির জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে খোদার পক্ষ থেকে স্বীকৃত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ।
আজ সেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব, দোজাহানের শান্তি ও মুক্তির কান্ডারি হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তিথিতে সমস্ত প্রকৃতি ও মানব সমাজ যেন সমস্বরে গাইছে:
ইয়ানবী সালামু আলাইকা
ইয়া রাসুল সালামু আলাইকা
ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা
সালাওয়া তুল্লা আলাইকা।
অনেকগুলো কারণেই নবীজির জন্মদিনটি তামাম পৃথিবীতে, সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি মহিমান্বিত দিন।
হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা আমেনার কোল আলোকিত করে যখন আরবের ধূসর মরুভূমিতে শান্তির বারি হয়ে ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট, সোমবার, চন্দ্রমাসের ১২ রবিউল আউয়ালে জন্ম গ্রহণ করেন তখন সমগ্র আরব দেশ ও আরব জাতি ছিল জঘন্য বর্বরতা আর পাপাচারে নির্মগ্ন। পৃথিবীর ইতিহাসের ওই সময়টাকে বলা হতো- আইয়ামে জাহেলিয়া বা অন্ধকার যুগ। গোত্র বিদ্বেষ, বর্ণবিরোধ, হানাহানি, খুনখারাপি, কন্যা শিশু হত্যা, ব্যাভিচার, পরস্পরের প্রতি সম্মান, সহানুভূতি, মানবতা প্রদর্শন না করা ছিল নৈমিত্তিক কাণ্ড। বিশেষত পোত্তলিকতা আর নারীবিদ্বেষ ছিল চরম পর্যায়ের। তারা পূর্ববর্তী নবীদের দেখানো পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে একেশ্বরবাদীতার স্থলে বহু ঈশ্বর বাদীতায় লিপ্ত হয়ে পরকাল ভুলে গিয়ে ছিল। খোদার শাস্তির কথা মনে না রাখায় কঠিন কঠিন পাপের বোঝায় তারা লিপ্ত হয়ে যায়। আরব ও বিশ্ববাসীর এমন এক পঙ্কিল সময়ে বিশ্বমানবতা আর পরকালের মুক্তির দূত হিসেবে মহান রাব্বুল আলামিন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন মা আমেনার কোলে সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর রহমত ও হেদায়েত হিসেবে। আলহামদুলিল্লাহ। একটা অন্ধকার যুগে আলোর প্রদীপ হয়ে জন্ম নেয়া এই মহা মানবের আবির্ভাবের দিনটি তাই সমগ মুসলিম জাহানে সব চেয়ে আনন্দের দিন। ঈদ এ মিলাদুন নবী।
যার আগমন ঘিরে এমন একটি শুভ ও আনন্দময় দিন আমরা পেলাম আজ সেই মহা মানবের জীবনী নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমার প্রিয় নেতা। কেননা তিনি আইয়ামে জাহেলিয়ার সেই অন্ধকার যুগে এসেও আরবের বুকে সত্যের আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে সকল অন্ধকার দূর করেছেন। যখন মানবসমাজ এক চরম অধঃপতনে পৌঁছেছিল, তখন তিনি মুক্তির দ্যূত হয়ে এ ধরাধামে আগমন করেছিলেন। মানব কল্যাণে তার অবদান অতুলনীয়।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট সোমবার সুবহে সাদেকের সময় পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের কুল শ্রেষ্ঠ হাশেমী গোত্রে তার জন্ম।
আদর্শ সমাজ সংস্কারক নেতা মহানবী (সা.):
মানব সভ্যতার ইতিহাসে মহানবী (সা.) বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নেতা ও আদর্শ সমাজ সংস্কারক তা সর্বজনস্বীকৃত। একটি অধঃপতিত আরব জাতিকে সুসভ্য জাতিতে পরিণত করার বিরল কৃতিত্ব কেবল তারই।
জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত আরব সমাজকে তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানামুখী সংস্কারের মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজে পরিণত করতে সক্ষম হন। একটি আদর্শ সমাজ নির্মাণে মহানবী (সা.) যেসব গুণ অর্জন ও সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন তা নিচে উপস্থাপন করা হলো:
আল আমীন উপাধি লাভ:
একজন আদর্শ নেতার প্রধান গুণ সততা। আর ছোটকাল থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ গুণের অধিকারী ছিলেন। সততা, মহত্ত্ব, ন্যায়পরায়ণতা ও বিশ্বস্ততার কারণে আরববাসী তাকে ‘আল আমীন’ বলে ডাকত।
মদিনায় হিজরত:
কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে, তখন মহানবী (সা.) আল্লাহর নির্দেশে স্বদেশ ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। ফলে ইসলাম প্রচারে যোগ হয় নতুন মাত্রা। শুরু হয় মহানবী (সা.)-এর মাদানী জীবন।
রাজনীতিবিদ:
মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সেরা রাজনীতিবিদ। বিশৃঙ্খলাপূর্ণ আরব সমাজে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কার সাধন করেন। মদিনায় রাষ্ট্র গঠন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, মদিনা সনদ, হোদায়বিয়ার সন্ধি প্রভৃতি তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
কয়েকটি যুদ্ধ:
মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশরা শঙ্কিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠন ও মুসলমানদের আধিপত্য বিস্তার প্রতিরোধকল্পে বিধর্মীরা ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর জীবন অনেক বৈচিত্রময়। যেমন পূর্ণময় আর পবিত্র তেমনি অমানবিক কষ্ট আর লাঞ্ছনার। নবুয়ত্ব লাভের পর থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও প্রসারের জন্য নবীজির প্রাণান্তর প্রচেষ্টা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তিনি নবুয়ত প্রাপ্তির আগ থেকেই যেমন ছিলেন নিষ্পাপ, বিশ্বাসী আর ঈমানদার। নবুয়ত প্রাপ্তির পর সেটা আরও বেড়ে যায়। মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের বিশ্বাস আর পরকালের আজাবের প্রতি ভিতি তৈরির কাজটা ওই কাফের আর জাহেলিয়াত যুগে খুব সহজ ছিল না। নিজের এবং সাহাবীদের জীবন বাজী রেখে তাকে ইসলাম প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হয়েছে। সে জন্য শারীরিক ও মানসিক আঘাতের কোনো কমতি ছিল না। সব সহ্য করে নবীজি ইসলামকে আরব মরুভূমিতে সভ্যতার , মানবতা আর পরকালের মুক্তির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তার এই ত্যাগ আর আলোকিত জীবনকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখতে পৃথিবীতে এই দিনটিকে মুসলমানরা বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করে। এই উপলক্ষে দোয়া-দরুদ, মিলাদ মাহফিল, নফল রোজা রাখার পাশাপাশি আনন্দ মিছিল বা জসনে জুলুসে বের হয়। এই ধরনের উদযাপন নিয়ে মুসলমানদের মাঝে তাই মত-বিরোধও ইদানীং লক্ষণীয়। কারণ, নবী সাহাবা বা খেলাফত যুগে দিবসটি এভাবে পালিত হতো না। তখন সোমবার দিন বা ১২ রবিউল আউয়ালে নবীজির মতো রোজা রাখা হতো। আর ছিল দোয়া-দরুদ। সালাম। কিন্তু ১২০০ শতাব্দীর পর থেকে মিসর ও তুরস্ক ও কিছু আরব ভূমিতে দিনটিকে ঈদের মর্যাদা দিয়ে উদযাপন শুরু হয়। কাল ক্রমে এটি অন্যান্য মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দ মিছিল বা জসনে জুলুস বের করার প্রবণতা এখন বাংলাদেশসহ পাকিস্তান, ভারত, আফগান, ইরান, ইরাকসহ অনেক মুসলিম দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যার সঙ্গে দ্বিমত করছেন বহু আলেম ও স্কলারস। তাদের বক্তব্য হচ্ছে নবীজি যা করেননি বা করতে বলেননি তা ইসলামে জায়েজ নয়। ইসলামে বহু নবী-রাসুলের আগমন ঘটেছে কিন্তু কারোরই জন্মদিন পালনের নজীর নেই।
অন্যপক্ষ মনে করেন ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার নবীজির তিরোধান দিবসও বটে। পৃথিবীকে পূর্ণতার আলোয় ভরিয়ে দিতে যে নবীজি এলেন সেই নবী সমগ্র মানবজাতিকে এতিম করে, কাঁদিয়ে যেদিন চির বিদায় নিলেন সেই দিনটি আনন্দের হয় কী করে?
সে যাক আমরা কোনো তর্কে না গিয়ে বলতে পারি যে প্রক্রিয়ায় নবীজিকে উপযুক্ত মর্যাদা আর শান্তির প্রতীক হিসেবে সবার শীর্ষে আসীন রাখা যায় আমাদের সেই পথটাই অনুসরণ করতে হবে। এমন কিছুতেই উৎসাহিত করা ঠিক না যা নবীর মেহনত ও ইসলামের মর্যাদাকে খাটো করতে পারে।
আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে যে, বড় সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, মানবাধিকারের প্রবক্তা বিশ্বে আর দ্বিতীয় কেউ নেই। এ জন্য বিশ্বের বরেণ্য ব্যক্তিরাও একথা স্বীকার করেছেন, রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মানুষ। বর্তমানেও তার এ নীতি অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল পৃথিবীর যেকোনো সমাজকে আদর্শ সমাজে পরিণত করা সম্ভব।
আমরা সব সময় বলি:
‘তুমি না এলে দুনিয়ায়, আঁধারে ডুবত সবি।’ মহান আল্লাহ আমাদের সেই প্রিয় নবীর সঠিক মর্যাদা আর ইসলামকে সমুন্বত রাখার তৈফিক দিন। আমিন।
পরিশেষে দরুদ সেই পবিত্র স্বত্বার নবী মোহাম্মদের প্রতি:
বালাগাল উলা বি কামালিহি
কাসা ফাদ্দুজা বি জামালিহি
হাসানাত জামিয়্যু খেছালিহি
সাল্লা আলাইহি ওয়া আলিহি।
লেখক: কবি ও কলামিস্ট।
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার বরুরিয়া গ্রামের হত দরিদ্র কৃষক মো. বাদশা শেখের পুত্র মো. আরশাদুল শেখ (১৪), খানিকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক কিশোরকে অপহরণের দেড় বছর পর উদ্ধার করে তার পিতামাতার কাছে ফিরিয়ে দিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাগুরা আর্মি ক্যাম্প।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাগুরা সদর উপজেলার বেরোইল-পলিতা গ্রামের বাসিন্দা মো. লিটন শেখ আরশাদুলকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে ফরিদপুরে নিয়ে যায়। সেখানে সে আরশাদুলকে নিজের সন্তান পরিচয়ে একটি মৎস্য খামারে কাজে লাগায় এবং তার বেতন নিজেই ভোগ করে।
পরে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে লিটন শেখ আবারও আরশাদুলকে মাগুরা সদরে নিয়ে আসে এবং একটি পোল্ট্রি ফার্মে কাজে লাগায়। এখানেও সে ছেলেটিকে নিজের সন্তান পরিচয় দেয়।
অসহায় বাবা-মা সন্তানের খোঁজ না পেয়ে হতাশার মধ্যে ছিলেন। অবশেষে চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষের দিকে তারা জানতে পারেন, তাদের সন্তানকে মাগুরা সদরে দেখা গেছে। এরপর তারা মাগুরা আর্মি ক্যাম্পে সহযোগিতা চাইলে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক তৎপর হয়ে ওঠে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর অবশেষে গত বৃহস্পতিবার মাগুরা আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা সদর থানার কাদিরপাড় এলাকা থেকে অপহৃত আরশাদুলকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে যথাযথ প্রমাণ যাচাই শেষে তাকে তার বাবা-মায়ের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
অপহরণের খবর জানাজানি হলে প্রধান আসামি লিটন শেখ পালিয়ে যায়। তবে সংশ্লিষ্ট পোল্ট্রি ফার্মের মালিক এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানতেন না বলে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর পর সন্তান ফিরে পেয়ে অসহায় পরিবারটি আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি মাগুরা আর্মি ক্যাম্প তাদেরকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করেছে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর দ্রুত তৎপরতায় জনমনে তাদের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এলাকাবাসীর মন্তব্য।
মন্তব্য