ব্যাংকে আমানতের সুদহার ক্রমেই কমতে থাকার মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ যাদের, তাদের মুনাফার হার আগের মতোই থাকছে।
সঞ্চয়পত্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে মুনাফার হার তিন ধাপে করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হারে মুনাফা পাবেন যাদের বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
যাদের বিনিয়োগ ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে, তাদের মুনাফার হার থাকবে এর চেয়ে কিছুটা কম।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম হারে মুনাফা পাবেন তারা, যাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকার বেশি।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
ছয় বছর পর সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে এক ধাপে কমানো হয়।
বাংলাদেশে মোট ৬ ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয়ের ব্যাংক-সাধারণ হিসাব ছাড়া সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতে জানানো হয়, নতুন হারে মুনাফা নতুন সঞ্চয়পত্রের ওপর প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ এই আদেশ জারি হওয়ার আগেই যারা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তারা আগের হারেই মুনাফা পাবেন।
ব্যাংকে আমানতের সুদের হার বছরে ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক আদেশে মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তারপরেও ব্যাংকে টাকা রাখা এখন লাভজনক না হওয়ার কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে লাভজনক হিসেবে দেখে এসেছেন বিনিয়োগকারীরা।
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেশি হওয়ায় বছর শেষে সরকারের ওপর সুদের চাপ বেশি পড়ে। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশ করে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও জাতীয় সংসদে প্রবল বিরোধিতার কারণে তা করতে পারেননি সে সময়ের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
করোনার সময় বিনিয়োগে মন্দার মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। একই সময়ে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মুনাফা-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সে হিসাবে গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। মোট বিক্রি থেকে মুনাফা ও আসল বাবদ পরিশোধ করা অর্থ বাদ দিয়ে এ নিট হিসাব করা হয়।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল। বিক্রি অস্বাভাবিক বাড়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।
কোন সঞ্চয়পত্রে কত মুনাফা
৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে প্রথম বছরে মুনাফার হার ৯.৩৫ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৮.৯৫ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৭.৭১ শতাংশ।
এই সঞ্চয়পত্রে দ্বিতীয় বছরে মুনাফার হার ৯.৮০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৮.৯৫ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.০৮ শতাংশ।
তৃতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.২৫ শতাংশ যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৯.৩৬ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৪৫ শতাংশ।
চতুর্থ বছরে মুনাফার হার ১০.৭৫ শতাংশ যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৯.৮২ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৮৬ শতাংশ।
পঞ্চম বছরে মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ১০.৩০ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.৩০ শতাংশ।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
এই সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে প্রথম বছরে মুনাফার হার ১০.০০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৯.০৬ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.১৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.৫০ শতাংশ যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৯.৫১ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৫৬ শতাংশ।
তৃতীয় বছরে মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি সুদ হার ১০.০০ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.০০ শতাংশ।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র
অবসরভোগীদের সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে প্রথম বছরে মুনাফার হার ৯.৭০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৮.৮৭ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.০৪ শতাংশ।
দ্বিতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.১৫ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৯.২৮ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৪২ শতাংশ।
তৃতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.৬৫ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ৯.৭৪ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৮৩ শতাংশ।
চতুর্থ বছরে মুনাফার হার ১১.২০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ১০.২৪ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.২৯ শতাংশ।
পঞ্চম বছরে মুনাফার হার ১১.৭৬ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ১০.৭৫ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.৭৫ শতাংশ।
পরিবার সঞ্চয়পত্র
বর্তমানে প্রথম বছরে মুনাফার হার ৯.৫০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৮.৮৬ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৭.৮৩ শতাংশ।
দ্বিতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.০০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৯.১১ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.২৫ শতাংশ।
তৃতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.৫০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৯.৫৭ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৬৬ শতাংশ।
চতুর্থ বছরে মুনাফার হার ১১.০০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ১০.০৩ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.০৭ শতাংশ।
পঞ্চম বছরে মুনাফার হার ১১.৫২ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি মুনাফার হার হবে ১০.৫০ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.৫০ শতাংশ।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক- সাধারণ হিসাব
ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের বর্তমান হার ৭.৫০ শতাংশ, যা অপরিবর্তিত থাকবে।
ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক- মেয়াদি হিসাব
বর্তমানে প্রথম বছরে মুনাফার হার ১০.২০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৯.৩১ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৪১ শতাংশ।
দ্বিতীয় বছরে মুনাফার হার ১০.৭০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৯.৭৭ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৮২ শতাংশ।
তৃতীয় বছরে মুনাফার হার ছিল ১১.২৮ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ১০.৩০ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.৩০ শতাংশ।
কমেছে একটি বন্ডের মুনাফার হারও
সঞ্চয়পত্র ছাড়াও তিনটি বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়।
এর মধ্যে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৬ মাস পর কিন্তু ১২ মাসের আগে মুনাফার হার ৮.৭০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৭.৯৮ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৭.২৫ শতাংশ, ৫০ লাখের বেশি হলে ৬.৫৩ শতাংশ।
১২ মাস পর কিন্তু ১৮ মাসের আগে মুনাফার হার ছিল ৯.৪৫ শতাংশ যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৮.৬৬ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৭.৮৮ শতাংশ, ৫০ লাখের বেশি হলে হবে ৭.০৯ শতাংশ।
১৮ মাসের পর কিন্তু ২৪ মাসের আগে মুনাফার হার ছিল ১০.২০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ৯.৩৫ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৫০ শতাংশ, ৫০ লাখের বেশি হলে হবে ৭.৬৫ শতাংশ।
২৪ মাস পর কিন্তু ৬০ মাসের আগে মুনাফার হার ১১.২০ শতাংশ, যা ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি হলে মুনাফার হার হবে ১০.২৭ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে হবে ৯.৩৩ শতাংশ, ৫০ লাখের বেশি হলে হবে ৮.৪০ শতাংশ।
মেয়াদ শেষে এ হার হবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১২ শতাংশ, ১৫ লাখের বেশি হলে ১১ শতাংশ, ৩০ লাখের বেশি হলে ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখের বেশি হলে ৯ শতাংশ।
ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টেমন্ট বন্ডের মুনাফার হার পরিবর্তন করা হয়নি।
প্রিমিয়াম বন্ডে প্রথম বছর শেষে ৬.৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৭ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ৭.৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে আগের মতোই।
আর ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রথম বছর শেষে ৫.৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৬ শতাংশ ও তৃতীয় বছর শেষে ৬.৫০ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে গতকাল মঙ্গলবার বাদ যোহর জনতা ব্যাংক পিএলসির প্রধান কার্যালয়ের নামাজ ঘরে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নামাজ ঘরে এক আলোচনা সভায় ব্যাংকের পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মুহ. ফজলুর রহমান প্রধান অতিথি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক ও উপমহাব্যবস্থাপকরা, জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী অফিসার কল্যাণ সমিতি ও জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃরাসহ সব স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমদানি করা প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর থেকে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার না করলে আগামী ৭ জুলাই এনবিআর ভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কসমেটিকস ও টয়লেট্রিজ আমদানিকারকরা।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন বাজেটে প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর দেড়শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে লিপ কেয়ার, ফেস ক্রিম, পাউডারসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর দাম কম হলেও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে দাম। এতে বাজারে বাড়ছে অবৈধ পথে আসা প্রসাধনীর সরবরাহ। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর শঙ্কাও প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজেটে প্রসাধনী পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব বৈধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিটিআইএ)। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বাড়াবে, বাজারে নকল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্য তৈরি করবে এবং ২৫ লাখের বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
সংগঠনটির দাবি, এই শুল্ক কাঠামো বাস্তবায়নের ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমদানিকৃত প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর যে ন্যূনতম শুল্কহার বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এটি দেশের বৈধ আমদানির পথকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে, যা পরিণামে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বাজার ভরে যাবে নকল ও নিম্নমানের পণ্যে, যা শুধু ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে না, বরং হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং তাদের কর্মচারীরা জীবিকা হারাবেন।’
সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হলো নতুন নতুন ব্যবসা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, চলতি বাজেটে আমদানিকৃত প্রসাধনী পণ্যের উপর ১৫০% পর্যন্ত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশ ২.০-এর লক্ষ্য এবং প্রধান উপদেষ্টার অভিন্ন লক্ষ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী।
এরপরও চলতি বাজেটে এসব পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান ঘিরে থাকা এই খাতের ওপর এক সরাসরি আঘাত। এই বৈষম্যমূলক করনীতি কেবল বৈধ ব্যবসার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বার্থের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক—যারা আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
সাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। চোরাচালান, ভুল ঘোষণা (misdeclaration) ও রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে। বেকারত্ব বাড়ায় সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’
চোরাচালান বাড়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রসাধনীসহ শুল্ক বেড়েছে এমন সাত কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি। যা আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রসাধনী ব্যবসায়ী, অ্যাসোসিয়েশনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’
এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।
মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।
ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫ – অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আইডিই বাংলাদেশ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত “Catalyzing Markets: iDE Bangladesh Private Sector Engagement Summit 2025”-এ তাদের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫–২০৩০ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।
সামিটে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই, এসএমসি, লাল তীর সিড লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন, রহিম আফরোজ, ইসপাহানি এগ্রো, ব্র্যাক, গ্রামীণ ড্যানন ফুডস লিমিটেড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, এফসিডিও, ইউনিসেফ, জিআইজেড, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালীয় ও ডেনিশ দূতাবাস-এর প্রতিনিধিরা।
সামিটে ১৪টি প্রাইভেট সেক্টর প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এবং একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয় যেখানে কৃষি, ওয়াশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পুষ্টি ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারপারসন, ব্র্যাক বলেন, “আইডিইর এই স্ট্র্যাটেজি একটি সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করবে।”
বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন:
উজমা চৌধুরী, পরিচালক (ফাইন্যান্স), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, এসএমসি
কাজি মো. সাফায়েত কবির, সিনিয়র EVP, এনআরবিসি ব্যাংক
ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড
নিতাই পদ সাহা, সিইও, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (RSF)
সামীর কার্কি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইডিই বাংলাদেশ বলেন, “এই স্ট্র্যাটেজি কেবল একটি নীতি-নির্ধারণী দলিল নয়; এটি একটি যৌথ ভিশন—যেখানে ব্যবসা ও উন্নয়ন একসাথে কাজ করে টেকসই সমাধান তৈরি করে যা সকলের জন্য কার্যকর বাজার গড়ে তোলে।”
এই নতুন কৌশলগত রোডম্যাপ আইডিইর চার দশকের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে বৃহৎ কর্পোরেশন পর্যন্ত সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।
স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।
গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।
মন্তব্য