ভারতের গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দর থেকে ৩ হাজার কেজির এক হেরোইনের চালান জব্দ করেছে রাজস্ব দপ্তরের কর্মকর্তারা। এসব হেরোইন আফগানিস্তান থেকে ইরানের বন্দর আব্বাস হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
হেরোইনের এ চালান রোববার জব্দ করা হয়। কর্মকর্তাদের দাবি, এই চালানে যে পরিমাণ হোরোইন, তার আর্থিক মূল্য ১৯ হাজার কোটি টাকা, যা ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাদক চালান।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক ভারতীয় দম্পতিকে গ্রেপ্তার এবং কয়েকজন আফগান নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গুজরাটে উদ্ধারকৃত হেরোইন পাচারের পেছনে কোনো আফগান নাগরিক জড়িত কি না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আফগানিস্তানে উৎপাদিত হেরোইন ট্যালকম পাউডার হিসেবে ইরানের বন্দর আব্বাসের মাধ্যমে গুজরাটে পাঠানো হয়। অন্ধ্র প্রদেশের বিজয়ওয়ারা জেলার ‘আসি ট্রেডিং’ প্রতিষ্ঠানের নামে চালানটি ভারতে ঢোকে। আফগানিস্তানের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘হাসান হুসেন লিমিটেড’ চালানটি পাঠায়।
রাজস্ব দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, দুটি কন্টেইনারে করে হেরোইনগুলো আনা হয়। একটিতে ছিল দুই হাজার কেজি ও অন্যটিতে প্রায় এক হাজার কেজি। উদ্ধারকৃত হেরোইনের বাজারমূল্য ১৯ হাজার কোটি টাকা।
এ ঘটনার পর ভারতের অন্য বন্দরগুলোতেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আহমেদাবাদ, দিল্লি, চেন্নাই, গান্ধীধাম ও মাণ্ডবীতেও কড়া নজর রাখা হয়েছে। এসব এলাকা দিয়েই ভারতে মাদক পাচারের চেষ্টা হতে পারে বলে ধারণা রাজস্ব কর্মকর্তাদের।
তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশির ভাগ হেরোইন সরবরাহ করে। তা ছাড়া বর্তমান সময়ের তালেবান সরকার তাদের অর্থনীতি সচল রাখতে মাদক পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
রাজস্ব দপ্তরের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে জীবন ধারণে অনেকেই মাদক পাচারের কাজ বেছে নিয়েছে। হেরোইন তৈরিতে বাধা দিতে গত কয়েক বছরে দেশটিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে আমেরিকা। মাদকদ্রব্য তৈরির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, পাকিস্তান ও তালেবানের ভারতবিরোধী অংশ একসঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থের জোগান দিতে বিপুল পরিমাণ আফগান হেরোইনকে ভারতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
রূপগঞ্জে ছাগল পালনে স্বাবলম্বী হয়েছেন মোহসিন মিয়া। কিনেছেন মালবাহী ২ টি পিকআপ, একটি সিএনজি ও নিজেদের থাকার বাড়ি। নিজে গড়ে তুলেছেন বিশাল একটি দেশি জাতের ছাগলের খামার। তিনি উপজেলার উত্তরপাড়ার কানাবাড়ি গ্রামের বাছে মিয়ার ছেলে।
আজ থেকে বিশ বছর আগে ছাত্রজীবনে সখের বশেই দুটি ছাগল কিনে নিজ বাড়িতে পালন শুরু করেন মোহসিন। কয়েক মাস পর ৪ টি করে বাচ্চার জন্ম হয়। ছাগল পালনের এক বছরের মাথায় তিনি লাভ পেতে শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০টি ছাগল রয়েছে। যার বাজার মূল্যে ৫ লক্ষাধিক টাকা। ছাগল পালন করেই মোহসিন মাস্টার ডিগ্রি পাস করেন। চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে এখনও ছাগল পালনেই ব্যস্ত মোহসিন।
মোহসিন বলেন, প্রতিদিন ছাগলগুলোকে আমি সকাল বিকাল ঘাস খাওয়াই এবং দুপুরে ভুসি কিনে খাওয়াই। তাতে প্রতিদিন আমার ৫০০ টাকার ভুসি লাগে। দেশি জাতের এই ছাগলগুলো প্রতি বছর দুইবার বাচ্চা দেয়। একটি এক বছর বয়সের ছাগলের ওজন ১০০ কেজির মতো হয়ে থাকে। প্রতি মাসে ৫-১০টি ছাগল বিক্রি করি। আমার ফার্ম দেখাশুনা করার জন্য কোনো সহকারী রাখিনি। আমার পরিবারের সবাই দেখাশুনা করি। আমার এই খামার গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোনো ঋণ নেইনি।
পাঁচ বছর আগের কথা মনে পড়লেও গা হিম হয়ে যায় গৃহবধু হালিমা খাতুনের। অভাব ছিলো তার নিত্য সঙ্গী। তিন ছেলে মেয়ের ভরণ পোষণ আর লেখা পড়ার খরচ বহন করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হতো তার। মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হতো। এখন আর কারোর কাছে হাত পাততে হয় না তার। ছাগল পালনে বদলে গেছে তার জীবন চিত্র। তিনটি ছাগল দিয়ে তার ফার্মের যাত্রা শুরু হলেও এখন তার খোয়াড়ে আছে ৩৩টি বিভিন্ন প্রজাতির ছাগল। শুধু হালিমা নয় তার মতো অনেক স্বামীপরিত্যাক্তা বিধবা ও শিক্ষিত যুবক ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বিশেষ করে ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন করছেন তারা।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের হিসেব মতে উপজেলায় ছোট বড় ৪৩২৮টি ছাগলের খামার আছে। খামার গুলিতে বেশ কয়েকটি জাতের ছাগল রয়েছে। তার মধ্যে ব্লাকে বেঙ্গল জাতের ছাগল বেশি। এছাড়াও রয়েছে বারবারি, ব্রম্মা ও রাম ছাগল।
উপজেলার নগর পাড়া গ্রামের ছালিমা বেগমের জীবনটা ছিল সংগ্রামের আর হতাশার গল্প। অষ্টম শ্রেণী পাশ করার পর দারিদ্র্যের কারণে থেমে যায় তার পড়াশোনা। স্বামী মোস্তফা মিয়ার দিনমজুরের আয়ে কোনোমতে চলত সংসার। জমিজমা না থাকায় চাষাবাদ করার সুযোগও ছিল না। এর মধ্যে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে হালিমার জীবনে নেমে আসে আরেক দফা বিপর্যয়। পরিবার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে নতুন কোনো উদ্যোগ নেয়া ছিল অকল্পনীয়।
তবে হাল ছাড়েননি ছালেমি। মানুষের কাছ থেকে ছাগল বর্গা নিয়ে লালন পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১৮টি ছাগল, ২০টি দেশি মুরগি, ১৫টি হাঁস। সবজি বাগানও গড়ে তুলেছেন। প্রতিমাসে হাঁস-মুরগি ও সবজি বিক্রি করে আয় করছেন ৭-৯ হাজার টাকা। ছাগলগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উৎপাদন ব্যয় বাদে লাভ হবে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। এখন তার স্বামী মোস্তফা মিয়াও সুস্থ হয়ে খামারের কাজে হালিমাকে সহযোগিতা করছেন।
অক্তার, মাজহারুল, হাসিনা, মিনারাসহ খামারিরা জানান, ছাগলই একমাত্র প্রাণী যার বছরে দু’বার প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা দেয়। রোগ-বালাইও কম হয়। ছাগলের সবচেয়ে বড় শত্রু ঠান্ডা। বছরে একবার পিপিআর, এফএমডি, গডপক্স ভ্যাকসিন দিলেই আর কোনও ওষুধ লাগে না। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে কোন সমস্যাই হয় না।
কায়েতপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন বলেন, মোহসিন শিক্ষিত বেকার যুবকদের মডেল। তাঁর পথ অনুসরণ করে অনেকেই ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মোহসিন একজন আদর্শ খামারি। তিনি শুধু নিজেই নন, এলাকার অন্তত ১০টি পরিবারকে নিজের ছাগল বর্গা দিয়ে ছাগল পালনে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর দেখানো পথে এলাকার অনেকেই হাঁটছেন। তাঁর কর্মকা- অনুকরণীয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সজল কুমার দাস বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে খামারিদের সাধ্যমত সব সময় সহযোগিতা করা হচ্ছে।ওষুধ সরবরাহ না থাকলে অনেক সময় শুরু প্রেসকিপশন দেয়া হয়। কোন সময় খামারে গিয়েও চিকিৎসা দেয়া হয়।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শহরের যানজট নিরসনে সিএনজি অটোরিকশা নেতৃবৃন্দের সাথে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর ফারুক এবং ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হাসান আল মামুন, উপজেলা জামায়াতের আমির সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিম, কুলাউড়া প্রেসক্লাব সভাপতি এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, ভূকশিমইল ইউপির চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, সাংবাদিক এম মছব্বির আলী, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই, সাংবাদিক ময়নুল হক পবন, নাজমুল বারী সোহেল, মাহফুজ শাকিল, মহিউদ্দিন রিপন, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (২৩৫৯) সভাপতি সেলিম আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম রুহেলসহ বিভিন্ন লাইন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে ইউএনও মহিউদ্দিন জানান, শহরের অভ্যন্তরে কোনো স্থায়ী সিএনজি স্ট্যান্ড রাখা হবে না। তবে আপাতত উত্তরবাজার ও দক্ষিণবাজারের চলমান সাতটি অস্থায়ী স্ট্যান্ডে দুটি করে সিএনজি রাখার এবং বাকিগুলো নির্ধারিত স্ট্যান্ডে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অটোরিকশা নেতৃবৃন্দ ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় নেন। এরপর থেকে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১ বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে এসেছে বড় পরিবর্তন। বৈষম্যমূলক প্লট-ফ্ল্যাট কোটাব্যবস্থা বাতিল, দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত, শহীদ পরিবার ও নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্পসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য জানায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ বিধিমালা সংশোধন করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য নির্ধারিত কোটা বাতিল করা হয়েছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্লট বা ফ্ল্যাট দেওয়ার সুযোগও বন্ধ হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ মেয়াদে রাজউকের বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করছে। ধানমন্ডিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে পাওয়া ১২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে শেরেবাংলা নগরের ১৭ দশমিক ৪৭ একর জমি জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের জন্য হস্তান্তর করছে মন্ত্রণালয়। শাহবাগে একটি ও জেলাপর্যায়ে আটটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শেষ, অন্য ৫৫ জেলায় কাজ চলছে। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের জন্য মিরপুরে ২ হাজার ৩৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক আজিমপুরে নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৮৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনস্বার্থবিরোধী পাঁচটি প্রকল্প বাতিল করে ৪২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে মন্ত্রণালয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অডিটে ২০০৯ থেকে ২০২৪ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৮২টি অনিয়ম চিহ্নত করা হয়েছে। অনিয়মে জড়িত ১১ কর্মকর্তা বরখাস্ত ও রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পে অভিযুক্ত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এছাড়া বিগত ১ বছরে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত আরও কর্মক্রম সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে প্রেস রিলিজে।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় চানখাঁরপুলে ৬জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক সাক্ষী দাবি করেছেন, পুলিশের পোশাক পরা লোকদের ‘হিন্দি ভাষায়’ কথা বলতে শুনেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নাজিমুদ্দিন রোডের শহীদ আহম্মেদ এ দাবি করেন।
গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে দুটি ঘটনায় মোট ৩জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এর মধ্যে গত বছরের ৫ অগাস্ট চানখাঁরপুলে মো. ইয়াকুব (৩৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় সাক্ষ্য দেন তার মা রহিমা আক্তার ও শহীদ।
ইয়াকুব ছিলেন নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি ম্যান। তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের পাশে মিলি গলির বাসিন্দা।
এ ছাড়া ওইদিন সেখানে নিহত ইসমামুল হকের (১৭) ভাই মো. মহিবুল হক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।
এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন বি এম সুলতান মাহমুদ, মিজানুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রসিকিউটর।
ইয়াকুব নিহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার মা রহিমা বলেন, ‘আমার ছেলে ৫ অগাস্ট চানখাঁরপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি লাগার বিষয়ে শুনে আমি চিৎকার করে বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে যাই। মহল্লার লোকজন আমাকে যেতে দেয়নি। আমাকে জানায় আমার ছেলে সুস্থ আছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেসময় আমার ছেলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। প্রতিবেশীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আমার সন্দেহ হয় আমার ছেলের কিছু হয়েছে।
‘বেলা আনুমানিক ২টার দিকে দেখি আমার ছেলের লাশ খাটিয়ায় করে গলির ভিতর নিয়ে আসে। শহীদসহ (প্রতিবেশী) অনেকেই ছিল। ছেলের শরীর থেকে তখনও খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল। তারপর কাপড় সরিয়ে দেখি পেটে গুলি লেগে পছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, রক্ত পড়া থামছে না।’
তিনি বলেন, তিনি পরবর্তীতে টিভি নিউজ, ভিডিও এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেন যারা গুলি করেছে তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরিহিত ছিল। পুলিশের গুলিতে তার ছেলে পড়ে যান। প্রতিবেশী শহীদ এই দৃশ্য তার মোবাইলে ধারণ করেন।
রহিমা তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং নির্দেশদাতা সবার বিচার চান। সেসময় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম বলেন নির্দেশদাতা হিসেবে।
তার পরে সাক্ষ্য দেন তাদের প্রতিবেশী শহীদ আহম্মেদ (৪০)।
তিনি বলেন, ‘আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরও অনেকে বেলা আনুমানিক ১১টা থেকে ১১.৩০টার মধ্যে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দিই। আনুমানিক ১১.৩০টার সময় আমরা চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছলে, সেখানে হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিল।
‘তখন দেখলাম চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি।’
তিনি বলেন, পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। ওই সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আবার তারা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে।
‘আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরাচ্ছিলাম। তখন আমাকে একজন বলে আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি ওই ছেলেকে আরেকজনের কাছে রেখে আমার ভাতিজার কাছে যাই। আরও দুইজনসহ ভাতিজাকে অটোরিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন যে ইয়াকুব মারা গেছে।’
শহীদ বলেন, পরে জেনেছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিল। আরো অনেকেই ছিল।
এরপর সাক্ষ্য দেন মো. মহিবুল হক (২১), তার বাড়ি চট্টগ্রামে।
তিনি বলেন, ‘আমি সেদিন বাড়িতে ছিলাম। আমার ভাই ইসমামুল হক ঢাকা চানখাঁরপুলে শহীদ হয়েছে। দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে আমার ভাই শহীদ ইসমামুলের মোবাইল থেকে জনৈক ব্যক্তি আমাকে কল করে জানায় যে আমার ভাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে।’
ইসমামুল চকবাজার গফুর সওদাগরের দোকানে কাজ করতেন জানিয়ে মুহিবুল বলেন, ‘আমি তাকে ফোন করলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ইসমামুলের খোঁজ খবর নেন। যান চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা সেদিন ঢাকায় আসতে পারিনি। পরের দিন সকাল বেলা আমি, আমার আম্মা দুই আত্মীয়কে নিয়ে ঢাকায় আসি। ঢাকায় এসে জানতে পারি, আমার ভাইকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।’
‘আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা গফুর সওদাগরকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সামান্য কথাবার্তা হয়। সে সিসিইউতে ছিল। তার অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ তারিখ সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে সে ইন্তেকাল করে।’
চিকিৎসকরা তার ভাইয়ের ময়নাতদন্ত করেননি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ইসমামুলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে যাই। ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দিয়ে রাত ২টায় চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছি।’
পরদিন জানাজা শেষে ইসমামুলের মরদেহ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে মহিবুল ট্রাইব্যুনালকে জানান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, এডিসি আক্তারুল ইসলাম, ইমরুল এবং আরশাদ এর নির্দেশে সুজন হোসেন, নাসিরুল ইসলাম, ইমাজ হাসান ইমনসহ আরও অনেকে গুলি করেছেন বলে তিনি তার সাক্ষ্যে বলেন।
ভাইয়ের হত্যাকারী এবং নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন মহিবুল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ অগাস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১১ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়। নথিপত্র পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৫ মে ফরমাল চার্জ আকারে তা দাখিল করেন।
অভিযোগ আমলে নিয়ে সেদিন ট্রাইব্যুনাল হাবিবুর রহমানসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।
তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন।
তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ মামলায় গত সোমবার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম চানখাঁরপুলের ঘটনাকে পদ্ধতিগত অপরাধ হিসেবে তুলে ধরেন। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। গত মঙ্গলবার দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া পাথর লুটের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১৩ আগস্ট) ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে পরিদর্শনে যায় সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুদকের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত রাফির নেতৃত্বাধীন টিম। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধুদের যোগসাজশে সাদাপাথর এলাকার পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। ওই পর্যটন এলাকায় দুদকের সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয় অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান শেষে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানোর আশ্বাস দেন তিনি।
প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধলাই নদের উৎসমুখে ভেসে আসা পাথরের বিশাল স্তুপের কারণে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জ পর্যটনের স্থান হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সাড়া ফেলেছিল। তবে গত এক বছরে সে জায়গাটি থেকে অবাধে পাথর লুটের ঘটনায় মনোরম সৌন্দর্যের এই স্থানটি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের ৭৫ শতাংশই গায়েব। আছে মাত্র ২৫ শতাংশ। একসময় প্রচুর পরিমাণে সাদা পাথর দেখা যেত বলে জায়গাটার নামই হয়ে যায় ‘সাদাপাথর’। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্রটি অস্তিত্ব সংকটে।
এর আগে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাদাপাথর নামক ওই স্থান থেকে পাথর লুট হওয়ার সংবাদ প্রকাশ হলে তা সারা দেশে আলোচিত হয়। দেশের বিভিন্ন মহল থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধংস করার প্রতিবাদ জানানো হয়।
৩৩ প্রকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুদের দাম কমিয়েছে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল)। গতকাল বুধবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা। তিনি জানান, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য কমানো হয়েছে।
সামাদ মৃধা বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে র-ম্যাটেরিয়াল যৌক্তিক মূল্যে কেনার ব্যবস্থা করায় ব্যয় কমেছে। ফলে ৩৩টি ওষুধের দাম ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো গেছে।
দাম কমেছে অ্যান্টিবায়োটিক, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, উচ্চরক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কৃমিনাশক, ব্যথানাশক, হাঁপানি ও ভিটামিন সংক্রান্ত ওষুধের, দাম কমিয়েছে বলে জানান তিনি।
ইডিসিএল জানায়, ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, কেটোরোলাক ইনজেকশন, অনডানসেট্রন ইনজেকশন, সেফট্রিয়াক্সোন ও সেফটাজিডিম ইনজেকশনের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। মেরোপেন ওমিপ্রাজল ইনজেকশনের দামও হ্রাস পেয়েছে।
এছাড়া মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেটের দাম ১০ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা করা হয়েছে।
গ্রামীণ ক্লিনিকে তালিকাভুক্ত ৩২টি ওষুধের মধ্যে ২২টির দামও কমানো হয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের অ্যান্টাসিড, প্যারাসিটামল, সালবিউটামল, অ্যালবেনডাজল, ক্লোরামফেনিকল আই ড্রপ, মেটফর্মিনসহ বিভিন্ন ওষুধের দাম কমানো হয়েছে।
কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে সামাদ মৃধা বলেন, ‘ইডিসিএলের উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী দুই হাজারের বেশি অতিরিক্ত জনবল ছিল।
তারা সবাই অদক্ষ কর্মী, অনেকের জাল সনদ পাওয়া গেছে। তারা কোনো কাজ করত না। এই অদক্ষ জনবলের মধ্যে ৭২২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থে আরও ১ হাজারের বেশি জনবল ছাঁটাই করতে হবে। যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য