মহাসড়কের পাশে পেট্রল পাম্পে উন্নত বিশ্বের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। এসব পাম্পে থাকবে রেস্টুরেন্ট, এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান, টয়লেট, চালকদের গোসলের ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার।
আরও থাকবে শিশুদের খেলার স্থান, বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানোর আলাদা স্থাপনা। থাকবে শপিং ও গিফট কর্নারও।
একই স্টেশনে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি থাকবে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জের ব্যবস্থাও, থাকবে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জের সুযোগ। ব্যাটারি পরিবর্তন, পাম্পিংসহ গাড়ির টুকিটাকি কাজও সেরে নেয়া যাবে এসব পাম্পে।
সরকার এগুলোকে বলছে ‘হাইওয়ে মডেল ফিলিং স্টেশন’। এর একেকটির আয়তন হবে আড়াই একর।
এসব উদ্যোগ পাম্প মালিকের খরচ প্রাথমিকভাবে বাড়ালেও তার আয় বাড়বে বহুগুণ। কারণ, প্রতিটি সেবার বিপরীতে তারা টাকা নিতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে যে হিসাব করা হয়েছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, একেকটি পাম্প স্থাপনে খরচ হবে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা।
একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এই পরিকল্পনা, যা বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এগিয়ে নেয়া হবে।
প্রথমে তিনটি থেকে ছয়টি পাম্প স্থাপন করবে সরকারি তিনটি তেল বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল। পরে বেসরকারি খাতে করা হবে আরও।
সরকার বলছে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত পেট্রোল পাম্পগুলোর বিরুদ্ধে ভেজাল তেল বিক্রি, ওজনে কম দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে পাম্পগুলোর পরিবেশও উন্নত বিশ্ব তো দূরে থাকুক, এশিয়ার মানেরও নয়। তাই সরকার এইসব মাথায় রেখেই একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরকে তাই এ প্রকল্প গ্রহণের বছর হিসেবে নেয়া হয়ছে।
যেমন হবে মডেল পাম্প
প্রস্তাবিত মডেল পাম্পের জন্য জমির প্রয়োজন হবে সোয়া দুই একর থেকে আড়াই একর। এর মধ্যে হাইওয়ে ব্যবহারকারীদের সুযোগ সুবিধার জন্য বরাদ্দ থাকবে ৯৫৩ বর্গ কিলোমিটার বা ১০ হাজার ২৫৮ বর্গফুট জায়গা।
সেখানে থাকবে রেস্টুরেন্ট যার আয়তন হবে ২৭০ বর্গমিটার বা ২ হাজার ৯০৬ বর্গফুট। ৮২ জন এই রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। শিশুদের খেলার স্থান থাকবে ১৫০ বর্গফুটের। বেবি ফিডিং এরিয়া থাকবে ১০০ বর্গফুটের। নামাজের স্থান থাকবে ২৪০ বর্গফুট। রান্নাঘরের আয়তন হবে এক হাজার ৪৮৫ বর্গফুট।
পাম্প মালিকের কেবিন থাকবে ৩০০ বর্গফুটের। প্রক্ষালন (ওয়াশরুম) কক্ষের আয়তন হবে ৬৫ বর্গফুট। এটিএম বুথের জন্য থাকবে ২২৫ বর্গফুট।
টয়লেট জোন হবে ১ হাজার ১৫৫ বর্গফুটের। এর মধ্যে পুরুষ টয়লেট ৫৪৮ বর্গফুট (একসঙ্গে ২০ জনের ব্যবহার যোগ্য), নারীদের টয়লেট হবে ২৭০ বর্গফুটের (একসঙ্গে ৯ জন ব্যবহার যোগ্য)। প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকছে ৬৭ বর্গফুট এলাকা।
পাম্পের কাউন্টার এবং লুব্রিকেন্ট স্টোরেজের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৩১২ বর্গফুট জায়গা। আট জনের অফিস কক্ষের জন্য থাকছে ৪১৫ বর্গ ফুট, স্টাফ বিশ্রামের জন্য থাকছে ৪৬২ বর্গফুট।
এই পাম্প ব্যবহারকারীদের জন্য থাকছে মোবাইল ফোন চার্জিং পয়েন্ট। ওয়াটার বডি থাকছে ১ হাজার ৪০০ বর্গফুটের। থাকছে মেডিক্যাল ইউনিট।
পাম্প শেডের আয়তন হবে প্রায় ১০ হাজার বর্গফুটের। এতে একসঙ্গে ২২টি গাড়ি তেল ও গ্যাস নিতে পারবে। থাকবে রেস্টুরেন্টের মধ্যে ৫৫ বর্গফুটের খোলা স্থান।
সার্ভিস এরিয়া
সার্ভিস এরিয়ায় থাকবে বাস ও গাড়ি ওয়াশিং জোন। এর মধ্যে টুলস রুম থাকবে ২২৬ বর্গফুটের। সেখানে ব্যাটারি পরিবর্তন-চার্জিং ও টায়ার পাম্পিং সুবিধা থাকবে। থাকবে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাও।
ড্রাইভার জোনের আয়তন হবে ২ হাজার ২৫৩ বর্গফুট। সেখানে ৯৪৩ বর্গফুটের রেস্টুরেন্ট, ৪৯০ বর্গফুটের কিচেন, ৩৮০ বর্গফুটের টয়লেট থাকছে। থাকছে চালকদের গোসলের ব্যবস্থা।
ট্যাংক স্টোরেজ ও পার্কিং ক্যাপাসিটি
হাইওয়ে মডেল পাম্পে অকটেন স্টোরেজ ক্যাপাসিটি থাকবে ১৮ হাজার লিটার। পেট্রোল স্টোরেজ ক্যাপসিটি থাকবে ১৩ হাজার লিটার। দুইটি হাইস্পিড ডিজেল স্টোরেজ ট্যাংকের মোট স্টোরেজ ক্যাপসিটি থাকবে ৬০ হাজার লিটার। অটো গ্যাস (এলপিজি) ক্যাপাসিটি হবে ২০ হাজার লিটার।
এই পাম্পে ১৩ টি ব্যক্তিগত গাড়ি, ২০টি বাস ও ট্রাক পার্কিং ব্যবস্থা থাকবে। ফুয়েল আনলোডিং ক্যাপাসিটি থাকবে একটি। একই সঙ্গে চারটি ব্যাটারিচালিত গাড়ি চার্জের ব্যবস্থাও থাকছে।
কেন এই উদ্যোগ?
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (অপারেশন) ড. মহ. শের আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পেট্রল পাম্প নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটি জরিপ চালিয়েছিলাম। এই জরিপে মারাত্মক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। এতে দেখা যায় দেশের প্রচলিত পাম্পগুলোর ৬২ ভাগই তেল বিক্রি করে লাভ করতে তো পারেই না, উল্টো লোকসানে থাকে।
‘তারা ভেজাল তেল বিক্রি করে ও ওজনে কম দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখে বা সামান্য লাভও করে। এতে দেশের পাম্পগুলোর সেচ্ছ্বাচারিতা ও গ্রাহক ভোগান্তির এক করুণ চিত্র ফুটে ওঠে।’
নতুন ধরনের পাম্পে ভেজাল তেল বিক্রি বন্ধ হবে-এমন নিশ্চয়তা কী, এমন প্রশ্নে যুগ্মসচিব বলেন, ‘এসব পাম্পে ভেজাল বা ওজন কম দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ, তেল বেচে যদি লাভ নাও হয়, তাহলেও অন্যান্য যে সেবা থাকবে, তাতে মালিকের মুনাফা হবে অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের পেট্রল পাম্পগুলোর ফ্রেশ রুমগুলো অত্যন্ত নোংরা। নেই কোনো রিফ্রেসমেন্ট ব্যবস্থাও। এতে নারী, শিশু ও প্রবীণরা ঝামেলায় পড়েন। চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকায়, দুর্ঘটনাও ঘটে।
‘এরপরই সরকার প্রতিকারের বিষয়ে চিন্তা করতে থাকে এবং নতুন করে পেট্রল পাম্পের অনুমোদন দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর আমরা একটি হাইওয়ে মডেল পাম্পের চিন্তা ও পরিকল্পনা করি। সেই মোতাবেকই একটি ডিজাইনও করা হয়।‘
শের আলী বলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে। মহাসড়কগুলো দুই লেন থেকে চার লেন ও এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নত হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া ও ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বিবিআইএন চুক্তি সাক্ষর হয়েছে। তারা চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে। ফলে আমাদের পাম্প গুলোও আন্তুর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। আমরা সে ধরনেরই নকশা করেছি।
‘এই পাম্প বাস্তবায়ন হলে এমনিতেই প্রচলিত পাম্প বন্ধ হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নিউজবাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন, ভিশন-২০৪১; হাইওয়ে মডেল ফিলিং স্টেশন তারই একটা অংশ।
তিনি জানান, দেশের জ্বালানি সক্ষমতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে, কোয়ালিটি সার্ভিস নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য নেয়া হয়েছে বিশ্বমানের নানা কার্যক্রম ও প্রকল্প।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের আদলে পাম্পগুলো বদলে গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও পাম্প ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে গ্রাহকরা একই স্থানে অনেকগুলো সেবা পাবেন। মোট কথা অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল, অটো গ্যাস ও সৌরবিদ্যুৎ চার্জিংয়ের মতো পাঁচটি সেবা, সেই সঙ্গে চাকা ও ব্যাটারি পরিবর্তন ও মেরামতের সুযোগ থাকছে।’
মালিকদের আগ্রহ কম যে কারণে
সরকার উচ্ছ্বসিত হলেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ এখন পর্যন্ত কম। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সারা দেশে মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
পেট্রল পাম্প মালিকদের সংগঠন পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মডেল পেট্রল পাম্প করার প্রথম সমস্যা হচ্ছে এটি করতে প্রায় ১০ বিঘা জমি দরকার, যা ব্যয়বহুল। বিশাল বিনিয়োগ করতে হবে। এটি আমাদের দেশের জন্য উপযোগী নয়।’
তিনি বলেন, ‘অনেক মালিক ঋণ করে পাম্প দেন। সেই ঋণের সুদ দিতেই তাদের গলদঘর্ম হতে হয়। এখন বাড়তি এত কিছুর পেছনে বিনিয়োগ করতে বলাটা অমানবিক বটে।
‘এদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আমরা ভাবছি। এ রকম সুবিধা থাকলে অনেক লোকই পাম্পে আসবে। পাম্পে নগদ টাকা থাকে। সেটিও বিবেচনা করতে হবে। এ ছাড়া এ কাজের জন্য যে জমির কথা বলা হচ্ছে তা হাইওয়ের পাশে পাওয়া আরও কঠিন। জমির দামও বেশি পড়বে। এখন কারোরই এত বড় জমি নেই।’
এই অবস্থার মধ্যে বিপিসি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় বলছে, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ, পদ্মা সেতু এবং মিরেরসরাই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নিজস্ব অর্থায়নে এগুলো বাস্তবায়ন করবে।
জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান ওই সভায় বিপিসির এই উদ্যোগে সায় দেন এবং এই বিষয়ে কাজ শুরু করতে গুরুত্ব আরোপ করেন।
জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের ফিলিং স্টেশন নির্মাণের খরচ বেশি। তাই উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কম। এই কারণেই এবার বিপিসির অধীন বিপণন সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব জায়গায় মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করবে। এটা দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিপিসির জমি ছাড়াও পূর্বাচলে কয়েকটি স্টেশন নির্মাণের জন্য আমরা জমি চেয়েছি। পেলে সেখানেও নির্মাণ করা হবে।’
চ্যালেঞ্জটা কী?
জ্বালানি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তারা ৯টি মডেল পেট্রোল পাম্প স্থাপনের বিষয়ে অনাপত্তিপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে ৩টি তেল বিপণন কোম্পানির অর্থায়নে ৫টি আর ৬টি ডিলারের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে।
এর মধ্যে পদ্মা ও যমুনা অয়েলের মাধ্যমে দুটি করে এবং মেঘনা পেট্রলিয়ামের মাধ্যমে একটি মডেল পাম্প নির্মাণে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা প্রাথমিক সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে।
তবে বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘যতদূর জানি এ নিয়ে কাজ চলছে। আমি নতুন। তাই বেশি কিছু জানি না। তবে এটা এমন কোনও বড় বিষয় নয়।’
আরও পড়ুন:২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল আগামী রোববার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য আপিলটি ছিলো। কিন্তু এই মামলায় হাইকোর্টের অথর জাজ বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান আজ আপিল বিভাগের বেঞ্চে ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টে রায় দানকারী বিচারপতি একই মামলা আপিল বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করতে পারেন না।
এজন্য আগামী রোববার পুনর্গঠিত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে। আদালত বিষয়টিতে আজ নট টুডে আদেশ দিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন।
আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামীকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পটি শুক্রবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ডেটা অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইংয়ের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে।
এ ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত বৃহত্তম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্য কমে যাওয়ার ফলে সংকট আরও গভীর হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন (সাত কোটি ৩০ লাখ) ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্সে একটি পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিওইএফ) মাধ্যমে এ খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।
‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত।’
সিনহুয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক কাটছাঁট এবং ফেডারেল ব্যয় ব্যাপকভাবে হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার বিস্তৃত প্রচেষ্টার মধ্যেই এ অনুদান দেওয়া হলো।
জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং জ্বালানি হ্রাস পাবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ ছিল। প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। কিন্তু জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সাম্প্রতিক তহবিল স্থগিত করার ফলে কমপক্ষে পাঁচটি হাসপাতাল তাদের সেবা কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে।
ট্রাম্প ও বিলিয়নেয়ার মিত্র ইলন মাস্ক প্রধান মার্কিন বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এর অবশিষ্টাংশগুলোকে পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করেছেন। শত শত কর্মী এবং ঠিকাদারকে বরখাস্ত করেছেন এবং কোটি কোটি ডলারের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ওপর বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফেব্রুয়ারিতে সমস্ত জীবন রক্ষাকারী সহায়তা এবং এ ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক খরচ মওকুফ করেছিলেন।
ওয়াশিংটন টাইমস জানায়, এ মাসের শুরুতে ইউএসএআইডি ভেঙে দেওয়ার তত্ত্বাবধানকারী ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যায়ক্রমে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন শিবিরের বাসিন্দারা এখন জনপ্রতি মাসিক ১২ ডলার করে খাদ্য বরাদ্দ পাবেন, যা আগের ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কম।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি একটি চিঠিতে এই সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাসানচরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১৩ ডলার করে পাবে, যা কক্সবাজারের তুলনায় এক ডলার বেশি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা ডব্লিউএফপি পূর্বে জানানোর পর এ পরিবর্তন এসেছে।
গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন ডব্লিউএফপি থেকে একটি চিঠি পায়, যেখানে বলা হয়, তহবিল সংকটের কারণে এপ্রিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য মাসিক খাদ্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১২ দশমিক ৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলার করা হবে।
চিঠিতে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।
তার সফরের সময় তাকে ছয় ডলারে রোহিঙ্গারা কী খাবার পাবে তার বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অপর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক ও একমত বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতাদিসহ যৌক্তিক দাবির ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ও একমত। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবির নামে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ, নৈরাজ্য ও সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সরকার তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা এবং দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার এ বিষয়ে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়ের সহযোগিতা কামনা করছে।’
আরও পড়ুন:পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি।
তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপ ও অন্যান্য সমঝোতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এগুলো যথেষ্ট নয়, আরও জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচওর দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের বহুমাত্রিক বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ুমান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচওর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো মানুষের দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো ও পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ প্রকল্প নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করা, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
তিনি ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনার কথা জানান, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ২০২৫ সালের মে থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান।
উপদেষ্টা জানান, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এই সংকট আমাদের সবার জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের হাতে রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার।
‘বায়ুদূষণ শুধুই পরিবেশগত ইস্যু নয়, এটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আরও পড়ুন:পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর বৃহস্পতিবার। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে কদরের রজনী।
যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সারা দেশে রাতটি পালন করা হবে।
মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম।
এ রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষণ করা হয়। নির্ধারণ করা হয় মানবজাতির ভাগ্য।
৬১০ সালে কদরের রাতেই মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) কাছে সর্বপ্রথম সুরা আলাকের পাঁচ আয়াত নাজিল হয়। এরপর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর বহনকৃত ওহির মাধ্যমে পরবর্তী ২৩ বছর ধরে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে বিভিন্ন সুরা নাজিল করা হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
‘শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল- কদর, আয়াত ১-৫)।’
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো (বুখারি ও মুসলিম)।’
মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পবিত্র রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেন। কামনা করেন মহান রবের অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফিরাত।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ রাত থেকে পরের দিন ভোররাত পর্যন্ত মসজিদসহ বাসা-বাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন তারা।
এই উপলক্ষে শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে রাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের সব মসজিদেই তারাবির নামাজের পর থেকে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন থাকবে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর/শবে কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিওগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।
এ ছাড়া সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
এশীয় দেশগুলোকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ও যৌথ সমৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চীনের হাইনানে বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে যা অভিন্ন ভবিষ্যৎ এবং যৌথ সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে।’
আর্থিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোর এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল দরকার যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করবে।’
বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়া এখনও বিশ্বের অন্যতম কম সংযুক্ত অঞ্চল।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এ দুর্বল সংযুক্তি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।’
খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকে উৎসাহিত এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। টেকসই প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষি সমাধান ও জলবায়ুবান্ধব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এশিয়াকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে, যা পুনর্গঠনমূলক, সমবণ্টনমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জ্ঞান, তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি ইনকিউবেশন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে মেধা সম্পদ ও যুবশক্তিকে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে—একটি আত্মরক্ষা ও আত্মস্থায়ী সমাজ। আমাদের শূন্য-বর্জ্যের জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ভোগ সীমিত রাখতে হবে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে।
‘আমাদের অর্থনীতিকে সামাজিক ব্যবসার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে, যা ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কাঠামো হিসেবে উদ্ভাসিত হবে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য ও দায়িত্ববোধ একীভূত থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বোয়াও ফোরাম ও অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগগুলোকে যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে, যেন আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করা যায়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য