ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাহাড়সম যে খেলাপি ঋণ, তার পেছনে উদ্যোক্তাদের টাকা ফেরত না দেয়ার ইচ্ছাকেই দায়ী করেছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরফান আলী। তার মতে, খেলাপি ঋণদাতাদের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপিই বেশি।
তিনি এও মনে করেন যে, করোনাকালে বিনিয়োগের যে খরা তৈরি হয়েছে, সেটি কেটে যাবে সহসাই।
করোনার ধাক্কার পর বিশ্ব অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও গভীর সংকটে পড়ে গত বছরের শুরুর দিকে। সেই ধাক্কা সামলে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করাতে সোয়া লাখ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। বর্তমানে সেই প্রণোদনার অঙ্ক বেড়ে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে।
এই প্রণোদনা ঋণের পুরোটাই বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। গত বছর প্রণোদনা ছাড়া ঋণ বিতরণ খুব একটা ছিল না। তবে এখন মহামারির ধকল কমতে শুরু করেছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমতির দিকে। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি। ঋণ বিতরণও বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘কেমন চলছে ব্যাংক খাত’ এ শিরোনামে নিউজবাংলার ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে দেশের ব্যাংকিং খাতের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরফান আলী।
খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংক খাতের এখনও অন্যতম সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বের হতে কী করা দরকার?
যেকোনো উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। নতুন বিনিয়োগ করলে কোনো কারণে ব্যবসায় লোকসান করে, তখন খেলাপি হয়ে যায়। এটা হতেই পারে।
তবে আমাদের দেশে ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংখ্যা বেশি। কারণ, আমাদের আইনি কাঠামো থেকে শুরু করে ব্যাংকিং কাঠামোতেও দেখা যায়, ভালো ঋণগ্রহীতার চেয়ে খেলাপি গ্রাহকের দিকে সবার মনযোগ বেশি থাকে।
যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের দিকে বেশি খেয়াল রাখা হয় না। যারা নিয়মিত ঋণ শোধ করেন তাদের কিছু সুবিধা দেয়া উচিত। কিন্তু এখানে হয়েছে উল্টো। যারা টাকা-পয়সা আটকে রাখে তাদের এক সময় ডিসকাউন্ট দেয়া হয়, ছাড় দেয়া হয়। কিন্তু তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো কমিয়ে দেয়া উচিত। প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া উচিত যে, তারা ঋণ শোধ করছে না।
ঋণ নিয়ে এক হিসেব থেকে অন্য হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ দীর্ঘমেয়াদে দায় দিয়ে ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল (চলতি মূলধন) দিয়ে অনেকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে চলে গেছে। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
তাহলে বিষয়টি কি এমন যে, খেলাপিদের প্রশয় দেয়া হয়, ভালো ঋণগ্রহীতাদের বঞ্চিত করা হয়?
অনেকটা সেরকমই। আমার কাছে মনে হয়েছে ভালো ঋণগ্রহীতার চেয়ে খেলাপিদের প্রভাবটা বেশি। অনেক করপোরেট হাউজ আছে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন, ব্যাংকের শর্ত সব পূরণ করছেন। তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার। তাদের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করা উচিত বলে আমি মনে করি।
করোনার ধাক্কায় যেখানে সবদিক দিয়েই স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, সেখানে তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলো ভালো পরিচালন মুনাফা করেছে। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে?
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যালেন্স শিটে সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কম ছিল। ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সুদহারের সুফল কিন্তু ওই বছর পাওয়া যায়নি।
চলতি বছর আমানতের সুদহার যখন সমন্বয় করতে পারলাম তখন সুদের আয়টা একটু বেশি ছিল। খেলাপি ঋণেরও ছাড় দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো সঞ্চিতিতে কিছুটা ছাড় পেয়েছে। এ কারণেও মুনাফা হয়েছে বেশি। চলতি ডিসেম্বরে যখন সুবিধাগুলো আরও কমে যাবে তখন ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা বোঝা যাবে।
বর্তমানে ব্যাংক খাতে আলোচিত বিষয় আমানতের সুদহার। আমানতের সুদ হার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলেছে, সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। এতে আপনাদের আপত্তি আছে, যা গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন। এই নির্দেশনা পরিপালনে ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ কী?
চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে ব্যাংকিং পরিচালনা করা হয়। এখন ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু সেটা ৯ শতাংশেরও নিচে চলে এসেছে। ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদেও ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। করপোরেট ঋণে কোনো কোনো ঋণে সেটা আরও কম।
ঋণ ও আমানতে সুদহারের যে ব্যবধান (স্প্রেড) থাকে ব্যাংক সেটা দিয়ে ব্যাংক চলে। সুতরাং ঋণে সুদ বাড়ানোর যেহেতু কোনো সুযোগ নেই, ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে এটা সমন্বয় করে ফেলছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনার ফলে ব্যক্তি আমানতকারীদের সুবিধা হবে। তাদের টাকার মান যেন নষ্ট না করে, বিনিয়োগ যেন নিরাপদ থাকে এ কারণে মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেয়ার বিষয়ের নির্দেশনা সঠিকভাবে পরিপালন করা হবে। এর ফলে টাকার মান নষ্ট হচ্ছে না। কারণ, সঞ্চয় বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি বিশেষ সঞ্চয় না করলে বড় বড় করপোরেটরা এত টাকা ঋণ পাবে না।
মহামারি করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বড় ভূমিকা রাখছে ব্যাংক খাত। জরুরি সেবার আওতায় লকডাউনের মধ্যেও বন্ধ থাকেনি এ খাতের সেবা। সেই ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?
করোনার মধ্যে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে নিজেদের প্রস্তুত করেছি। কারণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে করপোরেট, সবারই আর্থিক খাতের সেবা দরকার পড়ে। আমাদের দেশে অনলাইন ও ডিজিটাল ব্যাংকিং এখনও সেভাবে প্রসার লাভ করেনি। সে কারণে ব্যাংকের শাখা বা এজেন্ট বুথে এসে গ্রাহদের সেবা নেয়ার প্রবণতা এখনও আছে। আমরা করোনার সময়েও সীমিত পরিসরে সব খোলা রেখে গ্রাহকদের সেবা দেয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করেছি।
বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরকারের ভাতাসহ সব ধরনের সেবা দেয়ার জন্য নিজেদের সেভাবে তৈরি রেখেছি।
ক্ষতি পোষাতে বিশাল অংকের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু অভিযোগ আছে বড় বড় ব্যবসায়ীদেরই প্রণোদনার অর্থ দেয়া হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প। প্রকৃত চিত্র কী?
ছোটরা বঞ্চিত হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়। কর্মাশিয়াল কোনো ব্যাংকের হেড অফিস কিন্তু গ্রামাঞ্চলে নেই। শহরভিত্তিক কার্যক্রম বেশি করা হয়। ব্যাংকগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের সেবার জন্য তেমন প্রস্তুত ছিল না। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কারণে ওইসব জায়গায় সেবা দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সব ব্যাংক এখন চেষ্টা করছে।
প্রণোদনার ক্ষুদ্র ঋণ দেরি হয়েছে। কিন্তু এরপরেও অনেকাংশে ঋণ বিতরণ হয়েছে। করপোরেট ঋণগুলো ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ এমন কিছু শহরে ছিল। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাজ তো পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে। সেজন্য সময় বেশি লেগেছে।
ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার এখন ৯ শতাংশ। যখন এই সুদ হার কার্যকর হয়, তারপরই হানা দেয় করোনা। সুবিধা দেয়ার পরও দিন দিন কমছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। তাহলে কি বিনিয়োগ বাড়ার ক্ষেত্রে কম সুদ কোনো ভূমিকা রাখে না?
ঋণের ক্ষেত্রে ডিমান্ড-সাপ্লাই এর একটা বিষয় আছে। ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হলেই যে সব ধরনের ঋণ বিতরণ হবে বিষয়টি তেমন না।
করোনাকালে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে। কারণ, উদ্যোক্তারা নতুন বিনেয়াগের ব্যাপারে খুব একটা সাহসী ছিল না। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকের জন্য নতুন বিনিয়োগ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া কস্টকর ছিল। বিনিয়োগে করলে রিটার্ন কেমন পাবে বা পরিস্থিতি কেমন হবে-এসব কারণে তাদের মধ্যে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ পলিসি কাজ করেছে। সে কারণে নতুন কোনো প্রজেক্ট আমরা তেমন দেখতে পাইনি।
তবে আশার কথা হলো, এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। অনেকে নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে আমাদের সামনে আসছেন। সুতরাং, এতদিন যে স্থবিরতা গেছে, এখন সেটা কেটে যেতে শুরু করেছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়বে। বিনিয়োগে স্থবিরতা কেটে যাবে।
করোনাকে সঙ্গে নিয়েই বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। মহামারির এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাংক খাত কী ধরনের কর্মপরিকল্পনা নিতে পারে?
যারা ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তারা আমাদের চালিকাশক্তি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। করোনার মধ্যে এসব শিল্পে কাজ চলমান ছিল। ব্যাংকারদের এসব উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে হবে। ঋণ প্রবৃদ্ধি যেন বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আগে আমাদের ব্যাংকগুলো শহরভিত্তিক ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্যংকের সেবা পৌঁছে গেছে। এটা আরও ছড়িয়ে দিতে হবে। করোনার সময়েও অনেক ব্যবসা চালু ছিল। কাজ চালু রাখার কারণে অর্থনীতিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
করোনা পরবর্তী ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে বলে আমি আশা করি। সম্পদের সমৃদ্ধি আরও ভালো হবে। ক্যারিয়ার ব্যাংকিংও ভালো হবে। ব্যাংক খাতে কাজ করার সক্ষমতা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন:মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝুঁকি কমে এসেছে। সেই সঙ্গে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করবে—মন খবর বাজারে আসায় তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
আগস্ট মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৭ দশমিক ১১ ডলার। সেপ্টেম্বর মাসের জন্য দাম আরও কমেছে। সে ক্ষেত্রে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৩ সেন্ট কমে গিয়ে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলার হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিও ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে নেমে এসেছে।
গত সপ্তাহে বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছিল তেলের বাজার। সাপ্তাহিক দরপতনের দিক থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাসের পর গত সপ্তাহে দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। তবে সামগ্রিকভাবে জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে। আজ সোমবার (৩০ জুন) শেষ দিনের দামের পূর্বাভাসসহ ধারণা করা হচ্ছে, জুন মাসে তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর তেলের দাম বাড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর তা দ্রুত নেমে আসে ৬৭ ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, বাজারে যে আতঙ্কজনিত বাড়তি মূল্য ছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই মুছে গেছে।’
এদিকে ওপেক ও সহযোগী জোটের চারজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা আগস্ট মাসে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াতে যাচ্ছেন। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বসার কথা। এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার থেকে বের হওয়ার পর এটি হবে পঞ্চম দফায় উৎপাদন বৃদ্ধি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২-এ, অক্টোবর ২০২১ সালের পর যা সর্বনিম্ন। এ তথ্য দিয়েছে খনিজ খাতের প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষ দিন আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংকের শাখাগুলোতে ব্যাংকিং লেনদেন চলবে।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতে এখনো দুদিন বাকি থাকলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ ইতোমধ্যে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে)। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এবার ছাপিয়ে গেছে। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গতকাল রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চলতি জুন মাসের প্রথম ২৮ দিনেই প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (২৫৪ কোটি), যা প্রায় ৩১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মাসের বাকি দিনগুলোতেও একই ধারা বজায় থাকলে জুন শেষে মোট রেমিট্যান্স ২.৭০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা, বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা, প্রবাসীদের জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি—এসবই এই রেকর্ড প্রবাহে সহায়ক হয়েছে। চলতি বছর প্রাপ্ত পুরো রেমিট্যান্স এসেছে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে।
মাসভিত্তিক প্রবাহের চিত্র
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জুলাই মাসে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি, নভেম্বরে ২২০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। নতুন বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এসেছে ২১৯ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি, মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি এবং মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্চ মাসে ৩৩০ কোটির বেশি ডলার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যাগত সাফল্য নয়, বরং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রতিফলন। সঠিক নীতিমালা, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং আইনগত পদক্ষেপ একত্রে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই অর্থপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি দিয়েছে, ডলারের বাজারে চাপ কমিয়েছে এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে এই ধারা টিকিয়ে রাখতে হলে বহুমুখী শ্রমবাজার, স্বচ্ছ অভিবাসন প্রক্রিয়া ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৮ জুন) মধ্যে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রেমিট্যান্সবান্ধব নীতিমালা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থা ও সহযোগিতাই এই সাফল্যের পেছনে মূল চালিকা শক্তি।
২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স খাতে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই গতি ধরে রাখতে হলে হুন্ডি প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা, প্রবাসীদের আস্থার জায়গা সুসংহত রাখা এবং বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিবেশ আরও সহজতর করা অপরিহার্য। রেমিট্যান্স এখন শুধু অর্থপ্রবাহ নয়, বরং অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার।
ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫ – অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাজারভিত্তিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আইডিই বাংলাদেশ ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত “Catalyzing Markets: iDE Bangladesh Private Sector Engagement Summit 2025”-এ তাদের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি ২০২৫–২০৩০ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে।
সামিটে সরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই, এসএমসি, লাল তীর সিড লিমিটেড, এনআরবিসি ব্যাংক, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন, রহিম আফরোজ, ইসপাহানি এগ্রো, ব্র্যাক, গ্রামীণ ড্যানন ফুডস লিমিটেড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, এফসিডিও, ইউনিসেফ, জিআইজেড, ইউএনডিপি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালীয় ও ডেনিশ দূতাবাস-এর প্রতিনিধিরা।
সামিটে ১৪টি প্রাইভেট সেক্টর প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয় এবং একটি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয় যেখানে কৃষি, ওয়াশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পুষ্টি ও ফিনটেক খাতের উদ্ভাবনী সমাধান তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, পিপিআরসি ও চেয়ারপারসন, ব্র্যাক বলেন, “আইডিইর এই স্ট্র্যাটেজি একটি সময়োপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর কাঠামো তৈরি করবে।”
বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন:
উজমা চৌধুরী, পরিচালক (ফাইন্যান্স), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
মোহাম্মদ মোহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার, এসএমসি
কাজি মো. সাফায়েত কবির, সিনিয়র EVP, এনআরবিসি ব্যাংক
ইঞ্জিনিয়ার সাদিদ জামিল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দি মেটাল প্রাইভেট লিমিটেড
নিতাই পদ সাহা, সিইও, রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন (RSF)
সামীর কার্কি, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইডিই বাংলাদেশ বলেন, “এই স্ট্র্যাটেজি কেবল একটি নীতি-নির্ধারণী দলিল নয়; এটি একটি যৌথ ভিশন—যেখানে ব্যবসা ও উন্নয়ন একসাথে কাজ করে টেকসই সমাধান তৈরি করে যা সকলের জন্য কার্যকর বাজার গড়ে তোলে।”
এই নতুন কৌশলগত রোডম্যাপ আইডিইর চার দশকের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে গঠিত, যার লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে বৃহৎ কর্পোরেশন পর্যন্ত সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজারব্যবস্থা তৈরি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনকারী অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর ৩ বছরপূর্তি ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। ২০২২ সালের ২৬ জুনের এই দিনে বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপর এক মুহুর্তের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ হয়নি। আর এই তিন বছরে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫ শ’ ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ টাকা।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের বিড়ম্বনা লাঘব করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক এখন। উত্তাল নদী পারপারের ভোগান্তি থেকে শুধু মুক্তিই দেয়নি এই সেতু পাল্টে দিয়েছে দক্ষিণের আর্থ সামাজিক অবস্থাও। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত, শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন। খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সেতুর উপর তলায় সড়ক পথ ও আর নিচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন। রাতদিন দ্রত বেগে পদ্মার উপর দিয়ে চলছে ট্রেন ও সড়ক পথের যাত্রা। পদ্মা সেতুর ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন হলেও পরদিন ২৬ জুন এই দিনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। পরের বছর ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন হয়। পদ্মা সেতু হয়ে চালু হয় ঢাকা-ভাঙ্গা নতুন রেল নেটওয়ার্ক। আর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর রেল লিঙ্ক প্রকল্প পুরোপুরি চালু হয়। এদিন রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা হয়ে নতুন পথে নড়াইল ও যশোর অতিক্রম করে খুলনা পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী থেকে মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় খুলনা ও বেনাপোল পৌছানো যাচ্ছে। তাই এখন দক্ষিণের মানুষ সড়ক ও ট্রেন পথের সুফল পাচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা খুঁটি ব্যবহার করে। সেতু উপর দিয়ে যাওয়া উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সেতুতে নির্মাণ করে রাখা গ্যাস লাইন ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে দক্ষিণের জনপদ, এখন অপেক্ষা এখন। তাই খুশি সবাই।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, কোন হেসেল ছাড়াই টানা দিন বছর সেতুতে নিরবিচ্ছিন্নভাবর যান পারাপার করা হয়। এটি একটি বড় মাইলফলক। পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, দেশের এই অবকাঠামো যেমন মানুষের উপকারে লাগছে, আবার রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। সেতু ব্যবহারে টোল আদায় আরও সহজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই চলন্ত অবস্থায়ই টোল পরিশোধ করা যাবে।
স্বপ্নের সেতু চালুর তিন বছরে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি। এর মধ্যে মাওয়া দিয়ে প্রবেশ করে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যান। আর ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতুতে প্রবেশ করে। মাওয়া থেকে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪শ’৬৮ বেশি যান জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে।
গত ৫ জুন পদ্মা সেতুতে এক দিনে রেকর্ড পরিমান ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার টোল আদায় হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়। পদ্মা সেতুতে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় ও যানবাহন পারাপারের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে ২০২২ সালের ২৬ জুন পদ্মা সেতুর যান চলাচলের শুরুর দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজর ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল ইদুল ফতরের আগে সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭শ' টাকা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ বলেন, সেতু চালুর প্রথম বছর ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭শ’ টাকা। দ্বিতীয় বছর ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি যানের বিপরীতে টোল পাওয়া যায় ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩শ’ ৫০ টাকা। আর তৃতীয় বছর ২৫ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৬১ কোটি ২২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৯ টাকা। মূল পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ। তবে অ্যাপ্রোচসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেতু নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক আইন মেনে পদ্মা সেতুতে যানাবাহানের নির্বিঘ্ন চলাচলে সেতু এবং দুই প্রান্তের সড়ক জুড়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেতুতে যানবাহানের গতিও বৃদ্ধি করে দুই পারের এক্সপ্রেসওয়ের মতই ঘন্টায় সর্বোচ্চ গতি করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার।
পুঁজিবাজারে চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারে সবকটি সূচকের উত্থান হয়েছে, বেড়েছে লেনদেন এবং বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সারাদিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরিয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১৫ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০০ কোম্পানির মধ্যে ২৯৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৪৬ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৫৯ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। বিশেষ করে লভ্যাংশ দেওয়া ভালো কোম্পানির এ ক্যাটাগরির ২২০ কোম্পানির মধ্যে ১৫৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ২৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৭ কোম্পানির ২৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সারাদিনে ডিএসইতে ৪১৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গতদিন ছিল ৩৭২ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষে ইন্দো বাংলা ফার্মাসিটিক্যালস এবং ৫ শতাংশ দাম কমে তলানিতে ভ্যানগার্ড এএমএল রুপালি ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ১০ প্রতিষ্ঠান হলো- লাভেলো আইসক্রিম, স্কয়ার ফার্মা, ব্রাক ব্যাংক, সী পার্ল, বিচ হ্যাচারি, ইন্দো বাংলা ফার্মা, বিএটিবিসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ফাইন ফুডস ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
চট্টগ্রামেও উত্থান
ঢাকার মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে, সার্বিক সূচক বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২৩৩ কোম্পানির মধ্যে ১২১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৭৯ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২৯ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রি এবং ৯ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
দেশের বাজারে ১৪ জুন স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছিল ২ হাজার ১৯২ টাকা। তবে আবার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ দাম কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) গত মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম কমানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় নতুন করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ১৪ জুন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছিল। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা। গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গত ২৩ এপ্রিল দেশে স্বর্ণের দাম ভরিতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বেড়েছিল। তখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা। দেশের বাজারে সেটিই ছিল এখন পর্যন্ত স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।
বাজুসের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গতকাল বুধবার থেকে দেশের বাজারে হলমার্ক করা প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণ ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকায় বিক্রি হয় এছাড়া সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২ টাকা।
দেশের বাজারে গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রতি ভরি হলমার্ক করা ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫২৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০২ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ২ হাজার ১৯২ টাকা, ২১ ক্যারেটে ২ হাজার ১০০ টাকা, ১৮ ক্যারেটে ১ হাজার ৮০৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ হাজার ৫২৮ টাকা দাম বেড়েছে। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মন্তব্য