বাংলাদেশে ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী চলাচল শিথিল করা হয়েছে। ফলে ১০ স্থলবন্দর দিয়ে যাত্রী আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে যে বিধিনিষেধ ছিল তা শিথিল করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এসব জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে ১৪ সেপ্টেম্বর ভার্চুয়ালি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদেশি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয় এমন বিভাগগুলো উন্মুক্ত করা হয়েছে। এসব তথ্য (ssd.gov.bd) ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। মহামারি কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার প্রত্যাশায় রয়েছে।
চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম আছে, তারা বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। সেজন্য তাদের দিল্লি, কলকাতা বা আগরতলায় বাংলাদেশ মিশন থেকে অনুমতি নিতে হতো। এখন থেকে এটি আর নিতে হবে না।
১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীদের আর বিদেশে বাংলাদেশ মিশন থেকে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
ছয়টি স্থলবন্দর বেনাপোল, আখাউড়া, সোনামসজিদ, হিলি, দর্শনা এবং বুড়িমারীতে সীমান্তে চলাচলের জন্য আগের মতো চালু হবে। এছাড়াও, আরও পাঁচটি স্থলবন্দর ও স্থল শুল্ক স্টেশন (শেওলা, তামাবিল, ভোমরা, বিরল এবং বাংলাবান্ধা) যাত্রীদের চলাচলের জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা হবে।
উত্তরায় বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায় নিতে নারাজ এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পর এ কাজ আবার শুরু হবে। এ বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে।
নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি না করেই ভারী যন্ত্র সরানোর সময় সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যাওয়ার ঘটনায় স্পষ্টতই অবহেলা ছিল কর্মীদের। এর আগেও এই প্রকল্পে একই ধরনের দুর্ঘটনার পরও সেখানে এই হেলাফেলা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারার মধ্যে বিআরটির এমডি বলেছেন, তদন্ত কমিটিই ঠিক করবে দায় কার।
সোমবার ঢাকার উত্তরায় প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনার পরই জনক্ষোভের মধ্যে এই ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান যাদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বিআরটির প্রকল্প পরিচালক সফিকুল ইসলামও।
এখন নিরাপত্তায় জোর
বিআরটি এমডি জানান, প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
কেন এই নির্দেশ- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে তিনি প্রকল্পের সেফটি এনশিওর (নিরাপত্তা নিশ্চিত) করে তারপর কাজ করার কথা বলেছেন। আমরাও চাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আমাদের যে যে জায়গায় ইমপ্রুভ (উন্নতি) করতে হবে, সেগুলো ঠিক করতে হবে। কীভাবে নিরাপত্তা এনশিওর করব সেগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করব।’
দায় কার জানেন না এমডি
বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া কাজ করা ঠিকাদারি কোম্পানির অবহেলার প্রমাণ। তিনি এও মনে করেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চর্চা মেনে কাজ করানো নিশ্চিত করা এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও তদারকি সংস্থার দায়িত্ব। কারণ এই কাজে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের একটি বড় অংশ ধরা থাকে। কিন্তু বাজেটের পর অবহেলাগুলো এই প্রকল্পে স্পষ্ট।
তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধান হয়েও সফিকুল এই ঘটনায় নিজেদের কোনো দায় নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে কার দায়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নির্মাণকাজের সময় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত না করে রাজধানীতে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ কেন চলছিল তার কোনো উত্তর অবশ্য নেই বিআরটি এমডির কাছে।
আবার যে ক্রেনটি দুর্ঘটনা ঘটায়, সেটির এত ওজনের বক্স গার্ডার তোলার সক্ষমতা ছিল কি না, যার সেটি অপারেট করার কথা, তিনিই সেটি চালাচ্ছিলেন নাকি অন্য কেউ চালাচ্ছিলেন, সেই প্রশ্নের জবাবও মিলছে না। দুর্ঘটনার পর ক্রেনের চালক পালিয়ে যান এবং তাকে এখনও ধরা যায়নি।
দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিউজবাংলার মুখোমুখি হয়ে বিআরটি এমডি বলেন, ‘এটা যে কী কারণে হলো। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা প্রতিবেদন দিলেই জানা যাবে৷ একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। তবে কমিটি আরও ইনডিটেইল কাজ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবেন।’
প্রাথমিক তদন্তে দোষী ঠিকাদার
এই দুর্ঘটনার তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটি এরই মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সড়ক পরিবহন সচিবের কাছে। এতে দায়ী করা হয়েছে ঠিকাদারি কোম্পানিকে।
বিআরটি প্রকল্প নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের (সোমবার) ঘটনার মূল দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। তারা কাউকে না জানিয়ে কাজ করছিল অথচ গতকাল কাজ বন্ধ থাকার কথা।
‘তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাপার ঘটলে তাদের যে দায়, সেই রকম ব্যবস্থাই তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশদভাবে বসবে মন্ত্রণালয়। আরও কারো কোনো দায় আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালি প্রমাণিত হলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নে সফিকুল বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে যে কন্ট্রাক্ট আছে সেই চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘বিআরটি গলার কাঁটা’
এর মধ্যেই বিআরটি প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকার তেজগাঁও সড়ক ভবনে গেল বছরের ২২ আগস্ট সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-২-এর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেছিলেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘গাজীপুর বিআরটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর প্রকল্প বাড়াবেন না। যতটুকু আছে, এটাই আগে শেষ করুন।’
২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের চেরাগআলী এলাকায় চলমান ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে এখনও আশাবাদী বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।’
কত ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১৮ শতাংশ কাজ বাকি।’
আরও পড়ুন:সব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না, এ ক্ষেত্রে তেল আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এ নির্দেশনা দেন।
সভা শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, অন্য রাষ্ট্র রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলেছিল শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে দেশ, এরপর ২ মাস পার হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতি খাদে পড়বে না, উল্টো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’
তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মন্দার আভাস মনে করিয়ে দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও এর বাইরে নেই। বলেন, এ জন্য ইকোনোমাইজ বা প্রয়োজনীয় সব ব্যয় করবে সরকার। সংকোচন নয়, অহেতুক ব্যয় বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃচ্ছ্রসাধনে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছিল। দেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানিতে বেশি খরচ হওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হয় সরকারকে।
তাই গত ৫ আগস্ট দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনে লিটারে বাড়ানো হয় ৩৪ টাকা। আর অকটেন-পেট্রলে বাড়ানো হয় ৫১ শতাংশ।
তার আগে থেকেই দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে চেষ্টা করে সরকার। সে জন্য ডিজেলচালিত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সময়ে সময়ে বন্ধ রাখার কথা জাননো হয়। সে কারণে দেশে ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং দেয়া শুরু হয় গত জুলাই থেকে।
প্রথমে দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হলেও সেটি পরে বাড়িয়ে ২ ঘণ্টা, এমনকি কোথাও কোথাও তারও বেশি করে দেয়া শুরু হয়।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। এখন অশোধিত তেল বিশ্ববাজারে ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। রাশিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে শস্যটির রপ্তানি শুরু করেছে রাশিয়া।
সেই সঙ্গে ভারতসহ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশও দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চায় বলে একনেক সভায় সব বিষয় দেখে এগোতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আগামী ২৫ আগস্ট দেশজুড়ে অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম জোট।
রাজধানীর শাহবাগে মঙ্গলবার দুপুরে এক সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস ছাত্তার।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে তেল, সার, পরিবহন ভাড়া না কমালে ২৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতাল। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে এই হরতাল পালন করা হবে। আমরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছি দাম কমাও, জান বাঁচাও।’
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জ্বালানি তেল ও ইউরিয়া সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে পল্টন মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন বাম জোটের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের চলতে থাকে ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে শাহবাগ পার হতে না পেরে নেতাকর্মীরা শিশু পার্কের গেটের সামনে সমাবেশ শুরু করেন।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। নতুন দর অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন দুই শতাধিক ট্রান্সজেন্ডার। এ সময় দেশের সব ধরনের উন্নয়ন কাজে টান্সজেন্ডারের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ের সহযোগিতায় নানা আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করেন তারা।
সোমবার রাজধানীর মিরপুরে পাথওয়ের প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী ও ১৫ আগস্টে তার পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে আলোচনা সভা ও শিশুদের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও গণভোজ এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ট্রান্সজেন্ডার কান্তা বলেন, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে সমাজে এতো অবহেলিত হয়ে থাকতে হতো না। সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেশের উন্নয়নে আমাদেরকেও কাজ করার সুযোগ করে দিতেন। তার ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ ট্রান্সজেন্ডারদের কর্মস্থানে সরকার প্রধানসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসবে।’
আলোচনা সভায় পাথওয়ের নিবার্হী পরিচালক মো. শাহিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে সংযুক্ত করতে হবে।’
এ সময় তিনি অবহেলিত ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি পরিবার, সমাজ, ও নিকট আত্মীয় সকলকে সর্বদাই ভাল ব্যবহার, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে তাদের প্রতি সৌহাদ্যপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান এবং অন্যান্য যে সকল মৌলিক অধিকার রয়েছে সেদিকে নজর দেয়ার কথা বলেন।
তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে রাষ্ট্রের সকল উন্নয়নমূলক কাজে লাগানোর আহবান জানান তিনি।
দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, সমাজসেবা অফিসার (অঞ্চল-৬) কে এম শহিদুজ্জামান, পাথওয়ের চেয়ারম্যান রইজুর রহমান, উপদেষ্টা সাদ্দাম হোসেন ফয়েজসহ বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:কর্তৃপক্ষের অবহেলায় উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ভায়াডাক্টের অংশ বা বক্স গার্ডার পড়ে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রিট করতে বলেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ পরামর্শ দেয়।
বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল ও শাহিনুজ্জামান।
তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে রিট করার পরামর্শ দেয়।
আইনজীবী শাহিনুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গার্ডার পড়ে নিরীহ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ এবং নির্মাণাধীন এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে আদালতের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করি। আদালত লিখিত নিয়ে যেতে বলেছেন। আমরা লিখিত আবেদন নিয়ে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়ে প্যারাডাইজ টাওয়ারের সামনের সড়কে সোমবার বিকেলে ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপা পড়ে একটি প্রাইভেট কার। ক্রেনে তোলার সময় ভায়াডাক্টের অংশটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলত গাড়িটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুই শিশুসহ পাঁচজন। এত আহত হন আরও দুজন।
বিকেলে এমন নির্মাণকাজ করার সময় সেখানে নেয়া হয়নি কোনো ধরনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা। ব্যস্ত সড়কে যান চলাচলের মধ্যেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছিল বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ক্রেনের চালকসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে সোমবার রাতেই মামলা হয়েছে।
সড়ক বিভাগের ৫ সদস্যের একটি কমিটি দুর্ঘটনার তদন্ত করে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে মঙ্গলবার। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে বুধবারের মধ্যে।
এই দুর্ঘটনার দায় সব পক্ষকে নিতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
তিনি জানান, এমন নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে নির্মাণ এলাকা ঘিরে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হয়। যেন সাধারণ মানুষ সেখানে প্রবেশ করতে না পারেন। এমনকি সে এলাকায় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।
এই গবেষক বলেন, ‘ক্রেন থেকে গার্ডার কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে যেতেই পারে, সে কারণেই আপনাকে পূর্ব সতর্কতা নিতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস হচ্ছে, আমাকে সেই জায়গাতে আগেই কর্ডন বা নিরাপত্তা-বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। ওই বেষ্টনীর মধ্যে যেন পথচারী বা কোনো যানবাহন ঢুকতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।’
‘এ ধরনের প্রকল্পে কিন্তু এই ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা বড় ব্যয় ধরা থাকে। আমার মনে হয়, বিআরটি প্রজেক্টে প্রথম থেকেই কনস্ট্রাকশন প্র্যাকটিসের ন্যূনতম যে গ্রামারটা আছে, সেটা তারা ফলো করছে না। … অতীতে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং নিহতের ঘটনাও আছে। ওইখান থেকেও আমাদের একটা শিক্ষা নেয়ার দরকার ছিল।’
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাসের পর এবার নৌযানের ভাড়াও বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে। এখন প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নেয়া হবে ৩ টাকা হিসেবে। আর সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ৩৩ টাকা।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, নৌযানের যাত্রীভাড়া ৩০ ভাগ সমন্বয় করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৭০ পয়সা বৃদ্ধি করে ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০০ কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারে জনপ্রতি ভাড়া ২ টাকা থেকে ৬০ পয়সা বৃদ্ধি করে ২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়েছে।
জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ থেকে ৮ টাকা বাড়িয়ে ৩৩ টাকা করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (নৌরুট, পারমিট, সময়সূচি ও ভাড়া নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ২৭ অনুসারে সরকার নৌযানে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটার প্রতি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন যাত্রী ভাড়া পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে এ সিদ্ধান্তে নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট মধ্যরাতে দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করে সরকার। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা।
এ প্রেক্ষাপটে দূরপাল্লায় কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া ৪০ পয়সা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২ টাকা ২০ পয়সা। যা আগে ছিল ১ টাকা ৮০ পয়সা।রাজধানীসহ সব মহানগরে এই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা করে। এই বৃদ্ধির পর মহানগরীতে যাত্রীদের বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি গুণতে হচ্ছে আড়াই টাকা।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে লঞ্চমালিকরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর দাবি করেন। তবে এর বিরোধিতা করে নৌ মন্ত্রণালয়। এরপর মঙ্গলবার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত এলো।
এর আগে গত নভেম্বরে যখন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়, তখন লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৩৫ শতাংশ। তখন ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সার বদলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বের জন্যও ১ টাকা ৪০ পয়সার বদলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ২৫ টাকা।
আরও পড়ুন:বাসভাড়ায় নৈরাজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর চাপে পড়া বাস মালিক সমিতি ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ ঘোষণার পর সড়কে দেখা যাচ্ছে কৌশলী পদক্ষেপ।
সাভারের ইপিজেড থেকে নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড পর্যন্ত চলাচলকারী লাব্বাইক পরিবহনের ওই বাসের চালক দাবি করছে, তারা ওয়েবিল পদ্ধতি থেকে সরে এসে কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া কাটছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়।
কিলোমিটারের হিসাব বাদ দিয়ে তারা আগের মতোই এক চেক থেকে আরেক চেক পর্যন্ত দূরত্বে বাড়তি ভাড়াই আদায় করছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা ছিল ১১ আগস্ট থেকে ওয়েবিলের বদলে কিলোমিটারের দূরত্ব হিসেবে প্রথম চার কিলোমিটার পর্যন্ত ১০ টাকা, এরপর প্রতি কিলোমিটারের জন্য আড়াই টাকা হারে ভাড়া কাটবে।
কিন্তু এই ঘোষণার চতুর্থ দিন লাব্বাইক পরিবহনের কয়েকটি বাসে উঠে দেখা যায় যাত্রীদের থেকে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে দূরত্ব ভেদে ৫ থেকে ২১ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করা হচ্ছে।
হেমায়েতপুর থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ৮ কিলোমিটারে ভাড়া আসে ৫৪ দশমিক ৫ পয়সা। চার্টের ভাড়া ৫৯ টাকা। যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেছে ৭৫ টাকা। বেশি নিয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়েছে ৩ টাকা ৪৪ পয়সা।
কারওয়ান বাজার থেকে সাইনবোর্ড ১৮ কিলোমিটারের ভাড়া নিয়েছে ৫০ টাকা। তবে নতুন চার্টের ভাড়া এই দূরত্বে ৪৫ টাকা। ভাড়া বেশি নিয়েছে ৫ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়েছে ২ টাকা ৭৭ পয়সা।
ফার্মগেট থেকে মৌচাক পর্যন্ত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটারের চার্টে ভাড়া ১০ টাকা। যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেছে ১৫ টাকা। ভাড়া বেশি নিয়েছে ৫ টাকা।
সাভার থেকে মালিবাগ ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরত্বে চার্টে ভাড়ার অংক ৫৯ টাকা থাকলেও দুজনের কাছ থেকে ৮০ করে ১৬০ টাকা নেয়া হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়েছে ৩ টাকা ৪০ পয়সা।
এই বাসের যাত্রী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো জানতাম না এই দূরত্বে ভাড়া ৫৯ টাকা। ও আমার কাছে ভাড়া চেয়েছে ৮০ টাকা। আমরা দুজন ভাড়া দিয়েছি ১৬০ টাকা। আপনি ভাড়ার চার্ট দেখে বললেন ভাড়া ৫৯ টাকা। এখন আপনি বলেন এদের কী করতে মনে চায়?’
বাড়তি ভাড়া নেয়ার কারণে মালিবাগ রেলগেট এলাকায় যাত্রীরা এই বাসের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. সাইফুলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক যাত্রী তার বাড়তি ভাড়া সাইফুলের কাছ থেকে আদায় করে নেন।
পরে সাইফুল বাসে থাকা একটি মাত্র ভাড়ার চার্ট ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় যাত্রীরা ভাড়ার চার্ট ছিঁড়ে ফেলার কারণ জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘এটা পুরাতন চার্ট।’
তবে সাইফুল ভাড়ার চার্ট ছিঁড়ে ফেলার আগেই ভাড়ার চার্টের তোলা ছবিতে দেখা যায়, এটি বিআরটিএ থেকে দেয়া ভাড়ার নতুন তালিকা।
পরে সাইফুলকে চার্ট ছিঁড়ে ফেলার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়েও কিছু চাইলেও কোনো উত্তর দেননি।
লাব্বাইক পরিবহনের আরেকটি বাসে কল্যাণপুর থেকে বাংলামোট ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটারে চার্টের ভাড়া ১৪ টাকা থাকলেও ভাড়া আদায় করেছে ২০। বেশি নিয়েছে ৬ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা।
কলেজ গেট থেকে মালিবাগ ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটারের চার্টের ভাড়া ১৭ টাকা। তবে এক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে ৩০। ভাড়া বেশি নিয়েছে ১৩ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া পড়েছে ৪ টাকা ৪৭ পয়সা।
গাবতলী থেকে খিলগাঁও ১২.৬ কিলোমিটারে ভাড়া আসে ৩১ দশমিক ৫ টাকা। ভাড়া আদায় করেছে ৩৫ টাকা। বেশি নিয়েছে ৩ টাকা ৫ পয়সা।
এই বাসের যাত্রী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের চার জনের কাছ থেকে গাবতলী থেকে খিলগাঁওয়ের ভাড়া নিয়েছে ১৪০ টাকা। কিন্তু চার জনের ভাড়া আসে ১২৬ টাকা। একেক জনের থেকে সাড়ে তিন টাকা বেশি নিলেও সব মিলিয়ে ১৪ টাকা বেশি নিয়েছে। সমস্যা হচ্ছে ১০ টাকার জায়গায় ১১ টাকা ভাড়া আসলেই তারা রাউন্ড ফিগার করে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়।’
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. আদনান বলেন, ‘আমার কোনো কথা নাই ভাই। চেকারের সঙ্গে কথা বলেন।’
ইস্কাটন এলাকায় বাস থেকে নেমে বাসের যাত্রী সংখ্যা গুনে ওয়েবিলে সই করা মো. সাগরকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া নেয়া হয় না।’
যাত্রীরা সবাই বলছে তাদের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়েছে এবং আগের মতোই আপনারা ওয়েবিলে ভাড়া নিয়েছেন। উত্তরে সাগর বলেন, ‘ওয়েবিল চালু নাই।’
আপনি নিজেই তো যাত্রী গুনে সংখ্যা লিখলেন ওয়েবিলে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমনে হিসাব রাখছে।’
পরে যাত্রীদের সঙ্গে বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাগর বলেন, ‘আমি লাব্বাইকের চেকার না। আমি এখানকার স্থানীয়। লাব্বাইকের একটা গাড়ি ট্রাফিকে ধরছে। এখানের চেকার ওই গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে গেছে। একটু অপেক্ষা করেন। তিনি আসলে জিজ্ঞাসা কইরেন।’
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর চেকার মো. রাসেল আসলে বেশি ভাড়া আদায় ও ওয়েবিলে ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়েবিলের গাড়ি চলে না। আমরা যাত্রীর হিসাব রাখি। যে বেশি ভাড়া আদায় করবে তার ডিউটি বন্ধ করে দেয়া হয়।’
তাহলে আপনার কাজ কী- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা রোডে এই কারণে থাকি যাতে কারও কাছ থেকে বেশি ভাড়া না নিতে পারে।’
তাহলে কীভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে- এমন প্রশ্নে রাসেল বলেন, ‘রাস্তায় থাকা অবস্থায় তাদের আমরা কিছু বলতে পারি না। গাড়িটা স্টান্ডে পৌঁছালে পরে ব্যবস্থা নেই। অপরাধ করলেও চলন্ত গাড়ি থেকে তো স্টাফকে নামিয়ে দেয়া যায় না।’
তবে আগের মতোই চেকার রাসেল প্রতি গাড়ি চেক করার পরে ওয়েবিলে যাত্রী সংখ্যা লিখে সই করে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে নেমে যান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য