চলতি মাসের ২৭ তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকার নিবন্ধন শেষে কিছু ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে যেকোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যদের মঙ্গলবারের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন কাজ শেষ করতে হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
‘বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে তাদের আবাসন হল খুলে দিতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে হবে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সম্ভাবনাই বেশি।’
বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় যারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে পারছেন না, তাদের জন্য একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ একটি অ্যাপ তৈরি করতে ইউজিসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে করোনার টিকা নিতে পারছেন না, তাদের টিকার আওতায় আনার জন্য ইউজিসি একটি অ্যাপ তৈরি করবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করবে। এরপর ইউজিসি সেসব তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আর শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’
সভায় ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী মঙ্গলবার পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৯০ হাজার শিক্ষার্থী।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। এতে ধাপে ধাপে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
তখন জানানো হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা শুরু হবে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে। তবে এর আগে সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিকা সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে ইউজিসিতে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ টিকার আওতায় আসবে সেগুলো আগে খুলবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। দেড় বছর পর রোববার থেকে খুলে দেয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সোমবার খুলেছে মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল ও নার্সিং সংক্রান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি বুধবার প্রকাশ করা হয়। তবে এতে কতজন নিয়োগ পাবেন তা জানানো হয়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আবেদন শুরু হবে আগামী ৩০ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। চলবে ১৪ এপ্রিল রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
একযোগে না করে বরং বিভাগভিত্তিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের জন্য বিজ্ঞপ্তি।
অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও। এই ধাপের বিজ্ঞপ্তির পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে অতিথি এক শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজিব আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ফরিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বহিরাগতদের সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। বহিরাগতদের একজন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য দিব্য। তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলে নিয়ে যান হলের শিক্ষার্থীরা। অনিন্দ্য দিব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পূর্বপরিচিত।
বাগবিতণ্ডার ওই ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের হলের গেস্টরুমে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতারা। তারা দিব্য ও অন্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সজীবের কানে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকেন হাসান মাহমুদ ফরিদ। এতে সজীবের কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
আহত সজীবকে তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বাধা দেন। পরে সজীবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অতিথি কক্ষে আমাদের পাঁচজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে কানে থাপ্পড় মারতে থাকেন ভাইয়েরা। সজিবের কানে একটু আগে থেকেই সমস্যা ছিল। থাপ্পড়ের কারণে তার কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।’
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বলেন, ‘আমরা হলে প্রতি সপ্তাহে গেস্টরুম করি। সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজকর্ম করার জন্য সেখানে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকালও (মঙ্গলবার) তেমনটিই হয়েছিল।’
তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তাকে তো মারা হয়নি। তার কানে আগে থেকেই একটু সমস্যা ছিল। ডাক্তার তাকে পানি লাগাতে নিষেধ করেছে। গেস্টরুমে একটু চিৎকার হয়েছিল, তাতেই তার কানে সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য আমরাই দায়িত্ব নিয়ে মেডিক্যালে পাঠিয়েছিলাম। সে আমাদের ছোট ভাই। তাকে কেন আটকে রাখব?’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ ফরিদ বলেন, ‘কাল (মঙ্গলবার) রাতে গেস্টরুম হয়েছিল। সেখানে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কাউকে কানে থাপ্পড় দেয়া বা মারা হয়নি। ওই ছেলে গেস্টরুমে অসুস্থ বোধ করছিল। তাই তাকে আমরা তার বন্ধুদের সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
অতিথি কক্ষে এ ঘটনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও শাহ পরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার প্রমুখ।
তারা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘অতিথি কক্ষে নির্যাতন কিংবা মারধর হয়ে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিতব্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।
একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, গুচ্ছে যাচ্ছে জবি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, গুচ্ছে থাকা না থাকা নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৪ তম একাডেমিক কাউন্সিলে (বিশেষ) সর্বসম্মতিক্রমে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে ২০ মার্চ ইউজিসির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ পদ্ধতিতে থাকা আগের সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই অংশগ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করে জোর করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে থাকার চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ নিয়ে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময়ক্ষেপণ না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার কারণে নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন সংরক্ষণ, নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষা, গুচ্ছ পদ্ধতির নানা অসংগতি ও হয়রানি বন্ধ না হওয়া, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ এবং গুচ্ছের বাইরে এই দুইভাগে বিভক্ত করে স্বায়ত্বশাসন নীতির মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে।
ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলেও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শিক্ষা-কার্যক্রমে ছয় মাস এগিয়ে রয়েছে। এতে সেশনজটে পড়েছেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। কাজেই একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকতে পারে না।
ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সরকারই পাশ করেছে। আবার শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য সরকারই বৃহৎ স্বার্থে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য একাধিকবার গুচ্ছ পদ্ধতির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা দিয়েছে। ইউজিসি শুধু তা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করেছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক বলেন, ইউজিসি তাদের সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তো আছেই। একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ে তো সিন্ডিকেট বড়। সিন্ডিকেটেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:বগুড়ায় এক বিচারকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “এই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডতা হয়।
“ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’
“ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে ওই বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সে সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
‘যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি।’
এদিকে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বিদ্যালয়ে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
বিছানায় শুয়ে মোবাইল চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। পা টিপছেন শাখা ছাত্রলীগেরই দুই নেতা।
এমনই একটি ছবি সোমবার দিনজুড়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা।
শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ৩১১ নম্বর কক্ষের চিত্র এটি। এই কক্ষে থাকেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। অন্যদিকে পা টিপতে থাকা দুই নেতা হলেন, উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ ও উপক্রীড়া সম্পাদক শফিউল ইসলাম।
তবে সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের দাবি ছবিটি আড়াই বছর আগের। তার অসুস্থ থাকাকালীন এই ছবি দিয়ে অপরজনীতি করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
রুবেল বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম, আমার ছোট ভাই দুইজন আমার সেবা করেছে। এটা মানবিক বিষয়। ছাত্রলীগের সভাপতি বলে কি কেউ আমার সেবা করতে পারবে না? আমার সঙ্গেরই কেউ সেই সময় ছবি তুলে এখন অপরাজনীতি করছে।
তিনি বলেন, অসুস্থ হলে মানুষ মানুষকে এমনিতেই দেখতে আসে, সেবা-যত্ন করে। এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। ছবিতে ওষুধপথ্য দেখা যাচ্ছে। যারা অপরাজনীতি করছেন তারা অমানবিক কাজ করছেন। আমি নিজেও প্রেসিডেন্ট হয়ে পা টিপেছি, সেবা করেছি, এমন ছবিও আমার ওয়ালে দিয়েছি। সেটা ভাইরাল করুক।
পা টেপার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আজাদ বলেন, রুবেল ভাই অসুস্থ ছিলেন। আমরা ওনার পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়েছি। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে অন্যরা যেমন সেবা করেন, এটাও তেমন।
বিশ্ববদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেজাউল হক রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি স্নাতক পাস করেন ২০১০ সালে। স্নাতকোত্তর পাস করেছেন ২০১৩ সালে। আর ২০১৯ সালে ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সভাপতির মেয়াদ এক বছর হলেও তিনি এখনো এই পদে রয়ে গেছেন। তার শিক্ষাবর্ষের অন্য শিক্ষার্থীরা অন্তত ৯ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। তবে তিনি এখনও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন:দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ইন্ধনের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর পদত্যাগ এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে আমরণ অনশনে বসেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী।
টানা ১০ দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেও কোনো ফল না আসায় শেষ পর্যন্ত অনশনের পথ বেছে নিয়েছেন তারা।
রোববার বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু ভাষ্কর্যের পাদদেশে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এনায়েত উল্লাহ, আইসিটি বিভাগের দুই শিক্ষার্থী কাজল হোসেন ও ইমতিয়াজ শাহরিয়া এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান চৌধুরী অনশনে বসেন।
সন্ধ্যা ৭টায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপাচার্য। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়ে দেন তারা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করেও তাদের এই আমরণ অনশন চলমান রয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৮টায়ও বৃষ্টিতে ভিজে তাদেরকে অনশন করতে দেখা যায়।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ‘৮ মার্চ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক সংলগ্ন তাজান্না ভূঁইয়া কনফেকশনারির সামনে ‘প্রক্টর সমর্থিত’ ছাত্রলীগের ক্যাম্পাসের বাইরের অংশের হাতে হামলার শিকার হন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী হৃদয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ইমতিয়াজ শাহরিয়া ও কাজল হোসাইন।
এর আগে ১৬ মার্চ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর জাস্টিস’-এ রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে দাবি আদায়ে তারা আল্টিমেটাম দেন। একই সময়ে প্রক্টরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তারা।
আল্টিমেটাম দেয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়ে অনশনে বসেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অনশনকারী শিক্ষার্থী কাজল হোসাইন বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় অনশনকারী শিক্ষার্থীদেরকে দেখতে এসে সান্ত্বনা দিয়ে চলে যান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান। সে সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর না দিয়েই স্থান ত্যাগ করেন তিনি।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনও অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেন। ভিসির সামনে অনশনে অনড় থাকার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে অনশনরতরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য।
সে সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
আরও পড়ুন:কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ এবং চরকির সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে অলটাইম প্রেজেন্টস নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ইন্টার্নশিপ’ ।
রোববার সিইউব-এর মিলনায়তনে ওয়েব সিরিজের প্রথম আটটি পর্বের প্রথম দুইটির প্রদর্শনী করা হয় ।
‘ইন্টার্নশিপ’ ওয়েব সিরিজের অভিনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান চরিত্রে থাকা সৌম্য জ্যোতি, তাসলিমা হোসেন নদি, মোরশেদ মিশু, মীর রাব্বি, কারিনা কায়সার প্রমুখ। এছাড়া ও উপস্থিত ছিলেন ওয়েব সিরিজের নির্মাতা রেজাউর রহমান।
প্রদর্শনীর সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ'র অধ্যাপক ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ রিদওয়ানুল হক, লামিয়া সেলিম, হেড অফ এক্সটার্নাল আফ্যেয়ারস এন্ড পার্টনারশিপ এবং চরকির টিম থেকে ছিলেন মার্কেটিং অ্যান্ড গ্রোথের প্রধান জনাব ফয়সাল মুজিবুর রহমান।
প্রফেসর মুহাম্মদ রিদওয়ানুল হক তার বক্তব্যে বলেন- ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনই ইন্টার্ন ছিলেন না বা হুমায়ূন আহমেদও ছিলেন না কিন্তু আজকের এই সময়ের সুযোগ গুলোই ভবিষ্যতের দুয়ার উন্মোচিত করতে সাহায্য করবে। আমরা এমন একটি সুন্দর আয়োজনের জন্য একত্রিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
প্রদর্শনী শেষে ইন্টার্নশিপ ওয়েব সিরিজের অভিনেতারা তাদের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং কেক কাটা হয়।
মন্তব্য