জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকায় নতুন করে মেস বা বাসা নিতে হচ্ছে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নারী শিক্ষার্থীরা যেন তাদের একমাত্র বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে উঠতে পারেন, সে জন্য নীতিমালা তৈরি করছে প্রশাসন। তবে সিট বণ্টন এখনও শুরু হয়নি।
এতে পরীক্ষার আগে আবাসিক হলে সিট পাওয়া না পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ছাত্রীরা। একই সঙ্গে হলে থাকতে পারবেন নাকি বাসা ভাড়া নিতে হবে, এ নিয়ে দোটানায় পড়েছেন।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনতাজ হেনা আঁখি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেড় বছর পর ঢাকায় ফিরছি। এখন নতুন করে বাসা ভাড়া নিতে হচ্ছে। আবার শুনছি, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে হলে ছাত্রীদের সিট দেয়া হবে। আমি পাব কিনা আগে জানতে পারলে বাসাভাড়ার খরচটা বেঁচে যেত।’
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে ইফফাত ফিয়া বলেন, ‘হলে সিট পাব কি না সেটি আগে জানালে আর বাসা ভাড়া নিতে হয় না। সিট পাব না জানলে নিশ্চিন্তে বাসা নিতে পারি। আবার মনে হয়, সিট পেলে বাসা ভাড়া নেয়াটা তো লস।’
এ বিষয়ে ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো এখনই খুলছে না। এখন শুধু পরীক্ষা হবে। ভিসি স্যার বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলে ছাত্র-ছাত্রীরা তখন সরাসরি হলে উঠবে। এখন শুধু পরীক্ষা দিতে আসবে।’
হল খুললে কারা সিট পাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মেধা ও বাড়ির দূরত্বের ভিত্তিতে সিট পাবে। যার বাড়ি যত দূর তার সিট পাওয়ার চান্স তত বেশি। তবে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা বেশি সিট পাবে। এরপর চতুর্থ বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ এভাবে ক্রমান্বয়ে সিট বণ্টন করা হবে।’
দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা ঘুচিয়ে ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলের উদ্বোধন করা হয়। ১৬ তলা বিশিষ্ট এ হলের ১৫৬টি কক্ষে চারজন করে মোট ৬২৪ জন ছাত্রী থাকতে পারবেন।
রাজধানী ঢাকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রেখেই আলাদা প্রশাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ঢাবির অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে ফের দু’দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারী সাগর।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের মূল দাবি থেকে সরে আসব না। সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দাবি, সেটি আমাদের থাকবেই। মন্ত্রণালয় সাত কলেজের বিষয়ে যে কমিটি করেছে, সে কমিটি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে।’
দ্রুত সময়ের মধ্যে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার কথাও বলেন এই শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাত কলেজ নিয়ে যেকোনো ধরনের চক্রান্ত প্রতিরোধ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের ‘অবিবেচক’ বক্তব্য প্রত্যাহার, কমিটি বাতিল, কমিশন গঠন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
একইসঙ্গে সাত কলেজের সব ক্যাম্পাসে দাবির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান যে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকছে। তবে তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে তাদের বিষয়টা আলাদাভাবে দেখা হবে।
তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সাত কলেজের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। তাদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজ আলাদাভাবে করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘সাত কলেজের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রার ও ডেডিকেটেড কর্মকর্তা থাকবেন। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে করা হবে।’
এ বিষয়ে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বস্তুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপদেষ্টাদের বৈঠকে সাত কলেজের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেস সচিবের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রাজধানী ঢাকার বড় সাতটি কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ আলাদা একটি ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। তবে এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে এই সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন, কথা বলেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই একটি জায়গা ঠিক করা হবে, যেখানে সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মগুলো করা যায়।
তিনি বলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা হবে। আলাদা রেজিস্ট্রারসহ সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শফিকুল আলম বলেন, সরকার আশা করছে এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্দোলন আজ থেকে শেষ হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই সাতটি সরকারি কলেজ হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
এর আগে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ছিল। সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্তোর কথা জানানো হলো।
আরও পড়ুন:বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ক্যাম্পাস। যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট সংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা৷
সকাল ১০টায় অবরোধ করে ৮ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১১টার মধ্যে বাসচালক ও মালিক গ্রেপ্তার না হলে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে মহাসড়কেই মাইশা ফৌজিয়া মিমের জানাজা আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। জানাজায় নিহত মাইশার বাবা-মামাসহ পরিবারের লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভাগীয় কমিশনার ও বরিশালের জেলা প্রশাসক কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক ছাড়তে রাজি হননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের দশটি দাবির একটিও পূরণ হয়নি। এখন পর্যন্ত খুনি বাসচালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। বাস মালিককেও হাজির করতে পারেননি তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মহাসড়ক ছাড়ব না।’
অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের একজন রুবেল মোল্ল্যা বলেন, ‘আমাদের বোন নিহত হয়েছে গতকাল। কিন্তু প্রশাসন এখন পর্যন্ত ঘাতক বাসচালককে আটক করতে পারেনি। বাস মালিককেও আনতে পারেনি। এমনকি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থাও হয়নি।
‘এসব দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। আর যেন এভাবে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে না ঝরে সে জন্য ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণসহ আমরা সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান চাই।’
নিহত ছাত্রীর বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বড় হয়েছেন ঢাকায় মায়ের সঙ্গে মামাদের তত্ত্বাবধানে। মাইশার বাবা মোহাম্মদ আলী সবার কাছে তার সন্তানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান এবং এই হত্যার যথাযথ বিচার দাবি করেন।
জানাজা শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ‘জানাজা নামাজ শেষে দুপুর ১২টার পর নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া দশ দফা দাবি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা অধিকাংশ দাবি আদায় করেছি। কিছু দাবির কাজ চলমান। শিক্ষার্থীদের আমরা আশ্বস্ত করেছি সব দাবি আমরা পূরণ করব অতি দ্রুত।’
বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের করা দাবি অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছি। সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালককে আটক করতে বুধবার রাত থেকেই আমাদের পুলিশ কমিশনার তৎপর আছেন। আমরা আজ রাতের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করব। স্পিডব্রেকার দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি আমারও দাবি। আমি গতকাল রাত থেকেই দাবিগুলো পূরণে কাজ করছি। ইতোমধ্য কিছু কাজ আমরা করেছি৷
‘বিআরটিএ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সড়কে স্পিড ব্রেকার নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাসচালক ও সহকারীকে ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। আশা করছি শিগগির তাদেরকে আটক করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই না এভাবে আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ সড়কে ঝরুক। তার জন্য যা করার প্রয়োজন আমি করব।’
জানা গেছে, ঢাকায় পারিবারিকভাবে মামাদের তত্ত্বাবধানে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভোলা রোডে পুলিশ বক্সের পাশে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক পার হওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলসের একটি পরিবহন মাইশাকে চাপা দেয়। শেরে বাংলা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন সময় চেয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘এক দিনে বা হঠাৎ করে সমাধানযোগ্য নয়।’
উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিবৃতিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় পাওয়া শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এসব দাবি-দাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছু ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী দাবিও আছে।
‘একটি বৈষম্যবিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। শিক্ষা খাতের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবি পূরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া কঠিন। অথচ সব কয়টি দাবির পেছনের আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে, যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রুত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
‘এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে, যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে, তা বিবেচনায় ন্যূনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন।’
শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনার বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের সমস্যাসংকুল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি একজন আজীবন শিক্ষক হিসেবে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে আমার সকল সহানুভূতি আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ, আন্দোলন ও আলটিমেটামের মাধ্যমে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেয়ার কোনো নজির কোথাও নেই।’
এমন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী নয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের সিনিয়র উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান ইউএনবিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এবারের ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ১০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯৬ দশমিক ৫০ এবং সর্বনিম্ন প্রাপ্ত নম্বর ৬৯ দশমিক ৫০। এবার মোট আসনসংখ্যার দ্বিগুণ শিক্ষার্থীকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ও ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটে (https://acas.edu.bd) পাওয়া যাবে।
ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণে আগ্রহী প্রার্থী অফেরতযোগ্য এক হাজার টাকা জমা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট পেজে ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর তারিখের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।
আগামী ২ নভেম্বর ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের মাধ্যমে আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল বুধবার পুনরায় সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। ৫ ঘণ্টা অবরোধ শেষে এই ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছেড়ে গেছেন তারা।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিশন গঠনের দাবিতে মঙ্গলবার প্রায় ৫ ঘণ্টা রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে আগামীকাল বুধবার ফের ‘ব্লকেড’ ঘোষণা করে এদিনের মতো তারা অবরোধ তুলে নেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আজ সকাল ১১টা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সফল হয়েছে। আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ‘আমলাতান্ত্রিক’ কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
“সারাদিন আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চললেও এখন পর্যন্ত আমরা কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও আমরা অবগত নই।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অবিলম্বে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠনের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় আবারও সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শান্তিপূর্ণ ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। একইসঙ্গে আজকের মতো ব্লকেড কর্মসূচি এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো।’
‘যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবনবাজি রেখে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই। ’২৪-এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা। আমি তাদের পক্ষে থাকব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ছাত্রলীগের পদধারী সদস্যদের গণ হারে গ্রেপ্তার সমর্থনযোগ্য নয়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত ৮টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে সারজিস লেখেন, ‘[ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের] ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণ হারে গ্রেফতার কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, যারা ১ জুলাই থেকে আমাদের সাথে রাজপথে জীবন বাজি রেখে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতি এ আচরণ ঠিক নয়। আন্দোলন সফল না হলে এই শিক্ষার্থীদেরই বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো এবং তাদেরকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হতো।
পোস্টের শুরুতে তিনি জানান, তার এ বক্তব্য কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের পদধারী সদস্যদেরকে কেন্দ্র করে।
‘১ জুলাইয়ের পূর্বে এবং ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এ আন্দোলনটা [কোটা সংস্কার আন্দোলন] মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলেমেয়েরাই [এগিয়ে] নিয়ে গিয়েছে।’
যে সিস্টেমের কারণে এসব শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলকভাবে ছাত্রলীগে যুক্ত হয়েছে, সে সিস্টেমের জন্য সবাই দায়ী বলে উল্লেখ করেন সারজিস।
তিনি লিখেন- কারণ, আপনারা হলে ও ক্যাম্পাসে… ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাধা দেননি। ওরা যদি সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয়, তবে আপনিও গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন।’
‘বরং যখনই সুযোগ হয়েছে, ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনও আপনি নীরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন,’ লেখেন সারজিস।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ৮০ শতাংশ ছাত্র যদি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্তসাপেক্ষে শাস্তি হোক।
‘কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণ হারে গ্রেপ্তার হবে; এটা কখনোই সমর্থন করি না। এটা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই। ’২৪-এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা। আমি তাদের পক্ষে থাকব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য