‘শরিয়তসম্মত বিনিয়োগের’ কথা বলে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার তিন ভাইকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সোমবার দুপুরে রিমান্ডে নিতে পুলিশ আবেদন করলে বিচারক মো. মহিউদ্দীন তাদের সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ জ মো. মাসুদুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন পিরোজপুরভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মাওলানা রাগীব আহসান এবং তার তিন ভাই মাওলানা আবুল বাশার, খাইরুল ইসলাম ও মুফতি মাহমুদুল হাসান। এর মধ্যে আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানটির সহপরিচালক।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে রাগীব আহসান ও আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সে রাতেই পিরোজপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের।
পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় ২০১০ সালে শুরু হয় এহ্সান রিয়েল এস্টেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে গত শুক্রবার বিকেলে রাগীবের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, ‘শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’ কেমন হবে, তার প্রচার চালিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ব্যবসার ফাঁদ পাতা হয়েছে ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় মজলিসে, ব্যবহার করা হয়েছে ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্রদের। তারা শরিয়তসম্মত বিনিয়োগের কথা শুনে অকাতরে টাকা ঢেলেছেন, এরপর ঠকেছেন।
এই কোম্পানির মাধ্যমে আনুমানিক ১৭ হাজার কোটি টাকা রাগীব হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে এবং তিনি এর আগে একবার জেলও খেটেছেন।
র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এমএলএম কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরপর তাকে (রাগীবকে) গ্রেপ্তার করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব আহসান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করে নানা তথ্য দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে টাকা উত্তোলন
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাগীব মূলত ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে অপব্যবহার করে এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করেন। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি, ইমাম ও অন্যদের টার্গেট করেই তিনি কাজ করতেন।
তিনি 'শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ'-এর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। ওয়াজ মাহফিলেও ব্যবসায়িক প্রচারণা চালানো হতো।
তিনি লাখ টাকার বিনিয়োগে মাসে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখান। এভাবে ২০০৮ সালেই ১০ হাজার গ্রাহককে যুক্ত করতে সমর্থ হন। গ্রাহকের সংখ্যা একপর্যায়ে ছাড়িয়ে যায় লক্ষাধিক।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, রাগীব হাউজিং ল্যান্ড প্রজেক্ট, দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সাধারণ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অনেকেই পাওনা টাকার চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই ভয়ভীতি, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হতেন বলে ভুক্তভোগীরা জানান।’
তিনি কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং এই টাকা জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার হতো কি না, এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিভিন্ন ভুক্তভোগীর তথ্য, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আনুমানিক তিনি ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘আত্মসাৎকৃত টাকা জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার হয়েছে কি না, সেটা আমাদের গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখবেন।’
ঠকিয়েছেন কর্মচারীদেরও
র্যাব জানায়, রাগীবের প্রায় তিন শ কর্মচারী ছিল। তাদের নির্ধারিত কোনো বেতন দেয়া হত না।
কর্মচারীরা মাঠপর্যায় থেকে বিনিয়োগকারী গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকেন। তাদের গ্রাহকের বিনিয়োগের ২০ শতাংশ অর্থ দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। আর তারাও দ্রুত গ্রাহক বাড়াতে থাকেন। তবে পরে গ্রাহকদের মতো প্রতারিত হন তারাও।
আরও পড়ুন:শেরপুরের এবারের বন্যায় পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন ঘের থেকে ৭১ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।
এমন বাস্তবতায় চাষিরা বলছেন, ঠিক সময়ে বন্যার পূর্বাভাস পেলে ক্ষতি কমানো যেত।
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সোমবার দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এ উন্নতি হয়।
জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শেরপুরের ৫ উপজেলায় পানিবন্দির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারে।
জেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে। পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে গত চার দিনে বন্যার পানিতে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়।
ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বন্যায় বিপর্যস্ত হয় শেরপুর। তলিয়ে যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি, তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মৎস্য খাত।
মাছচাষি রাকিবুল মিয়া বলেন, ‘বহু মাছ চলে গেছে। দুই-আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সব তলিয়ে গেছে। যত প্রজেক্ট আছে এখানে, সব মাছ ভেসে চলে গেছে।’
আরেক মাছচাষি খাইরুল বলেন, ‘বন্যার পূর্বাভাস না থাকায় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারি নাই। এ জন্যই ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। আমাদের প্রজেক্টের মাছ বাইরে চলে গেছে। আর এদিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মেরে বিক্রি করতাছে।
‘আর মানুষ কম দামে পেয়ে আনন্দ করে কিনতাছে, কিন্তু আমরা তো বুঝতাছি কেমন ক্ষতি হইছে আমাদের।’
মাছচাষি নাইম বলেন, ‘আগে যদি আমরা জানতাম বা কেউ যদি জানাত, তাহলে আমাদের এত ক্ষতি হতো না। আগে জানলে তো আর এই অবস্থায় থাকত না।
‘সব জাল দিয়ে ঘিরে রাখতাম। আমার ৫ লাখ টাকার মাছ ছিল। সব শেষ।’
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, এ বছর শেরপুরে ৩৩ হাজার ১৭৯টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন ১৮ হাজার ১৩৫ জন চাষি। আর প্রতি বছর এ জেলায় উৎপাদন হয় গড়ে ৩৫ হাজার ২৪০ টন মাছ। বন্যায় ভেসে যায় সাত হাজার ৩০০ পুকুরের ৭১ কোটি টাকার মাছ।
এবারই স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে এ অঞ্চলের মাছচাষিরা।
শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
‘তারা যদি সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে আমাদের কোনো সহযোগিতা দেয়, তাহলে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরে সৃষ্ট বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ।
বৃষ্টি না হওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে।
জেলার চারটি পাহাড়ি নদীর পানি আরও কমেছে। এসব নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, দশানী ও মৃগী নদীতে।
পানি বৃদ্ধি পেলেও এসব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে গত চার দিনে বন্যার পানিতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সোমবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৩৮ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর পানি ৭৭ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল।
কমেনি দুর্ভোগ
জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জেলার অনেক দুর্গম এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট ও শৌচাগারের সমস্যা তো রয়েছেই।
ফসলহানি ও মাছের ঘেরের ক্ষতি
কৃষি বিভাগ ও মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া এক হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ছয় হাজারেরও বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে সব হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্যার কারণে অনেক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ বন্ধ রয়েছে।
জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪১টি। এর মধ্যে বন্যার শিকার হয়েছে ৩০১টি। এর মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
‘যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলের ভেতরে পানি না উঠলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।’
জেলায় মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি, কলেজসহ ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে।
শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেজওয়ান বলেন, ‘বন্যার জন্য আমাদের শেরপুর জেলায় প্রায় ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আমরা প্রতিনিয়ত সেগুলোর তথ্য রাখছি। পানি কমে গেলে সেগুলো খুলে দেয়া হবে।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছি। আমাদের এ কাজে সেনাবাহিনী সার্বিক সহযোগিতা করছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন। সবাই মিলে আমরা এ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
ডিসি জানান, এরই মধ্যে ১০ হাজারের মতো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়। আরও ২৫ হাজারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যে পাঁচ হাজার পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে জেলায় বন্যায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের ফসলের মাঠ থেকে শনিবার সহোদর দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন।
সর্বশেষ প্রাণ হারানো দুজন হলেন হাতেম আলী (৩০) ও তার ভাই আলমগীর হোসেন (১৮)। তারা অভয়পুর গ্রামের প্রয়াত বাছির উদ্দিনের ছেলে।
এর আগে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ পাঁচজন।
প্রাণ হারানো লোকজনের স্বজনরা জানান, শুক্রবার চেল্লাখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন সহোদর দুই ভাই। এরপর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। কুতুবাকুড়া গ্রামের দুইজন কৃষক শনিবার বিকেলে ধানক্ষেতে তাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে স্বজনরা গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন জানান, পাহাড়ি ঢলের স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হওয়া দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে প্লাবিত হয় জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী ১৬টি গ্রাম।
নতুন করে শনিবার রাতে নকলা ও সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন দুই লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন:রাজধানীর শুক্রাবাদের একটি বাসায় জমে থাকা গ্যাসের আগুনে স্বামী মোহাম্মদ টোটনের পর প্রাণ হারিয়েছেন তার স্ত্রী নিপা আক্তার।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) বুধবার রাত একটার দিকে মৃত্যু হয় ৩০ বছর বয়সী এ নারীর।
শুক্রাবাদের বাসাটিতে ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ হন পরিবারটির তিন সদস্য, যাদের ভর্তি করা হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
নিপার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে দুজনে দাঁড়িয়েছে।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তরিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার জানান, শুক্রাবাদ থেকে একই পরিবারের তিন দগ্ধকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে নিপার মৃত্যু হয়, যার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, এর আগে হাসপাতালটিতে নিপার স্বামী টোটনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাদের শিশু সন্তান ভর্তি রয়েছে, যার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
হাসপাতালে নিপার ভাই মানিক মিয়া জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার কাচারিকান্দি গ্রামে। তার ভগ্নিপতি পরিবার নিয়ে শুক্রবাদের বাসাটিতে ভাড়া থাকতেন।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় টানা ৫২ ঘণ্টা পর নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনরত একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
মহাসড়ক থেকে বুধবার দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সরে গেলে দীর্ঘ সময় পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন বার্ডস গার্মেন্টসের কয়েক শত শ্রমিক।
শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে সড়কে অবস্থান করে তারা আন্দোলন করেছেন, কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের সাথে কথা বলেনি।
‘আজ দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়, বার্ডস গ্রুপের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে শ্রমিকরা।’
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লে-অফ করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দিন ধার্য করা ছিল, কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশও প্রদান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সব শ্রমিক পাওনাদি পাওয়ার আশায় সকালে কারখানায় গেলে নোটিশে আরও তিন মাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পান শ্রমিকরা। ওই সময় উত্তেজিত হয়ে সব শ্রমিক নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার রোড এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
অবরোধের টানা ৫৬ ঘণ্টা পর মালিককে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বার্ডস গ্রুপের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ারকে আটক করা হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর দুপুর একটার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা। পরে সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়।’
আরও পড়ুন:হামলা মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহান সাদিকের আদালতে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, সকালে এম এ মান্নানকে আদালতে হাজির করলে আসামিপক্ষের হয়ে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম ও নুর আলম তার জামিন প্রার্থনা করেন। অন্যথায় অসুস্থ বিবেচনায় তাকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন করেন তারা।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুক আলম বলেন, ‘আমরা তখন আদালতকে বলেছি, এটা দ্রুত বিচার আইনের মামলা। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকও অনুপস্থিত। শুনেছি পুলিশও রিমান্ড চাইবে। সুতরাং সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে সকল পক্ষের শুনানি হতে পারে।
‘বিচারক ফারহান সাদিক পরে এম এ মান্নানকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি হবে বলে জানান।’
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের বাসভবন থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্যের দল তাকে আটক করে সুনামগঞ্জ সদর থানায় নিয়ে আসে।
এসপি আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, শুক্রবার এম এ মান্নানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ ঘটনাসহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় তার যুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে।
গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামের জহুর আলীর ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে ২ সেপ্টেম্বর ৯৯ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ওই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট এক নম্বর ও এম এ মান্নানকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পূর্বঘোষিত ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে সোমবার নির্ধারণ করে প্ল্যাটফর্মটি।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সংবাদকর্মীদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রোববার এ তথ্য জানান।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে একই তথ্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রিফাত রশিদসহ আরও কয়েকজন সমন্বয়ক।
এর আগে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল ৬ আগস্ট, মঙ্গলবার। আর সোমবার ছিল ঢাকায় সমাবেশ আর সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি।
গতকাল বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের বার্তা দেন আসিফ মাহমুদ।
বার্তায় বলা হয়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই (সোমবার) সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করা হয়েছে। চূড়ান্ত জবাব দেয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে।
‘যে যেভাবে পারেন কালকের মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাব।’
মন্তব্য