পরিবেশ দূষণের কারণে সম্প্রতি সাভারের হরিণধরা এলাকায় চামড়া শিল্পনগরী বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ এসেছে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে। চালু হওয়ার চার বছরের মধ্যে এটি বন্ধের দাবি উঠতে শুরু করেছে।
চামড়া শিল্পনগরী কেন বন্ধ করা হবে না, বিসিকের কাছে এর কারণ জানতে চেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এদিকে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকরাও পরিবেশ দূষণ রোধ করে সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
বিসিক বলছে, ট্যানারিগুলো প্রয়োজনের বেশি পরিমাণ পানি ব্যবহার করায় তা সিইটিপির শোধন ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে সলিড বর্জ্যকে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহার করলে এই সমস্যা সমাধান হবে। এই লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প নিয়ে তারা এগুচ্ছে।
গত ২৩ আগস্ট পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দূষণের কারণে চামড়া শিল্প নগরী বন্ধের সুপারিশ করে।
সাভারের হরিণধরা এলাকায় চামড়া শিল্পনগরীতে গিয়ে পরিবেশ দূষণ দেখতে পায় নিউজবাংলা।
শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা যায়, শেষ প্রান্তে সড়কের দুই পাশে স্তুপ করে রাখা হয়েছে কঠিন বর্জ্য। কোথাও কোথাও ড্রেন উপচে রাসায়নিক মিশ্রিত কালো পানি চলে এসেছে সড়কে। উৎকট গন্ধের কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে শ্রমিকদের। বর্ষাকালে কিংবা বৃষ্টি হলেই ট্যানারি বর্জ্য মিশ্রিত পানি সড়কে চলে আসে। তখন ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়।
কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) পাশেই ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে রীতিমত ভরাট হয়ে গেছে ট্যানারির কঠিন ও তরল বর্জ্যে, যা নদীর জন্যে হুমকি।
স্বাধীন ট্যানারির শ্রমিক মোহাম্মদ বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাস্তাঘাট নোংরা হয়ে থাকার কারণে আসা-যাওয়া খুব কষ্ট হয়। রাস্তার দুই পাশে ময়লা রাখার কারণে পানি কোনো পাশে যাইতে পারে না। এই জন্য সমস্যা হয়।’
রাসেল মিয়া নামে ট্যানারির আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমি ভাত খাইয়া এই দিক দিয়া আসলে গন্ধে আমার মাথা ঘুরে। সব সময় ৫ টাকা অটো ভাড়া দিয়া ফ্যাক্টরিতে যাই। কিন্তু বৃষ্টি হইলে ১০ টাকা দিলেও অটো এই দিকে আসে না। তখন পুরা রাস্তা ময়লার পানিতে ডুইবা যায়। ওই হাইটা গেলেও পায়ে পাঁচড়া (চুলকানি) হয়। অনেক সময় গাড়িগুলা রাস্তার মইদ্দেও ময়লা ফালায় যায়।’
এত সমস্যা নিয়েও ট্যানারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চান এই পেশার সঙ্গে ৩০ বছর ধরে জড়িত কবির হোসেন। বর্তমানে গ্রিনঅ্যারো ট্যানারিতে কাজ করেন তিনি।
কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের রিজিকের উপর আঘাত আসবে। এটা আমরা কোনোভাবে মাইনা নিতে পারব না। এর জন্যে বিসিক একমাত্র দায়ী। এমনকি যারা এইটার পৃষ্ঠপোষক, সরকারও এইটার জন্য দায়ী। এইটার দায় কারা নিবে, কী করবে যাতে এই শিল্পটা বাঁচে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পরে এটা গোল্ডরেও হার মানায়।’
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের মারাত্মক ধরনের ত্রুটি ছিল। পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার মূল কম্পোনেন্ট সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার)। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা সঠিকভাবে আজ পর্যন্ত ফাংশনিং করছে না। এটা সরকারও স্বীকার করে এবং সর্বজনস্বীকৃত।
‘এটার জন্য সরকারের যে দায়িত্ব পালন করা উচিত, আর মালিকদের যে রেসপন্সিবিলিটি – কেউই তা মানছে না। তাই সংসদীয় কমিটির ট্যানারি বন্ধ করে দেয়াার সুপারিশের মতো সিদ্ধান্তে আমরা বিক্ষুব্ধ।’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘ট্যানারি বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। আমরা মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে হাজারীবাগ থেকে এখানে এসে বিনিয়োগ করেছি। এখন আমাদের প্রোডাকশন বেড়েছে। এই সময় এমন সুপারিশের কারণে মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। এমন আত্মঘাতী সুপারিশ করার আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’
তবে পরিবেশকে বাঁচাতে চামড়া শিল্পনগরী বন্ধ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি পরিবেশবিদদের।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা লাল চিহ্নিত একটা ইন্ডাস্ট্রি। লাল মানে ভয়াবহ। সেই লাল চিহ্নিত ইন্ডাস্ট্রি লোকালয়ে করা হলো। প্রথম থেকেই আমরা এটাতে সম্মত ছিলাম না। এই চামড়া শিল্পে শুধুমাত্র তরল বর্জ্যের কারণে যে দূষণ হচ্ছে তা নয়। এখানে ক্রোমিয়াম এসিডের মতো মারাত্মক গ্যাস আছে এবং সলিড আছে ওয়েস্ট। এগুলাতো মিনিমাইজেশনের কোনো ব্যবস্থাই নাই। সলিউবল অক্সিজেন এখানে অনেক কম। পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, এখানে স্যালাইনিটি অনেক বেশি। এসব জিনিসের এখানে মিনিমাইজেশন দরকার। সোজা কথা এটা, জোড়াতালি দিয়ে করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির সুপারিশ করার আগে অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। এটা সরকার ও তাদের ব্যাপার। আমাদের মতে, এই ট্যানারি এখানে আদৌ করা উচিত হয়নি। এটাকে সরিয়ে নেওয়াই সঙ্গত।’
তবে ট্যানারির দূষণের কথা স্বীকার এই শিল্পকে বাঁচাতে চলমান সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বিসিক।
বিসিকের জেনারেল ম্যানেজার জীতেন্দ্র নাথ পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাজারীবাগে ট্যানারির প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি ছিল কম। এখানে এসে প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি অনেক গুণ বেড়ে গেছে। তবে আমাদের দুর্বলতা ফিজিবিলিটি স্টাডিতে। হাজারীবাগকে রেখে হয়ত কিছু বাড়ানো হয়েছে।
‘আমি নিজেও বলব, এটা যদি আর একটু চিন্তা ভাবনা করা যেত যে, ৫০ কিংবা ১০০ বছর মেয়াদি, তাহলে সিইটিপির যে ক্যাপাসিটি ২৫ হাজার কিউবি সেটা বাড়ানো যেত। তাহলে কিন্তু আজকে এই অবস্থা হতো না। আর এখন ৪০ থেকে ৫০ হাজার কিউবি যেটা যাচ্ছে, এটা কিন্তু কোরবানির ঈদের এই তিন মাস যাচ্ছে। সারা বছর কিন্তু এটা থাকে না, ১৫ থেকে ২০ হাজার কিউবির ভিতরেই থাকে।
‘তবে আমাদের পানির ইউজটা কিন্তু পরিমিত করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল নিয়ম অনুযায়ী, ১ টন চামড়া প্রসেস করার জন্য ৩০ হাজার লিটার পানি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যবহার হয় ৬০ হাজার লিটার পর্যন্ত। আর পরীক্ষা করেও আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের সিইটিপিতে সেই ধরনের কোনো সমস্যা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে সলিড ওয়েস্টটা নিয়ে সমস্যা। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, এসপিজিএস অর্থাৎ স্ল্যাশ থেকে ইলেকট্রিসিটি তৈরি করা হবে, যেটা টেকনিক্যালি ঠিক না হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে। নতুন একটা প্রজেক্ট পরবর্তীতে হাতে নেয়া হয়েছে। সেই প্রজেক্টেটার প্ল্যানিং গবেষণায় যাচাই-বাছাই চলতেছে। মূলত এই সলিড ওয়েস্টগুলা কিন্তু আমাদের সম্পদ, ফেলার কোনো জিনিস নয়। এগুলিকে আমরা রিসাইক্লিং, রিইউজ করার পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছি। এগুলি যখন সম্পদে পরিণত হবে তখন এই সমস্যাটা সমাধান হবে। তাছাড়া ডাম্পিং ব্যবস্থা চিরদিনের জন্য নয়। এটা করলে আমরা সবদিক দিয়েই উপকৃত হব।’
রাজধানীর হাজারীবাগে নদী দূষণের কারণে চামড়াশিল্পকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিবেশে উন্নীত করতে সাভারের হেমায়েতপুরে শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় বিসিক। ২০০৩ সালে শুরু করা প্রকল্প ১ হাজার ১৫ কোটি ব্যয়ে ১৭ বছরে বাস্তবায়িত হয়। ২০১৭ সালে ১৩০টি ট্যানারি একযোগে উৎপাদন শুরু করলেও বর্জ্য শোধন সমস্যায় ধুকছে এই বিসিক শিল্প নগরী।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে শতাধিক দুস্থ অসহায় বাবা মায়ের জন্য ভ্রাম্যমাণ শাড়ি লুঙ্গির হাটের আয়োজন করেছে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ভ্রাম্যমাণ এ হাটে আট টাকা দরে একটি শাড়ি, একটি লুঙ্গি এবং দুই টাকায় একটি ব্লাউজের পিস বিক্রি করা হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের কুমোরপুর দাখিল উলুম মাদ্রাসা মাঠে শুক্রবার দুপুরে এসব শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয়েছে।
আট টাকায় শাড়ি পেয়ে বৃদ্ধ আমেনা বেওয়া বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে একটা শাড়ির দাম নিম্নে ৩০০ টাকা। সেই শাড়ি আট টাকায় পেয়ে খুব উপকার হলো।’
লুঙ্গি পেয়ে হামিদ মিয়া বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সে কোন দিন দেহি নাই আট টাহায় এহান (একটা) লুঙ্গি পাওয়া যায়। আইজ সেই আট টাহায় লুঙ্গি কিনলাম। খুব খুশি নাগছে।’
ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, “‘ফুল’ দীর্ঘদিন ধরে জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অসহায় বাবা মাকে নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের আজকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
ফাইট আনটিল লাইটের নির্বাহী পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সামাজিক সংগঠন ফুল শহর গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ মাঝে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে।
‘আমরা ত্রাণে নয়, বিনিময়ে উপহার দিয়ে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে চাই। তাই অসহায় বাবা-মায়ের কাছে মাত্র আট টাকার বিনিময়ে শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি।’
আরও পড়ুন:অতি তীব্র দাবদাহের মধ্যে মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
সীমান্তবর্তী জেলাটিতে শুক্রবার বেলা তিনটায় ৪২ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জেলায় অতি তীব্র দাবদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়।
তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত রোগী। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। তা ছাড়া অতি গরমে নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘এই তাপে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে কৃষিকাজ করা যাচ্ছে না।
‘ধানের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানে বেশি সেচ লাগছে, কিন্তু সেচ পাম্পে ঠিকমতো পানিও উঠছে না।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিন দিন এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়ায় একটি নির্জন বাঁশবাগানের ভেতর থেকে এক নারী পোশাকশ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া এলাকার বাঁশবাগান থেকে শুক্রবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো আনজু খাতুন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার ঘাগুয়া ইউনিয়নে।
পুলিশের ভাষ্য, বাঁশবাগানের ভেতর নারী পোশাকশ্রমিকের মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ওই নারীর গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তিনি হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার অপারেটর।
হা-মীম গ্রুপের টিআইএসডব্লিএল-১ কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আনজু খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক গতকাল রাত ৯টা ১৫ মিনিটের পরে কারখানা থেকে বাসায় যায়, কিন্তু আজ সকালে তিনি আর কারখানায় আসেননি।
‘পরে লাইনের সুপারভাইজার আনজুকে কল দিলেও সে রিসিভ করেনি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কেউ তাকে (পোশাকশ্রমিক) হত্যা করে ফেলে রেখে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় তিন চাকার ভ্যানের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুস সালাম (৫০) ও ছানোয়ার হোসেন (৪৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তারা স্থানীয় কাটিগ্রাম বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর বন্দর আড়ত থেকে চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনে তিন চাকার ভ্যানের মাধ্যমে কাটিগ্রাম যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও ছানোয়ার হোসেন, কিন্তু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে পাটুরিয়াগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ওভারটেক করতে গিয়ে ওই তিন চাকার ভ্যানকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই আবদুস সালাম নিহত হন এবং গুরুত্ব অবস্থায় ছানোয়ার হোসেনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি জানান, নিহতদের একজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এবং অপরজনের মরদেহ গোলড়া থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় গোলড়া থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ৬০ বছর বয়সী হাজী উমর আলী একই গ্রামের বাসিন্দা।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, প্রায় তিন-চার দিন ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ধান ক্ষেতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতি নেমে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পালটি বাতকুচি গ্রামের ধান ক্ষেতে যায়। এ সময় উমর আলি ও গ্রামবাসীরা তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে ডাক ও চিৎকার শুরু করেন।
একপর্যায়ে বন্যহাতির পালটি একটু পিছিয়ে যায়। পরে বাড়িতে যাওয়া সময় পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা হাতির পালটি উমর আলিকে ঘিরে ফেলে ও পা দিয়ে পিষ্ট করে।
বন বিভাগের ময়মনসিংহ মধুটিলা ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে নিহত উমর আলির পরিবারকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য