কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গত মৌসুমের মতো এবারও ব্যর্থ হয়েছে রংপুর খাদ্য বিভাগ। চলতি বোরো মৌসুমে আট উপজেলার কৃষকের কাছ থেকে ১৭ হাজার ৪০৩ টন ধান কেনার কথা থাকলেও নেয়া হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ১৮২ দশমিক ৪৪০ টন।
কৃষক নেতাদের অভিযোগ, ধান সংগ্রহের জন্য কৃষক বাছাইয়ের যে প্রক্রিয়া, তা স্বচ্ছ না। প্রকৃত কৃষকরা এ কারণে ধান দিতে পারছেন না। তবে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা তাদের কাছে ধান বিক্রি করেন না।
এর আগের আমন মৌসুমে ১০ হাজার ৩৮২ টন ধান সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত থাকলেও কেবল পীরগঞ্জ থেকে কেনা হয়েছে ২ টন। অন্য সাত উপজেলা থেকে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ।
ধান দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা
রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, ‘কোন দিন কীভাবে লটারি হয়েছে, আমরা জানি না। কম হোক, বেশি হোক, আমরা গ্রামে ধান বিক্রি করেছি।
‘অনেকের থেকে শুনেছি, এর ওর নাম লটারিতে উঠেছে। ওদের ধান কোনোদিন বাড়িতে গেছে বলে দেখিনি। ওরা কীভাবে কৃষক হলো? মৌসুমে ধান কমদামে বিক্রি করেছি। এখন এসব কথা বলে কোনো লাভ নাই।’
কৃষক আরিফুল ইসলাম, মজিবর রহমান, জয়নাল আবেদীনসহ অনেকেই জানালেন, লটারিতে তাদের নাম ধান বিক্রয়কারী কৃষকের তালিকায় ওঠেনি।
যেভাবে ধান সংগ্রহ হয়
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার জন্য লটারি করে উপজেলা ধান-চাল ক্রয় কমিটি।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই কমিটির সভাপতি। এর সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ কয়েকজন।
উপজেলায় ধান চাষ করেছেন এমন কৃষকের তালিকা থাকে কৃষি অফিসে। তাদের মধ্য থেকে যারা কৃষি ভর্তুকি পান, তাদের নাম যায় ক্রয় কমিটির প্রধানের কাছে। এটি সরবরাহ করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
ওই তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক বাছাই করে ক্রয় কমিটি। বাছাইয়ের তালিকা উপজেলা চত্বর ও উপজেলা খাদ্যগুদামের সামনে টানিয়ে দেয়া হয়।
এই প্রক্রিয়ার সময় কৃষকরা কোথাও উপস্থিত থাকেন না। অনেকে জানেনই না যে তার নাম লটারিতে উঠেছে।
এতে দেখা যায়, তালিকায় থাকা অনেক কৃষক ধান দিচ্ছেন না। আবার ধান থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম নেই বলে বিক্রি করতে পারছেন না অনেকে। এসব কারণে সংগ্রহের লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে না।
রংপুর কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘ধান দেয়ার জন্য যে তালিকা অফিসের সামনে ঝোলানো হয়, তা কর্মকর্তাদের করা, নাকি কোনো কৃষকের করা, সেটি বোঝা মুশকিল। কারণ কৃষকরা জানেনই যে তাদের নাম কোনো লটারিতে দেয়া হচ্ছে, কিংবা লটারিতে উঠেছে। জানলে তো তারা অবশ্যই ন্যায্যমূল্যে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতেন।
‘নানা অজুহাত খাঁড়া করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান না কিনে দালালদের মাধ্যমে তালিকায় কয়েক জনের নাম তোলা হচ্ছে। এতে দালাল-ফড়িয়া ও কিছু অসাধু কৃষি ও খাদ্য কর্মকর্তা লাভবান হচ্ছেন। তালিকায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কৃষকদের উপস্থিতিতে লটারি করতে হবে।’
পলাশ মনে করেন, হাটে-বাজারে সরকারি উদ্যোগে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উচিত।
খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকৃত কৃষকের নাম দেয়ার দায়িত্ব কৃষি বিভাগের। এটি প্রচারের দায়িত্ব তথ্য বিভাগের। পরিসংখ্যান বিভাগ তালিকা সংরক্ষণ করে সমন্বয় করবেন। সব মিলিয়ে যে তালিকা আসবে, সেখান থেকে খাদ্য বিভাগ লটারি করবে। তবে, কৃষি বিভাগ তাদের কাজ ঠিকমতো করে না। সমন্বয়হীনতা রয়েছে তথ্য ও পরিসংখ্যান বিভাগেরও।
‘লটারি হওয়া উচিত কৃষকের উপস্থিতিতে’
দীর্ঘদিন কৃষি নিয়ে কাজ করেন রংপুরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আফতাব হোসেন। তিনি মনে করেন, উপজেলায় নির্দিষ্ট দিনে প্রকৃত কৃষকদের উপস্থিতিতে লটারি করতে হবে। বিজয়ীদের নাম-মোবাইল ফোন নম্বরসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাহলেই ধান সংগ্রহ সঠিকভাবে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন যে প্রক্রিয়ায় ধান কিনতে লটারি করে কৃষকের নাম বাছাই করা হচ্ছে, তাতে কোনোভাবেই প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা সম্ভব না। এই প্রক্রিয়ায় দালাল, ফড়িয়ার দাপট বেড়ে যাবে, যাচ্ছেও। অস্বচ্ছতা আসবে খাদ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে; সে অভিযোগও এর মধ্যে উঠে আসছে। এভাবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব না।’
আফতাব আরও জানান, খাদ্য বিভাগ যেভাবে কৃষকের কাছ থেকে শুকনো ধান কিনতে চায়, তা কখনই সম্ভব নয়। মাড়াই মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে ধান শুকিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করলে লক্ষ্যও পূরণ হবে, কৃষকরাও লাভবান হবেন।
দায় কৃষকের, বলছে খাদ্য বিভাগ
রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত আমন মৌসুমে ধান কম কেনা হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা অনেক ভালো অর্জন।’
লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজার দর এবং সংগ্রহমূল্য কাছাকাছি থাকায় কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহী হন না।
তিনি জানান, এ মৌসুমে বোরো ধানের সরকারি দাম ছিল প্রতি কেজি ২৭ টাকা। সে অনুযায়ী প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ৮০ টাকা। স্থানীয় বাজারে কৃষক ধান বিক্রি করেছে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। তাদের ক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ দিতে হয় বলে সরকারি দাম কৃষকদের পোষায় না। এ কারণে তারা ধান দিতে আগ্রহ পান না।
তিনি বলেন, ‘যাদের নাম লটারিতে উঠে তাদের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে, ইউনিয়ন পরিষদে, খাদ্য অফিসে, অনলাইনে দেয়া হয়। মাইকিং করা হয়। আসলে যখন কৃষকরা বাজারে ভালো দাম পায় তখন তারা সরকারি গুদামে ধান দিতে চায় না।’
কৃষকদের উপস্থিতিতে লটারি করার দাবির বিষয়ে আব্দুল কাদের বলেন, ‘হাটবাজারে গিয়ে ধান কেনা সম্ভব নয়। আমরা যে ধান কিনি, সেই ধান উন্নত মানের, শুকনো। যে ধান কেজিতে ২৮ টাকা দরে কেনা হয়, তা মিলাররা ২৯ টাকা দরে কিনে সে অনুযায়ী চাল দেন। আর কৃষক বাজারে যে ধান বিক্রি করেন তাতে কাঁচা, চিটি, পাতান, খুদ বেশি হয়।
‘ধান কেনার সময় অনেক কিছুই বিবেচনা করে কিনতে হয় যাতে সরকার লাভবান হয়। হাট থেকে কাঁচা, পাতান থাকা ধান কিনলে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া বাজারে গিয়ে ধান কেনার মতো লোকবল আমাদের নেই।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ঘরে ঢুকে এক নারী ও তার মেয়েকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগটি করেন ছেনুয়ারা বেগম নামের নারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত সোমবার রাত দুইটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব উত্তরপাড়া এলাকার নুর মোহাম্মদের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগমের ঘরের দরজা ভেঙে আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন প্রবেশ করেন। তারা ছেনুয়ারা ও তার মেয়ের হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে এলোপাতাড়ি লাথি ও ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে মা ও মেয়ে উভয়কে বিবস্ত্র করেন আইয়ুব ও তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বর্ণ ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানানো হলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান৷
এ বিষয়ে ছেনুয়ারা বেগম বলেন, ‘সন্ত্রাসী আয়ুব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক আমার বাড়িতে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রবেশ করে। পরে বাড়ি থেকে আমাকে জোরপূর্বক কয়েকজন লোক বের করে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে এবং আমার মেয়েকে নির্যাতন করে স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া বিষয়ে কাউকে বললে মেরে ফেলা হবে বলে চলে যায়।’
থানায় অভিযোগের পর আয়ুব হুমকি দিয়েছে জানিয়ে ছেনুয়ারা বলেন, ‘সেই আয়ুব খান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে, মামলা হলে কী হবে? জামিন নিয়ে বাহির হয়ে আমাকে আর আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হবে বলে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমি টেকনাফ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’
এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম রেজু বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি এবং সঠিক তদন্ত করে পুলিশকে সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘আমি ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং আমি মামলা করার জন্য ওসি বরাবর সুপারিশ করেছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি ওসমান গণি বলেন, ‘আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা নাশকতা মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিতসহ ১৪ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উচ্চ আদালতের মঞ্জুরকৃত জামিন শেষ হওয়ায় তারা আদালতে হাজির হন।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে করা দুটি রাজনৈতিক মামলার ১৪ জন আসামি হাজির হলে আদালত তাদের সবার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, যুবদলের এমএ নিশাদ, যুবদলের সিরাজুল ইসলাম পিরুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নুরুল ইসলাম, যুবদলের ওয়াহিদুর রহমান জুনেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হান্নান, স্বেচ্ছাসেবক দলের রোহেল আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের মামুনুর রশিদ ও যুবদলের জাহেদ আহমেদ।
মৌলভীবাজার জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ইউনুছ মিয়া জানান, ২০২৩ সালে নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। আদালত শুনানি শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন সাজেকে শ্রমিকবাহী ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
বাঘাইছড়ি থানার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আওয়াল বুধবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
এর আগে বিকেলে সাজেকের উদয়পুর সীমান্ত সড়কের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের উদয়পুর সীমান্তবর্তী সড়ক নির্মাণের জন্য ডাম্প ট্রাকে ১৪ জন শ্রমিক জামান ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সেতুর কাজে যাচ্ছিলেন। পথে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের ঢালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি খুবই দুর্গম এলাকা। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী, তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলায় ৭ (সাত) বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সৈয়দ সরাফত আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইয়ের পরিদর্শক রিপন চন্দ্র গোপের নেতৃত্বে একটি অভিযানিক দল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
৬০ বছর বয়সী সৈয়দ সরাফত আলী রাজনগর থানার করিমপুর চা বাগান এলাকার বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, শিশুটিকে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে গত ১৪ এপ্রিল বেলা পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দ সরাফত আলী তার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ের নিচে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে তিনি আত্নগোপন করেন।
অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে গত প্রথমে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে রাজনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পিবিআই মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হবে। মামলার খুঁটিনাটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নিখুঁত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। বাবার নাম কোরবান আলী।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মধ্যে ট্রাক পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার অফিস কক্ষে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এসএম মাহমুদুর রশিদ জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই মারা যান। হাসপাতালে যারা নিয়ে এসেছিলেন তারা বলেছেন যে তিনি তৃষ্ণার্ত ছিলেন, পানি খেতে চেয়েছিলেন।
তবে তার মৃত্যু যে হিট স্ট্রোকে হয়েছে এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অন্য কোনো রোগেও তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে এখন যেহেতু প্রচণ্ড গরম চলছে তাই এটার প্রভাব থাকতে পারে।
সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিটিএ জেটি ঘাট থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টাগবোটে তুলে দেয়া হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, গভীর সাগরে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অপেক্ষায় থাকা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইনে তাদের তুলে দেয়া হবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওই জাহাজ বুধবারই বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছায়। ওই জাহাজে করেই ১৭৩ জন বাংলাদেশি ফিরে এসেছেন। যারা বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে আটকা পড়েছিলেন বা সাজা পেয়ে জেলখানায় ছিলেন।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর ওই জাহাজে করে দেশটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও বুধবার দুপুরে কক্সবাজার পৌঁছায়। পরে তারা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নে বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ১১টি বাসে করে মিয়ানমারের বিজিপি ও সেনা সদস্যদের কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাটে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আনার পর ইমিগ্রেশন ও ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে শুরু হয় হস্তান্তর প্রক্রিয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও কোস্ট গার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতসহ দেশটির প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
এরপর সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কর্ণফুলি টাগবোটে তুলে দেয়া হয়। কোস্ট গার্ডের একটি ট্রলার টাগবোটটিকে পাহারা দিয়ে গভীর সাগরে নিয়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাতেও। সীমান্তের ওপারের মর্টার শেল ও গুলি এসে এপারে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
ওই সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ ৩৩০ জনকে প্রথম দফায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেরত পাঠিয়েছিল সরকার।
তাদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি ৩০২ জন, তাদের পরিবারের চার সদস্য, দুজন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
এরপর বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দফায় আরো ২৮৮ জন সীমান্তরক্ষী ও সেনা সদস্য এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এবার তাদের ফেরত পাঠানো হলো।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে বুধবার রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
মাওয়া নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের যশিলদিয়ায় বুধবার রাত দেড়টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় নিয়ম অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় ওই দুটি ড্রেজার জব্দ করা হয়।
তিনি আরও জানান, ড্রেজার জব্দ করার সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। জব্দকৃত ড্রেজার দুটির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য