দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসকসংকট নিরসনে সম্প্রতি ষষ্ঠ গ্রেডে ৪০৯ জন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই চিকিৎসকেরা নিজেদের পছন্দের হাসপাতালে কর্মস্থল পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলমকে ফোনের পর ফোন করে জর্জরিত করে তুলেছেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নতুন নিয়োগ পাওয়া জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিওলজি) ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রোববার দুপুরে সে কথা জানালেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজে।
আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘এই নিয়োগের আগে পরে আমাদের কাছে অজস্র টেলিফোন আসছে, যে, আমাকে অমুক জায়গায় নিয়োগ দেয়া হোক, আমাকে যেন তমুক মেডিক্যালে নিয়োগ দেয়া হয়, আমি অমুক জায়গায় যাব না, অমুক জায়গাতে কাজ করব না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করব: আপনাদের যে জায়গায় নিয়োগ দেয়া হবে, সেই জায়গাতেই কাজ করবেন, সেই জায়গা থেকে সার্ভিস দিয়ে যাবেন। কারও কারও অসুবিধা হবে প্রথম পোস্টিংয়ে, দ্বিতীয় পোস্টিংয়ে। আপনার বাচ্চাদের পড়াশোনা চলমান রয়েছে, এ কারণে একটু সমস্যা হতে পারে। তবু, আপনাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনাদের যেখানে নিয়োগ দেয়া হবে, সেখানেই কাজ করবেন।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘৪০৯ জন নতুন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন নিয়োগ বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই। আমি সেই দিনটার কথা মনে করতে চাচ্ছি, যেদিন আমরা এই নিয়োগের কাজ শুরু করেছিলাম। অধ্যাপক খলিল স্যারের নেতৃত্বে যে টিমটা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে দেখা করেছিল, সেখান থেকেই সূচনা। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এবং পিএসসি হয়ে এই নিয়োগ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা নিয়ে আমরা অনেক ভুগেছি। আমাদের অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের যে সার্ভিস আমরা পেয়েছি, এর জন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। করোনার বাইরেও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা একটি বিশাল ব্যাপার। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের রংপুরের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আমি পরিদর্শন করেছি। এসব হাসপাতালে কোথাও গাইনি সার্জন নেই, আবার অ্যানেসথেসিজিস্ট নেই। সেই সংকট কাটাতেই আমাদের এ উদ্যোগ।’
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের উদ্দেশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখানে নিয়োগের আগেই আপনারা ঢাকার ভালো ভালো হাসপাতালে কাজ করেছেন। এখন হয়তো দেশের বিভিন্ন জেলায় আপনাদের নতুন কর্মস্থল হবে। সেখানে অনেক কিছু আপনাদের নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে এবং সেটা হচ্ছে আপনাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আপনাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই দায়িত্ব যদি আপনি ঠিকভাবে পালন করেন, সেটা হবে আপনাদের দেশপ্রেম।’
এতদিন অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসকের অনুমোদিত ৬০৮টি পদের বিপরীতে মাত্র ৩০ জন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। তবে করোনা মহামারির কথা বিবেচনা করে একই সাথে ষষ্ঠ গ্রেডে ৪০৯ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এই পদে ২০২০ সালে ১৬৯ জন চিকিৎসককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল। সে সময় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় অবশিষ্ট ৪০৯টি পদ শূন্য থেকে গেছে।
গত ৭ জুলাই, ৪০৯টি শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। ৫ সেপ্টেম্বর এই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। মহাপরিচালক জানান, বেশ কিছু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে হলেও অল্প সময়ে এই বিশালসংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার ও সোমবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। বলা হয়েছে, এই দুদিন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করবেন না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
বিএমএ চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, স্বাধীনতা প্রকাশ পরিষদ, চট্টগ্রাম প্রকাশ সমিতিসহ ৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
বিএমএ নেতারা বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে খুবই অনিরাপদ।
চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তারা।
মুজিবুল হক বলেন, ‘হামলার বিচার পাওয়ার জন্য আমরা পাঁচদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন চট্টগ্রামের পটিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রক্তিম দাস।
পরে ১৪ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় এক বছরের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে রোগীর স্বজনদের হামলায় রিয়াজ উদ্দিন শিবলু নামে আরেক চিকিৎসক আহত হন।
আরও পড়ুন:স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো চিকিৎসকের ওপর হামলা যেমন মেনে নেব না, তেমনই চিকিৎসায় কোন ধরনের অবহেলা হলে সেটাও মেনে নিতে পারব না।’
বুধবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে চিকিৎসদের নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে চিকিৎসা কাজে চিকিৎসকদের আরও বেশি মনোযোগী ও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের যেমন সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব আমার, রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও আমার। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সম্প্রতি ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভুটান রাজার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার ভুটানে বার্ন হাসপাতাল করার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত করোনার টিকা নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চর্ম রোগ দেখা দেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে কোনো ড্রাগেই এলার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে এ বিষয়টি আমি এখনও শুনিনি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনার প্রধান মুখপাত্র প্রফেসর ফলস-এর গবেষণায় এখনও এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি। তবে এমনও হতে পারে যে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো এখন দেখা দিচ্ছে।’
এর আগে চান্দিনার মাধাইয়া ইউনিয়নের সোনাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব কমল কুমার ঘোষ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারওয়ার হোসেন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মো. সোয়াইব, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান প্রমুখ।
আরও পড়ুন:পাবনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় দুই প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে অভিযোগ তদন্তে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দিয়েছে।
সোমবার ঘটনাটি জানাজানি হলে জেলা সিভিল সার্জন সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টির প্রাথমিক তদন্ত করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন।
পাবনা সদর পৌর এলাকার শালগাড়িয়া হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত বেসরকারি আইডিয়াল হাসপাতালে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে পৃথক চিকিৎসক দ্বারা সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। এর আগে দুপুরে রোগীদের সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়।
অভিযোগে জানা যায়, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ এলাকার মাহবুব বিশ্বাসের স্ত্রী ইনসানা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে রোববার দুপুরে তাকে পাবনা আইডিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় জাহিদা জহুরা লীজা নামক এক চিকিৎসক অপারেশন করতে গেলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়।
অপর ঘটনায় একই সময়ে পাবনার আটঘরিয়ার স্বপ্না খাতুন নামক এক রোগী কাজী নাহিদা আক্তার লিপির কাছে সিজারিয়ান অপারেশন করতে আসেন। ভুল চিকিৎসায় তারও মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ রাতেই রোগীসহ স্বজনদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে তা ধামাচাপা দিতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মরদেহসহ স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত শেষে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার সময়ে যেসব উপকরণ ও মেডিসিন ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লা দেওয়ান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ স্যালাইন বা ওষুধ সেবনের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি ক্লিনিকটি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত, তাই নিয়ম মেনে সব কার্যক্রম চলছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনো পরিবার থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’
আরও পড়ুন:দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলাম নামে একজনের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতে এমন রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শামীমা আক্তার ও হাসিনা নামে দুই রোগীর শরীরে ওই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় নিউজবাংলায় প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।
সারাহ ইসলামের কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীদের একজন শামীমা আক্তার মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে মারা গেছেন। কিডনি গ্রহীতা অপরজন হাসিনা হাসিনা এর আগে গত বছরের অক্টোবরে মারা যান। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।
বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল মঙ্গলবার রাতে শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘কিডনি গ্রহীতা প্রথম জন (হাসিনা) ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। অপরজন শামীমাও চলে গেলেন। এটি খুবই কষ্টের। শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, সম্প্রতি শামীমার ভাই জানায় যে শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। তিন সপ্তাহ আগে আবারও তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও শামীমার শুকিয়ে যাওয়ার কারণটা ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা।
‘ক্রিয়েটিনিন পুনরায় বাড়ায় ওয়ার্ড থেকে তাকে কেবিনে আনা হয়। তারপরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয়।’
ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শামীমার শরীরে হেপাটাইটিস-সি ধরা পড়ে। কারও হেপাটাইটিস-সি পজিটিভ হলে রক্ত কাজ করে না। এজন্য বিশেষ রক্ত লাগে। সেটি দেয়ার পরও কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেসপন্স করেনি। আর বাড়িতে থাকার সময় অবস্থা খারাপ হলেও সময়মতো আমাদের জানানো হয়নি।’
আরও পড়ুন:জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা ও নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়ে ইউনিসেফ দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সচিবালয়ে রোববার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ইউনিসেফের জাতিসংঘ শিশু তহবিলের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিলের হেলথ সেকশনের চিফ মায়া ভ্যানডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফ করোনার সময় গোটা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন জাতিসংঘের শিশু তহবিল থেকে দেশের শিশুদের শতভাগ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করা, নিরাপদ মাতৃত্বসহ স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য দিক নিয়েও জাতিসংঘের এই বিশেষ সংস্থাটি দেশে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ মাতৃত্ব, ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করা, দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা, তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ করাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও ইউনিসেফ ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
‘এগুলোর সঙ্গে, শিশুদের জন্য তৃণপর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইউনিসেফ প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানালে তারা সেটিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।’
বৈঠকে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের প্রতিনিধি দল করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানারকম ফলপ্রসূ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। দেশের স্বাস্থ্যখাত আগের থেকে আরও উন্নত হচ্ছে বলেও জানান তারা। টিকাদানে বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি উদাহরণ হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার তাই করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইদের পর থেকে তৃণমূল স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমি আবারও মাঠে নেমে পড়ব। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে চলে যাব। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে যা যা করার দরকার আমি তাই করব।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘কথা কম বলে অসুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধু এই দেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে সেই জন্য। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি কিন্তু দেশকে তার স্বপ্নের মতো করে সাজানোর সুযোগ পাননি।
‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) মাত্র তিন বছরের মত সময় ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলেও দেশে তেমন কোনো সম্পদ বা অর্থ ছিল না। সেই দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশের দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে তিনি কাজ শুরু করেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের সব ভালো উদ্যোগ জাতির পিতাই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি যেভাবে শুরু করেছিলেন দেশের বিভিন্ন কুচক্রী মহলের কারণে সেগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার কাজগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা। সেই কাজ করতে মুখে আমাদেরকে বড় বড় কথা বললেই হবে না, আমাদেরকে কাজ করে দেখাতে হবে। এজন্য আমরা যেন মুখে কথা কম বলে কাজ করেই আমাদের সক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারি সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমে পড়তে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ এর ভিসি ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূর, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান (অতিরিক্ত সচিব)-সহ অন্যান্যরা।
দেশে আরও ৪২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৯ জনে। এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৩ জনের।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৫ জনে।
মন্তব্য