২০২০ সালের ২ মে দলটির যাত্রা শুরু হয় ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি নামে, যা সংক্ষেপে ‘এবি পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়। দলটির বর্তমান সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু এককালে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
নিউজবাংলা: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক কেমন? আপনাদের দলের প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই অনেকের মধ্যে ধারণা ছিল, জামায়াত ভেঙ্গে দলটির সৃষ্টি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আপনারা মূলধারায় আসতে পারছেন না। কেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: জামায়াতের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্কের প্রশ্ন আসে না এ কারণে যে, আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক দল করেছি। আমি কিংবা আরও দুই-একজন জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, যাদের অনেকেই জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছে, আবার কাউকে কাউকে জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা ক্লোজ চ্যাপটার। আমরা যে দল শুরু করেছি, সেটি সম্পূর্ণ নতুন চিন্তা আদর্শ, নতুন কর্মসূচি, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। এটার সঙ্গে জামায়াতের কোনোই সম্পর্ক নাই। বরং নতুন দল করার পর জামায়াত আমাদের বিরুদ্ধে বলছে যে, আমরা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছি, আমরা ধর্মকে বাদ দিয়ে দিয়েছি। এ ধরনের অপপ্রচার জামায়াত আমাদের বিরুদ্ধে করছে। সুতরাং আমি মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক উদ্যোগ সম্পূর্ণ স্বাধীন, পৃথক। শুধু জামায়াত নয়, কোনো দলের সঙ্গেই আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন চিন্তার আলোকে নতুন একটা উদ্যোগ।
দলের প্রতিষ্ঠার শুরুতে আমরা এ ধরনের প্রচার দেখেছি যে, আমাদের উদ্যোগকে অনেকে জামায়াতের ভাঙ্গণ হিসেবে দেখেছেন। আমরা তখন বলেছি যে, এটা একটা ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং এটা একটা অপপ্রচার।
আমাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব ওনার ব্যাখ্যা দিয়ে দল থেকে বের হয়ে গেছেন। আর সোলেমান চৌধুরী সাহেবও জামায়াত থেকে বের হয়েছেন। আমরা যখন জামায়াতে ছিলাম, তখন একটি বিষয় নিয়ে আমরা দলে ফাইট করেছি কেউ কেউ।
আর মূলধারায় আসার বিষয়ে আমি বলব, একটা রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠা তো এক দিনের ব্যাপার না। বাংলাদেশে সত্যিই এখন রাজনীতির একটি বৈরি পরিবেশ যাচ্ছে। তার ওপর চলছে করোনা পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে রাজনীতিই তো কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। আমরা মনে করি, যারা দেশকে নিয়ে ভাবে, তাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। এ জন্যই আমরা বৈরি পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক দলের সূচনা করেছি।
নিউজবাংলা: বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর নিয়ে কী বলবেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
নিউজবাংলা: এখন কীভাবে দলকে সংগঠিত করছেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: আমরা ইতিমধ্যে প্রায় ৪০টি জেলায় কমিটি করেছি। প্রায় ৮০টার মতো উপজেলায় আমরা কমিটি করেছি। আমরা আমাদের দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছি। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, পরিস্থিতি সব কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের দল সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে যাবে। আমরা কোনো চমক সৃষ্টি করার জন্য দল তৈরি করিনি। বাংলাদেশের রাজনীতির অতীতের যে ব্যর্থতা, সেটা থেকে উদ্ধার করে নতুন একটা দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা দল করেছি।
নিউজবাংলা: অনেকে বলেন, তুরস্কের আধ্যাত্মিক নেতা ও ধর্মপ্রচারক ফেতুল্লা গুলেনের মতাদর্শে আপনারা এবি পার্টি সৃষ্টি করেছেন এবং দলকে সংগঠিত করছেন। কী বলবেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: এটাও একটা অপপ্রচার। আমাদের দলের ১০ জন কর্মীকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তাহলে দেখবেন ফেতুল্লা গুলেনের নামই শোনেন নি তারা। পৃথিবীতে অনেক রাজনৈতিক দার্শনিকের জন্ম হয়েছে, আমরা সবার রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করছি। তবে ফেতুল্লা গুলেনের কোনো রাজনৈতিক দর্শন-চিন্তা যদি আমাদের রাজনৈতিক কাজে লাগে, তবে আমরা সেটা ব্যবহার করব, অসুবিধা কী? কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির চিন্তাধারায় আমরা প্রভাবিত না। আমি মনে করি, এটা রাজনীতির জন্য ঠিকও না। দেশ ও বিশ্ব রাজনৈতিক বিবেচনায় আমরা আমাদের রাজনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা দলের রাজনীতিতে অধিকারভিত্তিক, কর্মসূচিভিত্তিক দল করতে চাই। আমরা মানুষের সমস্যার সমাধান, সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতি চালু করতে চাই দেশে। আর দেশের মৌলিক জায়গা ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ – এ দুটোকে বিতর্কের উর্ধ্বে রেখে আমরা আমাদের রাজনীতি করতে চাই। এ দুটোর চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যের জায়গা আমরা তৈরি করতে চাই।
নিউজবাংলা: আপনি বলছেন, আপনার দল সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতি করতে চায়। কিন্তু সেটার জন্য তো প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেটা কীভাবে সংগ্রহ হচ্ছে?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: রাজনৈতিক দলের তহবিল দলের কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দিয়েই হয়। দল যত বড় হবে, তার অর্থের শক্তিটাও সাথে সাথে বাড়বে। আমি মনে করি, অবশ্যই আমরা সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতি করতে চাই। আমি আপনাকে ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই: করোনা যখন প্রথম শুরু হয়, যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল, প্রাথমিক অবস্থা দেখে আমরা খুব ব্যথিত ছিলাম, যে এই যে মানুষজন, যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কী হবে। তখন আমাদের মধ্যে থেকে একজন প্রস্তাব দিল যে, আমরা ‘ফুড ব্যাংক’ চালু করতে পারি কীনা। মানে যাদের খাদ্য আছে, তারা অতিরিক্ত খাদ্য জমা করবে, আর যাদের নেই, সেই খাদ্য তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আমরা এটি নিয়ে কাজ শুরু করলাম। আমরা দেখলাম ২২ হাজার টাকার মতো প্রথম দিনে আমাদের যোগাড় হয়েছে। আমরা সেই টাকায় খাদ্য কিনে দুস্থদের মাঝে দিয়েছি। আমি মনে করি, সার্ভিস ওরিয়েন্টেড রাজনীতির একটা শক্তি হচ্ছে, সেটা প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ তার সামর্থ্য নিয়ে পাশে দাঁড়াবে।
নিউজবাংলা: অনেকে বলেন, সরকারের সঙ্গে আপনাদের ভালো সম্পর্কের কারণে আপনারা রাজনীতি করতে পারছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: আমাদেরকে অনেকে অনেকভাবে বলছে। রাজনীতির জায়গাটা হলো, আপনাদের নানা ধরনের ব্লেম, নানা ধরনের মানুষের ধারণার ওপর কাজ তো হবেই। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, সেটার বেসিস কী? আপনি শুনলে অবাক হবেন, আমরা যখন প্রথম রাজনৈতিক দল ঘোষণা করলাম, সেদিনই পুলিশ এসে আমাদের বলেছে, আমরা মিটিং করতে পারব না। কারণ আমরা পারমিশন নেইনি। আমরা বলেছি, মিটিং করতে হলে পারমিশন নিতে হবে এটা কোথায় বলা আছে, সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে এটা বলা আছে? আমরা যে কমিটি করছি, সেখানে আমরা গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমাদের ঘরোয়া মিটিংয়েও পুলিশ বাধা দিয়েছে।
এগুলো হচ্ছে অপপ্রচার। আমরা মনে করি, সরকারের সহযোগিতা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল কোনো দিন কোথাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। দালালি করে অন্যের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আমরা এটা করতে চাইব না।
আমাদের একই দিকে দুই ধরনের ব্লেইম শুনতে হচ্ছে। কেউ বলছে, আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের (জামায়াত) বি টিম। কেউ বলছে, আমরা সরকারের বি টিম। ওরা বলছে, আমরা সরকারের দালাল, আবার সরকারের লোকেরা সন্দেহ করছে, আমরা অন্য দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নতুন দল খুলেছি কীনা।
কাজেই, আমরা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই। কেউ যদি আমাদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রমাণ করতে পারে আমরা কারও পক্ষ হয়ে, সুবিধা নিয়ে, সাহায্য নিয়ে দল হিসেবে কাজ করছি, তাহলে আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি আছি।
নিউজবাংলা: আপনারা কি বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী জোটে থাকবেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: আমাদের দলের এখনও নিবন্ধন হয় নি। আমরা নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করছি। দলের কমিটিগুলোর নিবন্ধনের জন্য কাজ করছি। আমরা এখন পর্যন্ত রাজপথে কোনো কর্মসূচি নিয়ে নামিনি। আমাদের বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে ঘরোয়াভাবে। রাজপথে নামার সুযোগও তৈরি হয় নি। লকডাউনের পর রাজনৈতিক পরিবেশ বেশ বৈরি। আমাদের এখন কাজই হচ্ছে দলটাকে শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যাওয়া। এরপর আমরা জোটবদ্ধ হব কিনা, পরে দেখা যাবে।
নিউজবাংলা: আপনাদের দলের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দেশে আসছেন না কেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: উনি পেশার কারণে প্রথমে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন। যাওয়ার পর দেখা গেল, ওনার বিরুদ্ধে দুটো মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ওনার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যে, উনি দেশে এলে ওনাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ধরনের একটা পরিস্থিতি তখন বিরাজমান ছিল। সে কারণে সে সময় তিনি আর দেশে আসেননি।
দেশে না ফেরার কারণে উনি সেখানেই অবস্থান করছেন। সেখানেই উনি ল প্র্যাকটিস করছেন। মাঝখানে তিনি অসুস্থও হয়েছেন, ওনার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। উনি ট্রিটমেন্টে আছেন। সার্বিক বিষয় মিলিয়ে ওনার বিরুদ্ধে এই যে হুমকি, যে উনার মতো একজন বিখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, উনি দেশে এলে ষড়যন্ত্র হতে পারে, এ কারণে উনি দেশে আসছেন না। সব মিলিয়ে একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে উনি দেশে ফিরে আসবেন।
নিউজবাংলা: আপনি বলছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশের একটি শক্তি। কিন্তু আমরা দেখেছি, যুদ্ধাপরাধীদের প্রসিকিউটর হিসেবে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন। তিনিই এখন আপনাদের দলের উপদেষ্টা। কী বলবেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: রাজ্জাক সাহেবকে এই প্রশ্ন অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও করেছিল। এটা উনি ক্লিয়ার করেছিলেন। উনি একজন প্রফেশনাল আইনজীবী হিসেবে সেটা করেছেন। তিনি যখন জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন, তখন কিন্তু স্পষ্টভাবে ওনার পজিশন ক্লিয়ার করেছেন। সুতরাং উনি যুদ্ধাপরাধের সহায়ক, এটা মিন করে না।
নিউজবাংলা: আফগানিস্তানে বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে, সেটিকে কীভাবে দেখছেন? বাংলাদেশের ওপর এটার প্রভাব কেমন হবে বলে মনে করেন?
মুজিবুর রহমান মঞ্জু: প্রভাব তো অবশ্যই বাংলাদেশের ওপর পড়বে। প্রত্যেক দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সে দেশের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশে একটা প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটা পুতুল সরকারের বিরুদ্ধে বিজয়ের বিষয় সামনে আসছে। আর একটা বিষয় আসছে, ওখানে (আফগানিস্তানে) যে একটা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে, এটাও একটা সীমা তৈরি করে যে, পটপরিবর্তন সম্ভব।
এপ্রিল মাসকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় নয় উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সূচি পুনঃবিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকার বাস্তবতার ভিত্তিতে এই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে।’
আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো (এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন) নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমরা আশা করি, সরকার এই বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করবে।’
অন্তবর্তী সরকার যে সময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি এই বিএনপি নেতার।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিনই বলেছি যে, এই সময় নির্বাচনের জন্য ভালো নয়। রমজান মাস শেষ হবে, ঈদ হয়ে যাবে, তারপর কয়েকদিন পর নির্বাচন হবে। একটু ভাবুন, রমজান মাস জুড়ে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বেন।’
ফখরুল আরও বলেন, তিনি এখন থেকেই চিন্তিত যে প্রতিদিন ইফতার পার্টি আয়োজন করতে হবে, যা নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করবে।
তিনি রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অসুবিধাগুলো তুলে ধরে বলেন, বিশেষত তীব্র গরম এবং বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন, তীব্র গরমের কারণে নির্বাচনী সমাবেশের জন্য লোকজন জড়ো করা সম্ভব হবে না। ‘কর্মসূচিগুলো রাতের দিকে নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, অতীতে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল বলেছে যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব, এবং আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, কারণ এটি নির্বাচনমুখী দল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিপ্লবী দল না, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে চাই।’
ফখরুল বিএনপির সংস্কার না করার যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খণ্ডন করে বলেন, ‘এটা মিথ্যা প্রচারণা।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি প্রথম দল হিসেবে ভিশন-২০৩০ কর্মসূচি তুলে ধরে এবং গণঅভ্যুত্থানের আগেই ৩১ দফা সংস্কারের খসড়া উপস্থাপন করেছিল।
ফখরুল সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্মীদের জাতিকে বিভক্ত না করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমরা গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চাই এবং আমরা চাই দেশটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হোক। আমরা ভোট দিতে চাই, আমাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করতে চাই এবং সংস্কার দেখতে চাই। সুতরাং, অযথা বিভেদ সৃষ্টি করবেন না।’
ফখরুল সতর্ক করে বলেন, দেশে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি হলে তা বিদেশি শক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের ক্ষতি করার সুযোগ করে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠক রাজনীতিতে এই মুহূর্তে প্রধান ইভেন্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও এই ইভেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাদের সাক্ষাতের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অনেক কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতারা সেটাকে কীভাবে নেবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এই সাক্ষাৎকারে তার সাফল্য প্রার্থনা করছি।
বৈঠকের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা না থাকলেও আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এর মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি। তাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। তবে, তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ সেক্টরে যথেষ্ট অভিজ্ঞ।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জাতীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণা গোটা জাতিকে হতাশ করেছে বলে অভিহিত করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি।
শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে দলটি।
বিবৃতিতে বিএনপি জানায়, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ও জনতার বিপুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের অযৌক্তিক বিলম্ব জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
এ সময় রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি।
এর আগে, শুক্রবার (৬ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে বিবৃতিটি দেওয়া হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়বস্তু বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে এই ঘোষণা দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করেছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত এ দেশের জনগণ। বারবার গুম, হত্যা, কারাবরণ, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঐকমত্য গঠনের কথা বললেও অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
তারা বলেন, ‘এ কারণে বৈঠকে মনে করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না; তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাষ্যে, এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন দিলে তা আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসে প্রচার-প্রচারণা ও নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে, যা পরবর্তীতে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব নয়— এমন কোনো সুস্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাণী দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য এক পর্যায়ে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণে রূপ নেয়।
দীর্ঘ ওই ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেই স্বীকার করেছেন বন্দর ও করিডর ইস্য অন্তবর্তী সরকারের তিনটি নির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
এ ছাড়াও ওই ভাষণে ব্যবহৃত কিছু শব্দ রাজনৈতিক সৌজন্যের সীমা অতিক্রম করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির নেতারা।
চোখের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আজ শুক্রবার রাতে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি ব্যাংককের রুটনিন আই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার দুপুরে বাসস’কে জানান, দলের মহাসচিব রাতে দেশে ফিরবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাত ১১টায় ব্যাংকক থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন মির্জা ফখরুল। তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি রাত ১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এর আগে, চোখের জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে গত ১৩ মে রাত ২টা ৪৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
নতুন অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে অকার্যকর ও গতানুগতিক এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও দরিদ্রতার মতো অর্থনৈতিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানে এবারের বাজেট সুর্নিদিষ্ট কৌশল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) বাজেট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে অন্তর্বতী সরকারকে। আমরা আশা করেছিলাম যে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট তৈরি করবে, যাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম স্তর তৈরি হয়।’
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও যুব প্রতিনিধিদের নিকট থেকে মতামত নিতে পারত।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যদি এমনটি হতো, তাহলে বাজেট একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক হত। এটি দেশের বিভিন্ন অংশের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত করত। কিন্তু সেই সুযোগটি ব্যবহার করা হয়নি। ফলে, বাজেটটি একপেশে, অংশগ্রহণমূলক নয় এবং গতানুগতিক হয়ে গেছে। এতে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন নেই।’
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাজেট চূড়ান্ত করার আগে এই ধরনের আলোচনা আরও জরুরি ছিল, যেহেতু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে বিএনপি।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।
বাজেট সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মাথায় রেখে তৈরি করা উচিত উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়নি, যার জন্য আন্দোলন করা হয়েছিল।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর যেমন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, দরিদ্রতা বৃদ্ধি, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের কম সুযোগের স্পষ্ট সমাধান দেওয়া হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটটি অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্নীতিপ্রবণ প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে, অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে গুমের অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিন এই অভিযোগ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আজ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন সালাহউদ্দিন। এ সময়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ আইনজীবীরা সাথে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন তিনি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন।
সে সময় সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম। পরে পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হন নাহিদ। তবে নাহিদ ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) উপদেষ্টা পদে থাকাবস্থায় লক করে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এনআইডির তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সংস্থাটি।
তবে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় ৫ দিন পর আনলক করে দেওয়া হয় নাহিদের এনআইডি।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে এনটিএমসি জানায়, ‘ভণ্ডবাবা’ গ্রুপের অ্যাডমিন নাহিদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তার এনআইডির নম্বরও দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগকে। এরপর তদন্তে নামে অনুবিভাগ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লক করা হয় নাহিদের এনআইডি।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, ‘ভণ্ডবাবা’ হোয়াটসঅ্যাপের কোনো গ্রুপ নয়। এটি টেলিগ্রামের একটি গ্রুপ। আর নাহিদ ওই গ্রুপের অ্যাডমিন নন।
তার এনআইডির বিপরীতে কোনো তথ্য পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি আনলক করে দেয় সংস্থাটি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু এই ভোটার কর্তৃক ডাটা সরবরাহ করার বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি এবং অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, সেহেতু মো. নাহিদ ইসলামের এনআইডি আনলক করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নথি উত্থাপন করা হলে ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডির মহাপরিচালক তখন এনআইডিটি আনলক করার সিদ্ধান্ত দেন।
এভাবেই পাঁচ দিনের জন্য লক থাকে সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এনআইডি।
বর্তমান এনআইডি মহাপরিচালক এসএম হুমাযুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় আমি ছিলাম না। তাই সেটি আমার বিবেচনার বিষয় নয়। আর পুরোনো বিষয় যেটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেটির মতামতও দিতে চাই না।
মন্তব্য